পিটার কাস্টারসের উপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন নেমে এসেছিল স্বাধীন বাংলাদেশে, যে দেশের সাধারণ মানুষের মুক্তির জন্য সব কিছু তিনি ছেড়ে এসেছিলেন। জেনারেল জিয়া ঢাকা কারাগারের অভ্যন্তরে গোপন মার্শাল ল ট্রাইব্যুনালে প্রহসনের বিচার শুরু করে কর্নেল তাহেরসহ অনেকের বিরুদ্ধে। পিটার কাস্টার্সকেও গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হল। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা সাজানো হল তাঁর বিরুদ্ধে।

11951250_943389375718643_738267647909763306_n

 

কাটা বেঁছে কই মাছ খাওয়া আমাদের বাঙালিদের জন্যও সহজ কাজ নয়। এই ৬৬ বছর বয়সে কই মাছের দোপেয়াজা খেতে গিয়ে তা আবার মনে হলো। মন চলে গেল ৪১ বছর আগে, যখন আমার বয়সী পিটার কাস্টারসের সাথে পরিচয় হয়েছিল। ঢাকার একেবারে সাধারণ একটা রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খাব আমরা। পিটারই এখানে আমাকে নিয়ে এসেছেন। ভাত আর কই মাছের ঝোল তিনিই অর্ডার করেছেন।

‘কাটা বেঁছে আপনি খেতে পারবেন?’

পিটারের মুখ হাসিতে উজ্জ্বল হলো।

‘চিন্তা নাই, ভালই পারি।’

অবাক হয়ে লক্ষ্য করি কি নিপুণ হাতে কাটা বেঁছে পিটার বাঙালির ভাত-মাছ খেলেন গভীর পরিতৃপ্তি নিয়ে।

‘পেট ঠিক থাকবে তো?’

আবারো পিটারের মুখে হাসি।

‘বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে এত ঘুরেছি, কত রকমের খাবার খেয়েছি। এখন আর সমস্যা হয় না। আপনাদের একটা প্রবাদ আছে না, “শরীরের নাম মহাশয়, যাহা সহাও তাহাই সয়।” আমারও সয়ে গেছে। কই মাছ আমার খুব প্রিয়।’

সমবয়সী আমরা বন্ধুর মতই ছিলাম। তারপরও আমাকে আপনি বলতেন পিটার। যতদূর মনে আছে, সবাইকে আপনি বলতেন।
গায়ে সুতির পাজাম-পাঞ্জাবি পায়ে সাধারণ চপ্পল। এমন পোশাকেই দেখা যেত পিটারকে। ফর্সা পা মশার কামড়ে লাল হয়ে আছে।

‘ঘরে মশারি টানান না?’

‘দেখুন গ্রামের গরিব মানুষের মশারি কিনবার সামর্থ্য নেই। আর আপনাদের দেশে মশার কামড়ে এখন আর ম্যালেরিয়া হয় না। তাই মশারি ব্যবহার করি না।’
পিটারের কথা শুনে স্তম্ভিত হই। বর্ষার পানিতে ভিজে ভিজে তাঁর খোলা পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে ঘা হয়েছে। পিটার দেখেছেন ক্ষেতে-খামারে কাঁদা মাটিতে কাজ করা গ্রামের গরিবদের পায়ে এমন ঘা।

‘সস্তা কোন ওষুধ নেই এই ঘা সারাতে?’

পিটারের এ প্রশ্নের উত্তরে জানাই পটাশিয়াম পারমাঙ্গানেট গুলিয়ে লাগালে সারতে পারে। তুত ডলে দিলেও কাজ হয়। তবে তা তো সব সময় পাওয়া যায় না। দিনকয় পরে তাঁর সাথে দেখা। ফর্সা পা রঙিন হয়ে আছে। উজ্জ্বল হাঁসি পিটারের মুখে।

‘দারুণ কাজে লেগেছে আপনার পরামর্শ। পারমাঙ্গানেটের রং লেগে থাকলেও ঘা ভাল হয়ে গেছে। ঠিক করেছি, এবার গ্রামে যাবার সময় পটাশিয়াম পারমাঙ্গানেট কিনে নিয়ে যাব। গরীবদের খুব কাজে লাগবে।’

গত ৩রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ তারিখে নিজ দেশ হল্যান্ডের লেইডেনে তার বাড়িতে পিটার কাস্টারস ইহধাম ত্যাগ করেছেন। তারপর থেকে কতবার বসেছি তাঁর উপর কিছু লিখবো বলে। লেখা হয়ে ওঠেনি। পুরনো দিনের কথা, পিটারের হাঁসিমুখ বারবার মনের পর্দায় ভেসে উঠছে। চোখ ভিজেছে প্রতিবারই। জন্মসূত্রে হল্যান্ড নিজ দেশ হলেও পৃথিবীকেই নিজ দেশ জ্ঞ্যান করেছিলেন পিটার। যেমনটা করেছিলেন চে গুয়েভারা।

মঞ্জুরুল আলম পলাশ খুব ভাল একটা কাজ করেছেন। পিটারের সাক্ষাতকার নিয়েছিলেন তিনি। লন্ডনে ২০০৮ সালের ৯ই নভেম্বর তারিখে নেয়া সেই ভিডিও ছয় খণ্ডে ইউ টিউবে এখন ইতিহাস। এ লেখা লেখার সময় সে ভিডিও দেখছি। ১৯৭১ সালে পিটারের বয়স ২২ বছর। সে সময়ের স্মৃতিচারণ করছেন পিটার সেই ভিডিওতে। লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক আইনে এমএ করবার পরে ১৯৭০-এ আমেরিকার জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর তিন বছরের কোর্স করছিলেন পিটার। ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলছিলেন,

“সে সময় মূলত এশিয়ার দেশগুলোর উপর আমি লেখাপড়া করতাম। পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনীর অত্যাচারের খবর শুনে করনীয় ঠিক করতে আমি বাঙালিদের সাথে যোগাযোগ শুরু করলাম। তাদের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের সংগ্রাম সম্বন্ধে অবগত হলাম। […] অনশনের, প্রতিবাদের এবং প্রচারের কাজ তখন শুরু হয়ে গেছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর আমি তখনও ছাত্র, কয়েকজন বাঙালি বন্ধু বাংলাদেশ ঘুরে যেতে নিমন্ত্রণ জানালো। আমারও প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল বাংলাদেশ ঘুরে আসা। আমি ৭৩ সালের জানুয়ারি মাসে ভারত হয়ে বাংলাদেশে ঢুকলাম এবং তিনমাস ধরে সারা বাংলাদেশ ঘুরলাম, একেবারে প্রান্ত পর্যন্ত। একদিকে ঝাফলঙ, যেখানে যাওয়া সম্ভব সেখানেই গিয়েছি। গ্রামে গ্রামে ঘুরেটুরে মানুষের জীবনযাত্রা যেন বুঝতে পারি।”

১৯৭১ সালে এত ত্যাগের পর অর্জিত বাংলাদেশকে ১৯৭৩ সালে কেমন দেখলেন, পলাশের এই প্রশ্নের জবাবে পিটার গভীর তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলছেন,

“প্রথম কথা হলো তখনো পর্যন্ত মানুষের মনে আশা, ‘আমরা নতুন জীবন, নতুন সমাজ পাব’ – এরকম আশা সবখানে দেখেছি। যেখানেই যাই, ‘জয় বাংলা’ বলে মানুষের মিছিল – ছেলেরা করছে, মেয়েরা করছে। মানুষের সাথে কথা বলে বোঝা যায় শোষণ থেকে মুক্ত হওয়ার আকাংখা তখনো খুব প্রবল ছিল বাংলাদেশে। আবার সাথে সাথে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব যে রয়ে গেল, সেটাও কিন্তু খুব পরিষ্কার। কারণ ‘৭৩ সালের মার্চ মাসে নির্বাচনী ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে এবং বিভিন্ন জায়গায় গোলমাল হয়েছে। […] ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক নির্বাচন হবে কিনা সে ব্যাপারে জনগণের সন্দেহ আমি লক্ষ্য করেছিলাম। […] বাংলাদেশ থেকে ফিরে এসে ঠিক করলাম সাংবাদিকতার পেশা আমাকে নিতে হবে। তাতে বাংলাদেশে কাজ করার সম্ভাবনা আমি দেখেছি। আমি হল্যান্ডে ফিরে গিয়ে বিভিন্ন খবরের কাগজে লেখালেখি শুরু করলাম।”

এত অপূর্ব বাংলা বলেন, কি ভাবে তা রপ্ত করলেন – পলাশের এ প্রশ্নের জবাবে পিটারের মুখে নির্মল প্রশান্তির হাঁসি।

‘না, কথা বলায় অসুবিধা আছে কিছুটা, কিন্তু আমার ভাগ্য হয়েছিল ছাত্র থাকাকালে আমার একজন বন্ধু আমাকে ভাষাটা শিখতে সাহায্য করেছিল। যখন বাংলাদেশে গিয়েছি, যেখানেই সুযোগ পেয়েছি, আমার দুর্বল বাংলায় কথা বলার চেষ্টা করেছি। যার জন্য শেষ পর্যন্ত মোটামুটি আয়ত্ত করতে পেরেছি। পড়তে পারি, লেখারও কিছু দক্ষতা হলো।”

১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দ্বিতীয়বারের মত পিটার বাংলাদেশে এলেন। বলছেন,

“সেই সেপ্টেম্বর মাসে টাঙাইলের সন্তোষে মওলানা ভাসানি একটা কৃষক সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন। বন্ধুদের সহায়তায় মওলানা ভাসানির সাথে দেখা করেছি। প্রগতিশীল অনেকের সাথে দেখা হয়েছে।”

প্রগতিশীল চিন্তা বিশেষ করে মার্কসবাদের সাথে সংযোগ কি করে হলো, তা কি ছাত্রাবস্থা থেকেই – এ প্রশ্নের জবাবে আবারো প্রশান্তির হাঁসি পিটারের মুখে।

“হল্যান্ডে ১৯৬৭ সালে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি, তখন ছাত্র আন্দোলন উত্তাল। আপনার মনে থাকতে পারে প্যারিসে তখন ছাত্রদের বিদ্রোহ, বিপ্লবের প্রচেষ্টা। সেই প্রভাব কিন্তু ইউরোপের সর্বত্র এবং হল্যান্ডেও ছড়িয়ে পড়েছিল। বিভিন্ন শহরে ছাত্ররা বিক্ষোভ করেছে, সম্মেলন করেছে, আলোচনা করেছে।”

সে সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিশ্চয়ই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিরাট প্রভাব ফেলেছিল, পলাশের এ কথায় সায় দিয়ে পিটার বলেন,

“হাঁ, সে নিয়ে তর্ক-বিতর্কতো সারা দুনিয়াতে। ছাত্রদের মধ্যেও সে নিয়ে গভীর ও শক্তিশালী আলোচনা ছিল। তার সাথে চে গুয়েভারার বিপ্লবী প্রচেষ্টা বলিভিয়াতে – তা নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি আমাদের মধ্যে। আমি তখনই উদ্বুদ্ধ হয়েছিলাম, চে গুয়েভারার যে আদর্শ তা নিয়ে যদি আমি কাজ করতে পারি আমার জীবনে, তা হলে খুবই আনন্দিত হবো।”

বিপ্লবী চে গুয়েভারার মত সমাজ বদলের স্বপ্ন নিয়ে পিটার এলেন বাংলাদেশে। চে এসেছিলেন ডাক্তার হয়ে, পিটার এলেন সাংবাদিক হয়ে। যতদূর মনে পড়ে ৭৪-এর আগস্টে আমার অগ্রজ কর্নেল তাহেরের নারায়ণগঞ্জের বাসায় দুই তরুণ বিদেশী এলেন। এঁরা হলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক লরেন্স লিফৎসুলজ ও হল্যান্ডের সাংবাদিক পিটার কাস্টারস। সে বছর বড় বন্যা হয়েছে। এক হাঁটু পানি ভেঙে তাঁরা এসেছিলেন। এরা শুনেছেন, মুক্তিযুদ্ধে পা হারানো একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল বাংলাদেশে বন্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভিন্ন চিন্তা করেন। তার উপর পত্রিকায় প্রবন্ধও লিখেছেন। বন্যা নিয়ন্ত্রণে বিশ্বব্যাংকের পরিকল্পনার বড় সমালোচক ছিলেন এই দুই সাংবাদিক। বন্যা নিয়ে তাহেরের ভাবনার সাথে পরিচিত হতে তারা এসেছেন। সেই থেকে পিটারের সাথে পরিচয়।

নানা বিষয়ে কথা হয় পিটারের সাথে। সমাজ পরিবর্তনের কথা, তার উপায়ের কথা। প্রায় দু’বছর আগে ১৯৭২-এর অক্টোবরে সমাজ পরিবর্তনের ডাক দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, জাসদ। রাশিয়ার অক্টোবর বিপ্লবের মত গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের রণনীতি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে এই দলের নেতা কর্মীরা। প্রখ্যাত বাম অর্থনীতিবিদ ড. আখলাকুর রহমান তাদের সাথে যুক্ত হয়েছেন। তাঁর লেখা “বাংলাদেশের কৃষিতে ধনতন্ত্রের বিকাশ” গবেষণা প্রবন্ধে তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের প্রধান অর্থনৈতিক খাত কৃষিতে ধনতন্ত্র মূল নিয়ামক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। তাই চীন দেশের মত গণতান্ত্রিক বিপ্লব নয়, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবই হবে সমাজ বদলের রণনীতি। সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদের যে অবশেষসমূহ সমাজদেহ, বিশেষ করে গ্রামীণ জনপদে রয়ে গেছে, তা সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ধারায় নিঃশেষিত করতে হবে। ১৯৭৪-এর শেষের দিকে আমি নিজেও যুক্ত হয়েছি জাসদের বিপ্লবী রাজনীতিতে।

মনে আছে বিপ্লবের স্তর নিয়ে মতপার্থক্য ছিল পিটারের সাথে। গ্রামের ভূমিহীন কৃষি মজুর এবং দরিদ্র কৃষকদের মুক্তির পথ নিয়েই মুখ্য ভাবনা ছিল তাঁর। আমাদের মতের বিপক্ষে তিনি মনে করতেন একটি অগ্রসর গণতান্ত্রিক বিপ্লবের মধ্য দিয়েই এই বিশাল জনগোষ্ঠীর মুক্তি আসবে, যেমনটা হয়েছে চীন দেশে। মওলানা ভাসানি এবং নানাভাবে তাঁর অনুসারী চীনপন্থি বাম বিপ্লবী শুধু নয়, রুশপন্থি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির রাজনৈতিক ভাবনার কাছাকাছি ছিলেন পিটার কাস্টারস। বিপ্লবের প্রধান ধারা হিসেবে সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদ বিরোধী লড়াইকে তাঁরা প্রধান করে দেখেছেন। বাংলাদেশের মানুষের সমাজ পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষার কথা পিটার বলেছেন। সেই আকাঙ্ক্ষার অনুসারী ছিলাম বলে পথের ভিন্নতা থাকলেও আমাদের প্রতি কোন বৈরিতার ভাব কখনো তাঁর মধ্যে দেখিনি।

আরও যা মনে পড়ে, তা হলো সমাজ বদলে গ্রামের অশিক্ষিত দরিদ্রদের শিক্ষিত করার গুরুত্বের কথা তিনি বলতেন। তাই নৈশস্কুলে কৃষি মজুর এবং দরিদ্র কৃষকদের পরিচিত শব্দমালা ব্যবহার করে অপ্রচলিত পদ্ধতিতে তাদের লেখাপড়া শেখাবার নানা উদ্যোগ পিটার নিয়েছিলেন। তারজন্য পাঠ্যবই প্রণয়নের কাজেও তিনি হাত দেন। পাণ্ডুলিপি দেখে দিতে অনুরোধ করেছেন আমাকে। “পিটার নিজে গরিব মানুষের জাগরণের শিক্ষা লাতিন আমেরিকা থেকে নিয়েছিলেন। পাওলো ফ্রেইরে নামের এক ব্রাজিলীয় বুদ্ধিজীবী ‘নিপীড়িতের শিক্ষা’ নামের একটি বই লিখেছিলেন। তাতে তিনি সমাজবদলের উপায় হিসেবে বলেন, ‘শিক্ষার মাধ্যমে গ্রামে জাগরণ সৃষ্টি করতে হবে।’ পিটার এই মতকে গ্রহণ করলে তাঁর সঙ্গে অনেকেই একমত হন। পাওলো ফ্রেইরের তত্ত্বকে বাংলাদেশের সমাজবদলের সঙ্গে সম্পর্কিত করে বেশ কয়েকটি পুস্তিকা লেখেন পিটার। সংস্কৃতি, সমাজ, অর্থনীতি বিষয়ে মূল্যায়ন করেও বেশ কিছু পুস্তিকা লেখেন। বেশ কয়েকটি জেলাকে নির্বাচিত করে সেখানে বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ‘বাংলাদেশ অর্গানাইজেশন ফর ফাংশোনাল এডুকেশন’ নামের একটি সংগঠন গড়ে তোলেন।” ইফতেখার মাহমুদ, ‘পিটার কাস্টার্স – বাংলাদেশের বন্ধু’ [প্রথম আলো, ছুটির দিনে, ১০ জুলাই ২০১০]। আজ ভেবে অনেকে অবাক হবেন, গভীর গবেষণাধর্মী পুস্তক “তেভাগা আন্দোলনে নারী” এবং “নারী শ্রম – ঐতিহাসিক ও তাত্ত্বিক প্রেক্ষাপট” পিটার বাংলায় রচনা করেছেন, প্রকাশ করেছেন।

পিটার কাস্টারসের উপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন নেমে এসেছিল স্বাধীন বাংলাদেশে, যে দেশের সাধারণ মানুষের মুক্তির জন্য নিজ দেশ, পরিবার-পরিজন ছেড়ে তিনি এসেছিলেন। সে প্রসঙ্গে যাবার আগে ঐ সময়ের প্রেক্ষাপটটি বলে নেই।

১৯৭৫-এর ১৫ই আগস্টের কালরাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা এবং কারাগারে চার জাতীয় নেতাকে হত্যার পর রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নেয় মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী শক্তি। জাসদের উপরও নেমে আসে সীমাহীন রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন। অস্ত্র উদ্ধারের নামে জাসদের কয়েকশত নেতা-কর্মীকে হত্যা করে খুনি মোসতাকের পেটোয়া বাহিনী। এদের হাত থেকে দেশকে উদ্ধার করতে ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে ও জাসদের সহযোগিতায় সিপাহী অভ্যুত্থানের সূচনা হলেও তা ব্যর্থ হয়। পরিণতিতে ক্ষমতাসীন জেনারেল জিয়া ঢাকা কারাগারের অভ্যন্তরে গোপন মার্শাল ল ট্রাইব্যুনালে বিচারের নামে প্রহসন করে কর্নেল তাহেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেন। বিভিন্ন মেয়াদী সাজা দেয়া হয় জাসদের ও সৈনিক সংস্থার সদস্যদের। আমারও দশ বছর সশ্রম সাজা ও জরিমানা হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছি। এরমধ্যে খবর পেলাম পিটারকে গ্রেপ্তার করে এই কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা সাজানো হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। আমি ও আমার দুই ভাই, আবু ইউসুফ খান, বীর বিক্রম এবং ওয়ারেসাত হোসেন, বীর প্রতীককে আসামি করা হয়েছে আরও কয়েক জনের সাথে। কর্নেল তাহের বেঁচে নেই বলে তাঁকে আসামীর তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।

বিমান বাহিনীর একজন পাকিস্তান প্রত্যাগত অফিসারের নেতৃত্বে একটি মার্শাল ল ট্রাইব্যুনালে পিটার ও আমাদের তথাকথিত বিচার শুরু হয়। পিটারের পক্ষে দেশের প্রখ্যাত প্রগতিশীল আইনজীবী ভাষা সৈনিক এডভোকেট গাজিউল হক মামলা পরিচালনা করেন। আমাদের তিন ভাইয়ের জন্য কোন আইনজীবী ছিলনা। এ বিষয়ে আমাদের কোন চিন্তাও ছিলনা। মামলা চলাকালে এডভোকেট গাজিউল হক ট্রাইব্যুনালকে জানান, কিভাবে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা পিটারের উপর নিপীড়ন চালিয়েছিল সাজানো মামলায় মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে; কর্নেল তাহের ও আমাদের সাথে তার রাষ্ট্রদ্রোহিতার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে বলতে। কিন্তু তারা সফল হয়নি। মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে পিটার রাজি হননি।

তথাকথিত সে বিচার চলাকালে একটি মজার ঘটনার কথা মনে আছে। এই মার্শাল-ল ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে আমরা তিন ভাই ছিলাম সম্পূর্ণ নির্বিকার। কারণ এমন আরেকটি ট্রাইব্যুনাল অল্প কিছুদিন আগে কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি এবং আমাদের সাজা দিয়েছে। এবং তা জেনারেল জিয়া কর্তৃক নির্দেশিত হয়ে। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের দিকে পা উঠিয়ে নিরাসক্ত ভাবে আমরা বসে থাকতাম। আগেই বলেছি আমাদের কোন আইনজীবী ছিলেন না। একদিন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান এডভোকেট গাজীউল হককে ডেকে অনুরোধ করলেন তিনি যেন তার পক্ষ থেকে আমাদের এই আশ্বাস দেন যে এই কোর্ট ন্যায়বিচার করবে, আমরা যেন কোর্টকে অসম্মান না করি, তাদের প্রতি পা প্রদর্শন না করি। আমরা তা মেনে নিয়ে ছিলাম।

শেষ পর্যন্ত প্রহসনের সেই বিচারে পিটার কাস্টারসের ১৪ বছরের ও অন্যান্য কয়েকজনের বিভিন্ন মেয়াদী সাজা হয়। আমাদের তিন ভাইকে ‘খালাশ’ দেয়া হয়। বিচার চলাকালে হল্যান্ড থেকে আসা পিটারের পিতা-মাতা উপস্থিত থাকতেন ট্রাইব্যুনালের এজলাশে। তাঁদের উদ্বিগ্ন চেহারার কথা আমার এখনো মনে আছে। বলিভিয়াতে প্রতিক্রিয়াশীল সেনাবাহিনীর হাতে বিপ্লবী চে গুয়েভারার নির্মম মৃত্যু এবং মাসকয় আগে ঢাকা কারাগারে এমন একটি কোর্টের রায়ের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সামরিক শাসক জেনারেল জিয়ার নির্দেশে কর্নেল তাহেরের ফাঁসির কথা তাঁরা নিশ্চয়ই ভেবেছেন। যা হোক অল্প কিছুদিন সাজা খাটার পর এক ক্ষমা ঘোষণার মাধ্যমে পিটারকে মুক্তি দিয়ে হল্যান্ডে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

প্রায় পাঁচ বছর সাজা খেটে কারাগার থেকে বেরিয়েছি ১৯৮০ সালের মাঝামাঝি সময়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার প্রাণরসায়ন বিভাগে পুনরায় শিক্ষকতায় যোগ দিয়েছি। জাপান ও আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা – এ সব নানা ব্যস্ততায় পিটারের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল বহু বছর। তবে মাঝে মাঝে খবর পেতাম বাংলাদেশ নিয়ে পিটার কাস্টারস একাগ্রচিত্তে কাজ করে চলেছেন। বিশেষ করে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে এবং ব্রাসেলস-নির্ভর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি তুলে ধরতে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন তিনি। জেনারেল জিয়া কর্তৃক তাহের হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধেও নানা প্রতিবাদে ও প্রচারে অংশ নিয়েছেন তিনি। তার মধ্যে অন্যতম ছিল ১৯৭৯ সালে জিয়ার বেলজিয়াম সফরকালে প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেয়া এবং সামরিক শাসক জিয়ার আসল চেহারা প্রকাশ করতে তাঁর লিখিত কবিতা বিতরণ করা।

২০০৭ সালের ২১শে জুলাই কর্নেল তাহেরের ৩১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে লন্ডনে কর্নেল আবু তাহের পরিষদ কর্তৃক আমন্ত্রিত হয়ে ড. পিটার কাস্টারস “Colonel Taher’s Unique Legacy – The 1975 Soldiers’ Uprising in a Comparative Historical Perspective” শীর্ষক বক্তৃতাটি দেন। অভ্যুত্থান বিষয়ে তার নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, সিপাহি অভ্যুত্থানের সাথে পূর্ববর্তী ষড়যন্ত্রমূলক সেনা অভ্যুত্থানের মৌলিক পার্থক্য, গণবাহিনী (People’s Army) সম্পর্কে তাহেরের মৌলিক চিন্তা, বাংলাদেশে সমরনীতি (Military Strategy) নিয়ে বিতর্ক, আয়ারল্যান্ডে ইস্টার অভ্যুত্থান ও তার মুখ্য সমর নেতা জেইমস কনোলির মৃত্যুদণ্ডের সাথে বাংলাদেশে সিপাহি অভ্যুত্থান ও তার নেতা কর্নেল তাহেরের ফাঁসির তুলনামূলক বিশ্লেষণ এবং তাহেরের লিগ্যাসি ও বাংলাদেশের সমকালীন রাজনীতি – এসব নিয়ে তিনি বক্তৃতাটি দেন। ১৯৭৫-এর ১৫ই আগস্ট সকালে সংবাদ সংগ্রহ করতে পিটার বাংলাদেশ বেতারে উপস্থিত হয়েছিলেন। তাহেরের উপর বক্তৃতায় তিনি সে প্রসঙ্গে বলেন, “On the morning of August the 15th, I happened to be a silent witness to a confrontation, which took place at the Dhaka radio, between Colonel Taher and Mustaque Ahmed, leader of the proAmerican wing of the Awami League. As Taher realized immediately, sections of Mujibur Rahman’s own party were either directly involved in the coup, or were ready to act in league with the Young Turks.”

পিটারের এ সাক্ষ্য গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে যে কিছু স্বঘোষিত গবেষক এই বলে কর্নেল তাহেরকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন, কেন তিনি বেতারে গিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড কারা ঘটিয়েছে, ক্ষমতায় এসেছে কারা – এসব জানতেই হাসানুল হক ইনু ও আমাকে সাথে নিয়ে তাহের বেতারে গিয়েছিলেন। এই গভীর সংকটে জাসদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তা জরুরি ছিল। সেদিন সকালে তাহের খুব দ্রুতই উপলব্ধি করেন যে মোশতাকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের মার্কিনপন্থি অংশ হয় সরাসরি এই ক্যুর সাথে জড়িত অথবা তারা খুনিদের সাথে সহযোগিতায় প্রস্তুত। তাহের আরো বুঝতে পারেন যে বেতারে তাঁর আগমনের সুযোগে ফারুক-রশিদরা সাধারণ সিপাহীদের এমন ধারণা দিচ্ছে যে তাহের বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সাথেই আছেন, তাহের তাই দ্রুতই বেতার থেকে প্রস্থান করেন। তাহের তাঁর গোপন বিচারের জবানবন্দিতেও এসব উল্লেখ করেছেন। তারপরও ঐসব তথাকথিত গবেষকেরা সেসব তথ্য উল্ল্যেখ করেন না, তারা এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটিও উহ্য রাখেন যে মোশতাকের মন্ত্রীসভায় যোগদানের প্রস্তাব তাহের প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

২০০৭ সালের আগস্ট মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে সেনা সদস্যদের সাথে ছাত্রদের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে এক সহকর্মীসহ আমাকে চোখ বেঁধে রিমান্ডে নিয়ে যাওয়া, পরে আরো শিক্ষক-ছাত্রদের গ্রেপ্তার, নির্যাতন, সাজা – এসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন পিটার কাস্টারস। মূলত তার সক্রিয় তৎপরতার কারণে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বন্দী ছাত্র-শিক্ষকদের অবিলম্বে মুক্তির জন্য শক্ত প্রস্তাব পাশ হয়।

বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে ইউরোপে জনমত গঠনে পিটার কাস্টারস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এই বিচারের বিরুদ্ধে জামায়েত-বিএনপির শক্তিশালী প্রচারণার বিরুদ্ধে পিটারের বলিষ্ঠ উদ্যোগ অত্যন্ত কাযকর হয়েছিল।
বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যার অনেক সুকীর্তির মধ্যে একটি হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য যারা অবদান রেখেছেন সেইসব বিদেশি সুহৃদদের সম্মানিত করা। ২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার ‘Human Rights’ Defender and Friend of Bangladesh’ অভিধায় ড. পিটার কাস্টারসকে সম্মানিত করেন।

২০১০ সাল থেকে নিয়মিতই পিটারের সাথে ইমেইলে পত্রালাপ হয়েছে। বাংলাদেশেও এসেছেন কয়েকবার। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিষয়ে বহির্বিশ্বকে জানাতে সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহে। আমাদের পরিবারের সঙ্গে তিনি মিলিত হয়েছেন, ছবি তুলেছেন, দেশে ফিরে গিয়ে সেসব ছবি আবার পাঠিয়েছেন।তাঁর লেখা মৌলিক গ্রন্থ ‘Questioning Globalized Militarism (Tulika, New Delhi/Merlin Press, London, 2007)’ – যার ভূমিকা লিখেছেন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ সমীর আমিন – তা আমাকে দিয়ে সম্মানিত করেছেন।

২০১১ সালের ২৩শে মার্চ বৃহত্তর তাহের পরিবারের জন্য একটি বিশেষ দিন। বাংলাদেশের সর্বচ্চো আদালত হাইকোর্ট এক যুগান্তকারী রায়ে গোপন মার্শাল-ল ট্রাইব্যুনালে দেয়া কর্নেল তাহেরের দণ্ড ও ফাঁসিকে আইন বহির্ভূত ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করে একে একটি ঠাণ্ডা মাথার খুন হিসাবে অভিহিত করে। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য জেনারেল জিয়াউর রহমানকে দায়ী করা হয়। তাহেরকে একজন অনন্য দেশপ্রেমিক হিসাবে ঘোষণা করে তাঁর হৃত সম্মান ফিরিয়ে দিতে বলা হয়।

অভিনন্দন জানিয়ে পিটার ইমেইল বার্তা পাঠান। বলেনঃ “Dear Anwar Bhai, This is to express my warmest congratulations to you, to Mrs. Lutfa Taher and to the entire Taher family on the verdict honouring Colonel Taher by the High Court. I am intensely happy reading the news in today’s Dhaka press, and wish you all a great celebration of this historic victory!”

এ বছরের ৭ই এপ্রিল তারিখে পিটারের পাঠানো ইমেইল পেয়ে গভীর আনন্দ লাভ করি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণারত নায়িম মোহাইমেনের কথা লেখেন তিনি। কথা সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলির এই ভ্রাতুষ্পুত্র পরিকল্পনা করেছেন পিটার কাস্টারসের বাংলাদেশ অভিজ্ঞতার (১৯৭৩-১৯৭৬) উপর সিনেমা তৈরি করবেন।

এ চিঠির উত্তর দিয়েছি, কর্নেল তাহেরের কিছু ছবি পাঠানো হয়েছে। তার উত্তরও পাঠিয়েছেন পিটার। সেই শেষ। তারপর এই সেপ্টেম্বর মাসের তিন তারিখে না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের অকৃত্তিম বন্ধু পিটার কাস্টারস। নায়িম মোহাইমেন কি তার সৃষ্টিকর্মটি পিটারকে দেখাতে পেরেছিলেন?

“নয়ন সমুখে তুমি নাই, নয়নের মাঝখানে নিয়েছ যে ঠাই।”

পিটারের মত মহাপ্রাণদের কথা মনে রেখেই হয়তো কবিগুরু এমন চরণ রচনা করে গেছেন।

বড় মানুষের ছিদ্রান্বেষণ করেন ক্ষুদ্র মানুষেরা। গবেষণার নামে তাদের চমক সৃষ্টিকারী বাক্যবাণ চাঞ্চল্যেরও সৃষ্টি করে। কিন্তু তা দ্রুতই হারিয়ে যায়। মানুষ তা মনে রাখে না। পিটার, আপনার প্রিয় বাংলাদেশে এমন অপ-প্রচারণা হয়েছে আপনার বিরুদ্ধেও। আপনিও তা জেনেছেন। কিন্তু হাস্যমুখে পরিহাস করে গেছেন সে সব ক্ষুদ্রতাকে। কারণ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আরেক উপলব্ধি,

“সত্য যে কঠিন
কঠিনেরে ভালবাসিলাম
সে কখনো করেনা বঞ্চনা।”

আপনি নিজেও ধারণ করেছেন আপনার হৃদয়ের গভীরে। সত্যের মত আপনাকে মনে রাখবে বাংলাদেশের মানুষ, পৃথিবীর মানুষ।

তথ্যসূত্রঃ

[১] https://www.youtube.com/watch?v=cnltrABsqPE ; https://www.youtube.com/watch?v=IwL15zOKnPE ; https://www.youtube.com/watch?v=7BoHnrj3XdQ ; https://www.youtube.com/watch?v=cUZoxyWyClo ; https://www.youtube.com/watch?v=isjN91ri_fE ; https://www.youtube.com/watch?v=LwgD3Up9_Wo

[২] ইফতেখার মাহমুদ, ‘পিটার কাস্টার্স – বাংলাদেশের বন্ধু’ [প্রথম আলো, ছুটির দিনে, ১০ জুলাই ২০১০]

[৩] Jack Anderson, ‘Dutch Newsman Held In Bangladesh’ [Times Daily, September 4, 1976] https://news.google.com/newspapers?nid=1842&dat=19760904&id=jRwsAAAAIBAJ&sjid=6MgEAAAAIBAJ&pg=2353,824567&hl=en ;

[৪] http://www.petercusters.nl/index.php?topic=bangladesh

[৫] https://www.youtube.com/watch?v=buO7i25WBEw

[৬] http://www.merlinpress.co.uk/acatalog/QUESTIONING_GLOBAL_MILITARISM.html

মো. আনোয়ার হোসেন

অধ্যাপক, প্রাণ রসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অনুজ, শহীদ কর্নেল আবু তাহের (বীর উত্তম)।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.