আলেক্সিস সিপ্রাসকে গ্রিসের মানুষ বেছে নিয়েছিলেন বোধ হয় এ কারণে যে, তিনি একজন বামপন্থী। তাঁরা হয়তো ভেবেছিলেন, ২০০৮ সাল থেকে ইউরোপ ও আমেরিকার অর্থনৈতিক সংকটের কারণে গ্রিসে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে, একজন বামপন্থীর নেতৃত্বে গঠিত সরকারই পারবে তা সামাল দিতে [....]

আলেক্সিস সিপ্রাসকে গ্রিসের মানুষ বেছে নিয়েছিলেন বোধ হয় এ কারণে যে, তিনি একজন বামপন্থী। তাঁরা হয়তো ভেবেছিলেন, ২০০৮ সাল থেকে ইউরোপ ও আমেরিকার অর্থনৈতিক সংকটের কারণে গ্রিসে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে, একজন বামপন্থীর নেতৃত্বে গঠিত সরকারই পারবে তা সামাল দিতে। এরই ধারাবাহিকতায় জুনের শেষ সপ্তাহে সিপ্রাস যে গণভোটের ডাক দিয়েছিলেন, তাতেও গ্রিসের জনগণ ভোট দিয়েছিলেন ত্রৈকা তথা ইউরোপীয় কমিশন, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর না করার পক্ষে। জোসেফ স্টিগলিজ ও পল ক্রুগম্যানের মতো অর্থনীতিবিদরাও গ্রিসের নীতিনির্ধারকদের পরামর্শ দিয়েছিলেন, তাঁদের নিজস্ব মুদ্রা দ্রাখমা আবারো চালু করে সঞ্চয়ের পরিমাণ বাড়িয়ে গ্রিসের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে তুলতে। কিন্তু সেসব করতে গেলে ইউরোর পিছুটান ঝেড়ে ফেলতে হতো গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাসকে, যা করার সাহস ছিল না তাঁর। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে তাই তৃতীয়বারের মতো গ্রিসকে তার ঋণসংকট থেকে উদ্ধার করার নামে আরো ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের দিকে ঠেলে দিতে সক্ষম হয়েছে ইউরোজোন। ইউরো ব্যবহারকারী ১৯টি রাষ্ট্রের জয় হয়েছে, জয় হয়েছে গ্রিসের অস্বাভাবিক ধনীদের। ব্রাসেলসে এমন একটি চুক্তি হয়েছে, যা সবাইকে মনে করিয়ে দিচ্ছে ১৯১৯ সালের কথা—ভার্সাইয়ের কথা। প্রথম মহাযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পর পুরো ইউরোপ তাদের বাধ্য করেছিল ভার্সাই চুক্তি করতে। যার ফলে পরবর্তী সময়ে অনিবার্য হয়ে উঠেছিল দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ। ব্রাসেলস চুক্তি যদি সত্যিই বাস্তবায়ন হয়, তা হলে অবশ্যম্ভাবীভাবেই গভীর এক সংকটের দিকে ইউরোপ এগিয়ে যাবে। দ্য গার্ডিয়ানে একজন মন্তব্য করেছেন, ভার্সাইয়ের ওই চুক্তির চেয়েও অবমাননাকর নতুন এই চুক্তি। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান এ চুক্তিকে অভিহিত করেছেন ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ’ হিসেবে। অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনও এই চুক্তি হওয়ার মাস দেড়েক আগে নিউ স্টেটসম্যানে গ্রিসের অর্থনৈতিক কৃচ্ছ্রসাধনায় কোনো লাভ হবে কি না, তা নিয়ে নিবন্ধ লিখেছিলেন। তাতে তিনি বিরোধিতা করেছেন চাপিয়ে দেওয়া এই কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচির। প্রসঙ্গত, তিনি আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন ১৯১৯ সালের ৫ জুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড লয়েড জর্জকে উদ্দেশ করে লর্ড ম্যানিয়ার্ড কেইন্সের একটি উদ্ধৃতি, যার মাধ্যমে অর্থনীতিবিদ কেইন্স নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন প্রথম মহাযুদ্ধের পরে সম্পাদিত ভার্সাই শান্তিচুক্তির দৃশ্যপট থেকে। কেননা কেইন্সের মতে, কৃচ্ছ্রসাধনার মধ্য দিয়ে এ ধরনের সংকটের সমাধান করা যায় না; বরং তা আরো ঘনীভূত হয়। পরে তিনি এ প্রসঙ্গে একটি…

মানুষটা তাঁর যুগ ও বাস্তবতার অনেক আগেই জন্মেছেন। জার্মানির একটি গণিত-প্রেমিক, ইহুদি পরিবারে। আইনস্টাইনের প্রায় সমসাময়িক, এবং জীবন-বাস্তবতা প্রায় বিপরীত। আইনস্টাইন খ্যাতি ও সামাজিক পরিচিতির কড়া আলোয় এসেছেন। আর এই মানুষটি দশজনের চোখের আড়ালে, আঘাত ও অসম্মানের সঙ্গে পেছন থেকেই, তাঁর মত এক শান্ত, নির্লিপ্ত সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। [. . .]

মানুষটা তাঁর যুগ ও বাস্তবতার অনেক আগেই জন্মেছেন। জার্মানির একটি গণিত-প্রেমিক, ইহুদি পরিবারে। আইনস্টাইনের প্রায় সমসাময়িক, এবং জীবন-বাস্তবতা প্রায় বিপরীত। আইনস্টাইন খ্যাতি ও সামাজিক পরিচিতির কড়া আলোয় এসেছেন। আর এই মানুষটি দশজনের চোখের আড়ালে, আঘাত ও অসম্মানের সঙ্গে পেছন থেকেই, তাঁর মত এক শান্ত, নির্লিপ্ত সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। দুজনই জার্মান, ইহুদি, ও বিজ্ঞান-সাধক। আরো মিল তাঁদের গভীরে সমাজ ও মানুষের প্রতি অকুণ্ঠ আগ্রহে ও সহানুভবে, তাঁদের নিঃসীম উদারতায় ও সাদামাঠা জীবনযাপনে, এবং তাঁদের যৌথ বিজ্ঞান-সাধনায়। জার্মানিকে গণিত-সাধনার পাদ-পীঠ বলা হয়। জার্মানির গণিত-ইতিহাস প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী, এবং সেখানে বহু ইহুদির বলার মত অবদান আছে। জার্মান গণিতের কথা বললে গাউস, রীমান, ডেডিকেন্ট, ওয়ার্সত্রাস, মোবিয়াস, বেসেল, কুরান্ট, ক্রনেকার, হিলবার্ট, এমন অনেক নাম গণিত-ছাত্রের মনে হয়ত ধাক্কা দেবে। আর এই মানুষ তো গণিত নিয়েই তার পুরো জীবন কাটিয়ে গেছেন। তাঁর অভিনব আবিষ্কারে একের পর এক খুলে গেছে বিজ্ঞানের নানা দিকের দরজা। আশ্চর্য জটিল বিষয়ের নির্যাস ছেঁকে, তাদের মৌলিক, সরল ধর্মগুলি তুলে ধরেছেন অদ্ভুত সাবলীলতায়। জন্ম দিয়েছেন গণিতের আধুনিক রূপ, নতুন অবয়ব। স্থানকালের দিক থেকে নোয়েথার মোটামুটি একটি প্রতিকুল পরিবেশ বেছেই জন্মেছেন। জার্মানির তীব্র পুরুষতান্ত্রিক, সাম্প্রদায়িক পরিবেশে, তিনি ম্যাক্স নোয়েথারের কন্যা, এক জন উদার, প্রগতিশীল, সমাজবাদের আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাভাবাপন্ন মানুষ হিসেবে বিবর্তিত হয়েছেন। যেমন অনুমান করা যায়, এ সব কটি কারণেই তাঁর জীবনে বিপর্যয় এসেছে; অবমাননা, অসম্মান, জীবন-জোড়া আর্থিক সংকট, সংঘাত, সংগ্রাম। কিন্তু যাঁরা নোয়েথারকে চেনেন, তাঁরা তাঁর অস্তিত্বের প্রবল উজ্জ্বল দিকটিও জানেন। সব সংকুলতাকে প্রায় ধুলোর মত কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলে তিনি ঝাঁপ দিয়েছেন জীবনের সব অবশ্য-কর্তব্য ইতিবাচক কাজের সমুদ্রে। সংসার ও সমাজের জটিল, নিষ্ঠুর কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে শান্তির নীড়ের মত সরল বনস্পতি হয়ে উঠেছেন তাঁর আত্মীয়-পরিজন, বন্ধু ও ছাত্রদের কাছে। আঠের বছর বয়স্ক এমি তাঁর জীবনের মোড় পাল্টেছেন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে: গতানুগতিক গৃহিণী বা ইস্কুলের শিক্ষক হতে নয়, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনো উচ্চশিক্ষা পেতে চান। ১৯০৮ পর্যন্ত চালচিত্রটা এরকম: জার্মানিতে মহিলারা রাজনৈতিক জীবনে বা সভা-সমিতিতে যোগ দিতে পারেন না। চোদ্দ বা পনের বছর পর্যন্ত কথা বলার মত কিছু ইংরিজি বা ফরাসী, ধর্মশিক্ষা, গার্হস্থ্য-বিজ্ঞান ও শিশু-শিক্ষা, বড় জোর ইস্কুল শিক্ষক হবার তালিম ছাড়া কিছু পান না…

জার্মান লেখক বার্নার্ড শ্লিংকের উপন্যাস 'দ্য রিডার' নিয়ে পাঠ-প্রতিক্রিয়া। [...]

বার্নার্ড শ্লিংকের উপন্যাস দ্য রিডার  প্রথমবার বেশ তাড়াহুড়ো করে পড়েছিলাম। সিনেমাটা দেখার আগেই শেষ করে ফেলা চাই। তাই কোনো কিছু খেয়াল না করে একটানে পড়ে গিয়েছিলাম। কিছুদিন আগে আবার পড়লাম, পড়ে নিজেই অবাক হয়ে গেলাম। উপন্যাসে চরিত্র তিনটি -- হানা শ্মিৎজ, মাইকেল বার্গ এবং ঘটনাপ্রবাহ। তিন পর্বের দ্য রিডার-এর গল্পের প্রথম পর্ব শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার বছর পনেরো পর পশ্চিম জার্মানিতে। পনেরো বছরের মাইকেল বার্গ স্কুল থেকে ফিরবার পথে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ট্রাম কন্ডাক্টর জনৈকা মহিলার সাহায্যে সে বাড়ি ফেরে। এর পরের অনেকগুলো দিন তাকে বিছানায় কাটাতে হয় হেপাটাইটিস রোগে। মা’কে মাইকেল বলেছিল একজন ভদ্রমহিলার সাহায্যের কথা। সুস্থ হয়ে মহিলাকে ফুল দিয়ে ধন্যবাদ জানানোতেই শেষ হয় না, বরং একটি অদ্ভুত সম্পর্ক গড়ে উঠতে শুরু করে দু’জনের মধ্যে। স্কুল থেকে মাইকেল ক্লাস কেটে হানার ফ্ল্যাটে আসত, হানাকে বই পড়ে শোনাত, হানা তাকে স্নান করিয়ে দিত, এরপর দু’জনে মিলিত হত। এ সম্পর্কের কোনো লক্ষ্য নেই, নেই কোনো ‘হোয়াট নেক্সট’। যদিও মাইকেল কয়েকবার চিন্তা করে তাদের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে। নতুন ক্লাসে উঠবার পর মাইকেলের হানার সাথে যোগাযোগ কমে আসে। একদিন হানাকে সে দেখতে পায় স্যুইমিং পুলের কাছে, যেখানে মাইকেল বন্ধুদের সঙ্গে মজা করে। পরদিন থেকে হানা যেন মিলিয়ে যায়। দ্বিতীয় পর্বে বছর সাতেক পর মাইকেল আইনের ছাত্র, একটি মামলা দেখবার সূত্রে হানার সঙ্গে তার দেখা হয়। বলা ভালো হানাকে সে দেখে। যুদ্ধাপরাধে হানা এবং আরও কয়েকজন অভিযুক্ত। মামলা চলাকালে মাইকেল আবিষ্কার করে হানার জীবনের সবচাইতে গোপনীয় তথ্য -- হানা লেখাপড়া জানে না! কথাটি গোপন করতে হানা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত মেনে নেয়। তৃতীয় পর্বে মাইকেল হানার জন্য জেলে বই পড়ে পাঠাতে থাকে টেপ করে। অন্যদিকে হানা পড়তে লিখতে শেখে। মাইকেলকে চিঠিও লেখে। যেহেতু হানার কেউ নেই, জেল কর্তৃপক্ষ অনুরোধ করে জেলমুক্ত জীবনে মাইকেল যেন হানাকে সাহায্য করে। মাইকেল রাজি হয়, কিন্তু জেলমুক্তির আগের দিন আত্মহনন করে হানা তার আর মাইকেলের মাঝে চিরবিচ্ছেদ আনে। গল্পের কোনো ডালপালা নেই, চরিত্রও অল্প কয়েকটি। গল্পের পুরোটাই মাইকেলের একক সংলাপের মতো। পড়তে পড়তে অনেকগুলো প্রশ্ন আপনা থেকেই মাথায় আসে। কেন হানা মাইকেলকে বেছে নিয়েছিল? মাইকেল দুর্বল ,তাই?…

বার্লিন সীমান্তঘেঁসা স্কাসিন শহরটা পোল্যান্ডের একেবারে পশ্চিমে। সেই শহর থেকে আরো পশ্চিমে ছোট্ট একটা উপশহর। হিটলারের নাজি বাহিনী তখন পোল্যান্ডের পুরোটাই দখল করে নিয়েছে। স্টালিনের রেডগার্ড তখনো স্টালিনগ্রাদ ছেড়ে পশ্চিমে আসেনি। হিটলারের বাহিনী দোর্দন্ড প্রতাপে ইউক্রেনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই সময়টাতে পোল্যান্ডের ওই ছোট ছোট শহর আর গ্রামগুলোয় খন্ড খন্ড প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল সাধারণ নাগরিকেরা। (more…)

পরীক্ষামূলক পোস্ট১

স্বাগতম।

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.