এই পোস্টের গত পর্বে সরকারের জবাবদিহিতায় কেবিনেটের ভূমিকা নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করা হয়েছিল। এই পর্বে আলোকপাত করার চেষ্টা করবো সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে সংসদীয় কমিটিগুলোর ভূমিকার ওপর। গত দু’বছরে জবাবদিহিতা ও দুর্নীতি দমন ইস্যুতে কম আলোচনা হয়নি। তৈরি হয়েছে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান, প্রস্তাবিত হয়েছে নতুন নতুন কৌশল। সে-সব নিয়ে আলোচনা থেকে আপাতত বিরত থাকছি। সে-সবের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, প্রচলিত আইনে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক জবাবদিহিতা কাঠামোর আওতাতেই কার্যকর কিছু বিধান রয়েছে; সে-বিষয়ে আলোচনা করতেই এই পোস্ট। এই পোস্টের আরেকটি লক্ষ্য হল — প্রচলিত আইনের আওতায় এই জবাবদিহিতা কাঠামোটি কেন আশানুরূপভাবে কাজ করছে না বা কী করলে তা কার্যকর হয়ে উঠতে পারে — তাও নিরূপণের চেষ্টা করা। কারণ, প্রথমেই এই বিষয়গুলোতে মনযোগ না দিয়ে বিকল্প হিসেবে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরির চেষ্টা করাটা কিছুটা অযৌক্তিক। কারণ, বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে-সব ‘ভূত’ রয়ে গেছে, সেগুলো যে নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরও ভর করবে না, তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে?
সংসদীয় কমিটি
সংবিধানের ৭৫(১) ধারায় বর্ণিত বিধানের আওতায় সংসদের সার্বিক পরিচালনার জন্য রয়েছে Rules of Procedure (লেখকের অনুবাদ : “কার্যবিধি”)। এই কার্যবিধির অধ্যায় ২৭-এ সংসদীয় কমিটিগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত বিধান রয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্রে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে এই কমিটিগুলোর ভূমিকা অপরিসীম।
পার্লামেন্টে মোশনের মাধ্যমে এই কমিটিগুলো গঠিত হয় ((কার্যবিধি, ধারা#১৮৮(১) ))। কোনো নির্দিষ্ট কমিটির ম্যানডেটের বিষয়ে যদি কোনো সাংসদের ব্যক্তিগত, আর্থিক বা সরাসরি অন্য কোনো স্বার্থ জড়িত থাকে তবে তিনি সেই কমিটির সদস্য পদ লাভে অযোগ্য বলে বিবেচিত হন। সংসদীয় এই কমিটিগুলো ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী। যেমন: কমিটি চাইলে সরকারি যে-কোনো দফতরের যে-কোনো রেকর্ড, দলিল, ফাইল কিংবা তথ্য পরীক্ষা করে দেখতে চাইতে পারে ((ধারা#২০২: (1) A witness may be summoned by an order signed by the Secretary and shall produce such documents as are required for the use of a Committee. (2) It shall be in the discretion of the Committee to treat any evidence given before it as secret or confidential. (3) No document submitted to the Committee shall be withdrawn or altered without the knowledge and approval of the Committee. )) । শুধু তাই নয়, (বিধি সাপেক্ষে) কমিটি চাইলে যে-কোনো ব্যক্তি বা সরকারি কর্মকর্তাকেও সরাসরি তলব করতে পারে ((ধারা#২০৩: A Committee shall have power to send for persons, papers and records: Provided that if any question arises whether the evidence of a person or the production of a document is relevant for the purposes of the Committee, the question shall be referred to the Speaker whose decision shall be final. Provided further that Government may decline to produce a document on the ground that its disclosure would be prejudicial to the safety or interest of the State. )) এবং শপথ গ্রহণ করিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে ((ধারা#২০৪, ২০৫))। কার্য পরিচালনার সুবিধার্থে কমিটি চাইলে যে-কোনো বিশেষজ্ঞের সহায়তা চাইতে পারে ((ধারা#২১৩(২) ))। কমিটির কার্যক্রম লিপিবদ্ধ ও নথিবদ্ধ করার বিধান রয়েছে ((ধারা#২০৬, ২০৭)) যার ওপর ভিত্তি করে সংসদের কাছে প্রতিবেদন পেশ করার বিস্তারিত বিধানও কার্যবিধিতেই বর্ণিত রয়েছে ((ধারা#২০৮ – ২১২))।
যে-সরকারের লুকানোর মত কিছু নেই, যে-সরকারের জনস্বার্থ বিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড নেই, সেই সরকারের তো জবাবদিহিতার প্রক্রিয়াকে দমিয়ে রাখারও কোনো কারণ নেই।
সংসদের স্থায়ী এই কমিটিগুলো ছাড়াও মন্ত্রণালয় ভিত্তিক পৃথক পৃথক ‘স্ট্যান্ডিং কমিটি’ গঠনের বিধান রয়েছে কার্যবিধিতে ((ধারা#২৪৬: Parliament shall, as soon as may be, after the inauguration of each new Parliament, appoint the Standing Committees on each Ministries which may, . . . -(a) examine draft Bills and other legislative proposals; (b) review the enforcement of laws and propose measures for such enforcement; and (c) examine any other matter referred to them by Parliament under Article 76 of the Constitution.] ))। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী (কিংবা প্রতিমন্ত্রী) পদাধিকার বলে দশ সদস্য বিশিষ্ট ((ধারা#২৪৭(১) )) এই কমিটিগুলোতে সদস্যপদ লাভ করেন। তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী কোনো অবস্থাতেই স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রধান (Chairman) হতে পারবেন না ((ধারা#২৪৭))। এ সংক্রান্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিধানটি হল — স্ট্যান্ডিং কমিটিগুলোকে প্রতি মাসে অন্তত একবার বাধ্যতামূলকভাবে সভার আয়োজন করতে হবে ((ধারা#২৪৮)) নিম্নলিখিত কার্যক্রম সম্পাদন করার লক্ষ্যে:
– প্রস্তাবিত কোন বিল নিরীক্ষণ
— সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম পর্যালোচনা
— মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে যে-কোনো অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত
— কমিটির ক্ষমতাধীন অন্য যে-কোনো বিষয়ে আলোচনা
— উপরে উল্লেখকৃত বিষয়গুলো বিবেচনাপূর্বক সুপারিশ প্রদান
এ তো গেল সংসদীয় কমিটিগুলো নিয়ে সাধারণ কিছু বিধান। কিন্তু বাস্তবে এই সব বিধান কীভাবে মানা হয়, কিংবা আদৌ মানা হয় কি না, তার ওপরই নির্ভর করে এই শক্তিশালী কমিটিগুলোর কার্যকারিতা। তাই কমিটি সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে আলোকপাত করা যাক। (বিষয়গত মিলের কারণে ব্যাখ্যার সুবিধার্থে ‘স্থায়ী’ কমিটি এবং ‘স্ট্যান্ডিং’ কমিটিকে সমার্থক ধরে নিয়ে নীচের আলোচনাটি করা হয়েছে)।
প্রথমত
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতা জনগণের হাতে। আর জনগণ সেই ক্ষমতার চর্চা করে তাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে। সরকার যে-ক্ষমতা বলে দেশ শাসন করে, সেই ক্ষমতা জনগণ থেকে উৎসারিত। এটি যতটা না ‘ক্ষমতা’, তার চেয়েও বেশি ‘দায়িত্ব’। যে-জনগণ এই দায়িত্ব ন্যস্ত করে, সেই জনগণের জানার অধিকার আছে তাদের নিযুক্ত প্রতিনিধিরা সে-দায়িত্বের কতটুকু পালন করছে, কীভাবে পালন করছে। দায়িত্ব ও কর্মকাণ্ডের নিয়মিত খতিয়ান জনগণকে দেয়ার প্রক্রিয়াকে সচল রাখার স্বার্থেই জাতীয় সংসদ। এ বিষয়ে মূল কাজটি সম্পাদনার কারিগরি ও অবকাঠামোগত সুব্যবস্থা রয়েছে সংসদীয় কমিটিগুলোর বিধিতেই। অথচ, সংসদীয় গণতন্ত্রের উন্মেষ অবধি প্রতিটি সরকারি দলই এই স্ট্যান্ডিং কমিটিগুলোকে গঠন এবং কার্যকর করতে গড়িমসি করেছে সবচাইতে বেশি। যেমন গত জোট সরকারের আমলের মেয়াদের প্রায় অর্ধেক সময়ই পেরিয়ে গিয়েছিল বিভিন্ন সংসদীয় কমিটিগুলোকে গঠন না করেই। দেরিতে হলেও যে-সব কমিটি গঠিত হয়েছিল, রহস্যজনকভাবে সে-সবের অধিকাংশেরই নিয়মিত বৈঠক হতো না। এ বিষয়ে পত্রপত্রিকায় একসময় লেখালিখিও হয়েছে প্রচুর। কয়েকটি কারণে এমনটি হয়েছে বলে ধারণা করা যায়। যে-সরকারের মন্ত্রী, আমলা, অনুসারীরা নিজেরাই দুর্নীতি ইত্যাদিতে বিভিন্ন কায়েমি গোষ্ঠীর সাথে জড়িত, সে-সরকার সঙ্গত কারণেই চাইবে না শাসন ব্যবস্থার এত উচ্চ পর্যায়ে এ ধরণের প্রতিষ্ঠান কার্যকর থাকুক। এখানে বিষয়টি সদিচ্ছার অভাবের, কিংবা ইচ্ছাকৃত গড়িমসির। ইতিপূর্বে সরকারি দলগুলো এই গড়িমসিগুলো সফলভাবে করে গেলেও প্রশ্ন উঠতেই পারে — বিরোধী দলগুলো কী করছিল তখন? তারা কেন সংসদে, মিডিয়ায় এবং রাজপথে এই কমিটিগুলোকে কার্যকর করার জোর দাবি তোলেনি? দেখে মনে হয়, এ যেন সরকারি দল আর বিরোধীদলগুলোর মধ্যে এক ধরণের অব্যক্ত সমঝোতা! সহজ কথায়, জনগণের একজন হিসেবে যা বুঝি তা হল — যে-সরকারের লুকানোর মতো কিছু নেই, যে-সরকারের জনস্বার্থ বিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড নেই, সেই সরকারের তো জবাবদিহিতার প্রক্রিয়াকে দমিয়ে রাখারও কোনো কারণ নেই।
ঠিক কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে সত্য উদ্ঘাটিত হবে তা যদি কমিটি সদস্যদের না জানা থাকে, তাহলে সত্য বেরোবে কীভাবে?
দ্বিতীয়ত
আবার কমিটিগুলো তৈরি হওয়াটা কেবল প্রথম ধাপ। এখানেই কাজ শেষ হয়ে যায় না। কারণ, যাঁদের নিয়ে কমিটিগুলো তৈরি হয়, তাঁদের যোগ্যতা, সরকারের কার্যপ্রক্রিয়ার ব্যাপারে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা, নিরপেক্ষতা, সততা এসবের ওপরই নির্ভর করে কমিটিগুলোর সাফল্য ও অবদান। উন্নত গণতন্ত্রের দেশগুলোতে সাধারণত এ ধরণের কমিটিতে সেই সব সাংসদদেরই রাখা হয় যাঁরা অনেক বেশি অভিজ্ঞ ও পোড়-খাওয়া। উদাহরণ দেয়া যাক। ধরি, কোনো এক সংসদীয় কমিটি তৈরি করা হল বেসরকারি বন্দর সংক্রান্ত কোনো চুক্তি কীভাবে সম্পাদিত হয়েছে তা খতিয়ে দেখার জন্য। সেখানে তদন্ত করার সদিচ্ছাটাই কিন্তু যথেষ্ট নয়। বিষয়গুলোর অনেক কারিগরি দিক থাকতে পারে যেগুলো সম্পর্কে কমিটি সদস্যদের ধারণা থাকাটা জরুরি ((যেমন: এ ধরণের চুক্তির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রচলিত প্রথাসমূহ, বিনিয়োগকারী নির্বাচনের মানদণ্ড ও পদ্ধতিসমূহ সম্বন্ধে ধারণা, বিনিয়োগকৃত অর্থ কীভাবে আসবে ও কয় দফায় আসবে সে-সব সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা, উপার্জিত অর্থ দেশের কোন খাতে কীভাবে কাজে লাগবে সে সম্বন্ধে ধারণা, ঠিক কোন কোন পর্যায়ে অনিয়ম হতে পারে সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা ইত্যাদি))। ঠিক কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে সত্য উদ্ঘাটিত হবে তা যদি কমিটি সদস্যদের না জানা থাকে, তাহলে সত্য বেরোবে কীভাবে? এটা নিশ্চয়ই আশা করা যায় না যে আমলারা আর মন্ত্রীরা কমিটির সামনে হাত তুলে স্বেচ্ছায় স্বীকার করবেন তাঁরা কোথায় কোথায় ভুল বা দুর্নীতি করেছেন! এমন পরিস্থিতিতে যা হওয়ার তাই হবে। কমিটি সদস্যদেরকে তলবকৃত মন্ত্রী আমলারা পাখিপড়া করে যা বুঝিয়ে যাবেন, কমিটি সদস্যরাও সে-সব মেনে নিয়ে বা বোঝার ভান করে খুশিমনে বাড়ি ফিরে যাবেন। তাতে জবাবদিহিতার উদ্দেশ্য তো পূরণ হয় না।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এমন কোনো গোপনীয় ব্যাপারই থাকা উচিত না যা এমনকী সুনির্দিষ্ট দায়িত্বসম্পন্ন সংসদীয় কমিটিকেও দেখানো যাবে না।
তৃতীয়ত
ইতিপূর্বে এমনও ঘটেছে যে সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি কোনো দফতর থেকে ফাইল চেয়ে পাঠিয়েছে কিন্তু সংশ্লিষ্ট সচিব তা কমিটির কাছে পাঠাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। আমার জানা মতে এমনটি ঘটেছে জ্বালানি সেক্টরেরই একটি অত্যন্ত জনগুরুত্বসম্পন্ন ইস্যুতে যাতে একাধিক বিদেশী কোম্পানি জড়িত ছিল। অজুহাত হিসেবে বলা হয়েছিল বিষয়টি “রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হানিকর বিধায় গোপনীয়”! প্রসঙ্গত, এ ধরণের অজুহাত দেখানোর সুযোগ রয়েছে কার্যবিধিতে। (( ধারা#২০৩: Government may decline to produce a document on the ground that its disclosure would be prejudicial to the safety or interest of the State.)) কমিটির নির্দেশ অগ্রাহ্য করার জন্য সংশ্লিষ্ট সচিব মহোদয়ের কোনো দণ্ড হয়েছিল কি না জানা নেই, কিন্তু সংসদীয় গণতন্ত্রের আবহে বেড়ে ওঠা জনগণের জন্য বিষয়টি নিঃসন্দেহে অসম্মানজনক। কারণ, এর অর্থ দাঁড়ায় — জনগণের নির্বাচিত সাংসদরা এতটাই অনাস্থাভাজন যে কোন বিষয়টা দেশের জন্য মঙ্গলজনক আর কোনটা মঙ্গলজনক নয়, সে-সিদ্ধান্ত নেয়ার এক্তিয়ার ও দায়িত্ব একজন আমলার। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক গোপনীয় এবং স্পর্শকাতর বিষয় থাকতেই পারে। কিন্তু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এমন কোনো গোপনীয় ব্যাপারই থাকা উচিত না যা এমনকী সুনির্দিষ্ট দায়িত্বসম্পন্ন সংসদীয় কমিটিকেও দেখানো যাবে না। অনেকেই মনে করেন আমলাতন্ত্রের এ ধরণের প্রবণতা ঔপনিবেশিক শাসনের ফলাফল; যার প্রভাবে সরকারি আমলাদের অনেকেই আজও নিজেদের জনগণের ভৃত্য নয় ‘শাসক’ হিসেবে ভাবতেই বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। এই সংস্কৃতি থেকে আমলাতন্ত্রকে বেরিয়ে আসতে হবে, এবং তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের। জনগণ তাঁদের সে-ক্ষমতা দিয়েই সংসদে পাঠায়।
চতুর্থত
কার্যবিধিতে সংসদীয় কমিটিকে সাধারণ অর্থে রাষ্ট্র পরিচালনা সংক্রান্ত সরকারের বিভিন্ন “গোপনীয়” তথ্য, দলিল ও ফাইল নিরীক্ষণ করার ও অনুসন্ধান করার এক্তিয়ার দেয়া আছে। আবার এসব তথ্যের গোপনীয়তার মাত্রা ব্যতিরেকে অনেকসময় খোদ কমিটিকেও তথ্য প্রদানে অস্বীকৃতি জানানো হয়, যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে একটি বিষয় মনে রাখা জরুরি। বাংলাদেশের সরকারি দফতরগুলোতে এক ধরণের গোপনীয়তার সংস্কৃতি বিদ্যমান। প্রায়ই দেখা যায়, কোন তথ্যটি গোপনীয় আর কোনটি নয় — তার মধ্যে খুব একটা পার্থক্য করা হয় না। ফলে ঢালাওভাবে সরকারি সব তথ্যই গোপনীয় হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। এ বিষয়ে কোনো স্পষ্ট নীতিমালা অনুপস্থিত। আবার, এ ধরণের ‘ঢালাও’ গোপনীয়তাকে আরও জোরদার করার জন্য রয়েছে Official Secrets Act-এর মতো মান্ধাতার আমলের আইন। দাফতরিক গোপনীয়তা ও তথ্যাধিকার নিয়ে এ পর্যন্ত বিভিন্ন মহলে অনেক আলোচনা হয়েছে এবং সে-সবের ওপর ভিত্তি করে বেশ কিছু পদক্ষেপও বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন (বিস্তারিত জানতে এখানে দেখুন)। সংসদীয় কমিটিগুলোর কাছে এসব বিষয়ে সচেতনতা ও দৃঢ়তা প্রত্যাশা করে জনগণ। কারণ আমলাতন্ত্রের সুতোর টান থেকে মুক্ত হয়ে একমাত্র কমিটির সাংসদরাই পারেন এ ধরণের গোপনীয়তার চর্চায় ইতি টানতে, নিদেনপক্ষে ভারসাম্য আনতে।
পঞ্চমত
কার্যবিধি অনুযায়ী কমিটির নিজস্ব বৈঠকগুলো গোপনীয় ((ধারা#১৯৯: The sittings of a Committee shall be held in private.))। আবার, সদস্যরা যখন কোনো নির্দিষ্ট ইস্যুতে সিদ্ধান্তগ্রহণের জন্য (তথ্য প্রমাণ সংগ্রহের পর) আলোচনায় বসবেন তখন বাইরের কারো সেখানে থাকবার অধিকার নেই ((ধারা#২০১: All persons other than members of the Committee and officers of the Parliament Secretariat shall withdraw whenever the Committee is deliberating.))। এই নিয়ম দু’টি বাধ্যতামূলক। এখানে লক্ষণীয়, কোনো নির্দিষ্ট তদন্ত বা অনুসন্ধানকালে তলব-কৃত ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ ও জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে কিন্তু “রুদ্ধদ্বার” আলোচনার এই বাধ্যতামূলক বিধানগুলো রাখা হয়নি, অন্তত পড়ে তাই মনে হয়। যার অর্থ — জনগুরুত্বসম্পন্ন বিষয়ে মিডিয়ার সামনে কমিটির কার্যক্রম উম্মুক্ত করে দেয়াতেও সম্ভবত কার্যত কোনো বাধা নেই। এক্ষেত্রে “গোপনীয়” বা “স্পর্শকাতর” বিষয়ে কমিটির পক্ষ থেকে কী ধরণের পদক্ষেপ কাম্য, তা উপরে আলোচনা করা হয়েছে। সরকার যদি এ বিষয়ে বদ্ধপরিকর হয় এবং তাদের যদি সদিচ্ছা থাকে, তাহলে তারা খুব সহজেই কার্যবিধি সংশোধন করে হলেও স্বচ্ছতা বিধানের লক্ষ্যে এই পদক্ষেপগুলো নিশ্চিত করতে পারে।
ষষ্ঠত
আমাদের দেশে জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইস্যুতে প্রায়ই বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করার চল আছে। সংসদ যথেষ্ট কার্যকর না হওয়াতেই সম্ভবত জনগণ শেষ আশ্রয় হিসেবে এধরণের তদন্ত দাবি করে থাকে। আবার কোনো সরকার যদি নিজেকে তদন্ত প্রক্রিয়া থেকে বিযুক্ত করতে চায়, সে-উদ্দেশ্যও বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে সাধিত হতে পারে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রক্রিয়ার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি — আমার ব্যক্তিগত অভিমত হল : বিচার বিভাগীয় তদন্তের চেয়ে সংসদীয় তদন্ত ক্ষেত্রবিশেষে অনেক বেশি কার্যকর হতে পারে। এর কারণ চতুর্মুখী। এক, resource, জনবল বা access-এর কথাই যদি ধরি, তাহলে সে-সব সংসদীয় কমিটির হাতে অনেক বেশি থাকে। দুই, সংসদীয় তদন্তের এক ধরণের গণমুখিতা (public face) আছে, যেটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের ক্ষেত্রে অনুপস্থিত, অন্তত ইতিপূর্বে বিভিন্ন তদন্তের ক্ষেত্রে আমরা তা-ই দেখেছি। তিন, সংসদীয় কমিটিগুলো গঠিত হয় বিভিন্ন দলের সাংসদদের নিয়ে, তাই সেখানে একটি দলের পক্ষে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কোনো তথ্য বা ফলাফল ধামাচাপা দেয়ার সুযোগ কম। চার, এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার বিষয়টিও মূর্ত হয়ে ওঠে, কারণ, কমিটির কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনগণের কাছে তখন স্পষ্ট হয়ে যায় কে (সাংসদ/দল) জনগণের বন্ধু আর কে নয়; জনগণের চোখে ঠুলি পরানো তখন অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়ে। এখানে সংসদীয় তদন্তের ক্ষেত্রে কেউ হয়তো “বিচারিক” যোগ্যতার (( যেমন: সাক্ষ্য গ্রহণ ও তার ভিত্তিতে বিচারকার্য সম্পাদনের দক্ষতা, প্রচলিত আইন সম্বন্ধে জ্ঞান ইত্যাদি )) ঘাটতির বিষয়টি তুলতে পারেন। স্বাভাবিকভাবেই সাংসদদের সে-সব সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা না থাকতেই পারে, যদি না তাঁরা সরাসরি আইন পেশা থেকে সংসদে গিয়ে থাকেন। এসব ক্ষেত্রে সম্পূরক হিসেবে কমিটিগুলোতে বিচারিক দক্ষতা সম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের “পরামর্শ” নেবার সুযোগ তো রয়েছেই।
সপ্তমত
ধরা যাক সংসদীয় কমিটিগুলো গঠিত হল, সুষ্ঠুভাবেই হল, তারা ঠিকভাবে কাজও করলো। কিন্তু তারপরও জবাবদিহিতায় বিরাট ফাঁক রয়ে যাবে যদি তাদের সিদ্ধান্তগুলো, প্রতিবেদনগুলো জনগণের কাছে সময়মত না পৌঁছায়। সময়মত অবহিতকরণের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে পারে কার্যক্রমে মিডিয়াকে প্রবেশাধিকার প্রদানের মাধ্যমে, নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ এবং তা জনগণের কাছে সহজলভ্য করার মাধ্যমে। কারণ, কেবল তদন্ত বিচার আর প্রতিকার হওয়াটাই যথেষ্ট নয়, সে-সব যে হচ্ছে এবং ঠিকভাবে হচ্ছে তাও জনগণের জানার ও প্রশ্ন করার অধিকার রয়েছে। নাহলে বিষয়টি সরকারি আর বিরোধী দলের সদস্যদের মধ্যে একটি “নিজস্ব ও ভিতরগত” ব্যাপারে পরিণত হয়ে যাবে, যেটি কোনোক্রমেই মঙ্গল বয়ে আনবে না। জবাবদিহিতার মূল কথাই হল: এক পক্ষ (জনগণ) আরেক পক্ষকে (সাংসদ) কিছু সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব এবং তা পালন করার জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দিয়ে সংসদে পাঠায়। সেক্ষেত্রে প্রদত্ত অন্যান্য দায়িত্বের পাশাপাশি দ্বিতীয় পক্ষের একটি মৌলিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে প্রথম পক্ষকে সময় সময় তাদের কাজ নিয়ে বিস্তারিতভাবে অবহিত করা। সরকারি বেসরকারি নির্বিশেষে দেশের আর প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বপ্রাপ্ত ও দায়িত্বদাতার মধ্যে এই সম্পর্ক বিদ্যমান। সংসদীয় কমিটিগুলোতে তার ব্যতিক্রম হবে কেন?
উপরের বিষয়গুলোর আলোকে সংসদীয় কমিটিগুলো ঠিকভাবে কাজ করছে কি না তা সঠিক তদারকির জন্য মিডিয়া, ব্লগ ও সচেতন সমাজের পক্ষ থেকে নীচের তালিকাভুক্ত বিষয়গুলোর দিকে নজর রাখা যেতে পারে:
১) কত দিনের মাথায় এই কমিটিগুলো গঠিত হচ্ছে?
২) কতগুলো কমিটি তৈরি হয়েছে বা হচ্ছে? তার মধ্যে কতগুলো স্থায়ী কমিটি এবং কতগুলো বিশেষ পরিস্থিতির মোকাবেলার জন্য সৃষ্ট?
৩) কমিটিগুলোতে রাষ্ট্র পরিচালনায় অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাসম্পন্ন সাংসদদের মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে কি না?
৪) কমিটিগুলোর প্রধান কারা? তাঁদের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা আর রাজনীতিতে রেকর্ড কী রকম?
৫) কমিটিগুলোতে সরকারি দলের বাইরে বিরোধী দল এবং অন্যান্য দলের সাংসদ কত জন রয়েছেন?
৬) কমিটিগুলোতে যাঁরা মনোনীত হচ্ছেন তাঁদের কোনো সম্ভাব্য “কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট” ((ধারা#১৮৮(২) অনুযায়ী: No member shall be appointed to a Committee who has a personal, pecuniary or direct interest in any matter which may be considered by that Committee. Nor shall a member be appointed to a Committee if he is not willing to serve on it. The proposer shall ascertain whether the member whose name is proposed by him is willing to serve on that Committee.
Explanation – For the purpose of this sub-rule the interest of the member should be direct, personal or pecuniary and separately belong to the person whose inclusion in the Committee may be objected to and not in common with the public in general or with any class or section thereof or on a matter of State policy. )) রয়েছে কি না?
৭) কমিটিগুলো নিয়মিত বৈঠকে ((ধারা#১৯৭)) বসছে কি না? বিশেষত, মন্ত্রণালয়ভিত্তিক স্ট্যান্ডিং কমিটিগুলো প্রতি মাসে অন্তত একবার বৈঠকে বসছে কিনা?
৮) কমিটি বৈঠক চালু রাখার ক্ষেত্রে কোনো কোরাম সংকট ((ধারা#১৯২)) তৈরি হচ্ছে কি না? কাদের লাগাতার অনুপস্থিতির কারণে এ ধরণের সংকট সৃষ্টি হচ্ছে?
৯) তলব-কৃত আমলারা এবং মন্ত্রীরা কমিটির ক্ষমতাকে কতখানি গুরুত্বের সাথে নিচ্ছেন?
১০) গোপনীয়তার বিষয়গুলো কমিটি কীভাবে মোকাবিলা করছে?
১১) কমিটিগুলোর দিক থেকে তাদের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ব্যাপারে কতখানি আন্তরিকতা রয়েছে? মিডিয়ায় কমিটিগুলোর কার্যক্রমের ব্যাপারে ঠিক কতটুকু তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে?
১২) কমিটির সিদ্ধান্তগুলোর (কিংবা প্রতিবেদনগুলোর) কত ভাগ সংসদের সামনে পেশ করা হচ্ছে? সে-সব নিয়ে কোনো উম্মুক্ত আলোচনা হচ্ছে কিনা সাংসদদের মধ্যে?
১৩) কোনো বিষয়ে কমিটির সুনির্দিষ্ট সুপারিশ মন্ত্রী এবং আমলারা মানছেন কিনা?
১৪) উপরের ১৩টি বিষয়ে নজর রাখার মতো, কিংবা বিবেচনা করার মতো পর্যাপ্ত তথ্য কি আমরা (জনগণ) নিয়মিতভাবে পাচ্ছি? কোথা থেকে পাচ্ছি? কী প্রক্রিয়ায় পাচ্ছি? নাকি পাচ্ছি না?
[প্রিয় পাঠক, সংক্ষেপে এই হল আমাদের সংসদীয় কমিটি ও তাদের সমস্যা ও সম্ভাবনার বিভিন্ন দিক। এখানে প্রদত্ত তথ্য ও সে-সবের ব্যাখ্যায় আমার পক্ষ থেকে ভুলত্রুটি থাকা অসম্ভব নয়। তাই সে-সব যদি কেউ ধরিয়ে দেন, তাহলে আমরা সবাই উপকৃত হব। জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে আগামী ২৫ জানুয়ারি ২০০৯। তার আগেই চেষ্টা করবো এই পোস্টের সর্বশেষ পর্ব (সংসদ নিয়ে) লিখে শেষ করার।
ধন্যবাদ — পোস্ট লেখক ]
রায়হান রশিদ
জন্ম চট্টগ্রাম শহরে। পড়াশোনা চট্টগ্রাম, নটিংহ্যাম, এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমান আবাস যুক্তরাজ্য। ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধসমূহের বিচার প্রক্রিয়াকে সহায়তা প্রদান, এবং ১৯৭১ এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের দাবীতে সক্রিয় নেটওয়ার্ক 'ইনটারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম' (ICSF) এর প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাস্টি।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১৪ comments
সুশান্ত - ১২ জানুয়ারি ২০০৯ (১০:৩৭ অপরাহ্ণ)
(Y)
সুশান্ত - ১২ জানুয়ারি ২০০৯ (১০:৩৭ অপরাহ্ণ)
স্মাইলী কাজ করে না?
মুক্তাঙ্গন - ১৪ জানুয়ারি ২০০৯ (১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ)
অসুবিধাটুকুর জন্য দুঃখিত, সুশান্ত। স্মাইলি বা ইমোটিকনের ব্যবস্থাটা আসলে ইচ্ছে করেই রাখা হয়নি। ইমোটিকনের অনেক গুণ আছে সন্দেহ নেই, কিন্তু ভাব প্রকাশের জন্য আমাদের বাংলা ভাষাও তো কোন অংশে কম সমৃদ্ধ নয়। জানি মানুষের সময় দিন দিন দুর্লভ থেকে দুর্লভতর হয়ে উঠছে, জানি এটি টেক্সট মেসেজের যুগ, জানি ন্যারেটিভ এখন মৃত্যুশয্যায়। তবু মনের কোণে ছোট্ট আশা, ছুটতে থাকা নতুন যুগের পাঠক-লেখকরা অন্তত মাঝে মাঝে হলেও একটু থমকাবেন, জিরোবেন, ভাববেন; নতুন দিনের নতুন কথা প্রযুক্তির নতুন মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবেন পুরোনো দিনের ঢংয়ে, আদি অকৃত্রিম “আ-মরি বাংলা ভাষায়”। ইমোটিকন/স্মাইলি না রাখার পেছনে সাধারণভাবে এই চিন্তাগুলোই কাজ করেছে। তবে এ-ও বলে রাখা ভালো – কিছুই শাশ্বত নয় এখানে, লেখক-পাঠকরা তেমনভাবে চাইলে এই চিন্তাকেও পূনর্বিবেচনা করা যেতেই পারে; কেন নয়?
কল্পতরু - ২০ জানুয়ারি ২০০৯ (৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ)
এক কথায়, লেখাটি অসাধারণ। অপেক্ষা করছি পরবর্তী পর্বের জন্য।
সংসদীয় কমিটিগুলোর ক্ষেত্রে সাধারণভাবে আমার যা মনে হয়, এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হতে আগ্রহীদের প্রধান কাজই হল কমিটিগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা। এতে তাদের বিভিন্ন সুবিধা।
আপনার দেয়া উদাহরণ মতে “অভিজ্ঞ, পোড় খাওয়া” সাংসদ খুঁজতে গেলে “ঠগ বাছতে গাঁ উজাড়” হওয়ারই দশা হবে। চোখ বন্ধ করে একবার ভাবুন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০০৮ এ নির্বাচিত কতজন সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী, শিল্পপতি? কত শতাংশ? কতজন কোটিপতি? যেখানে বাংলাদেশে কোটিপতিদের “সাধারণত” সন্দেহের চোখে দেখা হয়? তারা কত শতাংশ?? তাহলে বাকী রইল কারা?
বাংলাদেশে আইনের তো অভাব নেই। যে দেশে সাংসদদের অধিকাংশই শিল্পপতি বা কোটিপতি, দুর্নীতি সংক্রান্ত অধিকাংশ তদন্ত তো তাদের বিরুদ্ধেই হবার কথা। কমিটিতে এই প্রসঙ্গ (নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ?) কে তুলবে। এ থেকেই তো বোঝা যায় “ঐ” সচিবের জোরটা কোথায়? তিনি কোথায় পান “সংসদীয় কমিটি”র নির্দেশ অমান্য করার শক্তি।
অবিশ্রুত - ২০ জানুয়ারি ২০০৯ (১১:১৩ পূর্বাহ্ণ)
পত্রপত্রিকা থেকে আমরা যেটুকু জানতে পারছি, আওয়ামী লীগ সরকার সম্ভবত প্রথম অধিবেশনেই সংসদীয় কমিটিগুলো গঠন করবে। তা যদি হয়, নিঃসন্দেহে খুব তাড়াতাড়িই আমরা প্রচলিত গণতন্ত্রের ফলাফলগুলি দেখতে শুরু করব। অবশ্য, এর মধ্যেই কেউ কেউ বলতে শুরু করেছেন, আসনের দিকটি এই সংসদীয় কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে বিবেচনা না করতে, অর্থাৎ, সোজা কথায় বলতে গেলে, বিএনপি-কে সংসদীয় বিধিতে সে যা পায়, তার চেয়েও বেশি কিছু সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান পদ দিতে। এই সমস্যার সমাধান হবে কী করে, বা এটি যে একটি সমস্যার সূত্রপাত করতে চলেছে, সংসদীয় গণতন্ত্রে এর সমাধান কী হতে পারে, বুঝতে পারছি না। বিগত সংসদেও এটি একটি ইস্যু ছিল, কেননা আওয়ামী লীগ তখন কম আসন পেয়েছিল।
তবে আমরা ধরে নিচ্ছি, সংসদ বর্জনের ধারাটি অব্যাহত থাকবে। কেননা খালেদা জিয়া ও দেলোয়ার সাহেবরা এর মধ্যেই আবিষ্কার করেছেন যে নবম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামী ২৫ জানুয়ারি, অর্থাৎ বাকশাল গঠনের দিন! অতএব বুঝতেই পারছেন, এ সংসদও তার যাত্রা শুরু করতে চলেছে একাংশের অধিবেশন বর্জনের মধ্যে দিয়ে।
এর মধ্যে আবার একদিন আকবর আলী খানকে বলতে শুনলাম এক টেলিসংলাপে যে, তিনি চান বিএনপিকে সংসদে কথা বলতে দেয়া হোক এবং তা সংসদীয় আসনের অনুপাতে নয়, বরং একটি শক্তিশালী বিরোধী দল এই হিসেবে ৫০ ভাগ সময় জুড়ে।
বুঝতে পারছি, বাকস্বাধীনতা যেমন জরুরি, তেমনি বাকস্বাধীনতার অজুহাতে কে কতটুকু সময় পাবে কথা বলার তাও বড় একটি ইস্যু। মুশকিল হলো, আমরা কথা বলতে ভালবাসি, তাই কথা বলতে চাই, এই ক্ষেত্রে যুক্তি বড় ব্যাপার নয়। নইলে সংসদে যত ফালতু কথাবার্তা হয়, আমার মনে হয় চায়ের দোকানের আড্ডাতেও তত অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা হয় না। এ ব্যাপারটি যদি সাংসদরা অনুভব করেন, তবে দেখা যাবে, সংসদে কথা বলার সময় অবশিষ্ট থেকে যাবে!
মুক্তাঙ্গন যে কাজটি করতে চাইছে, সংসদীয় অধিবেশন এবং সংসদীয় কমিটিগুলোর মনিটরিং, তা খুব জরুরি। তবে এই মনিটরিং যাতে ব্যাপক মানুষের কাছে না পৌঁছাক, নীতিনির্ধারক এবং চাপ-দলগুলির কাছে পৌঁছায় সে-দিকে কি একটু দৃষ্টি দেয়া যায়? না হলে ব্যাপারটা খালি বুদবুদই তুলবে, আমাদের আক্ষেপ পূরণ করবে, কিন্তু হিসেবের খাতা বেশ ফাঁকাই রয়ে যাবে।
রায়হান রশিদকে ধন্যবাদ, তার সুবাদে মন্ত্রিপরিষদ এবং সংসদীয় কমিটি সম্পর্কে অনেক কিছু জানা হলো। এখন এদের নিয়ে ভাবতে গেলে এগুলো খুব কাজে লাগবে।
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ২৬ জানুয়ারি ২০০৯ (৬:২৯ অপরাহ্ণ)
সম্ভবত তওফিক-ই-এলাহির কথা বলতে চেয়েছেন এখানে যাঁকে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। সচিব থাকাকালীন সময়ে তার ভূমিকা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে এখন। বেশ কিছু মহল থেকে তদন্তও দাবী করা হয়েছে বলে জানি। এই রিপোর্টটি দ্রষ্টব্য। পুরোনো এই রিপোর্টটিও দেখুন।
বিডিনিউজ২৪ এ ছাপানো রিপোর্টটি এখানে:
fariduddin ahmed - ১ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (৯:২৫ অপরাহ্ণ)
thank u
রায়হান রশিদ - ৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (১০:৪৯ অপরাহ্ণ)
আপডেট:
সম্প্রতি কিছু পার্লামেন্টারি কমিটি গঠিত হয়েছে। বিস্তারিত এখানে দেখুন।
মাসুদ করিম - ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (৬:১৪ পূর্বাহ্ণ)
পাঁচটি সংসদীয় স্হায়ী কমিটি গঠন।
মাসুদ করিম - ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (৫:০০ পূর্বাহ্ণ)
আওয়ামী লীগের জেষ্ঠ্য নেতারা স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ পেতে পারেন।
অবিশ্রুত - ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (১০:৩৯ অপরাহ্ণ)
সংসদের বিশেষ কমিটিতে সুপারিশ করা একজন বিএনপি সাংসদকে অন্তর্ভুক্ত না করায় (সম্ভবত ইনি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী) কমিটির বৈঠক বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
বিস্তারিত সংবাদ পাওয়া যাবে এখানে : প্রকাশিত সংবাদ থেকে।
anon - ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (১:০০ পূর্বাহ্ণ)
নবগঠিত পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডিং কমিটিসমূহ (খবর বিডিনিউজ ২৪ এর):
আরো যে কয়েকটি কমিটি হয়েছে আগে সেগুলো হল, ১১ তারিখে গঠনকৃত: (খবর ডেইলী স্টার এর)
হিসেব অনুযায়ী গঠিত ৩১ টি কমিটির মধ্যে আরও ১৫টি থাকার কথা। সেগুলোর খবর খুঁজে পাচ্ছি না। কেউ সাহায্য করতে পারেন?
রায়হান রশিদ - ১৬ এপ্রিল ২০০৯ (৩:২১ অপরাহ্ণ)
কমিটি ব্যবস্থার ওপর এই লেখাটাও পড়া যেতে পারে: এখানে।
Pronita Dutta - ৫ ডিসেম্বর ২০১৪ (১০:৩১ পূর্বাহ্ণ)
I badly need the third part of this article which is written on Parliament. Can you help me a bit in this respect.