“এখন আমাদের দাবি, যে করেই হোক খুনিদের বিচারের আওতায় আনতে বাংলাদেশ সরকার তার সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করুক। আমি মনে করি না যে, শুধুমাত্র খুনিদের ধরাটাই যথেষ্ট। আমি সরকারের প্রতি সন্ত্রাস নির্মূলের জন্য আবেদন জানাই, সেই সাথে লেখক-হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় না আনার যে আইনি সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা বন্ধ করার দাবি জানাই।” — রাফিদা আহমেদ বন্যা

সেন্টার ফর ইন্‌কোয়াইরি-র ওয়েবসাইটে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ড. অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী বিজ্ঞান-লেখক রাফিদা আহমেদ বন্যার আনুষ্ঠানিক বিবৃতি। বাংলা কমিউনিটি ব্লগ এলায়েন্স-এর পক্ষ থেকে তাঁর এই বিবৃতির বাংলা অনুবাদ এখানে সংকলিত হলো ফরিদ আহমেদের অনুবাদে, মুক্তমনা-র সৌজন্যে। . . . রাফিদা আহমেদ বন্যার বিবৃতি : আমার স্বামী অভিজিৎ রায় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদ নিয়ে লেখালেখি করতেন, তিনি ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনামুখর ছিলেন। শুধুমাত্র এই কারণেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। গত ছাব্বিশে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনাকীর্ণ ক্যাম্পাসে আমরা দুজনে হামলার শিকার হই। অভিজিৎকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আমি কোনোক্রমে বেঁচে যাই। তাঁর স্ত্রী, একই ধারার লেখক এবং একজন মুক্তচিন্তক হিসাবে, আমি এই পৈশাচিক সন্ত্রাসের তীব্র নিন্দা করি। ঐতিহাসিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হচ্ছে সকল প্রগতিশীল আন্দোলনের কেন্দ্রভূমি। অভিজিৎ নিজেও এই ক্যাম্পাসেই বেড়ে উঠেছেন। মৃত্যুর হুমকি থাকা সত্ত্বেও আমরা কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারি নি যে, এরকম একটা জঘন্য অপরাধ এখানে সংঘটিত হতে পারে। এই অপরাধ শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ছিলো না, ছিলো বাক স্বাধীনতা এবং মানবতার বিরুদ্ধে। আমি আর অভিজিৎ যখন নৃশংসভাবে আক্রান্ত হচ্ছি, স্থানীয় পুলিশ খুব কাছেই নিষ্ক্রিয়ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো। এখন আমাদের দাবি, যে করেই হোক খুনিদের বিচারের আওতায় আনতে বাংলাদেশ সরকার তার সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করুক। আমি মনে করি না যে, শুধুমাত্র খুনিদের ধরাটাই যথেষ্ট। আমি সরকারের প্রতি সন্ত্রাস নির্মূলের জন্য আবেদন জানাই, সেই সাথে লেখক-হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় না আনার যে আইনি সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা বন্ধ করার দাবি জানাই। আমি যে নৃশংস ঘটনা ঘটেছে তার প্রতি সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং আমাদের সাথে এক হয়ে সুবিচার দাবি করার আহ্বান জানাচ্ছি। আরো পড়ুন/শুনুন : বিবিসিকে দেয়া বন্যার ইংরেজি সাক্ষাৎকার : এখানে। বিবিসি বাংলাকে দেয়া বন্যার বাংলা সাক্ষাৎকার : এখানে।  

[...] ব্যথার সীমা দিয়ে এইভাবে দেশও চেনা যায়, বাংলা নামের দেশ, বাংলাদেশ। এই এত্তটুকুন নাম, অর্ধশতকও হয়নি তার স্বাধীনতালাভের, এত্তটুকুন দেশ (ফুলবাতাসা-পালের নাও-তেঁতুলতলা-শাপলাপুকুরের দেশ), কিন্তু হাজার মাইল দূরের কত ছেলেমেয়েদের মনে চুপচাপ বসে থাকে এই দেশ। আওয়াজ করে না, নড়াচড়াও না, শুধু মাঝে মাঝে ভিতরে মুচড়ে দেয় ব্যথার সীমানা, আমরা বুঝতে পারি ঐ যে আমার দেশ, ঐ যে আমার দেশের ইতিহাস, ভয়াল গণহত্যার আর গণধর্ষণের এবং তারপর আবার উঠে দাঁড়ানোর। [...]

আমার ছোট্ট ছেলে জন্মাবার পর জীবনের একপর্যায় থেকে নিজের শরীরের নানান অংশ নিজেই টেনে ব্যথা পেয়ে চিৎকার দিত, এমন করে সে চিনেছিল নিজের শরীরের সীমা। কোথায় লাগলে নিজের শরীরে বাজে এমন করে। এইভাবে মানবশিশু হাতড়ে হাতড়ে ব্যথার সীমানা দিয়ে নিজের আকার আবিষ্কার করে সেটা দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম আমি। ব্যথার সীমা দিয়ে এইভাবে দেশও চেনা যায়, বাংলা নামের দেশ, বাংলাদেশ। এই এত্তটুকুন নাম, অর্ধশতকও হয়নি তার স্বাধীনতালাভের, এত্তটুকুন দেশ (ফুলবাতাসা-পালের নাও-তেঁতুলতলা-শাপলাপুকুরের দেশ), কিন্তু হাজার মাইল দূরের কত ছেলেমেয়েদের মনে চুপচাপ বসে থাকে এই দেশ। আওয়াজ করে না, নড়াচড়াও না, শুধু মাঝে মাঝে ভিতরে মুচড়ে দেয় ব্যথার সীমানা, আমরা বুঝতে পারি ঐ যে আমার দেশ, ঐ যে আমার দেশের ইতিহাস, ভয়াল গণহত্যার আর গণধর্ষণের এবং তারপর আবার উঠে দাঁড়ানোর। কমলা কালেকটিভের ‘বীরাঙ্গনা’ দেখতে গিয়েছিলাম, মরিয়মের গল্প, পরে খুশি-মায়া-মেহেরের গল্প, আরো পরে কালো পর্দা জুড়ে এক এক করে ফুটে ওঠা টকটকে লাল হরফে বীরাঙ্গনাদের নাম, বাহাতুন-জয়গুন-শামসুন্নাহার-রাজুবালা-গুরুদাসীদের নাম... সেই নামগুলোই বিধুর গল্প। আহা, পানির নিচে জোঁকের—জলজ ফুলের মৃণালের—মাছের ভাই ভাই হয়ে নাক ভাসিয়ে থাকা গর্ভিণী নারীর গল্প। শুকনো পুকুরে লুকাবার চেষ্টা করা নারীর গল্প। মায়ের গায়ে আগরবাতির মিষ্টি গন্ধ শোঁকা মেয়েশিশুর গল্প। তেঁতুলগাছে উঠে দুরন্তপনা করতে গিয়ে প্রেম আবিষ্কার করা কিশোরীর গল্প, মাথায় চালের বস্তা আর কাঁখে শিশুসন্তান নিয়ে ভারতে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করা নারীর গল্প। লোককাহিনীর রাজকন্যা কমলার শুষ্ক সরোবরে জল আনতে গিয়ে আত্মাহুতি দেবার গল্প। শো’র উদ্বোধন করতে গিয়ে স্বনামধন্য বৃটিশ-বাংলাদেশী নৃত্যশিল্পী আকরাম খান স্মরণ করেন মার্টিন লুথার কিং-এর অমোঘ বাণী — “দেয়ার কামস আ টাইম হোয়েন সাইলেন্স ইজ বিট্রেয়াল”, এর চেয়ে সংক্ষেপে বাঙালি হিসেবে আমাদের ব্যর্থতাকে বোধহয় তুলে ধরা যায় না। বীরাঙ্গনারা ফিরে এসেছিলেন পাকবাহিনী ও তার দোসরদের পরিখা থেকে — ক্যাম্প থেকে, যেমন করে ফিরে এসেছিলেন যুদ্ধজয়ী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা। বীরাঙ্গনাদের কাউকে কাউকে তাঁদের পরিবার ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করেছিলেন — তাঁরা চলে গেছেন অজানার পথে—অচেনা গ্রামে—পতিতালয়ে, আর কাউকে কাউকে তাঁদের পরিবার গ্রহণ করেছিলেন একটিমাত্র শর্তে, সে শর্তের নাম নৈঃশব্দ্য। জন্মান্ধ যেমন আমৃত্যু অন্ধকার এক পৃথিবীতে সাঁতরে ফেরে, বীরাঙ্গনাদের অনেকে তেমনি এক অন্ধকার নৈঃশব্দ্যে সাঁতরে ফিরেছেন, তাঁদের মৃত্যুর সাথে সাথে তাঁদের…

ফারাবী নামধারী অনলাইনের এক ইতর শ্রেণির জঙ্গি সম্প্রতি "রকমারি.কম" নামের একটি বই বিক্রির ওয়েবসাইটের ওপর ফতোয়া জারি করেছে। সেই সাইটের তালিকায় অভিজিৎ রায়, রায়হান আবীরের মতো লেখকদের বই থাকায় সাইটের মালিকদের হুমকিসহ তাঁদের কার্যালয় আক্রমণের উস্কানি দিয়েছে এই জঙ্গি। [...]

৪৫১ ডিগ্রি ফারেনহাইট। রে ব্রাডবারি-র এই নামের উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে এক বন্ধুর কাছ থেকে জেনেছিলাম — এই তাপমাত্রায় নাকি বই পোড়ে। পৃথিবীতে বই পোড়ানোর মচ্ছব নতুন না। সেই প্রাচীন যুগ থেকে শুরু। ব্যাবিলনীয়রা পুড়িয়েছে, এথেনীয়রা পুড়িয়েছে, রোমানরা পুড়িয়েছে। এমনকি গত শতকে নাজি জার্মানিতে রীতিমতো বনফায়ার করে বই পোড়ানো হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্র বাহিনীও পিছিয়ে ছিল না। তাদের বোমারু বিমানগুলো টার্গেট হিসেবে প্রায়ই খুঁজে নিতো জার্মানির লাইব্রেরিগুলোকে। পঞ্চাশের অন্ধকার দশকে ম্যাকার্থিজমের বিশুদ্ধি অভিযানে আমেরিকান মননকে কমিউনিজমের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যও বই পোড়ানো হয়েছে। বই পোড়ানো ছাড়াও সেনসরশিপের আরও বহু রকম চেহারা দেখেছি আমরা। সেখানে যোগ হয়েছে আরও নতুন কয়েকটি পন্থা। ফারাবী নামধারী অনলাইনের এক ইতর শ্রেণির জঙ্গি সম্প্রতি 'রকমারি ডট কম' নামের একটি বই বিক্রির ওয়েবসাইটের ওপর ফতোয়া জারি করেছে। সেই সাইটের তালিকায় অভিজিৎ রায়, রায়হান আবীরের মতো লেখকদের বই থাকায় সাইটের মালিকদের হুমকিসহ তাঁদের কার্যালয় আক্রমণের উস্কানি দিয়েছে এই জঙ্গি। এই লেখকদের অপরাধ — তাঁরা নাস্তিক্যবাদী, তাঁরা বিজ্ঞান এবং প্রান্তিক দর্শনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সিরিয়াস লেখালিখি করেন। হুমকি দেয়া হয়েছে — অচিরেই এইসব নাস্তিক্যবাদী চিন্তার প্রচার বন্ধ না করা হলে সাইটের সাথে যুক্তদেরও ব্লগার রাজীব হায়দারের মতোই ভয়াবহ পরিণতি বরণ করতে হবে। হুমকি শুনে সাইটটির মালিক পক্ষ নতজানু তোষণ নীতির পথ ধরেছেন; তাঁদের পক্ষ থেকে হুমকি প্রদানকারীকে একরকম ক্ষমাপ্রার্থনা করেই আশ্বাস দেয়া হয়েছে — এমনটি আর কখনো হবে না। এ নিয়ে গত কয়েক ঘণ্টা ধরেই অনলাইনের ফোরামগুলো উত্তপ্ত। আহত প্রগতিশীলরা কেউ কেউ সাইটটির মালিক পক্ষের কাপুরুষতার সমালোচনা করছেন, কেউ হুমকি দিচ্ছেন সাইটটিতে নিজের একাউন্ট বাতিল করবার, কেউ সাইটটি বর্জনের ডাক দিচ্ছেন, চরম উদাস এবং রণদীপম বসুর মতো কেউ কেউ আবার প্রতিবাদ হিসেবে নিজেদের বইও সে সাইটের তালিকা থেকে প্রত্যাহারের দাবি তুলেছেন। 'রকমারি ডট কম' দেখা হল। প্রবল ক্ষমতাধর রথী-মহারথীদেরও একসময় দেখা হয়ে গেছে। কখনো জঙ্গি অপশক্তি কখনো সরকারের সাথে 'মত প্রকাশ' ইস্যুতে আপোস করতে কেউ তাঁরা কারো চেয়ে কম ছিলেন না। জলপাই শাসনামলে সুশীল চিন্তার কাণ্ডারী মহান ডেইলি স্টার পত্রিকা তার নির্যাতিত সাংবাদিক তাসনীম খলিলের পাশে দ্বিধাহীনভাবে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছিল বলে আমার মনে হয়েছে। বরং পত্রিকাটিকে দেখেছি উল্টো একের…

ক'দিন আগে ঘুম থেকে উঠেই দুঃসংবাদ। কবি জসীম উদ্‌দীনের বাগান আর নেই, সেখানে পাইলিং চলছে, ৭২ খানা অ্যাপার্টমেন্ট উঠবে সেখানে। আমার খালাতো বোন দুঃখ করে লিখেছে আর কোনো বৈশাখের ঝড়ের দিনে বস্তা ভরে ছেলেপুলেরা হৈ হৈ করে কাঁচা আম ভরে নিয়ে যাবে না, আর কোনোদিন টিয়ার ঝাঁক এসে ঠুকরে খাবে না পাকা কামরাঙা, শালিকের ঝগড়া শুনে কানে তালা লাগবে না। [...]

ক'দিন আগে ঘুম থেকে উঠেই দুঃসংবাদ। কবি জসীম উদ্‌দীনের বাগান আর নেই, সেখানে পাইলিং চলছে, ৭২ খানা অ্যাপার্টমেন্ট উঠবে সেখানে। আমার খালাতো বোন দুঃখ করে লিখেছে আর কোনো বৈশাখের ঝড়ের দিনে বস্তা ভরে ছেলেপুলেরা হৈ হৈ করে কাঁচা আম ভরে নিয়ে যাবে না, আর কোনোদিন টিয়ার ঝাঁক এসে ঠুকরে খাবে না পাকা কামরাঙা, শালিকের ঝগড়া শুনে কানে তালা লাগবে না। এই বাগানের সাথে আমাদের সম্বন্ধ বহুদিনের। তখন আমার মেজখালা বিয়ে হয়ে মুখোমুখি বাড়িতে এসে উঠেছেন, সে বাড়ির কয়েকখানা কামরা ভর্তি বাঁধাইয়ের অপেক্ষারত ছাপা বই, মেঝে থেকে ছাদ অব্দি। সাহিত্যিক আকবর হোসেনের বাড়ি, সে বাড়িতে একদা সাহিত্য মজলিশ হতো, সে সভায় আসতেন জসীম উদ্‌দীন, আসতেন ফররুখ আহমদ। বাড়ির সামনে কয়েকটা আমগাছ, একটা সুবিশাল ব্যাসের গোল বারান্দা, সে বারান্দায় তেলের শিরচিহ্ন দেয়া আরামকেদারা। বাড়ির মেঝেগুলি সেকালের পেটেন্ট স্টোনের, অদ্ভুত মেদুর সবুজ তার রঙ। তেতলার ছাদে ফুটছে গরমকালের ফুল। রাত জেগে বিকম পরীক্ষার্থী মামারা পড়া মুখস্ত করছে আর শেষরাতে টয়লেটে যাবার সময় চোর ধরতে গিয়ে আছাড় খেয়ে পড়ে পা ভেঙে ফেলছে, পরীক্ষা আর দেয়া হচ্ছে না। শীতকালের সন্ধ্যাবেলা বিজলিবাতির আলো জ্বালিয়ে খেলা হচ্ছে ব্যাডমিন্টন নয় ক্যারম। চাচা-ভাতিজা, মামা-ভাগনে মিলে ধুন্ধুমার ঝগড়া চলছে হারজিত নিয়ে। এ বারান্দা থেকে ঐ বারান্দায় চলছে মন দেয়া-নেয়া, তারই রেশ ঘুড়ি উড়ানো বিকালে, তারই সাগা চলছে মহররমের রুটি-হালুয়া বিতরণের মিষ্টি বেলায়। দশ ভাইবোনের সেই সরগরম বাড়ির সামনেটায় জসীম উদ্‌দীনের বাগান, দিনমানেও অন্ধকার হয়ে থাকত। ভাতশালিকের চিৎকারে কানে তালা লেগে যেত সন্ধ্যাবেলা। দুপুরবেলা ছিল শুনসান। তখন ভেড়ামারার চাচীর লালচে ঝোলে টুপ্পুস হয়ে ফুলে ওঠা ভাজা ডিম দিয়ে ভাত খেয়ে আমরা সেই সবুজ মেঝেয় গড়াগড়ি দিয়ে ভাতঘুম দেয়ার চেষ্টা করতাম। গোল বারান্দার পাশের ঘরগুলি কী যে শীতল হয়ে থাকত, যেন স্বতঃবাষ্পীভবনক্ষম কলসের তলায় এসে শয্যা পেতেছি। (জলের ধারে শুলেম এসে শ্যামল তৃণাসনে), হাতে মাঝে মাঝে ঐ ঘরের বই থাকত, 'কি পাইনি', অথবা নিজের সংগ্রহের বিমল কর 'বালিকা-বধূ' -- আপডাউন ট্রেনের শব্দ, চাঁদের আলোয় চিকচিকে রেল চলে যাওয়া, ডেঁপো বোনজামাইয়ের কাছ থেকে লব্ধ চুম্বনজ্ঞান, পেপারমিন্টের দানা -- কি যে সুন্দর সে উপন্যাস। আমার একখানা টিডিকে ক্যাসেটে ছিল হিন্দিতে চিত্রায়িত 'বালিকা-বধূ'র গান, "বড়ে…

৫ জানুয়ারির নির্বাচন শুধু বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মেরুকরণ সুস্পষ্ট করে তোলেনি, পরাশক্তিগুলোর ভূমিকাও বিন্যস্ত করেছে নতুন করে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে সহিংসতার মধ্য দিয়ে একটি বিতর্কিত নির্বাচনপদ্ধতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে গত কয়েক মাসে অসংখ্য হত্যার পাশাপাশি ৩৫ হাজার কোটি টাকার ধ্বংসস্তূপ তৈরি করে একটি মূল্যহীন নির্বাচনকে ‘বড় বেশি’ মূল্যবান করে তুলেছে নির্বাচনবিরোধী বিরোধী দলগুলো। [...]

৫ জানুয়ারির নির্বাচন শুধু বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মেরুকরণ সুস্পষ্ট করে তোলেনি, পরাশক্তিগুলোর ভূমিকাও বিন্যস্ত করেছে নতুন করে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে সহিংসতার মধ্য দিয়ে একটি বিতর্কিত নির্বাচনপদ্ধতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে গত কয়েক মাসে অসংখ্য হত্যার পাশাপাশি ৩৫ হাজার কোটি টাকার ধ্বংসস্তূপ তৈরি করে একটি মূল্যহীন নির্বাচনকে ‘বড় বেশি’ মূল্যবান করে তুলেছে নির্বাচনবিরোধী বিরোধী দলগুলো। নির্বাচন কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো বিভক্ত হয়ে পড়ে মোটামুটিভাবে তিনটি ভাগে; যেগুলোর একটিতে রয়েছে ‘সেক্যুলার’ কিংবা ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শক্তি হিসেবে ধর্মীয়-মৌলবাদী-জাতীয়তাবাদী ডানপন্থী রাজনৈতিক শক্তির কাছে অভিযুক্ত ডানপন্থী আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি বাম-গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সামরিক শাসনকালীন সময়ে গঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি এবং কয়েকটি ধর্মবাদী দল। এ ধারার প্রত্যক্ষ প্রতিপক্ষ হল নির্বাচন বর্জনকারী ধর্মীয়-মৌলবাদী-জাতীয়তাবাদীদের ডানপন্থী রাজনৈতিক জোট, যেটির মধ্যমণি বা নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি। এর বাইরে রয়েছে আরেকটি ক্ষীণ রাজনৈতিক স্রোতধারা, যেটিতে অবস্থান করছে বিভিন্ন বামপন্থী রাজনৈতিক দল। এই ধারায় সংঘবদ্ধভাবে নির্বাচন বর্জনকারীদের সারিতে রয়েছে সিপিবি-বাসদের ঐক্যজোট– যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবির সূত্রে বিএনপিসহ বিভিন্ন ধর্মবাদী-মৌলবাদী-জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে অভিন্ন অবস্থানে থাকলেও, মৌলবাদী রাজনীতির বিরোধী হওয়ায় ঐক্যবদ্ধ কিংবা যুগপৎ আন্দোলন থেকে দূরে ছিল। তা ছাড়াও রয়েছে কয়েকটি বামপন্থী দল– যারা তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির কারণে নয়, বরং নীতিগত কারণেই যে কোনো নির্বাচন বর্জন করে থাকে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও তাদের সে সিদ্ধান্তের ব্যত্যয় ঘটেনি। ২ সুশীল সমাজের বিভিন্ন প্রতিনিধি গত কয়েক মাস ধরে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে ‘নির্বাচনের পদ্ধতিগত বিতর্ক’ হিসেবে চিহ্নিত ও সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করেছে। তাই নির্বাচন বর্জনকারীরা ভবিষ্যতে যুদ্ধাপরাধী বিচারের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করার হুমকি দিলেও, বর্জনকারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের প্রতিনিধিত্বশীল কোনো কোনো ব্যক্তি সে সম্পর্কে নিরব থেকেছেন। দেশজুড়ে গাছকাটার নৃশংস উন্মত্ততা চললেও গাছের গোড়া জড়িয়ে ধরে কাঁদতে সক্ষম কোনো সুশীলকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির সিদ্ধান্ত (পরে যা কার্যকরও হয়েছে) ঘোষণার পর তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার জন্যে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও কর্মীদের দৃষ্টিকটূ তৎপরতা দেখা গেলেও, বিশ্বজিতের হত্যাকারীদের ফাঁসির রায় ঘোষণার পর তাদের কাউকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। যে কোনো প্রাণদণ্ডের বিরুদ্ধে বলে দাবি করলেও তারা আসলে কখন সক্রিয় হন, কখন চুপ মেরে যান তা এখান থেকেই বোঝা সম্ভব। নির্বাচন কিংবা…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.