এই পোস্টের গত পর্বে সরকারের জবাবদিহিতায় কেবিনেটের ভূমিকা নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করা হয়েছিল। এই পর্বে আলোকপাত করার চেষ্টা করবো সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে সংসদীয় কমিটিগুলোর ভূমিকার ওপর। গত দু'বছরে জবাবদিহিতা ও দুর্নীতি দমন ইস্যুতে কম আলোচনা হয়নি। তৈরি হয়েছে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান, প্রস্তাবিত হয়েছে নতুন নতুন কৌশল। সে-সব নিয়ে আলোচনা থেকে আপাতত বিরত থাকছি। সে-সবের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, প্রচলিত আইনে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক জবাবদিহিতা কাঠামোর আওতাতেই কার্যকর কিছু বিধান রয়েছে; সে-বিষয়ে আলোচনা করতেই এই পোস্ট। এই পোস্টের আরেকটি লক্ষ্য হল -- প্রচলিত আইনের আওতায় এই জবাবদিহিতা কাঠামোটি কেন আশানুরূপভাবে কাজ করছে না বা কী করলে তা কার্যকর হয়ে উঠতে পারে -- তাও নিরূপণের চেষ্টা করা। [...]

পূর্ব প্রকাশিতের পর . . . এই পোস্টের গত পর্বে সরকারের জবাবদিহিতায় কেবিনেটের ভূমিকা নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করা হয়েছিল। এই পর্বে আলোকপাত করার চেষ্টা করবো সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে সংসদীয় কমিটিগুলোর ভূমিকার ওপর। গত দু'বছরে জবাবদিহিতা ও দুর্নীতি দমন ইস্যুতে কম আলোচনা হয়নি। তৈরি হয়েছে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান, প্রস্তাবিত হয়েছে নতুন নতুন কৌশল। সে-সব নিয়ে আলোচনা থেকে আপাতত বিরত থাকছি। সে-সবের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, প্রচলিত আইনে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক জবাবদিহিতা কাঠামোর আওতাতেই কার্যকর কিছু বিধান রয়েছে; সে-বিষয়ে আলোচনা করতেই এই পোস্ট। এই পোস্টের আরেকটি লক্ষ্য হল -- প্রচলিত আইনের আওতায় এই জবাবদিহিতা কাঠামোটি কেন আশানুরূপভাবে কাজ করছে না বা কী করলে তা কার্যকর হয়ে উঠতে পারে -- তাও নিরূপণের চেষ্টা করা। কারণ, প্রথমেই এই বিষয়গুলোতে মনযোগ না দিয়ে বিকল্প হিসেবে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরির চেষ্টা করাটা কিছুটা অযৌক্তিক। কারণ, বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে-সব 'ভূত' রয়ে গেছে, সেগুলো যে নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরও ভর করবে না, তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে? সংসদীয় কমিটি সংবিধানের ৭৫(১) ধারায় বর্ণিত বিধানের আওতায় সংসদের সার্বিক পরিচালনার জন্য রয়েছে Rules of Procedure (লেখকের অনুবাদ : "কার্যবিধি")। এই কার্যবিধির অধ্যায় ২৭-এ সংসদীয় কমিটিগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত বিধান রয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্রে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে এই কমিটিগুলোর ভূমিকা অপরিসীম। পার্লামেন্টে মোশনের মাধ্যমে এই কমিটিগুলো গঠিত হয় ((কার্যবিধি, ধারা#১৮৮(১) ))। কোনো নির্দিষ্ট কমিটির ম্যানডেটের বিষয়ে যদি কোনো সাংসদের ব্যক্তিগত, আর্থিক বা সরাসরি অন্য কোনো স্বার্থ জড়িত থাকে তবে তিনি সেই কমিটির সদস্য পদ লাভে অযোগ্য বলে বিবেচিত হন। সংসদীয় এই কমিটিগুলো ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী। যেমন: কমিটি চাইলে সরকারি যে-কোনো দফতরের যে-কোনো রেকর্ড, দলিল, ফাইল কিংবা তথ্য পরীক্ষা করে দেখতে চাইতে পারে ((ধারা#২০২: (1) A witness may be summoned by an order signed by the Secretary and shall produce such documents as are required for the use of a Committee. (2) It shall be in the discretion of the Committee to treat any evidence given before it as secret or confidential. (3) No document submitted to the Committee shall be withdrawn or altered without the knowledge and approval of the Committee. )) । শুধু তাই নয়,…

গত দু'বছর অনেক সংশয় এবং অনিশ্চয়তায় কাটানোর পর দেশ আবার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরেছে এখন। ব্যাপক অংশগ্রহণসমৃদ্ধ একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, শপথ নিয়ে নতুন কেবিনেট গঠন করেছে নির্বাচিত দল, সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে এনেছে। সংসদে ৮৫% আসনধারী এই সরকারের কাছ থেকে জনগণের অনেক প্রত্যাশা। অনেকগুলো পাহাড়প্রমাণ চ্যালেঞ্জ নব-নির্বাচিত সরকারের সামনে, যেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য : আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক মুক্তি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, যুব সমাজের কর্ম সংস্থান ইত্যাদি। এসব চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করা যে-কোনো একটি নির্দিষ্ট দলের বা জোটের পক্ষেই খুব কঠিন। সেই কঠিন কাজটি অসম্ভব হয়ে পড়বে যদি বর্তমান সরকার জবাবদিহিতা প্রক্রিয়াকে ঢেলে সাজিয়ে একে কার্যকর করতে না পারে। সরকারের সব সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ যে ঠিক হবে এমন কোনো কথা নেই। তবে জনগণ সরকারের সিদ্ধান্তগুলোকে অন্তত বোঝার চেষ্টা করবে যদি সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় জনগণকেও অন্তর্ভুক্ত করার আন্তরিকতা থাকে। একদিকে জনগণ যেমন জানতে চায় ক্ষমতায় বসে থাকা নেতৃবৃন্দ কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তেমনি কী প্রক্রিয়ায় ও কেন সেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে তাও জনগণ জানতে চায়, বুঝতে চায়। এবং এটি জানা জনগণের অধিকারের মধ্যেই পড়ে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও প্রক্রিয়া নিয়ে দেশের মানুষ আজ যৌক্তিক কারণেই অনেক সন্দিহান। প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির মূল্যায়নে এ দেশের মানুষ অবুঝ নয়, আবদারিও নয়; তবে ১৫ কোটি মানুষের সামষ্টিক বুদ্ধিবৃত্তিকে হেয় করে কেউ তাদের চোখে ঠুলি পরিয়ে রাখার চেষ্টা করবে তাও তারা বরদাস্ত করবে না। তাই, জনগণ ও সরকারের মধ্যে বিশ্বাস এবং নির্ভরশীলতার পরস্পরমুখী সম্পর্ক স্থাপন করতে হলে বিদ্যমান জবাবদিহিতার সংস্কৃতিতে মৌলিক কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। চাই সুষ্ঠু জবাবদিহিতা ও জবাবদিহিতার সরকার। সরকারি নির্বাহী দফতর, তার ওপরে কেবিনেট, তারও ওপরে সংসদ -- সাধারণভাবে এই হল আমাদের দেশের শাসন ব্যবস্থায় জবাবদিহিতার সিঁড়ি। সরকারি নির্বাহী দফতর, তার ওপরে কেবিনেট, তারও ওপরে সংসদ -- সাধারণভাবে এই হল আমাদের দেশের শাসনব্যবস্থায় জবাবদিহিতার সিঁড়ি। তিন পর্বের এই পোস্টটিতে এই ধাপগুলোরই আনুষঙ্গিক কিছু বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করা হয়েছে। শুরু করা যাক কেবিনেট দিয়ে। কেবিনেট গতকাল নবনিযুক্ত কেবিনেট ঘোষিত হয়েছে; এ পর্যন্ত তা নিয়ে অনেকেই আলোচনা করেছেন। নতুন কেবিনেটে…

এক কথায় বলতে গেলে, বাংলাদেশের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। নির্বাচন কমিশন শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছেন, একটি তুলনামূলক স্বচ্ছ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করতে পেরেছেন, কালো টাকার দৌরাত্ম্যকে সামাল দেয়ার জন্যে কিছু কিছু উদ্যোগও নিয়েছেন। নির্বাচনের যারা পর্যবেক্ষক ছিলেন, তারা এ নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও কারচুপিমুক্ত বলে মন্তব্য করেছেন। নির্বাচনের পরদিন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাৎক্ষণিকভাবে বিরুপ করলেও পরে মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে তাদের অভিযোগ যা-ই হোক না কেন, তারা মনে করেন যে একটি অনির্বাচিত সরকারের চেয়ে নির্বাচিত সরকার অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এও জানিয়েছেন, 'বড়ভাইয়ের (আওয়ামী লীগ) উচিত, ছোটভাইকে (বিএনপি) দেখা। একটি দল বিজয় অর্জন করেছে, অন্যদের কাছে যাওয়ার দায়িত্ব তার (ইত্তেফাক, ৩ জানুয়ারি ২০০৯)।' আবার নির্বাচনের আগে স্বৈরাচারী এরশাদকেও বার বার বলতে শোনা গেছে, 'ভাইবোনে মিলে দেশটিকে ঢেলে সাজাবো!' অতএব বলা যায়, এ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে আমরা সরকারি কিংবা বিরোধী বিভিন্ন দলগুলির আত্মীয়তার মাধুর্যও উপভোগ করছি। এদিকে নির্বাচনের পরপরই, গত চারদিনে পাঠকমহলে সংবাদের জন্যে অপেক্ষাকৃত গ্রহণযোগ্য পত্রিকাগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র ইত্তেফাকেই নির্বাচনোত্তর সংঘাতের যত খবর ছাপা হয়েছে তা জোড়া দিলে সংবাদপত্রের দু' পৃষ্ঠাতেও আটানো সম্ভব হবে না। এমনকি আমরা এ-ও জানতে পেরেছি, ফেনীতে জয়নাল হাজারীর সুযোগ্য ক্যাডাররা এখন মিছিল করছেন ও শ্লোগান দিচ্ছেন, ‌শেখ হাসিনা হাসছে, জয়নাল হাজারী আসছে।' জনগণ এইসব নতুন করে সহ্য করছে। ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছে। কেননা, আওয়ামী লীগকে ঘিরে তাদের একধরণের প্রত্যাশা জন্ম নিয়েছে। সেই প্রত্যাশা এতই আকাশচুম্বী যে তারা স্বৈরাচারের প্রতিভূ জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের মহাজোট গঠনও মেনে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রতি হয়তো তারা আস্থাশীল নয়, কিন্তু নির্ভরশীল হওয়ার মতো উপাদান তারা দলটির মধ্যে খুজেঁ পেয়েছে। তাই এদের প্রার্থীদের ঘিরে তাদের মধ্যে প্রত্যাশাবোধের জন্ম হয়েছে। কিন্তু এত প্রত্যাশার ভিত্তি কোথায়? বোধকরি, প্রথমত ব্যাপক নারী ভোটার। গত পাঁচ বছর ধরে এই নারীরা সরাসরি দ্রব্যমূল্যের আঁচ অনুভব করেছে। গার্মেন্টস শ্রমিকসহ নিম্নপেশাভুক্ত দরিদ্র নারী থেকে শুরু করে কর্মজীবী মধ্যবিত্ত ব্যাপকসংখ্যক নারী তো বটেই এমনকি গৃহিনী নারীরাও এখন বাজার থেকে কেনাকাটার সঙ্গে আগের চেয়ে অনেক বেশি সম্পৃক্ত। সন্তান ও পরিবার সদস্যদের করুণ মুখ প্রতিক্ষণ…

পরীক্ষামূলক পোস্ট১

স্বাগতম।

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.