একসময় দৈনিক আজকের কাগজ ও ভোরের কাগজ-এর সাময়িকী সংগ্রহ করতাম, কিন্তু অধুনালুপ্ত দৈনিক মুক্তকণ্ঠ-র আট পৃষ্ঠার বর্ণিল সাময়িকী ‘খোলা জানালা’ দেখার পর অন্যসব সাময়িকী নিষ্প্রভ ও গৌণ হয়ে গেল হঠাৎ। আমাদের লেখালেখির মালশায় আগুন উসকে দিয়েছিল ‘খোলা জানালা’; আমরা তর্ক করতাম ‘খোলা জানালা’-র লেখা ও প্রচ্ছদ নিয়ে, প্রতি শুক্রবার ছিল আমাদের কাছে নবান্নের মতো। হকারকে অগ্রিম টাকা ও বখশিস দিয়ে রাখতাম, তবু কারা যেন আগেভাগে এসে ছিনিয়ে নিয়ে যেত দুয়েকটি সংখ্যা মাঝেমধ্যে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায়, মনে আছে, একবার ‘খোলা জানালা’ না পেয়ে ভরদুপুরে না খেয়েই হেঁটে হেঁটে চলে গিয়েছিলাম হাটহাজারি বাসস্টপে এবং আশ্চর্য, সেদিনের সংখ্যার নামই ছিল ‘দূরপাল্লার পদাবলী’ (সংখ্যা ৫০, ২ অক্টোবর ১৯৯৮)―শামসুর রাহমান, সিকদার আমিনুল হক, আবু হাসান শাহরিয়ার, আওলাদ হোসেন, নুরুন্নাহার শিরীন ও টোকন ঠাকুরের দীর্ঘ কবিতাভাসান ছিল সেদিন। দুঃখ এই যে, আমার সংগৃহীত সাময়িকীর স্তূপ থেকে নিভৃতে বেছে বেছে ‘খোলা জানালা’তেই শুধু দাঁত বসিয়েছে সাহিত্যপ্রাণ ইঁদুরেরা!
ছোটকাগজ-বড়কাগজের চারিত্র্য, সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে একটি সংখ্যা সাজিয়েছিল ‘খোলা জানালা’, ‘অভিবাদন ছোটকাগজ’ (সংখ্যা ৪৮, ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮) শিরোনামে; শহীদুল ইসলামের মূল প্রচ্ছদরচনার পাশাপাশি ‘দৃশ্য ও দৃশ্যান্তরের গল্প’ প্রবন্ধে আবু হাসান শাহরিয়ার উনিশটি মূল্যবান খণ্ডচিত্র তুলে ধরেছিলেন, সমকালীন সাহিত্যচর্চার প্রসঙ্গে যেগুলো বেশ তাৎপর্যময় :
০২. বেশিরভাগ বড়কাগজের সাহিত্য সাময়িকীই তকমাধারী মুষ্টিমেয় লেখকের উপনিবেশে রূপান্তরিত হয়েছে। ঐসব সাময়িকীতে তকমাধারীদের জন্য শতকরা আশিভাগ স্থান বরাদ্দ থাকে। বাকি মাত্র কুড়িভাগ স্থান নতুন বা নিভৃতচারী লেখকদের জন্য।
১৫. দশকচর্চার প্রতি অপ্রতিভাবানদের বিশেষ প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। দশকের ঝাঁপিতে-ঝাঁপিতে ঢোঁড়া সাপের আস্ফালন থেকে নতুন প্রজন্মও বেরিয়ে আসতে পারছে না।
১৯. হাতুড়ে পরামর্শকদের মহাজনী ও মোড়লিপনায় দিগ্ভ্রান্ত হচ্ছেন অনেক নতুন লেখক। [কথায় কথায় এরা দেরিদা ফুকো কপচালেও প্রত্নবাঙলার হুঁকোর সঙ্গে পরিচিত নন।]
‘প্রত্নবাঙলার হুঁকো’ কথাটিই যেন ‘খোলা জানালা’র অদৃশ্য প্রতীক; আবু হাসান শাহরিয়ার নিজেই তখন লিখছেন ‘মাটিবর্তী’ নামের কবিতা, পড়তে পড়তে আমাদের মনে হয়েছে, তিরিশি আধুনিক কবিদের বিরুদ্ধে সাধারণভাবে যে-ইউরোপলগ্নতার অভিযোগ তোলা হয়ে থাকে, ‘খোলা জানালা’ বোধহয় সে-অভিযোগ স্খালনেরই চেষ্টা করে যাচ্ছে আন্তরিক সচেতনতায়। না হলে ময়মনসিংহের জলমগ্ন জনপদে নৌকাভ্রমণের মনোজ্ঞ ছবি আঁকতেন না টোকন ঠাকুর ‘দূরের বসতি প্রাণের বাসিন্দা’ শিরোনামে (সংখ্যা ৪৯, ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮)। ভাববাচ্যপ্রধান সেই তন্ময় গদ্যালেখ্য কবিতারই সহোদর যেন। যদিও প্রথমত একটু মনখারাপই হয়েছিল এই ভেবে যে, বন্যাতাড়িত সময়ে নৌকাবিলাস বাড়াবাড়ি নয় কি? তবু এ-কথাও অস্বীকার করার উপায় ছিল না যে ইটপাথরের শহর ছেড়ে প্রত্নবাংলার পাড়ের খোঁজেই বেরিয়ে পড়তে চেয়েছে ‘খোলা জানালা’―কেবল সম্পাদনার টেবিলে নয়, হাতেকলমে মাঠেঘাটেও। আমার একটি নগণ্য চতুর্দশপদী ছাপা হওয়ার পর আরেকটি কবিতা পাঠাতেই একদিন গ্রামের ঠিকানায় পেলাম টোকন ঠাকুরের চিঠি (১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮); তিনি লিখেছিলেন :
‘খোলা জানালা’র কবিতা বিভাগটি আমি চেষ্টা করছি ঢাকার তথাকথার কবিদের বাইরে নিয়ে যেতে। আবার বাইরে বসে, প্রায় সবারই থাকে অপরিণত চর্চার প্রয়াস। যেহেতু জীবনের বেশির ভাগ সময় আমিও মফস্বলেই কাটিয়েছি, অতএব, পার্থক্যটা কিছু বুঝতে পারি বলেই মনে হয়।
‘খোলা জানালা’ ছিল দুই বাংলার নবীন-প্রবীণ লেখকশিল্পীদের মধুর ক্যান্টিন আর এই আড্ডাখানায় গল্পগুজবের রসদ জোগাত ‘খোলামত’ বিভাগ; শুধু পাঠকদের চিঠি নিয়েই যে ‘একপশলা খোলামত’ নামে প্রচ্ছদ-আয়োজন (সংখ্যা ৩৭, ৩ জুলাই ১৯৯৮) করা যায়, ‘খোলা জানালা’-র আগে এ-কথা হয়তো ভাবতে পারেনি কোনও সাময়িকী। আল মাহমুদের কবিতার অবমূল্যায়নের প্রসঙ্গে একটি আক্ষেপময় চিঠি লিখেছিল কবিবন্ধু মেরুন হরিয়াল, কবি-অধ্যাপক ময়ুখ চৌধুরী সেই চিঠির পাঠ-প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লিখেছিলেন :
০৩-০৪-৯৮ তারিখের ‘খোলা জানালা’য় মেরুন হরিয়ালের লেখা চিঠিটা পড়লাম। ঐ পত্র-লেখককে আমার অন্তরের ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা না জানিয়ে পারছি না। চিঠিটা কেবল সুলিখিত এবং সুন্দরই নয়, সৎমনোবৃত্তিসম্পন্নও বটে। পরিচ্ছন্ন মূল্যবোধ এবং উদারচিত্ততার যে দৃষ্টান্ত তিনি দেখিয়েছেন, এ-দেশের ভাড়াটে-সমালোচকদের তা থেকে অনেক কিছুই শেখার আছে। এখানকার অনেক সমালোচকেরই সাহিত্যিক মূল্যবোধ বলতে কিছুই নেই। অধিকাংশ সমালোচনা-কর্মই ব্যক্তিগত সর্ম্পকের দ্বারা প্রভাবিত এবং কখনও-কখনও দলীয় শর্ত ও স্বার্থের দ্বারা পরিচালিত।
[সংখ্যা ২৭, ১৭ এপ্রিল ১৯৯৮]
আমাদের প্রিয় শিক্ষক ও গবেষক চৌধুরী আহমদ ছফাও (১৯৩০-২০০৮) ছিলেন ‘খোলা জানালা’র নিয়মিত সংগ্রাহক; ‘খোলামত’-এর পাতায় তিনি একবার লিখেছিলেন :
আবেদীন কাদেরকে অশেষ ধন্যবাদ ‘এখনও বৃষ্টির দিনে মনে পড়ে তাকে’ শীর্ষক লেখাটির মাধ্যমে নাদিরা মজুমদারকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য। এমনি আর এক ব্যতিক্রম মহিলার কথা মনে পড়ে―নভেরা আহমেদ। হাসনাত আবদুল হাইর ‘নভেরা’ সম্পূর্ণ নয়। আরও বেশ কিছু জানার আছে। তার সময়কালীন ঘনিষ্ঠরা এখনও অনেকে জীবিত। তার সম্পর্কে আর নতুন কিছু কি লেখা যায় না? এ ব্যাপারে ‘খোলা জানালা’র কাছে অনুরোধ রইল।
[সংখ্যা ৫৮, ২৭ নভেম্বর ১৯৯৮]
স্যার বেঁচে থাকলে আজ দেখতে পেতেন নভেরা আহমেদের স্বল্পালোকিত জীবন ও শিল্পকর্ম নিয়ে সেই ঈপ্সিত উৎখননের কাজই দীর্ঘদিন ধরে সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছেন নির্মাণ-সম্পাদক ও শিল্পবোদ্ধা রেজাউল করিম সুমন (দ্রষ্টব্য : ১, ২, ৩)। নাদিরা মজুমদারের প্রসঙ্গে কবি রফিক আজাদের এক কৌতূহলোদ্দীপক বিজ্ঞাপনের কথা জানিয়েছিলেন আবেদীন কাদের। ‘ভাত দে হারামজাদা’ বলে যে-কবিকে একদা লিখতে হয়েছিল ‘এমনকি নেই যৌনক্ষুধা’, তিনিই না কি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন এই মর্মে যে, কবিকে যে-মেয়ে স্বেচ্ছায় চুম্বন উপহার দেবে তার জন্য তিনি লিখবেন একটি কবিতা! নিতান্ত কবিসুলভ কিংবা প্রতীকী বিজ্ঞাপন হলেও ষাটের দশকে সেই বিজ্ঞাপনের ‘চ্যালেঞ্জ’ নিয়েই সবাইকে অবাক করে দিয়েছিলেন দুঃসাহসী তরুণী নাদিরা।
একবার বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠল ‘খোলামত’-এর পাতা। দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত বিকাশ গায়েনের ‘হে মুগ্ধ গোপনতা’ কবিতাটি (বর্ষ ৫৬, সংখ্যা ৪১, ১২ আগস্ট ১৯৮৯) না কি গাউসুর রহমান যৎসামান্য পাল্টে নিয়ে নিজের নামেই চালিয়ে দিয়েছেন ময়মনসিংহ সাংবাদিক কল্যাণ সংস্থার বার্ষিক মুখপত্রে (মার্চ ১৯৯৭); দুটি কবিতা পাশাপাশি তুলে ধরেছিলেন ময়মনসিংহের পাঠক গনী আদম, একই সঙ্গে ছাপা হয়েছিল গাউসুর রহমানেরও দায়সারা চিঠি। পাঁকের ময়লা ঘাঁটা আমার উদ্দেশ্য নয়, কিন্তু না বলে পারছি না, বিবাদের সূত্রে বিকাশ গায়েনের যে-সজীব কবিতাটি সেদিন পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম, মনের কাদামাটিতে তা গেঁথে আছে চিরদিনের জন্য :
হে মুগ্ধ গোপনতা
বি কা শ গা য়ে নসাবান পেয়েছে আজ যুবতীকে স্নানঘরে, একা।
শাওয়ারে ঝরেছে বৃষ্টি, সিন্ধু হল মেঝে
সাবানের শুভ্রবাস খুলে
যুবতী খুলেছে তার নীল অন্তর্বাসকে কার লাবণ্য ছোঁবে কতখানি, খেলা
সাবান পেয়েছে আজ যুবতীর পিচ্ছিলতা, দেহ
যুবতী পেয়েছে প্রিয় যুবাটিকে ধবল সাবানে
হে মুগ্ধ গোপনতা―লোকে তার কতটুকু জানে![সংখ্যা ৫১, ৯ অক্টোবর ১৯৯৮]
‘খোলা জানালা’য় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়, শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়, স্বপ্নময় চক্রবর্তী, অর্ধেন্দু চক্রবর্তী, মঞ্জুষ দাশগুপ্ত, কিন্নর রায় প্রমুখের লেখা পড়লেও শঙ্খ ঘোষের কোনও কবিতা বা প্রবন্ধ চোখে পড়েনি। ‘খোলামত’-এ শঙ্খ ঘোষ জানাচ্ছেন :
আমারও একটি লেখা চেয়েছেন, এবং সেইসঙ্গে ‘উপযুক্ত সম্মানী’র ভরসা দিয়েছেন। সম্মানীর প্রত্যাশায় কোনওদিন লিখিনি, দীর্ঘকাল ধরে প্রধানত লিটল ম্যাগাজিনেই আমার লেখা বের হয়, আর জানেনই তো তাদের টাকা দেবার কোনও সামর্থ্য থাকে না। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে আমার লেখার পরিমাণ এতই কম, এতই কম লিখতে পারি যে এখানকার দাবিও মেটাতে পারি না ঠিকমতো।
[সংখ্যা ৫২, ১৬ অক্টোবর ১৯৯৮]
অকালপ্রয়াত কবি নাসিমা সুলতানাকে (১৯৫৭-১৯৯৭) নিয়ে একটি সংবেদনশীল সংখ্যা প্রকাশ করেছিল ‘খোলা জানালা’; এছাড়া শওকত ওসমান, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় ও কায়েস আহমেদকে নিয়ে পরিকল্পিত সংখ্যা ‘এক ভুবনের তিন বাসিন্দা’, নাসির আলী মামুনের সচিত্র প্রচ্ছদরচনা ‘বিট সাম্রাজ্য’, ময়ুখ চৌধুরীর সুদীর্ঘ সরস প্রবন্ধ ‘কবিতা ও তার পাড়াপ্রতিবেশী’―এরকম আরও কিছু লেখা ‘খোলা জানালা’র স্মরণীয় উপহার। ‘খোলা জানালা’ ছিল সিলভিয়া প্লাথের মতো স্বল্পায়ু কিন্তু চিরনবীন প্রেমিকা। আবু হাসান শাহরিয়ার, টোকন ঠাকুর, শহীদুল ইসলাম―এই ‘থ্রি মাস্কেটিয়ার্স’-এর স্বপ্নিল অভিযান অচিরেই গঙ্গাপ্রাপ্তি মেনে নিয়েছিল, হয়তো-বা, শাহরিয়ারের মতে, বকেয়া লেখকসম্মানী নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অমীমাংসিত বচসার কারণে। এক ঘোর বর্ষার দুপুরে মেরুন হরিয়াল খাটের উপর মেলে রাখল আমার জন্য কিনে রাখা পলিথিনে-মোড়া ‘খোলা জানালা’; পাড়ার দোকানদারের সঙ্গে খাতির জমিয়ে সে নিয়ে এসেছিল ‘খোলা জানালা’রই কিছু দুমড়ানো পাতা; শস্তা ভাড়ার ঘরে ঢুকে পড়েছে বানের জল, অথচ আমরা ‘খোলা জানালা’র দিকে তাকিয়ে আছি সম্মোহিত ফড়িঙের মতো। হঠাৎ পত্রিকায় ‘একটি তিমিরবিনাশী সাপ্তাহিক’ খোলা জানালা-র অবিশ্বাস্য বিজ্ঞাপন দেখে উদ্দীপ্ত হলাম, এক বৃহস্পতিবারে (৩ জুন ১৯৯৯) প্রকাশিতও হলো স্বাধীন সেই সাপ্তাহিক, কিন্তু অনেক আশাজাগানিয়া কাগজটিও টিকে থাকতে পারল না বেশিদিন। আমরা, নবীন লিখিয়েরা, যেন ষোলো ডিসেম্বরের পর পনেরো আগস্টে নেমে গেলাম রাতারাতি―পত্রিকায় লেখা পাঠানোর উৎসাহই ফেললাম হারিয়ে। একদিন দৈনিক যুগান্তর-এর সাময়িকীতে দেখলাম শহীদুল ইসলামের আক্রমণাত্মক ও উষ্মাময় রচনা ‘‘একজন ‘ফকটের সর্দার’!’’ (২১ জুলাই ২০০০)। তিনি ৬ জুলাই ২০০০ তারিখে দৈনিক আজকের কাগজ-এর সাময়িকীতে প্রকাশিত আবু হাসান শাহরিয়ারের ‘চাঁদের বদলে আজ উঠেছেন চারু মজুমদার’ প্রবন্ধের পাঠ-প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শাহরিয়ারকে ‘ফকটের সর্দার’ অভিধা দিয়ে। পরে আজকের কাগজ-এর সাময়িকীতেই ছাপা হলো শাহরিয়ারের ‘‘ফ্রস্টের সিক্রেট ইন দ্য মিড্ল্ ফুকোর হিড্ন্ কনটেন্ট এবং গেরস্তের ‘ঠাকুরঘরে কে রে?’’’ (২৭ জুলাই ২০০০) শিরোনামে একাঘ্নী-প্রবন্ধ। তাঁর এই সহিষ্ণু প্রবন্ধকে বলা যায় অসাহিত্যিক সমালোচনার বিরুদ্ধে প্রজ্ঞাময় কবির লড়াই। কিন্তু ভাঙাবাঁশিতে সুর বেজে উঠল না আর; শুধু মনে হলো, বন্ধ জানালার মরচেপড়া কব্জার চেয়ে দিগন্তের নীলিমাই বেশি বাঙ্ময়। শঙ্খ ঘোষ বলেছিলেন, ‘এক দশকে সঙ্ঘ ভেঙে যায়’―‘খোলা জানালা’র ক্ষেত্রেও তা কী নির্মমভাবে ফলে গেছে!
৬ শ্রাবণ ১৪২২। ২১ জুলাই ২০১৫
মুয়িন পারভেজ
জন্ম চট্টগ্রামে। লিখে সময় কাটি, পড়ে জোড়া লাগিয়ে দিই আবার। ভালোবাসি মেঘবৃষ্টিজ্যোৎস্না আর ঝরনাকলম। প্রকাশিত কাব্য : ‘মর্গে ও নিসর্গে’ (ঐতিহ্য, ২০১১)।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৩ comments
আহমদ জসিম - ১৮ আগস্ট ২০১৫ (২:০৬ পূর্বাহ্ণ)
আমাদের সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী কবি মুয়িন পার্ভেজ-এর কবিতার সাথে আমার পরিচয় ঘটে এই খোলা জানালা দিয়েই। স্মৃতি যদি প্রতারণা্ না করে বলতে পারি তিনি তখন মুইনউদ্দিন নামে লিখতে। মজার ব্যাপার হলো তাঁর সাথে পরিচয়ের দীর্ঘদিন পরে জানতে পারি মুইনউদ্দিন আর মুয়িন পার্ভেজ আসলে একজনেই।
মুয়িন পারভেজ - ১৯ আগস্ট ২০১৫ (১২:৪৬ পূর্বাহ্ণ)
জসিম ভাই, ‘শক্তিশালী কবি’ অভিধাটি আমার প্রতি আপনার অশেষ ভালোবাসারই স্মারক, যদিও আমি এর যোগ্য নই কোনওভাবেই। ‘মুইনউদ্দিন’ নামে লিখিনি কখনও, ‘খোলা জানালা’য় লিখতাম ‘মুয়িন মুহামমাদ’ নামে। কিন্তু জেনে ভালো লাগল যে ‘খোলা জানালা’ই কাছাকাছি টেনে এনেছিল আমাদের। শুভকামনা রইল।
Shawkat - ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ (১২:১৮ পূর্বাহ্ণ)
মুক্তাঙ্গনে Ôখোলা জানালাÕ নিয়ে লেখা মুয়িন পারভেজের প্রতিটি শব্দ-চয়ন প্রতিটি বাক্য যেন আমারই। ৭০ ও ৮০-র দশকে ‘বিচিত্রা’ ৮০ ও ৯০ এর দশকে যাযাদিন, স্বদেশ, বিচিন্তা আর শিল্প-সাহিত্য ক্ষেত্রে ভোরের কাগজের শুক্রবারের সাময়িকী আমাদেরকে ঋদ্ধ করেছে। মুক্তকন্ঠের প্রকাশের সনটা আমার ঠিক মনে নেই।প্রকাশের পর থেকে প্রতিটি শুক্রবারের জন্য ছিল অধীর অপেক্ষা।আট পাতার এ সাহিত্য সাময়িকীর সংগে একমাত্র তুলনা হতে পারত তৎকালীন ভারতীয় পাক্ষিক দেশ’ এর। দেশ পত্রিকাও নিয়মিত পড়েছি ৮৫ থেকে ৯২ টানা ৭/৮ বছর; বিএনপি সরকার নিষিদ্ধ করা পর্যন্ত।বছর খানেক নিষিদ্ধ থাকার কারণে ধারাবাহিকতা নষ্ট হওয়ায় পরে সেভাবে আর পড়া হয়ে ওঠেনি।অন্যান্য পত্রিকার সংগে খোলাজানালার মৌল পার্থক্য ছিল এই যে এটা ছিল প্রতিষ্ঠান ও গোষ্ঠি বিরোধী। তবে কখনও কখনও একে মনে হয়েছে একরোখা, অতি মাত্রায় জেদী। তরুন সম্পাদক, সহসম্পাদক এবং কবি হিসেবে আবু হাসান শাহরিয়ার এবং টোকন ঠাকুরের ভক্ত ছিলাম। পত্রিকাটা বন্ধ হয়ে গেলে দুঃখ পেয়েছিলাম।‘৯৩ থেকে শতবর্ষের সমাপ্তি পর্যন্ত কর্মব্যপদেশে ঢাকায় ছিলাম।২০০১ থেকে পুনরায় স্বভূমি কুষ্টিয়ায়।নাসিমা সুলতানা ছিলেন কুষ্টিয়া কলেজে আমাদের ব্যাচমেট। ওঁর কাব্য অনুশীলনের খবর রাখতাম। উচ্চমাধ্যমিক ও সম্মান শ্রেনীতে পড়ার সময়েই সে স্থানীয়ভাবে কবি খ্যাতি পেয়ে যায়।সাইফুল্লাহ মোহাম্মদ দুলাল ও নাসিমার যৌথ কাব্য গ্রন্থখানি ঢাকায় থাকাকালীন সংগ্রহ করি।স্মৃতি আজকাল বড়ই প্রতারণা করে।আগামী ১০ মার্চ অবসরে যাব।‘খোলাজানালা’র কপিগুলো খুব সম্ভবতঃ মিথ্যে-ছাদে আছে।মফস্বলবাসী হওয়ার কারণে, উপযুক্ত বন্ধু না থাকার কারণে বা আরও নানা কারণে সেলিব্রিটিদের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে যেটুকু খবরের কাগজে আসে তার বাইরে কিছু জানিনা, উৎসুক- highbrow-ঢাকাবাসীরা যেভাবে জানে।কিন্তু প্রিয় ব্যক্তিত্বদের সম্বন্ধে কৌতুহল তো অত্যন্ত স্বাভাবিক।অনলাইনে ঘোরাঘুরি বছর তিনেক।টোকন ঠাকুর একটা ছবির কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন জানি। আবু হাসান শাহরিয়ার এখন কী করছেন কেউ জানাতে পারেন কি? নিছক কৌতুহল। আরেকটি কথা, বিচিত্রা বিচিন্তা যায়যায়দিন খোলাজানালা এগুলো তো ইতিহাসের অংশ। এগুলোর পিডিএফ আর্কাইভ হওয়া কি উচিত নয়? এ দায়িত্ব কার? জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের? সংস্কৃতি সংশ্লিষ্ট কোন ওয়েবসাইট তো এগিয়ে আসতে পারে।অজ্ঞতাবশতঃ অভ্রতে লিখতে পারছিলাম না।ফেসবুকে বাংলায় কোন কমেন্ট করতে পারছিলাম না।মনঃকষ্টে ছিলাম। যদিও বিজয়ে লিখতে শিখেছিলাম অন্ততঃ ১০ বছর আগে।এই লেখাটার তাড়না অভ্র শিখতে আমাকে বাধ্য করেছে। ২২ আগস্টে বিজয়ে লেখাটা অভ্রতে লিখে আজ পোস্ট করতে পারলাম।