২০২০ সালের ৫ অক্টোবর, জামায়াতের আমীর একটি আভ্যন্তরীন সাংগঠনিক পত্রের মাধ্যমে জামায়াতের কর্মীদের যৌন আকাংখা নিয়ন্ত্রন এবং ধর্ষণ বা বলাতকারের মত অপরাধগুলোকে সাংগঠনিকভাবে মিমাংসা করার নির্দেশনা প্রদান করেন। জামায়াত আমীর কেন এই চিঠি দিলেন? এই ধরণের চিঠি কি তিনি দিতে পারেন? এই প্রসংগেই আলোচনা করছেন জাহানারা নূরী।

মাদ্রাসা শিক্ষকদের ছবি যারা তাদের ছাত্র - ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন করেছে

বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী দলে যোগদানকারী একজন ইসলামী বোনের অন্যতম প্রধান ভূমিকা হতে পারে তার সহযোগী পুরুষ সদস্যদের—যাদের মুমিন ভাই বলা হয়—"যৌন কষ্ট" দূরীকরণে সহায়তা।   হ্যাঁ, আপনি ভুল পড়েননি।  গত কয়েক দশক ধরে, ফাটল দিয়ে গল্পগুলো বেরিয়ে এসেছে—শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্ধুদের মধ্যে ফিসফিস করে বলা কথা, নিকাব এবং হিজাবের আড়াল থেকে টুকটাক শব্দ ফাঁস হয়েছে। একটু একটু করে। সে সব থেকে স্পষ্ট উন্মোচিত হয় এ সত্য: জামায়াতে ইসলাম তার বাইরের সদগুণের মুখোশ এবং আমীরের মিষ্টি হাসির তলায় অন্যান্য অভ্যাস লুকিয়ে রেখেছে।    একটি চিঠি নীরবে উচ্চারিত অংশটি উন্মোচিত করছে এই বাস্তবতা—পবিত্র ওয়াজের আড়ালে, ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের আন্দোরনের ওয়াসিলায় জামায়াতের নারী শাখা ইসলামী ছাত্রী সংস্থায় যোগদানকারী নারীদের জন্য এক ধরণের যৌন দাসত্বের ভূমিকা রয়েছে।  ১. প্রকাশিত তথ্য এবং অভ্যন্তরীণ চিঠি  মানবাধিকার কর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সংগঠনের সংস্কৃতি এবং নারীদের প্রতি আচরণ সম্পর্কিত ফাঁস হওয়া অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ নথি। অন্তত একটি যোগাযোগে এমন একটি সাংগঠনিক আচরণের ধরণ প্রকাশ পেয়েছে যা শৃঙ্খলার ছদ্মবেশে লিঙ্গ-ভিত্তিক যৌন নির্যাতনকে বৈধতা দেয়।    ৫ অক্টোবর, ২০২০ তারিখে জামায়াতের আমীর ড. শফিকুর রহমানের

স্বাক্ষরিত একটি গোপনীয় চিঠি, দলের নারী এবং পুরুষ শাখার মধ্যে প্রচারিত হয়েছিল বলে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়। এই অভ্যন্তরীণ চিঠি থেকে জানা গেছে যে, এই চিঠির মাধ্যমে জামায়াতারে আমীর সারা দেশে ধর্মীয় ভাইদের দ্বারা সংঘটিত ধর্ষণ এবং বলাৎকার জাতীয় নির্যাতনের ঘটনাগুলো স্বীকার ও অভ্যন্তরীণ সমাধান প্রস্তাব করেছেন।  এই নির্দেশনা থেকে বোঝা যায় যে জামায়াতে ইসলামী দলটিতে নারীদের যৌন নির্যাতনকে নিন্দা বা আইনগতভাবে সমাধানের পরিবর্তে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যৌনতা ব্যবস্থাপনা করা হয়। নৈতিক এবং আইনি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এ ধরণের নির্দেশনা গুরুতর উদ্বেগের কারণ।   ২. নির্দেশনার ভাষা এবং প্রভাব বিশ্লেষণ   উল্লেখিত চিঠিটি নিবিড়ভাবে পাঠ করলে জানা যায় যে জামায়াতে ইসলামী তার সদস্যদের মধ্যে ধর্ষণ এবং বলাৎকারের মতো নির্যাতনের ঘটনাগুলো পরোক্ষভাবে স্বীকার করে ও এই অপরাধসমূহকে সমাধানের জন্য সাংগঠনিক নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দেয়। সদস্যদের যৌন আচরণকে বিচ্ছিন্ন অপকর্ম হিসেবে না দেখে, এটি অভ্যন্তরীণভাবে ব্যাবস্থাপনার বিষয়টিই দলটির প্রধান ব্যক্তিদের কাছে অগ্রগণ্য বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়। এই চিঠিতে এ জাতীয় অপরাধে আইনি জবাবদিহিতার কথা কোথাও উচ্চারিত হয় নি।   চিঠিতে "ধর্ষণ এবং বলাৎকারের পুণরাবৃত্তি" শব্দ চারটি বিশেষ ভাব প্রকাশক। বাক্যটি…

গত ২১শে জুলাই, ২০২৫ বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের মানব সম্পদ বিভাগ-২ থেকে ইস্যু হওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক তাঁর সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং বিশেষত: নারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য যে পোশাক ও আচরণ বিধি জারি করেছিলেন তা বিভিন্ন নারী অধিকার কর্মী ও গোষ্ঠি, মানবাধিকার কর্মী বা গোষ্ঠি, মূলধারা ও বিকল্প ধারার সমাজ মাধ্যমে তুমুল প্রতিবাদের পর বাতিল করা হয়েছে।

Dress Code Bangladesh Bank and Iran Revolution

গত ২১শে জুলাই, ২০২৫ বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের মানব সম্পদ বিভাগ-২ থেকে ইস্যু হওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক তাঁর সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং বিশেষত: নারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য যে পোশাক ও আচরণ বিধি জারি করেছিলেন তা বিভিন্ন নারী অধিকার কর্মী ও গোষ্ঠি, মানবাধিকার কর্মী বা গোষ্ঠি, মূলধারা ও বিকল্প ধারার সমাজ মাধ্যমে তুমুল প্রতিবাদের পর বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে শঙ্কিত হয়ে পড়ে । গত জুলাইয়ে যে ‘বাম’রা বাংলাদেশ কখনোই ইরাণ বা আফগানিস্থান হবে না’ এসব বলেছেন বা শার্ট-ট্রাউজার পরা নারী বোরখা পরা নারীর হাত ধরে একই সাথে ‘ফ্যাসিবাদী সরকারকে হঠানোর আন্দোলনে ‘বৈচিত্র্য-র পোস্টার কার্ড হয়েছেন, সেই শার্ট-ট্রাউজার পরা নারীরা এখন কেমন আছেন?  না- বাংলাদেশে অবশ্যই এখনো পুরোপুরি ইরাণ বা আফগানিস্থানের মত কিছু হয়নি। কিন্তÍ, যে হারে ঢাকার মূল সড়ক থেকে অলি-গলিতে জামাতের পোস্টার ছেয়ে যাচ্ছে, তাতে খানিকটা ভয় পাওয়া অমূলক নয়।  বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের ঐ বিধিতে মেয়েদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ সহ শালীন পোশাক পরা এবং ছোট হাতা, লং ড্রেস, লেগিংস এবং উজ্জ্বল রঙের ঝলমলে পোশাকের পাশাপাশি ছেলেদের

জন্য জিন্স এবং গ্যাবার্ডিন প্যান্টও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। বলে কি? ছেলেদের জন্যও নিষিদ্ধ? তা-ও জিন্স? সবচেয়ে ভয়ানক বিষয় হলো ‘হিজাব-ও যেন খুব উজ্জ্বল বা রঙচঙে না হয়, সে কথা এই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল। ঠিক আজকের ইরাণে ‘গুড হিজাব’ এবং ‘ব্যাড হিজাব-এর মত। বাইশের মেয়ে মাহসার কয়েকটি চুল তার স্কার্ফের ভেতর থেকে বের হয়ে এসেছিল বলে সেটা ছিল ‘ব্যাড হিজাব।‘ বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের প্রজ্ঞাপনে মেয়েদের অসমতল বা চপ্পল পরা তথা হাই হিল পরার বিরুদ্ধে বলা হয়। কর্মজীবী ক’জন নারী  হিল পরে রোজ অফিসে যেতে পারেন? স্বাস্থ্যগত সুবিধা ও কাজের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য অধিকাংশ নারীই আজকাল অসমতল জুতোই পরেন।   যাক- আপাতত: বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের প্রজ্ঞাপন বাতিল হয়েছে। কিন্তÍ এই লেখাটিতে ইরাণে ইসলামী বিপ্লবের আগে-পরে- যে ‘বাম নারীরা ‘একনায়ক শাহে-র বিরুদ্ধে খোমেনীকে সমর্থন দিয়েছিলেন, সেই ‘একনায়ক শাহ’ নারীমুক্তির জন্য কি কি করেছিলেন এবং ইরাণ বিপ্লবের পরে ‘বাম উদারপন্থী নারীÕদের কাঙ্খিত খোমেনী সরকার তাদের জন্য কি করলো, সেটাই গ্রথিত হয়েছে।   মুশতাক আবু মুনাফ তাঁর Women’s Dress in Iran: From the Islamic Sitr to the Political Hijab প্রবন্ধে  জানাচ্ছেন…

অনেক বছর আগে রঞ্জন বাগচীর লেখা ‘গ্যাংগ্রীন’ নামের একটি অসামান্য গল্প পড়েছিলাম দেশ পত্রিকায় (বর্ষ ৫৭, সংখ্যা ২৮, ১২ মে ১৯৯০)। গল্পে বর্ণিত নাগকেশর সম্পর্কিত তথ্যগত ভুল ধরিয়ে দিয়ে চিঠি লিখেছিলেন বেলুড় মঠ থেকে ভিক্ষু বুদ্ধদেব। [...]

অনেক বছর আগে রঞ্জন বাগচীর লেখা ‘গ্যাংগ্রীন’ নামের একটি অসামান্য গল্প পড়েছিলাম দেশ পত্রিকায় (বর্ষ ৫৭, সংখ্যা ২৮, ১২ মে ১৯৯০)। গল্পে বর্ণিত নাগকেশর সম্পর্কিত তথ্যগত ভুল ধরিয়ে দিয়ে চিঠি লিখেছিলেন বেলুড় মঠ থেকে ভিক্ষু বুদ্ধদেব, গল্পের প্রশংসা করেই তিনি লিখেছিলেন : ‘নাগকেশর’ বলে যে গাছটিকে বলা হয়েছে তার বাংলা স্ট্যান্ডার্ড নাম ‘নাগলিঙ্গম’ (Couroupita guianensis)। বহু গাছের স্ট্যান্ডার্ড বাংলা নাম না থাকলেও ‘নাগকেশর’ও (Mesua ferrea) একটি স্ট্যান্ডার্ড নাম। ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রকাশিত দেশ-এর বিশেষ সংখ্যায় (বর্ষ ৫৭, সংখ্যা ৩৯, ২৮ জুলাই ১৯৯০) ছাপা হয়েছিল ভিক্ষু বুদ্ধদেবের এই চিঠি, যিনি আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত ফুল ফোটানোর সহজ পাঠ বইয়েরও লেখক। নাগকেশরের যে-বৈজ্ঞানিক নাম তিনি লিখেছেন, তা অবশ্য নাগকেশরের নয়, নাগেশ্বরের―নাগকেশর, নাগেশ্বর ও নাগলিঙ্গম তিনটি ভিন্ন প্রজাতির ফুলগাছ। রঞ্জন বাগচীর গল্পে নাগকেশরের কী বিবরণ ছিল সে-কথায় পরে আসছি, আগে বলে নিই, বৈজ্ঞানিক নাম নিয়ে বিতর্ক থাকলেও বা নাগলিঙ্গম নামটি মেনে নিলেও গল্পরসে কোনও ঘাটতি দেখি না। গল্পটি দাঁড়িয়ে আছে মানবিক ভালোবাসার উর্বর মাটিতে। মৌড়ীগ্রামের এক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী কালো পরিদা। সারাদিনে প্রচুর অবসর আর অবসরটুকু সে ভরিয়ে তোলে বাগানের পরিচর্যায়। গাছগুলো তার সন্তানের মতো। পায়ের আঙুলের কড়া কাটতে গিয়ে ঘা বাধিয়ে বসে কালো, সে ঘা আর শুকোয় না। রক্তপরীক্ষায় ধরা পড়ে ডায়াবেটিস। বড় ডাক্তার দেখেশুনে জানান যে গ্যাংগ্রিন হয়ে গেছে, কেটে ফেলতে হবে পা। ডায়াবেটিসের কারণে অস্ত্রোপচারও অসম্ভব। শুশ্রূষার লোক নেই বলে কলকাতার হাসপাতালে কালোকে না রেখে তার গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সঙ্গে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গল্পকথক মহিম। যাত্রাপথে কালোর পায়ের ব্যান্ডেজ বদলানো, ওষুধ খাওয়ানো, ইনসুলিন দেওয়া সবই আন্তরিকভাবে করে মহিম। অনেক দূরের পথ―লোকাল বাসে খড়্গপুর স্টেশন, সেখান থেকে নিজামুদ্দিন উৎকল এক্সপ্রেস ট্রেনের বার্থে শুয়ে শুয়ে কটক, কটকে নেমে আবার বাসে জগৎসিংপুর যেতে লাগবে ঘণ্টাখানেক, তারপর রিকশায় আর পায়ে হেঁটে হরিদাসাই গ্রামে কালোর বাড়ি। গ্রামে কালোর মেয়ে সারদাকে দেখা যাবে, যদিও মহিম আত্মীয়স্বজনের কথা জানতে চাইলে হাহা করে হেসে উঠেছিল কালো : অনেক কি বলছ মাষ্টার। হরিদাসাই গ্রামটাই তো আমাদের আত্মীয়স্বজনে ভর্তি। ওখানে পরিদা আছে, প্রধান আছে, সোয়াই আছে। সবাই কায়স্থ। সকলে মিলেই একটা বড় সংসার বলতে পার।…

পিটার কাস্টারসের উপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন নেমে এসেছিল স্বাধীন বাংলাদেশে, যে দেশের সাধারণ মানুষের মুক্তির জন্য সব কিছু তিনি ছেড়ে এসেছিলেন। জেনারেল জিয়া ঢাকা কারাগারের অভ্যন্তরে গোপন মার্শাল ল ট্রাইব্যুনালে প্রহসনের বিচার শুরু করে কর্নেল তাহেরসহ অনেকের বিরুদ্ধে। পিটার কাস্টার্সকেও গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হল। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা সাজানো হল তাঁর বিরুদ্ধে।

  কাটা বেঁছে কই মাছ খাওয়া আমাদের বাঙালিদের জন্যও সহজ কাজ নয়। এই ৬৬ বছর বয়সে কই মাছের দোপেয়াজা খেতে গিয়ে তা আবার মনে হলো। মন চলে গেল ৪১ বছর আগে, যখন আমার বয়সী পিটার কাস্টারসের সাথে পরিচয় হয়েছিল। ঢাকার একেবারে সাধারণ একটা রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খাব আমরা। পিটারই এখানে আমাকে নিয়ে এসেছেন। ভাত আর কই মাছের ঝোল তিনিই অর্ডার করেছেন। ‘কাটা বেঁছে আপনি খেতে পারবেন?’ পিটারের মুখ হাসিতে উজ্জ্বল হলো। ‘চিন্তা নাই, ভালই পারি।’ অবাক হয়ে লক্ষ্য করি কি নিপুণ হাতে কাটা বেঁছে পিটার বাঙালির ভাত-মাছ খেলেন গভীর পরিতৃপ্তি নিয়ে। ‘পেট ঠিক থাকবে তো?’ আবারো পিটারের মুখে হাসি। ‘বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে এত ঘুরেছি, কত রকমের খাবার খেয়েছি। এখন আর সমস্যা হয় না। আপনাদের একটা প্রবাদ আছে না, “শরীরের নাম মহাশয়, যাহা সহাও তাহাই সয়।” আমারও সয়ে গেছে। কই মাছ আমার খুব প্রিয়।’ সমবয়সী আমরা বন্ধুর মতই ছিলাম। তারপরও আমাকে আপনি বলতেন পিটার। যতদূর মনে আছে, সবাইকে আপনি বলতেন। গায়ে সুতির পাজাম-পাঞ্জাবি পায়ে সাধারণ চপ্পল। এমন পোশাকেই দেখা যেত পিটারকে। ফর্সা পা মশার কামড়ে লাল হয়ে আছে। ‘ঘরে মশারি টানান না?’ ‘দেখুন গ্রামের গরিব মানুষের মশারি কিনবার সামর্থ্য নেই। আর আপনাদের দেশে মশার কামড়ে এখন আর ম্যালেরিয়া হয় না। তাই মশারি ব্যবহার করি না।’ পিটারের কথা শুনে স্তম্ভিত হই। বর্ষার পানিতে ভিজে ভিজে তাঁর খোলা পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে ঘা হয়েছে। পিটার দেখেছেন ক্ষেতে-খামারে কাঁদা মাটিতে কাজ করা গ্রামের গরিবদের পায়ে এমন ঘা। ‘সস্তা কোন ওষুধ নেই এই ঘা সারাতে?’ পিটারের এ প্রশ্নের উত্তরে জানাই পটাশিয়াম পারমাঙ্গানেট গুলিয়ে লাগালে সারতে পারে। তুত ডলে দিলেও কাজ হয়। তবে তা তো সব সময় পাওয়া যায় না। দিনকয় পরে তাঁর সাথে দেখা। ফর্সা পা রঙিন হয়ে আছে। উজ্জ্বল হাঁসি পিটারের মুখে। ‘দারুণ কাজে লেগেছে আপনার পরামর্শ। পারমাঙ্গানেটের রং লেগে থাকলেও ঘা ভাল হয়ে গেছে। ঠিক করেছি, এবার গ্রামে যাবার সময় পটাশিয়াম পারমাঙ্গানেট কিনে নিয়ে যাব। গরীবদের খুব কাজে লাগবে।’ গত ৩রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ তারিখে নিজ দেশ হল্যান্ডের লেইডেনে তার বাড়িতে পিটার কাস্টারস ইহধাম ত্যাগ করেছেন। তারপর থেকে কতবার বসেছি তাঁর উপর কিছু লিখবো বলে।…

একসময় দৈনিক আজকের কাগজভোরের কাগজ-এর সাময়িকী সংগ্রহ করতাম, কিন্তু অধুনালুপ্ত দৈনিক মুক্তকণ্ঠ-র আট পৃষ্ঠার বর্ণিল সাময়িকী ‘খোলা জানালা’ দেখার পর অন্যসব সাময়িকী নিষ্প্রভ ও গৌণ হয়ে গেল হঠাৎ। আমাদের লেখালেখির মালশায় আগুন উসকে দিয়েছিল ‘খোলা জানালা’, আমরা তর্ক করতাম ‘খোলা জানালা’-র লেখা ও প্রচ্ছদ নিয়ে, প্রতি শুক্রবার ছিল আমাদের কাছে নবান্নের মতো। [...]

একসময় দৈনিক আজকের কাগজ ও ভোরের কাগজ-এর সাময়িকী সংগ্রহ করতাম, কিন্তু অধুনালুপ্ত দৈনিক মুক্তকণ্ঠ-র আট পৃষ্ঠার বর্ণিল সাময়িকী ‘খোলা জানালা’ দেখার পর অন্যসব সাময়িকী নিষ্প্রভ ও গৌণ হয়ে গেল হঠাৎ। আমাদের লেখালেখির মালশায় আগুন উসকে দিয়েছিল ‘খোলা জানালা’; আমরা তর্ক করতাম ‘খোলা জানালা’-র লেখা ও প্রচ্ছদ নিয়ে, প্রতি শুক্রবার ছিল আমাদের কাছে নবান্নের মতো। হকারকে অগ্রিম টাকা ও বখশিস দিয়ে রাখতাম, তবু কারা যেন আগেভাগে এসে ছিনিয়ে নিয়ে যেত দুয়েকটি সংখ্যা মাঝেমধ্যে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায়, মনে আছে, একবার ‘খোলা জানালা’ না পেয়ে ভরদুপুরে না খেয়েই হেঁটে হেঁটে চলে গিয়েছিলাম হাটহাজারি বাসস্টপে এবং আশ্চর্য, সেদিনের সংখ্যার নামই ছিল ‘দূরপাল্লার পদাবলী’ (সংখ্যা ৫০, ২ অক্টোবর ১৯৯৮)―শামসুর রাহমান, সিকদার আমিনুল হক, আবু হাসান শাহরিয়ার, আওলাদ হোসেন, নুরুন্নাহার শিরীন ও টোকন ঠাকুরের দীর্ঘ কবিতাভাসান ছিল সেদিন। দুঃখ এই যে, আমার সংগৃহীত সাময়িকীর স্তূপ থেকে নিভৃতে বেছে বেছে ‘খোলা জানালা’তেই শুধু দাঁত বসিয়েছে সাহিত্যপ্রাণ ইঁদুরেরা! ছোটকাগজ-বড়কাগজের চারিত্র্য, সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে একটি সংখ্যা সাজিয়েছিল ‘খোলা জানালা’, ‘অভিবাদন ছোটকাগজ’ (সংখ্যা ৪৮, ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮) শিরোনামে; শহীদুল ইসলামের মূল প্রচ্ছদরচনার পাশাপাশি ‘দৃশ্য ও দৃশ্যান্তরের গল্প’ প্রবন্ধে আবু হাসান শাহরিয়ার উনিশটি মূল্যবান খণ্ডচিত্র তুলে ধরেছিলেন, সমকালীন সাহিত্যচর্চার প্রসঙ্গে যেগুলো বেশ তাৎপর্যময় : ০২. বেশিরভাগ বড়কাগজের সাহিত্য সাময়িকীই তকমাধারী মুষ্টিমেয় লেখকের উপনিবেশে রূপান্তরিত হয়েছে। ঐসব সাময়িকীতে তকমাধারীদের জন্য শতকরা আশিভাগ স্থান বরাদ্দ থাকে। বাকি মাত্র কুড়িভাগ স্থান নতুন বা নিভৃতচারী লেখকদের জন্য। ১৫. দশকচর্চার প্রতি অপ্রতিভাবানদের বিশেষ প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। দশকের ঝাঁপিতে-ঝাঁপিতে ঢোঁড়া সাপের আস্ফালন থেকে নতুন প্রজন্মও বেরিয়ে আসতে পারছে না। ১৯. হাতুড়ে পরামর্শকদের মহাজনী ও মোড়লিপনায় দিগ্‌ভ্রান্ত হচ্ছেন অনেক নতুন লেখক। [কথায় কথায় এরা দেরিদা ফুকো কপচালেও প্রত্নবাঙলার হুঁকোর সঙ্গে পরিচিত নন।] ‘প্রত্নবাঙলার হুঁকো’ কথাটিই যেন ‘খোলা জানালা’র অদৃশ্য প্রতীক; আবু হাসান শাহরিয়ার নিজেই তখন লিখছেন ‘মাটিবর্তী’ নামের কবিতা, পড়তে পড়তে আমাদের মনে হয়েছে, তিরিশি আধুনিক কবিদের বিরুদ্ধে সাধারণভাবে যে-ইউরোপলগ্নতার অভিযোগ তোলা হয়ে থাকে, ‘খোলা জানালা’ বোধহয় সে-অভিযোগ স্খালনেরই চেষ্টা করে যাচ্ছে আন্তরিক সচেতনতায়। না হলে ময়মনসিংহের জলমগ্ন জনপদে নৌকাভ্রমণের মনোজ্ঞ ছবি আঁকতেন না টোকন ঠাকুর ‘দূরের বসতি প্রাণের বাসিন্দা’ শিরোনামে (সংখ্যা ৪৯, ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮)। ভাববাচ্যপ্রধান…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.