অনেক বছর আগে রঞ্জন বাগচীর লেখা ‘গ্যাংগ্রীন’ নামের একটি অসামান্য গল্প পড়েছিলাম দেশ পত্রিকায় (বর্ষ ৫৭, সংখ্যা ২৮, ১২ মে ১৯৯০)। গল্পে বর্ণিত নাগকেশর সম্পর্কিত তথ্যগত ভুল ধরিয়ে দিয়ে চিঠি লিখেছিলেন বেলুড় মঠ থেকে ভিক্ষু বুদ্ধদেব, গল্পের প্রশংসা করেই তিনি লিখেছিলেন :
‘নাগকেশর’ বলে যে গাছটিকে বলা হয়েছে তার বাংলা স্ট্যান্ডার্ড নাম ‘নাগলিঙ্গম’ (Couroupita guianensis)। বহু গাছের স্ট্যান্ডার্ড বাংলা নাম না থাকলেও ‘নাগকেশর’ও (Mesua ferrea) একটি স্ট্যান্ডার্ড নাম।
ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রকাশিত দেশ-এর বিশেষ সংখ্যায় (বর্ষ ৫৭, সংখ্যা ৩৯, ২৮ জুলাই ১৯৯০) ছাপা হয়েছিল ভিক্ষু বুদ্ধদেবের এই চিঠি, যিনি আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত ফুল ফোটানোর সহজ পাঠ বইয়েরও লেখক। নাগকেশরের যে-বৈজ্ঞানিক নাম তিনি লিখেছেন, তা অবশ্য নাগকেশরের নয়, নাগেশ্বরের―নাগকেশর, নাগেশ্বর ও নাগলিঙ্গম তিনটি ভিন্ন প্রজাতির ফুলগাছ। রঞ্জন বাগচীর গল্পে নাগকেশরের কী বিবরণ ছিল সে-কথায় পরে আসছি, আগে বলে নিই, বৈজ্ঞানিক নাম নিয়ে বিতর্ক থাকলেও বা নাগলিঙ্গম নামটি মেনে নিলেও গল্পরসে কোনও ঘাটতি দেখি না। গল্পটি দাঁড়িয়ে আছে মানবিক ভালোবাসার উর্বর মাটিতে।
মৌড়ীগ্রামের এক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী কালো পরিদা। সারাদিনে প্রচুর অবসর আর অবসরটুকু সে ভরিয়ে তোলে বাগানের পরিচর্যায়। গাছগুলো তার সন্তানের মতো। পায়ের আঙুলের কড়া কাটতে গিয়ে ঘা বাধিয়ে বসে কালো, সে ঘা আর শুকোয় না। রক্তপরীক্ষায় ধরা পড়ে ডায়াবেটিস। বড় ডাক্তার দেখেশুনে জানান যে গ্যাংগ্রিন হয়ে গেছে, কেটে ফেলতে হবে পা। ডায়াবেটিসের কারণে অস্ত্রোপচারও অসম্ভব। শুশ্রূষার লোক নেই বলে কলকাতার হাসপাতালে কালোকে না রেখে তার গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সঙ্গে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গল্পকথক মহিম। যাত্রাপথে কালোর পায়ের ব্যান্ডেজ বদলানো, ওষুধ খাওয়ানো, ইনসুলিন দেওয়া সবই আন্তরিকভাবে করে মহিম। অনেক দূরের পথ―লোকাল বাসে খড়্গপুর স্টেশন, সেখান থেকে নিজামুদ্দিন উৎকল এক্সপ্রেস ট্রেনের বার্থে শুয়ে শুয়ে কটক, কটকে নেমে আবার বাসে জগৎসিংপুর যেতে লাগবে ঘণ্টাখানেক, তারপর রিকশায় আর পায়ে হেঁটে হরিদাসাই গ্রামে কালোর বাড়ি। গ্রামে কালোর মেয়ে সারদাকে দেখা যাবে, যদিও মহিম আত্মীয়স্বজনের কথা জানতে চাইলে হাহা করে হেসে উঠেছিল কালো :
অনেক কি বলছ মাষ্টার। হরিদাসাই গ্রামটাই তো আমাদের আত্মীয়স্বজনে ভর্তি। ওখানে পরিদা আছে, প্রধান আছে, সোয়াই আছে। সবাই কায়স্থ। সকলে মিলেই একটা বড় সংসার বলতে পার। আমি যখন ছোট, বাপ কাজ করত কটকে। আমি তো অর্জুন খুড়ার কোলে কাঁধেই মানুষ হয়েছি। অর্জুন সোয়াই। তা সে কি আমার নিজের খুড়া নয়? আমাদের হরিদাসাই গ্রামে আমার, তোমার এইসব পাবে না। কোন ভাগাভাগি নেই।
বাসে মহিমের সঙ্গে তার কালোদা-র এই কথাবার্তা শুনে মনে পড়বে দেশে-বিদেশের আবদুর রহমানের গ্রামমুগ্ধতার ছবি; কাবুলপ্রবাসে সৈয়দ মুজতবা আলীর ঘরের কাজকর্ম সামলাত আবদুর রহমান, উত্তর আফগানিস্তানের পানশির গ্রামে তার বাড়ি যেখানে শীতকালে চলে বরফেরই রাজত্ব। আবদুর রহমানের ভাষায় :
সে কত রকমের বরফ পড়ে। কখনো সোজা ছেঁড়া ছেঁড়া পেজা তুলার মতো, তারি ফাঁকে ফাঁকে আস্মান-জমিন কিছু কিছু দেখা যায়। কখনো ঘোরঘুট্ট ঘন―চাদরের মতো নেমে এসে চোখের সামনে পর্দা টেনে দেয়! কখনো বয় জোর বাতাস―প্রচণ্ড ঝড়। বরফের গুড়ো ডাইনে, বাঁয়ে, উপর-নীচে এলোপাতাড়ি ছুটোছুটি লাগায়―হু-হু করে কখনো একমুখো হয়ে তাজী ঘোড়া হার মানিয়ে ছুটে চলে, তারপর সব ঘুটঘুটে অন্ধকার, শুধু শুনতে পাবেন সোঁ―ওঁ-ওঁ―তার সঙ্গে আবার মাঝে মাঝে যেন দারুল-আমানের ইঞ্জিনের সিটির শব্দ। সেই ঝড়ে ধরা পড়লে রক্ষে নেই, কোথা থেকে কোথায় উড়িয়ে নিয়ে যাবে, না হয় বেহুঁশ হয়ে পড়ে যাবেন বরফের বিছানায়, তারি উপর জমে উঠবে ছ’হাত উঁচু বরফের জঙ্গল―গাদা, গাদা, পাঁজা পাঁজা।
বরফের বিবরণ বেশ দীর্ঘ, কিন্তু লেখক পানশিরের প্রতি আগ্রহ জানিয়েও যখন বললেন যে কাবুলের চেয়ে পানশির তেমন ভালো জায়গা তাঁর মনে হচ্ছে না, তখন ‘আবদুর রহমান গান্ধার-শিল্পের বুদ্ধ-মূর্তির মতো চোখে অসীম তিতিক্ষা নিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপর তার পাষাণময় বিরাট দেহগুহার অভ্যন্তর থেকে বেরিয়ে এল ‘ইন্হাস্ত ওয়াতানাম―এইত আমার জন্মভূমি।’
আবদুর রহমানের প্রসঙ্গে মনে পড়বে রবীন্দ্রনাথের ডাকঘর নাটকের অমলের কথাও। অমলের ডাকে এসে যে-দইওয়ালা ‘আমার বেলা বইয়ে দাও কেন’ বলে বিরক্তি প্রকাশ করে প্রথমে, সে-দইওয়ালাই পরে অমলের কথায় অভিভূত হয়ে একভাঁড় দই দিতে চেয়েছিল বিনাপয়সায়। কী বলেছিল অমল? ‘সেই পাঁচমুড়া পাহাড়ের তলায়’ ‘শামলী নদীর ধারে’-র একটি গোয়ালপাড়ার স্বপ্নাচ্ছন্ন বিবরণই কি নয় যা পথের ক্লান্তি ভুলিয়ে দিয়েছিল দইওয়ালার?
না, না, আমি কক্খনো পণ্ডিত হব না। আমি তোমাদের রাঙা রাস্তার ধারে তোমাদের বুড়ো বটের তলায় গোয়ালপাড়া থেকে দই নিয়ে এসে দূরে দূরে গ্রামে গ্রামে বেচে বেচে বেড়াব। কী রকম করে তুমি বল, দই, দই, দই―ভালো দই! আমাকে সুরটা শিখিয়ে দাও।
হরিদাসাই গ্রামের পথে একটি ছাতিমগাছকে ভক্তিভরে প্রণাম করে কালো, এই তার ‘অর্জুন খুড়া’ যার কোলেকাঁধে সে মানুষ হয়েছে। অর্জুন খুড়ার নিজের হাতে লাগানো গাছ। এরপর তার ‘ঠাকুর্দা’কেও চিনিয়ে দেয় কালো―একটি মহানিমগাছ। যথারীতি প্রণাম করে গাছের গায়ে হাত বুলিয়ে কালো বলছে :
কি ঠাকুর্দা কেমন আছ? আমার পায়ে কেমন ঘা হয়েছে দেখেছ? কি বলছ? তোমার পাতা দুচারটে সেদ্ধ করে সেই জল দিয়ে ধোব বলছ? বেশ তাই করব।
কালোর এই ঘোরগ্রস্ত উচ্চারণকে অস্বাভাবিক মনে হয় না মহিমের, বরং মানুষ হয়তো এভাবেই বেঁচে থাকে উত্তরপুরুষের শিরা-উপশিরায়―এ-কথাই ভাবছিল সে। তাই একটি কাঞ্চনগাছকে ‘মা’ বলে যখন কালো প্রণাম করে ছলছল-করা চোখে, কোঁচার খুঁটে সযত্নে বেঁধে নেয় পুজোর জন্য কয়েকটি কাঞ্চনফুল, তখনও তার ভঙ্গিতে কোনও নাটকীয়তা দেখে না মহিম। আবদুস সাত্তারের আরণ্য জনপদে (আদিল ব্রাদার্স এ্যাণ্ড কোঃ, ঢাকা, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৯৭৫) বইয়ে পড়েছি, ম্রোদের একেকটি গোত্র গাছের নামে পরিচিত, একই গোত্রের সবাই আদিপিতা ও আদিমাতারূপী সেই গাছগাছড়ারই বংশধর। যেমন নৈজার (কাঁঠাল) গোত্রের লোকদের ধারণা :
পুরাকালে গহীন অরণ্যে এক কাঁঠাল গাছ ছিল। সেই গাছে এক আশ্চর্য সুন্দর কাঁঠাল ধরলো। একদিন সেই কাঁঠাল পেকে গেলে হঠাৎ তার মধ্যে থেকে বেরিয়ে এলো এক রূপসী কন্যা। অনরূপ ডেংগোয়া (কলাগাছ) থেকে পুরাকালে হয়তো বেরিয়ে এসেছিল এক সুন্দর পুরুষ। তাদের সন্তানেরাই আজ এইসব গোষ্ঠীর বংশধর।
কিন্তু কালোর বৃক্ষপ্রীতি তেমন কোনও লোকবিশ্বাসেরও ফল নয়।
তবে বহুদিন পরে গ্রামের পথে এসে হাঁটতে গিয়ে গ্রামের মানুষের রদবদলও যে চোখে পড়ে না কালোর, তা নয়। গ্রামে জনতা, কংগ্রেস, সিপিএম ঢুকে পড়েছে, চলছে ‘ভাগাভাগি’রই খেলা এখন। তাই শিশুরাও দৌড়ে আসে না বেলুন বা চকোলেট লোফালুফি করে নিতে। বড় ধাক্কাটা খায় কালো নিজের বাড়ি এসে। যে-গাছটির মধ্যে সে বেঁচে থাকবে ভেবেছিল, সেই নাগকেশরগাছটি আর নেই! বাড়ির সীমানায় পড়েছিল বলে বিজয় কাকা কেটে ফেলেছে গতবছর। শুনে ‘কাটা নাগকেশর গাছের মতই মাটিতে লুটিয়ে পড়ল’ কালো, কেঁদে কেঁদে বলল :
ওহ্ হো হো… মাষ্টার তোমরা আমার পা কেটে বাদ দিতে চেয়েছিলে। এরা যে আমার গলাটাই কেটে বাদ দিল। আমি বাঁচবো কি করে? বল মাষ্টার আমি বেঁচে থাকব কেমন করে?
কেমন ছিল কালোর প্রতিবিম্ব সেই নাগকেশর কিংবা নাগলিঙ্গম? কালো বলেছিল :
ভারী অদ্ভুত গাছ। বিশাল গাছের ফুলদল সব হয় একেবারে গোড়াতে। ফুলগুলো সত্যি যেন ফণাতোলা নাগ। তবে ফলগুলো বিশাল বিশাল বেলের মত দেখতে হলেও ভাঙলে বিশ্রী দুর্গন্ধ। এই আমার পচা পায়ের মত। হা হা হা। গাছটা বিরাট হয়েছে। আমাদের কুয়োতলায়। জল আনতে গেলেও ওই গাছটার দিকে তাকিয়ে আমার আত্মীয়স্বজন, হরিদাসাইয়ের লোকজন আমাকে চিনতে পারবে। মনে রাখবে।
নাগকেশরগাছের কথায় মনে পড়বে একটি শিমুলগাছের চারার কথাও। রবীন্দ্রনাথেরই ‘বলাই’ গল্পের মাতৃহীন শিশু বলাইকেও আমরা কথা বলতে দেখি গাছপালার ‘সদ্য-গজিয়ে-ওঠা কচি কচি পাতা’র সঙ্গে। ঘাসিয়াড়া যেদিন ঘাস কাটতে আসে সেদিন বলাইয়ের পক্ষে ‘সবচেয়ে বিপদের দিন’, কারণ ‘নিষ্ঠুর নিড়ানি’তে নিহত হয় কণ্টিকারি-সহ অসংখ্য আগাছা যারা ‘বাগানের শৌখিন গাছ নয়, তাদের নালিশ শোনবার কেউ নেই’। পথের মাঝখানে শিমুলগাছটি দাঁড়িয়ে ছিল, তার জন্য বলাইয়ের অপার আকুতি। কাকার সংসার থেকে বলাইকে তার বাবা হঠাৎ নিয়ে গেলেন শিমলায়, ‘লক্ষ্মীছাড়া শিমুল গাছটি’র বাড়বাড়ন্ত ‘অসঙ্গত’ হয়ে ওঠায় একদিন কেটে দিলেন বলাইয়ের কাকা। এদিকে গাছটির ছবি পাঠানোর জন্য চিঠি লিখে বসে আছে বলাই। তার কাকি সব শুনে শোকস্তব্ধ হয়ে গেলেন, কারণ শিমুলগাছটিই ছিল তাঁর নিঃসন্তান সংসারে ‘বলাইয়ের প্রতিরূপ, তারই প্রাণের দোসর’।
২
উদ্ভিদের ভাষা বুঝতেন মহর্ষি কণ্ব, ক্রেস্কোগ্রাফ ছাড়াই। পতিগৃহে যাওয়ার সময় হয়ে এল শকুন্তলার; অনসূয়া ও প্রিয়ংবদা, শকুন্তলার দুই প্রিয় সখি, বিরহব্যথাতুর হয়েও সাজিয়ে দিচ্ছে শকুন্তলাকে―এই শোকাকুল বিদায়মুহূর্তেও কণ্ব চাইলেন তপোবনের তরুরাজির অনুমোদন :
হে সন্নিহিত তরুগণ! যিনি, তোমাদের জলসেচন না করিয়া কদাচ জল পান করিতেন না; যিনি, ভূষণ-প্রিয়া হইয়াও, স্নেহবশতঃ কদাচ তোমাদের পল্লব ভঙ্গ করিতেন না; তোমাদের কুসুম প্রসবের সময় উপস্থিত হইলে যাঁহার আনন্দের সীমা থাকিত না; অদ্য সেই শকুন্তলা পতিগৃহে যাইতেছেন, তোমরা সকলে অনুমোদন কর।
পরবর্তী দৃশ্যটিও স্মরণ করা যাক ঈশ্বরচন্দ্রের শকুন্তলা থেকে :
কতিপয় পদ গমন করিয়া শকুন্তলার গতিভঙ্গ হইল। শকুন্তলা, আমার অঞ্চল ধরিয়া কে টানিতেছে, এই বলিয়া মুখ ফিরাইলেন। কণ্ব কহিলেন, বৎসে! যাহার মাতৃবিয়োগ হইলে তুমি জননীর ন্যায় প্রতিপালন করিয়াছিলে; যাহার আহারের নিমিত্ত তুমি সর্ব্বদা শ্যামাক আহরণ করিতে; যাহার মুখ কুশের অগ্রভাগ দ্বারা ক্ষত হইলে তুমি ইঙ্গুদি তৈল দিয়া ব্রণশোধন করিয়া দিতে; সেই মাতৃহীন শিশু তোমার গতিরোধ করিতেছে।
আর শকুন্তলা? ঋষি বিশ্বামিত্রের ঔরসে ও অপ্সরা মেনকার গর্ভে জন্ম হয়েছিল যে-মেয়েটির, যাকে ছেড়ে চলে যান বিশ্বামিত্র এবং পরে মেনকাও, বনের ধারে পরিত্যক্ত সেই শিশুকে পাখনার ওমে ঢেকে রেখেছিল এক শকুন্তপাখি। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘আদরিণী’, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘মহেশ’, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কালাপাহাড়’, মাহবুব-উল আলমের ‘কোরবাণী’, এমনকী আন্তন চেখভের ‘কাশতানকা’―অবিস্মরণীয় সব গল্প এক অর্থে মনে হয় শকুন্তলারই উপাখ্যান। ‘জাতে দো-আঁশলা’ ছোট বাদামি কুকুর কাশতানকা থাকত তার মনিব মদ্যপায়ী ছুতোর লুকা আলেক্সান্দ্রিচের ঘরে, মনিবের ছেলে ফেদ্যুশকা ছিল তার খেলার সঙ্গী। টেবিলের নীচে কাঠের আঁশগুঁড়োর উপর শুয়ে থাকত কাশতানকা, ফেদ্যুশকা খেলাচ্ছলে অতিষ্ঠ করে তুলত তাকে। একদিন পথ হারিয়ে ফেলে কাশতানকা, নানা বিচিত্র কাণ্ডকারখানার পর ঠাঁই পায় সার্কাসদলের প্রশিক্ষকের কাছে। সেখানে খাবারের অভাব নেই, মারধর নেই, কিন্তু যেদিন তার পুরোনো মনিব ও মনিবের দুষ্টু ছেলেটির সঙ্গে পুনর্মিলন ঘটে কাশতানকার, সেদিন তার আনন্দের কাছে স্বর্গও বড় নিষ্প্রভ হয়ে যায়। সার্কাসের ছেলে ও অন্যান্য গল্প (অনুবাদ ও সম্পাদনা : অরুণ সোম, রাদুগা, মস্কো, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৯৮৩) বইয়ের ভূমিকায় ইগর মতিয়াশোভ বলেন, ‘কাশ্তান্কার প্রত্যাবর্তন হল সেই ভালোবাসারই জয়, যে ভালোবাসা পেটভরা খাবার দিয়ে কেনা যায় না, দরদী কথা দিয়েও নয়।’ এগারোটি গল্পের এই অনবদ্য সংকলনকে তাই ‘ভালোবাসার লিখন’ বলেই অভিহিত করতে চান ইগর মতিয়াশোভ।
৩০ ভাদ্র ১৪২৩
মুয়িন পারভেজ
জন্ম চট্টগ্রামে। লিখে সময় কাটি, পড়ে জোড়া লাগিয়ে দিই আবার। ভালোবাসি মেঘবৃষ্টিজ্যোৎস্না আর ঝরনাকলম। প্রকাশিত কাব্য : ‘মর্গে ও নিসর্গে’ (ঐতিহ্য, ২০১১)।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৫ comments
Shila Brishty - ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ (৪:০১ অপরাহ্ণ)
কাশ্মির থেকে কন্যাকুমারী অর্থাৎ প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্য সাহিত্যের যে তুলনামূলক আলোচনা হয়েছে “গ্যাংগ্রিন” গল্পটিকে অবলম্বন করে সেটার প্রকাশভঙ্গী অনন্য। প্রথম দিকের বৈজ্ঞানিক কচকচানিতে অবশ্য ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম এই ভেবে যে এটা বুঝি বাস্তবের নাগকেশর গাছের আদি অন্ত খোঁজার গবেষণা প্রবন্ধ বিশেষ। 😉
মুয়িন পারভেজ - ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ (১০:৫৯ অপরাহ্ণ)
অনেক ধন্যবাদ, শীলা। সাহিত্যের তুলনামূলক আলোচনা করার যোগ্যতা আমার নেই, ‘গ্যাংগ্রীন’ গল্পটির সূত্রে কেবল অবিনাশী ভালোবাসার কথাই স্মরণ করতে চেয়েছি। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটি বিরক্তিকর বা অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে কিংবা আরও কোনও-কোনও উদ্ধৃতি। বয়েস হলো, কিন্তু কলম এখনও বাগে আনা গেল না!
Nurul Mamun - ১৬ অক্টোবর ২০১৬ (১১:০৮ পূর্বাহ্ণ)
সাহিত্য রসে টইটুম্বুর অনেক চমৎকার এক তথ্যবহুল আলোচনা পেলাম। ধন্যবাদ মুয়িন পারভেজ কে। এমন উপভোগ্য গল্প আরো আশা করছি।
ASM Firoz - ১৪ নভেম্বর ২০১৬ (৪:৫৮ অপরাহ্ণ)
‘বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটি’ কেন লেখাটির একটি বাক্য বা একটি শব্দও অপ্রাসঙ্গিক নয়। বরং যা লেখা হয়েছে এমন শিল্প মণ্ডিত লেখা, এমন অকারণ আনন্দের ‘আনন্দ’ বড় একটা চোখে পড়েনা! কারণের আনন্দ ছোট, তার সীমা আছে, আর তাই সীমা লঙ্ঘনের রক্ত চক্ষু আছে। কিন্তু অকারণ আনন্দ বড়, তার কোন সীমা নেই, অসীম আকাশই কেবল হতে পারে তার সীমা। তত্ত্ব বা তথ্য কেবল জানলেই হয় না, শিল্পিত ভঙ্গিমায় তা পরিবেশন করাটাই মূল বিষয়। আবারও বলছি লেখাটির শিল্প প্রসাদ হৃদয় ছুঁয়ে যায়। আচ্ছা আদুরিনী নামে একটা হাতির গল্প আছে না প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়ের, যার পরিণতির কথা এই কাহিনীর সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হতে পারত!
মুয়িন পারভেজ - ২৩ নভেম্বর ২০১৬ (১১:০৮ অপরাহ্ণ)
অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। হ্যাঁ, প্রভাতকুমারের ‘আদরিণী’ গল্পের নামোল্লেখই আছে শুধু, সবিস্তার হয়তো অন্য কোথাও বলা যেতে পারে।