যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেলে সেটি 'পড়ে' না—নেমে আসে। সেই নামার পথ ও পদ্ধতিতেই লুকিয়ে থাকে পাইলটের দক্ষতা ও প্রস্তুতির সত্যিকারের পরীক্ষা। অনেক প্রশ্ন জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছে। এই দূর্ঘটনার ক্ষেত্রে যন্ত্রের সীমাবদ্ধতা সামলাতে না পারার দায় শুধুই কি এক নবীন পাইলটের অনভিজ্ঞতা ও দক্ষতার অভাবের ওপর দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলা যাবে? 

Air Force Jet Crashes in a Bangladesh School, Credit: The Hindu

গত দু’দিন ধরে মাইলস্টোন স্কুলের ট্র্যাজেডি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে অনেক বিশ্লেষণ ঘুরছে, যার অধিকাংশই জল্পনা-কল্পনা ও প্রযুক্তিগত অজ্ঞতার ফসল। সেই কারণেই এই লেখা—একটি তথ্যভিত্তিক ও পেশাগত বিশ্লেষণ। শুরুতেই আসুন এ সংক্রান্ত প্রচারিত মিথগুলো ভাঙা যাক। মিথ ১. পাইলট মাইলস্টোনের মাঠে অবতরণ করতে চেয়েছিলেন। এটি একেবারেই ভুল ও হাস্যকর ধারণা। যুদ্ধবিমান অবতরণের জন্য ১ কিমি লম্বা মাঠও যথেষ্ট নয়। তদুপরি, মাইলস্টোনের মাত্র ১ কিমি পশ্চিমে তুরাগ নদীর ওপারে অনেক খোলা জায়গা ছিল। মিথ ২. ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ট্রেনিং কেন? যুদ্ধবিমানের প্রশিক্ষণ সাধারণত শহরের বাইরে হয়। কিন্তু উড্ডয়ন ও অবতরণ তো রানওয়ে থেকেই করতে হয়, যা প্রায়শঃই শহরের কাছেই থাকে। মিথ ৩. বিমানটি ছিল খুব পুরোনো ও ‘জংধরা’। এটিও বিভ্রান্তিকর। ঘাতক F-7 BGI হলো F-7 সিরিজের একটি কাস্টম ভেরিয়েন্ট যুদ্ধবিমান যা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জন্য  প্রস্তুত করা হয় । এটি সম্পূর্ণ ট্রেনিং ক্ষমতায়নের ও তারপর কম্ব্যাট মিশনের জন্য যথার্থ। ২০০৬-২০০৮ এ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এটি ক্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করে।  F-7 B।I এর বৈশিষ্ট্য হলো, এটি একটি পূর্ণ একক আসনের যুদ্ধবিমান। শুধুমাত্র  পাইলটদের লাস্ট ফেজ

ট্রেনিং এর চূড়ান্ত কালে এটি ব্যবহার করা যায়।  নিয়ম অনুযায়ী যেকোন বিমানের প্রতিটি যন্ত্রাংশ নির্ধারিত সময়/ঘণ্টা শেষে বদলানো হয়। না বদলালে বিমান ‘এয়ারওয়ার্দি’ থাকে না। তাই ফিটনেস পাস থাকলে  বিমানের বয়স কতো হলো তা গুরুত্বহীন। উদাহরণস্বরূপ, আমেরিকান এয়ারফোর্স এখনো ১৯৬০-এর দশকে নির্মিত T-35 Talon প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহার করে। তা এখনও ওড়ার উপযোগী। মিথ ৪. রানওয়ের পাশে উঁচু বিল্ডিং কেন? নগর পরিকল্পনার ব্যর্থতা এ প্রশ্নের জন্ম দেয় বটে, তবে স্মরণ রাখা জরুরি যে বিমানটি একটি দোতলা ভবনে বিধ্বস্ত হয়। উঁচু ভবন এ ঘটনায় সরাসরি দায়ী নয়। এবার প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করা যাক।   ISPR জানায়, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির দুপুর ১:০৬-এ তেজগাঁও বিমানঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করেন। এটি ছিল তাঁর প্রথম সলো ফ্লাইট—অর্থাৎ প্রশিক্ষক ছাড়া এককভাবে বিমান চালানো। উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই তিনি যান্ত্রিক ত্রুটির কথা জানান এবং ঘাঁটিতে ফিরতে গিয়ে বিমানটি ভূপাতিত হয়। একজন নতুন পাইলটকে সলো ফ্লাইট বা একা বিমান চালনার অনুমতি দেয়া হয় তখনই যখন তিনি মোটামুটিভাবে একটা বিমান উড্ডয়ন করতে পারেন‚ পথ খুঁজে নেয়া বা নেভিগেশনের ন্যূনতম  পারদর্শীতা দেখাতে পারেন…

জ্ঞানচর্চার স্পৃহা কখনও কখনও ‘অপরাধ’ হয়ে ওঠে। প্রচল রাষ্ট্র ও সমাজের কাছে ওই ব্যক্তি শত্রু হয়ে ওঠে, যে কিনা কেবলই প্রশ্নের উত্তর হাতড়ে বেড়ায়, কেবলই যুক্তি দিয়ে বুঝতে চায় সব কিছুকে। [. . .]

১ জ্ঞানচর্চার স্পৃহা কখনও কখনও ‘অপরাধ’ হয়ে ওঠে। প্রচল রাষ্ট্র ও সমাজের কাছে ওই ব্যক্তি শত্রু হয়ে ওঠে, যে কিনা কেবলই প্রশ্নের উত্তর হাতড়ে বেড়ায়, কেবলই যুক্তি দিয়ে বুঝতে চায় সব কিছুকে। অথচ ব্যক্তির সেই স্পৃহা হয়ত জেগে ওঠে অন্তর্গত নিষ্পাপ বিহ্বলতা থেকে। জাগতে পারে অসহায় বিস্ময় ও ক্রন্দন থেকে। যেমন জেগেছিল আরজ আলী মাতুব্বরের ভেতর। সে ঘটনা সকলেরই জানা। ‘মাকে আমি আর কোনওদিনই দেখতে পাব না! মিশে যাবেন তিনি মৃত্তিকার ভেতর!’ হয়ত এমনই এক প্রতিকারহীন কষ্ট থেকে মাতুব্বর ১৩৩৯ সনে তাঁর মৃত মার ছবি তুলেছিলেন এক আলোকচিত্রীকে নিয়ে এসে। কিন্তু তাতে বেঁকে বসে সমাজের কর্তাব্যক্তিরা। কারণ ছবি তোলা তো ধর্মে নিষেধ। তার ওপর নারীর – মৃত নারীর! তাঁর মার জানাজা আর দাফন করেনি তারা। কয়েকজন নিকটাত্মীয় ও শুভানুধ্যায়ী নিয়ে মায়ের শবদেহের সৎকার করেন তিনি। বাল্যকাল থেকেই সত্যের অনুসন্ধানে একাগ্র মাতুব্বরকে সমাজপতিদের সংস্কার, যুক্তি ও বুদ্ধিহীনতা অস্থির করে তোলে। এ ঘটনায় হৃদয়-মনন জুড়ে যে আলোড়ন ওঠে, তাই তাঁকে নিয়ে যায় নিরাসক্ত জ্ঞানচর্চার দিকে। এরপর তাঁকে আর ফেরানো যায়নি সে-পথ থেকে। দীর্ঘ ১৮ বছর জ্ঞানসাধনার পর তিনি তাঁর সত্যানুসন্ধান নিয়ে মানুষজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে শুরু করেন। সে কথা জেনে ১৩৫৮ সনের ১২ জ্যৈষ্ঠ বরিশাল শহরের তদানীন্তন ল-ম্যাজিস্ট্রেট ও তবলিগ জামাতের আমির এফ. করিম তাঁকে জামাতভুক্ত করার জন্যে সদলে তাঁর বাড়িতে তসফির নেন। মাতুব্বর তাঁকে বলেন ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞান এই তিন বিষয়ের মধ্যে সমন্বয়ের চিন্তা করতে গিয়ে তাঁর মনে অনেক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তিনি সেগুলোর উত্তর খুঁজছেন। তবলিগ জামাতের আমির যদি তাঁকে সেসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন, তা হলে তিনি জামাতে শরীক হবেন। এফ. করিম তাঁর কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। তবে প্রশ্নগুলোর লিখিত তালিকা নিয়ে যাওয়ার সময় বলেন, ‘কিছুদিন পরেই এর উত্তর পাবেন।’ কয়েকদিন পর তিনি ‘কম্যুনিজমের অপরাধে একটি ফৌজদারি মামলার ওয়ারেন্ট’ পেলেও আর উত্তর পাননি। কারাগারে যেতে হয় তাঁকে। কিন্তু সেখানে আটকে রাখা যায়নি তাঁকে। আদালতে তিনি যে জবানবন্দি দেন তার শিরোনাম ছিল ‘সত্যের সন্ধানে’। আদালত তাঁকে মুক্তি দিলেও নির্দেশ দেন, ‘সত্যের সন্ধানে’ কখনও প্রকাশ করতে পারবেন না তিনি। মাতুব্বর তাঁর সে গ্রন্থ প্রকাশ করতে পারেন স্বাধীন বাংলাদেশে, ২২…

বর্ষীয়ান বুদ্ধিজীবী সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী গত সপ্তাহে সম্পাদক এবং ব্লগারদের উপরে নৃশংস হামলার পর বিডি আর্টসের সাথে সাক্ষাৎকারে অন্যান্য বুদ্ধিজীবীদের মতই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। সাক্ষাৎকারটি সংক্ষিপ্তই ছিল [..]

বর্ষীয়ান বুদ্ধিজীবী ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী গত সপ্তাহে সম্পাদক এবং ব্লগারদের উপরে নৃশংস হামলার পর বিডি আর্টসের সাথে সাক্ষাৎকারে অন্যান্য বুদ্ধিজীবীদের মতই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। সাক্ষাৎকারটি সংক্ষিপ্তই ছিল। প্রায় পুরোটাই নীচে কোট করছি : "সময়টা তো খুব আশঙ্কাজনক, একের পর হত্যাকাণ্ড ঘটছে। আশঙ্কাজনক আরও এক কারণে যে, অপরাধীরা ধরা পড়ছে না। আর অপরাধীরা ধরা পড়ছে না বলেই এই অপরাধ বাড়ছে। এর মাত্রাও বেড়ে যাচ্ছে। এরা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। এরা মনে করছে যে, এদের কোনও কিছুই হবে না। এমনিতেই এরা মনে করছে, ধর্মীয়ভাবে শহীদ হবে যদি শাস্তি পায়। তার ওপরে এরা শাস্তি পাচ্ছেও না। কাজেই তারা মনে করে যে, এভাবে পার পাওয়া যাবে এবং এটা তাদের পক্ষে অনেকটা বীরত্বপূর্ণ কাজে পরিণত হয়েছে।’ রাষ্ট্র ও সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমে এই ধরনের উগ্রবাদীরা সবুজ সংকেত পেয়ে যাচ্ছে কি না, এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তা তো বটেই। যারা লিখছে তারা তো অপরাধ করে নাই, নিজের মত প্রকাশ করছে। তারা বৈজ্ঞানিকভাবেই তা লিখছে, কোনো ধর্মীয় আক্রমণের জন্য লিখছে না।’ তিনি হতাশা বোধ করছেন বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের কার্যক্রমে। এটা প্রতিবাদী তরুণদের উৎসাহিতও করছে না। তার কারণে ‘প্রতিবাদ হচ্ছে না সেভাবে। কেউ গুরুত্বও দিচ্ছে না। এটা তো সবার জন্য সমস্যা। রাষ্ট্র গুরুত্ব দিচ্ছে না, সমাজও গুরুত্ব দিচ্ছে না।’ উত্তরণের উপায় হচ্ছে, ‘রাষ্ট্রকে সজাগ হতে হবে। রাষ্ট্র যে কেবল চিন্তার স্বাধীনতাকে রক্ষা করবে, তা না। এরা আক্রমণ করছে রাষ্ট্রের যে ভিত্তি—যে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হওয়ার কথা—সেই ভিত্তির ওপর আক্রমণ করেছে। এরা যে জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছে বিদেশিরা তাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে। বিদেশি মানে বিদেশি পরাশক্তি।’ কিন্তু এটা কি বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা? বা একে কি আদৌ বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলা যায়? ‘একে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলার কোনও অজুহাতই নেই। এটা তো বোঝা যাচ্ছে যে, সুপরিকল্পিত। আর এরা যে নামেই আসুক, জঙ্গি বা অন্যকিছু এদের একটাই কাজ— রাষ্ট্রের মূলনীতিকে আঘাত করা।’ এই সাক্ষাৎকারে অবাক হবার মত কিছুই নেই। সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডসহ গত কয়েকমাস ধরে ব্লগারদের উপর ক্রমাগত হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী একজন প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী যে প্রতিক্রিয়া দেখানোর কথা তিনি তাই দেখিয়েছেন। কিন্তু এই সাক্ষাৎকারটি পড়তে পড়তে কয়েকমাস আগে তাঁর আরেকটি সাক্ষাৎকারের কথা মনে পড়ে…

আলেক্সিস সিপ্রাসকে গ্রিসের মানুষ বেছে নিয়েছিলেন বোধ হয় এ কারণে যে, তিনি একজন বামপন্থী। তাঁরা হয়তো ভেবেছিলেন, ২০০৮ সাল থেকে ইউরোপ ও আমেরিকার অর্থনৈতিক সংকটের কারণে গ্রিসে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে, একজন বামপন্থীর নেতৃত্বে গঠিত সরকারই পারবে তা সামাল দিতে [....]

আলেক্সিস সিপ্রাসকে গ্রিসের মানুষ বেছে নিয়েছিলেন বোধ হয় এ কারণে যে, তিনি একজন বামপন্থী। তাঁরা হয়তো ভেবেছিলেন, ২০০৮ সাল থেকে ইউরোপ ও আমেরিকার অর্থনৈতিক সংকটের কারণে গ্রিসে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে, একজন বামপন্থীর নেতৃত্বে গঠিত সরকারই পারবে তা সামাল দিতে। এরই ধারাবাহিকতায় জুনের শেষ সপ্তাহে সিপ্রাস যে গণভোটের ডাক দিয়েছিলেন, তাতেও গ্রিসের জনগণ ভোট দিয়েছিলেন ত্রৈকা তথা ইউরোপীয় কমিশন, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর না করার পক্ষে। জোসেফ স্টিগলিজ ও পল ক্রুগম্যানের মতো অর্থনীতিবিদরাও গ্রিসের নীতিনির্ধারকদের পরামর্শ দিয়েছিলেন, তাঁদের নিজস্ব মুদ্রা দ্রাখমা আবারো চালু করে সঞ্চয়ের পরিমাণ বাড়িয়ে গ্রিসের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে তুলতে। কিন্তু সেসব করতে গেলে ইউরোর পিছুটান ঝেড়ে ফেলতে হতো গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাসকে, যা করার সাহস ছিল না তাঁর। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে তাই তৃতীয়বারের মতো গ্রিসকে তার ঋণসংকট থেকে উদ্ধার করার নামে আরো ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের দিকে ঠেলে দিতে সক্ষম হয়েছে ইউরোজোন। ইউরো ব্যবহারকারী ১৯টি রাষ্ট্রের জয় হয়েছে, জয় হয়েছে গ্রিসের অস্বাভাবিক ধনীদের। ব্রাসেলসে এমন একটি চুক্তি হয়েছে, যা সবাইকে মনে করিয়ে দিচ্ছে ১৯১৯ সালের কথা—ভার্সাইয়ের কথা। প্রথম মহাযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পর পুরো ইউরোপ তাদের বাধ্য করেছিল ভার্সাই চুক্তি করতে। যার ফলে পরবর্তী সময়ে অনিবার্য হয়ে উঠেছিল দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ। ব্রাসেলস চুক্তি যদি সত্যিই বাস্তবায়ন হয়, তা হলে অবশ্যম্ভাবীভাবেই গভীর এক সংকটের দিকে ইউরোপ এগিয়ে যাবে। দ্য গার্ডিয়ানে একজন মন্তব্য করেছেন, ভার্সাইয়ের ওই চুক্তির চেয়েও অবমাননাকর নতুন এই চুক্তি। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান এ চুক্তিকে অভিহিত করেছেন ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ’ হিসেবে। অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনও এই চুক্তি হওয়ার মাস দেড়েক আগে নিউ স্টেটসম্যানে গ্রিসের অর্থনৈতিক কৃচ্ছ্রসাধনায় কোনো লাভ হবে কি না, তা নিয়ে নিবন্ধ লিখেছিলেন। তাতে তিনি বিরোধিতা করেছেন চাপিয়ে দেওয়া এই কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচির। প্রসঙ্গত, তিনি আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন ১৯১৯ সালের ৫ জুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড লয়েড জর্জকে উদ্দেশ করে লর্ড ম্যানিয়ার্ড কেইন্সের একটি উদ্ধৃতি, যার মাধ্যমে অর্থনীতিবিদ কেইন্স নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন প্রথম মহাযুদ্ধের পরে সম্পাদিত ভার্সাই শান্তিচুক্তির দৃশ্যপট থেকে। কেননা কেইন্সের মতে, কৃচ্ছ্রসাধনার মধ্য দিয়ে এ ধরনের সংকটের সমাধান করা যায় না; বরং তা আরো ঘনীভূত হয়। পরে তিনি এ প্রসঙ্গে একটি…

লিসিয়াস মানুষের নামকরণ করেছিলেন হোমো স্যাপিয়েন্স, অর্থাৎ জ্ঞানী জীব। কিন্তু সে যথার্থ জ্ঞানী হতে পারেনি। তার মধ্যে স্বার্থপরতা ও প্রতিযোগিতা প্রবৃত্তির মাত্রা অত্যধিক। ধর্ম ও সংস্কৃতির শত ধৌতনেও এই মলিনত্ব ঘোচেনি। পুঁজি হলো এইসব প্রবৃত্তির মূর্তরূপ। পুঁজির প্রকোপ প্রশমনে সাফল্য লাভের ওপরই মানুষের জ্ঞানী হওয়ার সম্ভাবনা নিহিত। [. . .]

বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে সম্প্রতি প্রথম আলোর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘রক্ষা করি পরিবেশ/গড়ি সোনার বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে পরিবেশবিদ, বন কর্মকর্তা ও সুধীজনের প্রদত্ত ভাষণের নির্যাস নিম্নরূপ। ক. সরকার পরিবেশ সুরক্ষায় আন্তরিক। কিন্তু প্রভাবশালী কতিপয় পরিবেশনাশী ব্যক্তির দৌরাত্ম্যে সবকিছু ভন্ডুল হতে চলেছে। খ. পরিবেশবান্ধব অর্থনীতি ও জীবনমান উন্নয়ন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন সমবেত উদ্যোগ। গ. টেকসই উন্নয়ন ধারণার বিকাশ ঘটান। ঘ. বন বিভাগের ওপর অত্যধিক কর্মচাপ এবং ফলত নানা ব্যর্থতা। ঙ. পরিবেশ ধ্বংস ও মনুষ্যবিলুপ্তির আশঙ্কা এক সমাবদ্ধ বাস্তবতা। এই বিজ্ঞ আলোচকদের নিয়েই এই পর্যালোচনা। ক. কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তির দাপটে সরকারের পরিবেশ রক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়া অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই আমাদের বাস্তবতা। এই ব্যক্তিবর্গ দেশের শিল্পপতি, যাঁরা প্রভূত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে সরকারকে স্বস্তিতে রেখেছেন। তাদের উৎপন্ন বর্জ্যের ব্যাপারে সরকারের পক্ষে কোনো কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া সংগত কারণেই যথেষ্ট কঠিন। কিছুদিন আগে এক দৈনিকে প্রকাশিত মিল্ক ভিটা কোম্পানির জনৈক কর্মকর্তার একটি লেখা পড়েছিলাম। তিনি একদা পরিবেশ অধিদপ্তরে কর্মরত ছিলেন এবং ‘অত্যুৎসাহবশত’ কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বর্জ্য শোধনে গাফিলতির দায়ে বড় অঙ্কের অর্থ জরিমানা করেছিলেন। ফল হয়েছিল হিতে বিপরীত। অতঃপর নির্বাসন বহু দূরের মিল্ক ভিটা কোম্পানিতে, যার সঙ্গে পরিবেশ রক্ষার কোনো সম্পর্ক নেই। এই হলো সরকারের পরিবেশ রক্ষা কর্মকাণ্ডের চালচিত্র। আমরা এই বাস্তবতা ভুলে যাই যে প্রাথমিক পুঁজি সঞ্চয়কালে প্রকৃতিকে ছাড় দেওয়া একটি অবান্তর প্রশ্ন। এতে পুঁজিপতি ও সরকার উভয়েরই ক্ষতি। কবে এই পুঁজি সঞ্চয়ের কাল শেষ হবে এবং সরকার পরিবেশ রক্ষায় কঠোর হবে বোঝা দুষ্কর। ঢাকার আশপাশের নদীগুলো ইতিমধ্যে বর্জ্যাগার হয়ে উঠেছে। আগামী দিনে সারা দেশে এই ধারার শিল্পায়ন বাস্তবায়িত হলে দেশের পরিবেশের হাল কেমন হবে, তা সহজেই অনুমেয়। দেশ তখন মনুষ্য বসবাসযোগ্য থাকবে তো? আরেকটি সমস্যাও দৃশ্যমান। শিল্পায়ন, অবকাঠামো ও আবাসন নির্মাণে আমরা প্রতিবছর ১ শতাংশ বা ততোধিক কৃষিজমি হারাচ্ছি। এই হার অব্যাহত থাকলে বা বৃদ্ধি পেলে শেষ পর্যন্ত কৃষি ও কৃষকের দুর্দশা কোথায় ঠেকবে, তা কেবল সরকারই জানে। অতি জনঘন দেশের নাজুক প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর সাবেকি উন্নয়নের চাপ কী ফল ফলাবে, বোঝা খুব কঠিন নয়। কিন্তু কীই-বা করার আছে? বিশ্বায়নের যুগে বিকল্প উন্নয়নধারা উদ্ভাবনের কোনো সুযোগ আমাদের নেই। খ. পরিবেশবান্ধব অর্থনীতিও তার…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.