তাই আজ বাংলার সব কিশোরের হাতে একটি করে ‘ছোট্ট রাজপুত্র’ আমরা তুলে দেব না কেন, যখন আনন্দময়ী মজুমদারের একটা সফল অনুবাদ আমাদের হাতের কাছেই পৌঁছে দিয়েছে বইটির প্রকাশক। [...]

পুরনো বইপ্রস্থ বইপ্রস্থ ২৫ আগস্ট ২০০৯ বইপ্রস্থ ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ বইপ্রস্থ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১০ বইপ্রস্থ ২৬ জুন ২০১২ বইপ্রস্থ ২৩ এপ্রিল ২০১৩ বইপ্রস্থ ১৮ নভেম্বর ২০১৩ বইপ্রস্থ ১১ মে ২০১৪ বইপ্রস্থ ৫ নভেম্বর ২০১৫ যুদ্ধসুদ্ধ রিক্তশূন্য ছোট্ট রাজপুত্র ।। অঁতোয়ান দ্য স্যাঁৎ-একজ্যুপেরি ।। ক্যাথরিন উডস, টি.ভি.এফ. কাফ এবং রিচার্ড হাওয়ার্ডের যথাক্রমে ১৯৪৩, ১৯৯৫ ও ২০০০ সালে প্রকাশিত তিনটি ইংরেজি ভাষান্তর অবলম্বনে অনুবাদ : আনন্দময়ী মজুমদার ।। প্রকাশক : প্রকৃতি-পরিচয় ।। মূল্য : ৪৪০ টাকা [ কখনো কখনো আমার মনে হয় বইগুলো সুন্দর না হলে বিক্রি হবে কীকরে? কিন্তু ‘ছোট্ট রাজপুত্র’ এই সুন্দর বইটিও কি বিক্রি হবে না? যদি না হয় তাহলে বলতেই হবে আমদের বইয়ের বাজারের হতাশা অচিকিৎস্য, এবাজার চিরমহামন্দার দখলে, আমরা যে যার মতো এর সাথে লেগে থাকতে পারি কিন্তু ±১২০০ কপি ‘ছোট্ট রাজপুত্র’ যদি এক বছরে বিক্রি না হয় তা হলে নান্দনিক বইয়ের প্রকাশনার চিন্তা প্রকাশকরা সচরাচর করার সাহস না পেলে তাদেরকে দোষ দেয়ার কোনো অবকাশ আমাদের মতো পাঠকদের আর থাকবে না। কাজেই প্রকাশকদের উপর আরো নান্দনিক বই ছাপার চাপ সৃষ্টি করার জন্য হলেও কি আমরা ±১২০০ কপি ‘ছোট্ট রাজপুত্র’ ছয় মাসে নিঃশেষ করে দিতে পারি না? ] এবইটি ছোটদের জন্য বলার চেয়ে আমি বলি এবইটি ছোট্ট রাজপুত্রকে জানার জন্য – যেজানা ছোট বড় উভয়ের জন্য সমান খাপছাড়া সমান অবিস্মরণীয়। ‘ছোট্ট রাজপুত্র’ পড়তে গেলেই আমার মনে হয় বই রহস্যময় না হলে তা ছোটদের যেমন ভাল লাগে না বড়রাও যত বাগাড়ম্বরই করুক তাদেরও ভাল লাগার জো থাকে না। এবং এদিক থেকে ‘ছোট্ট রাজপুত্র’ উতরে যাওয়া একটি বই। আমার কাছে ‘ছোট্ট রাজপুত্র’ যুদ্ধের বই, আমার কাছে ‘ছোট্ট রাজপুত্র’ একাকীত্বের বই, আমার কাছে ‘ছোট্ট রাজপুত্র’ দায়িত্বের বই, আর সবার ওপরে আমার কাছে ‘ছোট্ট রাজপুত্র’ বন্ধুত্বের বই। ‘ছোট্ট রাজপুত্র’ অত্যন্ত জটিল একটি বই, যেজটিলতার দায়টা আমাদের, বড়দের, যাদেরকে সবকিছু ব্যাখ্যা দিয়ে বুঝিয়ে দিতে হয়, এবং তারাই কোনো কিছু বুঝতে না পেরে দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো যখন ঝাঁপিয়ে পড়ে সবকিছু শুধরে দিতে – তখনই যুদ্ধ সন্ত্রাস গণহত্যা নির্যাতন নির্বাসন জলবায়ুপরিবর্তনের দণ্ড ভোগ করতে হয় আপামর জীবজগতকে, এবই আধুনিক এক লেখকের হাতে টেক্সট ও জলরঙ মিলে…

কেন ফরাসি ভাবুক এবং কেন উত্তরআধুনিকতা নিয়ে বই? [...]

পুরনো বইপ্রস্থ বইপ্রস্থ ২৫ আগস্ট ২০০৯ বইপ্রস্থ ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ বইপ্রস্থ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১০ বইপ্রস্থ ২৬ জুন ২০১২ অধিবিদ্যাসংহারকাব্য উত্তর-আধুনিক চিন্তা ও কয়েকজন ফরাসি ভাবুক।। অমল বন্দ্যোপাধ্যায় ।। এবং মুশায়েরা, কলকাতা।। প্রথম প্রকাশ জানুয়ারি ২০১১ ।। মূল্য ২৫০ ভারতীয় টাকা ।। মূলত অমল বন্দ্যোপাধ্যায় চারজন ফরাসি দার্শনিকের দর্শন নিয়ে আলোচনা করেছেন, Jacques Derrida | জাক দেরিদা (১৯৩০ – ২০০৪), Michel Foucault | মিশেল ফুকো (১৯২৬ – ১৯৮৪), Jacques Lacan | জাক লাকঁ (১৯০১ – ১৯৮১) ও Gilles Deleuze | জিল দ্যলজ (১৯২৫ – ১৯৯৫)। বইয়ের একবারে শেষে তিনি আরেক ফরাসি দার্শনিককে নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছেন, তিনি হলেন, Jean Baudrillard | জঁ বোদ্রিয়ার (১৯২৯ – ২০০৭)। এছাড়া জার্মান দার্শনিক Friedrich Nietzsche | ফ্রিডরিশ নিৎসের (১৮৮৪-১৯০০) দর্শন নিয়ে জাক দেরিদা ও জার্মান দার্শনিক Martin Heidegger | মার্টিন হাইডেগারের (১৯৮৯ – ১৯৭৬) দার্শনিক আলোচনা নিয়ে অমল বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি বক্তৃতার সারাংশও স্থান পেয়েছে। দর্শনপাঠের একটা ঝুঁকির দিক হল এর ক্রমাগত গোলকধাঁধা, এবং আনন্দ এখানে, যদিও আমার ব্যক্তিগত, এই গোলকধাঁধায় প্রবিষ্ট হতে ভাল লাগে এবং এই বইটিও আমার অন্যান্য পছন্দের দর্শন ও দর্শন বিষয়ক বইয়ের মতো আমাকে টানা আবিষ্ট রেখেছে শুরু থেকে এর শেষ ২৩১ পৃষ্টাংক পর্যন্ত। অমল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষা যদিও সৃষ্টিশীল উচ্চাঙ্গের বাংলা নয়, কিন্তু তার ভাষা দার্শনিক চিন্তা প্রকাশের উপযুক্ত এবং পরিশ্রমী। ছোটবেলা থেকে অমল বন্দ্যোপাধ্যায় ফরাসি ভাষা শিখেছেন, উপনিবেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, চন্দননগরে এবং সে চর্চা তিনি অক্ষুন্ন রেখেছেন এবং উত্তাল মে৬৮-এর পর সেবছরের সেপ্টেম্বর থেকে কয়েক বছর তিনি প্যারিসেও ছিলেন ফরাসি সরকারের দীর্ঘমেয়াদি বৃত্তি নিয়ে। আরো গুরুত্বপূর্ণ হল তিনি জার্মান ভাষাও ভালই জানেন এবং ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল করেছেন এবং পরবর্তীতে কর্মসূত্রে দুদশক লন্ডনে কাটিয়েছেন এবং সেসময় বৃটিশ বিবিধ জার্নালে তার ভাষা ও দর্শন বিষয়ক প্রবন্ধও ছাপা হয়েছিল। কয়েকটি দর্শনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভাষা জানার ফলে তার আলোচনায় একটা চমৎকার পটভূমি অনায়াসে নাটকের দৃশ্যপটের মতো উপস্থিত থাকে। বইয়ের একবারে শুরুতে অমল বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের সম্বন্ধে একথাগুলো আমাকে খুবই আকর্ষণ করেছে প্রচলিত অর্থে আমি লেখক নই। যেহেতু কপট বিনয় আমার চরিত্রানুগ নয় আমি নিজেকে অলেখক আখ্যাও দিতে পারি না।…

ঘৃণা করি... ভালবাসি... বাঁচি[...]

আমি ইসলাম ঘৃণা করি, হিন্দুত্ববাদ ঘৃণা করি, ঘৃণা করি বৌদ্ধবাদ, খ্রিস্টবাদ, শিখবাদ, জৈনবাদ ও অন্যান্য সব ধর্মীয় অনুশাসন, আমি নাস্তিক্যবাদও ঘৃণা করি। আমি সংস্কৃতি ভালবাসি, আমি সংস্কৃতিতে বাঁচি।

যারা বস্তুগত শক্তির সাহায্যে ক্ষমতাশালী জাতি গড়তে চায় তারা ইতিহাস জানে না ও সভ্যতাকেও বুঝতে পারেনি। নিছক শক্তির উপর নির্ভরতা বর্বরতার লক্ষণ, যারা তার উপর নির্ভর করেছিল তারা হয় ধ্বংস হয়েছে অথবা বর্বরই থেকে গিয়েছে।[...]

সোনা, অহিফেন আর যৌনসঙ্গী এই তিনের প্রতি ছিল চীনাদের আকর্ষণ – প্রবীণ চীনের সেই আকর্ষণের বস্তুতান্ত্রিকতা ও গণমানুষের উপর অনিঃশেষ শোষণের বিরুদ্ধে নবীন চীন রুখে দাঁড়িয়েছিল – তাদের সাম্যবাদী বস্তুতান্ত্রিকতার পরিকল্পনায় প্রধান বাহন ছিল শিল্পমুখী যন্ত্রশক্তি – এদুয়ের বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের আদর্শবাদ বা আধ্যাত্মবাদ মোটেই সুবিধা করতে পারেনি – তাই ১৯২৪ সালে রবীন্দ্রনাথের চীন ভ্রমণ ব্যর্থ না হলেও নবীন চীনের কাছে অপমানিত হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। পিকিং-এ যেখানেই বক্তৃতা দিতে গেছেন তিনি, তার বিরুদ্ধে চীনের নতুন যুগের ছোকরারা চীনা ভাষায় মুদ্রিত প্রচারপত্র বিলি করেছিল। রবীন্দ্রনাথ যাদেরকে চীনের ছোকরা বলেছিলেন তারা কারা – অবশ্যই ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থকেরা – যাদের মধ্যে তখন চল্লিশোর্ধ বিখ্যাত চীনা সাহিত্যিক লু স্যুনও ছিলেন। এই বস্তুবাদীদের কার্যকলাপে রবীন্দ্রনাথ এতই বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন যে শেষ পর্যন্ত সফর অসমাপ্ত রেখেই তিনি পিকিং ত্যাগ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ ছিল তাদের – রবীন্দ্রনাথ প্রাচীন চীনের সভ্যতার গুণকীর্তন করেছিলেন, আধ্যাত্মবাদী ব্রহ্মধর্ম ও উপনিষদের বাণী প্রচার করেছিলেন, বৌদ্ধধর্মের সূত্রে ভারত-চীন সেতুবন্ধের কথা বলেছিলেন, চীনের প্রগতিশীল সহিংসতাকে গান্ধীর অহিংস নীতি অনুসরণের

পরামর্শ দিয়েছিলেন আর বস্তুবাদী বিপ্লবের যন্ত্রনির্ভর শিল্পের দৈত্যের বিপরীতে মানুষের মধ্যে দেবতার আকাঙ্ক্ষায় উচ্চতর স্বর্গ লাভের চূড়ান্ত মানবিক উৎকর্ষের কথা বলেছিলেন। তিনি চীনের তরুণদের উদ্দেশ্যে সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছিলেন যারা বস্তুগত শক্তির সাহায্যে ক্ষমতাশালী জাতি গড়তে চায় তারা ইতিহাস জানে না ও সভ্যতাকেও বুঝতে পারেনি। নিছক শক্তির উপর নির্ভরতা বর্বরতার লক্ষণ, যারা তার উপর নির্ভর করেছিল তারা হয় ধ্বংস হয়েছে অথবা বর্বরই থেকে গিয়েছে। এরকমের উচ্চারণের বিরুদ্ধে চীনের যুবকেরা চীনা ভাষায় চিৎকার করে বলেছিল, পরাধীন দেশের দাস ফিরে যাও – আমরা দর্শন চাই না, বস্তুবাদ চাই। কেন তার বিরুদ্ধে এইসব বিরোধিতামূলক প্রচারপত্র, প্ল্যাকার্ড, চিৎকার? রবীন্দ্রনাথ জানার চেষ্টা করেছিলেন এবং জেনেও ছিলেন। কিন্তু তিনি তার উপলব্ধিতে স্থিতধী ছিলেন – আত্মিক শক্তির উচ্চতায় তিনি বিশ্বাসী ছিলেন – তিনি বারবার আধ্যাত্মিক সভ্যতা ও বিজ্ঞানের পথে পার্থিব উন্নতির সমন্বয় ঘটানোর পথেই মানুষের মুক্তির আদর্শবাদে নিমগ্ন ছিলেন। এই সীমাহীন দূরত্ব চীনের বিপ্লবী যুবশক্তির কাছে রবীন্দ্রনাথকে ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ পরিচয়ে পর্যবসিত করেছিল। এ তো গেল আধ্যাত্মবাদ ও বস্তবাদে অটল বিশ্বাসের কারণে দুপক্ষের সংঘাতের জ্বলন্ত দিক। কিন্তু এটাও তো জানতে…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.