আমরা সবাই ইতোমধ্যে জানি যে বালুচিস্থান স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে তদানীন্তন পূর্ব বাংলার বাঙ্গালীরা যেমন স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। কিন্তু কেন বালুচরা মুক্তি সংগ্রামে ব্রতী? বিশিষ্ট বালুচ অধ্যাপক সীমা খানের মতে, ’ধর্ম’ এবং ’নৃ-তত্ত্ব’-এই দ্বিবিধ পরিচয়ের আবর্তে নিক্ষিপ্ত বালুচরা বাঙালীদের মতই ইসলাম ধর্ম ও জাতিগত আত্ম-পরিচয়ের সঙ্কটে ভুগছে। সীমা তাঁর ‘Trapped between Religion and Ethnicity: Identity Politics against the Baloch in Iran and Pakistan’ প্রবন্ধে বালুচ জাতির ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত খুঁজতে গিয়ে কীভাবে ঐতিহাসিকেরা বালুচিস্থান এবং পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোয় বালুচ ও অন্যান্য নৃ-গোষ্ঠির ভেতরকার সংস্কৃতি ও ভাষাগত সম্বন্ধ সূত্র বিষয়ে অনুসন্ধান করেছেন, তার উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করেছেন। ১৯০৪ সালে ইতিহাসবিদ ডেমস প্রথম বালুচ ইতিহাস এবং ভাষা বিষয়ে অনুসন্ধানে ব্রতী হন। তিনি বর্তমানের ইরাণের কেরমান এলাকাকেই বালুচ জাতির সম্ভাব্য বিন্দু বলে মনে করেন (এম, আহমেদ এবং বালুচ, পৃষ্ঠা ২)। পশুচারী বা অর্দ্ধ-যাযাবর বালুচরা তাদের মূল পশুচারণ এলাকাগুলো জুড়ে নিয়মিত ভিত্তিতে যাতায়াত বা অভিবাসনের পথ খুঁজে বের করেছিল (ব্রিসিগ, ২০০৪; দাশতি, ২০১২, উইরসিং, ২০০৮)। প্রায় ৩০০০ বছর ধরে বালুচেরা ইরাণী
মালভূমির দক্ষিণ এবং পূর্বের প্রান্তগুলোয় তাদের ’চরৈবেতি’ অব্যাহত রেখেছিল। তবে বারো শতকে প্রথম পারস্য, আফগানিস্থান এবং ভারতের ভেতর দিয়ে প্রসারিত একটি চিরস্থায়ী ভূ-খন্ডে বালুচরা চিরস্থায়ী ভাবে বসতি গড়ার উদ্যোগ নেয়। কয়েক শতকের পরিসরে এবং অভিবাসন ও বসতি গাড়ার প্রক্রিয়ায়, বালুচরা নিজেদের ভেতর বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিকে আত্মীকরণ করে নেয় (ব্রিসিগ, ২০০৪; দাশতি, ২০১২, উইরসিং, ২০০৮)। তবে পাশাপাশি প্রতিটি বালুচ গোত্রই যার যার নিজস্ব স্বাতন্ত্র্যতা বজায় রেখেছে (ব্রিসিগ, ২০০৪, পৃষ্ঠা ২২)। আজো বালুচেরা যার যার নিজস্ব গোষ্ঠি পরিচয়ে পরিচিত হতে গর্ব বোধ করে। মূলত: পারস্য, আফগানিস্থান এবং ভারতীয় উপমহাদেশের মত শক্তিশালী প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে নিজেদের আত্মরক্ষার জন্যই বালুচেরা পার্শ্ববর্তী অনেক ছোট ছোট জন-গোষ্ঠিকে আত্মীকৃত করেছিল। চৌদ্দ শতকে মীর চাকার খান রিন্দ প্রথম বালুচ গোষ্ঠিগুলোর ভেতর একটি ’গোত্রীয় কনফেডারেশন’ গড়ে তোলেন যাতে করে গোটা বালুচ জাতিকে একটি শিথিল প্রশাসনিক কাঠামোর আওতায় এনে ঐক্যবদ্ধ করা যায় (ব্রিসিগ, পৃষ্ঠা ১৩৯)। এই কনফেডারেশন পশ্চিমে কিরমান থেকে উত্তর-পূর্বে আফগানিস্থান এবং দক্ষিণ-পূর্বে সিন্ধু ও পাঞ্জাব থেকে দক্ষিণে আরব সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। বালুচ জাতির একত্রীকরণের লক্ষ্যে চাকার খানের গৃহীত…