এই তো এ মাসের গোড়াতেই কথা হচ্ছিল বাংলাদেশের খ্যাতিমান এক শিল্প-সমালোচকের সঙ্গে; নানা কথার মধ্যে এও জানা গেল যে, নভেরা আহমেদ না কি মারা গেছেন! মারা গেছেন? হ্যাঁ, সেরকমই তিনি শুনেছেন। কবে মারা গেছেন? ২০০৩ সালে।
এদিকে, ১৯৯৮ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ লেখক সংসদ থেকে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের নারী চরিতাভিধান’-এর ৮৪ পৃষ্ঠায় গ্রন্থকার সাঈদা জামান আমাদের জানিয়েছেন, ‘১৯৮৯ সালে নভেরা আহমেদ মারা যান।’
এই বইটি বিষয়গত গুরুত্বের কারণে বিভিন্ন গ্রন্থাগারে সংরক্ষণযোগ্য বলে বিবেচিত হবার কথা। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির গ্রন্থাগারেও এর একটি কপি আছে। এই এশিয়াটিক সোসাইটি থেকেই ২০০৭-এর ডিসেম্বরে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক সমীক্ষামালা’-র অষ্টম খণ্ডে (‘চারু ও কারু কলা’) নভেরা আহমেদকে নিয়ে আলোচনার অন্তিম অনুচ্ছেদে (পৃষ্ঠা ৩৫৮) লালা রুখ সেলিম জানাচ্ছেন :
১৯৬০-এর দশকের পর নভেরা আর বাংলাদেশে ফেরেন নি এবং তাঁর বন্ধু বা আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক রাখেন নি। তাঁর নীরবতার পাল্টা জবাবে যেন তাঁর নাম বিস্মৃতিতে হারিয়ে গেল, তাঁর কাজ অবহেলায় এবং অযত্নে ধ্বংস হয়ে গেল। ১৯৬০ সালে নভেরার প্রদর্শনীর ক্যাটালগে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন লিখেছিলেন যে পূর্ব পাকিস্তানের শিল্প জগতে একটা ক্ষুদ্র বিপ্লব ঘটে যায় যখন নভেরা আহমেদ নগরের কেন্দ্রীয় গণ গ্রন্থাগারের দেয়ালে উচ্চাবচ ভাস্কর্য গড়েন ১৯৫৭ সালে এবং প্রথম প্রাঙ্গণ ভাস্কর্য গড়েন ১৯৫৮ সালে। এ শিল্পকর্মগুলি নিয়ে ঢাকার নাগরিকরা গত কয়েক বছর বাস করছে। তবে তিনি মনে করেন আমাদের শিল্প জীবনে এ দুটি কাজের অভিঘাত মূল্যায়ন করতে বহু প্রজন্মের প্রয়োজন হবে। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার ভাস্কর্যে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ নভেরা আহমেদকে একুশে পদক দিয়ে সম্মানিত করেন।
‘বেগম নভেরা আহমেদ’কে একুশে পদকে সম্মানিত করার সরকারি ঘোষণাটির কথা আমাদের মনে আছে; আর এও মনে আছে যে, সবার প্রত্যাশার মুখে ছাই দিয়ে সেই সম্মাননা গ্রহণের জন্যও নভেরা দেশে আসেননি!
১৯৯৪ সালে ‘বিচিত্রা’-র ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত ও পরের বছর গ্রন্থাকারে মুদ্রিত হাসনাত আবদুল হাইয়ের লেখা জীবনী-উপন্যাস ‘নভেরা’-র কথাও আমরা ভুলে যাইনি, যার অন্তিম অধ্যায়ে শিল্পীর মামাতো ভাই রাশেদ বলছেন, ‘আই ওয়ান্টেড হার টু ফেড অ্যাওয়ে উইদ ডিগ্নিটি।’ ১৯৮৭ সালে, অনেক বছর খোঁজাখুঁজির পর প্যারিসে সন্ধান লাভের পরও, রাশেদ নভেরার দৃষ্টি আকর্ষণ করেননি, বরং তিনি নভেরাকে ‘সসম্মানে মিলিয়ে যাবার’ সুযোগ করে দিয়েছেন!
২
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের উদ্যোগে ১৯৯৮ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে ১৩ মে (১–৩০ চৈত্র ১৪০৫) পর্যন্ত নভেরা আহমেদের ভাস্কর্যের মাসব্যাপী প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। দীর্ঘদিন অনাদরে-অবহেলায় পড়ে-থাকা ভাস্কর্যগুলোকে ((উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম এম. আর. খানের পরিবারের সৌজন্যে প্রাপ্ত ‘পরিবার’ (১৯৫৮–৫৯) নামের শাদা সিমেন্টে তৈরি মুক্তাঙ্গন ভাস্কর্যটি, যার উল্লেখ রয়েছে লালা রুখ সেলিমের লেখায় ব্যবহৃত জয়নুল আবেদিনের পরোক্ষ উদ্ধৃতিতে।)) একত্র করে প্রদর্শনের ও পরবর্তী পর্যায়ে সংরক্ষণের এই রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নিশ্চয়ই প্রশংসনীয়। জাদুঘরের সামনের উদ্যানে এবং তৃতীয় তলায় সমকালীন শিল্পকলা গ্যালারিতে নভেরার ভাস্কর্যগুলো অনেকেই দেখেছেন, নতুন নতুন দর্শনার্থীরা প্রতিদিনই নিশ্চয়ই দেখছেন। কিন্তু অনেকের পক্ষেই জানা সম্ভব নয় যে, জাদুঘরের ভিতরের চত্বরে অরক্ষিত পড়ে আছে নভেরার একটি ভাঙা ভাস্কর্য, দিনের পর দিন; আর আরো একটু এগিয়ে বাঁ-দিকে গেলে কর্মচারীদের টিফিন করার স্থানে দেখতে পাবার কথা নীচের এই দৃশ্য –
নোংরা আবর্জনার স্তূপের পাশে শুশ্রূষার অপেক্ষায় দিন গুনছে নভেরার সিমেন্টে তৈরি কয়েকটি জীর্ণ ভাস্কর্য!
আর বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক ভাস্কর নভেরা আহমেদ (জন্ম আনুমানিক ১৯৩০) আছেন প্যারিসের ‘অজ্ঞাতবাসে’, রবীন্দ্রনাথের ‘জীবিত ও মৃত’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রের মতো যাঁকে একদিন ‘মরিয়া’ প্রমাণ করতে হবে যে, নভেরা ‘মরে নাই’!
(ছবি : বাঁধন)
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৯৫ comments
রশীদ আমিন - ২৯ জুন ২০০৯ (২:২৮ পূর্বাহ্ণ)
Breaking news-এর মতো breaking post !!!
আমাদের দেশে যারা প্রকৃত গুণী শিল্পী তারা পর্দার অন্তরালে হারিয়ে যান । প্রকৃত গুণী শিল্পীদের একটা অহংবোধ থাকে, আমাদের মতো সমাজে এই সব শিল্পীর অহংবোধ প্রতিনিয়ত আঘাত প্রাপ্ত হয়। আমরা তো শুধু ভাগ্যক্রমে এক নভেরাকে বিস্মৃতির অতল থেকে খুঁজে পেয়েছি, কে জানে হয়তো আরো অনেক নভেরাই উলটে যাওয়া বইয়ের পাতার মতো হারিয়ে গেছে ইতিহাসের আঁধারে। তাদের কীর্তির উপর জমে যাওয়া আবর্জনাগুলো যদি কোনো ঝড়ো বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যায়, তবে হয়তো বেরিয়ে আসতে পারে নতুন কোনো নভেরা, আমরা যেন সেই সময়েরই প্রতীক্ষায় থাকি।
তিথি রায়হানা - ৩১ মে ২০১৮ (১২:১৪ পূর্বাহ্ণ)
নভেরা একটি রহস্যময় শীতল বাতাসের মতো। বহমান তবে স্পর্শক নয়। আপনি ঠিক কথাই বলেছেন স্যার…………
সৈকত হাবিব - ৩০ জুন ২০০৯ (৭:০৮ পূর্বাহ্ণ)
ধন্যবাদ সুমন, আপনার এই অসামান্য উদ্যোগের জন্য।
মাহতাব - ৩০ জুন ২০০৯ (৭:১৮ অপরাহ্ণ)
সুমন, কয়েক দিন আগে একজন ভাস্করের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলায় এবং ফরাসিদেশে পূরাকীর্তি পাঠানোকে কেন্দ্র করে এ দেশের শিল্পীসমাজ যে প্রতিবাদ করলেন, নভেরার শিল্পকর্মগুলো রক্ষায় তাঁরা কি এগিয়ে আসবেন না?
সাইদুল ইসলাম - ১ জুলাই ২০০৯ (৫:৫০ পূর্বাহ্ণ)
ধন্যবাদ রেজাউল করিম সুমনকে নভেরার প্রতি আমাদের সুপ্ত আবেগকে জাগিয়ে তোলার জন্য।
নভেরা কি সত্যিই মারা গেছেন? আমরা কি সে-খবরটা পর্যন্ত সঠিকভাবে জানতে পারব না? নভেরার জীবনকালে কেন তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার কোনো উদ্যোগ নেয়া হলো না? যে-দেশে গুণীর কদর নেই সে-দেশে কোনো গুণী জন্মায় না। হয়তো এভাবেই আমাদের দেশ একদিন গুণীশূন্য হয়ে পড়বে। নভেরার কাজগুলো যেভাবে আবর্জনার স্তূপের পাশে পড়ে থাকতে দেখলাম, এমন দৃশ্য কোনো সাংস্কৃতিক রুচিহীন দেশেই কেবল সম্ভব।
যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আহ্বান করব, নভেরার কাজগুলো দ্রুত সংরক্ষণ করে কিছুটা হলেও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিন।
রেজাউল করিম সুমন - ২ জুলাই ২০০৯ (২:১৬ অপরাহ্ণ)
ধন্যবাদ রশীদ আমিন, সৈকত হাবিব, মাহতাব ও সাইদুল।
১
১৯৯৮ বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের উদ্যোগে নভেরার যে-কাজগুলোর প্রদর্শনী হয়, তার সবই প্রথম প্রদর্শিত হয়েছিল ১৯৬০ সালের আগস্ট মাসে, তৎকালীন সেন্ট্রাল পাবলিক লাইব্রেরির চত্বরে, তাঁর প্রথম একক ভাস্কর্য প্রদর্শনীতে। বাংলাদেশে (বা পূর্ব পাকিস্তানে) এর আগে কোনো ভাস্কর্য প্রদর্শনী হয়নি, এমনকী পুরো পাকিস্তানেও সেটাই ছিল কোনো ভাস্করের প্রথম একক প্রদর্শনী। নভেরার অমূল্য ভাস্কর্যগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর আমাদের দীর্ঘ তিনযুগের সজ্ঞান অপরাধ ক্ষালনের প্রক্রিয়ার সূচনা করেছিল, বলা যেতে পারে।
জাদুঘরে প্রদর্শনী চলাকালেই ভাস্কর-সমালোচক লালারুখ সেলিম পত্রিকায় (ভোরের কাগজ, ১১ বৈশাখ ১৪০৫, ২৪ এপ্রিল ১৯৯৮) লিখেছিলেন :
আমরা সবাই জানি, সদ্য-উল্লিখিত এই মুক্তাঙ্গন ভাস্কর্যটি নভেরা করেছিলেন এম. আর. খানের বাড়িতে। এখন এটি স্থানান্তরিত হয়েছে জাতীয় জাদুঘরের সামনের প্রাঙ্গণে। জাদুঘর সমাচার-এর ১ম বর্ষ ২য় সংখ্যায় (এপ্রিল—জুন ১৯৯৯) লেখা হয়েছিল :
২
কয়েকটি বিচ্ছিন্ন সূত্রের উল্লেখের মাধ্যমে এ লেখায় আমরা দুটো বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছি। প্রথমত, নভেরা বেঁচে আছেন কি না। বেঁচে থাকলে, এই তথ্য আমাদের প্রণোদিত করে না কেন? না কি তিনি মারা গেছেন? মারা গিয়ে থাকলে, আমরা শোক পালন ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে যাইনি কেন?
সাঈদা জামান যে ‘বাংলাদেশের নারী চরিতাভিধান’-এ (১৯৯৮) উল্লেখ করেছেন, ‘১৯৮৯ সালে নভেরা আহমেদ মারা যান’, এই তথ্য কোন্ সূত্র থেকে পাওয়া? মেহবুব আহমেদের লেখা (‘ভাস্কর নভেরা আহমেদ’, দৈনিক সংবাদ, ১০ নভেম্বর ১৯৯৪) থেকে জানছি : ‘নভেরা আহমেদ ৮৯ সালে মারা গেছেন – এস. এম. আলী বিশ্বস্ত সূত্রে এই খবরটি পেয়েছিলেন।’ ‘বিশ্বস্ত’ সূত্রে পাওয়া ওই খবর যে আদৌ ঠিক নয়, নভেরার দীর্ঘদিনের বন্ধু এস. এম. আলী মৃত্যুর আগে তা জেনে যেতে পারেননি, কিন্তু ১৯৯৭ সালে নভেরাকে একুশে পদকে ভূষিত করার সরকারি ঘোষণার পরও কি সাঈদা জামানের অজানা থেকে যাবে যে নভেরা বেঁচে আছেন? কেবল এটাই নয়, নভেরা সম্পর্কে আরো একটা বড়ো তথ্যচ্যুতি আছে তাঁর এ বইতে :
৩৩টি মনুমেন্টাল ভাস্কর্যের ওই প্রদর্শনীটি হয়েছিল ১৯৭০ সালে, ১৯৮৮ সালে নয় – ১৯৬৮ সালেও নয় (যেমনটা লিখেছেন মেহবুব আহমেদ তাঁর পূর্বোক্ত লেখায়, যার অনুসরণে এমনকী জাতীয় জাদুঘরের প্রদর্শনীর ফোল্ডারেও একই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেখা যায়; মেহবুব আহমেদের লেখাটির একটি পরিমার্জিত রূপ পরবর্তীকালে ছাপা হয় কালি ও কলম-এর ২য় বর্ষ ৩য় সংখ্যায় [বৈশাখ ১৪১২, এপ্রিল ২০০৫], তথ্যসমৃদ্ধ এ লেখাটির সূচনাবাক্যেই সেই পুরোনো ভুল : ‘১৯৬৮ সালের শেষদিকে ব্যাংককে নভেরা আহমেদের একক প্রদর্শনী হয়।’)।
নভেরার তৃতীয় ও এখনো পর্যন্ত সর্বশেষ একক প্রদর্শনীটি হয় প্যারিসে, ১৯৭৩ সালের জুলাই মাসে। এই প্রদর্শনীতে ছিল – আনা ইসলামের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী (‘নভেরার বর্তমান দিনকাল’, ভোরের কাগজ, ১১ বৈশাখ ১৪০৫, ২৪ এপ্রিল ১৯৯৮) — ১২টি ভাস্কর্য ও ১২টি ছবি। (ফেসবুকে ‘নভেরা আহমেদ’ গ্রুপে এক ফরাসি ভদ্রমহিলার সৌজন্যে প্রাপ্ত ওই প্রদর্শনীর ফোল্ডারেও আমরা ফরাসি ভাষায় ‘ভাস্কর্য ও চিত্র’ কথাটি দেখতে পাচ্ছি।) আনা ইসলাম ভোরের কাগজ-এর ওই লেখায় লিখেছিলেন,
নভেরা সম্পর্কে শেষ খবরও আমরা পেয়েছি আনা ইসলামের কাছ থেকে (‘কেমন আছেন নভেরা’, প্রথম আলো, ‘ছুটির দিনে’, ১৪ ফাল্গুন ১৪০৬, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০০)। কিন্তু এখন কেমন আছেন তিনি, নভেরা, আশির কাছাকাছি বয়সে পৌঁছনোর পর? আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে, এ দেশে এ প্রশ্নের সদুত্তর দেওয়ার মতো কেউ নেই! কিন্তু আর কতকাল জাদুঘরেরই অভ্যন্তরে নভেরার কয়েকটি ভাস্কর্য আবর্জনার স্তূপের পাশে পড়ে থাকবে – এই প্রশ্নের একটা ত্বরিত জবাব তো আমরা নিশ্চয়ই আশা করতে পারি জাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে?
অবিশ্রুত - ২ জুলাই ২০০৯ (১১:৩৭ অপরাহ্ণ)
হাসনাত আবদুল হাই সাপ্তাহিক বিচিত্রায় নভেরা উপন্যাস লেখার অনেক পর সাপ্তাহিক বিচিত্রারই আরেকটি সংখ্যায় ১৯৯৬এর শেষ দিকে লেখালেখি বিভাগে সত্তরের দশকের গদ্যকার ইকতিয়ার চৌধুরীর একটি লেখা ছাপা হয় তাঁকে নিয়ে। লেখাটির কথা আমার স্পষ্ট মনে আছে দুটো কারণে। প্রথমত : সেটি ছিল সরকারি মালিকানাধীন বিচিত্রার শেষ সংখ্যা। দ্বিতীয়ত: এটিই প্রথম এমন একটি লেখা, যাতে সরাসরি দাবি করা হয় যে, নভেরা জীবিত আছেন। লেখাটির সঙ্গে নভেরার একটি সমসাময়িক ছবিও ছাপা হয়। ছবিতে নভেরার বয়সের ছাপ ছিল স্পষ্ট।
লেখাটি আমার হাতের কাছে নেই। তবে বিবরণ মোটামুটি এরকম : ইকতিয়ার চৌধুরী একজন কূটনীতিক এবং তখন প্যারিস মিশনে কাউন্সিলর হিসেবে কাজ করছেন। পাসপোর্ট তদারকির কাজটিও সম্ভবত তাঁর হাতে ছিল। একদিন একটি পাসপোর্ট নবায়নের জন্যে তার হাতে আসে। নভেরা আহমেদ-এর পাসপোর্ট সেটি। কূটনীতিক বিস্মিত হন এবং অফিসে জানিয়ে রাখেন পাসপোর্ট যিনি নিতে আসবেন, তিনি এলে তাকে যেন খবর দেয়া হয়।
নভেরা পাসপোর্ট নেয়ার জন্যে কয়েক সপ্তাহ পর ইকতিয়ার চৌধুরীর মুখোমুখি হন। ইকতিয়ার চৌধুরী বাংলাতেই কথা বলেন, কিন্তু নভেরা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কথা বলেন ইংরেজিতে। ইকতিয়ার চৌধুরীর ভাষ্য মতে, তিনি বুঝতে পারেন, একদিকে তিনি দেশের প্রতি তীব্র অভিমান পুষে রেখেছেন, যার প্রকাশ ঘটে বাংলায় কথা না বলার মধ্যে দিয়ে; অন্যদিকে, মনের মধ্যে বাংলাদেশের জন্যে তীব্র ভালোবাসা রয়েছে বলেই তিনি এখনও ফ্রান্সের নাগরিকত্ব নেননি, বরং দেশের পাসপোর্টটিই ধরে রেখেছেন।
এইভাবে নভেরা আহমেদ-এর বেঁচে থাকার এবং আনুসঙ্গিক একটি বিবরণ তুলে ধরা হয় লেখাটিতে। সঙ্গে ছিল পাসপোর্ট-এ ব্যবহৃত ছবিটিও।
নভেরা চলে যাওয়ার পর ইকতিয়ার চৌধুরী তিনি যে অ্যান্টিকের দোকানে বসেন, সেটিও খুঁজে বের করেন, দোকানটিরও বর্ণনা দেন লেখাটিতে।
এই বিচিত্রাটি অনেকেরই নজর এড়িয়ে গেছে। কেননা বিচিত্রা তখন বন্ধ হওয়ার পথে। দ্বিতীয়ত নভেরা এমন এক কিংবদন্তি যে, তার সন্ধান আবিষ্কারের কৃতিত্ব নিজের কাঁধে নেয়ার মানুষ প্রচুর। এ ক্ষেত্রে কেউ কোনও রেফারেন্স ব্যবহার করে আরেকজনকে কৃতিত্ব দিতে রাজি নন।
এর পরপরই নভেরাকে একুশের পদক দেয়া হয় এবং জাদুঘর প্রদর্শনীর আয়োজন করে । প্যারিসের এক হোটেলে শিল্পী নভেরাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদকটি অর্পনের সময় ইকতিয়ার চৌধুরী, শিল্পী শাহাবুদ্দিন ও আনা ইসলাম উপস্থিত ছিলেন বলে শুনেছি।
রেজাউল করিম সুমন - ৩ জুলাই ২০০৯ (১২:০০ অপরাহ্ণ)
ধন্যবাদ অবিশ্রুত, আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য এবং ইকতিয়ার চৌধুরীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লেখাটির বক্তব্য তুলে ধরার জন্য।
তাঁর লেখাটির কথা শুনেছি, তবে এখনো বিচিত্রা-র ওই সংখ্যাটি হাতে পাইনি। আমাদের এক বন্ধু সাপ্তাহিক ২০০০-এ শাহাদাত চৌধুরীর সঙ্গে কাজ করার সুবাদে লেখাটির কথা জেনেছিল এবং তা সংগ্রহ করে দেবে বলেছিল। পরে শাহাদাত সাহেব অসুস্থ হয়ে পড়ায় তা আর হয়ে ওঠেনি।
ক’দিন আগে এই পোস্টের জন্য প্রয়োজনীয় সূত্র হিসেবেও লেখাটির কথা মনে পড়ে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে বিচিত্রা-র বেশ ক’টা ফাইল আছে, আশা করছি সেখানে লেখাটি খুঁজে পাব। ছুটি শেষে বিশ্ববিদ্যালয় খুললেই খোঁজ নেব।
ইকতিয়ার সাহেবের কোনো খোঁজ কি জানা আছে আপনার?
রেজাউল করিম সুমন - ২৩ আগস্ট ২০০৯ (১:০৯ অপরাহ্ণ)
@ অবিশ্রুত
আপনার দেয়া তথ্যসূত্র অনুসরণ করে নভেরাকে নিয়ে কূটনীতিক ইকতিয়ার চৌধুরীর লেখাটি খুঁজে পাওয়া গেছে। এটি ছাপা হয়েছিল ১৭ অক্টোবর ১৯৯৭, ২ কার্তিক ১৪০৪ তারিখে প্রকাশিত বিচিত্রা-র ২৬ বর্ষ ২২ সংখ্যার ‘লেখালেখি’ বিভাগে (পৃষ্ঠা ৪০-৪১)। পড়তে গিয়ে মনে হলো, ছাপার সময়ে কোনো কোনো জায়গায় ঠিকমতো যতিচিহ্ন পড়েনি। পুরো লেখাটিই তুলে দেয়া হলো নীচে :
নভেরা ইয়াসমিন - ৮ ডিসেম্বর ২০১০ (২:৩৮ পূর্বাহ্ণ)
ইকতিয়ার চৌধুরী খুব সম্ভব সাঈপ্রাস এ আছে
রেজাউল করিম সুমন - ১০ অক্টোবর ২০১১ (৬:৪৩ অপরাহ্ণ)
ইকতিয়ার চৌধুরী বর্তমানে স্পেনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কর্মরত আছেন।
নভেরা হোসেন - ৩ জুলাই ২০০৯ (৪:২০ অপরাহ্ণ)
আর্টিস্ট নভেরা আহমেদ সম্পর্কে কোনো কথা বলা খুব সহজ নয়। তাঁর প্রতি জাতি হিসাবে আমরা অমার্জনীয় অন্যায় করেছি। আজ তাঁকে স্মরণ করে, পদক দিয়ে, তাঁর প্রতি করা নির্মম আচরণকে, তাঁকে ও তাঁর কাজকে নিশ্চিহ্ন করার মনোভাবের ক্ষতিপূরণ করা যাবে না। আর তাতে আর্টিস্টের কিছু আসবে যাবে না।
আজ অন্তত নভেরা আহমেদের ভাস্কর্যগুলোকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ, প্রদর্শন এবং তা নিয়ে কাজ করার সুযোগ করে দেয়া দরকার। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এবং আর্টিস্টরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন আশা করি।
আর নভেরা এবং তাঁর কাজকে বুঝতে পারা …তা নিয়ে কী আর বলবো … কয়েক শতক … অপেক্ষা করতে হবে হয়তো …
Bipasha Hossain - ১০ জুন ২০১২ (৩:০০ অপরাহ্ণ)
Ami ei projonmer Bangladeshi bangali nari. Hotat Novera Ahmed er upor ekta article fb te dekhlam. Ami jantey chai ato boro ekjon shilpi er shathe amra ki onnai korechilam j tini r kokhonoi deshe feren in ba jogajog rakhen ni? Keno emon hobe??
Bipasha Hossain - ১০ জুন ২০১২ (৬:১৩ অপরাহ্ণ)
Emphasis also on hothat kore. Ami kintu secondary school theke graduation bangladeshei korechi, Dhaka Bisshobiddaloy (iba) e porechi, I never got exposure to any of the culture or art as much as I would like as a bangladeshi. And i feel ashamed of my ignorance. Kichui to jani na desher guni Jon der shomporke. Emon e ba keno hobe? Koi ta chele meye akhon nij dayitte jante jabe, britney r shakira der jug e?
রণদীপম বসু - ৪ জুলাই ২০০৯ (৭:৫৮ পূর্বাহ্ণ)
খুবই গুরুত্বপূর্ণ লেখা ও তথ্য। লেখাটি পড়তে পড়তে আমিও স্মৃতি হাতড়াচ্ছিলাম, নভেরা সম্পর্কে সর্বশেষ লেখাটা কোথায় যেন পড়েছিলাম। অবিশ্রুত ভাইয়ের মন্তব্যটা পড়ে মনে হচ্ছে সম্ভবত আমি এটাই পড়েছি। যদিও বিচিত্রা’র সেই সংখ্যাটি হাতে নাই।
ধন্যবাদ সুমন। আমাদের সরকার কি তার বিশাল বপু নিয়ে পারে না ভাস্কর নভেরার সর্বশেষ অবস্থানটা নিশ্চিত হতে ?
রেজাউল করিম সুমন - ৪ জুলাই ২০০৯ (১১:৩২ পূর্বাহ্ণ)
ধন্যবাদ, রণদীপমদা।
বিষয়টি দু-তিন জন সাংবাদিকেরও গোচরে আনা হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো ফলোদয় হয়নি।
রশীদ আমিন - ৪ জুলাই ২০০৯ (৩:৪৩ অপরাহ্ণ)
সুমন , একটি তথ্য তুমি জানো কিনা জানিনা , সেটা হলো বিশিষ্ট গল্পকার এবং ডিপ্লোমেট ইকতিয়ার চৌধুরী আমাদের বন্ধু ইমতিয়ার শামিমের ভাই । তিনি বর্তমানে খুব সম্ভব ফিলিপাইনের রাষ্ট্র দূত ।
রেজাউল করিম সুমন - ৫ জুলাই ২০০৯ (১১:২৩ পূর্বাহ্ণ)
ধন্যবাদ, আমিন ভাই। জানা ছিল না আমার।
আমি আরো ভাবছিলাম, কীভাবে তাঁর খোঁজ পাব! আশা করি ইমতিয়ার ভাইয়ের কাছ থেকে পাকা খবর পাওয়া যাবে।
চন্দন - ১০ অক্টোবর ২০১১ (১:৫৫ পূর্বাহ্ণ)
মাত্র ক’দিন আগে জানলাম ইকতিয়ার চৌধুরী স্পেনের মাদ্রিদে আছেন!!!
রেজাউল করিম সুমন - ১০ অক্টোবর ২০১১ (৬:৪১ অপরাহ্ণ)
হ্যাঁ, ইকতিয়ার চৌধুরী বর্তমানে স্পেনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। ধন্যবাদ আপনাকে।
নীরু শামসুন্নাহার - ৫ জুলাই ২০০৯ (১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ)
অনুসন্ধানী লেখাটা পড়লাম। অন্যদের প্রতিক্রিয়াও পড়লাম। বাঁধনের তোলা আলোকচিত্রে নভেরার ভাস্কর্য নতুন চেতনায় মুখরতা পেয়েছে বলে আমি মনে করি। নভেরার কাজ চিরদিনের, মানে ধ্রুপদী শিল্পের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে — এ-কথা আমি বেশ জোরের সঙ্গেই বলব। জাদুঘর নামের অচলায়তনের চার দেয়াল যে তার শক্তিকে বেঁধে রাখতে পারে না, পারবেও না কখনো, তারই দারুণ প্রমাণ এই ছবিগুলো। অসম্ভব শক্তিশালী এক দ্যোতনা পেয়েছে নভেরার ‘পরিবার’ ও অন্যান্য ভাস্কর্যগুলো। নবীন আমগাছের ছায়া, পাশের দালানের ভাঙাচোরা চুনসুরকি, সামনে সাধারণ মানুষের পরম যত্নে উপুড় করে শুকোতে দেয়া টিফিন-বাটি — এই সব কিছুই নভেরার আধভাঙা ভাস্কর্যগুলোকে নতুন অর্থ দিয়েছে। ফেলে রাখা ভাস্কর্যগুলো যেন নিজেরাই নভেরার হয়ে এক প্রতিবাদী ইনস্টলেশান হয়ে উঠেছে!
নভেরার মতো ভাস্করকে মরে গিয়ে প্রমাণ করতে হবে না যে তিনি বেঁচে ছিলেন। কারণ তিনি তো প্রবলভাবে বিদ্যমান বা বর্তমান তাঁর ভাঙা ভাস্কর্যের মধ্যে। বাঙালির প্রাণ-ভ্রমরা নভেরা। জয়তু নভেরা! জয়তু বাঁধন!
রিয়াজ - ৭ জুলাই ২০০৯ (১:৩৩ পূর্বাহ্ণ)
Well and good initiative for artist community of Bangladesh.
নীড় সন্ধানী - ৭ জুলাই ২০০৯ (৬:৩৮ পূর্বাহ্ণ)
নভেরাকে নিয়ে পড়েছি বহুবছর আগে। হাসনাত আবদুল হাইয়ের সেই উপন্যাসটার কাছে আমার অসীম কৃতজ্ঞতা। সেটা না পড়লে জানাই হতো না বাংলাদেশের সর্বকালের আধুনিকতম নারীটির কথা। সেই উপন্যাস পড়ে আমি ছুটে গিয়েছিলাম ঢাকায়। উপরের ছবিতে অবহেলিত ভাস্কর্যগুলো খুজে খুজে দেখেছি এবং ভীষন কষ্ট পেয়েছি। কী অকৃতজ্ঞ আমাদের জাতি। নভেরাকে সম্মান দিতে পারিনি, তার রেখে যাওয়া অমূল্য ভাস্কর্যগুলোকে সংরক্ষনের কোন ব্যবস্থাও নিতে অক্ষম আমরা?
যে নারীর হাতে আমাদের পরম গর্বের প্রথম শহীদ মিনারটা গড়ে উঠেছিল। তাঁকে সম্মান দিতে এত কুন্ঠা ছিল কেন আমাদের সরকারগুলোর? হামিদুর রহমানের পাশাপাশি নভেরা আহমেদের কথা বলি না কেন ইতিহাসের পাতায়? কিভাবে ভুলে যাই রাতদিন একসাথে খেটে হামিদুর রহমান আর নভেরা আমাদের একুশকে দাড় করিয়েছিল? আমাদের প্রজন্ম যতটুকু জানি, পরের প্রজন্মের কাছে তো নভেরা নিরুদ্দেশই থেকে যাবে চিরকাল।
ডোবারব্যাং - ৭ জুলাই ২০০৯ (১:৪৭ অপরাহ্ণ)
এ প্রসঙ্গে আমার নিজের করুণ আর অভিজ্ঞতা আছে। ৮০’র দশকের শেষভাগে আমি স্কুলছাত্র ছিলাম। অভিভাবকের চাকরিসূত্রে ঢাবি’র এফ এইচ হল সংলগ্ন এলাকায় থাকতাম। আনন্দবাজারের পাশে, আগে পুরাতন জাদুঘর (বর্তমানে একুশে হল), এলাকাটা প্রায় পরিত্যক্ত’ই থাকত। গাছপালা ভর্তি। ওখানে যখন আমরা খেলতাম, অনেক অদ্ভুত অদ্ভুত (অনেকগুলো আবার ভাঙ্গাচোরা) ভাস্কর্য ছিলো সেখানে। আবছা মনে পড়ে, দারোয়ান মামাদের কাছে, বা আরো কোথাও, আমরা শুনতাম এগুলো নাকি নভেরার।
তখন অতো বুঝতাম না, নভেরা কে, বা ভাস্কর্য ই বা কি।
আমরা আস্তে আস্তে বড় হয়েছি।
অই জায়গাগুলোও আস্তে আস্তে পরিষ্কার (?) হয়েছে।
এই অবহেলার দায়িত্ত্ব কে নেবে?
আমরা আমাদের শিকড়কে অবহেলা করে কতোদূর যেতে পারব?
রায়হান রশিদ - ১৪ জুলাই ২০০৯ (২:১১ পূর্বাহ্ণ)
ধন্যবাদ। ব্লগের মাহাত্ম্য মনে হয় এখানেই। একজন শিশুর চোখ দিয়ে দেখা আমাদের শিল্প ইতিহাসের (এবং সেইসাথে শিল্পীর ভাস্কর্যের) অমূল্য কিছু টুকরো লিপিবদ্ধ হয়ে গেল! নভেরাকে নিয়ে কোনদিন কেউ হয়তো একটা ছবি বানাবেন। সেলুলয়েডে আপনার এই স্মৃতির জীবন্ত হয়ে ওঠা এখনই যেন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। যেখানকারই হন আপনি – “ডোবা” যে আপনার আবাস হতেই পারে না, সেটা একরকম নিশ্চিত আমি।
সুমনকেও ধন্যবাদ। আরও জানতে চাই।
রেজাউল করিম সুমন - ১৬ জুলাই ২০০৯ (১:৩৫ অপরাহ্ণ)
ধন্যবাদ নভেরা হোসেন, নীরু শামসুন্নাহার, রিয়াজ, নীড় সন্ধানী, ডোবার ব্যাং ও রায়হান রাশিদ।
রেজাউল করিম সুমন - ১৬ জুলাই ২০০৯ (২:০৫ অপরাহ্ণ)
ধন্যবাদ, ডোবার ব্যাং। আপনার মন্তব্যটি পড়ার সময় গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছিল।
@ রায়হান রশিদ
নভেরা আহমেদকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছিলেন বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরাম-এর সঙ্গে যুক্ত এন. রাশেদ চৌধুরী, ১৯৯৯ সালে। নভেরার একটি ভাস্কর্যের নামে ছবিটির ইংরেজি নাম রাখা হয়েছিল The Long Wait, আর বাংলা নাম ছিল সম্ভবত ন হন্যতে। সে-সময়ে চট্টগ্রামেও ছবিটির প্রদর্শনী হয়েছিল।
শুনেছি, আরো একটি তথ্যচিত্রের কাজ চলছে।
নভেরাকে নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে একটা বড়ো বাধা নিশ্চয়ই তথ্যের অপ্রতুলতা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তথ্যের যাথার্থ্য যাচাইয়ের সুযোগের অভাব।
এছাড়া মারাত্মক ভুল তথ্যের অকুণ্ঠ প্রচার তো আছেই! ‘গুণীজন’-এর কথা অনেকেরই জানা। এই সংগঠনটির ওয়েবসাইটে (তাঁদের দাবি অনুসারে এটি বাংলাদেশের বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের সবচেয়ে বড়ো ইলেকট্রনিক জার্নাল) নভেরার যে-সংক্ষিপ্ত জীবনীটি আছে তা সম্ভবত বাংলাদেশের নারী চরিতাভিধান-এর অনুসরণেই লেখা, যাবতীয় তথ্যচ্যুতি সহ! এর শেষ বাক্যও এরকম :
‘১৯৮৯ সালে নভেরা আহমেদ মারা যান।’
আর তার নীচে লেখা আছে :
‘তথ্যসূত্র : বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর’!
মোহাম্মদ মুনিম - ২১ জুলাই ২০০৯ (২:৫৩ পূর্বাহ্ণ)
নভেরা আহমেদ সম্পর্কে গুগলে অনুসন্ধান করে ফরাসী ভাষায় লেখা একটা প্রবন্ধ পাওয়া গেল। প্রবন্ধটির ইংরেজী অনুবাদ (গুগলের যান্ত্রিক অনুবাদক) দেখে মনে হচ্ছে নভেরা Grégoire de Brouhns নামের একজন ফরাসী আলোকচিত্রশিল্পীকে বিয়ে করেন। তাঁদের বইয়ের দোকানটির নাম Librairie de Sialsky। প্রবন্ধটিতে নভেরার জন্মসাল দেখানো হয়েছে ১৯৩৯ এবং ১৯৭২ পর্যন্ত তাঁর জীবনী দেয়া আছে। ফ্রান্স একটি অতি উন্নত রাষ্ট্র, সেখানে প্রতিটি জন্ম আর মৃত্যুর নথিপত্র থাকার কথা। নভেরা মারা গিয়ে থাকলে সেটা Confirm করা খুব কঠিন হবার কথা নয়, প্যারিস এ বাংলাদেশ দূতাবাস অবশ্যই এটা করতে পারে। আর নভেরা এই দীর্ঘ প্রবাস জীবনে যেসব কাজ করেছেন, সেসব নিয়েও গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।
রেজাউল করিম সুমন - ২৫ জুলাই ২০০৯ (৭:২২ পূর্বাহ্ণ)
মুনিম, অনেক ধন্যবাদ।
ফরাসি এই লেখা আমি আগে দেখিনি। খুব ভালো হলো লেখাটা পেয়ে। ‘বাংলাদেশের খ্যাতিমান ভাস্কর নভেরা আহমেদের স্বামী’ রুশ-বংশোদ্ভূত ফরাসি আলোকচিত্রী গ্রেগোয়া দ্য ব্রুন্-এর কথা আমরা আগেও খানিকটা জেনেছি মেহবুব আহমেদ ও আনা ইসলামের লেখা থেকে। নভেরার সঙ্গে তাঁর দুটি ছবিও (১৯৯৪ ও ১৯৯৯ সালে তোলা) ছাপা হয়েছিল আনা-র সৌজন্যে। হাসনাত আবদুল হাইয়ের উপন্যাসে গ্রেগোয়া-ই হয়ে গেছেন পোলান্স্কি। এই নামবিভ্রাটের কারণ অবশ্য স্পষ্ট নয়।
নভেরাকে গ্রেগোয়া অন্তত চার দশক ধরে চেনেন। আনা ইসলামের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, নভেরার ব্যাংকক প্রদর্শনীর (১৯৭০) ক্যাটালগের জন্যও ছবি তুলেছিলেন গ্রেগোয়া-ই। তাঁর কাছ থেকেই পাওয়া যেতে পারে আমাদের স্বেচ্ছানির্বাসিত শিল্পীর দীর্ঘ প্রবাসজীবন ও তাঁর শিল্পকর্ম, প্রদর্শনী ইত্যাদি বিষয়ে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য। পিয়ের্-লো-গ্রঁ স্ট্রিটে অবস্থিত তাঁদের গ্রন্থবিপণিটির সন্ধান জানতে পেরেও চমৎকৃত হয়েছি। খুব আশা করে আছি যে, গ্রেগোয়ার বা (তাঁর কোনো কর্মচারীর) সঙ্গে শিগগিরই হয়তো তোমার কথা হবে।
নভেরার স্টুডিয়োর ঠিকানা আমাদের জানা নেই; আনা ইসলামের লেখায় (২৪ এপ্রিল ১৯৯৮) পড়েছিলাম :
২
তোমার দেওয়া লিংকের পিডিএফ ফাইলটির শেষে নভেরার শিল্পীজীবনের যে-কালানুক্রমিক সংক্ষিপ্ত বিবরণ আছে, সেই পৃষ্ঠা ক’টি আমি প্রথম দেখি ফেসবুকে ‘নভেরা আহমেদ’ গ্রুপে। সেখান থেকেই একটি ছবি এই পোস্টের শুরুতে ব্যবহার করেছি। এই কালানুক্রমিক পঞ্জি ছাপা হয়েছিল ১৯৭৩-এ প্যারিসে নভেরার প্রদর্শনী উপলক্ষে, আর সে-কারণেই লেখাটিতে ১৯৭২ পর্যন্ত শিল্পীর জীবনী দেওয়া আছে।
নভেরার জন্মসাল নিয়ে সত্যিই মতভেদ আছে। অন্তত ৩টি জন্মসাল আমরা পাই : (ক) ১৯৩০ বা আনুমানিক ১৯৩০, (খ) ১৯৩৫ এবং (গ) ১৯৩৯। প্রথম জন্মসালটিই সাধারণত ব্যবহৃত হয়ে থাকে; লালারুখ সেলিম, মেহবুব আহমেদরা এই সালটিই উল্লেখ করেছেন। তবে এই জন্মসালটি কোন্ সূত্র থেকে পাওয়া আমার জানা নেই। আর ১৯৩৫-এর কথা লিখেছেন পাকিস্তানের লেখক জালাল উদ্দিন আহমেদ, করাচি থেকে প্রকাশিত তাঁর ইংরেজি বই আর্ট ইন পাকিস্তান-এর (প্রথম প্রকাশ : ১৯৫৪) পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত সংস্করণের (১৯৬২) ১১৬ নম্বর পৃষ্ঠায়। সেখানে আরো বলা হয়েছে, নভেরার জন্ম চট্টগ্রামে। আমরা অনুমান করে নিতে পারি, জালাল উদ্দিন আহমেদের দেওয়া তথ্য সম্ভবত নভেরার কাছ থেকেই পাওয়া। এদিকে, ফরাসি লেখাটিতে ১৯৩৯-এর সঙ্গে এই প্রথমবারের মতো জন্মতারিখও উল্লেখ করা হয়েছে – ২৯ মার্চ। এ লেখায় নভেরার জন্মস্থান হিসেবে সুন্দরবনের কথা বলা আছে! ফরাসি প্রকাশনায় তাঁর জন্মের বছর, তারিখ আর স্থান কি স্বয়ং শিল্পীর কাছ থেকেই জানবার কথা নয়? নভেরা কি তাহলে নিজের বয়স বেশ কয়েক বছর কমিয়ে লিখতে চেয়েছেন? না কি এটা ছাপার ভুল?
আমাদের ধারণা, নভেরার জন্ম আনুমানিক ১৯৩০-এর দিকেই হয়ে থাকবে। কারণ তাঁর বড়ো বোন কুমুম হকের বিচিত্রা-য় প্রকাশিত চিঠিতে আছে :
নভেরার জন্ম ১৯৩৯ সালে হয়ে থাকলে দেশভাগের সময়ে তাঁর বয়স হবার কথা মাত্র ৮/৯ বছর। আবার ১৯৩৫ সালে জন্ম হয়ে থাকলেও দেশভাগের সময়ে তাঁর বয়স দাঁড়ায় মাত্র ১২/১৩। কাজেই এ দুটি জন্মসালই শেষমেশ ধোপে টেকে না।
এর সঙ্গে যোগ করতে চাই, জালাল উদ্দিন আহমেদের লেখায় নভেরার শিল্পশিক্ষার আদিপর্ব নিয়ে এমন একটি তথ্য আছে যা অন্য কোনো লেখায় আমরা পাইনি :
নভেরা বা তাঁর খুব ঘনিষ্ঠজন ছাড়া আর কারো কাছ থেকে এই তথ্য পাবার কথা নয় জালাল সাহেবের।
৩
নভেরা উপন্যাসের ৫২ নম্বর পৃষ্ঠায় লন্ডনে নাজির আহমেদের মাধ্যমে জয়নুল আবেদিনের সঙ্গে নভেরা আহমেদের প্রথম পরিচয়ের বিবরণে আছে :
এ ঘটনার সূত্র ধরে ৫৪ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে – নভেরার দিনলিপির আকারে –
উপন্যাসে ১৯৫১ সালে জয়নুলের মুখে নভেরার উদ্দেশে বলা ‘ছবি আঁকবা? ঢাকায় ভর্তি হও নাই? ডাইরেক্ট এসেছো? হু…’, এই কথা ক’টি বসানো একেবারেই বাস্তবসম্মত হয়নি। ১৯৫৪-এর আগে ঢাকার শিল্পবিদ্যালয়টিতে কোনো ছাত্রী ভর্তি করা হয়নি। ১৯৫৪-৫৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম এখানে সহশিক্ষা প্রবর্তিত হয় এবং প্রথম বছরে ৫ জন ছাত্রী ভর্তি হন।
আর উপন্যাসে নভেরার দিনলিপিতে যে লেখা হলো, জয়নুল আবেদিন ‘হয়তো ছবি বলতে ওটাও [ভাস্কর্য] ধরেছেন’, একেও কি বাস্তবসম্মত বলা যায়? ১৯৬৩ সালের আগে ঢাকার এই শিল্পশিক্ষায়তনে ভাস্কর্য পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্তই ছিল না।
ইমতিয়ার - ২১ জুলাই ২০০৯ (১২:১২ অপরাহ্ণ)
২০০৭-এ হঠাৎ করেই চিন্তা করেছিলাম, হাসনাত আবদুল হাইয়ের নভেরা-তে লন্ডনের যে-সব দ্রষ্টব্য স্থান আছে নভেরার বিচরণক্ষেত্র হিসেবে, সেগুলি হেঁটে হেঁটে দেখব। মোহাম্মদ মুনিম যে লিংকটির সন্ধান দিয়েছেন, গুগল অনুসন্ধান করে আমিও সেটি খুঁজে পাই ওই সময়। ফরাসী ভাষায় লিখিত বলে সেটি পাঠিয়ে দেই এক ছোট বোনের কাছে, সেটি অনুবাদ করে দেয় তাঁর এক বন্ধু সমাজ বিজ্ঞানের মেধাবী ছাত্র রেহান। ওটি থেকে নভেরার অবস্থানের কিছু তথ্য এবং সর্বশেষ প্রদর্শনী সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেতে পারে। ওটিতে যে-ছবি রয়েছে, আমার মনে হয়, সুমন সেগুলির দু’একটি ব্যবহার করেছে তাঁর এ-লেখাটার সঙ্গে।
পরে যোগাযোগ করি, জেফ হ্যাসেল-এর সঙ্গে। ক্যামবারওয়েল স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটস : ইটস স্টুডেন্টস অ্যান্ড টিচার্স ১৯৪০-১৯৬০ নামের একটি বই লিখেছেন তিনি। লন্ডনে থাকার সময় নভেরা ওখানকার ছাত্রী ছিলেন। কিন্তু জেফ আমাকে জানান, নভেরার কোনও তথ্য পাননি তিনি, ক্যামবারওয়েলে ওই সময়ের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের যে-সব কাজ সংরক্ষিত রয়েছে তার মধ্যেও নভেরার কোনও কাজ পাননি তিনি। তবে সহৃদয় জেফ ইন্টারনেট ঘেটে সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং লিংক হিসেবে ফরাসী ডকুমেন্টটির লিংক (যা আমি আগেই পেয়ে গেছি) পাঠিয়ে দেন। ক্যামবারওয়েলের রিসার্চ বিভাগের ডিরেক্টর ওরিয়ানা ব্যাডলে-র সঙ্গে যোগাযোগ করি আমি, তিনিও অপারগতা জানান, সহৃদয়তার সঙ্গে জানান, জেফ হ্যাসেলের বইটি দেখতে। কিন্তু বলাই বাহুল্য, ওই বইটিতে নভেরার উল্লেখ নেই। থাইল্যান্ডের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি আর্ট প্রতিষ্ঠান ও গ্যালারি এবং শিল্পীর সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিলাম আমি, যাদের মধ্যে রয়েছে শিল্পাকর্ন ভার্সিটির আর্ট সেন্টারের আন্তর্জাতিক বিষয়ক প্রশাসক ও ব্যাংকক স্কাল্পচার সেন্টার, তারাও কোনও ধারণা দিতে পারেননি নভেরার থাইল্যান্ডের প্রদশর্নী সম্পর্কে। বাকি রয়েছে ব্যাংককের পত্রিকাগুলির আর্কাইভ-এ ঢু মারা। ইটালিতেও যোগাযোগ করেছিলাম আমি, কিন্তু অবস্থা হতাশাজনক। তবে পাকিস্তানে ২০০৮-এর প্রথম দিকে বাংলাদেশের শিল্পী তৈয়বা লিপি গিয়েছিলেন। তিনি আমাকে সেখানে বাংলাদেশের জাদুঘরে যেমন অযত্নে নভেরার কাজ পড়ে রয়েছে, ঠিক তেমনি অযত্নে পড়ে থাকা কিছু নভেরা-ভাস্কর্য-এর আলোকচিত্র পাঠিয়েছিলেন। আমার অনুরোধে খোঁজ করতে গিয়ে তিনি সন্ধান পান ওই ভাস্কর্যগুলির। নভেরার কাজের নিজস্বতা এতই সুস্পষ্ট যে, লিপির পক্ষে কঠিন হয়নি সেগুলি সনাক্ত করা; যদিও সেখানেও শিল্পীর নাম লেখা ছিল না।
আমি যেটুকু বুঝি, নভেরার অবস্থান সম্পর্কে জানা সত্যিই কঠিন কিছু নয়। ফরাসী ওই লিংক ধরে খুঁজলে তাঁকে খুঁজে পেতে ফ্রান্সে অবস্থানরত কারও দেরি হবে না। কিন্তু নভেরা উপন্যাস-এর শেষ-এ তার কাজিন রাশেদের একটি উক্তি আছে, আমার মনে হয়, সেটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ- আই ওয়ান্টেড হার টু ফেড এ্যাওয়ে উইদ হার ডিগনিটি।
নভেরা আমাদের গৌরবের, কিন্তু নিজের সম্পর্কে নভেরার সিদ্ধান্ত কী সেটাও ভাবার বিষয়। আমার মনে হয়, সেটি তিনি বিভিন্নভাবেই জানিয়ে দিয়েছেন। একজন শিল্পীর জন্যে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, সৃজনশীল থাকা। বাস্তবতা হলো, কঠিন দুর্ঘটনা নভেরার সৃজনশীলতাকে ব্যাহত করেছে এবং তিনি নিভৃত জীবন বেছে নিয়েছেন।
এখানে রাষ্ট্রের প্রশ্নও এসেছে। রাষ্ট্রের অস্বীকৃতি কোনও কোনও শিল্পীকে মহান করে, আবার স্বীকৃতিও কোনও কোনও শিল্পীকে এগিয়ে নিয়ে যায়। মনে হয় না, রাষ্ট্রের কাছে নভেরার কোনও প্রত্যাশা রয়েছে। একুশের পদকও তিনি নিয়েছেন খুব নিস্পৃহভঙ্গীতে, রাষ্ট্রের কাছে তাঁর চাওয়ার কিছু আছে বলে মনে হয় না। রাষ্ট্রের কাছ থেকে পুরস্কার, বাসস্থান অথবা দিনযাপনের ভাতাপ্রাপ্তির নিরিখে তাঁকে মূল্যায়ন এক অর্থে তাই তাঁকে অবমূল্যায়নের শামিল। তবে, দেশের পথিকৃৎ ও আধুনিক প্রথম ভাস্কর (আমি বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, এমনকি ভাস্কর্য বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরাও তাকে দেশের প্রথম নারী ভাস্কর হিসেব উল্লেখ করেন! আচ্ছা, নভেরার আগে বাংলাদেশে আধুনিক ভাস্কর্যের কাজ কে করেছে, কার কাজে নিজস্বতা রয়েছে, তা কেউ বলবেন কি?) নভেরার কাজগুলি জাদুঘরের একটি আলাদা কক্ষে সংরক্ষণ করা অবশ্যই প্রয়োজন। রাষ্ট্র ও সরকার সে উদ্যোগ না নিয়ে মারাত্মক এক অপরাধই করেছে, বলব আমি। এ নিয়ে কি একটি আন্দোলন হতে পারে না? জাদুঘরের সঙ্গে কোনও কোনও গুরুত্বপূর্ণ শিল্পীও জড়িত, তারাও কি চান যে নভেরার ওই কাজগুলি পড়ে থাকুক বাঁধনের ক্যামেরায় ধরা পড়তে থাকুক?
পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছিলেন এক আলোকচিত্র শিল্পী, ক্ষুধার্ত দুর্ভিক্ষতাড়িত এক শিশুর দিকে বুভুক্ষ হিংস্র পাখির এগিয়ে আসার ছবি তুলে। যতদূর শুনেছি, পরে ওই ফটোগ্রাফার আত্মহত্যা করেছিলেন। তিনি পরে অনুশোচনায় ভুগতেন, বলতেন, যতক্ষণ আমি ছবিটি তোলার জন্য অপেক্ষা করেছি, ততক্ষণ অপেক্ষা না করে পাখিটিকে তাড়িয়ে দিলেই শিশুটি রক্ষা পেতো। এই অনুশোচনাই তাঁকে এগিয়ে নিয়ে যায় আত্মহত্যার দিকে।
আমাদেরও মনে হয়, অপেক্ষা না করে, ওই কাজগুলি রক্ষার জন্যে তৎপর হওয়া দরকার। নতুবা একসময় অনুতপ্ত হয়ে হয়তো আত্মহত্যার পথই বেছে নিতে হবে।
রেজাউল করিম সুমন - ২৫ জুলাই ২০০৯ (৭:৪৮ পূর্বাহ্ণ)
ইমতিয়ার ভাই, আলোড়িত হলাম আপনার মন্তব্যটি পড়ে।
জেফ হ্যাসেল-এর সঙ্গে আমিও যোগাযোগ করেছিলাম, ২০০৫ সালের মে মাসে। সে-বছরেই প্রকাশিত তাঁর ওই বইয়ের কথা আর ই-মেইল ঠিকানা কোনো একটা ওয়েবপেইজ থেকেই জেনেছিলাম। তাঁর বইটিতে নিশ্চয়ই নভেরার শিক্ষাজীবন সম্বন্ধে এমন কিছু প্রামাণ্য তথ্য পাব যা ইতিপূর্বে আমরা পাইনি – এই আশায় নভেরার সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও শিক্ষাবর্ষ জানিয়ে হ্যাসেল-কে মেইল করেছিলাম। উত্তরে জানতে পারি যে, ‘নভেরা আহমেদ’ নামটির সঙ্গে আদৌ তাঁর পরিচয় নেই –
পরে আমেনা আহমেদ সম্পর্কে তাঁর বইয়ে কী লেখা আছে তা জানতে চাইলে ভদ্রলোক জানান,
সেই শিল্পবিদ্যালয়ের ১৯৪৩-৬০ পর্বের ছাত্র-শিক্ষকদের নিয়ে বই লেখার পরও ভদ্রলোক নভেরা আহমেদ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনবহিত থাকায় বিস্মিত হই। শেষমেশ তাঁকে জিজ্ঞেস করি, তিনি ক্যাম্বারওয়েল কলেজ অব আর্টস-এর (এটাই ওই শিল্পবিদ্যায়তনের বর্তমান নাম) শিক্ষক কি না; উত্তরে তিনি জানান :
হ্যাসেল-এর মাধ্যমে একটা ব্যাপারে অবশ্য নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল। আর সেটা হলো, জ্যাকব এপস্টাইন কখনোই ক্যাম্বারওয়েলে শিক্ষকতা করেননি। এই একটা ভুল ধারণা কী করে যেন চালু হয়ে গিয়েছিল যে, এপস্টাইন ক্যাম্বারওয়েলের শিক্ষক ছিলেন। হয়তো নভেরার প্রথম প্রদর্শনী উপলক্ষ্যে প্রকাশিত পুস্তিকায় এস. এম. আলীর লেখার এই বাক্যটিই এর আদি উৎস :
নভেরা উপন্যাসের প্রাসঙ্গিক অংশ (পৃ ৬১) :
সম্ভবত মেহবুব আহমেদই প্রথম এই ভ্রান্তি নিরসনে এগিয়ে আসেন।
২
ব্যাংকক-এর শিল্পাকর্ন ভার্সিটি-ও নভেরার ১৯৭০-এর ভাস্কর্য প্রদর্শনী সম্পর্কে আপনাকে কিছু জানাতে পারেনি জেনে অবাক লাগছে। মেহবুব আহমেদের লেখায় পড়েছিলাম ওই প্রদর্শনীর যৌথ আয়োজক ছিল ব্যাংকক আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ ও পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স্। সেখানকার আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ-ও কি কোনো তথ্য দিতে পারেনি? ব্যাংকক পোস্ট-এ নিশ্চয়ই নভেরার প্রদর্শনী নিয়ে সে-সময়ে প্রতিবেদন/রিভিউ বেরিয়েছিল। কিন্তু পত্রিকাটির অনলাইন আর্কাইভের সাহায্য নিতে গিয়ে আগেও দেখেছি, অত পুরোনো সংখ্যা সেখানে নেই। তবে পত্রিকার নিজস্ব আর্কাইভে একবার ঢুঁ মারা গেলে বেশ হতো। আর পত্রিকাটির অনলাইন ‘ফোরাম’ থেকে কোনো সাহায্য পাওয়া যেতে পারে কি?
৩
ইতালির যে-ভাস্করের স্টুডিয়োতে নভেরা কিছুকাল কাজ করেছিলেন, সেই ভেন্তুরিনো ভেন্তুরি (১৯১৮-২০০২) তো আর বেঁচে নেই। সে-দেশের একটি শিল্পবিদ্যায়তনে তাঁর সম্পর্কে জানার জন্য আমি ই-মেইল করেছিলাম; উত্তরে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ থেকে শিল্পশিক্ষার্থী পাবার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল! আপনি ইতালিতে খোঁজ-খবর চালিয়ে কী জানতে পেরেছিলেন, জানতে ইচ্ছে করছে।
আপনার এই মন্তব্য পড়ে তৈয়বা বেগম লিপিকে ফোন করি। জানতে পারি, নভেরার ভাস্কর্য দুটি তিনি দেখেছিলেন লাহোরের আল-হামরা আর্ট গ্যালারিতে। সালিমা হাশমি পরে তাঁকে জানিয়েছিলেন, ওই দুটি কাজ তাঁর বাবা কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজকে নভেরা উপহার দিয়েছিলেন।
৪
নভেরার আগে পূর্ববঙ্গে বা পূর্ব পাকিস্তানে কোনো আধুনিক ভাস্কর ছিলেন না। তাঁর সমকালে পশ্চিম পাকিস্তানেই-বা কারা ছিলেন? শিল্পী আমিনুল ইসলাম একবার কথাপ্রসঙ্গে ওজির জুবি নামে এক ভাস্করের কথা বলেছিলেন। পাকিস্তানের শিল্প-বিষয়ক পত্রিকা নুক্তা-য় প্রকাশিত একটি লেখায় সে-সময়কার আরো একজন পাকিস্তানি ভাস্করের নাম পাওয়া গেল – আফসার মাদাদ নাক্ভি। প্রবন্ধকারের মতে,
আর নভেরার স্বাতন্ত্র্য-চিহ্নিত ভাস্কর্যগুলোকে আমরা দীর্ঘ তিন যুগ চরম অবহেলায় অরক্ষিত ফেলে রেখেছিলাম (মনে পড়ে যাচ্ছে ‘ডোবার ব্যাং’-এর শৈশবের অভিজ্ঞতার কথা; মন্তব্য : ১৩), আর এখন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের অভ্যন্তরে নষ্ট হতে দেখছি! আপনার সঙ্গে নিশ্চয়ই সকলেই একমত হবেন যে, তাঁর ভাস্কর্যগুলো জাদুঘরের একটি আলাদা কক্ষে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। জাদুঘর কর্তৃপক্ষ ও সরকারের ঔদাসীন্য কীভাবে কাটানো যাবে? আমরা ওই ঘুম-কেড়ে-নেওয়া আলোকচিত্রের শিল্পীর মতো আত্মহননের পথ বেছে নিতে চাই না নিশ্চয়ই?
মোহাম্মদ মুনিম - ২১ জুলাই ২০০৯ (৯:৩৭ অপরাহ্ণ)
নভেরার প্যারিসের দোকানটির ঠিকানা : 2, rue Pierre le Grand 75008 Paris। গুগল থেকে ফোন নম্বর নিয়ে ফোন করলাম, কেউ ফোন ধরলেন না।
মোহাম্মদ মুনিম - ২৭ জুলাই ২০০৯ (২:৩৪ অপরাহ্ণ)
নভেরার দোকানে বেশ কয়েকবার ফোন করলাম। কেও ফোন ধরলেন না। প্যারিস এ রুশ বইয়ের বেশ কয়েকটি দোকান আছে। সবাই No English বলে ফোন রেখে দিলেন। আমাদের অফিসের এক মহিলা খানিকটা ফরাসী জ়ানেন। তাঁকে দিয়েও ফোন করালাম। এক ভদ্রলোক দৃশ্যত নভেরাকে চিনলেন, কিন্তু ফোন এ কোন তথ্য দিলেন না। বললেন তাকে চিঠি লিখতে, তিনি চিঠিতে নভেরা সম্পর্কে জানাবেন। নভেরার প্রতিবেশী কাফেতে email করলাম। কোন উত্তর পাইনি। এক ফরাসী তরুনীকে (নভেরা fan) facebook এ লিখেও কোন উত্তর পাওয়া গেলো না।
রেজাউল করিম সুমন - ১ আগস্ট ২০০৯ (১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ)
ধন্যবাদ, মুনিম। সরাসরি নভেরা আহমেদের খোঁজ না নিয়ে বরং গ্রেগোয়া-র সঙ্গেই যোগাযোগের চেষ্টা করা যেতে পারে। পরে তাঁর কাছ থেকে নভেরার খবর পাওয়া যাবে নিশ্চয়ই। নভেরা সম্পর্কে প্রথমেই খোঁজখবর করলে তাঁরা হয়তো আলাপে আগ্রহী না-ও হতে পারেন।
এই সুযোগে গ্রেগোয়া-র ফটোগ্রাফি সম্পর্কেও একটু বিশদে জানতে পারলে ভালো হতো।
স্নিগ্ধা - ৩১ জুলাই ২০০৯ (১২:৫৩ অপরাহ্ণ)
আমি ‘নভেরা’ উপন্যাসটি পড়িনি, ভাসা ভাসা ভাবে এই প্রতিভাবান শিল্পী সম্পর্কে অল্প কিছু জানা ছিলো। তথ্যবহুল এই পোস্টটা পড়ে তাই উপকার হলো খুব!
নভেরার তীব্র অভিমানের কারণটা কী ছিলো?
রেজাউল করিম সুমন - ১৪ আগস্ট ২০০৯ (১০:১৩ অপরাহ্ণ)
নভেরা আহমেদের অভিমানের কারণ সম্ভবত নিকটজনদের প্রতিকূল আচরণ।
বিনয়ভূষণ ধর - ৮ আগস্ট ২০০৯ (৬:০০ পূর্বাহ্ণ)
রেজাউল করিম সুমন’কে অনেক…অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি একটি সুন্দর অনুসন্ধানী লেখা আমাদের সামনে পেশ করার জন্যে। লেখাটি সুমন শুরু করেছিলো সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি বিষয় দিয়ে। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেলো লেখাটা আস্তে আস্তে বিভিন্ন জনের তথ্যবহুল মন্তব্যে অনেক সমৃদ্ধ হয়ে উঠলো যা আমাদের মতো সাধারন পাঠকের চিন্তার খোরাক হয়েছে। সামনে লেখাটি থেকে আরও অনেককিছু জানতে পারবো আমরা এই আশা রাখছি।।
রেজাউল করিম সুমন - ১৪ আগস্ট ২০০৯ (১০:০৭ অপরাহ্ণ)
গতকাল প্যারিস থেকে টেলিফোনে আনা ইসলাম জানালেন (তিনি শিল্পী শাহাবুদ্দিনকে ফোন করেছিলেন, এই সুযোগে আমি তাঁকে নভেরা আহমেদের কথা জিজ্ঞেস করি) নভেরা সুস্থ আছেন। বয়স-জনিত সমস্যা আর হাঁপানি বাদ দিলে শারীরিকভাবে তিনি সুস্থ ও কর্মক্ষম!
রায়হান রশিদ - ১৪ আগস্ট ২০০৯ (১০:৩২ অপরাহ্ণ)
একটা সাক্ষাৎকার কি নেয়া সম্ভব কোন ভাবে?
রেজাউল করিম সুমন - ১৫ আগস্ট ২০০৯ (১:২০ পূর্বাহ্ণ)
কার সাক্ষাৎকার?
রায়হান রশিদ - ১৫ আগস্ট ২০০৯ (১:২৪ পূর্বাহ্ণ)
নভেরা আহমেদ এর।
সাদা মন - ১৫ আগস্ট ২০০৯ (৪:৩৭ অপরাহ্ণ)
আপনার লিখা আর মন্তব্যগুলো সেই প্রথম থেকেই পড়ছি। বেশ অনেকদিন ধরেই পড়ছি বললেও ভূল বলা হবে না। আসলে বছর সাতেক আগে, ‘নভেরা’ উপন্যাসটি পড়ার পরপরই মূলত উনার প্রতি একটা আগ্রহ তৈরী হয়। এই লিখাটি সেই নভেরাকে ঘিরে সেই পুরোনো ভালোলাগা আর তাঁর প্রতি জেগে উঠা শ্রদ্ধাবোধকে আবার জাগিয়ে তুলেছে। আজকে জেনে খুব আনন্দ লাগছে যে, উনি বেঁচে আছেন, ভালো আছেন।
জাতি হিসাবে, উনাকে তো ওনার প্রাপ্য সন্মান কখনও আমরা দিতে পারিনি, তাই অন্তত উনি যেভাবে আছেন, যেভাবে থাকতে পছন্দ করেন সেই ভাবেই উনাকে থাকতে দেয়া উচিত বলে মনে করি। অন্তত আশা করি, উনি ভালো থাকুন, শান্তিতে থাকুন।
লেখককে অনেক ধন্যবাদ তথ্যবহুল, গবেষণাধর্মী পোষ্টের জন্য।
রেজাউল করিম সুমন - ২৩ আগস্ট ২০০৯ (১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ)
ধন্যবাদ আপনার মতামতের জন্য।
বিনয়ভূষণ ধর - ১৫ আগস্ট ২০০৯ (৫:১২ পূর্বাহ্ণ)
সুমন,
তোমাকে অনেক…অনেক ধন্যবাদ এরকম একটা তথ্য জানানোর জন্যে।
syed miraz momin - ২২ আগস্ট ২০০৯ (১০:০৪ পূর্বাহ্ণ)
ami Novera Ahmed er akjon fan. i want to contact with her. can u give me her contact no/email/address?
রেজাউল করিম সুমন - ২৩ আগস্ট ২০০৯ (১২:২৩ অপরাহ্ণ)
দুঃখিত, নভেরা আহমেদের সঙ্গে চিঠি বা ই-মেইলে যোগাযোগ করার ঠিকানা আমার জানা নেই। তাঁদের অ্যান্টিক শপের নম্বরে বেশ ক’বার ফোন করেও আমাদের বন্ধু মুনিম কোনো সাড়া পায়নি।
তাঁর ভাস্কর্য সম্পর্কে আপনার মতামত জানতে পারলে ভালো লাগত।
রেজাউল করিম সুমন - ২৩ আগস্ট ২০০৯ (১:১৫ অপরাহ্ণ)
১
আজ সকালেই ঢাকা থেকে নীরু শামসুন্নাহার ফোন করে জানালেন, নভেরার ছয়টি ভাস্কর্যকে (যেগুলো দীর্ঘদিন ধরে পড়ে ছিল জাদুঘরের ভিতরে খোলা জায়গায়, আবর্জনার স্তূপের পাশে!) ফিরিয়ে আনা হয়েছে আগের অবস্থানে – জাতীয় জাদুঘরের সামনের লন-এ। রিস্টোরেশনের কাজ শেষ হয়নি। পরে কখনো একটি একটি করে ভাস্কর্যকে সরিয়ে নিয়ে সে-কাজ সমাধা করা হতে পারে।
সিমেন্টে ফাটল/চিড় ধরা অবস্থাতেই ভাস্কর্যগুলো আবার পুরোনো অবস্থানে ফিরে এল। ভিতরে নোংরা পরিবেশে অযত্নে পড়ে থাকার চেয়ে এ প্রত্যাবর্তন নিশ্চয়ই শ্রেয়। কিন্তু রিস্টোরেশনের জন্যই এতদিন ফেলে রেখেও কেন সে-কাজ জরুরি ভিত্তিতেই শেষ করা হলো না, সে-ও এক রহস্য। খোঁজ গিয়ে জানা গেল, একজন সাংবাদিক নভেরার পড়ে-থাকা ভাস্কর্যগুলো নিয়ে খোঁজখবর করার পর সেগুলোকে সামনের লন-এ পুনঃস্থাপন করা হয়।
আর অনেকটা ভাঙা অবস্থায় নভেরার যে-ভাস্কর্যটি জাদুঘরের ভিতরের লনে এতদিন স্থাপিত ছিল, যার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে দীর্ঘদিনের ঝড়-জল, সেটিকে অবশেষে রিস্টোরেশনের জন্য সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
২
@ রায়হান
পঞ্চাশের দশকের শেষদিকে, ষাটের দশকে, ১৯৭০-এ বা ’৭৩-এ, কিংবা এর পরেও, নভেরা আহমেদের কোনো সাক্ষাৎকার কখনো প্রকাশিত হয়েছে কি না আমাদের জানা নেই। তবে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের বিবরণ আমরা পেয়েছি ইকতিয়ার চৌধুরী ও আনা ইসলামের লেখায়। সম্প্রতি শিল্পী শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে কথা বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, নিজের সম্পর্কে আলোচনায় নভেরার আগ্রহ নেই। সেই সঙ্গে আরো জানা গেল, দীর্ঘদিন নিয়মিত শিল্প-সৃজনের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তিনি শিল্পকর্ম প্রদর্শনে অনাগ্রহী। গ্রেগোয়া ও অন্য শুভানুধ্যায়ীরা প্রদর্শনী আয়োজনে উদ্যোগী হলেও নভেরার দিক থেকে ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। একই কথা লিখেছেন আনা ইসলামও। সবকিছু জানা সত্ত্বেও আমাদের প্রিয় ভাস্করের একটি সাক্ষাৎকার নেয়া আদৌ সম্ভব কি না সে-ব্যাপারে আনা ইসলামের সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারি। শিগগিরই তিনি প্যারিস থেকে ঢাকায় আসবেন।
৩
একটা বিষয়ে সম্ভবত কেউই দ্বিমত পোষণ করবেন না যে, নভেরার স্বেচ্ছানির্বাসনের কারণ অনুসন্ধানের চেয়েও জরুরি কাজ হলো : দেশে ও দেশের বাইরে তাঁর ভাস্কর্য ও চিত্রকর্ম কোথায় কোথায় সংরক্ষিত (কিংবা অরক্ষিত অবস্থায়) আছে তা চিহ্নিত করা, সে-সবের ছবি তুলে রাখা ও সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করা এবং যে-কোনো মূল্যে সেগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করা। নভেরার শিল্পকর্ম নিয়ে সত্যিকার অর্থে কোনো গবেষণা এখনো পর্যন্ত হয়নি। প্রয়োজনীয় সব তথ্য-উপাত্তও আমাদের হাতে নেই।
রেজাউল করিম সুমন - ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৯:৪৯ অপরাহ্ণ)
আনা ইসলাম প্যারিসে ফিরে যাবার আগে তাঁর সঙ্গে বার কয়েক ফোনে আলাপ হয়েছে। নভেরা আহমেদের একটা সাক্ষাৎকার নেয়া যায় কি না সে-প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানিয়েছেন, একটা বড়ো লেখা তিনি তৈরি করছেন, নভেরা সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্যই সে-লেখায় পাওয়া যাবে।
বিনয়ভূষণ ধর - ২৫ আগস্ট ২০০৯ (৮:৪৭ পূর্বাহ্ণ)
সুমন!
তোমার মন্তব্যের এই অংশের প্রতিটি কথা একেবারেই সত্যি।
নভেরা আহ্মেদ-কে তাঁর নিজের মতো করেই থাকতে দেয়া উচিত।
তাঁর কাজ নিয়ে আমাদের যাবতীয় চর্চা হওয়া উচিত, স্বেচ্ছানির্বাসনের কারণ অনুসন্ধান বা ব্যাক্তিগত বিষয় অনুসন্ধান নয়।
এই পর্যন্ত তোমার এই লেখাখানার মাধ্যমে নভেরা আহ্মেদ সম্পর্কে যা তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে তার সাথে আরও কিছু কাজ যোগ করলে আমার মনে হয় “নির্মাণ”-এর জন্যে একটি চমৎকার ‘নভেরা সংখ্যা’ হয়ে যেতে পারে।
পাঠক! কি বলেন আপনারা?
রেজাউল করিম সুমন - ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৯:৪৬ অপরাহ্ণ)
ধন্যবাদ, বিনয়। এরকম একটা সম্ভাবনার কথা দু-একবার যে আমা(দে)র মনেও উঁকিঝুকি দেয়নি তা নয়।
এই পোস্টের নানা মন্তব্য থেকে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য আমরা পেয়েছি। তাই বলে এ লেখাই নির্মাণ-এর সম্ভাব্য ‘নভেরা সংখ্যা’য় স্থান পেতে পারে না। একটা সম্ভাব্য লেখকতালিকা মনে মনে তৈরি করেছি। অন্য বন্ধুদের এখনো জানাইনি। তার আগে একটা সিন্দাবাদের ভূতকে আমার কাঁধ থেকে নামানো দরকার। ওটাকে সঙ্গে রেখে কোনো নতুন কোনো কাজেই হাত দেয়া সম্ভব নয়। একই কারণে আপাতত স্থগিত আছে ওয়েবজিনের কাজও।
Globe Trotting - ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৯:৫৬ অপরাহ্ণ)
One Saturday Morning I went to investigate the “store” at 2 Rue Pierre le Grand, Paris. The store is a small art gallery about 10-12 minutes walk from Arch Du Triumph. Half of their window display is dedicated to “sculptures by NOVERA”. I have seen at least nine of her works (5 small, 2 medium and 2 life size) displayed there. Unfortunately the shop was closed, and there was no phone number to be found anywhere.
মুয়িন পার্ভেজ - ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (১:০৪ পূর্বাহ্ণ)
খুবই সাড়া-জাগানো এ-সংবাদের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। মোহাম্মদ মুনিম ঠিক এই ঠিকানারই খোঁজ দিয়েছিলেন ২১ জুলাই ২০০৯ তারিখে (১৮-সংখ্যক মন্তব্য), গুগলসমুদ্র মন্থন ক’রে। তিনি বলেছিলেন :
আপনি নিজেই যখন দোকানটি আবিষ্কার করতে পেরেছেন, আশা করছি, শিগগিরই শিল্পী নভেরার সঙ্গেও আপনার সাক্ষাৎ হয়ে যেতে পারে। সেই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় রইলাম।
নভেরার যে-ক’টি শিল্পকর্ম আপনি দেখেছেন, সেগুলোর ছবি কি সংগ্রহ করা যায়? এবং দোকানটিরও কোনো ছবি? ছবিগুলো এ-লেখায় নিশ্চয়ই ভিন্ন এক মাত্রা যোগ করবে।
মোহাম্মদ মুনিম - ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৮:৫২ পূর্বাহ্ণ)
আমি ফোন নম্বর গুগল থেকেই পেয়েছিলাম। সেটা পাবলিক ইনফরমেশন, শেয়ার করাই যায়। কিন্তু পাবলিক ফোরামে একা থাকতে চান এমন কারো ফোন নম্বর দিয়ে দেয়াটা ঠিক ভব্যতার পরিচয় নয়। আমার নিজেরও ফোন করাটা উচিত হয়নি। তবে লোভ সামলাতে পারিনি। ফোন অবশ্য কেউ ধরেননি। সব দেখেশুনে মনে হচ্ছে দোকানটি সম্ভবত আর চালু নেই।
Globe Trotting - ১ মার্চ ২০১০ (৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ)
I took several pictures of her sculptures through the glass window. How do I post them here without linking it to another web page?
রেজাউল করিম সুমন - ১ মার্চ ২০১০ (২:৫৯ অপরাহ্ণ)
@ Globe Trotting
আন্তরিক ধন্যবাদ আপনাকে।
ঠিকই ধরেছেন, মন্তব্যের ঘরে ছবি সংযোজনের ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। আপনার বক্তব্য/ক্যাপশন ইত্যাদি সহ ছবিগুলো মডারেশন টিমের (muktangon [dot] moderators @ gmail [dot] com) বরবারে পাঠিয়ে দিলে ভালো হয়। আপনার সচিত্র মন্তব্যটি এখানে প্রকাশিত হলে আমরা সকলেই উপকৃত হব।
মোহাম্মদ মুনিম - ১ মার্চ ২০১০ (৯:৫০ অপরাহ্ণ)
নভেরার দোকান এবং নভেরা সম্পর্কে জানতে পারেন এমন কিছু ফোন নম্বর মুক্তাঙ্গন এডমিনকে জানিয়ে দিলাম। আগ্রহীগন এডমিনের সাথে যোগাযোগ করে তাঁর ফোন নম্বরের জন্য অনুরোধ করতে পারেন। তবে নভেরার প্রাইভেসীর প্রতি সম্মান দেখাতে অনুরোধ রইলো।
Globe Trotting - ২ মার্চ ২০১০ (১০:০৮ পূর্বাহ্ণ)
Here are some photos of the window display of Novera’s sculptures.
If you have some questions please let me know. If I have some time this week I will stop by the art gallery in the afternoon and try to see if anybody can answer my question.
Its the same store, it just doesn’t carry books any more, and doesn’t have a name.
ছবি : ১
ছবি : ২
ছবি : ৩
ছবি : ৪
ছবি : ৫
ছবি : ৬
মুয়িন পার্ভেজ - ২ মার্চ ২০১০ (৯:৪৬ অপরাহ্ণ)
ছবিগুলোর জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। ভবিষ্যতেও আপনি প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সহায়তা করবেন, আশা করি। ষষ্ঠ ছবিটি দেখে মনে হল বাইরে থেকে তোলা — দোকানটি কি বন্ধই থাকে সারাবেলা? নভেরার মতোই নির্লিপ্ত যেন তাঁর শিল্পকর্ম। সত্যি, আরও কৌতূহল জেগে উঠছে এ-ছবিগুলো দেখে।
বিনয়ভূষণ ধর - ৩ মার্চ ২০১০ (১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ)
@Globe Trotting!
আপনাকে কি বলে যে ধন্যবাদ জানাবো! অসাধারন একটি কাজ করেছেন আপনি আমাদের মতো ‘নভেরা’ ভক্তদের জন্যে। আশা করি সামনে আপনার কাছ থেকে আমরা ‘নভেরা’ বিষয়ক আরো অনেক তথ্য পাবো। সে অপেক্ষাতে আমরা রইলাম।
@রেজাউল করিম সুমন!
আমার মনে হয় নির্মাণের নভেরা সংখ্যার জন্যে যথেষ্ট পরিমানে তথ্য পাওয়া গেছে।
রেজাউল করিম সুমন - ১৮ মার্চ ২০১০ (৮:২৪ অপরাহ্ণ)
গ্লোব ট্রটিং-এর পাঠানো ছবিগুলো এককথায় অসামান্য সংযোজন!
বাংলাদেশে বসেই দেখতে পাচ্ছি, গ্রেগোয়া-র দোকানের নামফলক থেকে Librairie de Sialsky কথাটি মুছে দেওয়া হয়েছে। রুশ-সংস্কৃতিপ্রেমীদের প্রিয় এই ‘গ্রন্থবিপণি’তে এখন আর গোগল, তল্স্তোয় বা দস্তইয়েফ্স্কির রচনাবলির পুরোনো সংস্করণ, রুশদেশীয় আইকন, উনিশ-শতকীয় সামোভার, রুশি পুতুল, হার্মিটেজ মিউজিয়ামের চিত্রসংগ্রহের প্রতিলিপি-সংবলিত বই — এসব কিছু পাওয়া যাবে না। শার্শি দিয়ে বাইরে থেকেই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, ভিতরে পরিপাটি সাজানো আছে নভেরা আহমেদের বেশ কটি ভাস্কর্য এবং সব কটি প্রদর্শনীর ক্যাটালগ (ঢাকা ১৯৬০, ব্যাংকক ১৯৭০, প্যারিস ১৯৭৩)! দেয়ালে টাঙানো পেইন্টিংগুলো কি নভেরারই আঁকা? (তাঁর তৃতীয় একক প্রদর্শনীতে পেইন্টিং-ও ছিল, ক্যাটালগের প্রচ্ছদেই তার উল্লেখ আছে।)
কবে নাগাদ বন্ধ হয়ে গেল Librairie de Sialsky? অশীতিপর গ্রেগোয়া কি বার্ধক্যজনিত কারণে ব্যাবসা গুটিয়ে নিলেন? যে-নভেরা ১৯৭৩ সালের পরে আর কোনো প্রদর্শনী করেননি, জনশ্রুতি অনুযায়ী আত্ম-সংবৃত থাকতেই ভালোবাসেন, তাঁর প্রদর্শনীর ক্যাটালগ আর শিল্পকর্ম এখন প্রদর্শিত হচ্ছে তাঁর নিজেরই বিপণিতে! এমনও কি হতে পারে যে এই কাজগুলো বিক্রি করে ফেলার উদ্দেশ্যেই সাজিয়ে রাখা হয়েছে এভাবে?
গ্লোব ট্রটিং গত মাসের এক শনিবার সকালে গিয়ে (এবং পরে গিয়েও) ‘আর্ট গ্যালারি’টি বন্ধ পেয়েছেন। ১৯৯৬ সালের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, সে-সময়ে Librairie de Sialsky সোমবারে বন্ধ থাকত, সপ্তাহের অন্য দিনগুলোয় খোলা থাকত নির্দিষ্ট সময়ে — বুধ বৃহস্পতি শুক্র শনি : সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা ও দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৭.৩০, রবিবারে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১.৩০, আর মঙ্গলবারে বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭.৩০ পর্যন্ত। এখন কি ‘আর্ট গ্যালারি’টি আদৌ খোলা থাকে না? (সত্যিই কি এটা আর্ট গ্যালারি?) আশেপাশের কারো কাছ থেকেও কি কোনো খবর পাওয়া যাবে না? বিশেষত ৬ পিয়েরে-ল্য-গ্রঁ স্ট্রিটের লোকজনের হয়তো জানা থাকার কথা গ্রেগোয়াদের খবর।
গ্রেগোয়া দ্য ব্রুন — নভেরার দীর্ঘদিনের বন্ধু ও জীবনসঙ্গী, এই ভদ্রলোক সম্পর্কে আমরা ভালো করে জানি না। বাস্তুশিল্পী বা স্থপতি, আলোকচিত্রী — এই দু-তিনটি শব্দ কি একজন মানুষকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট?
অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম গ্লোব ট্রটিং-এর পরবর্তী ‘আবিষ্কার’-এর জন্য।
মোহাম্মদ মুনিম - ১৯ মার্চ ২০১০ (২:৫০ পূর্বাহ্ণ)
নভেরার প্রতিবেশী ক্যাফেটিতে ইমেইল করেছিলাম (Punta Ala Caffé 10 Rue Pierre le Grand ফোনঃ 01 47 63 41 99), ফোনও করেছিলাম। কিন্তু ইমেইলের জবাব পাইনি। ফোন ধরেই No English বলে রেখে দিলো। আমি প্যারিসের রুশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে (নভেরার দোকানটিতে রুশ বই বিক্রি হত) ফোন করেও কোন সুবিধা করতে পারিনি। সেই কেন্দ্রের ভদ্রমহিলা ইংরেজী জানেন বটে, তবে আমি কি বিষয়ে জানতে চেয়েছি তা কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। আমাদের অফিসের এক মহিলা খানিকটা ফরাসি জানেন। ত্তিনিও বিভিন্ন রুশ বইয়ের দোকানে ফোন করে কোন তথ্য বের করতে পারেন নি। এক দোকানদার নভেরাকে চিনলেন বলে মনে হল, তিনি আবার ফোনে কোন তথ্য দিবেন না। তাঁকে চিঠি লিখতে হবে। গ্লোব ট্রটার ক্যাফেটিতে গিয়ে খোঁজ নিতে পারেন। আর একটা তথ্যের উৎস হতে পারে মোড়ের গির্জাটি (Cathédrale Saint-Alexandre-Nevski de Paris, 12 Rue Daru – 01 42 27 37 34)।
মোহাম্মদ মুনিম - ২ মার্চ ২০১০ (৭:০৮ অপরাহ্ণ)
নভেরার একটি সাম্প্রতিক ছবি কি যুক্ত করা যায়?
নীড় সন্ধানী - ৪ মার্চ ২০১০ (১:৪৫ অপরাহ্ণ)
এই পোষ্টের আলোচনা আর ছবিগুলো দিয়ে একটা সমৃদ্ধ নভেরা সংখ্যা হয়ে যাবে। সাম্প্রতিক ছবি তোলার কাজটা করতে পারবে কি Globe Trotting?
মলিকিউল - ৫ মার্চ ২০১০ (৮:২৭ অপরাহ্ণ)
রেজিঃ করার পর আর লগিন করা হ্য়নি অনেকদিন, শুধু অফলাইনে পোষ্টগুলো পড়তাম। আজ আর লগিন না করে পারলাম না……
নভেরা আহমদ সম্বন্ধে এতদিন যা জানতাম তার চেয়ে অনেক বেশি জানলাম শুধু এই পোষ্ট আর কমেন্ট পড়েই…..
অসাধারন পোষ্ট, যারা কন্ট্রিবিউট করেছেন তাদের সবাইকে অনেক ধন্যবাদ…।
সাদা মন - ৬ মার্চ ২০১০ (১১:৪৯ অপরাহ্ণ)
@Globe Trotting আপনাকে ধন্যবাদ জানাই নভেরার বর্তমান সময়ের কিছু শিল্পকর্মের সাথে আমাদের পরিচয় করে দেওয়ার জন্য। অনেকেই দেখছি উনার সাম্প্রতিক ছবির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এ ব্যাপারে আমার কিছু ব্যক্তিগত মতামত আছে। আমার কাছে মনে হয় উনি ব্যক্তিগত জীবনে কার সাথে বর্তমানে ঘর করছেন, এখন দেখতে কেমন হয়েছেন বা কতটুকু বুড়িয়ে গেছেন শিল্পের জন্য এটা কোন জরুরী কোনো বিষয় না। যেটা আমার কাছে মুখ্য মনে হয়, উঁনার বর্তমান শিল্পকর্মের বিষয়বস্ত। সময়ের পরিবর্তন , অনেক বছর আগে ছেড়ে আসা জন্মভূমির প্রতি অভিমান বা দীর্ঘ প্রবাসজীবনের কোনো ছাপ কি পড়েছে উঁনার বতর্মান কাজগুলোতে? নির্মাণের নভেরা সংখ্যায় কোনো শিল্পবোদ্ধার কাছ থেকে নভেরার শিল্পকর্মের তুলনামূলক আলোচনার উপর একটা লিখা আশা করছি।
বিনয়ভূষণ ধর - ৮ মার্চ ২০১০ (১২:০২ অপরাহ্ণ)
আজ ‘কালের কন্ঠ’ পত্রিকা তাদের নিয়মিত সাপ্তাহিক আয়োজন ‘জয়িতা’-য় “আন্তর্জাতিক নারী দিবস” উপলক্ষে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে। সেখানে ভাস্কর নভেরা আহ্মেদ সম্পর্কে চমৎকার কিছু তথ্য পাওয়া গেছে…
emon - ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ)
Golam murshid {ashar solone vuli, modhur khoje etc} er moto kew ki egiye ashben NOVERA ke amader kase poripurno tule dhorte..
রেজাউল করিম সুমন - ১০ অক্টোবর ২০১১ (৭:৩৬ অপরাহ্ণ)
@ ইমন
নভেরা আহমেদের জীবন নিয়ে কেউ গবেষণা করবেন কি না জানি না, তবে তাঁর শিল্পকর্ম নিয়ে বিদ্যায়তনিক স্তরেও গবেষণা শুরু হয়েছে। আমাদের দেশের বর্তমান প্রজন্মের সুপরিচিত ভাস্কর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ময়নুল ইসলাম পল গবেষণা করছেন বাংলাদেশের ভাস্কর্য (১৯৫৮-২০০৮) নিয়ে; তাঁর অভিসন্দর্ভে নিশ্চয়ই আমাদের পথিকৃৎ-ভাস্কর নভেরার ভাস্কর্যের পূর্ণতর মূল্যায়ন করবেন তিনি।
মাসরুরা ফেরদৌস - ২৮ আগস্ট ২০১১ (১:৩২ অপরাহ্ণ)
সম্প্রতি হাসনাত আবদুল হাই এর “নভেরা” পড়ে আগ্রহবশত গুগলে সার্চ দিয়ে এই ব্লগটির খোঁজ পাই। বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক ভাস্কর নভেরা আহমেদ সন্মন্ধে অনেক অজানা তথ্য জানার সুযোগ হলো। রেজাউল করিম সুমনকে ধন্যবাদ।
উপন্যাসের নভেরার সাথে বাস্তবের অনেক অসামঞ্জস্য থাকলেও তাতে লেখককে প্রশ্নবিদ্ধ করা বোধ করি সমীচীন হবে না। কারন “নভেরা” একটি জীবনভিত্তিক উপন্যাস – জীবনী নয়।
কিন্তু কেবলমাত্র শিল্পীর ডিগনিটি রক্ষার জন্য মামাতো ভাই রাশেদ নিজাম নভেরার আর্থিক দৈন্য নিজের চোখে দেখেও পরে আর যোগাযোগ করেননি – এ ব্যাপারটি আমার কাছে কিছুটা ঘোলাটে মনে হয়েছে। আর গ্রেগোয়া ই কি পোলানস্কি? এই নাম বিভ্রাট সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য কি? নভেরার বোন কুসুম হক বা অন্য কোন বোনের হদিস কি কেউই জানেন না যার মাধ্যমে নভেরার সাথে পরোক্ষভাবে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়? নভেরা এখন কোথায় আছেন তা কেউ জেনে থাকলে জানাবেন অথবা কিভাবে জানা যায় তার রেফারেন্স দিলে খুব খুশি হবো।
রেজাউল করিম সুমন - ১০ অক্টোবর ২০১১ (৯:৩০ অপরাহ্ণ)
@ মাসরুরা ফেরদৌস
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। আপনি লিখেছেন,
নভেরা উপন্যাসের দু-একটা সংলাপের (কাল্পনিক অবশ্যই) তথ্যগত অসংগতির কথা উল্লেখ করেছিলাম এই পোস্টের ১৬.১ নম্বর মন্তব্যের তৃতীয় অংশে। যে-কালপর্ব নিয়ে হাসনাত আবদুল হাই উপন্যাস লিখেছেন সে-সময়কার শিল্পচর্চা নিয়ে যথেষ্ট খোঁজখবর তিনি নেননি, হয়তো এরকম একটা ইঙ্গিতই তখন করতে চেয়েছিলাম। প্রধানত শোনা-কথার ওপরই বেশি নির্ভর করলে এ জাতীয় বিচ্যুতি এড়ানো কঠিন।
জীবিত ব্যক্তিকে নিয়ে লেখা জীবন-ভিত্তিক উপন্যাসেও অধিকাংশ পাঠক, বিশেষত তাঁর নিকটজনরা, যথাযথ তথ্যই প্রত্যাশা করেন, বিচিত্রা-য় প্রকাশিত নভেরা আহমেদের বড়ো বোন কুমুম হকের দীর্ঘ চিঠিই তার প্রমাণ। বহুকাল আগে প্রয়াত শিল্পী মিকেলাঞ্জেলো (১৪৭৫–১৫৬৪), ভ্যান গগ (১৮৫৩–১৮৯০) প্রমুখের জীবন অবলম্বনে উপন্যাস লিখতে গিয়ে চরিত্র সৃজনের ক্ষেত্রে ঔপন্যাসিক আর্ভিং স্টোন সংগত কারণেই অনেক বেশি স্বাধীনতা উপভোগ করেছেন। এসব বিশ্ববিশ্রুত শিল্পীর জীবনীগ্রন্থ একটা/দুটো নয়, বহু সংখ্যক; অথচ এখনো-জীবিত নভেরা সম্পর্কে আমরা কতটুকুই-বা জানি! তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে যাচাই করে দেখার সুযোগ না থাকায় উপন্যাসের নভেরাকেই কেউ বাস্তবের নভেরা মনে করতে পারেন; আবার নভেরার আত্মজনেরা লেখককে এই মর্মে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারেন যে, উপন্যাসে তথ্যচ্যুতি ঘটেছে। এই ‘দুই নভেরা’র দ্বন্দ্বের নিরাকরণ কী করে হবে, জানি না! কিন্তু, অস্বীকার করার উপায় নেই যে, হাসনাত আবদুল হাইয়ের নভেরা ‘একটি জীবনভিত্তিক উপন্যাস – জীবনী নয়’। আর সে-কারণেই ‘উপন্যাসের নভেরার সাথে বাস্তবের অনেক অসামঞ্জস্য থাকলেও’ লেখকককে প্রশ্নবিদ্ধ করার পক্ষপাতী নন আপনি। আসলে এরকম খুঁটিনাটি অসামঞ্জস্যের চেয়েও এ বইয়ের বড়ো খামতি লেখকের সীমিত কল্পনাপ্রতিভা। উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম উপন্যাসে নভেরার ইসমত চুগতাই ও শহিদ লতিফের সান্নিধ্যে কাটানো কয়েকটি দিনের বিবরণ; এর পুরোটাই কিন্তু লেখকের কল্পনাপ্রসূত, অথচ তা সত্ত্বেও এবং/অথবা সে-কারণেই উপভোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য।
গ্রেগোয়া কেন উপন্যাসে পোলান্স্কি নাম ধারণ করলেন তার সদুত্তর লেখককে জিজ্ঞেস করেও পাইনি। তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘গ্রেগোয়া ধরে নিয়েই পড়ো।’ গত বছরের (২০১০) ৮ মার্চ হঠাৎই তাঁকে পেয়ে গিয়েছিলাম একটি অনুষ্ঠানে, জাতীয় জাদুঘরে। অনুষ্ঠানের পর কিছুক্ষণ কথা হয়েছিল তাঁর উপন্যাস ও জাদুঘরে নভেরার ভাস্কর্যের বেহাল দশা নিয়ে।
যতদূর জানা গেছে নভেরার ভাই-বোনদের মধ্যে কেউই আর বেঁচে নেই। ঢাকায় থাকেন তাঁর ভাইয়ের স্ত্রী, যাঁর বিরুদ্ধে কুমুম হক তাঁর পূর্বোক্ত চিঠিতে মিথ্যাচারের অভিযোগ এনেছিলেন।
নভেরার সঙ্গে আমাদের পরোক্ষ যোগাযোগের মাধ্যম হতে পারতেন আনা ইসলাম। প্রসঙ্গ উঠল বলেই বলছি : আমি অনেক অনুনয়বিনয় করেও বিদ্যায়তনিক গবেষণার প্রয়োজনে আনা-র নিজের সংগ্রহ থেকে নভেরার দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রদর্শনীর ক্যাটালগের প্রতিলিপি পাইনি। আমার আবেদনের কথা তিনি না কি নভেরার কাছে পেড়েছিলেন আর নভেরাই না কি বলে দিয়েছিলেন : ক্যাটালগ দেয়া যাবে না! অথচ শিল্পীর সব ক’টি ক্যাটালগই প্যারিসের মতো জায়গায় লোকজনের আসা-যাওয়ার পথের ধারে নিত্য প্রদর্শিত হচ্ছে বেশ কিছু সংখ্যক শিল্পকর্ম সমেত! যাই হোক, আমার মতোই আরো কেউ কেউ ব্যর্থ হলেও আপনি হয়তো আনা ইসলামের মাধ্যমেই নভেরার সঙ্গে পরোক্ষ যোগাযোগ স্থাপনে সফল হবেন। সে-কামনাই করি।
মানবেন্দ্র ঘোষ - ১ অক্টোবর ২০১১ (৩:০৯ পূর্বাহ্ণ)
রেজাউল করিম সুমন,
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই আপনার এই মহত উদ্যগ এর জন্য।
ধন্যবাদ জানাই মন্তব্য যারা করেসেন। আমি ভাস্কর্যের শাত্র, এই ব্লগ থেকে অনেক অজানা তথ্য জানা হল। ভাস্কয্যের শিক্কারথিরা
মনে প্রানে বিশবাস করে থাকে, অগ্রজ ভাস্কর নভেরা আহমেদকে।
কিন্তু কিসের সাথ্রে বাংলাদেশ তাকে ভুলে যেতে শিখিএসে। আমাদের আর কবে লজ্জা হবে? (বাংলা তাইপ এ সমস্যা)
রেজাউল করিম সুমন - ১০ অক্টোবর ২০১১ (৯:৫৪ অপরাহ্ণ)
@ মানবেন্দ্র ঘোষ
ধন্যবাদ। আমরা সবাই মিলে (এবং বিভিন্ন মহল থেকে) যদি নভেরা আহমেদের ভাস্কর্যগুলোকে যথাযথভাবে সংরক্ষণের দাবি তুলতে পারি (এবং সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে যদি জাতীয় জাদুঘর ও সংশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের বোধোদয় হয়) তাহলে সেটাই হবে সত্যিকারের একটি মহৎ উদ্যোগ।
রেজাউল করিম সুমন - ২৭ নভেম্বর ২০১১ (২:৫৮ পূর্বাহ্ণ)
১
একটা ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। Librairie de Sialsky-তে রুশ বইপত্র ও রকমারি সামগ্রী আর বিক্রি হয় না, এখন এটা পুরোদস্তুর আর্ট গ্যালারি। কোনো কোনো ওয়েবসাইটে একে Galerie Sialsky (ইংরেজিতে Gallery Sialsky) নামেও উল্লেখ করা হয়েছে। আর এই গ্যালারি যে বন্ধ হয়ে যায়নি, তার প্রমাণ – ক্যাথিড্রাল অব সেন্ট আলেক্সান্দ্র্ ন্যেফ্স্কি-র ১৫০ বছর পূর্তিতে প্যারিসে বসবাসরত ২৮ জন রুশ শিল্পীর তিন ডজনেরও বেশি সংখ্যক ছবি নিয়ে একটি প্রদর্শনী অতি সম্প্রতি (১৭—২৪ নভেম্বর ২০১১) আয়োজিত হয়েছিল সেখানে; ফ্রান্সে প্রবাসী/অভিবাসী রুশীদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় ঐতিহ্যবাহী গির্জাটির (ও এর ফ্রেস্কোগুলোর) সংস্কারকর্মের জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে প্রদর্শনী শেষে সেইসব ছবি নিলামে বিক্রি করা হয়। অবশ্য কেবল তহবিল গঠনই নয়, এই প্রদর্শনী ও নিলামের আরেকটি লক্ষ্য ছিল পাশ্চাত্যে রুশ-বংশোদ্ভূত শিল্পীদের আরো পরিচিত করে তোলা।
Librairie de Sialsky-তে আয়োজিত এই সাম্প্রতিক প্রদর্শনীর খবর কয়েকদিন আগে জানিয়েছেন আমার বন্ধু মনির মৃত্তিক । Google Earth-এর মাধ্যমে অনুসন্ধান চালিয়ে গ্যালারির অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রথমে তিনি নিশ্চিত হয়ে নিয়েছিলেন।
এখন জানতে পারছি, গ্রেগোয়ার আর্ট গ্যালারির (২ পিয়েরে লো গ্রঁ স্ট্রিট) খুব কাছেই আছে আরো একটি গ্যালারি : Galerie Rue Pierre le Grand (১ পিয়েরে লো গ্রঁ স্ট্রিট)। মূলত রুশ শিল্পীদের শিল্পকর্মই প্রদর্শিত ও বিক্রি হয় এখানে। আমরা আগেই জেনেছিলাম, গির্জা সন্নিহিত এই এলাকা আসলে একটি রুশীপাড়া।
২
নভেরা আহমেদের স্বামী গ্রেগোয়ার সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে রচিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, তাঁর সম্পূর্ণ নাম গ্রিগোরি গ্লেবোভিচ ফন ব্রুন্স্। আসলে, রুশ নাম গ্রিগোরি-ই ফরাসি ভাষায় গ্রেগোয়া (Grégoire)। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিতে তাঁর ঊর্ধ্বতন দুই পুরুষ ঠাকুর্দা মিখাইল গ্রিগোরিয়েভিচ ও পিতা গ্লেব মিখাইলোভিচ ফন ব্রুন্স্-এর পৌনঃপুনিক দেশান্তরের প্রেক্ষাপট উঠে এসেছে তাঁর বক্তব্যে। আমরা জানতে পারছি, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে গ্লেব মিখাইলোভিচ প্রায় বছর খানেক বন্দী ছিলেন জার্মানির দাচাউ কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে, যুদ্ধশেষে মিত্র বাহিনী তাঁকে ট্রাকে করে প্যারিসে নিয়ে আসে। শিল্পী ও আর্ট ডিলার হিসেবে তাঁর জীবনের বাকি দিনগুলো প্যারিসে কেটেছে। তাঁর পুত্র গ্রিগোরিও যে পরে আর্ট ডিলার হবেন, তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই। কিন্তু প্রতিবেদনটিতে এরই সঙ্গে পরিবেশিত হয়েছে অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর একটি তথ্য :
আমাদের অনুমানই তাহলে সত্য হলো! ১৮ মার্চ ২০১০ তারিখে মন্তব্য করেছিলাম,
গ্লোব ট্রটিং-এর তোলার ছবির সঙ্গে Veterans Today-র প্রতিবেদনে মুদ্রিত ছবিগুলো মিলিয়ে নেয়ার পর এখন নিশ্চিত করেই বলা যায়, নভেরা আহমেদ প্যারিসে তাঁর ছবি ও ভাস্কর্য বিক্রি করে দিচ্ছেন! আর ২০১০-এর ২২ নভেম্বরে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির প্রথম অনুচ্ছেদেই তো বলা হয়েছে:
রফিকুল আনোয়ার রাসেল - ১ ডিসেম্বর ২০১১ (১:৪৪ অপরাহ্ণ)
সুমন ভাই। লেখাটি দারুনগ কিন্তু সত্যি বলতে, আমার খুব ভাল লেগেছে শবার কনভারসেশান পড়ে। যেন সবাই মিলে আপনার টপিকটাকে সার্থক করে তুলছিলেনগ আর আমরা পাঠকরা একটু পরপর অনেক কিছু জানতে পারছি কারো না কারো কাছ থেকে। শিল্পী নভেরা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ সবাইকে।
রেজাউল করিম সুমন - ৫ নভেম্বর ২০১২ (১:১৮ পূর্বাহ্ণ)
রাসেল,
অনেকের অংশগ্রহণই তো ব্লগের মূল চালিকাশক্তি। সময় নিয়ে পড়ার জন্য সবার পক্ষ থেকে তোমাকেও অনেক ধন্যবাদ।
ব্লাডি সিভিলিয়ান - ৫ এপ্রিল ২০১২ (৫:৪০ অপরাহ্ণ)
সৈয়দ শামসুল হকের ‘হৃৎকলমের টানে’ (দ্বিতীয় খণ্ড)-এর ১৭৫ নং টোকায় (পৃ.
১২৪-১২৬) নিম্নলিখিত অংশটি পেলাম:
‘নভেরার কথা মনে পড়ে কারো!’-এই আশ্চর্যবোধক বাক্য দিয়ে শুরু করেছেন সাইয়িদ আতীকুল্লাহ তাঁর নতুন কবিতাটি- বেরিয়ছে ‘সংবাদ’-এর একুশের বিশেষ সংখ্যায়। নভেরা? সে কে? সত্যিই তো নভেরার কথা আজ আর কে মনে রাখে? কি এমন দায় আছে কার যে, নভেরার কথা মনে রাখবে? বিস্মৃতিই হয় আমাদের ‘মূল্যবান’ পরিচ্ছদ এবং সত্য গোপনই হয় আমাদের ‘প্রিয়তম’ খেলা।
নভেরা-নভেরা আহমদ-তাঁর কথা আগেও বলেছি, আজও আবার বলি-আমাদের এই বাংলাদেশে ভাস্করদের মধ্যে প্রথম তিনি এবং আমার মনে হয় এখনো তাঁর তুল্য একজন ভাস্কর এ দেশে আসেন নি; খ্যাতি নয়, অর্থ নয়, পাশ্চাত্যের অনুকরণ নয়-তাঁর কাজের একমাত্র প্রেরণা ছিল যেন স্রষ্টারই প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে বস্তুরূপ নতুন করে সৃজন করা; এবং তিনি ছিলেন বিরূপ পরিবেশে প্রকৃত প্রতিভাধরের মতোই অভিমানতাড়িত একজন, যিনি স্বেচ্ছায় সব ছেড়ে যেতে পারেন, এমন কি সৃষ্টির দুটি হাত। ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মূল নকশা তিনি করেছিলেন চিত্রকর হামিদুর রহমানের সঙ্গে মিলিতভাবে।
এই শহীদ মিনারের মধ্যভাগে শোকে অবনত মা এবং দু’পাশে তাঁর দুটি করে সন্তান; তারা বাস্তবানুগ নয়, বিমূর্ত, বন্দী স্বদেশের লৌহগরাদের অবিকল; বস্তুত স্মৃতির মিনার রচনায় আমাদের এতকালের যাবত নকশা ছিল ইসলামী বা ভারতীয়, যেমনটি দেখা যায় গোরস্তানে বা শ্মশানে কিংবা পাশ্চাত্যে সূচীমুখ স্তম্ভে এবং তাও খ্রিস্টীয়, এ সকলই কী অসাধারণ কল্পনাবলে বর্জন করে ভাষা আন্দোলনের শহীদদদের স্মৃতিতে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ একটি মিনার-কল্পনা, ব্যক্তিগকভাবে আমি জানি, করেছিলেন ভাস্কর নভেরা আহমদ; নভেরাই নকশাটিকে প্রথম কল্পনা করেন, হামিদুর রহমানের সঙ্গে সেই সময়ে ছিল নভেরার বিশেষ সখ্য এবং তাঁরা মিনার-নকশার কাজে ছিলেন যৌথভাবে নিবিষ্ট; আমাদের বয়সীরা এখনো ভুলে যাই নি যে, ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নকশা হামিদুর রহমান একা করেন নি, নভেরাও সমঅংশে ছিলেন এবং নকশাটির বীজ উপ্ত হয়েছিল প্রধানত নভেরারই করোটিতে।
অথচ নভেরার নাম আমরা করি না, কেবল হামিদের নাম করে থাকি। এখন প্রয়াত হামিদ আমার দীর্ঘ দীর্ঘ দিনের বন্ধু হলেও তাঁর মৃত্যুর আগে তাঁকে বহুবার বলেছি এবং এখনো বলছি তাঁর আত্মার প্রতি আমার সকল ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা রেখেই যে, তিনি নিজেই শহীদ মিনার প্রসঙ্গে কখনো নভেরার নাম গুরুত্ব দিয়ে উচ্চারণ করেন নি, সবটুকু কৃতিত্ব নিজের জন্য দাবি করেছেন, এমন কি বেশ কয়েক বছর আগে টেলিভিশনে আমি একবার যখন তাঁর সাক্ষাতকার নিই, তখনো আমার বারবার ধরিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও তিনি নভেরার ভূমিকাকে তুচ্ছ করেছেন, উড়িয়ে দিয়েছেন, নভেরাকে কেবল তাঁর এক দীপ্তিহীন সহকারী বলে উল্লেখ করেছেন।
তবে কি নভেরার সাথে হামিদের যে সখ্য ছিল, গূঢ় কোন কারণে তাতে ধরেছিল শুশ্রূষার অতীত কোনো চিড়, অভিমানে নভেরা নিয়েছিলেন সর্ব অর্থে বিদায়, দাবি আর করেন নি কোনো প্রীতি কি পুরস্কার, হামিদ তাই একাই গ্রহণ করতে চেয়েছেন মিনার রচনার সবটুকু সম্মান? আমি ক্রুদ্ধ, এক ইংরেজি পত্রিকায় এবারের একুশের দিনে এক পাতা জোড়া নিবন্ধে হামিদুর রহমানের কনিষ্ঠ ভাই নাট্যকার সাইয়িদ আহমদ শহীদ মিনারের মূল নকশা ও পরিকল্পনার কথা বিস্তারিত বললেও নভেরাকে তিনি তাঁর প্রাপ্য সম্মান আদৌ দেননি, অথচ সাইয়িদ আহমদেরই তো জানবার কথা আমাদের চেয়ে অনেক ভালো করে যে. হামিদ ও নভেরা, কার ভূমিকা ছিল কতটুকু।
নভেরাকে খুব কাছ থেকে জানতেন কবি সাইয়িদ আতীকুল্লাহ; আতীকুল্লাহর যে ধরনের কবিতায় আমরা অভ্যস্ত তা থেকে গভীর মর্মিতা ও বেদনায়, তাঁর পক্ষে সম্পূর্ণ নতুন এক উচ্চারণ ধারণ করে, তিনি লিখেছেন নভেরার উদ্দেশ্যে আর্ত একটি কবিতা; তিনি বলছেন ‘কী অভিমানিনী সে আসে না কোনদিন শহীদ মিনারে’, বলছেন, ‘শহীদ মিনার কী করুণ ডাকে সেই নভেরাকে/কিছুতে পায় না সাড়া, ডাকে বারবার/কিছুতে পায় না সাড়া, ডাকে বারবার/কিছুতে পায় না সাড়া, ডাকে বারবার।’
আমার ক্রোধ প্রশমিত হয়ে যায়; অন্তত একজন আতীকুল্লাহ আছেন যিনি একুশের দিনে নভেরাকে আত্মার ভেতর থেকে আজো তুলে আনেন।
সম্ভবত সংবাদের সেসময়ের একুশ পরবর্তী বৃহস্পতিবারে বেরোয় এই লেখাটি। এর দুয়েক পাতা পরেই আছে সত্যজিতের তিরোধানের সংবাদে তাঁর প্রতিক্রিয়া। কাজেই অনুমান করতে পারি লেখাটা বিরানব্বইয়ের একুশের শেষ কোন বৃহস্পতিবারে। এরকম লেখা আরো যোগাড় করে নভেরার ওপর নির্মোহ একটা বিশ্লেষণাত্মক লেখার দাবি জানিয়ে গেলাম রেজাউল করিম সুমনের কাছে।
রেজাউল করিম সুমন - ৫ নভেম্বর ২০১২ (১:০৫ পূর্বাহ্ণ)
অনেক ধন্যবাদ এই গুরুত্বপূর্ণ সংযোজনের জন্য।
Pingback: নভেরা আহমেদ : বাংলাদেশের ভাস্কর্যে তার অবদান | artbangla
বিপাশা শারমিন হোসেন - ১০ জুলাই ২০১২ (৪:২৯ পূর্বাহ্ণ)
নভেরার কিছু sculpture এর ছবি এই লিঙ্ক এ পেলামঃ
চয়ন খায়রুল এর ব্লগ সাইটে, বাংলাদেশ জাতিয় জাদুঘর এর অনুমতি নিয়ে কিছু ছবি সহ। sorry converting to English, since I am facing difficulty typing in Bangla. If the link does not work directly, just go to dhootoorafm.blogspot.com and type novera in search. the pieces are accompanied with poems by Mr. Choyon Khairul’s interpretation of novera and her creations.
রেজাউল করিম সুমন - ৫ নভেম্বর ২০১২ (১:১২ পূর্বাহ্ণ)
ধন্যবাদ। তবে লিংকটা এখন আর কাজ করছে না বোধহয়! আর ওই ব্লগেও যাওয়া গেল না।
রেজাউল করিম সুমন - ৫ নভেম্বর ২০১২ (১:৩৪ পূর্বাহ্ণ)
গতকালই ফেসবুকে কথা হচ্ছিল সজীব আহমেদ নামে এক নতুন বন্ধুর সঙ্গে। সজীব প্যারিস-প্রবাসী; তাই নভেরার কথা তুলি ও এই পোস্টের মন্তব্য অনুসরণ করে গ্রিগোরির আর্ট গ্যালারি সম্বন্ধে খোঁজ নিতে অনুরোধ করি।
চব্বিশ ঘণ্টা পেরোনোর আগেই ফোনে সজীবের কাছ থেকে জানতে পারি — গ্রিগোরির সঙ্গে তার দেখা হয়েছে! তাঁর আর্ট গ্যালারিতে এখন শোভা পাচ্ছে নভেরারই শিল্পকর্ম। আর সজীবের বারংবার অনুরোধের ফলে গ্রিগোরি ফোনে নভেরার সঙ্গেও তার কথা বলিয়ে দিয়েছেন!
Mainul Abedin - ২৭ আগস্ট ২০১৩ (১২:৫৮ অপরাহ্ণ)
Thanks for the valuable post.
Tayeba Begum Lipi - ২৯ আগস্ট ২০১৩ (১২:৫৮ পূর্বাহ্ণ)
Sumon, you are almost there and i am so much looking forward to hearing a real word from Novera finally. Hope Sajib will be able to convey some new information about her present situation that the whole nation have been waiting for. Thanks for the long research. I admire how you as well as Imtiar Shamim bhai tried to gather information about Novera Ahmed.
i wish i could type this in bangle. Sorry about that.
রেজাউল করিম সুমন - ২৮ এপ্রিল ২০১৪ (১২:৪৫ পূর্বাহ্ণ)
লিপি আপা,
বিলম্বিত উত্তরের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমার বন্ধু সজীবের সহায়তায় দুর্লভ কিছু তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি। আর আপনার তোলা একটা ছবিও ব্যবহৃত হয়েছে আমার ‘নভেরা আহমেদের ভাস্কর্যচর্চার স্বল্পালোচিত অধ্যায়: ১৯৬০–১৯৭০’ শিরোনামের একটি অকিঞ্চিৎকর লেখায়।
Pingback: নভেরা-বৃত্তান্ত | আহমেদ সজীব
রেজাউল করিম সুমন - ৭ মে ২০১৫ (১২:১১ পূর্বাহ্ণ)
চলে গেলেন নভেরা আহমেদ!
মাসুদ করিম - ৭ মে ২০১৫ (৮:৪৪ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ৭ মে ২০১৫ (৮:৫১ পূর্বাহ্ণ)
চয়ন খায়রুল হাবিব - ৭ মে ২০১৫ (২:১৫ পূর্বাহ্ণ)
বিপাশা শারমিন হোসেন, ধন্যবাদ।সম্ভবত নিচের লিঙ্কে ভাস্কর নভেরাকে নিয়ে লেখা কবিতাটার কথা বলেছেন!২০১৫সালের ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির বইমেলাতে শিল্পি রশিদ আমিন সুত্রে সদ্য পরিচিত রেজাউল করিম সুমন সাক্ষাতে আমাকে বলেছিলেন যে এই কবিতাটি উনি আমার ব্লগে দেখেছিলেন!লিঙ্ক বিভ্রাটের জন্য দুক্ষিত!কবিতাটা আমার সাম্প্রতিক সংগ্রহ ”ডৌল: জুলেখা ইচ্ছা করলেই পারে” গ্রন্থে সঙ্কলিত হয়েছে!বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ফেললাম কি? নভেরা আজকে চলে গেলেন! মহান এই ভাস্করের নিশব্দ প্রয়ান হয়ত আমাদের পারস্পরিক-যোগাযোগ-বৈষম্য কাটাতে সহায়ক হবে!
ব্রিটানি/ ফ্রান্স
৬/৫/২০১৫
চয়ন খায়রুল হাবিব
http://choyonsdhuturafm.blogspot.fr/2008/11/blog-post_18.html
রুখসানা কাজল - ৭ মে ২০১৫ (১২:০১ অপরাহ্ণ)
কিছু কিছু মানুষের জন্য কারো কারো হৃদয়ে অপেক্ষা তৈরি হয়। ভাস্কর নভেরা আহমেদের জন্য তেমনি সুগভীর অপেক্ষা আমার। চারুকলার ভাস্কর্যগুলি কেবল বোবা অবহেলা জানিয়েছে। নভেরা আহমেদ নামটি যেখানে দেখেছি ঝাঁপিয়ে পড়েছি। এতদিন মনে হয়েছে সময়ের চেয়ে অগ্রগামী এই মানুষটিকে আমরা হারিয়ে যেতে দিয়েছি।ঘরে বাইরে ডাকার মত করে কেউ কাছে ডেকে নিইনি। কিম্বা তেমন কারো ডাকার অপেক্ষায় থেকে থেকে নির্মোহের পর্দা টেনে দিয়েছে এই অভিমানী হৃদয়। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে , ফিরে এলো নভেরা আহমেদ।
Pingback: নভেরা : মৃত ও জীবিত | noverahmed
Pingback: নভেরা : মৃত ও জীবিত | ভাস্কর নভেরা আহমেদ
Pingback: নভেরা-বৃত্তান্ত | ভাস্কর নভেরা আহমেদ
মাসুদ করিম - ১৭ মে ২০১৫ (৭:১১ অপরাহ্ণ)
Pingback: ‘খোলা জানালা’র খোঁজে | মুয়িন পারভেজ