অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীর ১৯৭১ সালের অপকর্ম নিয়ে পত্রিকায় প্রতিবেদন লিখবেন সাহসী সাংবাদিক। সেই লেখার কারণে আক্রমণের শিকার হবেন তিনি, তার অঙ্গহানি ঘটবে। সে অন্যায়ের না হবে তদন্ত, না হবে বিচার! দেশে পাঁচ পাঁচটা বছর ধরে যুদ্ধাপরাধের বিচার চলতে থাকবে। রাঘব বোয়াল রাজাকার থেকে শুরু করে অলিগলির ছিঁচকে রাজাকার দু'একজনেরও বিচার হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে, রীতিমতো দেশ আর দুনিয়া কাঁপিয়ে। সেখানে কারও হবে ফাঁসী, কারও হবে জেল। কিন্তু সেই একজন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীকে নিয়ে না আলোচনা হবে মিডিয়ায়, না খোলা হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তের কোনো ফাইল। এবং এমনটাই হতে থাকবে। কারণ, ততোদিনে সেই চিহ্নিত অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীর এমনকি সামাজিক আত্মীয়তার বন্ধন তৈরী হয়ে গেছে রাজনৈতিক সরকারের কেন্দ্রীয় বলয়ের প্রভাবশালীদের সাথে! সেই খুঁটির জোরে রাজাকার সাহেব মহাসমারোহে ঢাক ঢোল পিটিয়ে দেশে আসবেন, পাঁচ তারা হোটেলে তার সম্বর্ধনা হবে, তাকে নিয়ে আলোচনা হবে, কিছু কুলাঙ্গার নির্বোধও জুটে যাবে তার গুনগান গাইবার! ১৪ বছর আগে সেই যে এক সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছিলেন - তার পর আর কিছু ঘটেনি, ঘটবে না। কারণ, তার উপর সব দায় চাপিয়ে দিয়ে আমরাও একটা পুরো জাতি ততোদিনে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাতে চলে গেছি। সেই সাংবাদিককেই অগত্যা এবারও আবার কলম তুলে নিতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে। কারণ একটাও মানুষের মতো মানুষ নেই কোথাও প্রতিবাদ করবার মতো। লিখবার জন্য শুধু সেই সাংবাদিকের জীবনই আবার নতুন করে বিপন্ন হবে, সরাসরি জীবননাশের হুমকি ঝুলবে তার সামনে। যেন এর মাধ্যমে এই বার্তাটুকু সবার কাছে পৌঁছে দেয়া - প্রভাবশালী সরকারী আত্মীয় যে সব যুদ্ধাপরাধী - তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস দেখিয়েছো - তাহলে তুমি তো মরবেই, তোমার পরিবারকেও বাঁচতে দেয়া হবে না। আর হুমকিদাতাদের স্রেফ মর্জির কারণে দৈবাত যদি এখনো বেঁচেও থাকো, তাহলেও মৃত্যুর খাঁড়া তোমার মাথার উপর ঝুলতে থাকবে সবসময় - সেটা নিয়েই জীবনযাপন করতে হবে তোমাকে এবং তোমাদের মতো আর সবাইকে! এসব যখন চলতে থাকবে তখন সামাজিক নেটওয়ার্কে, ফেসবুকে - আমাদের দিবারাত্র বকবক করার মতো বিষয়ের কোনো অভাব পড়বে না। শুধু এই ইস্যুতে কাজ করবার মতো সময় হবে না আমাদের বেশীর ভাগেরই। এখানে "আমরা" মানে তারা যারা নিজেদের তথাকথিত দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের সৈনিক ইত্যাদি বলে দাবী…
“এখন আমাদের দাবি, যে করেই হোক খুনিদের বিচারের আওতায় আনতে বাংলাদেশ সরকার তার সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করুক। আমি মনে করি না যে, শুধুমাত্র খুনিদের ধরাটাই যথেষ্ট। আমি সরকারের প্রতি সন্ত্রাস নির্মূলের জন্য আবেদন জানাই, সেই সাথে লেখক-হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় না আনার যে আইনি সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা বন্ধ করার দাবি জানাই।” — রাফিদা আহমেদ বন্যা
সেন্টার ফর ইন্কোয়াইরি-র ওয়েবসাইটে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ড. অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী বিজ্ঞান-লেখক রাফিদা আহমেদ বন্যার আনুষ্ঠানিক বিবৃতি। বাংলা কমিউনিটি ব্লগ এলায়েন্স-এর পক্ষ থেকে তাঁর এই বিবৃতির বাংলা অনুবাদ এখানে সংকলিত হলো ফরিদ আহমেদের অনুবাদে, মুক্তমনা-র সৌজন্যে। . . . রাফিদা আহমেদ বন্যার বিবৃতি : আমার স্বামী অভিজিৎ রায় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদ নিয়ে লেখালেখি করতেন, তিনি ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনামুখর ছিলেন। শুধুমাত্র এই কারণেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। গত ছাব্বিশে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনাকীর্ণ ক্যাম্পাসে আমরা দুজনে হামলার শিকার হই। অভিজিৎকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আমি কোনোক্রমে বেঁচে যাই। তাঁর স্ত্রী, একই ধারার লেখক এবং একজন মুক্তচিন্তক হিসাবে, আমি এই পৈশাচিক সন্ত্রাসের তীব্র নিন্দা করি। ঐতিহাসিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হচ্ছে সকল প্রগতিশীল আন্দোলনের কেন্দ্রভূমি। অভিজিৎ নিজেও এই ক্যাম্পাসেই বেড়ে উঠেছেন। মৃত্যুর হুমকি থাকা সত্ত্বেও আমরা কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারি নি যে, এরকম একটা জঘন্য অপরাধ এখানে সংঘটিত হতে পারে। এই অপরাধ শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ছিলো না, ছিলো বাক স্বাধীনতা এবং মানবতার বিরুদ্ধে। আমি আর অভিজিৎ যখন নৃশংসভাবে আক্রান্ত হচ্ছি, স্থানীয় পুলিশ খুব কাছেই নিষ্ক্রিয়ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো। এখন আমাদের দাবি, যে করেই হোক খুনিদের বিচারের আওতায় আনতে বাংলাদেশ সরকার তার সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করুক। আমি মনে করি না যে, শুধুমাত্র খুনিদের ধরাটাই যথেষ্ট। আমি সরকারের প্রতি সন্ত্রাস নির্মূলের জন্য আবেদন জানাই, সেই সাথে লেখক-হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় না আনার যে আইনি সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা বন্ধ করার দাবি জানাই। আমি যে নৃশংস ঘটনা ঘটেছে তার প্রতি সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং আমাদের সাথে এক হয়ে সুবিচার দাবি করার আহ্বান জানাচ্ছি। আরো পড়ুন/শুনুন : বিবিসিকে দেয়া বন্যার ইংরেজি সাক্ষাৎকার : এখানে। বিবিসি বাংলাকে দেয়া বন্যার বাংলা সাক্ষাৎকার : এখানে।
আমরা চট্টগ্রাম শহরে এমন একটি স্থাপনা নির্মাণ করতে চাই যেখানে সংবৎসর সুচিন্তিত পরিকল্পনা মাফিক, পেশাদারিত্ব ও উচ্চমান বজায় রেখে নিয়মিত ভিত্তিতে নানাবিধ শৈল্পিক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হবে। সেখানে বছরের প্রতিটি দিন কোনো-না-কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে। শহরের শিল্পানুরাগী নাগরিকবৃন্দ এবং বেড়াতে বা কাজ করতে আসা পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয়, দেশি, বিদেশি শিল্পীদের আনাগোনায় আর তাঁদের শৈল্পিক তৎপরতায় সেখানে বছরজুড়ে বিরাজ করবে এক আনন্দঘন শিল্পমুখর পরিবেশ।
চট্টগ্রাম শহরের সংস্কৃতিচর্চার ঐতিহ্য খুব প্রাচীন ও সমৃদ্ধ। তবে একটা কথা স্বীকার করতেই হবে যে এর মধ্যে যথাযথ পরিকল্পনা, পেশাদারিত্ব, ধারাবাহিকতা, সর্বোপরি মান-নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পায়নি কখনো। পাশাপাশি এটাও প্রবলভাবে সত্য যে শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সৃজনশীলতার চর্চার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের একত্রে মিলবার, ভাব বিনিময় করবার, সাদা বাংলায় স্রেফ ‘আড্ডা’ দেবার অনুকূল কোনো স্বাস্থ্যকর, রুচিশীল পরিসরও এই শহরে গড়ে ওঠেনি তেমন। বিচ্ছিন্নভাবে কেউ শিল্পকলা একাডেমির মাঠে, কেউ চেরাগির মোড়ে ফুটপাথে দাঁড়িয়ে, কেউ বিশদ বাঙলা-য় কেউ-বা বাতিঘরে যার যার মত গল্পগাছা করে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটান। কিন্তু এভাবে তো আর সৃজনশীল মানুষদের পরস্পরের কাছাকাছি আসা, চেনা-জানা, অভিজ্ঞতা বিনিময় ও গঠনমূলক আলাপ-সংলাপের খুব দরকারি সংস্কৃতিটি গড়ে উঠতে পারে না। ফলে বিভিন্ন শিল্পমাধ্যমের চর্চাকারী ও তার ভোক্তাদের মধ্যে দূরত্ব ও বিচ্ছিন্নতা ক্রমে আরো পরিব্যাপ্ত হয়, আর তার ফাঁক গলে অনুপ্রবেশ করে অহংকার ও অজ্ঞানতা, নিরাশা ও নির্বেদ, হতাশা ও হীনমন্যতার মত নেতিবাচক বিষয়গুলো যাতে প্রকারান্তরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিল্প ও শিল্পী। তার প্রভাব পড়ে আমাদের বৃহত্তর সমাজে ও সংস্কৃতিতে। আমরা এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এই শহরে এমন একটি স্থাপনা নির্মাণ করতে চাই যেখানে সংবৎসর সুচিন্তিত পরিকল্পনা মাফিক, পেশাদারিত্ব ও উচ্চমান বজায় রেখে নিয়মিত ভিত্তিতে নানাবিধ শৈল্পিক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হবে। সেখানে বছরের প্রতিটি দিন কোনো-না-কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের — হোক সেটা কোনো চিত্র, আলোকচিত্র কিংবা চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, নয়তো কোনো গানের আসর কী নৃত্যানুষ্ঠান, শ্রুতিনাটক কী মূকাভিনয়, সাহিত্যপাঠ কী শিল্প-বক্তৃতা — আয়োজন থাকবে। শহরের শিল্পানুরাগী নাগরিকবৃন্দ এবং বেড়াতে বা কাজ করতে আসা পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয়, দেশি, বিদেশি শিল্পীদের আনাগোনায় আর তাঁদের শৈল্পিক তৎপরতায় সেখানে বছরজুড়ে বিরাজ করবে এক আনন্দঘন শিল্পমুখর পরিবেশ। পাশাপাশি দিনের কর্মব্যস্ততা শেষে সন্ধ্যায় সেখানে শিল্পী ও শিল্পরসিকেরা আসবেন শিল্পের সান্নিধ্যে দু’দণ্ড জিরিয়ে নিতে, অন্তরঙ্গ চা-খানায় বসে বন্ধুসান্নিধ্যে গলা ভিজিয়ে নিতে হরেক রকম দেশীয় শরবতে। তাঁরা প্রাণভরা আড্ডায় মেতে উঠবেন শিল্প, সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস, রাজনীতি, প্রেম, পরিণয় ইত্যাকার জগতের তাবৎ বিষয়ে। এরই মাঝে এক ফাঁকে লাগোয়া বইঘর থেকে তারা সংগ্রহ করে নিতে পারবেন সম্প্রতি প্রকাশিত কোনো আলোচিত গ্রন্থ, দুষ্প্রাপ্য সংগীত কিংবা ভুবনবিখ্যাত কোনো চলচ্চিত্র। শৌখিন কলারসিকেরাও পারবেন কেন্দ্রের নিজস্ব উপহার-বিপণি থেকে খুব সহজেই…
আমরা, বাংলা কমিউনিটি ব্লগ এলায়েন্স (BCBA) দেশব্যাপী চলমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এবং সুষ্ঠু তদন্ত ও উপযুক্ত বিচার দাবী করছি। একই সঙ্গে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের নিকট আহ্বান জানাচ্ছি। [...]
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলছে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা। সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু জনগোষ্ঠীর শত শত ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, নির্যাতন এবং লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশে বসবাসকারী সনাতন ধর্মাবলম্বীরা চূড়ান্ত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। অনেকেই ঘরবাড়ি হারিয়ে অসহায় জীবন যাপন করছেন, অনেকেই নিরাপত্তাহীনতায় প্রাণভয়ে ঘরবাড়ি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। আমরা, বাংলা কমিউনিটি ব্লগ এলায়েন্স (BCBA) দেশব্যাপী চলমান এই সাম্প্রদায়িক সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এবং সুষ্ঠু তদন্ত ও উপযুক্ত বিচার দাবী করছি। একই সঙ্গে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের নিকট আহ্বান জানাচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধে সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এবং অপরাধীদের শাস্তি রোধ করতে জামায়াতে ইসলামী এবং বিএনপি যে এই ঘৃণ্য তৎপরতা চালাচ্ছে সেটা একটি প্রকাশ্য সত্য। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকেই ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে জামায়াত-বিএনপি একজোট হয়ে সারাদেশে একের পর এক সহিংস কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে। অসংখ্য প্রাণহানি, সম্পদ ধ্বংশ এবং লাখ লাখ বৃক্ষ কর্তনের পাশাপাশি তারা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপর আঘাত হানছে। আমরা, বাংলা কমিউনিটি ব্লগ এলায়েন্স (BCBA) এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা, বাংলা কমিউনিটি ব্লগ এলায়েন্স (BCBA) অত্যন্ত হতাশা এবং উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে, দেশের সংবাদ মাধ্যমগুলোর একটি প্রধান অংশ এই সহিংসতাকে উস্কে দিচ্ছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন কেন্দ্রের ভোটারবিহীন ছবি ছাপলেও, যে কেন্দ্রে লাইন ধরে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ভোট দিয়েছে সেসব কেন্দ্রের ছবি প্রথম আলো এবং কালের কণ্ঠসহ কিছু পত্রিকা ফলাও করে ছেপেছে। এমনকি প্রথম আলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ছবি সম্পাদনা করে ভোটারদের কপালে সিঁদুর এবং টিপ বসিয়ে দেওয়ার বা সেগুলোকে হাইলাইট করে ‘প্রধানত হিন্দুরাই এই নির্বাচনে ভোট দিয়েছে’ এই বার্তাটি ধর্মীয় মৌলবাদী তথা জামাত-শিবির-বিএনপি চক্রর কাছে পৌঁছে দেওয়ার। দেখা গেছে এরকম ছবি প্রকাশের পরপরই দেশব্যাপী সনাতন ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠীর উপর হামলা, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া, নির্যাতন শুরু হয়। ফলে সাম্প্রতিক এই সাম্প্রদায়িক সহিংসতার দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারে না প্রথম আলো, কালের কণ্ঠসহ দেশের প্রধান পত্রিকাগুলো। যেমনটি এড়াতে পারেনি রুয়ান্ডা আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালে গণহত্যার উস্কানীদাতা ‘কাংগুরা’ পত্রিকা। আমরা আগেও দেখেছি, এই পত্রিকাগুলো, বিশেষ করে প্রথম আলো জামাত শিবির বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডগুলোকে ‘দুর্বৃত্ত’দের কাজ বলে চালিয়ে দিয়েছে বেশিরভাগ সময়। আমরা, বাংলা কমিউনিটি ব্লগ এলায়েন্স…
‘বীরাঙ্গনা’ একটা শব্দ, একটা সংকেত, এই শব্দটার সাথে কত যে ফিসফাস জড়িত, শুনলেই আমরা নির্যাতিত নারী দেখতে পাই, বিবস্ত্র নারী, চুল দিয়ে উর্ধ্বফাঁস দিয়ে রাখা নারী, পরিখা থেকে পচনশীল হিউমাসের মতন উদ্ধারকৃত মিউটিলেটেড নারী, শিখ সৈন্যদের পাগড়ি দিয়ে লজ্জা নিবারণ করা নারী, মুখ লুকানো আশিরপদনখ বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়া নারী। (‘অরুনোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’র) এই সব দৃশ্যই আসলে বীরাঙ্গনাদের মৌলিক গুণনীয়ক। যাদের অবিশ্বাস্য নির্যাতনের বিবরণ একনিশ্বাসে আজো পড়া যায় না, যাদের ফিরে আসাকে কেউ স্বাগত জানায়নি, যাদের বেঁচে থাকাকে কেউ সৌভাগ্য মনে করেনি, তাদের জন্যে আমরা একটা শব্দ নিয়োগ করেছি ‘বীরাঙ্গনা’, এর সাথে ব্র্যাকেটবন্দী কিছু ফিসফাস এবং দৃষ্টিভঙ্গী (গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক)। যে মৃত তার জন্যে মিনার আছে, সৌধ আছে, ‘শহীদ’ খেতাব আছে, বীরত্ব তার শ্রেষ্ঠত্বের মালা, তার প্রতীক। যে অঙ্গহানি হওয়ার কারণে অর্ধমৃত, তার জন্যেও কোথাও না কোথাও একটু সহানুভূ্তির-আদরের ‘আহা’ শব্দ আছে, পিঠের ’পরে আত্মীয়তাকামী হাত আছে। যে ‘সম্ভ্রম’ হারালো (একজনের ধর্ষণের কারণে কেমন করে আরেকজন মানুষের সম্ভ্রহামহানি হতে পারে? সম্ভ্রম তো নিজের জিনিস, অত্যুচ্চ এবং সার্বভৌম শব্দ)- তার জন্যে আছে পুনঃসম্ভ্রমহানি, এইবার আত্মীয়তাকামী হাতে, ‘আহা’ শব্দসমেত। ‘বীরাঙ্গনা’ শব্দের ব্যঞ্জনা এইই, আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি সেই শ্রদ্ধা সেই অসমাপ্ত শ্রদ্ধাকে শ্রদ্ধা বলতে রাজি নই, যা এই নারীদের মানুষ-অস্তিত্ব, নারী-অস্তিত্বকে পুনরায় সসম্মানে-সস্নেহে গ্রহণ করতে নারাজ। আমি সেই শব্দে কেবল কৌমার্যপূজারী পুরুষতান্ত্রিক পূঁজ দেখতে পাই, আর কিছু নয়। ‘বীরাঙ্গনা’ শব্দের বদলে অনেকে এখন ‘বীরজননী’ আখ্যা দেয়া শুরু করেছেন, আসল কথা হচ্ছে, আপনি যাঁকে স্ত্রী হিসাবে, সঙ্গিনী হিসাবে স্থান দিতে অক্ষম হয়েছেন, সেই অক্ষমতা ঢাকতে আপনার এখন তাঁর জন্যে মাতৃত্বের পতিতপাবনী ঢাল দরকার হয়েছে, আরো বড় আড়াল, আরো সক্ষম আরো মহিমময়ী ঢাল। শব্দান্তর করলে কি মনান্তর ঘটে? নাকি নারীর প্রতি মনোভাব বদলায়? আহা যদি তাই হতো! রমা চৌধুরীর ক্রন্দনবিকৃত মুখ দেখে আমাদের চোখে আজ পানি আসে, আমাদের বুক মুচড়ে ওঠে যখন দেখি তিয়াত্তর বছর বয়স্ক এই মহিলা পায়ে জুতা পরেন না, এই মাটিতে কত লাশ, তাঁর সন্তানদেরও লাশ, সে লাশ জুতায় মাড়াবেন কি করে! (আমাদের কি মনে পড়ে শহীদ আজাদের মাকে, ছেলে ভাত খেতে চেয়ে মরে গেছে বলে আর কোনোদিন ভাত খেতে পারলেন না যিনি?)…