২০২০ সালের ৫ অক্টোবর, জামায়াতের আমীর একটি আভ্যন্তরীন সাংগঠনিক পত্রের মাধ্যমে জামায়াতের কর্মীদের যৌন আকাংখা নিয়ন্ত্রন এবং ধর্ষণ বা বলাতকারের মত অপরাধগুলোকে সাংগঠনিকভাবে মিমাংসা করার নির্দেশনা প্রদান করেন। জামায়াত আমীর কেন এই চিঠি দিলেন? এই ধরণের চিঠি কি তিনি দিতে পারেন? এই প্রসংগেই আলোচনা করছেন জাহানারা নূরী।

মাদ্রাসা শিক্ষকদের ছবি যারা তাদের ছাত্র - ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন করেছে

বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী দলে যোগদানকারী একজন ইসলামী বোনের অন্যতম প্রধান ভূমিকা হতে পারে তার সহযোগী পুরুষ সদস্যদের—যাদের মুমিন ভাই বলা হয়—"যৌন কষ্ট" দূরীকরণে সহায়তা।   হ্যাঁ, আপনি ভুল পড়েননি।  গত কয়েক দশক ধরে, ফাটল দিয়ে গল্পগুলো বেরিয়ে এসেছে—শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্ধুদের মধ্যে ফিসফিস করে বলা কথা, নিকাব এবং হিজাবের আড়াল থেকে টুকটাক শব্দ ফাঁস হয়েছে। একটু একটু করে। সে সব থেকে স্পষ্ট উন্মোচিত হয় এ সত্য: জামায়াতে ইসলাম তার বাইরের সদগুণের মুখোশ এবং আমীরের মিষ্টি হাসির তলায় অন্যান্য অভ্যাস লুকিয়ে রেখেছে।    একটি চিঠি নীরবে উচ্চারিত অংশটি উন্মোচিত করছে এই বাস্তবতা—পবিত্র ওয়াজের আড়ালে, ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের আন্দোরনের ওয়াসিলায় জামায়াতের নারী শাখা ইসলামী ছাত্রী সংস্থায় যোগদানকারী নারীদের জন্য এক ধরণের যৌন দাসত্বের ভূমিকা রয়েছে।  ১. প্রকাশিত তথ্য এবং অভ্যন্তরীণ চিঠি  মানবাধিকার কর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সংগঠনের সংস্কৃতি এবং নারীদের প্রতি আচরণ সম্পর্কিত ফাঁস হওয়া অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ নথি। অন্তত একটি যোগাযোগে এমন একটি সাংগঠনিক আচরণের ধরণ প্রকাশ পেয়েছে যা শৃঙ্খলার ছদ্মবেশে লিঙ্গ-ভিত্তিক যৌন নির্যাতনকে বৈধতা দেয়।    ৫ অক্টোবর, ২০২০ তারিখে জামায়াতের আমীর ড. শফিকুর রহমানের

স্বাক্ষরিত একটি গোপনীয় চিঠি, দলের নারী এবং পুরুষ শাখার মধ্যে প্রচারিত হয়েছিল বলে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়। এই অভ্যন্তরীণ চিঠি থেকে জানা গেছে যে, এই চিঠির মাধ্যমে জামায়াতারে আমীর সারা দেশে ধর্মীয় ভাইদের দ্বারা সংঘটিত ধর্ষণ এবং বলাৎকার জাতীয় নির্যাতনের ঘটনাগুলো স্বীকার ও অভ্যন্তরীণ সমাধান প্রস্তাব করেছেন।  এই নির্দেশনা থেকে বোঝা যায় যে জামায়াতে ইসলামী দলটিতে নারীদের যৌন নির্যাতনকে নিন্দা বা আইনগতভাবে সমাধানের পরিবর্তে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যৌনতা ব্যবস্থাপনা করা হয়। নৈতিক এবং আইনি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এ ধরণের নির্দেশনা গুরুতর উদ্বেগের কারণ।   ২. নির্দেশনার ভাষা এবং প্রভাব বিশ্লেষণ   উল্লেখিত চিঠিটি নিবিড়ভাবে পাঠ করলে জানা যায় যে জামায়াতে ইসলামী তার সদস্যদের মধ্যে ধর্ষণ এবং বলাৎকারের মতো নির্যাতনের ঘটনাগুলো পরোক্ষভাবে স্বীকার করে ও এই অপরাধসমূহকে সমাধানের জন্য সাংগঠনিক নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দেয়। সদস্যদের যৌন আচরণকে বিচ্ছিন্ন অপকর্ম হিসেবে না দেখে, এটি অভ্যন্তরীণভাবে ব্যাবস্থাপনার বিষয়টিই দলটির প্রধান ব্যক্তিদের কাছে অগ্রগণ্য বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়। এই চিঠিতে এ জাতীয় অপরাধে আইনি জবাবদিহিতার কথা কোথাও উচ্চারিত হয় নি।   চিঠিতে "ধর্ষণ এবং বলাৎকারের পুণরাবৃত্তি" শব্দ চারটি বিশেষ ভাব প্রকাশক। বাক্যটি…

আমাদের সমাজে এই নারী হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াটি কি রকম? "ভালো" মেয়ে প্রশ্ন করে না, জোরে হাসে না, জোরে কথা বলে না, তর্ক করে না, প্রতিবাদ করে না, নিজের চাহিদার কথা মুখ ফুটে বলে না। সে জটিলতা বোঝে না, রাজনীতি তো নয়ই। তার শরীর তার লজ্জার বস্তু তাই নিজেকে আবৃত রাখে সে। পা ঢাকে, মাথা ঢাকে, তাতেও যখন হয় না তখন মুখ ঢাকে। একসময় নিজের মনুষ্যত্বটুকুও ঢাকে প্রাণপণে। হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান এণ্ডারসনের "লিটল মারমেইড" গল্পটির কথা মনে আছে কারো? সেই যে ছোট্ট জলপরী, রাজপুত্রের কাছে এবং তার সমাজের কাছে গ্রহনীয় হওয়ার জন্য ধীরে ধীরে একটি একটি করে স্বকীয়তা হারায় সে? সবশেষে হারায় তার কণ্ঠস্বর।

মানুষটা তাঁর যুগ ও বাস্তবতার অনেক আগেই জন্মেছেন। জার্মানির একটি গণিত-প্রেমিক, ইহুদি পরিবারে। আইনস্টাইনের প্রায় সমসাময়িক, এবং জীবন-বাস্তবতা প্রায় বিপরীত। আইনস্টাইন খ্যাতি ও সামাজিক পরিচিতির কড়া আলোয় এসেছেন। আর এই মানুষটি দশজনের চোখের আড়ালে, আঘাত ও অসম্মানের সঙ্গে পেছন থেকেই, তাঁর মত এক শান্ত, নির্লিপ্ত সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। [. . .]

মানুষটা তাঁর যুগ ও বাস্তবতার অনেক আগেই জন্মেছেন। জার্মানির একটি গণিত-প্রেমিক, ইহুদি পরিবারে। আইনস্টাইনের প্রায় সমসাময়িক, এবং জীবন-বাস্তবতা প্রায় বিপরীত। আইনস্টাইন খ্যাতি ও সামাজিক পরিচিতির কড়া আলোয় এসেছেন। আর এই মানুষটি দশজনের চোখের আড়ালে, আঘাত ও অসম্মানের সঙ্গে পেছন থেকেই, তাঁর মত এক শান্ত, নির্লিপ্ত সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। দুজনই জার্মান, ইহুদি, ও বিজ্ঞান-সাধক। আরো মিল তাঁদের গভীরে সমাজ ও মানুষের প্রতি অকুণ্ঠ আগ্রহে ও সহানুভবে, তাঁদের নিঃসীম উদারতায় ও সাদামাঠা জীবনযাপনে, এবং তাঁদের যৌথ বিজ্ঞান-সাধনায়। জার্মানিকে গণিত-সাধনার পাদ-পীঠ বলা হয়। জার্মানির গণিত-ইতিহাস প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী, এবং সেখানে বহু ইহুদির বলার মত অবদান আছে। জার্মান গণিতের কথা বললে গাউস, রীমান, ডেডিকেন্ট, ওয়ার্সত্রাস, মোবিয়াস, বেসেল, কুরান্ট, ক্রনেকার, হিলবার্ট, এমন অনেক নাম গণিত-ছাত্রের মনে হয়ত ধাক্কা দেবে। আর এই মানুষ তো গণিত নিয়েই তার পুরো জীবন কাটিয়ে গেছেন। তাঁর অভিনব আবিষ্কারে একের পর এক খুলে গেছে বিজ্ঞানের নানা দিকের দরজা। আশ্চর্য জটিল বিষয়ের নির্যাস ছেঁকে, তাদের মৌলিক, সরল ধর্মগুলি তুলে ধরেছেন অদ্ভুত সাবলীলতায়। জন্ম দিয়েছেন গণিতের আধুনিক রূপ, নতুন অবয়ব। স্থানকালের দিক থেকে নোয়েথার মোটামুটি একটি প্রতিকুল পরিবেশ বেছেই জন্মেছেন। জার্মানির তীব্র পুরুষতান্ত্রিক, সাম্প্রদায়িক পরিবেশে, তিনি ম্যাক্স নোয়েথারের কন্যা, এক জন উদার, প্রগতিশীল, সমাজবাদের আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাভাবাপন্ন মানুষ হিসেবে বিবর্তিত হয়েছেন। যেমন অনুমান করা যায়, এ সব কটি কারণেই তাঁর জীবনে বিপর্যয় এসেছে; অবমাননা, অসম্মান, জীবন-জোড়া আর্থিক সংকট, সংঘাত, সংগ্রাম। কিন্তু যাঁরা নোয়েথারকে চেনেন, তাঁরা তাঁর অস্তিত্বের প্রবল উজ্জ্বল দিকটিও জানেন। সব সংকুলতাকে প্রায় ধুলোর মত কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলে তিনি ঝাঁপ দিয়েছেন জীবনের সব অবশ্য-কর্তব্য ইতিবাচক কাজের সমুদ্রে। সংসার ও সমাজের জটিল, নিষ্ঠুর কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে শান্তির নীড়ের মত সরল বনস্পতি হয়ে উঠেছেন তাঁর আত্মীয়-পরিজন, বন্ধু ও ছাত্রদের কাছে। আঠের বছর বয়স্ক এমি তাঁর জীবনের মোড় পাল্টেছেন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে: গতানুগতিক গৃহিণী বা ইস্কুলের শিক্ষক হতে নয়, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনো উচ্চশিক্ষা পেতে চান। ১৯০৮ পর্যন্ত চালচিত্রটা এরকম: জার্মানিতে মহিলারা রাজনৈতিক জীবনে বা সভা-সমিতিতে যোগ দিতে পারেন না। চোদ্দ বা পনের বছর পর্যন্ত কথা বলার মত কিছু ইংরিজি বা ফরাসী, ধর্মশিক্ষা, গার্হস্থ্য-বিজ্ঞান ও শিশু-শিক্ষা, বড় জোর ইস্কুল শিক্ষক হবার তালিম ছাড়া কিছু পান না…

চলচ্চিত্র সমাজের কথা বলে। আসলে কোন চলচ্চিত্রই সমাজ ও সময়ের বাস্তবতাকে সচেতন বা অবচেতনভাবে উপেক্ষা করতে পারে না। বলা যায়, চলচ্চিত্র এমন একটি শিল্প মাধ্যম যার সৃজনশীল বা বিনোদন নির্মাণ প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে সময়ের ভাবনা, সংকট, দর্শন, ধর্ম, সীমাবদ্ধতা, আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট যেন অন্তর্নিহিত থাকে। আর তাই, এই আলোচনার প্রয়োজনীয়তা। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপধ্যায় এর কালজয়ী উপন্যাস ‘পথের পাঁচালী’ এর সার্থক চলচ্চিত্রায়ন করেন সত্যজিৎ রায় ১৯৫৫ সালে। জানা মতে, উপন্যাসের সময়কাল ১৯৩০ এর দিকে এবং বিভূতি বাবু সেই সময়ের বাংলার প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষের জীবন-সংগ্রামের এক অনন্য চিত্রায়ন তুলে ধরেন তার উপন্যাসে; যা অনুধাবন পূর্বক সত্যজিৎ রায় সেই মানুষদের বিশ্ব দর্শক এর কাছে নিয়ে এলেন। ‘পথের পাঁচালী’ চলচ্চিত্র নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা এই মুহূর্তে’র উদ্দেশ্য নয়। এমনকি বিভূতি বাবু’র উপন্যাস ও সত্যজিৎ বাবু’র চলচ্চিত্রায়নের কোনো তুলনামূলক উপস্থাপনা করাও লক্ষ্য নয়। এই চলচ্চিত্র আমাদের অনেকের দেখা এবং না’দেখা কারো প্রতি অনুরোধ - সত্বর বাংলা চলচ্চিত্রের এই অতি আবশ্যক শিল্পকর্মটি যেন দেখে নেবার সুযোগ হয়। আমি সরাসরি চলে আসি চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে, যিনি আপাত অর্থে (যে সময়ের কথা সত্যজিৎ রায় তুলে এনেছেন সেই সময়ে) সমাজে অবহেলিত, মনোযোগহীন একজন মানুষ। ‘পথের পাঁচালী’ চলচ্চিত্রের এই চরিত্রটি হলেন ‘ইন্দিরা ঠাকুরণ’। সম্পর্কে তিনি দুর্গা-অপু’র পিসী, অর্থাৎ হরিহরের বোন। সিনেমায় আমরা স্পষ্ট পাই না, তিনি কি হরিহরের আপন বোন নাকি দূর সম্পর্কীয়। তবে যে উদ্দেশ্যে তিনি শেষ সময়ে নিজের ভিটে’তে মরতে এসেছেন তাতে আমরা ধরে নিতে পারি, তিনি হরিহরের নিকট বোন-ই। উপন্যাসে বিষয়টি কিভাবে আছে তা ভাবতে চাইছিনা। আমরা মূল চলচ্চিত্রের সাথে ভাবনায় সম্পৃক্ত থাকতে চাই। ইন্দিরা ঠাকুরণ ও দুর্গা ‘ইন্দিরা ঠাকুরণে'র অবস্থানটি একটু বুঝে নেই - অতিশয় বৃদ্ধা এই মহিলা বিধবা - স্বামী,সন্তানহীন। পিতৃপ্রদত্ত ভিটেতে একটি ঘরে ভাই-এর ইচ্ছায় তাঁর একমাত্র আশ্রয়। মাঝে মাঝে এদিক ওদিক কয়েকদিন থাকার ব্যবস্থা থাকলে এই ভাইয়ের আশ্রয় ব্যতীত তাঁর খুব বেশী কোথাও যাবার উপায় নেই। ভাইয়ের সন্তানরা তাঁর কাছে নিজের সন্তানের তুল্য। তাঁর এই ভালবাসা থেকেই আমরা দেখি, বৃদ্ধা পিসীর জন্য ছোটবেলা থেকে দুর্গার দারুন দুর্বলতা। বাগানে কুড়িয়ে পাওয়া ফল-ফলাদি এনে জমা করে পিসীর ভাঁড়ারে। একারণে পিসীও ভাইঝি’র কোনো দোষ মেনে…

‘বীরাঙ্গনা’ একটা শব্দ, একটা সংকেত, এই শব্দটার সাথে কত যে ফিসফাস জড়িত, শুনলেই আমরা নির্যাতিত নারী দেখতে পাই, বিবস্ত্র নারী, চুল দিয়ে উর্ধ্বফাঁস দিয়ে রাখা নারী, পরিখা থেকে পচনশীল হিউমাসের মতন উদ্ধারকৃত মিউটিলেটেড নারী, শিখ সৈন্যদের পাগড়ি দিয়ে লজ্জা নিবারণ করা নারী, মুখ লুকানো আশিরপদনখ বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়া নারী। (‘অরুনোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’র) এই সব দৃশ্যই আসলে বীরাঙ্গনাদের মৌলিক গুণনীয়ক। যাদের অবিশ্বাস্য নির্যাতনের বিবরণ একনিশ্বাসে আজো পড়া যায় না, যাদের ফিরে আসাকে কেউ স্বাগত জানায়নি, যাদের বেঁচে থাকাকে কেউ সৌভাগ্য মনে করেনি, তাদের জন্যে আমরা একটা শব্দ নিয়োগ করেছি ‘বীরাঙ্গনা’, এর সাথে ব্র্যাকেটবন্দী কিছু ফিসফাস এবং দৃষ্টিভঙ্গী (গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক)। যে মৃত তার জন্যে মিনার আছে, সৌধ আছে, ‘শহীদ’ খেতাব আছে, বীরত্ব তার শ্রেষ্ঠত্বের মালা, তার প্রতীক। যে অঙ্গহানি হওয়ার কারণে অর্ধমৃত, তার জন্যেও কোথাও না কোথাও একটু সহানুভূ্তির-আদরের ‘আহা’ শব্দ আছে, পিঠের ’পরে আত্মীয়তাকামী হাত আছে। যে ‘সম্ভ্রম’ হারালো (একজনের ধর্ষণের কারণে কেমন করে আরেকজন মানুষের সম্ভ্রহামহানি হতে পারে? সম্ভ্রম তো নিজের জিনিস, অত্যুচ্চ এবং সার্বভৌম শব্দ)- তার জন্যে আছে পুনঃসম্ভ্রমহানি, এইবার আত্মীয়তাকামী হাতে, ‘আহা’ শব্দসমেত। ‘বীরাঙ্গনা’ শব্দের ব্যঞ্জনা এইই, আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি সেই শ্রদ্ধা সেই অসমাপ্ত শ্রদ্ধাকে শ্রদ্ধা বলতে রাজি নই, যা এই নারীদের মানুষ-অস্তিত্ব, নারী-অস্তিত্বকে পুনরায় সসম্মানে-সস্নেহে গ্রহণ করতে নারাজ। আমি সেই শব্দে কেবল কৌমার্যপূজারী পুরুষতান্ত্রিক পূঁজ দেখতে পাই, আর কিছু নয়। ‘বীরাঙ্গনা’ শব্দের বদলে অনেকে এখন ‘বীরজননী’ আখ্যা দেয়া শুরু করেছেন, আসল কথা হচ্ছে, আপনি যাঁকে স্ত্রী হিসাবে, সঙ্গিনী হিসাবে স্থান দিতে অক্ষম হয়েছেন, সেই অক্ষমতা ঢাকতে আপনার এখন তাঁর জন্যে মাতৃত্বের পতিতপাবনী ঢাল দরকার হয়েছে, আরো বড় আড়াল, আরো সক্ষম আরো মহিমময়ী ঢাল। শব্দান্তর করলে কি মনান্তর ঘটে? নাকি নারীর প্রতি মনোভাব বদলায়? আহা যদি তাই হতো! রমা চৌধুরীর ক্রন্দনবিকৃত মুখ দেখে আমাদের চোখে আজ পানি আসে, আমাদের বুক মুচড়ে ওঠে যখন দেখি তিয়াত্তর বছর বয়স্ক এই মহিলা পায়ে জুতা পরেন না, এই মাটিতে কত লাশ, তাঁর সন্তানদেরও লাশ, সে লাশ জুতায় মাড়াবেন কি করে! (আমাদের কি মনে পড়ে শহীদ আজাদের মাকে, ছেলে ভাত খেতে চেয়ে মরে গেছে বলে আর কোনোদিন ভাত খেতে পারলেন না যিনি?)…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.