২০২০ সালের ৫ অক্টোবর, জামায়াতের আমীর একটি আভ্যন্তরীন সাংগঠনিক পত্রের মাধ্যমে জামায়াতের কর্মীদের যৌন আকাংখা নিয়ন্ত্রন এবং ধর্ষণ বা বলাতকারের মত অপরাধগুলোকে সাংগঠনিকভাবে মিমাংসা করার নির্দেশনা প্রদান করেন। জামায়াত আমীর কেন এই চিঠি দিলেন? এই ধরণের চিঠি কি তিনি দিতে পারেন? এই প্রসংগেই আলোচনা করছেন জাহানারা নূরী।

মাদ্রাসা শিক্ষকদের ছবি যারা তাদের ছাত্র - ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন করেছে

বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী দলে যোগদানকারী একজন ইসলামী বোনের অন্যতম প্রধান ভূমিকা হতে পারে তার সহযোগী পুরুষ সদস্যদের—যাদের মুমিন ভাই বলা হয়—"যৌন কষ্ট" দূরীকরণে সহায়তা।   হ্যাঁ, আপনি ভুল পড়েননি।  গত কয়েক দশক ধরে, ফাটল দিয়ে গল্পগুলো বেরিয়ে এসেছে—শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্ধুদের মধ্যে ফিসফিস করে বলা কথা, নিকাব এবং হিজাবের আড়াল থেকে টুকটাক শব্দ ফাঁস হয়েছে। একটু একটু করে। সে সব থেকে স্পষ্ট উন্মোচিত হয় এ সত্য: জামায়াতে ইসলাম তার বাইরের সদগুণের মুখোশ এবং আমীরের মিষ্টি হাসির তলায় অন্যান্য অভ্যাস লুকিয়ে রেখেছে।    একটি চিঠি নীরবে উচ্চারিত অংশটি উন্মোচিত করছে এই বাস্তবতা—পবিত্র ওয়াজের আড়ালে, ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের আন্দোরনের ওয়াসিলায় জামায়াতের নারী শাখা ইসলামী ছাত্রী সংস্থায় যোগদানকারী নারীদের জন্য এক ধরণের যৌন দাসত্বের ভূমিকা রয়েছে।  ১. প্রকাশিত তথ্য এবং অভ্যন্তরীণ চিঠি  মানবাধিকার কর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সংগঠনের সংস্কৃতি এবং নারীদের প্রতি আচরণ সম্পর্কিত ফাঁস হওয়া অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ নথি। অন্তত একটি যোগাযোগে এমন একটি সাংগঠনিক আচরণের ধরণ প্রকাশ পেয়েছে যা শৃঙ্খলার ছদ্মবেশে লিঙ্গ-ভিত্তিক যৌন নির্যাতনকে বৈধতা দেয়।    ৫ অক্টোবর, ২০২০ তারিখে জামায়াতের আমীর ড. শফিকুর রহমানের

স্বাক্ষরিত একটি গোপনীয় চিঠি, দলের নারী এবং পুরুষ শাখার মধ্যে প্রচারিত হয়েছিল বলে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়। এই অভ্যন্তরীণ চিঠি থেকে জানা গেছে যে, এই চিঠির মাধ্যমে জামায়াতারে আমীর সারা দেশে ধর্মীয় ভাইদের দ্বারা সংঘটিত ধর্ষণ এবং বলাৎকার জাতীয় নির্যাতনের ঘটনাগুলো স্বীকার ও অভ্যন্তরীণ সমাধান প্রস্তাব করেছেন।  এই নির্দেশনা থেকে বোঝা যায় যে জামায়াতে ইসলামী দলটিতে নারীদের যৌন নির্যাতনকে নিন্দা বা আইনগতভাবে সমাধানের পরিবর্তে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যৌনতা ব্যবস্থাপনা করা হয়। নৈতিক এবং আইনি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এ ধরণের নির্দেশনা গুরুতর উদ্বেগের কারণ।   ২. নির্দেশনার ভাষা এবং প্রভাব বিশ্লেষণ   উল্লেখিত চিঠিটি নিবিড়ভাবে পাঠ করলে জানা যায় যে জামায়াতে ইসলামী তার সদস্যদের মধ্যে ধর্ষণ এবং বলাৎকারের মতো নির্যাতনের ঘটনাগুলো পরোক্ষভাবে স্বীকার করে ও এই অপরাধসমূহকে সমাধানের জন্য সাংগঠনিক নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দেয়। সদস্যদের যৌন আচরণকে বিচ্ছিন্ন অপকর্ম হিসেবে না দেখে, এটি অভ্যন্তরীণভাবে ব্যাবস্থাপনার বিষয়টিই দলটির প্রধান ব্যক্তিদের কাছে অগ্রগণ্য বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়। এই চিঠিতে এ জাতীয় অপরাধে আইনি জবাবদিহিতার কথা কোথাও উচ্চারিত হয় নি।   চিঠিতে "ধর্ষণ এবং বলাৎকারের পুণরাবৃত্তি" শব্দ চারটি বিশেষ ভাব প্রকাশক। বাক্যটি…

মতিয়া চৌধুরীর আখ্যানের পথে হাঁটতে হাঁটতে আপনি অনুভব করবেন বাংলার উত্থানের গল্পগুলির শেকড় মাটির অনেক গভীরে প্রোথিত। সবই প্রতিরোধ ও স্থিতিস্থাপকতার আখ্যান। তার সবই গণমানুষের মনের কথা - যা নীরব ছিল, অথচ ক্রমেই তার মৃত্যুতে আরও সোচ্চার হয়ে উঠছে।

ব-দ্বীপের রাজধানী তিলোত্তমা ঢাকার বুকের ওপর তিলের মতো এই যে স্থানটুকু - এই ভূঁইখানি শহরের ওয়ার্মহোলগুলোর একটি। এটি আক্রান্ত অসুখী বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ডাকবাকসো। দুই ভুবনের মেলবন্ধন ঘটাবার দীগন্ত, কিম্বা মহাকালের এ ভাঁজে টুপ করে ঢুকে পড়ে জীবন অন্য টাইমলাইনে চলে যায়। রাজনীতির ভডেভিল ট্রুপগুলোর পান্ডুলিপিবিহীন নাট্য সংলাপ ও রাজপথের স্ট্রিপটিজ এবং ইসলামিক দলের শিল্পবুদ্ধির পরিচয় অঙ্কিত দেয়ালসজ্জা পেরিয়ে এখানে সতেরই অক্টোবর কিছু মানুষ মাতা প্রকৃতির কাছে তাদের কন্যা মতিয়াকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।বাংলার এ দুহিতাটি বড়ো প্রজ্জ্বলন্ত ছিল! বহু আগে, সে হবে বোধহয় ১৯৬৪ সাল - যখন মেয়েরা তেল চুপচুপ চুল বেঁধে পেতলের কাজললতায় প্রদীপের শিখা থেকে গড়া কাজল চোখে লেপ্টে কণে দেখায় আগত সম্ভাব্য পাত্রপক্ষের সামনে হাঁটু-কম্পিত চরণে ভীরু নতমুখে হেঁটে, বসে বিয়ের ভাইবা দিতো; দুরু দুরু বক্ষে বোনদের সাথে এজমালি কক্ষের কোণটিতে বসে অপেক্ষা করতো “আলহামদুলিল্লাহ”, ঘরভরা হাসি, কিম্বা মায়ের মৃদু কান্না শোনার, সেই কালে- একুশ কি বাইশ বছুরে মতিয়া কিনা তরুণ বজলুর রহমানকে বলেছিলেন, “চলো বিয়ে করে ফেলি।” যেই কথা সেই কাজ। ষোল তারিখ থেকেই তার সহোদর দৌড়োচ্ছিলেন মিউনিসিপ্যালিটির

মহামহা কর্তাদের সামনে কাঁচুমাচু হয়ে বোনের জন্য কিনতে - শহীদ বুদ্ধিজীবি গোরস্থানের এক টুকরো মাটি। শহীদদের পাশে নয় তো আর কোথায় মুক্তিযোদ্ধা মতিয়া চৌধুরীর শেষ শয়ান হতে পারে? মাটি কেনারই অনুমতি দেয় কে আজ? তার জন্য আকাশের দিকে মাথা উঁচু করে রাইফেল গর্জে ওঠে নি, হাঁকে নি জলপাই সৈনিকেরা বুটে বুট ঠুকে খটাখট্ স্যালুট। মাথা আমাদের তার কাছে নতই হয়ে রইল, এই ভেবে যে, বাংলার স্বাধীন পলিমাটিটুকুর উত্তরাধিকারী আমাদের রেখে গেলেন মতিয়াদের মতো স্বদেশ মুক্তির ব্রতে প্রাণ বাজি ধরে লড়ে যাওয়া একগুঁয়ে বহু যোদ্ধা। কিন্তু আমাদেরই সন্তানেরা তাদের বিভৎস অসম্মান দিয়ে আঘাত করলো। বহু বছর আগে যার হাত ধরেছিলেন, সেই সঙ্গীর দুধসাদা অস্থি নুহের মহামৎস্যের মতো তাকে নিজ বক্ষে আহ্বান করলে দুধেল জ্যোৎস্নার চাদরে মুখ ঢেকে দর্শনের আলোর বাইরের কোনও ঘেরাটোপে ঢুকে পড়লেন মতিয়া চৌধুরী।তিনি অন্তর্হিত হতেই যেন চাদ্দিক ঘিরে শ্লথপায়ে মুড়ে এলো সুদীর্ঘ রাজনৈতিক উপন্যাসের প্রচ্ছদ, ঘিরে ধরলো তার জীবনের কাব্যিক আখ্যান। দীর্ঘদিনের দলীয় সঙ্গী ও অনুসারীদের চারপাশে ঘনঘোর হয়ে উঠলো মীথিকাল অতীতে ঘটে যাওয়া কোনও দুঃসময়ের চেহারা ধরে…

কিন্তু সদ্য স্বাধীন দেশে মুক্তিসংগ্রামের সেই মূলনীতিগুলো কেমন করে বাস্তবায়িত হবে সেটাই হয়ে উঠলো নতুন সংগ্রাম। রাষ্ট্রীয়ভাবে, সাংবিধানিকভাবে সে সব মূলনীতির বাস্তবায়নই শুধু নয়, এবারের এই সংগ্রামের আসল পরীক্ষা হয়ে দাঁড়ালো সেই চেতনায় পরের প্রজন্মকে দীক্ষিত করে তোলা [..]

দৈনিক বাংলা, ২১ জানুয়ারী ১৯৭২

বৈষম্যের বিরুদ্ধে, সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ধর্মীয় গোঁড়ামীর বিরুদ্ধে, শোষণের বিরুদ্ধে একত্র হয়ে একটা পুরো জাতি মুক্তিযুদ্ধ তো করলো। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে বিজয়ও অর্জন করলো। কিন্তু সদ্য স্বাধীন দেশে মুক্তিসংগ্রামের সেই মূলনীতিগুলো কেমন করে বাস্তবায়িত হবে সেটাই হয়ে উঠলো নতুন সংগ্রাম। রাষ্ট্রীয়ভাবে, সাংবিধানিকভাবে সে সব মূলনীতির বাস্তবায়নই শুধু নয়, এবারের এই সংগ্রামের আসল পরীক্ষা হয়ে দাঁড়ালো সেই চেতনায় পরের প্রজন্মকে দীক্ষিত করে তোলা। তারই চেষ্টায় কলম হাতে তুলে নিয়েছিলেন সদ্য স্বাধীন দেশের লেখক বুদ্ধিজীবিরা। 'নতুন করে গড়ব এদেশ' শিরোনামে ছোটোদের উদ্দেশ্যে নিচের এই লেখাটি লিখেছিলেন মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, ছাপা হয়েছিল দৈনিক বাংলা পত্রিকায় ছোটোদের 'সাত ভাই চম্পা' পাতায়। তাত্ত্বিকভাবে 'ধর্মনিরপেক্ষতা', 'গণতন্ত্র', কিংবা 'সমাজতন্ত্র' কথাগুলো এখানে যেভাবে উপস্থাপিত হয়েছে তা কারও কারও কাছে হয়তো কিছুটা সরলীকৃত বা খন্ডিত মনে হবে। হতেই পারে, আমারও মনে  হয়েছে। তবে শুরুর ভাবনাগুলো জানার আগ্রহ থেকেই লেখাটি হুবহু (তখনকার বানান রীতি ও মুদ্রণপ্রমাদসহ) উপস্থাপন করা হল নিচে।   নতুন করে গড়ব এদেশ - মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ছোট বন্ধুরা, আজ আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। তোমরা এর মধ্যেই বড়দের কাছে শুনেছ, নিজেরাও জেনেছ : কিভাবে আমরা এই স্বাধীনতা পেয়েছি। তোমরা শুনেছ, এই স্বাধীনতা লাভের জন্য লক্ষ লক্ষ শহীদ জীবন দিয়েছেন, মুক্তি বাহিনীর অসীম সাহসী বীর ভাইরা মরণপণ লড়েছেন; আমাদের নেতারা কত বিপদের ঝুকি নিয়ে দেশ দেশান্ত পাড়ি দিয়েছেন; আমাদের জ্ঞানীগুণিরা দেশে দেশে জনমত গড়েছেন, বিদেশী কত বন্ধু আমাদের কথা সবাইকে জানিয়েছেন এবং দেশের সকল মানুষ শত অত্যাচারেও হার মানেনি। এসো আজ আমরা আমাদের লক্ষ লক্ষ শহীদের উদ্দেশে আমাদের শ্রদ্ধা জানাই, কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানাই আমাদের মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের; কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই মিত্রবাহিনী--ভারতীয় বীর সেনানীদের, অভিনন্দিত করি আমাদের নেতাদের, জ্ঞানীগুণিদের ও বীর দেশবাসী সকলকে। আজ আমাদের এ দেশ, স্বাধীন বাংলাদেশ, নতুন করে গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে। আমরা কেউ আলসেমি করব না, বসে থাকবো না - আমরা সব কিছু নতুন করে গড়ব। এই গড়ার ব্যাপারে আমাদের বাংলাদেশ সরকার যে মূলনীতি ঘোষণা করেছেন সেটা খুবই চমৎকার। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত আমাদের সরকার ঘোষণা করেছেন যে আমাদের রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে তিনটি : ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র। কথাগুলো তোমাদের জন্যে বেশ কঠিন কিন্তু আস্তে আস্তে যদি বুঝতে…

বর্ষীয়ান বুদ্ধিজীবী সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী গত সপ্তাহে সম্পাদক এবং ব্লগারদের উপরে নৃশংস হামলার পর বিডি আর্টসের সাথে সাক্ষাৎকারে অন্যান্য বুদ্ধিজীবীদের মতই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। সাক্ষাৎকারটি সংক্ষিপ্তই ছিল [..]

বর্ষীয়ান বুদ্ধিজীবী ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী গত সপ্তাহে সম্পাদক এবং ব্লগারদের উপরে নৃশংস হামলার পর বিডি আর্টসের সাথে সাক্ষাৎকারে অন্যান্য বুদ্ধিজীবীদের মতই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। সাক্ষাৎকারটি সংক্ষিপ্তই ছিল। প্রায় পুরোটাই নীচে কোট করছি : "সময়টা তো খুব আশঙ্কাজনক, একের পর হত্যাকাণ্ড ঘটছে। আশঙ্কাজনক আরও এক কারণে যে, অপরাধীরা ধরা পড়ছে না। আর অপরাধীরা ধরা পড়ছে না বলেই এই অপরাধ বাড়ছে। এর মাত্রাও বেড়ে যাচ্ছে। এরা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। এরা মনে করছে যে, এদের কোনও কিছুই হবে না। এমনিতেই এরা মনে করছে, ধর্মীয়ভাবে শহীদ হবে যদি শাস্তি পায়। তার ওপরে এরা শাস্তি পাচ্ছেও না। কাজেই তারা মনে করে যে, এভাবে পার পাওয়া যাবে এবং এটা তাদের পক্ষে অনেকটা বীরত্বপূর্ণ কাজে পরিণত হয়েছে।’ রাষ্ট্র ও সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমে এই ধরনের উগ্রবাদীরা সবুজ সংকেত পেয়ে যাচ্ছে কি না, এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তা তো বটেই। যারা লিখছে তারা তো অপরাধ করে নাই, নিজের মত প্রকাশ করছে। তারা বৈজ্ঞানিকভাবেই তা লিখছে, কোনো ধর্মীয় আক্রমণের জন্য লিখছে না।’ তিনি হতাশা বোধ করছেন বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের কার্যক্রমে। এটা প্রতিবাদী তরুণদের উৎসাহিতও করছে না। তার কারণে ‘প্রতিবাদ হচ্ছে না সেভাবে। কেউ গুরুত্বও দিচ্ছে না। এটা তো সবার জন্য সমস্যা। রাষ্ট্র গুরুত্ব দিচ্ছে না, সমাজও গুরুত্ব দিচ্ছে না।’ উত্তরণের উপায় হচ্ছে, ‘রাষ্ট্রকে সজাগ হতে হবে। রাষ্ট্র যে কেবল চিন্তার স্বাধীনতাকে রক্ষা করবে, তা না। এরা আক্রমণ করছে রাষ্ট্রের যে ভিত্তি—যে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হওয়ার কথা—সেই ভিত্তির ওপর আক্রমণ করেছে। এরা যে জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছে বিদেশিরা তাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে। বিদেশি মানে বিদেশি পরাশক্তি।’ কিন্তু এটা কি বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা? বা একে কি আদৌ বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলা যায়? ‘একে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলার কোনও অজুহাতই নেই। এটা তো বোঝা যাচ্ছে যে, সুপরিকল্পিত। আর এরা যে নামেই আসুক, জঙ্গি বা অন্যকিছু এদের একটাই কাজ— রাষ্ট্রের মূলনীতিকে আঘাত করা।’ এই সাক্ষাৎকারে অবাক হবার মত কিছুই নেই। সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডসহ গত কয়েকমাস ধরে ব্লগারদের উপর ক্রমাগত হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী একজন প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী যে প্রতিক্রিয়া দেখানোর কথা তিনি তাই দেখিয়েছেন। কিন্তু এই সাক্ষাৎকারটি পড়তে পড়তে কয়েকমাস আগে তাঁর আরেকটি সাক্ষাৎকারের কথা মনে পড়ে…

আমরা অবিলম্বে ব্লগারদের হত্যাকারীদের গ্রেফতারের ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছি, সেই সঙ্গে ‘ধর্মীয় অনুভূতি’র নামে যে-কোনো ধরণের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা আমাদের মুক্তচিন্তার চর্চা থেকে একটুও পিছু হটব না, মুক্তচিন্তার চর্চা অব্যাহত থাকবে, নিরন্তর চলবে।

গত কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে আমাদের এখন মনে হচ্ছে, দেশের ব্লগার-লেখকরা শুধু জঙ্গি-উগ্রপন্থীদের দিক থেকে হত্যার শিকার নয়, সরকারি দলের একাংশ ও সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকেও প্রত্যাখানের শিকার হতে চলেছেন। গত সাড়ে পাঁচ মাসে চারজন ব্লগারকে একের পর এক খুন করা হয়েছে, যে তালিকার সর্বশেষ সংযোজন নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয়। এর কোনোটির তদন্তের ক্ষেত্রেই অগ্রগতি হয়নি, বরং নিলয় হত্যাকাণ্ডের পর সংবাদ সম্মেলনে উল্টো ব্লগারদের উদ্দেশ্যে পুলিশের আইজিপি বলেছেন, ‘যাঁরা মুক্তমনা লেখক, তাঁদের কাছে অনুরোধ, আমরা যেন সীমা লঙ্ঘন না করি। এমন কিছু লেখা উচিত নয়, যেখানে কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে, বিশ্বাসে আঘাত হানে।’ পাশাপাশি আওয়ামী ওলামা লীগ নামের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয়েছে, ‘ধর্ম অবমাননাকারীদের’ মৃত্যুদণ্ড প্রদানের বিধান রেখে আইন প্রণয়ন করতে হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, সরকারের কর্তাব্যক্তিরা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছেন এবং বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে তালগোল পাকানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। প্রথম কথা, ব্লগার নিলয়কে হত্যা করা হয়েছে দিনে দুপুরে বাসায় ঢুকে। অন্যান্য ব্লগারদের বাসায় ঢুকে না হলেও হত্যা করা হয়েছে উন্মুক্ত স্থানে, জনসমক্ষে; এমনকি লেখক-ব্লগার ড. অভিজিৎ রায়ের ক্ষেত্রে পুলিশ ঘটনাস্থলেই ছিল। নিলয় গত মে মাসে থানায় গিয়ে নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করার চেষ্টা চালিয়েছেন। ব্যর্থ হয়ে তা নিয়ে ফেসবুকে বিস্তর মন্তব্য লিখেছেন। বেশ কয়েকটি ঘটনার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সরকার অনলাইনের সোশ্যাল মিডিয়াগুলোকে মনিটরিং করে থাকে এবং সরকার কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্পর্কে কোনো বিরূপ মন্তব্য করা হলে সঙ্গে সঙ্গে তা তাদের নজরদারির আওতায় নেয়। এটি অবিশ্বাস্য যে, নিলয়ের মন্তব্য তাদের চোখ এড়িয়ে গেছে। অথচ কোনো ধরণের আভ্যন্তরীন বিভাগীয় তদন্ত না করেই আইজিপি বলছেন, 'জিডি না নেয়ার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি'। বোঝাই যাচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তাব্যক্তিরা নিজেদের ব্যর্থতা ও কর্তব্যে-অবহেলা ঢাকার চেষ্টা চালাচ্ছেন। দ্বিতীয় কথা, দেশে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের বিরুদ্ধে যে আইন রয়েছে, সে সম্পর্কে শুধু ব্লগাররাই নন, অনেকেই সচেতন। কেননা ব্লগারদের পূর্বে থেকেই বিভিন্ন ব্যক্তিকে বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগার অজুহাতে হেনস্তা করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। এটি একটি ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ, যার শিকার হতে হয়েছে একসময় এমনকি আমাদের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে। যদিও মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি এত ঠুনকো নয় যে, তা…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.