সিনেমা চর্চার মানুষ - তাই হয়তো পুরো পৃথিবীকে সিনেমা’র চোখ দিয়ে দেখতে ভালোবাসি। গত শতাব্দীর শেষদিক থেকে পৃথিবীর সিনেমা জগতের কর্মী, কলা-কুশলীরা একদিকে যেমন চলচ্চিত্র নির্মাণের মাধ্যমে মানুষকে বিনোদিত করেছেন, তেমনি পৃথিবীর অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যতের সমাজ বাস্তবতার অনেক দৃশ্যগত ধারনা, ভাবনা বা প্রশ্নের অভিজ্ঞতাও দিয়েছেন। বাস্তবতার ত্রিমাত্রিক জগতে কোন মানুষের পক্ষে অনেক কিছুর আস্বাদ নেয়ার সুযোগ না থাকলেও, সিনেমার জগতে মোটামুটি সবই পাওয়া যায়। প্রাগৈতিহাসিক সময় নির্ভর ছবি থেকে ভবিষ্যতের কল্পবিজ্ঞান - আমাদের অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার পূরণে সিনেমার ভুমিকা অনেক। এমনকি কিছুক্ষেত্রে তো দিক-নির্দেশনাও পেয়ে যাই আমরা। তাই, আধুনিক বিশ্বের দার্শনিক, চিন্তাবিদ, লেখক, মনোবিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ, সমাজবিদ - যে কোনো মানুষের জন্য চলচ্চিত্র অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিল্পমাধ্যম। তবে আজকের আলোচনা এই বিষয়ে নয় । আমি ভারতের সত্তর দশকে নির্মিত ‘শোলে’ (১৯৭৫) ছবিটির একটি বিশেষ দৃশ্য মনে করিয়ে দেবার চেষ্টা করবো। রমেশ সিপ্পি পরিচালিত এই ছবিটি নিয়ে আমাদের দেশে নতুন করে কিছু বলার নেই। আমরা জানি এর কাহিনী’র থিম বিশ্বের অনেক ছবি থেকে নেয়া । আমাদের দেশেও পরবর্তীতে এই ছবির অনুকরনে ‘দোস্ত-দুশমন’ নামে একটি ছবি নির্মিত হয়। কিন্তু অনেক কারণে ‘শোলে’ সারা ভারতে তো বটেই, সারা পৃথিবীর সিনেমা জগতে একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে নিয়েছে । ‘শোলে’ ছবিতে ঠাকুর বলদেভ সিংহ ‘রামগর’ গ্রামের একজন জমিদার লোক। তিনি নিজে বিপদ মোকাবেলায় সাহসী একজন মানুষ বলে দেশ ও আইন রক্ষায় পুলিশে চাকরি করেন, টাকার জন্য নয়। একদা তিনি সাহসিকতার সাথে জনপদের মূর্তিমান আতঙ্ক ডাকু সর্দার গব্বর সিং’কে ধরে ফেলেন, জেলে পুরে দেন। কিন্তু ধূর্ত গব্বর সিং জেল থেকে পালিয়ে ঠাকুরের পুরো পরিবারকে (একমাত্র ছোট পুত্রবধূকে ছাড়া) হত্যা করে প্রতিশোধ নেয়। পরিবার হারিয়ে ক্রোধে উন্মত্ত ঠাকুর গব্বরকে ধরতে গিয়ে নিজেই ধরা পরে দুই হাত হারান। পরিনতি’র এক অসহায় জীবনেও তিনি গব্বর সিং-এর উপর প্রতিশোধ নেবার প্রতিজ্ঞা ছাড়েন না। এই কারণে তিনি ভাড়া করেন সাহসী বিপজ্জনক দুই তরুনকে - ভিরু এবং জয় । যারা ঠাকুরের ভাষায়, মুজরিম কিন্তু অমানুষ নয়। এরপর মারামারি, গোলাগুলি চলতে থাকলো ডাকু গব্বর সিং আর ঠাকুরের লোকের সাথে। আপাত অর্থে এই লড়াই কাহিনীতে সকলের শামিল হবার চক্রটা আমরা ধরি এই ভাবে - ঠাকুর…
ভিকারুননিসা নুন স্কুল ও কলেজের বর্তমান ছাত্রীদের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে রচিত। [...]
অনেকেই আমাদের বলেন আমরা নাকি ‘প্রিভিলেজড গ্রুপ’। সমাজের 'ফরচুনেট' অংশের প্রতিনিধি। বাঙালি শিক্ষিত মধ্যবিত্তের সন্তানই আমাদের অধিকাংশ। বিত্তবান না হলেও সচ্ছল বলা চলে আমাদের অনেককেই। খাওয়া-পরা-পড়াশোনা-টিভি দেখা-ঘুরে বেড়ানো এসব খাতে হিসেবের মধ্যে থেকেও আমাদের জন্য কিছুটা বিলাসি খরচ মাঝে-মাঝেই হয়তো করেন আমাদের অভিভাবকেরা। আবদার-আহ্লাদ করে খেলনা-জামাকাপড়-গল্পের বই দশবার চাইলে পাঁচবার তো নিদেনপক্ষে মিলেই যায়! কিন্তু সচ্ছলতার নির্ভরতার চেয়েও বড় ‘প্রিভিলেজ’ হল আমাদের জীবনের এক পুঁজি যা থেকে বাংলাদেশের অধিকাংশ মেয়েশিশু বঞ্চিত -- সেই পুঁজির নাম ‘স্বপ্ন’। আমাদের মা কিংবা বাবা যেদিন প্রথম আমাদের নির্ভরতার-আঙুল-পেলেই-মুঠি-মুড়ে-ধরে-ফেলার ছোট্ট হাত ধরে এই বিশাল চত্বরের মাঝে ছেড়ে দিয়েছিলেন, সেদিন প্রথম নিজেদের স্বপ্ন আমাদের মাঝে সংক্রমিত করেছেন তাঁরা। তাঁদের মেয়েদের রয়েছে স্বপ্ন দেখার অধিকার, ব্যক্তিত্ববিকাশের অধিকার, বড় হয়ে সমাজ-গড়ায় নিজ নিজ হাতের ছাপ রাখার অধিকার -- তাঁরা জানতেন এবং বিশ্বাস করতেন! বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক, প্রায়-নিষ্ঠুর পরীক্ষা—প্রথম শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার ভয়-ভীতি-বাধার তীব্রতা অতিক্রম করে অবলীলায় মা’কে স্কুলগেটের বাইরে পিছে ফেলে এসে নতুন বন্ধুর পাশে এসে বসতে পেরেছি আমরা শুধু ওই স্বপ্ন-সংক্রমণের কারণে। ওই সংক্রমণ আমাদের পুতুলের মত ঠুনকো শিশুশরীরে সঞ্চার করেছে অপার শক্তি। পাঁচ-ছয় বছর বয়সে মায়ের শ্রমে শিখে আসা বাংলা বর্ণমালা আর ইংরেজি এলফাবেট দিয়ে দুনিয়াটাকে দেখতে শিখেছি; পড়তে শিখেছি ক্লাসের আপার দেওয়া পাঠ; কাঁড়ি-কাঁড়ি হোমওয়ার্কের বোঝা বহন করেছি; সমাধান করেছি বীজগণিতের খটোমটো ফরমুলা; চোখ গোল করে গল্প শুনেছি ইতিহাসের; পাবলিক পরীক্ষার ভুতুড়ে সকালে চুলে তেল দিয়ে টান-টান করে বেণি বেঁধে কলমের খস-খসানিতে পৃষ্ঠা ভরিয়েছি; কেমিস্ট্রি ল্যাবের বীকারে সবজে-নীল অধঃক্ষেপ দেখে পৃথিবীকে রঙিন ভেবেছি; বিতর্কের মঞ্চে প্রতিপক্ষের তার্কিক আর বিচারক প্যানেলকে চমৎকৃত করেছি বৈশ্বিক অর্থনীতির ভরাডুবির খতিয়ান দেখিয়ে; বিশাল কাঠের বোর্ডে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে মেধাবী সিনিয়ার আপুদের নাম, সেই ১৯৬১ সাল থেকে; ঘাড় কাত করে সেই নামগুলো দেখেছি আর ভেবেছি ওদের মত হতে পারব কিনা। আর বাড়ি এসে মাকে দিয়েছি তাচ্ছিল্যের ভর্ৎসনা -- “ধ্যুত, আমাদের আপা বলেছেন এটাই ঠিক। মা, তুমি কিচ্ছু জানো না!” মা নিশ্চয়ই খুশি হয়ে ভাবতেন, “ছোট্ট মেয়েটা কত বড় হয়ে যাচ্ছে!” বাবাকে বলতেন, “জানো তোমার মেয়ে স্কুলে কী কী করে? কী কী শেখে?” বাবা আত্মপ্রসাদের হাসি হাসতেন। মুখে বলতেন না, কিন্তু মনে…
স্বাগতম।