৭ comments

1. 

   মাসুদ করিম - ২৫ মার্চ ২০১৫ (৯:২১ পূর্বাহ্ণ)

   অভিজিৎ হত্যায় বুয়েটশিক্ষক ফারসীমকে জিজ্ঞাসাবাদ

   মুক্তমনা লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

   মঙ্গলবার দুপুরে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে তাকে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

   মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, অভিজিতের লেখালেখি বা মতবাদ নিয়ে তার সঙ্গে ব্যক্তিগত কোনো বিরোধ ছিল কি না।”

   গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলার বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড়ে অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা গুরুতর আহত হন।

   ওই দিন বইমেলায় বিজ্ঞান লেখক ও বুয়েট শিক্ষক ফারসীমের ডাকা একটি বৈঠকের সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের সংযোগ থাকার সন্দেহের কথা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায়।

   পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল বলেন, “ওই বৈঠকে কে কে উপস্থিত ছিল, কারা কারা ছিল না এবং যারা ছিল না, তারা কেন উপস্থিত ছিল না ইত্যাদি বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।”

   ফারসিমের ঢাকা ছাড়ার বিষয়েও বিধিনিষেধ আরোপ করেছে পুলিশ।

   তিনি বলেন, “দেশের বাহিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে, এমনকি ঢাকার বাহিরে যাওয়ার ক্ষেত্রেও ফারসীম মান্নানকে অভিজিতের হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করতে বলা হয়েছে।”
   প্রায় মাস গড়াতে গেলেও অভিজিৎ রায়ের খুনি কারা, সে বিষয়ে কোনো তথ্য পায়নি গোয়েন্দা পুলিশ।

   মুক্তমনা ব্লগসাইটের পরিচালক, লেখক অভিজিৎ রায় দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের হুমকি পেয়ে আসছিলেন। ওই হুমকিদাতাদের ঘিরেই এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চালানোর কথা বলে আসছিল পুলিশ।

   হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত একমাত্র গ্রেপ্তারকৃত ফারাবী শফিউর রহমানও ফেইসবুকে হত্যার হুমকি দিয়ে লিখেছিল, বাংলাদেশে ফিরলে অভিজিৎকে হত্যা করা হবে।

   অভিজিৎ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ায় এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সহযোগিতা করছে দেশটির তদন্ত সংস্থা এফবিআই।

   ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত পলাতক রেদোয়ানুল আজাদ রানাকে অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডেও সন্দেহ করছে পুলিশ।

   রানাকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা হয়েছে। তিনি যেন দেশ ছাড়তে না পারেন, সেই বিষয়ে সীমান্তে নির্দেশনা দেওয়া আছে বলেও জানান মনিরুল।

   অভিজিৎ(@avijit_roy_MM) হত্যায় বুয়েটশিক্ষক ফারসীমকে জিজ্ঞাসাবাদ http://t.co/cRTa8dtPv6 pic.twitter.com/37Tqla7m9x

   — MasudKarimমাক (@urumurum) March 25, 2015

   Log in to Reply
2. 

   মাসুদ করিম - ৩০ মার্চ ২০১৫ (১:৫৯ অপরাহ্ণ)

   তেজগাঁওয়েব্লগারওয়াশিকুরবাবু(https://t.co/BY4GngL2QT)-কেকুপিয়েহত্যাhttp://t.co/5ZT3p6P8As #Bangladesh pic.twitter.com/Am1WbwZvEf

   — ICSF (@icsforum) March 30, 2015 Log in to Reply

3. Pingback: রাফিদা আহমেদ বন্যার বিবৃতি ও সাক্ষাৎকার » বাংলাদেশী শীর্ষ কমিউনিটি নিউজ পোর্টাল

4. 

   মাসুদ করিম - ৫ মে ২০১৫ (৯:১৬ পূর্বাহ্ণ)

   মুক্তমনা ব্লগ জয় করলো দ‍্য বব্স-এর জুরি অ‍্যাওয়ার্ড

   ডয়চে ভেলের দ‍্য বব্স পুরস্কার জয় করেছে মুক্তমনা ব্লগ৷ শনিবার জার্মানির রাজধানী বার্লিনে দীর্ঘ আলোচনা এবং ভোটাভুটির পর ‘সামাজিক পরিবর্তন’ বিভাগে মুক্তমনা ব্লগ, বিশেষ করে রাফিদা বন‍্যা আহমেদকে বিজয়ী ঘোষণা করেন বিচারকরা৷

   গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ‍্যালয় ক‍্যাম্পাসে দুর্বৃত্তের হামলায় প্রাণ হারান মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ব্লগার অভিজিৎ রায়৷ হামলায় তাঁর স্ত্রী এবং সহব্লগার রাফিদা বন‍্যা আহমেদও গুরুতর আহত হন৷ বাংলাদেশের পুলিশ এখনো এই হামলার কারণ এবং হামলাকারীদের শনাক্ত করতে না পারলেও, ব্লগাররা বিশ্বাস করেন যে উগ্র ইসলামপন্থিরাই নাস্তিক ব্লগার দম্পতির ওপর হামলা চালায়৷ সম্প্রতি ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে রাফিদা বন‍্যা আহমেদও দাবি করেন যে, ধর্মীয় মৌলবাদীরা রায়কে তাঁর লেখালেখির কারণে হত‍্যা করেছে৷

   বলাবাহুল‍্য, জার্মানির আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ‍্যম ডয়চে ভেলে গত কয়েক বছর ধরেই মুক্তমনা ব্লগের দিকে নজর রাখছিল৷ ব্লগার অভিজিৎ রায় হত‍্যাকাণ্ড পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে নিয়মিত সংবাদ প্রকাশ করেছে ডয়চে ভেলে৷ এরপর এপ্রিলে ডয়চে ভেলের দ‍্য বব্স প্রতিযোগিতায় মুক্তমনা ব্লগ, তথা রাফিদা বন‍্যা আহমেদের ব্লগকে মনোনয়ন দেয়া হয়৷ শনিবার দ‍্য বব্স-এর বিচারকরা বার্লিনে এক বৈঠকে চূড়ান্ত বিজয়ীদের নির্ধারণ করেন৷ প্রতিযোগিতার অত‍্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ‘সামাজিক পরিবর্তন’ বিভাগে দীর্ঘ আলোচনা এবং ভোটাভুটির পর মুক্তমনা ব্লগকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়৷ আগামী জুন মাসে জার্মানির বন শহরে অনুষ্ঠিতব‍্য গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামে এক অনুষ্ঠানের মুক্তমনা ব্লগার রাফিদা বন‍্যা আহমেদ এই পুরস্কার গ্রহণ করতে পারেন৷

   এদিকে, ডয়চে ভেলের দ‍্য বব্স অ‍্যাওয়ার্ড জয়ের খবরে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে মুক্তমনা ব্লগ সাইটের মডারেটর টিম৷ এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছেন, ‘‘ডয়চে ভেলের অত্যন্ত সম্মানজনক অনলাইন অ্যাক্টিভিজম অ্যাওয়ার্ড ‘দ্য ববস’ পাওয়ায় আমরা অত্যন্ত আনন্দিত এবং গর্বিত৷ যাঁরা মুক্তমনাকে এই পুরস্কারের জন্য মনোনিত করেছেন, তাঁদের সবার প্রতি আমাদের আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা রইলো৷
   বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, ‘‘একটি ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক এবং বিজ্ঞানমুখী সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য, একটি উদার, প্রগতিশীল এবং বিজ্ঞানমনষ্ক প্রজন্ম গড়ে তোলার জন্য মুক্তমনা অনলাইনে বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে গত ১৪ বছর ধরে৷ এই পুরস্কার আমাদের সেই অক্লান্ত পরিশ্রমেরই স্বীকৃতি৷”
   মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতার মৃত‍্যুর বিষয়টি উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘অভিজিৎ রায়ের অপ্রত্যাশিত হত্যাকাণ্ডের পরে মুক্তমনা স্বাভাবিক ভাবেই হয়ে পড়েছিল হতবিহ্বল, বিচলিত এবং শোকাগ্রস্ত৷ এই পুরস্কার প্রাপ্তি নিঃসন্দেহে আমাদের সেই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সহায়তা করবে৷ আগামী দিনে আরো ভালো কিছু করার জন্য অনুপ্রেরণা দেবে, উৎসাহ যোগাবে৷”

   দ‍্য বব্স-এর জুরিমণ্ডলীর সদস‍্য প্রখ‍্যাত আলোকচিত্রী এবং মানবাধিকার কর্মী ড. শহিদুল আলম মুক্তমনা ব্লগের জয় প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এটা কোনো সহজ সিদ্ধান্ত ছিল না৷ প্রতিযোগিতায় বেশ কয়েকটি মনোনয়ন জমা পড়েছিল, যেগুলোর প্রতি মনোযোগ প্রয়োজন ছিল৷ নিশ্চিত বিপদের কথা জেনেও মুক্তমনা ব্লগের ব্লগাররা বাংলাদেশের প্রচলিত ব‍্যবস্থা, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন৷ তাঁদের এই সাহসিকতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে দ‍্য বব্স৷”
   শহিদুল বলেন, ‘‘বাংলাদেশে কয়েক বছর আগে ৮৪ জন মুক্তমনা ব্লগারকে হত‍্যার হুমকি দেয়া হয়েছিল৷ এঁদের মধ‍্যে আটজন ইতোমধ‍্যেই প্রাণ হারিয়েছেন৷ একটি দমনমূলক পরিবেশে, যেখানে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ মৃত‍্যুর কারণ পর্যন্ত হতে পারে, সেখানে অবস্থানরত ব্লগারদের সহায়তায় তাই সবাইকে সক্রিয় হতে হবে৷”

   প্রসঙ্গত, অভিজিৎ রায়ের মৃত‍্যুর পর মুক্তমনা ব্লগকে এবং একটি ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ প্রতিষ্ঠায় স্বামীর সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন স্ত্রী বন্যা আহমেদ৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, বাংলাদেশে ব্লগাররা অত‍্যন্ত ঝুঁকির মুখে রয়েছে৷ আর এই ঝুঁকি আগের চেয়ে অনেক বেশি৷ তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ সরকারের এক্ষেত্রে অনেক বেশি সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন৷ সরকারকে এ সব হত‍্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাতে হবে, হত‍্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে এবং বাংলাদেশে বিচারহীনতার যে ধারা শুরু হয়েছে তা বন্ধ করতে হবে, বলেন আহমেদ৷
   বাংলা ব্লগারদের নিয়ে ডয়চে ভেলের ‘কাভারেজ’ সম্পর্কে সচেতন আহমেদ৷ অভিজিতকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে গিয়ে নিজের একটি আঙুল হারিয়েছেন তিনি৷ মাথায়ও একাধিক কোপ লেগেছে৷ বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বন্যা৷ ডয়চে ভেলেকে ধন‍্যবাদ জানিয়েছেন তিনি, আহ্বান জানিয়েছেন অভিজিৎ হত‍্যাকাণ্ড নিয়ে লেখালেখি অব‍্যাহত রাখার৷ বাংলাদেশে মুক্তমনা ব্লগারদের বিপদের কথা গোটা বিশ্বকে জানাতো উচিত বলে মনে করেন বন্যা আহমেদ৷
   উল্লেখ‍্য, ২০০৯ সালে ডয়চে ভেলের দ‍্য বব্স প্রতিযোগিতায় বাংলা ভাষা যোগ করা হয়৷ এরপর এখনও পর্যন্ত পাঁচজন বাংলাভাষী ব্লগার এই প্রতিযোগিতায় জুরি অ‍্যাওয়ার্ড জয় করেছে৷

   Log in to Reply
   • 

     মাসুদ করিম - ২৫ জুন ২০১৫ (১১:২১ পূর্বাহ্ণ)

     মুক্তমনার পক্ষে ‘দ্য ববস’ পুরস্কার নিলেন বন্যা

     জার্মান সম্প্রচার মাধ্যম ডয়চে ভেলের ‘দ্য ববস-সেরা অনলাইন অ্যাক্টিভিজম’ পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশি ব্লগ সাইট মুক্তমনা।

     এই ব্লগ সাইটের প্রতিষ্ঠাতা নিহত অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা মঙ্গলবার জার্মানির বন শহরে ‘গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম’ এ মুক্তমনার পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন।

     গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় সন্ত্রাসীর চাপাতির আঘাতে নিহত ব্লগার-লেখক অভিজিৎ ও বন্যার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে মুক্তমনাকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে বলে ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

     ‘দ্য ববস-বেস্ট অফ অনলাইন অ্যাক্টিভিজম’ অ্যাওয়ার্ডের ‘সামাজিক পরিবর্তন’ বিভাগে জুরি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে মুক্তমনা।

     “বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা নিশ্চিতে, ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে মুক্তমনা ব্লগ৷ আর সেই কাজের জন্য চড়া মূল্যও দিতে হয়েছে সাইটটিকে,” বলেছে ডয়চে ভেলে।

     ধর্মীয় উগ্রবাদীদের হুমকির মুখে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অভিজিৎ ও বন্যা বইমেলায় অংশ নিতে গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে ফিরলে তাদের উপর হামলা হয়।

     গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে বইমেলা সংলগ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় হামলাকারীদের চাপাতির আঘাতে নিহত হন অভিজিৎ। হামলায় প্রাণে বেঁচে গেলেও এক আঙুল হারান বন্যা। মাথায়ও গুরুতর আঘাত পান তিনি।

     ডয়চে ভেলে বলেছে, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বিজ্ঞানমনস্কতা নিয়ে মুক্তমনার কাজে ‘বাংলাদেশে ধর্মীয় মৌলবাদীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং সেখান থেকে তারা হত্যার জন্য ৮৪ জন ব্লগার ও সাংবাদিকের একটি তালিকা প্রকাশ করে, যাদের আটজনকে এরইমধ্যে মেরে ফেলা হয়েছে’।
     মুক্তমনাকে এই পুরস্কার বিশ্বব্যাপী ‘বিপদ মাথায় নিয়ে কাজ করে যাওয়া সব নারী-পুরুষের মনোযোগ কেড়েছে’ বলে বলছে দ্য ববস জুরিমণ্ডলী।

     ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে সামাজিক বিষয় নিয়ে কাজ করে বিশ্বে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে-এমন প্রকল্পকে সম্মান জানাতে ‘সামাজিক পরিবর্তন’ বিভাগে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।

     পুরস্কার গ্রহণ করে বন্যা বলেন, “মুক্তমনার যে কোনো অর্জন বা প্রাপ্তি অভিজিতের কাছে ছিল দুনিয়া পাওয়ার মতো ব্যাপার৷ মুক্তমনা ছিল অভিজিতের গর্ব ও আনন্দ৷ এই অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করতে পারলে তার চেয়ে সন্তুষ্ট কেউ হতে পারত না৷

     “দ্য ববস অ্যাওয়ার্ড মুক্তমনা মডারেশন টিম, ব্লগার এবং সামগ্রিকভাবে মুক্তমনা কমিউনিটিকে তাদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে সহায়তা করবে।”

     ডয়চে ভেলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের পর মুক্তমনা ব্লগ সাইট কয়েকবার হ্যাকারদের আক্রমণের শিকার হয়৷

     “সেই সময় মুক্তমনা টিম নিরলস পরিশ্রম করে সাইটটিকে সক্রিয় রেখেছেন৷ এমনকি সার্ভারও পরিবর্তন করা হয়েছে৷”

     দ্য ববস’র ‘শিল্প ও সংবাদমাধ্যম’ ক্যাটাগরিতে জুরি অ্যাওয়ার্ড জয় করেছে ‘জয়তুন,দ্য লিটল রিফিউজি’প্রকল্প৷

     সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের কবলে পড়ে গৃহহীন সিরীয়-ফিলিস্তিনি শরণার্থী জয়তুন-এর জীবনসংগ্রাম তুলে ধরা হয়েছে এই ব্লগে।

     এছাড়া গোপনীয়তা ও তথ্য সুরক্ষা বিভাগে জুরি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে মেক্সিকোর ‘রেনকো ইলেক্ট্রোনিকো’ প্রকল্প৷

     ইন্টারনেটে তথ্য সুরক্ষা এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বিষয়ক বুদ্ধি-পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। রুবেন ওমর ভ্যালেন্সিয়া পেরেজ এই প্রকল্পের পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন।
     প্রতিযোগিতায় বাক স্বাধীনতা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন সৌদি আরবে কারাবন্দি ব্লগার রাইফ বাদাউয়ি। ইসলাম ‘অবমাননার’ অভিযোগে গত বছর মে মাসে এই ব্লগারকে এক হাজার বেত্রাঘাত, ১০ বছরের কারাদণ্ড ও বড় অঙ্কের জরিমানা করে সৌদি কর্তৃপক্ষ।

     অনুষ্ঠানে ডয়চে ভেলের মহাপরিচালক পিটার লিমবার্গ বলেন, “মানবাধিকার এবং বাক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছেন বাদাউয়ি।”

     বিশ্বব্যাপী কারাবন্দি অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের মুক্তি দাবিতে সোচ্চার হওয়ার জন্য গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামে অংশগ্রণকারীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

     এছাড়া এবছর প্রতিযোগিতায় ভাষাভিত্তিক বিভাগে বাংলায় ‘পিপলস চয়েস অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছে ‘টুনস ম্যাগাজিন’৷ ইউরোপ প্রবাসী কার্টুনিস্ট আরিফুর রহমান এ সাময়িকী সম্পাদনা করেন। তিনি ২০০৭ সালে একটি কার্টুনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

     Log in to Reply
5. 

   মাসুদ করিম - ৪ জুলাই ২০১৫ (৬:০৯ অপরাহ্ণ)

   This is from last night. Rafida Ahmed Bonya delivering this year’s Voltaire Lecture arranged by British Humanist Association in London. Here is a transcript of her lecture that received two standing ovations from the audience. Detailed video of the event, including of the Q&A session will be shared as soon as it is released.
   ————————————

   Hi Everybody,

   I would like to thank British Humanist Association, such a historical and prestigious organization, for giving me the chance to speak with you.

   My late-husband, Dr. Avijit Roy and I were Bangladeshi-American citizens and Humanists, and we are the recent victims of Islamic terrorism in Bangladesh. Avijit and I visited our homeland, Bangladesh, on Feb 16th, to attend the Annual National Book Fair. The fair is a nationally renowned event, attended by thousands, held through the entire month of February.

   On the 26th of February, when we were leaving the well-lit, crowded book fair to get back to our car, Avijit and I were brutally attacked by Islamic fundamentalists. We were stabbed repeatedly with machetes on the side of the road. The area was surrounded by police officers and video cameras and thousands and thousands of people. Nobody came to help us, the police stood by. We owe thanks to a young journalist who did act, and rushed us to the nearby hospital a little later. But Avijit was killed and I was badly injured as a result of four stab wounds, around my head and my thumb was sliced off. I have injuries on both hands, fingers and my body. I have had multiple surgeries to repair the damaged nerves and arteries. Just over four months on, I am still undergoing medical treatments.

   Avijit was perhaps the most prominent victim of these machete-wielding assailants, but he was neither the first, nor the last such victim. Since his murder at the end of February, Islamist fundamentalists have successfully killed another two humanist bloggers and writers in Bangladesh in very similar circumstances: namely, machete attacks in the street by three or four masked assailants. Blogger Washiqur Rahamn Babu was killed on 30th March. Two men arrested at the scene by bystanders – no thanks to the police – said they killed Washiqur despite never having read his blog themselves, but under orders from someone at their madrassas. I’ll return to this point later. Then, on 12th May, Ananta Bijoy Das was killed. Like Avijit, Ananta wrote about science and philosophy; and he edited a journal called Reason. He was very close to us, he called me sister and worked with us for a long time. I think they have attacked 8 secular activists, bloggers or writers, including Professor Shafiul Islam in 2014, the blogger Ahmed Rajib Haider in 2013, a failed attempt on the life of Asif Mohiuddin also in 2013, and of course Professor Humayan Azad in 2003.

   Those are the facts of recent events. Now, I am going to share with you a little bit more about Avijit and his work and writing and our life together. After that, I will ask, “How did it come to this?”

   I think that I should present two disclaimers in front of you before I start. First, is a reminder that English is my second language though I have been speaking it for a while. My accent is a weird blend of Bangladeshi English, American sitcoms exported from the US when I was growing up in Bangladesh, as well as Canadian, Minnesotan, and above all influence from the Southern states of the US, our ‘beloved’ Bible belt. Please note it if you do not understand something and ask me afterwards. I would be happy to explain. My second disclaimer: I am very, not sure what the word is, I am very scattered, my life is scattered, my thoughts are still scattered. It has been just 4 months since Avijit’s death; he was my friend, my partner in crime, in happiness, sadness, endless conflicts and love. So let me talk about that, now.

   Avijit, well, I used to call him Avi, created the first online freethinking platform in Bangla called ‘Muktomona’ ( which means ‘Freethinker’) in 2001 when he was a PhD student in the National University of Singapore studying bio-medical Engineering. Muktomona is not just a blog, it is a platform and a community. Along with other moderators, bloggers, and writers, Muktomona became the name of a secular humanist movement for Bangla-speaking people. It was special for me in more than one way, I first met Avi in 2002 through Muktomona. We collaborated on most of the projects and writings since. We were united on the principles of humanism. We also intensely disagreed and debated over some of our core beliefs and ideological stands, as good humanists should! Our debates regarding our writings, especially about socio-economic and political aspects of humanism, were so passionate that our daughter believed for a while that we fought all the time. It took her few years to realize that most of these discussions, not all, were philosophical debates, and not necessarily marital squabbles!

   Avi was an atheist, a blogger, a writer, and above all he was a secular humanist who tried to answer the larger questions in life. Avijit wrote about science, which he loved; on of his last books how the universe could emerge from nothing. He wrote book about the Origin of life, science behind homosexuality, yet another one on Love from the perspective of Evolutionary Psychology. He even wrote a literary piece regarding the relationship between Nobel Laureate Bengali poet Rabindranath Tagore and the Argentinian feminist writer Victoria Ocampo. But two of his books titled Philosophy of Disbelief and Virus of Faith, created far greater attention… On one hand, they made him exceedingly popular among young adults and progressive readers… On the other hand, these books fueled hostility and anger towards Avijit from religious fundamentalists.

   We wrote in Bangla because we wanted to popularize the basic as well as the cutting edge concepts of science and philosophy and art in this language. I wrote a book on biological evolution named Along the Path of Evolution a few years ago. Avi wrote countless articles, blogs, and writing was his passion, his life; to be honest he expressed himself better through writing than talking! In fact he so failed sometimes to meet my demand for verbal communication that we wrote handwritten letters to each other all the time, through all the highs and lows of our beautiful short but beautiful 13 years of life together. Anyway, he did not only write about science and atheism, he wrote in opposition to all kinds of prejudice, injustice, unscientific and irrational beliefs. He protested injustice and intolerance in society anywhere, something which can be demonstrated in the breadth of topics he covered in his writings. It extended from women’s rights (he wrote a heartfelt piece on Hypatia), nationalism, trying the Islamic fundamentalists who committed war crimes during the liberation war of Bangladesh, he protested the Iraq war, wrote against the torture in Abu Ghraib, massacres in Gujrat, Palestine, even the nationalistic views of the Bangladeshi Government and military actions against the minority ethnic groups in south-eastern Bangladesh. He reacted strongly against the UNC Chapel Hill shootings in the States, earlier this year, in which three students were shot in their apartment by a man who had advocated atheism on Facebook. Avi wrote:

   “Atheism is characterized by an absence of belief in the existence of supernatural gods or goddesses. To me, it is a rational concept to oppose any unscientific and irrational belief. But being an atheist does not automatically make you free from prejudice or hatred, unless you have compassion for humanity. It does not matter if you are religious or not, intolerance is everywhere. History suggests there were indeed many non-religious heartless autocratic rulers who mercilessly killed numerous countrymen. Now we know there is Craig Stephen Hicks who has a hatred for Muslims. These criminals deserve no sympathy or excuses. The NC Chapel Hill killings are inhumane and should be denounced by every human being with the slightest conscience.”

   If Frederich Nietzsche were here, he might have said Avijit “looked at Science from the perspective of the artist and looked at art from the perspective of life” — meaning that science was for him a passion and something to speculate about and wonder in, and art was not something abstract or otherworldly but, at its best, a force for change in life.

   Avi was also a normal human being who made his fare share of mistakes and had flaws, he was a bad singer, completely out of tune, he was intimidated by the practical and financial aspects of life and very goofy at home. He was also a father, a role model and a friend to our daughter. But above all, he knew what he was doing and where he wanted to go. And he knew the colossal risk he was taking by standing up and being counted. He said in one of his writings:

   “Those who think victory will be realized without any bloodshed are merely living in a fool’s paradise. We risk our lives the moment we started wielding our pens against religious bigotry and fundamentalism…”

   Which brings us on to this wider context, this deeper history. How did we come to a point, in a supposed secular democracy such as Bangladesh, where humanists and secularists can be hacked to death in the street.

   In the American south I get a lot of blank looks when I tell someone that I am originally from Bangladesh. I know you guys are not like that, but I would like to refresh your memory anyway! Bengal was a part of the Indian subcontinent under the British Empire for more than 200 years. In 1947, the colony was divided into two independent countries: India and Pakistan. The hasty boundaries correlated roughly with the divide between Islam and Hinduism. And of course, that divide would lie behind hundreds of thousands of deaths and the displacement of many millions, one of the largest human migrations in history.

   But the India-Pakistan divide was not the only divide.. East Bengal (or the Eastern) portion of Pakistan was itself separated from western Pakistan by thousands of miles of Indian territory, and also by differing cultures and identities. In Bengal, a dichotomy of Bengali and Muslim identities was prevalent from the very introduction of Islam in the region. However, the Bengali cultural identity was more deep-rooted and it was inevitable that it would resurface under the political and economic discrimination and oppression of the Bengalis by the ruling Pakistanis.. So the desire for independence began early, starting with the Bengali Language Movement in 1952. When the Pakistani government decided to exclude Bengali as an official language of Pakistan, young Bengalis sacrificed their lives to protest the exclusion. Students died on the streets on 21st February in 1952 to secure their right to use Bengali as an official language. Today, to honor their memory, we celebrate Language Martyrs’ Day (which is also celebrated worldwide as International Mother Language Day now) at the very same Dhaka national book fair where Avijit was killed.

   Finally, in 1971, after an arduous nine month Liberation war which killed millions of people, East Pakistan emerged as an independent nation-state called Bangladesh.

   The new constitution of Bangladesh had secularity, nationalism, democracy and socialism as its basic principles, but, in reality, none of them were implemented fruitfully. The country saw an astonishing emergence of the Muslim identity after a coup overthrew the government in 1975. Principles of secularism were replaced with “absolute trust and faith in the almighty Allah” and ‘democracy’ was replaced with autocratic military rule. Despite all that, when we were teenagers during the mid and late-80s it felt like Bengali Muslims were still pretty liberal, certainly compared to today. But the political and social landscape gradually changed, religious fundamentalism rose in Bangladesh.

   A major player in this rise is the international Islamist party Jamaat-e-Islami, not only has their political influence been rising but — with funding from the Middle East — they have been building a financial and business empire. They have their fingers into politics, into the most religious conservative parts of society, and they wield this financial and demographic might to influence the government. And, all our governments, so called secular or non secular, have bent their knees to their demands one way or the other.

   The ruling political party in Bangladesh is the Awami League They are supposed to be the largest secular political party in the country. Yet in the name of political expediency, they have repeatedly bent their knee to religious fundamentalists, acceding to their demands and granting their wishes, in a manner that can only be described as bribery, in order to secure their votes. . Last time they came to power with a mandate to identify senior political figures connected to contemporary Islamist parties and holding them accountable for crimes they committed in the liberation of Bangladesh.

   In 2010 War Crimes Trials began. Trials came to a head in late 2012 and early 2013, the Islamists were under extreme pressure, with voter support for Islamist parties declining and senior Islamists finally being found guilty of those war crimes, the Islamic fundamentalists turned their attention to atheists. If Islamist leaders might be put to death for war crimes –that’s the sentence for War Crimes in Bangladesh—then the secularists and atheists who called for justice must themselves meet the same fate.

   Fundamentalists in the past few years have therefore produced a number of hit lists, naming intellectuals, writers and bloggers they want to see dead, and making them widely available online. They came up with this infamous “hit list” of 84 bloggers in 2013, backed by these mainstream political parties, who presented it to the government as a list of bloggers they would like to see arrested for “insulting religion” and sentenced to death. They proposed a new blasphemy law that should be punishable by death and they wanted this law (against international standards of justice, of course) to be applied retrospectively to those bloggers that they deemed to have insulted Islam. It named targets that good Islamists could assassinate; we are also here reminded how medieval theologian Al-Ghazali gave all “good” Muslims the right to kill the Muslim philosophers who had different opinions about some metaphysical doctrines. In other words, both political Islamists and extremists are now systematically threatening those who dare oppose them, issuing new death threats and creating a culture of fear in the country.

   At this point, perhaps, Sheikh Hasina could have slapped down the Islamists. She could have said that no, people have a right to demonstrate, to write, to question, to criticize. But instead, this is what she said: We do not need a new blasphemy law, because we already have a law against “hurting religious sentiments” and we can prosecute the bloggers under that law! So the authorities received the list of suspect bloggers, officials promised to investigate, and then they arrested four of those bloggers from the list and pursued them through the courts. Avijit campaigned tirelessly to free these bloggers.

   So, What happens when you give bullies what they want? What happens when you accede to crazy demands? Soon there were one-hundred thousand Islamists marching on the streets of Dhaka demanding not just “death to atheist bloggers”, but for the cancellation of planned new education reforms that would have helped girls into education, and yet the government again made concessions. Since 2013 Islamists have been granted demand after demand, while the attackers of those first victims – Ahmed and Asif – were never found.

   To give another example, most pertinent to the anti-atheist violence, is a 2013 amendment to the so-called Information and Communication Technology Act.

   The Act produced by the previous conservative government was already oppressive, outlawing any publications, or broadcasts, or websites, that are “fake and obscene” (“obscene” already being a highly subjective term, of course) and outlawing any expression which may “corrupt”—again an incredibly vague term, and there are echoes of Socrates corrupting the youth, there. Furthermore, the Communications Act outlaws any communications that “causes to hurt or may hurt religious belief”. Those convicted of this improbable crime can be imprisoned for up to ten years, and may also be given a hefty fine.

   The punishment is indeed severe. But remember that we are still talking about the original act of 2006. In this original form, all the penal sections were “non-cognizable”. This is a term unique to the penal codes of Sri Lanka, India, Bangladesh, and Pakistan; a “non-cognizable” offence is one that police officers cannot investigate, or make an arrest under, without prior permission of a magistrate. However, the amendment of 2013 made four sections of the law cognizable (so that in future, judicial oversight would not be required to enforce these pseudo-“blasphemy” law provisions) as well as making them non-bailable. Although section 57 itself is not one of the “congizable” offences, the police have overcome that! Here is the strategy: In most cases, people arrested under the cognizable section 54 of the law and then also implicated with the offences of section 57. This is how the law is being used in the interest of the religious fundamentalists, such that in principle any complaint of “blasphemy” can now be escalated by any police officer.

   In addition to the offence of defamation, the Penal Code had something to say about “hurting religious belief” which was applicable for only print media, and the punishment for that was also 2 years of imprisonment. As if the the Penal Code was not already restricting freedom of expression enough, the new amended ICT Act has made the criticism of religion on the internet punishable with up to 14 years of imprisonment. Even more ridiculously, it seems that you could now get 14 years for criticizing religion online, while 2 years if you do so in print media. This means that (just as an example) a Facebook post to friends, could get you a prison sentence seven time longer than intentionally publishing an “offensive” front page news story in a national paper. The ICT act can indeed be used and misused to persecute critical writers, bloggers and journalists, and we have already seen ample examples of this.

   Islamic fundamentalism has spread for many years through Bangladesh via the support of all the political parties, and growing number of mosque-madrasa complexes all over country which have been established and funded by locally influential people or through the funding from a few countries in the middle east. Islamic fundamentalists use many madrasas as a way of spreading their message of hate and intolerance.

   And what has happened since my husband Avi, since Washiqur Rahman and Ananta Bijoy Das have been killed. Almost nothing! They arrested the guy who was threatening Avijit online and the to announce a “ban” on one of the invisible online groups that had claimed responsibility for his murder. In all that time neither the government nor the police have even contacted me. It is as if I do not exist to them. I heard this morning that the law enforcement in Bangladesh has captured 12 members of the Al Qaeda in Indian Subcontinent (AQIS) from various parts of Dhaka on Wednesday in connection with the killing of Avijit Roy and several other writers and freethinkers. I will reserve my comments on this since I have not got a chance to look at the details yet.

   CONCLUSION

   Many people have asked me what keeps me motivated? It is the overwhelming active support and sympathy (though I have to confess that I am not very good with taking sympathies from people) from family, friends and thousands of known and unknown people, and the whole Muktomona community. The Muktomona moderators and the advisors took up the work and moved it forward. Avijit not only wrote, throughout his life he attempted to establish a strong platform in our country for the practice of free-thought and freedom of speech. Kaberi Gayen, a Dhaka University professor, who has also been threatened to death wrote to me in a personal message right after Avi’s death,

   I know it has become our legal culture to use cleavers to protest writing. Still, after Avijit’s murder, the taboo we had of taking a stand for an atheist and practitioner of freethought has broken down. Everywhere people are speaking up. Almost everyday people are writing, holding protest meetings and rallies.
   As a student of history we all know that the world does not move in a linear path, it twists and turns moves backward and forward. Changes do not happen overnight.

   Whenever I start to sink in to the deep sense of my personal loss, I realize that for all intents and purposes that I stand before you in a privileged position here today. I have been given a platforms to speak, I have a comfortable life, a network of good friends and family who will support me through this ordeal. But what about those who have no voice, no agency, no platform? When the thousands of men and women get trafficked through the wild ocean, when girls get gang-raped in a public vehicle, ISIS butchers behead, when they force girls into sexual slavery, when Boko Haram abducts hundreds of young women and sells them off in medieval style, thousands of children die in poverty stricken nations, I see that they do not have a voice. I firmly believe that we need to have a sense of collective responsibility and consciousness. These are not isolated events, we need to understand the global phenomenon, the political, economic and social connections.

   I strongly belive that Humanism has come a long way in the west through the heroic age of ancient Greece, influence from the medieval Persians and Moors, revival of classical studies during Renaissance, Reformation, Enlightenment, French Revolution, Industrial Revolution. But many parts of the world, including Bangladesh, haven’t gone through many of these political, economic and social changes. Think about what the rest of the world was experiencing when the west was going through these changes in last few centuries. Indian sub-continent was a British colony, Africa was oppressed by many European powers, aboriginals were getting killed systematically in the Americas, we also had slavery and racism backed by many of these powers. So the context was never the same across the board. That is why, we need to be careful about how we talk about humanism to a specific cultures, countries. We should not try to impose it like the post-colonial Kamalism on any people. We need to connect the dots of the specific political and economic evolution of a specific nation and culture with the global economic and political influences and plays.

   Anyway, Sometimes, especially in the past few months, I have thought about my own feelings—my own loss and outrage, so real and important to me, it’s so much about me me me—and how these feelings contrast with the careless, indifferent, value-less universe in which we live. This contrast between human value, and the careless universe, is of course one of the great challenges of, and to, secular Humanism. How can we cope with this paradox in our own minds? In two ways, I believe! First, is to realize that this weightlessness, this valuelessness of “the view from nowhere”, of the careless universe, is a nothing! A zero! And therefore, it is nothing to worry about! What we are left with is us, ourselves: my thoughts and feelings, my losses as well as my triumphs, the meaning in my life, these are all important, because they are all that counts. And It makes no sense until we extend this realization as far as it will go in the human family. It is not just ourselves, but each other, every trafficked slave, every murdered writer, every lost and lonely mind, that are important and have value.

   We know this in theory, but we must, right now, in this world on the brink of so many extraordinary outrages, reach out across international borders, extend our personal circles of care and empathy to include everyone—every human being—fully and confidently as a person of moral worth. This is the way we can celebrate Avijit’s life, Ananta’s life, and all those who have suffered or are at risk. In Bangladesh they are fighting machetes with pens. Everywhere, we must fight fundamentalism and all oppression, with compassion and rationality and universalism, and with a deeper understanding of the conflicts. That is the twenty-first century challenge of humanism.

   Thank you.

   Courtesy: Muktomona link.

   Transcript of Rafida Ahmed Bonya's lecture. @BHAhumanists #BHAVoltaire https://t.co/jeOwdqalK4

   — Rayhan Rashid (@rayhanrashid) July 3, 2015

   Bonya Ahmed delivering Voltaire lecture. @BHA #BHAVoltaire pic.twitter.com/1InEs528hE

   — Rayhan Rashid (@rayhanrashid) July 2, 2015

   Log in to Reply
   • 

     মাসুদ করিম - ২৫ জুলাই ২০১৫ (১২:৪৮ অপরাহ্ণ)

     অসির বিরুদ্ধে মসীর লড়াই

     ২ জুলাই, ২০১৫ ব্রিটিশ হিউম্যানিস্ট এসোসিয়েশন আয়োজিত এই বছরের ঐতিহ্যবাহী ‘ভলতেয়ার বক্তৃতা’ দেবার জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও অভিজিৎ, বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে মুক্তমনা আন্দোলন নিয়ে কথা বলতে তাদের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলাম। ইংরেজিতে লেখা আমার বক্তৃতাটি মুক্তমনা পাঠকদের জন্য বাংলায় অনুবাদ করা হল।

     শুভসন্ধ্যা সবাইকে।

     শুরুতেই ঐতিহ্যবাহী ব্রিটিশ হিউম্যানিস্ট এসোসিয়েশনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমাকে আপনাদের সঙ্গে আজকে কথা বলতে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য।

     আমার প্রয়াত স্বামী ডক্টর অভিজিৎ রায় এবং আমি বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক, মানবতাবাদী এবং আমরা বাংলাদেশে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা ইসলামি মৌলবাদের সাম্প্রতিক শিকার। অভিজিৎ এবং আমি, এ বছর ফেব্রুয়ারির ১৬ তারিখে, অমর একুশে জাতীয় বই মেলায় অংশ নিতে আমাদের জন্মস্থান বাংলাদেশে গিয়েছিলাম। এটি বাংলাদেশের মাসব্যাপী উদযাপিত জাতীয় বই উৎসব, হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে এই মেলায়।

     ফেব্রুয়ারির ২৬ তারিখ রাতে জনাকীর্ণ এবং আলোয় আলোকিত বই মেলা থেকে আমরা যখন গাড়ির দিকে হেঁটে যাচ্ছিলাম, তখন ইসলামি মৌলবাদীদের একটি দল অভিজিৎ এবং আমার উপর চাপাতি দিয়ে নৃশংসভাবে হামলা চালায়। রাস্তার ধারে আমাদের কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয়। আক্রমণের এলাকাটি বহু পুলিশ এবং নিরাপত্তা ক্যামেরা দিয়ে ঘেরা ছিল। হাজার হাজার মানুষও ছিল সেখানে। কিন্তু কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। কাছেপিঠে পুলিশও দাঁড়িয়েছিল। একজন তরুণ সাংবাদিক আমাদের রাস্তা থেকে উঠিয়ে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যান, তার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

     হাসপাতালে নেবার পর অভিজিৎ মারা যায়। ঘাড় ও মাথার চার জায়গায় চাপাতির কোপে গুরুতর জখম হলেও প্রাণে বেঁচে যাই আমি। তবে হারাতে হয় একটি বৃদ্ধাঙুল; ক্ষতবিক্ষত হয় আমার দুই হাত, আঙুল এবং শরীরের বেশ কিছু জায়গা। ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়ু এবং শিরা-ধমনী ঠিক করতে এর মধ্যেই একাধিকবার অপারেশন করতে হয়েছে। ঘটনার চার মাসের একটু বেশি সময় পার হয়ে যাওয়ার পর এখনও আমার চিকিৎসা চলছে।

     অভিজিৎ এই চাপাতিবাজ খুনিদের সবচেয়ে নামকরা শিকার হলেও ও প্রথম শিকার নয়, এমনকি শেষও নয়। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে ওকে হত্যার পরপরই ইসলামি মৌলবাদীরা আরও দুজন বাংলাদেশি মানবতাবাদী ব্লগার-লেখককে একইভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে; অর্থাৎ কয়েক জন মিলে একইভাবে রাস্তার ধারে পেছন থেকে চাপাতি দিয়ে আক্রমণ করে। ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে হত্যা করা হয় ৩০ মার্চ। পুলিশ নয়, উপস্থিত জনগণ দুজন আততায়ীকে ধরে ফেলে। পরবর্তীতে তারা স্বীকার করেছে যে, ওয়াশিকুরের কোনো ব্লগ না পড়েই মাদ্রাসার হুজুরের নির্দেশে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমি আবার পরে আসছি।

     এরপর ১২ মে অনন্ত বিজয় দাশকে হত্যা করা হয়। অভিজিতের মতো অনন্তও বিজ্ঞান ও দর্শন নিয়ে লেখালেখি করত এবং ‘যুক্তি’ নামের একটি পত্রিকা সম্পাদনা করত। ও আমাদের খুব কাছের মানুষ ছিল, আমাকে বন্যা আপা ডাকত এবং একসঙ্গে অনেক বছর ধরে কাজ করেছে আমাদের সঙ্গে। যতদূর জানি, এখন পর্যন্ত ৮ জন সেক্যুলার কর্মী, ব্লগার ও লেখকের উপর আক্রমণ চালিয়েছে ওরা। এদের মধ্যে রয়েছেন, ২০১৪ সালে প্রফেসর শফিউল ইসলাম, ২০১৩ সালে ব্লগার আহমেদ রাজিব হায়দার, ২০১৩ সালে আসিফ মহিউদ্দিনের উপর ব্যর্থ আক্রমণ; আর ২০০৩ সালে হুমায়ুন আজাদের উপর আক্রমণ তো আছেই।

     এই হচ্ছে এখনকার ‘বাস্তবতা’। এবার আমি অভিজিতের জীবন, তার কাজকর্ম, লেখালেখি এবং আমাদের একসঙ্গে কাটানো জীবন সম্পর্কে কিছু বলব। তারপর আবার ফিরে আসব সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায়।

     আগে দুটো ব্যাপার উল্লেখ করে নিই। প্রথমত, ইংরেজি আমার দ্বিতীয় ভাষা, যদিও বেশ কিছুদিন ধরেই এ ভাষায় কথা বলছি। আমার ইংরেজি উচ্চারণ বাংলাদেশি ইংরেজি, দেশে আমদানিকৃত হাজারও মার্কিন সিটকম, কানাডিয়ান, মিনেসোটান এবং সর্বোপরি আমাদের ‘সুপ্রিয়’ বাইবেল বেল্ট তথা ইউএসএএর দক্ষিণাঞ্চলের উচ্চারণের এক অদ্ভুত মিশ্রণ। যদি আমার কথার কিছু বুঝতে আপনাদের সমস্যা হয় সেটা দয়া করে লিখে রাখবেন। বক্তব্য শেষে জিজ্ঞেস করলে আমি সানন্দে ব্যাখ্যা করব।

     আর দ্বিতীয় ব্যাপারটা হচ্ছে, আমি খুবই, জানি না এখানে সঠিক শব্দটা কী হবে, আমি এখন খুবই বিক্ষিপ্ত, আমার জীবন বিক্ষিপ্ত, খুবই বিক্ষিপ্ত আমার মানসিক অবস্থা। অভিজিতের মৃত্যুর পর মাত্র ৪ মাস পেরিয়েছে। ও ছিল আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু, ছিল আমার সব ভালো এবং মন্দ কাজের সঙ্গী– সুখে-দুঃখে, দ্বন্দ্ব-সংঘাতে এবং ভালোবাসায়।

     অভিজিৎ, অভি বলেই ওকে ডাকতাম আমি, ২০০১ সালে যখন সিঙ্গাপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়ো-মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংএ পিএইচডি করছিল, তখনই বাংলায় প্রথম ‘মুক্তমনা’ নামে মুক্তচিন্তার একটি প্লাটফর্ম গড়ে তোলে। মুক্তমনা শুধু একটা ব্লগ ছিল না, ছিল একটা মঞ্চ, একটা গোষ্ঠী। খুব অল্প সময়ে মুক্তমনা বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষ, মানবতাবাদী আন্দোলনের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।

     অভির সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয় ২০০২ সালে, এই মুক্তমনার মাধ্যমেই। এরপর থেকে বেশিরভাগ প্রকল্প এবং লেখালেখি আমরা মিলেমিশেই করতাম। আমরা একত্র হয়েছিলাম মানবতাবাদের নীতিতে। কিন্তু আবার কিছু মৌলিক বিশ্বাস এবং নীতিগত অবস্থানের ব্যাপারে আমাদের তীব্র মতবিরোধও ছিল, আমরা সেগুলো নিয়ে বিতর্ক করতাম। আমার ধারণা, যে কোনো মানবতাবাদী ব্যক্তি সেটা করতে বাধ্য।

     আমরা লেখালেখি, বিশেষ করে মানবতাবাদের বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে এতটাই প্রাণ ঢেলে বিতর্ক করতাম যে, অনেক দিন পর্যন্ত আমাদের মেয়ের ধারণা ছিল যে, আমরা বুঝি সারাক্ষণ ঝগড়া করি! তার বেশ কয়েক বছর লেগেছিল এটা বুঝতে যে, আমাদের এই ঝগড়ারূপী বেশিরভাগ আলোচনা, সব নয় অবশ্যই, মূলত দার্শনিক বিতর্ক, দাম্পত্য কলহ নয়।

     অভি ছিল নাস্তিক, ব্লগার, লেখক, সর্বোপরি একজন ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদী যার আগ্রহ ছিল জীবনের মৌলিক প্রশ্নগুলোর উত্তর অনুসন্ধান। বিজ্ঞান নিয়ে লিখতেই সবচেয়ে ভালোবাসত ও; শেষ বইটা লিখেছিল শূন্য থেকে কেমন করে মহাবিশ্বের উৎপত্তি হতে পারে তার সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক ধারণা নিয়ে। অভি বই লিখেছে জীবনের উৎপত্তি নিয়ে; সমকামিতার বৈজ্ঞানিক কারণ নিয়ে, ভালোবাসা নিয়ে– অবশ্যই বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে।

     সাহিত্য নিয়ে খুব আগ্রহী ছিল অভি, একটা বই লিখেছিল কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর আর্জেন্টিনিয়ান নারীবাদী লেখক ভিকতোরিয়া ওকাম্পোকে নিয়ে। কিন্তু ওর দুটি বই, ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ এবং ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ পাঠকপ্রীতি পেয়েছে সবচেয়ে বেশি, আলোচিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। একদিকে এই বই দুটোর কারণে ও খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে বাংলাভাষী মুক্তমনা পাঠকদের কাছে, আবার ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের কাছে হয়েছে চরম ঘৃণা আর আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু।

     আমরা বাংলায় লেখালেখি করতাম; কারণ আমরা বিজ্ঞান, দর্শন ও শিল্প-সাহিত্যের মৌলিক এবং অত্যাধুনিক বিষয়গুলো এই ভাষাভাষী মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলাম। কয়েক বছর আগে আমি ‘বিবর্তনের পথ ধরে’ নামে জৈব-বিবর্তনের উপর বই প্রকাশ করি। অভি বেঁচে থাকতে অসংখ্য প্রবন্ধ, ব্লগ লিখেছিল। লেখালেখি ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান, জীবন; সত্যি বলতে সে কথায় নিজেকে যতটা না ভালোভাবে প্রকাশ করতে পারত তার চেয়ে ঢের ভালো পারত লিখে প্রকাশ করতে। এমনকি সে মুখের ভাষায় আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে এতটাই ব্যর্থ হত যে, আমরা আমাদের এই ১৩ বছরের ছোট্ট কিন্তু অদ্ভুত সুন্দর জীবনে প্রায় হাতে লেখা চিঠি আদান-প্রদান করতাম নিজেদের মাঝে।

     অভিজিৎ শুধু বিজ্ঞান ও নাস্তিকতা নিয়েই লিখত না, সব রকম কুসংস্কার, অবিচার, অবৈজ্ঞানিক ও অযৌক্তিক বিশ্বাসের বিরূদ্ধেও লিখত। ও লিখত সমাজের সকল অবিচার ও অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে, ওর লেখার বিষয়বস্তুর ব্যাপ্তি ছিল সীমাহীন। ও লেখালেখি করেছে নারীঅধিকার (হাইপোশিয়ার উপর একটি হৃদয়গ্রাহী নিবন্ধ লিখেছিল) থেকে শুরু করে, জাতীয়তাবাদ, ইসলামি মৌলবাদীদের দ্বারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠিত গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের বিচার, ইরাক যুদ্ধের প্রতিবাদ, আবু গারাইব কারাগারের নির্যাতন, গুজরাট ও প্যালেস্টাইনে গণহত্যা, এমনকি বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সংখ্যালঘু জাতিসত্তাগুলোর উপর নিয়মতান্ত্রিক জাতীয়তাবাদী নির্যাতনের বিরদ্ধে।

     গত বছরের শুরুতে আমেরিকার ইউএনসি চ্যাপেল হিলে গোলাগুলির বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ করেছিল, ফেসবুকে নাস্তিকতার প্রচার চালাত এমন এক ব্যক্তি এক এপার্টমেন্টে তিনজন শিক্ষার্থীকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ প্রসঙ্গে অভি লিখেছিল:

     ‘‘নাস্তিকতার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অতিপ্রাকৃত দেবদেবীতে বিশ্বাস না রাখা। অবৈজ্ঞানিক ও অযৌক্তিক বিশ্বাস নাস্তিকের থাকা উচিত নয়। স্রেফ নাস্তিক হলেই একজন সব রকম বিদ্বেষ ও ঘৃণা থেকে মুক্ত হয়ে যায় না, যদি না তার মানবতার প্রতি সহানুভূতি থাকে। কেউ ধার্মিক কী ধার্মিক নয় সেটা ব্যাপার নয়, অসহিষ্ণুতার উপস্থিতি সর্বত্র। ইতিহাসে দেখা যায়, এমন অনেক ধর্মহীন হৃদয়হীন স্বৈরাচারী শাসক ছিল যারা অসংখ্য স্বদেশীকে হত্যা করেছে। আমরা এখন জানি, ক্রেইগ স্টিফেন হিক্স নামক একজন আছে যে মুসলিমদের প্রতি ঘৃণা ধারণ করে। এইসব অপরাধীর কোনো ধরনের সহানুভূতি বা অজুহাত প্রাপ্য নয়। এনসি চ্যাপেল হিলের হত্যাকাণ্ড অমানবিক এবং প্রতিটি বিবেগবান মানুষের উচিত এই ঘটনার ভর্ৎসনা করা।’’

     যদি ফ্রেডরিক নিটশে এখানে থাকতেন তাহলে হয়তো বলতেন, অভিজিৎ, ‘বিজ্ঞানকে দেখেছিল শিল্পীর চোখে আর শিল্পকলাকে জীবনের প্রেক্ষাপটে’— অর্থাৎ বিজ্ঞান ছিল ওর ধ্যান-জ্ঞান যা দিয়ে ও জীবনের মৌলিক প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজত আর শিল্পকলা ওর কাছে স্রেফ বিমূর্ত মূল্যহীন কিছু ছিল না বরং ছিল জীবনযাপনের সবচেয়ে বড় প্রভাবক।

     অভি ছিল আলাভোলা ভালো মানুষ, গায়ক হিসেবে বড্ড বেসুরো, জীবনের বাস্তবতায় কিছুটা উদাসীন। একই সঙ্গে ছিল আদর্শ পিতা, ছিল আমাদের মেয়ের অনুসরণীয় চরিত্র এবং সবচেয়ে কাছের বন্ধু। অভিজিৎ খুব ভালো করে জানত ও কী চায়; জানত কী করছে এবং কতদূর যাবে। ও জানত, মাথা তুলে দাঁড়াবার ঝুঁকি কত বড়। একটা লেখায় ও বলেছিল:

     ‘যারা ভাবেন বিনা রক্তে বিজয় অর্জিত হবে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। ধর্মান্ধতা ও মৌলবাদের মতো জিনিস নিয়ে যখন থেকে আমরা লেখা শুরু করেছি, জেনেছি জীবন হাতে নিয়েই লেখালেখি করছি।’’

     এই উক্তি আমাদেরকে নিয়ে আসে আরও বিস্তৃত প্রসঙ্গে, গভীর ইতিহাসে। কেন এবং কীভাবে এই অবস্থার সৃষ্টি হল? কাগজে-কলমে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে মানবতাবাদী-ধর্মনিরপেক্ষ মানুষদের রাস্তায় কুপিয়ে মারা হচ্ছে কেন?

     আমেরিকার দক্ষিণে আমাকে প্রায়ই এক ধরনের শূন্য দৃষ্টির সম্মুখীন হতে হয় যখন কাউকে বলি আমার আদি নিবাস বাংলাদেশে। আমি জানি আপনারা তেমন নন, তারপরও স্মৃতিটা একটু ঝালিয়ে নিচ্ছি। দুশ বছর ধরে বাংলা ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে ভারতীয় উপমহাদেশের একটা অংশ। ১৯৪৭ সালে এই উপনিবেশ দুদেশে বিভক্ত হয়, ভারত এবং পাকিস্তান নামে। তড়িঘড়ি টানা সে সীমানা নির্ধারিত হয়েছিল ইসলাম এবং হিন্দুধর্মের বিভাজনের উপর ভিত্তি করে। ধর্মীয় এই বিভেদে প্রাণ যায় লক্ষাধিক মানুষের এবং দেশান্তরিত হয় কোটি মানুষ, যা কিনা ইতিহাসে মানুষের সর্বোচ্চ দেশান্তরের দৃষ্টান্ত।

     ভারত-পাকিস্তানের এই বিভাজন শুধু দুদেশের বিভাজনই ছিল না। পূর্ব বাংলা, যেটা পাকিস্তানের পূর্ব অংশ সেটার ও পাকিস্তানের পশ্চিম অংশের মাঝে হাজার মাইল বিস্তৃত ভারতীয় অঞ্চল ছিল। পূর্বের মানুষের সংস্কৃতি ও আত্মপরিচয়ও ছিল ভিন্ন। বাংলায়, বাঙালি এবং মুসলিম এই দুই আত্মপরিচয়ের এক ধরনের মিশেল ইসলাম প্রচারের ব্যাপার ছিল প্রথম থেকেই। অবশ্য বাঙালি সাংস্কৃতিক চেতনা বাঙালির মনের এত গভীরে প্রোথিত যে, এটা অবশ্যম্ভাবী ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য ও শোষণ এ অঞ্চলের মানুষ এক সময় আর মেনে নেবে না। যার কারণে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর এ অঞ্চলের জনমানুষের মনে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাও সৃষ্টি হতে শুরু করে।

     পাকিস্তান সরকার যখন বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল তখন তরুণ বাঙালিরা তাদের জীবন দিয়ে এর প্রতিবাদ করেছে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেবার সংগ্রামে প্রাণ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের স্মৃতির সম্মানে, আমরা একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদ দিবস পালন করি (যেটা বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়), মাসব্যাপী ভাষার উৎসব করি, বই মেলা করি, যে বই মেলা প্রাঙ্গনে নিহত হয়েছে অভিজিৎ।

     ১৯৭১ সালে নয় মাসের দুঃসহ স্বাধীনতা সংগ্রামের যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। যার নাম বাংলাদেশ। বাংলাদেশের নতুন সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র মৌলিক নীতি হিসেবে গৃহীত হয়, যদিও কোনোটাই ফলপ্রসূভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। ১৯৭৫ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশটিতে এক অভূতপূর্ব মুসলিম আত্মপরিচয়ের উদ্ভব হয়। ধর্মনিরপেক্ষতা নীতি বাদ দিয়ে ‘আল্লাহর উপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা’ এবং ‘গণতন্ত্র’ বাদ দিয়ে সামরিক শাসন স্থাপিত হয়।

     এত কিছুর পরও আমার মনে আছে, সেই আশির দশকে যখন আমরা কিশোর ছিলাম তখনকার বাঙালি মুসলিমরা বেশ উদারমনা ছিল, অন্তত বর্তমানের তুলনায়। কিন্তু ধীরে ধীরে রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রেক্ষাপট বদলেছে, বাংলাদেশে উত্থান হয়েছে ধর্মীয় মৌলবাদের। এই উত্থানের এক বড় নিয়ামক হচ্ছে আন্তর্জাতিক ইসলামিক দল জামায়াতে ইসলামী। সময়ের পরিক্রমায় শুধু যে তাদের রাজনৈতিক প্রভাব বেড়েছে তা নয়, মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা অর্থে— অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যও গড়ে তুলেছে তারা স্বাধীন বাংলাদেশে। জামায়াত রাজনীতিতে তাদের প্রভাব বিস্তার করে মূলত ধর্মীয় রক্ষণশীলতা পুঁজি করে। ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক শক্তি আর জনসমর্থন কাজে লাগিয়ে এখন তারা এক মহীরুহে পরিণত হয়েছে। ফলে আমাদের সব সরকারই, সেক্যুলার বা নন-সেক্যুলার, কোনো না কোনোভাবে এদের কাছে মাথা নত করেছে এবং করছে।

     বাংলাদেশে এখন শাসক দল হচ্ছে আওয়ামী লীগ। কাগজে-কলমে তারা এদেশের বৃহত্তম ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল। কিন্তু রাজনৈতিক সুবিধা পাবার নামে, তারা বারবার ধর্মীয় মৌলবাদের কাছে মাথা নত করেছে, সাড়া দিয়েছে, পূরণ করেছে তাদের অযৌক্তিক দাবি-দাওয়া। যাকে বলে ভোটের আশায় স্রেফ ঘুষ দেওয়া। যদিও এবারের আগের বার তারা ক্ষমতায় এসেছিল কিছু সমকালীন ইসলামি দলের নেতৃবৃন্দ যারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদেরকে যুদ্ধাপরাধের বিচারের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে।

     সে প্রেক্ষিতে ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধ বিচার আদালত গঠিত হয়। বিচারের কাজ আলো পেতে শুরু করে ২০১২এর শেষে। ২০১৩এর শুরুর দিকে, ইসলামিস্টরা প্রচণ্ড চাপে পড়ে যায়; কারণ তারা জনসমর্থন হারাতে শুরু করে এবং তাদের প্রবীণ নেতারা যুদ্ধাপরাধের দায়ে একে একে দোষী সাব্যস্ত হতে থাকে। এ প্রতিক্রিয়ায় ধর্মীয় মৌলবাদীরা নাস্তিকদের উপর তাদের আক্রোশ প্রকাশ করতে শুরু থাকে। যদি ধর্মীয় নেতাদের যুদ্ধাপরাধের কারণে মৃত্যুদণ্ড হয়— যেটা বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজা— তাহলে যে সব ধর্মনিরপেক্ষ ও নাস্তিকেরা ধর্ম অবমাননা করে তাদেরকেও একই পরিণতির হুমকি দেওয়া শুরু করে তারা।

     মৌলবাদীরা কয়েক বছর ধরে কয়েকটি হত্যার তালিকা তৈরি করেছে, যেখানে তারা রেখেছে বুদ্ধিজীবী, লেখক ও ব্লগারদের। যাদেরকে তারা পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে চায়। সেটা তারা অনলাইনেও প্রচার করতে থাকে। ২০১৩ সালে ৮৪ ব্লগারের এক কুখ্যাত ‘তালিকা’ তৈরি করা হয় যা কিছু মূলধারার রাজনৈতিক দল সরকারের কাছে হস্তান্তর করে। তালিকাভুক্তদের ধর্ম অবমাননার দায়ে গ্রেফতার এবং মৃত্যুদণ্ডের দাবি তোলা হয় ইসলামপন্থী নানা মহল থেকে। তারা নতুন একটা ব্লাসফেমি আইনের প্রস্তাব করে (যা অবশ্যই আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের মানদণ্ডে পড়ে না) যাতে শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং মুক্তমনা মানুষ, লেখক ব্লগারদের উপর ইসলাম অবমাননার দায়ে আইনটি প্রয়োগ করার দাবি তোলে।

     ব্লগারদের বিরুদ্ধে সকল মাধ্যমে অপ্রপ্রচার চালানো শুরু করা হয়; উস্কানিমূলক মন্তব্য, আহবান জানানো হয় ভালো মুসলমানদের এগিয়ে এসে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়ার জন্য। এখানে উল্লেখ্য যে, মধ্যযুগের ধর্মতাত্ত্বিক আল-গাজ্জালি একইভাবে সকল ‘ভালো’ মুসলমানকেই মুসলিম দার্শনিকদের হত্যার অধিকার দিয়ে রেখেছেন যারা কিছু আধিভৌতিক ব্যাপারে ভিন্নমত ধারণ করবে। অন্যভাবে বললে, রাজনৈতিক ইসলামিস্ট এবং জঙ্গি ইসলামিস্ট উভয়ে নিয়ম করে তাদের বিরোধীদের মৃত্যু-হুমকি দিচ্ছে এবং পালন করছে ভয়-ভীতি-আক্রমণের সংস্কৃতি।

     এই পরিস্থিতিতে, শেখ হাসিনা সম্ভবত এসব অন্ধ মৌলবাদীদের থামিয়ে দিতে পারতেন। তিনি বলতে পারতেন, না, মানুষের প্রতিবাদ করার, লেখার, প্রশ্ন করার এবং সমালোচনা করার অধিকার আছে। কিন্তু সেদিকে না গিয়ে তিনি বলেছেন:

     ‘‘আমাদের নতুন করে ব্লাসফেমি আইনের দরকার নেই; কারণ আমাদের ইতোমধ্যেই ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ দেবার বিরুদ্ধে আইন আছে এবং এটা দিয়েই আমরা ব্লগারদের আইনের আওতায় আনতে পারব!’’

     ফলে কর্তৃপক্ষ এই ব্লগারদের তালিকা পাবার পর, কর্মকর্তারা ব্যাপারটা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন এবং এই তালিকার চারজন ব্লগারকে গ্রেফতার করে কোর্টে হাজির করেন। অভিজিৎ এই ব্লগারদের মুক্তির জন্যে দিনরাত সংগ্রাম করেছিল অনলাইন এবং অফলাইনে।

     নিপীড়ক যা চায় তাকে কি সেটাই দেওয়া উচিত? যখন তাদের উদ্ভট দাবিদাওয়া আপনি আমলে নেবেন, তখন কী ঘটে? শিগগিরই প্রায় এক লাখ ইসলামিস্ট ঢাকার রাস্তায় মিছিল শুরু করে শুধু ‘নাস্তিক ব্লগারদের মৃত্যুদণ্ডের’ দাবিতে নয়, বরং নতুন শিক্ষানীতি যেখানে নারীশিক্ষার গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিলো সেটাও বাতিলের দাবিতে। সরকার এবারও তাদের সঙ্গে আপোস করে। ২০১৩ সাল থেকেই সরকার ইসলামিস্টদের একের পর এক দাবি মেনে চলছে।

     নাস্তিকদের উপর সহিংসতার আরেকটি উদাহরণ হতে পারে, ২০১৩ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের নতুন একটি ধারার সংযোজন। আইনটি প্রস্তুত হয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকারের আগে ক্ষমতায় থাকা জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রক্ষণশীল রাজনৈতিক দলের হাতে। এর মাধ্যমে সাবেক রক্ষণশীল সরকার বিভিন্ন প্রকাশনা, টিভি চ্যানেল বা ওয়েবসাইট যেগুলো তাদের দৃষ্টিতে ‘ভুয়া’ এবং ‘অশ্লীল’ (অশ্লীলতা– যেটার নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই) এবং যেসব বক্তব্য জনগণের মতামত ‘কটাক্ষ’ করে (আবারও একটি অসংজ্ঞায়িত শব্দ) সে সব বেআইনি হিসেবে ঘোষণা করেছে।

     এই শব্দগুলোর মাধ্যমে আপনারা নিশ্চয়ই এখন শুনছে পাচ্ছেন সক্রেটিসের বিরুদ্ধে আনা সেই অভিযোগগুলোর প্রতিধ্বনি, যিনি নাকি তরুণদের দিকভ্রান্ত করেছিলেন। শুধু তাই নয়, এই তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ধর্মানুভূতিতে আঘাত করে এমন যে কোনো মন্তব্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। উপরে উল্লিখিত অপরাধ প্রমাণিত হলে অপরাধীকে দশ বছরের কারাদণ্ড এবং চড়া জরিমানার বিধানও রয়েছে।

     অবশ্যই শাস্তিটা কঠোর। কিন্তু মনে রাখা দরকার, আমরা এখনও ২০০৬ সালের মূল আইন নিয়ে কথা বলছি। এর সকল অপরাধ ‘অ-আমলযোগ্য’ ছিল। ‘অ-আমলযোগ্য’ শব্দটি শ্রীলংকা, ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের দণ্ডবিধির একটি মৌলিক পরিভাষা। একটি ‘অ-আমলযোগ্য অপরাধ’ হচ্ছে এমন অপরাধ যার পুলিশি তদন্ত এবং গ্রেফতারের আগে ম্যাজিস্ট্রেটের বাধ্যতামূলক অনুমতির প্রয়োজন। কিন্তু ২০১৩ সালের আইনে সংশোধনী এনে চার ধরনের অপরাধ আমলযোগ্য ঘোষণা করা হয়। যার ফলে ভবিষ্যতে কোনো ধরনের ছদ্ম ‘ব্লাসফেমি’ অপরাধ অপরাধ বিবেচনা করতে বিচার বিভাগের অনুমতির প্রয়োজন পড়বে না। একই সঙ্গে এই অপরাধগুলো করা হয়েছে অ-জামিনযোগ্যও।

     আইনটির সবচেয়ে কুখ্যাত ৫৭ ধারা যদিও আমলযোগ্য নয়, কিন্তু পুলিশের ভিন্ন রাস্তা খুঁজে পেতে সময় লাগেনি। কৌশলটি হল, পুলিশ প্রথমে অপরাধীকে গ্রেফতার করে আমলযোগ্য অপরাধ ৫৪ ধারা ব্যবহার করে। তারপর তার বিরুদ্ধে ৫৭ ধারার অভিযোগ যুক্ত করা হয়। ঠিক এভাবেই ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের খুশি করতে উপরোক্ত আইনটি ব্যবহৃত হচ্ছে। অর্থাৎ ব্লাসফেমি-সংক্রান্ত যে কোনো অপরাধ এখন পুলিশ কারও অনুমতি ছাড়া আমলে নিতে পারে, গ্রেফতার করতে পারে।

     মানহানিকর অপরাধ ছাড়াও বাংলাদেশের দণ্ডবিধির আরেকটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল, ‘ধর্মানুভূতিতে আঘাত’ যাকে বলমাত্র মুদ্রিত মিডিয়ার জন্য প্রযোজ্য এবং যে অপরাধের শাস্তি ২ বছরের কারাদণ্ড। দণ্ডবিধিটির মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যথেষ্ট পরিমাণে মনে হয় আটকানো যাচ্ছিল না; তাই এক ধাপ এগিয়ে আইসিটি আইনের মাধ্যমে ইন্টারনেটে ধর্মের সমালোচনা করলে ১৪ বছরের কারাদণ্ডের বিধান করা হয়।

     অদ্ভুত হলেও সত্যি, এখন আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ধর্মের সমালোচনা করে কিছু লিখলে আপনার চৌদ্দ বছরের কারাদণ্ড হবে আর প্রিন্ট মাধ্যমে লিখলে হবে দুই বছর। এর মানে হল, (উদাহরণস্বরূপ) ফেসবুকে আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করা বক্তব্য জাতীয় পত্রিকায় প্রথম পাতায় প্রকাশিত আক্রমণাত্মক সংবাদের তুলনায় সাতগুণ বেশি মাত্রার অপরাধ। আইসিটি আইনের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই অনেক লেখক, ব্লগার, সাংবাদিককে অপদস্থ করা হয়েছে, যার উদাহরণ আমরা দেখেছি ভুরি ভুরি।

     মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর ছত্রচ্ছায়ায় বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামি মৌলবাদের ব্যাপক উত্থান হয়েছে এবং স্থানীয় ও বৈদেশিক, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশের অর্থ দিয়ে দেশের আনাচে-কানাচে অসংখ্য মসজিদ-মাদ্রাসা স্থাপন করার মাধ্যমে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি শক্ত ভিত পেয়েছে। মসজিদ-মাদ্রাসা ব্যবহার করে ইসলামি মৌলবাদীরা প্রতিনিয়ত তাদের ঘৃণা এবং অসহিষ্ণুতার বাণী প্রচার করে যাচ্ছে।

     আমার স্বামী অভি, ওয়াশিকুর বাবু এবং অনন্ত বিজয় দাশ হত্যার পর কী হল? প্রায় কিছুই না! তারা একজনকে গ্রেফতার করল যে অভিজিৎকে ইন্টারনেটে হুমকি দিয়েছিল এবং একটি অদৃশ্য অনলাইন গ্রুপ যারা হত্যার দায় স্বীকার করেছে তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করল। এত সময় পেরিয়ে যাবার পর পুলিশ বা সরকার কারও পক্ষ থেকেই আমার সঙ্গে একবারও যোগাযোগ করা হয়নি। এমন একটা অবস্থা যে, তাদের কাছে আমার কোনো অস্তিত্বই নেই।

     আজ সকালেই জানতে পেরেছি যে, বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ভারতীয় উপমহাদেশের আল-কায়েদার শাখা, একিউআইএসএর ১২ সদস্যকে ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করেছে অভিজিৎ রায় এবং অন্যান্য লেখক, মুক্তিচিন্তকদের হত্যায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে। এখনও বিস্তারিত কোনো কিছু না জানায় এ ব্যাপারে মন্তব্য করা থেকে নিজেকে বিরত রাখছি।

     আমার কাছে অনেকেই জানতে চান, আমি কেমন করে নিজেকে উদ্দীপ্ত রাখি? সমমনা মানুষদের উপস্থিতি, সহানুভূতি (যদিও স্বীকার করছি আমার অন্যের থেকে সহানুভূতি নিতে ভালো লাগে না) বিশেষ করে আমার আত্মীয়, বন্ধু এবং চেনা-অচেনা মানুষসহ সমগ্র মুক্তমনা পরিবার আমার সঙ্গী থাকার কারণেই আমি সব হারিয়েও উজ্জীবিত থাকার চেষ্টা করতে পারছি। মুক্তমনার উপদেষ্টামণ্ডলী এবং এর সম্পাদকেরা তাদের সকল দায়িত্ব সীমাহীন নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে চলছেন। অভিজিৎ শুধু লেখালেখিই করেনি, সারা জীবন সে আমাদের দেশে এমন একটা শক্তিশালী মঞ্চ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে যেখানে চিন্তা ও বাকস্বাধীনতার মুক্ত চর্চা করা যাবে। অভির মৃত্যুর পর কাবেরী গায়েন, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, যাঁকেও মৃত্যু-হুমকি দেওয়া হয়েছে, আমাকে এক ব্যক্তিগত বার্তায় লিখেছিলেন:

     ‘‘আমি জানি এটা আমাদের আইনি সংস্কৃতি হয়ে উঠেছে যেখানে লেখার প্রতিবাদে চাপাতি ব্যবহার করা হয়। তারপরও, অভিজিতের হত্যাকাণ্ডের পর, নাস্তিকদের এবং মুক্তচিন্তার চর্চাকারীর পাশে দাঁড়ানোর সামাজিক যে ছুৎমার্গ সেটা ভেঙে পড়েছে। চারিদিকে মানুষ প্রতিবাদে উচ্চকণ্ঠ হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই মানুষ লিখছে, প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিল করছে।’’

     ইতিহাসের শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা সবাই জানি যে, সমাজ সরল পথে এগোয় না, এঁকেবেঁকে আগ-পিছ করে চলাই এর রীতি। পরিবর্তন তো রাতারাতি ঘটে না।

     যখনই আমি ব্যক্তিগত শোকানুভূতির অতলে তলিয়ে যেতে থাকি, ততবারই আমার মন হয় আমি এখনও একটা সুবিধাজনক অবস্থায় আছি, আমার আজ কথা বলার মঞ্চ আছে, জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য আছে, আছে এক দল ভালো বন্ধু ও আপনজন যারা আমাকে এই দুঃসহ সময়ে সমর্থন দেবেন। কিন্তু তাদের কী হবে যাদের কোনো কণ্ঠ নেই, সংগঠন নেই?

     যখন হাজার হাজার নারী-পুরুষকে পাচারের উদ্দেশ্যে উঠিয়ে দেওয়া হয় গভীরের সমুদ্রের বুকে ছোট নৌকায়, যখন মেয়েরা গণধর্ষণের শিকার হয় গণপরিবহনে, আইসিসের কসাইরা শিরোচ্ছেদ করে নিরপরাধ মানুষের, যখন তারা মেয়েদের যৌনদাসী হতে বাধ্য করে, যখন বোকো হারাম শত শত বালিকাকে অপহরণ করে মধ্যযুগীয় কায়দায় বিক্রি করে দেয়, দরিদ্র দেশগুলোতে হাজারও শিশু যখন মারা পড়ে, আমি দেখি যে, তাদের কোনো কণ্ঠ নেই। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আমাদের একটা সম্মিলিত দায়িত্ববোধ এবং চেতনা থাকা দরকার। কোনো ঘটনাই বিচ্ছিন্ন নয়, আমাদেরকে বুঝতে হবে আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহ, বুঝতে হবে প্রতিটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ঘটনাবলী কীভাবে একে অপরের সঙ্গে জড়িত।

     আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, পশ্চিমে এই মানবতাবাদের ধারণা সেই প্রাচীন গ্রিসের বীরত্বগাথা, মধ্যযুগের পার্সি এবং মুরদের প্রভাব, রেনেসাঁর সময়ে ধ্রুপদী-চর্চার পুনরুত্থান, রোমান্টিসিজম, এনলাইটেনমেন্ট, ফরাসী বিপ্লব, শিল্প বিপ্লব ইত্যাদি বহু পথ পাড়ি দিয়ে এমন পর্যায়ে এসেছে। বিশ্বের অনেক অংশ, যেমন বাংলাদেশ, এমন ধরনের নানা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিবর্তনের ধাপ পার করেনি।

     ভেবে দেখুন, পশ্চিম যখন গত কয়েক শতাব্দী ধরে এসব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, তখন বাকি বিশ্বে কী ঘটছিল? ভারতীয় উপমহাদেশ ছিল একটা বিলেতি উপনিবেশ। আফ্রিকা নিষ্পেষিত হচ্ছিল বিভিন্ন ইউরোপীয় শক্তির হাতে। আমেরিকার আদিবাসীরা নিয়মতান্ত্রিক হত্যাযজ্ঞের শিকার হচ্ছিল। এসব বিশ্বশক্তির পৃষ্ঠপোষকতায় বর্ণবাদ, দাসপ্রথাও চালু ছিল। তাই সব জায়গার সব পরিস্থিতি সব সময় একই রকম ছিল না এবং থাকেও না।

     এ কারণে আমরা যখন কোনো নির্দিষ্ট জাতি-গোষ্ঠীর মানবতাবাদ নিয়ে আলোচনা করব তখন সতর্ক থাকতে হবে। উত্তর-ঔপনিবেশিক কামালবাদের মতো করে কোনো জনগোষ্ঠীর উপর কিছু চাপিয়ে দেওয়া উচিত হবে না। নির্দিষ্ট কোনো জাতি ও সংস্কৃতির আঞ্চলিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিবর্তনের সঙ্গে বৈশ্বিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবের সম্পর্কগুলো ও ঘটনা এ প্রেক্ষাপটগুলো আমাদের চিন্তা করতে হবে।

     যাহোক, গত কয়েক মাসে নানা সময় আমি আমার নিজের অনুভূতিগুলো নিয়ে ভেবেছি— সব হারানোর শোকে কাতর হয়েছি, ক্রুদ্ধ হয়েছি। মাঝে মাঝে আমার হারানোর বেদনা আমার কাছে প্রচণ্ড বাস্তব আর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়, আমি হয়ে যাই শুধুমাত্র ‘আমি-কেন্দ্রিক’। পরমুহূর্তেই ভাবি, আমার এসব প্রচণ্ড শক্তিশালী অনুভূতি উদ্দেশ্যহীন, উদ্বেগহীন, মূল্যহীন মহাবিশ্বের বিশালতার কাছে কতটাই না নগণ্য। মানব মূল্যবোধের সঙ্গে মহাজগতের এই উদ্দেশ্যহীনতার বৈপরীত্যই আমার কাছে ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদীদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

     এই হেত্বাভাস আমরা কীভাবে গ্রহণ করব? আমার মতে, দুই উপায়ে। প্রথমেই উপলব্ধি করতে হবে এই উদ্দেশ্যহীন, শূন্য মহাবিশ্বের মূল্যহীনতা। তারপর ভাবতে হবে, মহাবিশ্বের তুলনায় আমরা নগণ্য হলেও আমাদের চিন্তা, অনুভূতি, হারজিত, জীবনের অর্থ, এগুলো জীবনের এই ক্ষুদ্র মঞ্চে খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিজেদের ক্ষুদ্রতা অনুভব করে আমরা যতক্ষণ না ‘আমাদের’ ব্যক্তিগত জীবনবোধ সমগ্র মানবজাতির জন্য বিস্তৃত করতে পারছি, ততক্ষণ এর মূল্য নেই। শুধু নিজের জন্য নয়, পাচার হওয়া প্রত্যেক মানুষ, অপহৃত লেখক, একাকী কিংবা দিগভ্রান্ত মন সবার কথা ভাবা সমান গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান।

     তাত্ত্বিকভাবে আমরা এসব জানি। আমাদের এখনই এই ঘৃণা আর বিক্ষোভের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা বিশ্বের সকল সীমানার উর্ধ্বে উঠে, আমাদের ব্যক্তিগত ভালোবাসা ও সমানুভূতির বৃত্ত প্রসারিত করতে হবে প্রত্যেক মানুষের জন্য। সবাইকে ভাবতে হবে পরিপূর্ণ এবং স্বাধীন মানুষ হিসেবে। এভাবেই আমরা অভিজিতের জীবনবোধ উদযাপন করতে পারব, উদযাপন করতে পারব অনন্তসহ আর সবার জীবন যারা দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন কিংবা বেঁচে আছেন মৃত্যু-ঝুঁকি নিয়ে।

     বাংলাদেশে মুক্তচিন্তকরা চাপাতির বিরুদ্ধে লড়ছেন কলম দিয়ে। সারা বিশ্বেই মৌলবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়তে হবে সহানুভূতি, যুক্তিবোধ, সর্বজনীনতা এবং বিভিন্ন সংঘাতকের কারণ গভীরভাবে উপলব্ধির মাধ্যমে। এটাই মানবতাবাদের একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ।

     ধন্যবাদ সবাইকে।

     Log in to Reply