জ্ঞানচর্চার স্পৃহা কখনও কখনও ‘অপরাধ’ হয়ে ওঠে। প্রচল রাষ্ট্র ও সমাজের কাছে ওই ব্যক্তি শত্রু হয়ে ওঠে, যে কিনা কেবলই প্রশ্নের উত্তর হাতড়ে বেড়ায়, কেবলই যুক্তি দিয়ে বুঝতে চায় সব কিছুকে। [. . .]

১ জ্ঞানচর্চার স্পৃহা কখনও কখনও ‘অপরাধ’ হয়ে ওঠে। প্রচল রাষ্ট্র ও সমাজের কাছে ওই ব্যক্তি শত্রু হয়ে ওঠে, যে কিনা কেবলই প্রশ্নের উত্তর হাতড়ে বেড়ায়, কেবলই যুক্তি দিয়ে বুঝতে চায় সব কিছুকে। অথচ ব্যক্তির সেই স্পৃহা হয়ত জেগে ওঠে অন্তর্গত নিষ্পাপ বিহ্বলতা থেকে। জাগতে পারে অসহায় বিস্ময় ও ক্রন্দন থেকে। যেমন জেগেছিল আরজ আলী মাতুব্বরের ভেতর। সে ঘটনা সকলেরই জানা। ‘মাকে আমি আর কোনওদিনই দেখতে পাব না! মিশে যাবেন তিনি মৃত্তিকার ভেতর!’ হয়ত এমনই এক প্রতিকারহীন কষ্ট থেকে মাতুব্বর ১৩৩৯ সনে তাঁর মৃত মার ছবি তুলেছিলেন এক আলোকচিত্রীকে নিয়ে এসে। কিন্তু তাতে বেঁকে বসে সমাজের কর্তাব্যক্তিরা। কারণ ছবি তোলা তো ধর্মে নিষেধ। তার ওপর নারীর – মৃত নারীর! তাঁর মার জানাজা আর দাফন করেনি তারা। কয়েকজন নিকটাত্মীয় ও শুভানুধ্যায়ী নিয়ে মায়ের শবদেহের সৎকার করেন তিনি। বাল্যকাল থেকেই সত্যের অনুসন্ধানে একাগ্র মাতুব্বরকে সমাজপতিদের সংস্কার, যুক্তি ও বুদ্ধিহীনতা অস্থির করে তোলে। এ ঘটনায় হৃদয়-মনন জুড়ে যে আলোড়ন ওঠে, তাই তাঁকে নিয়ে যায় নিরাসক্ত জ্ঞানচর্চার দিকে। এরপর তাঁকে আর ফেরানো যায়নি সে-পথ থেকে। দীর্ঘ ১৮ বছর জ্ঞানসাধনার পর তিনি তাঁর সত্যানুসন্ধান নিয়ে মানুষজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে শুরু করেন। সে কথা জেনে ১৩৫৮ সনের ১২ জ্যৈষ্ঠ বরিশাল শহরের তদানীন্তন ল-ম্যাজিস্ট্রেট ও তবলিগ জামাতের আমির এফ. করিম তাঁকে জামাতভুক্ত করার জন্যে সদলে তাঁর বাড়িতে তসফির নেন। মাতুব্বর তাঁকে বলেন ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞান এই তিন বিষয়ের মধ্যে সমন্বয়ের চিন্তা করতে গিয়ে তাঁর মনে অনেক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তিনি সেগুলোর উত্তর খুঁজছেন। তবলিগ জামাতের আমির যদি তাঁকে সেসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন, তা হলে তিনি জামাতে শরীক হবেন। এফ. করিম তাঁর কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। তবে প্রশ্নগুলোর লিখিত তালিকা নিয়ে যাওয়ার সময় বলেন, ‘কিছুদিন পরেই এর উত্তর পাবেন।’ কয়েকদিন পর তিনি ‘কম্যুনিজমের অপরাধে একটি ফৌজদারি মামলার ওয়ারেন্ট’ পেলেও আর উত্তর পাননি। কারাগারে যেতে হয় তাঁকে। কিন্তু সেখানে আটকে রাখা যায়নি তাঁকে। আদালতে তিনি যে জবানবন্দি দেন তার শিরোনাম ছিল ‘সত্যের সন্ধানে’। আদালত তাঁকে মুক্তি দিলেও নির্দেশ দেন, ‘সত্যের সন্ধানে’ কখনও প্রকাশ করতে পারবেন না তিনি। মাতুব্বর তাঁর সে গ্রন্থ প্রকাশ করতে পারেন স্বাধীন বাংলাদেশে, ২২…

৫ জানুয়ারির নির্বাচন শুধু বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মেরুকরণ সুস্পষ্ট করে তোলেনি, পরাশক্তিগুলোর ভূমিকাও বিন্যস্ত করেছে নতুন করে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে সহিংসতার মধ্য দিয়ে একটি বিতর্কিত নির্বাচনপদ্ধতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে গত কয়েক মাসে অসংখ্য হত্যার পাশাপাশি ৩৫ হাজার কোটি টাকার ধ্বংসস্তূপ তৈরি করে একটি মূল্যহীন নির্বাচনকে ‘বড় বেশি’ মূল্যবান করে তুলেছে নির্বাচনবিরোধী বিরোধী দলগুলো। [...]

৫ জানুয়ারির নির্বাচন শুধু বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মেরুকরণ সুস্পষ্ট করে তোলেনি, পরাশক্তিগুলোর ভূমিকাও বিন্যস্ত করেছে নতুন করে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে সহিংসতার মধ্য দিয়ে একটি বিতর্কিত নির্বাচনপদ্ধতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে গত কয়েক মাসে অসংখ্য হত্যার পাশাপাশি ৩৫ হাজার কোটি টাকার ধ্বংসস্তূপ তৈরি করে একটি মূল্যহীন নির্বাচনকে ‘বড় বেশি’ মূল্যবান করে তুলেছে নির্বাচনবিরোধী বিরোধী দলগুলো। নির্বাচন কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো বিভক্ত হয়ে পড়ে মোটামুটিভাবে তিনটি ভাগে; যেগুলোর একটিতে রয়েছে ‘সেক্যুলার’ কিংবা ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শক্তি হিসেবে ধর্মীয়-মৌলবাদী-জাতীয়তাবাদী ডানপন্থী রাজনৈতিক শক্তির কাছে অভিযুক্ত ডানপন্থী আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি বাম-গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সামরিক শাসনকালীন সময়ে গঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি এবং কয়েকটি ধর্মবাদী দল। এ ধারার প্রত্যক্ষ প্রতিপক্ষ হল নির্বাচন বর্জনকারী ধর্মীয়-মৌলবাদী-জাতীয়তাবাদীদের ডানপন্থী রাজনৈতিক জোট, যেটির মধ্যমণি বা নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি। এর বাইরে রয়েছে আরেকটি ক্ষীণ রাজনৈতিক স্রোতধারা, যেটিতে অবস্থান করছে বিভিন্ন বামপন্থী রাজনৈতিক দল। এই ধারায় সংঘবদ্ধভাবে নির্বাচন বর্জনকারীদের সারিতে রয়েছে সিপিবি-বাসদের ঐক্যজোট– যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবির সূত্রে বিএনপিসহ বিভিন্ন ধর্মবাদী-মৌলবাদী-জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে অভিন্ন অবস্থানে থাকলেও, মৌলবাদী রাজনীতির বিরোধী হওয়ায় ঐক্যবদ্ধ কিংবা যুগপৎ আন্দোলন থেকে দূরে ছিল। তা ছাড়াও রয়েছে কয়েকটি বামপন্থী দল– যারা তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির কারণে নয়, বরং নীতিগত কারণেই যে কোনো নির্বাচন বর্জন করে থাকে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও তাদের সে সিদ্ধান্তের ব্যত্যয় ঘটেনি। ২ সুশীল সমাজের বিভিন্ন প্রতিনিধি গত কয়েক মাস ধরে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে ‘নির্বাচনের পদ্ধতিগত বিতর্ক’ হিসেবে চিহ্নিত ও সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করেছে। তাই নির্বাচন বর্জনকারীরা ভবিষ্যতে যুদ্ধাপরাধী বিচারের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করার হুমকি দিলেও, বর্জনকারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের প্রতিনিধিত্বশীল কোনো কোনো ব্যক্তি সে সম্পর্কে নিরব থেকেছেন। দেশজুড়ে গাছকাটার নৃশংস উন্মত্ততা চললেও গাছের গোড়া জড়িয়ে ধরে কাঁদতে সক্ষম কোনো সুশীলকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির সিদ্ধান্ত (পরে যা কার্যকরও হয়েছে) ঘোষণার পর তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার জন্যে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও কর্মীদের দৃষ্টিকটূ তৎপরতা দেখা গেলেও, বিশ্বজিতের হত্যাকারীদের ফাঁসির রায় ঘোষণার পর তাদের কাউকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। যে কোনো প্রাণদণ্ডের বিরুদ্ধে বলে দাবি করলেও তারা আসলে কখন সক্রিয় হন, কখন চুপ মেরে যান তা এখান থেকেই বোঝা সম্ভব। নির্বাচন কিংবা…

চলচ্চিত্র সমাজের কথা বলে। আসলে কোন চলচ্চিত্রই সমাজ ও সময়ের বাস্তবতাকে সচেতন বা অবচেতনভাবে উপেক্ষা করতে পারে না। বলা যায়, চলচ্চিত্র এমন একটি শিল্প মাধ্যম যার সৃজনশীল বা বিনোদন নির্মাণ প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে সময়ের ভাবনা, সংকট, দর্শন, ধর্ম, সীমাবদ্ধতা, আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট যেন অন্তর্নিহিত থাকে। আর তাই, এই আলোচনার প্রয়োজনীয়তা। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপধ্যায় এর কালজয়ী উপন্যাস ‘পথের পাঁচালী’ এর সার্থক চলচ্চিত্রায়ন করেন সত্যজিৎ রায় ১৯৫৫ সালে। জানা মতে, উপন্যাসের সময়কাল ১৯৩০ এর দিকে এবং বিভূতি বাবু সেই সময়ের বাংলার প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষের জীবন-সংগ্রামের এক অনন্য চিত্রায়ন তুলে ধরেন তার উপন্যাসে; যা অনুধাবন পূর্বক সত্যজিৎ রায় সেই মানুষদের বিশ্ব দর্শক এর কাছে নিয়ে এলেন। ‘পথের পাঁচালী’ চলচ্চিত্র নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা এই মুহূর্তে’র উদ্দেশ্য নয়। এমনকি বিভূতি বাবু’র উপন্যাস ও সত্যজিৎ বাবু’র চলচ্চিত্রায়নের কোনো তুলনামূলক উপস্থাপনা করাও লক্ষ্য নয়। এই চলচ্চিত্র আমাদের অনেকের দেখা এবং না’দেখা কারো প্রতি অনুরোধ - সত্বর বাংলা চলচ্চিত্রের এই অতি আবশ্যক শিল্পকর্মটি যেন দেখে নেবার সুযোগ হয়। আমি সরাসরি চলে আসি চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে, যিনি আপাত অর্থে (যে সময়ের কথা সত্যজিৎ রায় তুলে এনেছেন সেই সময়ে) সমাজে অবহেলিত, মনোযোগহীন একজন মানুষ। ‘পথের পাঁচালী’ চলচ্চিত্রের এই চরিত্রটি হলেন ‘ইন্দিরা ঠাকুরণ’। সম্পর্কে তিনি দুর্গা-অপু’র পিসী, অর্থাৎ হরিহরের বোন। সিনেমায় আমরা স্পষ্ট পাই না, তিনি কি হরিহরের আপন বোন নাকি দূর সম্পর্কীয়। তবে যে উদ্দেশ্যে তিনি শেষ সময়ে নিজের ভিটে’তে মরতে এসেছেন তাতে আমরা ধরে নিতে পারি, তিনি হরিহরের নিকট বোন-ই। উপন্যাসে বিষয়টি কিভাবে আছে তা ভাবতে চাইছিনা। আমরা মূল চলচ্চিত্রের সাথে ভাবনায় সম্পৃক্ত থাকতে চাই। ইন্দিরা ঠাকুরণ ও দুর্গা ‘ইন্দিরা ঠাকুরণে'র অবস্থানটি একটু বুঝে নেই - অতিশয় বৃদ্ধা এই মহিলা বিধবা - স্বামী,সন্তানহীন। পিতৃপ্রদত্ত ভিটেতে একটি ঘরে ভাই-এর ইচ্ছায় তাঁর একমাত্র আশ্রয়। মাঝে মাঝে এদিক ওদিক কয়েকদিন থাকার ব্যবস্থা থাকলে এই ভাইয়ের আশ্রয় ব্যতীত তাঁর খুব বেশী কোথাও যাবার উপায় নেই। ভাইয়ের সন্তানরা তাঁর কাছে নিজের সন্তানের তুল্য। তাঁর এই ভালবাসা থেকেই আমরা দেখি, বৃদ্ধা পিসীর জন্য ছোটবেলা থেকে দুর্গার দারুন দুর্বলতা। বাগানে কুড়িয়ে পাওয়া ফল-ফলাদি এনে জমা করে পিসীর ভাঁড়ারে। একারণে পিসীও ভাইঝি’র কোনো দোষ মেনে…

যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবি থেকে সাধারণ মানুষের মনোযোগ সরানোর জন্য খুব পরিকল্পিতভাবে একের পর এক ইস্যু তৈরি করা হচ্ছে। আন্দোলনকারীদের সার্বিকভাবে অন্যদিকে ব্যস্ত করে তোলার চেষ্টা চলছে। ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের শক্তি। যদিও তা একেবারেই সফল হয়নি। সারাদেশে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে জনস্রোত তা-ই প্রমাণ করে। [...]

যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবি থেকে সাধারণ মানুষের মনোযোগ সরানোর জন্য খুব পরিকল্পিতভাবে একের পর এক ইস্যু তৈরি করা হচ্ছে। আন্দোলনকারীদের সার্বিকভাবে অন্যদিকে ব্যস্ত করে তোলার চেষ্টা চলছে। ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের শক্তি। যদিও তা একেবারেই সফল হয়নি। সারাদেশে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে জনস্রোত তা-ই প্রমাণ করে। উৎসবপ্রিয় বাঙালিকে ঘরে আটকে রাখবে কার সাধ্যি! সংস্কৃতির বিভিন্ন ধারা ভিন্ন ভিন্ন ধর্মজাত হলেও, সে-সবই এখন ঐতিহ্যের মাপকাঠিতে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে আত্মীকরণ হয়েছে। ধর্ম এবং সংস্কৃতির মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। কখনো কখনো  বিরোধ প্রমাণের চেষ্টা চললেও তা খুব একটা ধোপে টেকে না। এদেশের মানুষ ধর্মভীরু। কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি এদেশের মানুষ কখনোই স্বাগত জানায়নি। কোনো উগ্র মতবাদ সাধারণ মানুষের প্রশ্রয় পাবে না। উগ্রতা কোনো ধার্মিক মানুষের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। হিন্দু-মুসলিম-খ্রিষ্টান-বৌদ্ধ সব ধর্মের প্রকৃত অনুসারীরা সবসময় শান্তিপ্রিয়। কোনো ধর্মেই সংঘাতের কথা বলা হয় নি। আর কেউ ধর্মে বিশ্বাস না করলে, তার বিচারের দায়িত্বও কোনো ধর্মেই মানুষের উপর অর্পণ করা হয়নি। ধর্মে অবিশ্বাসীদের বিচারের ক্ষমতা পুরোপুরি স্রষ্টার। যে-যে যার-যার দায়িত্বে ধর্মে বিশ্বাস-অবিশ্বাস বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। এই বিষয়ে বল্ প্রয়োগের কোনো অধিকার কারো নেই। কাউকে ধর্ম পালনে বাধা দেওয়া অথবা কোনো ধর্মকে অবমাননা নিশ্চয়ই অনুচিত। আর তা সব ধর্মের ক্ষেত্রেই  প্রযোজ্য। ধর্মের প্রতি ভালোবাসার দোহাই দিয়ে মন্দির ভাঙা, বাড়িঘরে আগুন দেওয়া, মানুষের উপর আক্রমণ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে যারা ইন্ধন দেয়, শাস্তি প্রাপ্য তাদেরও। 'নাস্তিক' বিতর্ক একেবারেই উদ্দেশ্য প্রণোদিত। ‌এই বিষয়টা নিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবিতে সোচ্চার তরুণ প্রজন্মকে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টা সফল হবে না। সাধারণ মানুষকে অতো বোকা আর বোধহীন ভাববার দিন শেষ হয়েছে। ‘ব্লগার’, ‘শাহবাগ’, ‘নারী’ শুধুমাত্র এই বিষয়গুলো নিয়ে যে পরিমাণ তালগোল পাকানো পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে, তাতে এটা একেবারেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে, কী কারণে এসব হচ্ছে। কারণ এই বিষয়গুলো ওতপ্রোতভাবে যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবির আন্দোলনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। এই  সম্পৃক্তিটা নষ্ট করে দেওয়ার জন্যই একের পর এক ষড়যন্ত্রের জাল বোনা হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত কিংবা আওয়ামী লীগ যে দলই সাধারণ জনমতের বিরুদ্ধে ঔদ্ধ্যত্যপূর্ণ আচরণ করুক, তা তাদের রাজনৈতিক বিপন্নতাই ডেকে আনবে। এসব ষড়যন্ত্রে যুদ্ধাপরাধের বিচাররের দাবি লক্ষভ্রষ্ট…

দলটি দু'টুকরা হলো গতকাল। অন্যরকম একটা ভালোবাসা ও স্বপ্ন নিয়ে আমরা সবাই এই দলটা শুরু করেছিলাম। "সর্বহারার একক দল"// "জীবনের সর্বক্ষেত্রকে ব্যাপ্ত করে মার্ক্সবাদের চর্চ্চা"// "কেন আমরা সঠিক এবং একমাত্র বাম দল" // এই শ্লোগানগুলো মনে পড়ে। সত্যিই কিন্ত আমাদের চিন্তাজগতে এই বক্তব্যগুলো ঝড় তুলেছিলো। এগুলোর দারুন একটা দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব আমাদের ব্যক্তিগত জীবনেও পড়েছিলো। এখনো তার অনেক প্রভাব প্রবল ভাবেই আছে। একসময় বিপ্লবী জীবন বেছে নেয়ার চেষ্টাও করেছিলাম। যদিও পারিনি, কিন্ত যারা ধরে রেখেছিলো তাদেরকে মন থেকে উৎসাহ দিয়েছিলাম। যারা দল করতো সর্বক্ষন, তাদের সততা-নিষ্টার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা-আশা ছিল প্রশ্নাতীত। দল করার সময় শেষের দিকে এসে (৯৬-৯৭ সালে) মাঝে মাঝেই ক্ষোভ প্রকাশ করতাম। সে সময় হায়দার ভাইকে বলেছিলাম, দেখেন হায়দার ভাই, গত ৯ বছর ধরে পত্রিকা বিক্রি করছি। কিন্ত এখন ভ্যানগার্ড বিক্রি করতে ভাল্লাগে না। তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন কেন? বলেছিলাম, অনেক শিক্ষিত-রাজনীতি সচেতন মানুষও পত্রিকা নিয়ে প্রশ্ন করেন। তারা বলেন যে, তোমরা কি বলতে চাও তা সহজ করে বল। বক্তব্যটা আরেকটু সাবলীল কর। তোমরা দেশের পরিস্থিতি বিশ্লেষন করতে গিয়ে, রাশিয়া-চীন কিংবা এস ইউ সি আই এর রেফারেন্স দিয়ে যে কথাগুলো বলো, তা জটিল মনে হয়। মানুষকে তোমরা কানেক্ট করতে পারছো না। এটা খুব জরুরী। হায়দার ভাই শুনেছেন মনযোগ দিয়ে। তবে একটু চিন্তা করে বলেছিলেন, তুমি তাদেরকে বলবে, সমাজ বিপ্লবের পথ সহজ নয়। আমাদের বক্তব্যগুলোতে আমরা একটা সমাজের বিশ্লেষন করছি একটা এগিয়ে থাকা রাজনৈতিক তত্ত্বের আলোকে আমাদের এই পত্রিকা। এই পত্রিকা পড়তে গেলে কিছুটা কষ্টতো সবার হবেই। উনার কথাটা একেবারে উড়িয়ে দেই নি। কিন্ত মন খারাপ করেছিলাম এই কারনে যে, উনি আমার মত মাঠ পর্যায়ের একজন কর্মীর এই ফিডব্যাকটা সেভাবে গুরুত্ব দিয়ে সেদিন ভাবেন নাই। '৯৭ সালে আমরা ইউনিভার্সিটির অনার্স ফাইনাল ইয়ারে। পরের বছর সক্রিয় কর্মি থেকে সমর্থকে পরিনত হলাম। ২০০০ সালের শুরুর দিকে হাইকোর্টে আইন পেশা শুরু করলাম। মনে আছে, আমাদের পত্রিকার টিম হাইকোর্টেও যেত। একদিন একটা চেম্বারে দেখলাম, আমাদের কর্মিদের শুনছেন, আমাদেরই একজন সিনিয়র আইনজীবী। বিষয়বস্ত ছিল কাকতালীয়ভাবে সেটাই। পত্রিকার বক্তব্য। ভাষা। সহজবোধ্যতা ইত্যাদি। একযুগ পরেও ভাষার/বিষয়বস্ত উপস্থাপনের ক্ষেত্রে এতটুকু পরিবর্তন কি হয়নি? হয়েছে হয়তো, কিন্ত সিনিয়র আইনজীবি বোধ…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.