গত দু’বছর অনেক সংশয় এবং অনিশ্চয়তায় কাটানোর পর দেশ আবার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরেছে এখন। ব্যাপক অংশগ্রহণসমৃদ্ধ একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, শপথ নিয়ে নতুন কেবিনেট গঠন করেছে নির্বাচিত দল, সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে এনেছে। সংসদে ৮৫% আসনধারী এই সরকারের কাছ থেকে জনগণের অনেক প্রত্যাশা। অনেকগুলো পাহাড়প্রমাণ চ্যালেঞ্জ নব-নির্বাচিত সরকারের সামনে, যেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য : আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক মুক্তি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, যুব সমাজের কর্ম সংস্থান ইত্যাদি। এসব চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করা যে-কোনো একটি নির্দিষ্ট দলের বা জোটের পক্ষেই খুব কঠিন। সেই কঠিন কাজটি অসম্ভব হয়ে পড়বে যদি বর্তমান সরকার জবাবদিহিতা প্রক্রিয়াকে ঢেলে সাজিয়ে একে কার্যকর করতে না পারে। সরকারের সব সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ যে ঠিক হবে এমন কোনো কথা নেই। তবে জনগণ সরকারের সিদ্ধান্তগুলোকে অন্তত বোঝার চেষ্টা করবে যদি সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় জনগণকেও অন্তর্ভুক্ত করার আন্তরিকতা থাকে। একদিকে জনগণ যেমন জানতে চায় ক্ষমতায় বসে থাকা নেতৃবৃন্দ কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তেমনি কী প্রক্রিয়ায় ও কেন সেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে তাও জনগণ জানতে চায়, বুঝতে চায়। এবং এটি জানা জনগণের অধিকারের মধ্যেই পড়ে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও প্রক্রিয়া নিয়ে দেশের মানুষ আজ যৌক্তিক কারণেই অনেক সন্দিহান। প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির মূল্যায়নে এ দেশের মানুষ অবুঝ নয়, আবদারিও নয়; তবে ১৫ কোটি মানুষের সামষ্টিক বুদ্ধিবৃত্তিকে হেয় করে কেউ তাদের চোখে ঠুলি পরিয়ে রাখার চেষ্টা করবে তাও তারা বরদাস্ত করবে না। তাই, জনগণ ও সরকারের মধ্যে বিশ্বাস এবং নির্ভরশীলতার পরস্পরমুখী সম্পর্ক স্থাপন করতে হলে বিদ্যমান জবাবদিহিতার সংস্কৃতিতে মৌলিক কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। চাই সুষ্ঠু জবাবদিহিতা ও জবাবদিহিতার সরকার।
সরকারি নির্বাহী দফতর, তার ওপরে কেবিনেট, তারও ওপরে সংসদ — সাধারণভাবে এই হল আমাদের দেশের শাসন ব্যবস্থায় জবাবদিহিতার সিঁড়ি।
সরকারি নির্বাহী দফতর, তার ওপরে কেবিনেট, তারও ওপরে সংসদ — সাধারণভাবে এই হল আমাদের দেশের শাসনব্যবস্থায় জবাবদিহিতার সিঁড়ি। তিন পর্বের এই পোস্টটিতে এই ধাপগুলোরই আনুষঙ্গিক কিছু বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করা হয়েছে। শুরু করা যাক কেবিনেট দিয়ে।
কেবিনেট
গতকাল নবনিযুক্ত কেবিনেট ঘোষিত হয়েছে; এ পর্যন্ত তা নিয়ে অনেকেই আলোচনা করেছেন। নতুন কেবিনেটে অনেক নতুন মুখ দেখা যাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোর দায়িত্বে নারী নেতৃত্ব নির্বাচন সংখ্যার ও দায়িত্বের গুরুত্ব বিচারে যুগান্তকারী। মামলায় অভিযুক্ত বা দণ্ডিত ব্যক্তিদের কেবিনেট থেকে দূরে রাখা হয়েছে। শোনা যায়, অন্যান্য বারের মতো এবারেও বিদেশী কূটনৈতিক পর্যায়ে লবিইং-এরও চেষ্টা ছিল যাতে পছন্দসই প্রার্থীদের কেবিনেটে রাখা হয়। সেটি এড়াতে নির্বাচিত দলের নেত্রীর ভূমিকা প্রশংসনীয়। প্রচার মাধ্যমের ভাষ্য অনুযায়ী এমনকী দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্বকেও কেবিনেটে মনোনয়ন দানের সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা হয়েছিল। সে-সবের আলোকে বলা যেতে পারে এবারের গঠিত কেবিনেট অনেকাংশেই ‘ভেতর ও বাইরের’ হস্তক্ষেপমুক্ত। এ তো গেল মন্ত্রী নির্বাচনে হস্তক্ষেপের কথা। ভবিষ্যৎ কার্যক্ষেত্রেও এই একই কেবিনেটকে ‘ভেতর ও বাইরের’ প্রভাব মুক্ত রাখা হবে বিরাট চ্যালেঞ্জ। সে-বিষয়ে যে-সংশয়গুলো এ মুহূর্তে মনে উঁকি দিচ্ছে, সেগুলো হল :
(১) দু’একজন বাদে কেবিনেটের বেশির ভাগ সদস্যই তাঁদের নিজ নিজ দফতরের ব্যাপারে অনভিজ্ঞ। তাঁদের বেশির ভাগই ইতিপূর্বে এ ধরণের দায়িত্ব পালন করেননি কখনো। এটি একটি দুশ্চিন্তার কারণ। আগামী পাঁচ বছর এই মন্ত্রীদের কাজ করতে হবে আমলাদের সাথে। আর একথা তো সবাই জানি আমরা যে, আমলাতন্ত্রের রয়েছে নিজস্ব প্রথা, কর্ম ও চিন্তাপদ্ধতি, যা এমনকী দলীয় সমর্থনেরও ঊর্ধ্বে। আর সেখানে রয়েছে অনেক খানাখন্দ, গলি-ঘুপচি। সরকারি দফতরের বিভিন্ন জটিল কার্যপদ্ধতি, প্রোটোকল, লাল ফিতে, নীল ফিতে সম্পর্কে আমলারা ভেতরের মানুষ হিসেবে যতটা ভালভাবে জানেন, নতুন একজন মন্ত্রীর সে-সব বুঝে উঠতে বেশ অনেকটা সময় লাগার কথা। একারণে, এমনকী সংসদীয় গণতন্ত্র যে-সব দেশে সুপ্রতিষ্ঠিত, উন্নত সে-সব গণতান্ত্রিক দেশেও সুযোগ পেলেই আমলারা নাকি নির্বাচিত মন্ত্রীদের ঘোল খাইয়ে ছাড়েন। তবে দেশপ্রেম, সততা, সদিচ্ছা আর কঠোর পরিশ্রম দিয়ে যে-কোনো সীমাবদ্ধতাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব; কারণ দায়িত্ববোধ মানুষকে যোগ্য করে তোলে। তাই অনেক সংশয় সত্ত্বেও আশাবাদী না হবার কোনো কারণ দেখি না। নতুন কেবিনেটের নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করার জন্য অন্তত এই সুযোগটি প্রাপ্য।
(২) দেখা যাচ্ছে, ঘোষিত কেবিনেটে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নিজের হাতেই আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় রেখেছেন, সেগুলো হল: জ্বালানি, প্রতিরক্ষা, পূর্ত, সংস্থাপন এবং নারী ও শিশু। পূর্ববর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রীও তাই করেছিলেন। এ ধরণের সিদ্ধান্তের সপক্ষে প্রধানমন্ত্রীদের নিজস্ব কিছু রাজনৈতিক যুক্তি নিশ্চয়ই আছে; তবে আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু বিষয় তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। যেমন ধরা যাক জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বিষয়টি।
প্রথমত, গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রণালয়টি গঠিত হয়েছে ‘জ্বালানি’ ও ‘বিদ্যুৎ’ নামের দু’টি আলাদা বিভাগের সমন্বয়ে। একজন পূর্ণমন্ত্রীর পক্ষেই এই ব্যাপক কাজ সুসম্পন্ন করে ওঠা কঠিন, সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের পক্ষে কেবিনেট, সরকার এবং দলের আর দশটা প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের প্রতি বিশেষ মনযোগ প্রদান একরকম অসম্ভবই বলা যায়। বলাই বাহুল্য বর্তমানের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে এই মন্ত্রণালয়টি এখন বিশেষ মনযোগ দাবি করে।
দ্বিতীয়ত, গত সরকারের আমলের বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তার সাথে আলাপ করে জেনেছি যে খোদ প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে থাকলে জ্বালানি-সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর সুষ্ঠু ও স্বাধীনভাবে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। যেমন ধরা যাক, প্রধানমন্ত্রী নিজে যদি এই সেক্টরটি ব্যক্তিগতভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন, তাহলে দেশী/বিদেশী কোম্পানীর প্রতিনিধিরা সরাসরি তাঁর সাথে এপয়েন্টমেন্ট করেই ‘উপর থেকে’ সব সিদ্ধান্ত ত্বরান্বিত (বা প্রভাবিত) করার চেষ্টা করে থাকেন। শুধু তাই নয়, তাঁরা তখন পেট্রোবাংলা, বাপেক্স, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন — এসব গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলোকে ডিঙিয়ে বা কোনোরকম পাত্তা না দিয়েই সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে অনুমোদন নেয়ার চেষ্টা করেন। এতে প্রশাসনের চেইন অব কমান্ডই শুধু বিঘ্নিত হয় না, প্রধানমন্ত্রীও ব্যক্তিগতভাবে বিদেশী সংস্থাগুলোর সহজ নাগালের মধ্যে চলে আসেন; ফলে বহির্বিশ্বের চাপ সামলানো তাঁর পক্ষে আরো কঠিন হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো এভাবেই বিদেশী শক্তির কাছে দুর্বলতর হয়ে পড়ে। তাই ‘চেইন অব কমান্ড’ই বলি, ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টই বলি’, অথবা ‘সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়া থেকে নিরপেক্ষ বিযুক্তিকরণের’ (objective disassociation) কথাই বলি, প্রধানমন্ত্রীর এ ধরণের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক মন্ত্রণালয় ধরে রাখা দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়।
তৃতীয়ত, ধরা যাক জ্বালানি খাতে সরকার ব্যাপকভাবে ব্যর্থ হল। সেক্ষেত্রে জনগণ যদি পদত্যাগ দাবি করে, তবে কোন্ মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করবে তারা? জ্বালানি মন্ত্রীর না কি প্রধান মন্ত্রীর?
চুতর্থত, মন্ত্রণালয়ের কাজগুলোর ওপর নজরদারির জন্য রয়েছে বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট সংসদীয় কমিটি। প্রধানমন্ত্রী যদি নিজেই একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকেন, দলীয় জ্যেষ্ঠতা এবং অবস্থানগত কারণে সংসদীয় কমিটিগুলোর (যেগুলোর বেশিরভাগেরই প্রধান সরকারি দলের সিনিয়র সাংসদবৃন্দ) প্রধানমন্ত্রীকে তলব করে প্রশ্ন করা নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
[প্রিয় পাঠক, উল্লেখ-করা বিষয়গুলোর ওপর আপনাদের মতামত পেলে আমরা সবাই উপকৃত হব। এটি আলোচনার শুরু মাত্র। এর সাথে আর কী কী যোগ করা যেতে পারে? উল্লিখিত কোনো বিষয় ভিন্ন আলোকে দেখার সুযোগ থাকলে তাও এখানে মন্তব্যাকারে লিখে জানানোর সবিনয় অনুরোধ থাকলো। এই পোস্টের আগামী পর্বে সংসদীয় কমিটিগুলোর সম্ভাবনার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার চেষ্টা থাকবে। ধন্যবাদ — পোস্ট লেখক]
রায়হান রশিদ
জন্ম চট্টগ্রাম শহরে। পড়াশোনা চট্টগ্রাম, নটিংহ্যাম, এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমান আবাস যুক্তরাজ্য। ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধসমূহের বিচার প্রক্রিয়াকে সহায়তা প্রদান, এবং ১৯৭১ এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের দাবীতে সক্রিয় নেটওয়ার্ক 'ইনটারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম' (ICSF) এর প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাস্টি।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৯ comments
সুশান্ত - ৮ জানুয়ারি ২০০৯ (১০:০৮ অপরাহ্ণ)
এই পোস্ট টা প্রধান মন্ত্রীকে পড়াতে পারলে খুব ভালো হতো।
সৈকত আচার্য - ৯ জানুয়ারি ২০০৯ (১:৪৮ পূর্বাহ্ণ)
আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের এবং নীতি নির্ধারক নেতাদের অনেকেই এবার জানতেন না কিভাবে এই মন্ত্রী সভা গঠিত হচ্ছে এবং এর আকার অবয়ব কি হচ্ছে। সাধারনভাবে এই কথাটা শোনার পর দেশের রাজনীতি সচেতন অনেক মানুষ খুশি হয়েছে। আশ্বস্ত হতে চেয়েছে এই ভেবে যে,যাক অন্ততঃ সেই পুরোনো কিছু মুখ এবং তাদের সেই পরিচিত বিরক্তিকর ভংগীর গলাবাজি অন্ততঃ চোখে দেখতে হবে না।
কিন্ত তবু প্রশ্ন থেকে যায় এখানে। যেমনঃ এরা কি আসলে নীতি নির্ধারক? যদি হয়ে থাকে, তাহলে এদের মতামত দেয়ার অধিকার আছে। সেই অধিকার কি তারা দলের গঠনতন্ত্র অনু্যায়ী প্রয়োগ করতে পেরেছেন? পত্রিকাগুলি আমাদের জানিয়েছে খুব উৎসাহের সাথে, জানেন বড় মিয়ারা কেউ কিচ্ছু জানে না, নেত্রী একাই অনেকটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং তার দু’একজন ঘনিষ্ট এবং বিশ্বস্ত মিত্র ছাড়া অন্যদের সাথে তিনি পরামর্শ করার ভরসা করতে পারেননি।
আমার মতে এটা একটা ভাল কাজের দুঃখজনক সূচনা। মনে রাখতে হবে, কারো একক কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও পছন্দের উপর বেশি ভরসা করতে গেলেই স্তব স্ততির জায়গায় মানুষ চলে যায়। absolute power corrupts absolutely এই কথাটা যেন ভুলে না যাই। পত্রিকাগুলো এই সেদিনও দলে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি চালু করার ব্যাপারে জ্ঞানগর্ভ সম্পাদকীয় লিখতো। কিন্ত এই বিষয়টাকে তারা যেন একরকম বোধ হয় এড়িয়েই গেল।
বলা হচ্ছে, এবারের মন্ত্রী সভায় দুর্নীতি ও খুনের মামলায় জড়ানো নেতারা আসতে পারেনি, সংস্কার পন্থী নেতারা আসতে পারেননি এবং যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ আছে তারা আসতে পারেন নি। এই যদি হয় মাপকাঠি তাহলে আপত্তির কিছু নাই। কিন্ত এরা যে আসতে পারবে না এই সিদ্ধান্ত একটা পার্টির ভেতর কারা নেবে? নেত্রী একা? দলীয় কাউন্সিলরগণ এ ব্যাপারে কি মনে করেন তা কি জরুরী নয়? কেউ কিছু জানে না, কিন্ত কিভাবে যেন ভাল কিছু কাজ হয়ে যাচ্ছে, এটা লক্ষণ হিসেবে ভাল নয়। জনগণ বাহবা দিচ্ছে সত্যি। এই লোকগুলোর কাছে গিয়ে মানুষ ধোঁকা খেয়েছে। প্রতারিত হয়েছে। এদের কথা অসুন্দর ছিল। ছিল এদের কাজও। তাই মানুষের এই আপাত স্বস্তি। বাহবার কারনও এটি।
কিন্ত এই সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আরেকটা গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ছিল বলে মনে করি। সেটি হল,যাদেরকে দুর্নীতিবাজ বা সংস্কারপন্থী বলা হচ্ছে, তারা যদি জনগণের কাছে এবং একটা দলের নেতা-কর্মীদের কাছে আস্থার সংকটে থাকেন, কিভাবে তারা আজও নীতি নির্ধারক থাকেন। তারা যে দুর্নীতি মামলার আসামী এই কথা দল কি অনুমোদন করে? যদি করে তাহলে শুধুমাত্র মন্ত্রীসভায় স্থান না দিলে কি তাদের কৃতকর্ম জায়েজ হয়ে যাবে? তাদের বিরুদ্ধে কি দলের পক্ষ থেকে কোন তদন্ত পরিচালনা করা হচ্ছে বা এ ব্যাপারে কি কোন পরিকল্পনা আছে? মনে রাখতে হবে, এক এক জন মন্ত্রীর তুলনায় এক একজন নীতি নির্ধারক অনেক বেশী ক্ষমতাশালী। দলের নীতি যারা নির্ধারন করবেন তারা যদি আসলেই দুর্নীতিগ্রস্থ হয়, তা হলে একই বিবেচনায় তারা দলের এই পদে থাকার যোগ্যতাও হারিয়েছেন নিঃসন্দেহে। দলের পক্ষ থেকে এই ব্যাপারে নীরব থাকা মানে, আরেকটা অন্ধকার পথের দিকে পুরো জাতিকে নিয়ে অসহায়ের মতো চলতে থাকা। সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান জোরদার করতে গেলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে সৃজিত মামলা ছাড়া বাকি মামলাগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার করার রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। রাজনৈতিক সততা ও কমিটমেণ্ট ছাড়া চাতুরীপূর্ন কৌশলে তা সম্ভব নয়।
পোষ্ট লেখক লিখেছেনঃ
বাইরের হস্তক্ষেপ মুক্ত থাকুক, কামনা করি। তবে ভিতরের হস্তক্ষেপ বন্ধ হলে গণতন্ত্রই আর বাঁচে না। দমবন্ধ হয়ে ছটফট করে সে মারা পড়বে। অনেকটা এই লাইনগুলির মতোঃ
“দ্বার বন্ধ করে ভ্রমটারে রুখি
সত্য বলে আমি তবে কোন পথ দিয়ে ঢুকি “।।
অবিশ্রুত - ৯ জানুয়ারি ২০০৯ (২:০২ অপরাহ্ণ)
আমারও প্রশ্ন, মন্ত্রিপরিষদ কীভাবে গঠিত হলো? এটি কি সত্যিই বাইরের ও ভেতরের প্রভাবমুক্ত বিবেচনার ফল? আওয়ামী লীগের সংসদীয় অংশটি এ প্রক্রিয়ায় কতটুকু জড়িত ছিল? মনে হচ্ছে না, এ মন্ত্রিপরিষদ গঠনের ক্ষেত্রে কোনও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে। অনেকটা রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের কায়দায় শেখ হাসিনা নিজে প্রধানমন্ত্রী হয়ে অন্যদের নির্বাচিত করেছেন। একটি শুভ কাজের সূচনাতেই এত বড় অগণতান্ত্রিকতাকে কেন অবলম্বন করতে হলো (যেখানে গণতান্ত্রিকতা দেখালেও শেখ হাসিনার মতের বাইরে কেউ যেত কি-না তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে), এটি একটি বড় প্রশ্ন।
দ্বিতীয়, এই মন্ত্রিপরিষদে শেখ হাসিনা তাঁর বেয়াইকে রেখেছেন, যার বিরুদ্ধে শান্তি কমিটির সঙ্গে ১৯৭১ সালে সংযুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এটিও একটি আপত্তিজনক সূচনা।
তৃতীয়, গতকালের সংবাদপত্রেও পড়লাম, ড. তামিম গলা শানাচ্ছেন যে আগামী ছয় মাসের মধ্যেই জ্বালানী নীতি অনুমোদন করতে হবে। শেখ হাসিনা জ্বালানী মন্ত্রণালয় নিজের হাতে রেখেছেন, এই ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার ও জবাবদিহিতার ক্ষেত্রগুলি সুনিশ্চিত করার জন্যে সকল চাপ-দলকে অবিলম্বে সক্রিয় হওয়া দরকার।
চতুর্থ, ক্ষমতায় আসার পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস শুরু হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই দলীয় কোন্দলকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন ছাত্রদলের ওপর দোষারোপ করে, কিন্তু ছাত্রলীগের দলীয় কোন্দল ও সন্ত্রাস যে-কারও কাছে সুস্পষ্ট। এদিক দিয়ে দেখতে গেলে, সাহারা খাতুনের কার্যদিবসের সূচনাও খুব বাজে।
মাসুদ করিম - ১০ জানুয়ারি ২০০৯ (৮:৪৫ পূর্বাহ্ণ)
বিষয়টি বেশ জটিল। আমরা যারা জনসাধারণ, এবং অনেকদিক থেকেই আমরা যারা অপাঙক্তেয়, তাদের জন্য, এমন একটি বিষয়ে মন্তব্য করা, বহু আগেই এক অসাধারণ শ্লেষের দ্বারা, চিরদিনের জন্যই উপহাস করা হয়েছে : আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবর। কিন্তু যে যুগে খবরের কাগজ আছে, যে যুগে শহর ও গ্রামে খুব সহজে এসব কাগজ পড়া যায়, সে যুগে একজন আদার ব্যাপারীর পুরো পৃথিবীর খবরই রাখতে হয়। এখন এই পুরো পৃথিবীর খবর রাখতে গিয়ে সে কত কী যে খবর রাখে তার হদিস পাওয়াই তার জন্য হয়ে ওঠে মহামুশকিল।
এই যে আমাদের সামনে এত বড় একটা ভোট হয়ে গেল, একটা সরকার গঠন হলো, মন্ত্রী পরিষদ গঠিত হলো : সব খবরই তো জানলাম। কিন্তু এই যে পোস্টটি লেখা হচ্ছে তার মাধ্যমে আমরা খবর না জেনে অন্য কিছু জানছি – সরকারের স্তরগুলোকে জানছি; এই জানার দিকে আমাদের মতো আদার ব্যাপারীদের আরো অগ্রসর হতে হবে। শুধু জাহাজের খবরে আর পোষাবে না, জাহাজটি কেমন করে চলে তাও জানতে হবে। পোস্টটি আমাদের সরকার কেমন করে চলে ও তার জবাবদিহিতা নিয়ে একটি ধারনা দেবে এটা ভেবেই আমি আগ্রহী হয়ে রইলাম পরবর্তী কিস্তিগুলোর জন্য।
আমি একটি জিনিস আশা করব, লেখাটিকে আপনি ঠিক যেভাবে ভেবেছেন সেভাবেই উপস্থাপন করুন, এর মধ্যে এ সরকারের চলনে হতাশ বা উচ্ছ্বসিত হওয়ার মতো অনেক কিছু ঘটবে, তার থেকে দূরে থেকে আপনার ভাবনার সুশাসন প্রক্রিয়া ও জবাবদিহিতার সিঁড়িগুলো আগে আমাদের ভালো করে চিনিয়ে দিন, তারপর বুঝে শুনে আমরা মন্তব্য করব।
অবশ্য যারা সিঁড়িগুলো এর মধ্যেই চেনেন জানেন তাদের তাৎক্ষনিক বা সুচিন্তিত মন্তব্য থেকেও আমরা নিজেদেরকে বঞ্চিত করতে চাই না।
রাশেদ - ১২ জানুয়ারি ২০০৯ (১:১৯ পূর্বাহ্ণ)
আমার তো মনে হয় জ্বালানি সহ আরো বাকি মন্ত্রনালয়গুলো হাসিনা অন্যদের ছেড়ে দিবে। পুরানোদের রিআ্যকশন দেখার জন্য মনে হয় ওয়েট করতেছে।
me - ১২ জানুয়ারি ২০০৯ (২:০৪ পূর্বাহ্ণ)
রায়হান, জ্বালানী খাতে ঘুষ সবচেয়ে বেশি। কাজেই ছাড়ার কোন সুযোগ নাই।
অন্ধ শুভ কামনার অসাধারণ ক্ষমতার জন্য আপনাকে আবারো শুভেচ্ছা জানাই।
শেয়ালের কর্মসূচির পরামর্শ দিয়ে যান…
Pingback: মুক্তাঙ্গন
fariduddin ahmed - ২৯ জানুয়ারি ২০০৯ (৭:১৪ অপরাহ্ণ)
(sorry for in english)- really the power sector is still in danger as no specific intitiative has been taken (we can claim) because of non separate minister. sheikh hasina is very keen but how much she will be able to concentrate on this ministry along with her other governmental responsibility is a big question.
মাসুদ করিম - ১ এপ্রিল ২০১১ (১:৫৯ অপরাহ্ণ)
২০০৯-এর মধ্য অগাস্টে শেখ হাসিনা তার মন্ত্রীসভায় কিছু রদবদল করেছিলেন, ২০১০-এর শেষ দিকে মিডিয়াতে জোর আলোচনা চলছিল আরেকটি আসন্ন রদবদলের, কিন্তু আমার কাছে এই রদবদল আসন্ন মনে হয়নি এবং এসপ্তাহে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সভায় শেখ হাসিনা যখন রদবদলের বিষয়টি নাকচ করে দিলেন তখন আশ্বস্ত হয়েছি। আমার কাছে মনে হয়েছে মন্ত্রীসভার রদবদল করে কোনো কাজ হবে না, শুধু এক মন্ত্রীর জায়গায় আরেক মন্ত্রী আসবে, এবং সরকারের মেয়াদের মাঝামাঝি এসে ওই মন্ত্রীরা নিজেরা আরো হিমসিম খাবেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় চালাতে। তার চেয়ে আমার মনে হয় নির্দিষ্ট দুটি মন্ত্রণালয়ে, অর্থ ও আইন, উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা যেতে পারে কয়েকজন প্রথিতযশা প্রবীন ও নবীন অর্থনীতিবিদ ও আইনজ্ঞের সমন্বয়ে। মন্ত্রী পরিবর্তনের চেয়ে এতে হয়ত আরো ভাল কাজ হবে, যদিও অতি সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট হবার কথা আমাদের প্রবাদ প্রবচন বলে তবুও নির্দিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ মানুষের সমন্বয়ে ভাল কাজ হওয়ার সম্ভাবনাও প্রচুর থাকে। আরো দুটি যে মন্ত্রণালয় আমাদের আছে ‘পরিকল্পনা’ ও ‘প্রতিরক্ষা’ মন্ত্রণালয় যা সামরিক শাসনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে একেবারেই গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে — সেদুটি মন্ত্রণালয়কে আবার কর্মব্যস্ত করতে হলে ‘পরিকল্পনা কমিশন’কে মাল্টিডিসিপ্লিনারি বিশেষজ্ঞ দিয়ে এর অথর্ব অবস্থা থেকে তুলে আনা খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে — আর ‘প্রতিরক্ষা কমিশন’ সৃষ্টি করে সেখানে সিভিলিয়ান ও সামরিক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে ( সিভিলিয়ান বিশেষজ্ঞের সংখ্যগরিষ্ঠায় গঠিত) প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কে প্রতিরক্ষা বাহিনীর চেয়ে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার কাজ শুরু করা খুবই দরকারী।