৫ জানুয়ারির নির্বাচন শুধু বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মেরুকরণ সুস্পষ্ট করে তোলেনি, পরাশক্তিগুলোর ভূমিকাও বিন্যস্ত করেছে নতুন করে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে সহিংসতার মধ্য দিয়ে একটি বিতর্কিত নির্বাচনপদ্ধতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে গত কয়েক মাসে অসংখ্য হত্যার পাশাপাশি ৩৫ হাজার কোটি টাকার ধ্বংসস্তূপ তৈরি করে একটি মূল্যহীন নির্বাচনকে ‘বড় বেশি’ মূল্যবান করে তুলেছে নির্বাচনবিরোধী বিরোধী দলগুলো।
নির্বাচন কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো বিভক্ত হয়ে পড়ে মোটামুটিভাবে তিনটি ভাগে; যেগুলোর একটিতে রয়েছে ‘সেক্যুলার’ কিংবা ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শক্তি হিসেবে ধর্মীয়-মৌলবাদী-জাতীয়তাবাদী ডানপন্থী রাজনৈতিক শক্তির কাছে অভিযুক্ত ডানপন্থী আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি বাম-গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সামরিক শাসনকালীন সময়ে গঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি এবং কয়েকটি ধর্মবাদী দল। এ ধারার প্রত্যক্ষ প্রতিপক্ষ হল নির্বাচন বর্জনকারী ধর্মীয়-মৌলবাদী-জাতীয়তাবাদীদের ডানপন্থী রাজনৈতিক জোট, যেটির মধ্যমণি বা নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি।
এর বাইরে রয়েছে আরেকটি ক্ষীণ রাজনৈতিক স্রোতধারা, যেটিতে অবস্থান করছে বিভিন্ন বামপন্থী রাজনৈতিক দল। এই ধারায় সংঘবদ্ধভাবে নির্বাচন বর্জনকারীদের সারিতে রয়েছে সিপিবি-বাসদের ঐক্যজোট– যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবির সূত্রে বিএনপিসহ বিভিন্ন ধর্মবাদী-মৌলবাদী-জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে অভিন্ন অবস্থানে থাকলেও, মৌলবাদী রাজনীতির বিরোধী হওয়ায় ঐক্যবদ্ধ কিংবা যুগপৎ আন্দোলন থেকে দূরে ছিল। তা ছাড়াও রয়েছে কয়েকটি বামপন্থী দল– যারা তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির কারণে নয়, বরং নীতিগত কারণেই যে কোনো নির্বাচন বর্জন করে থাকে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও তাদের সে সিদ্ধান্তের ব্যত্যয় ঘটেনি।
২
সুশীল সমাজের বিভিন্ন প্রতিনিধি গত কয়েক মাস ধরে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে ‘নির্বাচনের পদ্ধতিগত বিতর্ক’ হিসেবে চিহ্নিত ও সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করেছে। তাই নির্বাচন বর্জনকারীরা ভবিষ্যতে যুদ্ধাপরাধী বিচারের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করার হুমকি দিলেও, বর্জনকারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের প্রতিনিধিত্বশীল কোনো কোনো ব্যক্তি সে সম্পর্কে নিরব থেকেছেন। দেশজুড়ে গাছকাটার নৃশংস উন্মত্ততা চললেও গাছের গোড়া জড়িয়ে ধরে কাঁদতে সক্ষম কোনো সুশীলকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির সিদ্ধান্ত (পরে যা কার্যকরও হয়েছে) ঘোষণার পর তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার জন্যে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও কর্মীদের দৃষ্টিকটূ তৎপরতা দেখা গেলেও, বিশ্বজিতের হত্যাকারীদের ফাঁসির রায় ঘোষণার পর তাদের কাউকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। যে কোনো প্রাণদণ্ডের বিরুদ্ধে বলে দাবি করলেও তারা আসলে কখন সক্রিয় হন, কখন চুপ মেরে যান তা এখান থেকেই বোঝা সম্ভব। নির্বাচন কিংবা বর্জিত নির্বাচন যা-ই বলা হোক না কেন, তা যে রাজনৈতিকভাবে কত মূল্যবান ছিল, ‘নির্বাচনের পদ্ধতিগত বিতর্কে’র আড়ালে আসলে যে ছিল মীমাংসার অযোগ্য বিভিন্ন ইস্যু, সুশীল ও আইডিয়াল ডেমোক্র্যাটরা তা না বুঝলেও গড়পড়তা মানুষজন তা ঠিকই বুঝেছিল।
‘গ্রহণযোগ্য’ না হলেও তাই নির্বাচন নিয়ে মৌলবাদী-জাতীয়তাবাদী ও কথিত সুশীলদের বিপরীতে সাধারণ মানুষদের কারও মাথাব্যথা ছিল না। তাই কী প্রধান বিরোধী দল বিএনপি, কী সুশীল সমাজ– উভয় শক্তিই অনেক চেষ্টা চালিয়েও নির্বাচনপদ্ধতির দ্বন্দ্বকে জনগণের কাছে কোনো বড় ইস্যুতে পরিণত করতে পারেনি। এমনকি সুশাসন মহাজোট সরকারের শাসনামলের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলেও, প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলনের মাঠে ইস্যু হিসেবে সেটিও নিয়ে আসতে পারেনি।
এর পাশে যদি মনে করা যায় বছরের পর বছর জাতীয় সংসদ বর্জনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রচর্চার ন্যুনতম শর্তপূরণে উপেক্ষার বিষয়টি, তা হলে ‘গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও স্বচ্ছ’ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির আন্দোলন নিছক খেলাই মনে হয়।
৩
চূড়ান্ত অর্থে, আন্তর্জাতিক অপরাধের বা যুদ্ধাপরাধের বিচারপ্রসঙ্গ এ নির্বাচন অথবা নির্বাচনবর্জনের ভাগ্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কষ্টকর পথটি যারা খুব সংকীর্ণ অর্থে বিবেচনা করেন, তাদের কাছে অবশ্য ‘আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক স্বার্থে এ ইস্যু জিইয়ে রেখেছে এবং নির্বাচন পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাবে’ জাতীয় ধারণাগুলো বেশ গুরুত্ব পেয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা ও অর্থনৈতিক প্রতুলতা, যুদ্ধাপরাধীরা রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে পড়ায় সাক্ষীদের জীবনে যুক্ত হওয়া রাজনৈতিক-সামাজিক-মনস্তাত্বিক চাপ ও অনিশ্চয়তা, অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নেটওয়ার্ক-লবিয়িং, অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের আইনজীবীদের বিচার প্রলম্বিত করার অপচেষ্টা, বিচারসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক লবিয়িংয়ের ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের অনভিজ্ঞতা ও দুর্বলতা ইত্যাদি বিষয়গুলো বিচার কীভাবে দীর্ঘায়িত করছে, তা তারা বিবেচনা করে দেখতে এখনও নারাজ।
আবার এক জাতীয় বুদ্ধিজীবী আছেন, যারা যুদ্ধাপরাধী বলতে কেবল ১৯৫ জন পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তাকেই বোঝেন। পাকিস্তানি এসব যুদ্ধাপরাধীকে বিচার করার শর্তে এবং পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালিদের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের বিনিময়ে শিমলা চুক্তির আওতায় ফেরত দেওয়া হয়েছিল (এখন শর্ত উপেক্ষা করায় ট্রাইব্যুনাল উদ্যোগ নিতে চলেছে পুনরায় তাদের বিচার করার)।
এত সব প্রতিবন্ধকতা এবং ফালতু আঁতলামি পেরিয়ে যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্যে রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়টি তাদের কাছে গুরুত্ব পায়নি। তাদের কথিত গণতান্ত্রিক চেতনার সুবাদে সৃষ্ট নিরব সমর্থন পুঁজি করে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টাটি ভালো করেই চালাতে পেরেছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মতো সংগঠনগুলো।
৪
মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র যে দেশে সমার্থক, সেখানে গণতান্ত্রিক অধিকারের সুযোগ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কোনো সংগঠন যদি রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে চায়, মৌলবাদকে গণতন্ত্রচর্চার অংশ বলে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা বা পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সঠিক ছিল কি না ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে গণভোট করতে চায়– তা হলে কি তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে?
সিপিবি-বাসদের মতো দলগুলো এ রকম প্রশ্নের হাত থেকে বাঁচতে কোরাস ধরেছে, ‘বিএনপি তুমি জামাত ছাড়’। পাশাপাশি তারা প্রত্যয় ঘোষণা করেছে স্বতন্ত্র রাজনৈতিক ধারা তৈরির। কিন্তু তাদের বা বামপন্থীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্যে এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ জরুরি ছিল কি না তা তারা বিবেচনা করেননি। তারা এর চেয়ে বেশি চিন্তিত ছিলেন এই ভেবে যে, তাদের অংশগ্রহণ হয়তো এ নির্বাচনকে ‘বৈধতা’ দেবে অথবা তাদের রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে ‘একঘরে’ করবে!
স্বতন্ত্র রাজনৈতিক ধারা সৃষ্টির লক্ষ্য থাকায় সিপিবি-বাসদ বা বিভিন্ন বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সবসময় একটি প্রচেষ্টা রয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো বড় দুটি দলকে একই পাল্লায় তুলে ওজন করার, অভিন্ন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রমাণ করার। নিজেদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ঘটানোর জন্যে এসব দলগুলো একদিকে যেমন শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের সঙ্গে মৈত্রী গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অমনযোগী, ঠিক তেমনি অমনোযোগী বুর্জোয়া শ্রেণির বা রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বগুলো কাজে লাগাতে।
বুর্জোয়াদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বগুলো ভালো করে চোখে না পড়লেও নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিতর্কগুলোর ব্যাপারে বামপন্থী দলগুলো এত বেশি সতর্ক ও অনড় যে তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতার ক্ষেত্রে দলভাঙনও একটি অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে। নির্বাচনপদ্ধতির ছদ্মাবরণে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কেন্দ্র করে বুর্জোয়া শ্রেণির রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে দ্বন্দ্ব-বিরোধ চলছে, তা কাজে লাগিয়ে বামপন্থীদের পক্ষে অনেকটাই সম্ভব ছিল এবার রাজনৈতিকভাবে নিজেদের ক্ষমতায়িত করার।
বাহাত্তরের সংবিধানের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে, কিন্তু সেই সীমাবদ্ধতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই মৌলবাদী-ডানপন্থীদের আর বামপন্থীদের অবস্থান এক হতে পারে না। বাহাত্তরের সংবিধান বিরোধিতার মধ্য দিয়ে এই শক্তি আমাদের সংবিধানকে আরও পশ্চাৎপদ সংবিধানে পরিণত করতে চায়। নির্বাচনকালীন সরকারপদ্ধতির অজুহাতে এদের নির্বাচনবর্জনের তরঙ্গে আবর্তিত হয়ে সিপিবি-বাসদের মতো বাম-গণতান্ত্রিক দলগুলো যে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতায়িত হওয়ার একটি বড় সুযোগ হারাল, তা লেখাই বাহুল্য।
৫
গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হওয়ার পরও অনেক রাষ্ট্রই সমর্থন করেছে নতুন সরকারকে। নতুন মন্ত্রীদের শপথ নেওয়ার অনুষ্ঠানে পশ্চিমা কূটনীতিকরা উপস্থিত থাকলেও পশ্চিমা দেশগুলো প্রথমদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানাতে কুণ্ঠিত ছিল। অন্যদিকে, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক স্বার্থ থাকার পরও চীন ও ভারত বাংলাদেশের নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে।
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগেই একে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা হিসেবে যেমন স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, তেমনি নির্বাচনের পর নতুন সরকারকে অভিনন্দনও জানানো হয়েছে। ১৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করে শুধু ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী নন, প্রধান বিরোধী দল বিজেপি নেতা এল কে আদভানিও অভিনন্দন জানিয়েছেন। ভারত প্রথম বরফ গলানোর পর এ ধারায় যুক্ত হয়েছে চীন। নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আরও দুটি দেশ, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া। সমর্থন দিয়েছে মিয়ানমার ও নেপাল।
এইভাবে, পশ্চিমা বিশ্বনিয়ন্ত্রিত বিশ্বরাজনীতির বিপরীতে এশীয় বিশ্বের কূটনীতির একটি আদল ফুটে উঠেছে। আঞ্চলিক রাজনীতিতে পরষ্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী দু’ রাষ্ট্র চীন ও ভারতের সমর্থন আদায়ের মধ্য দিয়ে প্রকারান্তরে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নিজেদের কূটনৈতিক সক্ষমতারও স্বাক্ষর রেখেছে। আঞ্চলিক কূটনীতির এই আদলে আলাদা মাত্রা দিয়েছে রাশিয়ার স্বীকৃতি।
রাশিয়া নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে আবারও বাংলাদেশের নির্বাচনে জনগণের আকাঙ্ক্ষার ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রতিফলন’ ঘটেনি এবং এ নির্বাচন নিয়ে তারা ‘সন্তুষ্ট নয়’ বলে জানানো হয়। সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে উপ-মুখপাত্র মারি হার্ফ অবশ্য ‘নতুন সরকারের সঙ্গে একত্রে কাজ করার’ কথা বলেছেন। কিন্তু তা যে নিতান্তই নিয়মরক্ষার ঘোষণা, তা বোধহয় লেখার অপেক্ষা রাখে না। মারি হার্ফের বলা ‘বাংলাদেশ সরকারের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরে আরও স্পষ্ট করা হবে’ কথাটি যদি আমরা মনে রাখি, তা হলে ভালো বৈ খারাপ হবে না।
৬
রাষ্ট্রশাসনের এবং ক্ষমতা পরিবর্তনের বুর্জোয়া সূচকগুলোর পবিত্রতা রক্ষার জন্যে বিশ্বব্যাপী পশ্চিমা দেশগুলোর প্রচেষ্টার সঙ্গে আমরা নানাভাবেই পরিচিত। সেই নিরিখে যে-কেউই বলবেন যে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে সরকারের দূরত্ব বেড়েছে। আবার এটিও স্বীকার করতে হবে, নির্বাচনকালীন সরকার অন্ততপক্ষে কথিত তৃতীয় শক্তিকে যেভাবেই হোক একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে থাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পেরেছে।
তাই দেখা যাচ্ছে, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একদিকে এনজিওকেন্দ্রিক ও বিদেশি অনুদানপুষ্ট এনজিওগুলোর দাপট প্রতিষ্ঠার চেষ্টা দৃশ্যমান হওয়ার পাশাপাশি খর্ব হয়েছে; অন্যদিকে ধর্মবাদী রাজনীতিকেন্দ্রিক দলগুলোর সংঘবদ্ধতার ও সহিংসতা-সন্ত্রাসের অপ্রকাশ্য মাত্রাগুলো বেরিয়ে এসেছে এবং সেই সহিংসতা ঠেকানোর ক্ষেত্রে সরকারের অক্ষমতার নিদর্শনও স্থাপিত হয়েছে।
৭
ধর্মীয়-মৌলবাদী-জাতীয়তাবাদী ডানপন্থী রাজনীতিকেন্দ্রিক দলগুলো আপাতদৃষ্টিতে সহিংসতার পথ থেকে সরে এসেছে; সক্রিয় হয়ে উঠেছে দ্রুত নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্যে। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ‘সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের’ কথা বলে এবং নতুন সরকারের প্রতি এক ধরনের অস্বীকৃতির মধ্যে দিয়ে তাদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে।
লক্ষ্যণীয় ঘটনা হল, নতুন সরকার এবং এমনকি তাকে অভিবাদনদানকারী রাষ্ট্রগুলোও ‘সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের’ ধারণাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। নতুন সরকারের পক্ষ থেকে সংলাপ ও আলোচনার কথাও বলা হচ্ছে। এই আলোচনা ও সংলাপ অর্থবহ করে তুলতে হলে যেসব খোলা প্রতিশ্রুতি রাখা দরকার (প্রধানত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সুশাসন) তা সরকার ও বিরোধী দল কতটুকু দিতে পারবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
দশম জাতীয় সংসদের জনপ্রতিনিধিদের শপথ নেওয়ার পর ১১ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জনকারী প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রথম বৈঠক ছিল বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জুনের সঙ্গে। এ বৈঠকের আগে এক বিবৃতির মাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনির্দিষ্টকালের অবরোধ পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত তুলে নেওয়ার কথা জানান। চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসনের আলোচনার পরও, নতুন সরকারের প্রতি চীনের সমর্থন ঘোষণার বিষয়টি নিঃসন্দেহে বিএনপির নেতাকর্মীদের হতাশ করেছে। তবে উজ্জীবিত করেছে ১৩ জানুয়ারিতে বিএনপির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে অন্যান্য বিদেশি কূটনীতিকদের বক্তব্য।
লেখাই বাহুল্য, রাজপথের আন্দোলন স্থগিত রেখে বিএনপি এখন আরও বেশি বিদেশনির্ভর– ঢাকায় কর্মরত ৩৪ দেশের বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক করেছেন তারা। খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রায়ই দেখা করছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র কিংবা যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূতরা। বিএনপির লক্ষ্য এখন যত কম সময়ের মধ্যে সম্ভব আরও একটি সংসদ নির্বাচনের জন্যে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি ও অব্যাহত রাখা। অব্যাহত সহিংসতার পর্বে জনগণের সঙ্গে বিএনপির যে গণদূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা কমিয়ে আনার পথ নির্ধারণের বদলে দলটি চাইছে কূটনীতিকদের মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে আলোচনার দরজা উন্মুক্ত করতে।
কিন্তু সহিংসতা প্রসঙ্গে কোনো গ্রহণযোগ্য অবস্থান ও বক্তব্য তুলে ধরা না পর্যন্ত বিএনপির এই গণদূরত্ব থেকেই যাবে। কূটনীতিকদের দূতিয়ালিতে আলোচনার দুয়ার খুলতে পারে, কিন্তু গণদূরত্বের বিষয়টি বিএনপি আমলে না নিলে আগামী নির্বাচনও তা প্রভাবিতও করবে। জামায়াতে ইসলামীর ওপর দায় চাপিয়ে বিএনপি কতটুকু রক্ষা পাবে, তা বলা কঠিন। কেননা এসব সহিংসতার বিষয়ে বিএনপি কখনও-ই কোনো শক্ত অবস্থান নেয়নি। এমনকি ১৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনেও এই সহিংসতা সম্পর্কে কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়নি। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের পর তাদের সহিংসতা সম্পর্কিত বিবৃতি দেওয়ার মাত্রা একটু বাড়লেও এ জন্যে সরকারকেই দায়ী করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে।
তবে এ ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলোর অবস্থান বেশ ক্রিটিক্যাল– কেননা একদিকে তারা সংলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওপর জোর দিচ্ছেন এবং এ চাপ অব্যাহত রাখার স্বার্থে নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানানো থেকে দূরে থাকছেন, অন্যদিকে আবার বিরোধী দলগুলোর সহিংসতা, রাজপথের আন্দোলন ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের তীব্র নিন্দা করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে অনির্দিষ্টকালের জন্যে অবরোধের মতো কর্মসূচি থেকে বিএনপির সরে আসার এবং ১৫ জানুয়ারিতে অপেক্ষাকৃত নরম কর্মসূচি ঘোষণার পেছনে যত না দেশের জনগণের স্বার্থ তারও বেশি কাজ করেছে আসলে বিদেশি কূটনীতিকদের অব্যাহত সমালোচনা।
তবে ১৫ জানুয়ারির সংবাদ সম্মেলনে মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অনুপস্থিতি অনেকেরই চোখে লেগেছে। বিএনপি যে ভেতরে-বাইরে সবখানেই একটি টালমাটাল সময় পাড়ি দিচ্ছে, তা বোধকরি লেখার অপেক্ষা রাখে না।
৮
কিন্তু পশ্চিমা কূটনীতিকরা কতটুকু সচল থাকতে পারবেন শেষ পর্যন্ত? পশ্চিমা দেশগুলোর পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে মৌলবাদ ও জঙ্গীদের উত্থান প্রসঙ্গ, যেখানে প্রধান বিরোধী দল হওয়ার পরও বিএনপি এখন পর্যন্ত স্বচ্ছ অবস্থান নিতে পারেনি। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সারাদেশের অব্যাহত সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকারি ব্যর্থতা জনগণকে ক্ষুব্ধ করেছে। কিন্তু এই ক্ষোভ থেকে যে সরকারবিরোধী কোনো বিক্ষোভ দানা বেঁধে ওঠেনি, তার কারণ জনগণ এটিও জানে, এর জন্যে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবির যেমন দায়ী, তেমনি দায়ী বিএনপিও।
আর সরকার জনগণের অসহায়ত্ব উপভোগ করেছে। জনগণ যাতে মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদের ভয়ে ভীত হয়ে সরকারকে সমর্থন দেওয়ার পথ বেছে নেয়, তার জন্যে সন্ত্রস্ত পরিবেশ জিইয়ে রেখেছে। সন্ত্রস্ত এবং ক্ষুব্ধ হলেও জনগণ এখন নিশ্চিত, বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্কে চিড় ধরবে না। খালেদা জিয়া পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিদেশি প্রচারমাধ্যমে ‘জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির ঐক্য কৌশলগত’ এবং ‘সময় হলেই এ থেকে বেরিয়ে আসার’ কথা বললেও, এর প্রতিক্রিয়ায় এক জামায়াত নেতা যা বলেছেন তাতে বেলুন চুপসে গেছে।
খালেদা জিয়ার এ বক্তব্যই যে একটি ‘রাজনৈতিক কৌশল’ জামায়াত নেতা তা জানিয়ে দিয়েছেন এবং পরে ১৩ জানুয়ারিতে ১৮ দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে খালেদা জিয়া যেসব কথা বলেছেন, তাতেও এর সমর্থন মিলছে। ওইদিন খালেদা জিয়া জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির ঐক্য নিয়ে শেখ হাসিনার এত ‘মাথাব্যথা’ কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। জোটের অন্যান্য নেতারাও এ সময় খালেদা জিয়ার বক্তব্য সমর্থন করেন।
আন্দোলনের নামে সহিংসতার যেসব দৃষ্টান্ত জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবির করেছে এবং একই আন্দোলনে যুক্ত থেকে বিএনপিও যে সহিংসতার অংশীদার হয়েছে, তার দায় থেকে মুক্ত হওয়ার কোনো সদিচ্ছাই যে বিএনপির নেই, ১৮ দলের বৈঠক থেকে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। জঙ্গীবাদ নিয়ে যে দূরত্ব এখন ভারত ও অন্যান্য প্রতিবেশিদের সঙ্গে তৈরি হয়েছে, অদূর ভবিষ্যতে তা হয়তো পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গেও বিএনপির তৈরি হবে।
সব মিলিয়ে, পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রাষ্ট্রশক্তিগুলোর পররাষ্ট্রনীতির মধ্যে সূক্ষ্মভাবে হলেও যে পার্থক্য প্রকাশিত হচ্ছে, তা জানান দিচ্ছে বাংলাদেশ ঘিরে পরাশক্তিগুলো নতুন করে বিন্যস্ত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একসময় আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ইস্যুতে একজন আরেকজনের পাশে দাঁড়াত; তাদের সেই রাখীবন্ধন এখন আর নেই। চীন ও ভারত আঞ্চলিক রাজনীতি কেন্দ্র করে নিকট অতীতেও একজন আরেকজনকে ঘায়েল করার চেষ্টা চালাত; তাদের সেই অহি-নকুল সম্পর্কে ক্রমশ চিড় ধরছে।
আবার সোভিয়েত মডেল ব্যর্থ হওয়ার সুবাদে বহুবিভক্ত সোভিয়েত রাশিয়া থেকে উদ্ভূত দেশ রাশিয়া নতুন করে চাইছে পরাক্রমশীলতার প্রকাশ ঘটাতে। সিরিয়ার পর এবার রাশিয়া তার পররাষ্ট্রনীতির শক্ত প্রতিফলন ঘটাতে চলেছে বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থই যে এসব ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, তা লেখাই বাহুল্য।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বেড়েছে, তাই দরকষাকষির ক্ষমতাও বেড়েছে। যারা এককালে এ দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে টিটকারি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, তাদের অনুচররা অবশ্য এ দেশকে আবারও ‘খাদের কিনারে দাঁড়ানো দেশ’ হিসেবে মূল্যায়ন করতেই বেশি আগ্রহী। তারা বুঝতে চান না, সুকান্তের সেই উপলব্ধি ‘সাবাস বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়/ জ্বলেপুড়ে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়’ই চূড়ান্ত সত্য এ দেশের মানুষের ক্ষেত্রে। একটি নির্বাচন নানাভাবে সমালোচিত হওয়ার পরও যে কত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে, তার প্রমাণ আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর নতুন এ বিন্যাস।
৯
পশ্চিমা দেশগুলো চাইছে দ্রুত আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নতুন একটি সরকার গঠনের পথ বেছে নিক। আরও বড় ব্যাপার হল, বিএনপির পক্ষ থেকে, পাশাপাশি সিপিবি-বাসদের পক্ষ থেকেও সম্প্রতি একই আহ্বান জানানো হয়েছে। সিপিবি-বাসদের ১৩ জানুয়ারি দেওয়া বিবৃতি অনুযায়ী, ‘সরকার আরও নিপীড়ক হয়ে উঠবে’ এবং ‘বিএনপি আরও বেশি জামায়াত-শিবিরসহ উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তিনির্ভর হয়ে পড়বে’। সরকারকে ‘নিপীড়ক’ এবং বিএনপিকে ‘আরও বেশি জামায়াত-শিবিরসহ উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তিনির্ভর’ না করে তোলার জন্যে তাদের এ প্রেসক্রিপশন কতটুকু কাজ দেবে বলা কঠিন।
কেননা নির্বাচন ও যুদ্ধাপরাধী বিচারের প্রসঙ্গ যেখানে এক হয়ে পড়েছে, সেখানে আলোচনার টেবিলে যাওয়ার আগে বিএনপি কি এই খোলা প্রতিশ্রুতি দিতে পারবে যে, তারা ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম ও বিচারের রায় কার্যকর করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে? জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করার ‘কৌশলগত’ (যা জামায়াত নেতা সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরই পরিষ্কার করে দিয়েছেন) ঘোষণা দিয়ে নয়, বরং বিএনপির কাছ থেকে এ রকম প্রতিশ্রুতি পাওয়ার মধ্য দিয়েই কেবল জনগণের পক্ষে বোঝা সম্ভব যে, দলটি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ক্ষেত্রে সত্যিই আন্তরিক। তবে এখন বিএনপি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে মৈত্রীর পথ থেকে সরে এলেও তা সাধারণ নাগরিকদের ওপর প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয় না।
পরিস্থিতি ও রকম জন্যেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে গত কয়েক মাসে নির্বাচনবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক ধারাগুলোর মধ্যে সম্মিলন ঘটেনি। পরাশক্তির বিন্যাস বরং নতুন সরকারের জন্যে ইতিবাচক হয়ে উঠেছে। কেননা রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেমন নতুন নতুন ঐক্যের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে, যেমন নতুন নতুন অনৈক্যের পথ খুলে দেয়, ঠিক তেমনি নতুন নতুন প্রশ্নেরও জন্ম দেয়। যেমন, একটি প্রশ্ন ইদানিং অনেকের মনেই ঘুরপাক খাচ্ছে– গণতন্ত্রের সুযোগ নিয়ে যদি কোনো অগণতান্ত্রিক, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি প্রতিষ্ঠা পাওয়ার চেষ্টা চালাতে থাকে, তবে তা কতটুকু গণতন্ত্রসম্মত?
৫ জানুয়ারির নির্বাচন জনগণ ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ‘গ্রহণযোগ্যতা’ না পেলেও এটি বর্জনের জন্যে যে ঐক্যবদ্ধ বিরোধী স্রোত তৈরি হয়নি, তৈরির কোনে সম্ভাবনাও ছিল না, তার কারণ লুকিয়ে রয়েছে এই প্রশ্নের উত্তরে।