অনেক বছর আগে রঞ্জন বাগচীর লেখা ‘গ্যাংগ্রীন’ নামের একটি অসামান্য গল্প পড়েছিলাম দেশ পত্রিকায় (বর্ষ ৫৭, সংখ্যা ২৮, ১২ মে ১৯৯০)। গল্পে বর্ণিত নাগকেশর সম্পর্কিত তথ্যগত ভুল ধরিয়ে দিয়ে চিঠি লিখেছিলেন বেলুড় মঠ থেকে ভিক্ষু বুদ্ধদেব। [...]

অনেক বছর আগে রঞ্জন বাগচীর লেখা ‘গ্যাংগ্রীন’ নামের একটি অসামান্য গল্প পড়েছিলাম দেশ পত্রিকায় (বর্ষ ৫৭, সংখ্যা ২৮, ১২ মে ১৯৯০)। গল্পে বর্ণিত নাগকেশর সম্পর্কিত তথ্যগত ভুল ধরিয়ে দিয়ে চিঠি লিখেছিলেন বেলুড় মঠ থেকে ভিক্ষু বুদ্ধদেব, গল্পের প্রশংসা করেই তিনি লিখেছিলেন : ‘নাগকেশর’ বলে যে গাছটিকে বলা হয়েছে তার বাংলা স্ট্যান্ডার্ড নাম ‘নাগলিঙ্গম’ (Couroupita guianensis)। বহু গাছের স্ট্যান্ডার্ড বাংলা নাম না থাকলেও ‘নাগকেশর’ও (Mesua ferrea) একটি স্ট্যান্ডার্ড নাম। ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রকাশিত দেশ-এর বিশেষ সংখ্যায় (বর্ষ ৫৭, সংখ্যা ৩৯, ২৮ জুলাই ১৯৯০) ছাপা হয়েছিল ভিক্ষু বুদ্ধদেবের এই চিঠি, যিনি আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত ফুল ফোটানোর সহজ পাঠ বইয়েরও লেখক। নাগকেশরের যে-বৈজ্ঞানিক নাম তিনি লিখেছেন, তা অবশ্য নাগকেশরের নয়, নাগেশ্বরের―নাগকেশর, নাগেশ্বর ও নাগলিঙ্গম তিনটি ভিন্ন প্রজাতির ফুলগাছ। রঞ্জন বাগচীর গল্পে নাগকেশরের কী বিবরণ ছিল সে-কথায় পরে আসছি, আগে বলে নিই, বৈজ্ঞানিক নাম নিয়ে বিতর্ক থাকলেও বা নাগলিঙ্গম নামটি মেনে নিলেও গল্পরসে কোনও ঘাটতি দেখি না। গল্পটি দাঁড়িয়ে আছে মানবিক ভালোবাসার উর্বর মাটিতে। মৌড়ীগ্রামের এক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী কালো পরিদা। সারাদিনে প্রচুর অবসর আর অবসরটুকু সে ভরিয়ে তোলে বাগানের পরিচর্যায়। গাছগুলো তার সন্তানের মতো। পায়ের আঙুলের কড়া কাটতে গিয়ে ঘা বাধিয়ে বসে কালো, সে ঘা আর শুকোয় না। রক্তপরীক্ষায় ধরা পড়ে ডায়াবেটিস। বড় ডাক্তার দেখেশুনে জানান যে গ্যাংগ্রিন হয়ে গেছে, কেটে ফেলতে হবে পা। ডায়াবেটিসের কারণে অস্ত্রোপচারও অসম্ভব। শুশ্রূষার লোক নেই বলে কলকাতার হাসপাতালে কালোকে না রেখে তার গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সঙ্গে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গল্পকথক মহিম। যাত্রাপথে কালোর পায়ের ব্যান্ডেজ বদলানো, ওষুধ খাওয়ানো, ইনসুলিন দেওয়া সবই আন্তরিকভাবে করে মহিম। অনেক দূরের পথ―লোকাল বাসে খড়্গপুর স্টেশন, সেখান থেকে নিজামুদ্দিন উৎকল এক্সপ্রেস ট্রেনের বার্থে শুয়ে শুয়ে কটক, কটকে নেমে আবার বাসে জগৎসিংপুর যেতে লাগবে ঘণ্টাখানেক, তারপর রিকশায় আর পায়ে হেঁটে হরিদাসাই গ্রামে কালোর বাড়ি। গ্রামে কালোর মেয়ে সারদাকে দেখা যাবে, যদিও মহিম আত্মীয়স্বজনের কথা জানতে চাইলে হাহা করে হেসে উঠেছিল কালো : অনেক কি বলছ মাষ্টার। হরিদাসাই গ্রামটাই তো আমাদের আত্মীয়স্বজনে ভর্তি। ওখানে পরিদা আছে, প্রধান আছে, সোয়াই আছে। সবাই কায়স্থ। সকলে মিলেই একটা বড় সংসার বলতে পার।…

পিটার কাস্টারসের উপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন নেমে এসেছিল স্বাধীন বাংলাদেশে, যে দেশের সাধারণ মানুষের মুক্তির জন্য সব কিছু তিনি ছেড়ে এসেছিলেন। জেনারেল জিয়া ঢাকা কারাগারের অভ্যন্তরে গোপন মার্শাল ল ট্রাইব্যুনালে প্রহসনের বিচার শুরু করে কর্নেল তাহেরসহ অনেকের বিরুদ্ধে। পিটার কাস্টার্সকেও গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হল। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা সাজানো হল তাঁর বিরুদ্ধে।

  কাটা বেঁছে কই মাছ খাওয়া আমাদের বাঙালিদের জন্যও সহজ কাজ নয়। এই ৬৬ বছর বয়সে কই মাছের দোপেয়াজা খেতে গিয়ে তা আবার মনে হলো। মন চলে গেল ৪১ বছর আগে, যখন আমার বয়সী পিটার কাস্টারসের সাথে পরিচয় হয়েছিল। ঢাকার একেবারে সাধারণ একটা রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খাব আমরা। পিটারই এখানে আমাকে নিয়ে এসেছেন। ভাত আর কই মাছের ঝোল তিনিই অর্ডার করেছেন। ‘কাটা বেঁছে আপনি খেতে পারবেন?’ পিটারের মুখ হাসিতে উজ্জ্বল হলো। ‘চিন্তা নাই, ভালই পারি।’ অবাক হয়ে লক্ষ্য করি কি নিপুণ হাতে কাটা বেঁছে পিটার বাঙালির ভাত-মাছ খেলেন গভীর পরিতৃপ্তি নিয়ে। ‘পেট ঠিক থাকবে তো?’ আবারো পিটারের মুখে হাসি। ‘বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে এত ঘুরেছি, কত রকমের খাবার খেয়েছি। এখন আর সমস্যা হয় না। আপনাদের একটা প্রবাদ আছে না, “শরীরের নাম মহাশয়, যাহা সহাও তাহাই সয়।” আমারও সয়ে গেছে। কই মাছ আমার খুব প্রিয়।’ সমবয়সী আমরা বন্ধুর মতই ছিলাম। তারপরও আমাকে আপনি বলতেন পিটার। যতদূর মনে আছে, সবাইকে আপনি বলতেন। গায়ে সুতির পাজাম-পাঞ্জাবি পায়ে সাধারণ চপ্পল। এমন পোশাকেই দেখা যেত পিটারকে। ফর্সা পা মশার কামড়ে লাল হয়ে আছে। ‘ঘরে মশারি টানান না?’ ‘দেখুন গ্রামের গরিব মানুষের মশারি কিনবার সামর্থ্য নেই। আর আপনাদের দেশে মশার কামড়ে এখন আর ম্যালেরিয়া হয় না। তাই মশারি ব্যবহার করি না।’ পিটারের কথা শুনে স্তম্ভিত হই। বর্ষার পানিতে ভিজে ভিজে তাঁর খোলা পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে ঘা হয়েছে। পিটার দেখেছেন ক্ষেতে-খামারে কাঁদা মাটিতে কাজ করা গ্রামের গরিবদের পায়ে এমন ঘা। ‘সস্তা কোন ওষুধ নেই এই ঘা সারাতে?’ পিটারের এ প্রশ্নের উত্তরে জানাই পটাশিয়াম পারমাঙ্গানেট গুলিয়ে লাগালে সারতে পারে। তুত ডলে দিলেও কাজ হয়। তবে তা তো সব সময় পাওয়া যায় না। দিনকয় পরে তাঁর সাথে দেখা। ফর্সা পা রঙিন হয়ে আছে। উজ্জ্বল হাঁসি পিটারের মুখে। ‘দারুণ কাজে লেগেছে আপনার পরামর্শ। পারমাঙ্গানেটের রং লেগে থাকলেও ঘা ভাল হয়ে গেছে। ঠিক করেছি, এবার গ্রামে যাবার সময় পটাশিয়াম পারমাঙ্গানেট কিনে নিয়ে যাব। গরীবদের খুব কাজে লাগবে।’ গত ৩রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ তারিখে নিজ দেশ হল্যান্ডের লেইডেনে তার বাড়িতে পিটার কাস্টারস ইহধাম ত্যাগ করেছেন। তারপর থেকে কতবার বসেছি তাঁর উপর কিছু লিখবো বলে।…

একসময় দৈনিক আজকের কাগজভোরের কাগজ-এর সাময়িকী সংগ্রহ করতাম, কিন্তু অধুনালুপ্ত দৈনিক মুক্তকণ্ঠ-র আট পৃষ্ঠার বর্ণিল সাময়িকী ‘খোলা জানালা’ দেখার পর অন্যসব সাময়িকী নিষ্প্রভ ও গৌণ হয়ে গেল হঠাৎ। আমাদের লেখালেখির মালশায় আগুন উসকে দিয়েছিল ‘খোলা জানালা’, আমরা তর্ক করতাম ‘খোলা জানালা’-র লেখা ও প্রচ্ছদ নিয়ে, প্রতি শুক্রবার ছিল আমাদের কাছে নবান্নের মতো। [...]

একসময় দৈনিক আজকের কাগজ ও ভোরের কাগজ-এর সাময়িকী সংগ্রহ করতাম, কিন্তু অধুনালুপ্ত দৈনিক মুক্তকণ্ঠ-র আট পৃষ্ঠার বর্ণিল সাময়িকী ‘খোলা জানালা’ দেখার পর অন্যসব সাময়িকী নিষ্প্রভ ও গৌণ হয়ে গেল হঠাৎ। আমাদের লেখালেখির মালশায় আগুন উসকে দিয়েছিল ‘খোলা জানালা’; আমরা তর্ক করতাম ‘খোলা জানালা’-র লেখা ও প্রচ্ছদ নিয়ে, প্রতি শুক্রবার ছিল আমাদের কাছে নবান্নের মতো। হকারকে অগ্রিম টাকা ও বখশিস দিয়ে রাখতাম, তবু কারা যেন আগেভাগে এসে ছিনিয়ে নিয়ে যেত দুয়েকটি সংখ্যা মাঝেমধ্যে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায়, মনে আছে, একবার ‘খোলা জানালা’ না পেয়ে ভরদুপুরে না খেয়েই হেঁটে হেঁটে চলে গিয়েছিলাম হাটহাজারি বাসস্টপে এবং আশ্চর্য, সেদিনের সংখ্যার নামই ছিল ‘দূরপাল্লার পদাবলী’ (সংখ্যা ৫০, ২ অক্টোবর ১৯৯৮)―শামসুর রাহমান, সিকদার আমিনুল হক, আবু হাসান শাহরিয়ার, আওলাদ হোসেন, নুরুন্নাহার শিরীন ও টোকন ঠাকুরের দীর্ঘ কবিতাভাসান ছিল সেদিন। দুঃখ এই যে, আমার সংগৃহীত সাময়িকীর স্তূপ থেকে নিভৃতে বেছে বেছে ‘খোলা জানালা’তেই শুধু দাঁত বসিয়েছে সাহিত্যপ্রাণ ইঁদুরেরা! ছোটকাগজ-বড়কাগজের চারিত্র্য, সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে একটি সংখ্যা সাজিয়েছিল ‘খোলা জানালা’, ‘অভিবাদন ছোটকাগজ’ (সংখ্যা ৪৮, ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮) শিরোনামে; শহীদুল ইসলামের মূল প্রচ্ছদরচনার পাশাপাশি ‘দৃশ্য ও দৃশ্যান্তরের গল্প’ প্রবন্ধে আবু হাসান শাহরিয়ার উনিশটি মূল্যবান খণ্ডচিত্র তুলে ধরেছিলেন, সমকালীন সাহিত্যচর্চার প্রসঙ্গে যেগুলো বেশ তাৎপর্যময় : ০২. বেশিরভাগ বড়কাগজের সাহিত্য সাময়িকীই তকমাধারী মুষ্টিমেয় লেখকের উপনিবেশে রূপান্তরিত হয়েছে। ঐসব সাময়িকীতে তকমাধারীদের জন্য শতকরা আশিভাগ স্থান বরাদ্দ থাকে। বাকি মাত্র কুড়িভাগ স্থান নতুন বা নিভৃতচারী লেখকদের জন্য। ১৫. দশকচর্চার প্রতি অপ্রতিভাবানদের বিশেষ প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। দশকের ঝাঁপিতে-ঝাঁপিতে ঢোঁড়া সাপের আস্ফালন থেকে নতুন প্রজন্মও বেরিয়ে আসতে পারছে না। ১৯. হাতুড়ে পরামর্শকদের মহাজনী ও মোড়লিপনায় দিগ্‌ভ্রান্ত হচ্ছেন অনেক নতুন লেখক। [কথায় কথায় এরা দেরিদা ফুকো কপচালেও প্রত্নবাঙলার হুঁকোর সঙ্গে পরিচিত নন।] ‘প্রত্নবাঙলার হুঁকো’ কথাটিই যেন ‘খোলা জানালা’র অদৃশ্য প্রতীক; আবু হাসান শাহরিয়ার নিজেই তখন লিখছেন ‘মাটিবর্তী’ নামের কবিতা, পড়তে পড়তে আমাদের মনে হয়েছে, তিরিশি আধুনিক কবিদের বিরুদ্ধে সাধারণভাবে যে-ইউরোপলগ্নতার অভিযোগ তোলা হয়ে থাকে, ‘খোলা জানালা’ বোধহয় সে-অভিযোগ স্খালনেরই চেষ্টা করে যাচ্ছে আন্তরিক সচেতনতায়। না হলে ময়মনসিংহের জলমগ্ন জনপদে নৌকাভ্রমণের মনোজ্ঞ ছবি আঁকতেন না টোকন ঠাকুর ‘দূরের বসতি প্রাণের বাসিন্দা’ শিরোনামে (সংখ্যা ৪৯, ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮)। ভাববাচ্যপ্রধান…

সাহিত্যচর্চায় ও প্রকাশনায় প্রতিভা ও সুরুচির স্বাক্ষর রেখেও শওকত ওসমান চৌধুরী যবনিকার আড়ালেই থেকে গেলেন আজীবন। [...]

রিমঝিম একটি কৈশোরক সংকলন; সম্পাদক ও প্রকাশক : শওকত ওসমান চৌধুরী, প্রকাশকাল : শ্রাবণ ১৩৭৭। সিগনেট প্রেস লি.-এ মুদ্রিত এই বর্ষাযাপিত সংকলন প্রকাশিত হয় ১৯, শেরে বাঙলা ছাত্রাবাস, চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম থেকে। বৃষ্টিস্নাত শিউলিফুলে খচিত মনোরম প্রচ্ছদটি এঁকেছিলেন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী সবিহ্-উল আলম। মূল্য : পঞ্চাশ পয়সা। সে-সময়ের (১৯৭০) প্রেক্ষিতে এরকম রুচিশীল ও সুচিন্তিত সাহিত্যসংকলনের প্রকাশ অভিনন্দনযোগ্য, বলা যায়। সূচিপত্রে চোখ বোলালেই বোঝা যাবে, ষাট-সত্তরের দশকে বিকাশমান এমনকী প্রখ্যাত অনেকেরই রচনা পরম যত্নে ধারণ করে আছে প্রায় তিন ফর্মার এই সংকলন―চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত হলেও এটি আঞ্চলিকতা বা গোষ্ঠীবদ্ধতার চর্চা করেনি; লেখকতালিকা দেখা যাক : নজরুল আব্বাস, দিলওয়ার, শেখ তোফাজ্জল হোসেন, সালেহ আহমদ, আলী ইমাম, শাহাদত হোসেন বুলবুল, মসউদ-উশ-শহীদ, মোসতাফা মহিউদ্দীন খসরু, খালেক বিন জয়েনউদ্দিন, মোরশেদ শফিউল হাসান, সিরাজুল উসলাম, প্রণত বড়ুয়া, বখতেয়ার হোসেন, আবদুল হাদী, শফিকুল ইসলাম, শামসুল করিম কয়েস, ইফতেখার হোসেন, ওয়াহিদুজ্জামান, মাহমুদ হক, রণজিৎ বরণ দেব, রোকেয়া খাতুন রুবী, শওকত ওসমান চৌধুরী, হাফিজউদ্দিন আহমদ, আলী আহসান কাজল, তানজিমা হক, মাসুদুজ্জামান। ভূজপুর ন্যাশনাল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন বাংলার শিক্ষক ও গবেষক চৌধুরী আহমদ ছফাকে (১৯৩০-২০০৮) একটি স্বাক্ষরিত রিমঝিম উপহার দিয়েছিলেন সম্পাদক শওকত ওসমান চৌধুরী। তিনি ছিলেন চৌধুরী আহমদ ছফার ছাত্র ও জ্ঞাতিসূত্রে ভ্রাতুষ্পুত্র। পরলোকগত মোহাম্মদ হোসেন চৌধুরী ও নুরনাহার বেগমের জ্যেষ্ঠ সন্তান শওকত ওসমান চৌধুরীর জন্ম চট্টগ্রামের ভূজপুর থানার আজিমপুর গ্রামে। চৌধুরী আহমদ ছফার মুখেই শুনেছি, ইংরেজি সাহিত্যের মেধাবী ছাত্র শওকত ওসমান চৌধুরী বাংলাদেশ ব্যাংক-এর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উচ্চতর পদে কর্মরত ছিলেন, বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত এবং ঢাকানিবাসী। ছাত্রাবস্থায় সাহিত্যচর্চায় যুক্ত থাকলেও পরবর্তীকালে তিনি বিচ্ছিন্ন হয়ে যান লেখালেখির জগৎ থেকে, অন্তত তাঁর লেখা প্রকাশিত হতে দেখা যায় না কোথাও। নিজ গ্রামের সঙ্গেও বোধহয় তাঁর যোগাযোগ নেই দীর্ঘদিন ধরে। ভূজপুরেরই সন্তান অধ্যাপক রণজিৎ বরণ দেব ছিলেন শওকত ওসমান চৌধুরীর সহপাঠী; রিমঝিম-এ তাঁর একটি ছড়া তো আছেই, প্রকাশনা-সহযোগীদের মধ্যেও তিনি অন্যতম। আজিমপুর গ্রামের একটি দীর্ঘ সাহিত্যিক-ঐতিহাসিক পটভূমি আছে। কালান্তরসাহিত্যে ফটিকছড়ির এক বিস্মৃত অধ্যায় (২০০১) গবেষণাগ্রন্থ ও বিষণ্ন বিকেল (২০০৬) কাব্যের স্রষ্টা চৌধুরী আহমদ ছফা ছাড়াও কবি ও জমিদার কাজী হাসমত আলী (জন্ম : ১৮৩২) বিদ্বৎসমাজে সুপ্রসিদ্ধ; তাঁর প্রকাশিত কাহিনিকাব্য চিনফগপুর সাহা (রচনাকাল : ১৮৫০) আবিষ্কার করেন…

পুরো অনুষ্ঠানটি চলাকালীন সভা কক্ষের আবেগ, উদ্দীপনা, আর উপস্থিত সবার প্রত্যয় নিয়ে লিখতে গিয়ে নিজের প্রকাশ-ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা প্রবলভাবে অনুভব করলাম। তাই মনে হল, পুরো ছয়শো মানুষ যেখানে একই আবেগ আর প্রত্যয়ে এক সূত্রে গাঁথা ছিল গোটা সন্ধ্যা জুড়ে, সেখানে নিজের অনুভূতি বা প্রতিক্রিয়ার কথা আলাদাভাবে বলার কিছু তো নেই আসলে! তাই হিলটনের সেই সভাকক্ষে উপস্থিত দর্শক শ্রোতারা বক্তৃতা চলাকালীন টুইটারে তাৎক্ষণিকভাবে যে প্রতিক্রিয়াগুলো ব্যক্ত করছিলেন সেখান থেকে কিছু স্ক্রিনশট তুলে ধরছি

গত ২ জুলাই লন্ডনে ব্রিটিশ হিউম্যানিস্ট এসোসিয়েশন আয়োজিত এ বছরের ‘ভলতেয়ার বক্তৃতা’ শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল। হাই-প্রোফাইল এ বক্তৃতানুষ্ঠানের এ বছরের নির্ধারিত বক্তা রাফিদা (বন্যা) আহমেদ। অত্যন্ত তথ্যবহুল এবং উদ্দীপনাময় সে বক্তৃতা স্পর্শ করেছে উপস্থিত ছয় শতাধিক মানুষকে। তারা সবাই যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে হাজির হয়েছিলেন এই সন্ধ্যায় বন্যা আহমেদের বক্তব্য শোনার জন্য। এদের বেশীরভাগই সেক্যুলার-মানবতাবাদী, যার যার ক্ষেত্রে আন্দোলনের সংগঠক, কর্মী। আরও উপস্থিত ছিলেন ইউরোপের মূলধারার মিডিয়ার সাথে যুক্ত সাংবাদিক, কলামিস্ট, লেখক, সম্পাদকরা। অভিজ্ঞতাটা নিয়ে লেখার কথা ভাবছিলাম আমিও। কিন্তু পুরো অনুষ্ঠানটি চলাকালীন সভা কক্ষের আবেগ, উদ্দীপনা, আর উপস্থিত সবার প্রত্যয় নিয়ে লিখতে গিয়ে নিজের প্রকাশ-ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা প্রবলভাবে অনুভব করলাম। তাই মনে হল, পুরো ছয়শো মানুষ যেখানে একই আবেগ আর প্রত্যয়ে এক সূত্রে গাঁথা ছিল গোটা সন্ধ্যা জুড়ে, সেখানে নিজের অনুভূতি বা প্রতিক্রিয়ার কথা আলাদাভাবে বলার কিছু তো নেই আসলে! তাই হিলটনের সেই সভাকক্ষে উপস্থিত দর্শক শ্রোতারা বক্তৃতা চলাকালীন টুইটারে তাৎক্ষণিকভাবে যে প্রতিক্রিয়াগুলো ব্যক্ত করছিলেন সেখান থেকে কিছু স্ক্রিনশট তুলে ধরছি এই এ্যালবামে। এই অনুষ্ঠান সম্বন্ধে, কিংবা উপস্থিত সবার প্রতিক্রিয়া জানতে টুইটারে হ্যাশটা্যাগ #BHAVoltaire খোঁজ করলে আরও জানতে পারবেন। [এই লিন্কে বন্যা আহমেদের পুরো বক্তৃতাটিই পাবেন] যদিও অত্যন্ত তাৎপর্যহীন, তবুও একটা দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, যার কিছুটা প্রাসঙ্গিকতা থাকায় এখানে উল্লেখ করছি। বন্যা আহমেদের ‘ভলতেয়ার বক্তৃতা’ নিয়ে লেখক তসলিমা নাসরিন কিছু অদ্ভুত মন্তব্য করেছেন (এই এ্যালবামের শেষে দেখুন)। ‘অদ্ভুত’ বললাম এ কারণে যে – তার এই মন্তব্যগুলোর হেতু বা উদ্দেশ্য আমার কাছে একেবারেই স্পষ্ট নয়। সত্যি বলতে কি সেটা উদঘাটনেরও তেমন আগ্রহ বোধ করছি না। বন্যা আহমেদ তার বক্তৃতায় হেসেছেন কেন তা নিয়ে তসলিমা নাসরিন অসন্তুষ্ট হয়েছেন। আরও অসন্তুষ্ট হয়েছেন যে বক্তৃতায় বন্যা আহমেদ যথেষ্ট ‘রাগ’ এবং ‘ফুঁসে ওঠা’ প্রকাশ করেননি! অভিজিৎ বিষয়ে বন্যা আহমেদের প্রকাশভঙ্গী মনঃপূত না হওয়ায় তা নিয়েও তসলিমা নাসরিনের ‘একটুখানি অস্বস্তি’ হয়েছে বলে তিনি লিখেছেন! তসলিমা নাসরিন সেদিন হিলটনের সভাকক্ষে উপস্থিত ছিলেন না। আমি ছিলাম, আরও ছিলো ছয় শতাধিক মানুষ, যারা তাদের প্রতিক্রিয়া/অনুভুতি তাৎক্ষণিকভাবে ব্যক্ত করেছেন। এই এ্যালবামের টুইটগুলো পড়লে তসলিমা নাসরিন নিশ্চয়ই তার ভুল উপলদ্ধি করবেন। সভাকক্ষে উপস্থিত কারোই মনে হয়নি যে অভিজিৎ রায়কে কিংবা বাংলাদেশের তাবত…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.