"একুশে এপ্রিল রাত এগারোটায় ফোন করে জানালেন একজন : অল্প আগে চলে গেছেন সিদ্ধেশ্বর সেন। সেই সিদ্ধেশ্বর সেন, প্রথম যৌবন থেকে অবিরতই কবিতা লিখেছেন যিনি, কিন্তু পঞ্চাশ বছর বয়স হয়ে যাবার পরও যিনি তাঁর নিজের পছন্দমতো কোনো বইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরি করে উঠতে পারেননি; সেই সিদ্ধেশ্বর সেন, প্রবীণ কবির অগোচরেই যাঁর দু-চারজন অনুজ সুহৃদ প্রকাশ করে দিয়েছেন তাঁর বই; সেই সিদ্ধেশ্বর সেন, যিনি অনেক অনুনয় করে মধ্যরাতে প্রেসের দরজা খুলিয়েছেন কবিতার একটা-কোনো কমা ঠিক করে দেবার জন্য ... ।" -- শঙ্খ ঘোষ

আমার ধারণা, আজকের কবিতার সমাজ বিচ্ছিন্নতার (এখানে কি লেখক-পাঠকের সম্পর্কের কথা উঠছে) মূল খুঁজতে গেলে তা খুঁড়তে হয় আরও গভীরে – এই শ্রেণীসমাজে ব্যক্তির বিযুক্তিবোধে; আর, এ মুহূর্তে দায়ী করা হোক, উদাহরণত, এক ফাটকাবিলাসী ‘সাহিত্যের’ বাজার হাটের নিয়মের অমানুষিক অমানবিকতাকেই, – কারণ লেখক পাঠকের যোগ তো হওয়া উচিত মানবিক মূল্যবোধে। তা যদি উপার্জিত না হয়, লেখকদের অক্ষমতায় বা দায়িত্বহীনতায় বা দণ্ডমুণ্ডধারী বণিকদেবতাটির পায়ে করুণ আত্মসমর্পণে, কিংবা অপর পক্ষে, পাঠককুলের সহিষ্ণুতা বা ধৈর্যের অভাবে – তবে তো উভয়তই ভরাডুবি হ’তে বসেছে। শিল্পীর সততাই, আমার মনে হয়, এক্ষেত্রে তার একমাত্র রক্ষাকবচ হ’তে পারে। অমরেন্দ্র চক্রবর্তী সম্পাদিত ‘কবিতা-পরিচয়’ পত্রিকার দ্বাদশ সংকলনে (বৈশাখ-আষাঢ় ১৩৭৭) ছাপা হয়েছিল বাংলাভাষার ২০ জন প্রতিনিধিস্থানীয় কবির কবিতা-বিষয়ক পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর। ‘কবিতাভাবনা’ নামের গদ্যরচনাটি – যার অংশবিশেষ আমরা উদ্ধৃত করেছি উপরে – লেখা হয়েছিল ওই প্রশ্নমালারই উত্তর হিসেবে। হ্যাঁ, এই কবিতাভাবনা সিদ্ধেশ্বর সেনের, বাংলাভাষার প্রধান এক কবির। ২ সিদ্ধেশ্বর সেনের চার-পর্বে-বিন্যস্ত দীর্ঘ কবিতা ‘আমার মা-কে’ বেরিয়েছিল অনিলকুমার সিংহ সম্পাদিত ‘নতুন সাহিত্য’ পত্রিকার প্রথম (বৈশাখ) সংখ্যায়, ১৯৫০ সালে। চারটি পর্বেরই শুরুতে ছিল পাবলো নেরুদার কবিতার উদ্ধৃতি। এই কবিতাটির জন্য – সারা জীবনে কেবল এই একটিমাত্র কবিতা লিখলেও – বাংলা কবিতার ইতিহাসে তিনি চিরস্থায়ী আসন পেতে পারতেন। এই কবিতা রচনার সূচনা ১৯৪৯-এর শেষদিকে, কবির নিজের ভাষায়, ‘আটকাধীনের একাকিত্বে’ : ... ঐ সময়ে, একদিন প্রগতি লেখক সংঘের ৪৬ ধর্মতলা স্ট্রীটের দপ্তর থেকে আমরা কয়েকজন হঠাৎ গ্রেপ্তার হই। আমাকে ও গণনাট্য সংঘের সাধারণ সম্পাদক নিরঞ্জন সেনকে লকআপে নিয়ে যাওয়া হয়। সেদিনেই বাড়িতে দেখে এসেছি, ছোট বোনটি খুবই অসুস্থ এবং মা অসম্ভব ভেঙে পড়েছেন। গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে তাই মা ও বোনের এই দুঃসহ অবস্থা এবং সে-সময়ে আমি যে তাঁদের পাশে থাকতে পারছি না – এমন এক অসহায়তা আমাকে গ্রাস করছিল। শেষে, রাত্তিরের দিকে, হঠাৎই এক তীব্র টানে, ভাঙা একটা চায়ের ভাঁড়ের টুকরো নিয়ে, আমি লকআপের মেঝেতেই এই কয়েকটি লাইন লিখে ফেলি : ‘মা, তোমার কান্নার মাঝরাতে আমি সান্ত্বনা মা, তোমার আকণ্ঠ তৃষ্ণায় আমি জল মা আমার ...’ এর কিছুদিন পরে, জামিন পেয়ে বাড়িতে এসে দেখি, আমার একমাত্র বোনটি শেষ শয্যায়। মায়ের অবস্থা চোখে দেখা…

আজ (৩০শে মার্চ ২০০৯ খৃষ্টাব্দ) জন্মের একশ বছর পূর্ণ হলো বিগত পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে সবচেয়ে খ্যাতনামা শিল্প-ইতিহাসবিদ্ হিসেবে বিশ্বে পরিচিত অধ্যাপক স্যার আর্নস্ট হান্স জোসেফ গম্‌ব্রিখ্ (Ernst Hans Josef Gombrich)-এর — ই. এইচ. গম্‌ব্রিখ্‌ নামেই যাঁর প্রসিদ্ধি।জন্মশতবার্ষিকীর এই শুভলগ্নে ই. এইচ. গম্‌ব্রিখের প্রতি জানাই আমাদের অপরিসীম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। আশা করছি, বাংলাদেশের শিল্পরসিক এবং সাধারণ পাঠক এ-বছর বিশেষভাবে স্মরণ করবেন বিশ্ববরেণ্য এই লেখককে।

বছর কয়েক আগে, নিজের সামর্থ্যের কথা না ভেবেই, হাত দিয়েছিলাম আমার পক্ষে নিতান্তই অনুচিত এক দুঃসাহসিক কাজে। এক অনধিকার চর্চায়। ‘ইন্ধন’ ছিল যাঁদের তাঁরা ঘটনাক্রমে আমার শুভানুধ্যায়ী, প্রিয়জন! কাজটি কী? আজ (৩০শে মার্চ ২০০৯ খৃষ্টাব্দ) যাঁর জন্মের একশ বছর পূর্ণ হলো এবং বিগত পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে যিনি সবচেয়ে খ্যাতনামা শিল্প-ইতিহাসবিদ্  হিসেবে বিশ্বে পরিচিত, সেই অধ্যাপক স্যার আর্নস্ট হান্স জোসেফ গম্‌ব্রিখ্ (Ernst Hans Josef Gombrich) -- ই. এইচ. গম্‌ব্রিখ্‌ নামেই যাঁর প্রসিদ্ধি -- তাঁর দ্য স্টোরি অভ্ আর্ট বইটির বাংলা অনুবাদে হাত দেয়া। ‘শিল্পকথা’ নামে লেখাটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে শুরু করেছিল চট্টগ্রামের দৈনিক পত্রিকা সুপ্রভাত বাংলাদেশ-এর সাহিত্য পাতায় (উল্লেখ্য, পত্রিকাটি তখন সদ্য তার যাত্রা শুরু করেছে সৈয়দ আবুল মকসুদের সম্পাদনায়)। আমার দুষ্পাঠ্য অনুবাদটি অবশ্য পাঠককে বেশি দিন সহ্য করতে হয়নি। সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। তবে, সুপ্রভাত-এ প্রকাশিত অংশটি খানিকটা সংশোধিত হয়ে ফের প্রকাশিত হয়েছিল, কিছু কাল পর, অধুনালুপ্ত দৈনিক আজকের কাগজ-এর সাহিত্য সাময়িকী সুবর্ণরেখা-র ঈদুল ফিৎর সংখ্যায়। দ্য স্টোরি অভ্ আর্ট যেহেতু গম্‌ব্রিখের সবচাইতে বিখ্যাত গ্রন্থ তাই সেটা সম্পর্কে দু’চারটে কথা আগে বলে নিতে পারি। শিল্পবিষয়ক সবচেয়ে জনপ্রিয় গ্রন্থগুলোর একটি বলে এটিকে অভিহিত করলে সম্ভবত মোটেই বাড়িয়ে বলা হয় না। আর, এ-দাবির পক্ষে একটি জোরালো যুক্তি হচ্ছে, ১৯৫০ সালে প্রথম জনসমক্ষে উপস্থিত হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত বইটির ষাট লক্ষেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। আদিমতম গুহাচিত্র থেকে শুরু ক’রে হাল আমলের নিরীক্ষামূলক শিল্প, অর্থাৎ সামগ্রিক শিল্প বিষয়ে একটি পরিচিতি বা উপক্রমণিকা হিসেবে নিজেকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে গ্রন্থটি। পৃথিবীর সব বয়সের এবং শিক্ষাগত ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের পাঠকই এ-গ্রন্থের রচয়িতা স্যার ই. এইচ. গম্‌ব্রিখ্-কে আবিষ্কার করেছেন এক প্রকৃত শিল্পী হিসেবে যিনি শিল্প সম্পর্কে তাঁর গভীর অনুরাগ স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করার এক বিরল গুণের সঙ্গে নিজের প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের অসাধারণ সম্মিলন ঘটিয়েছেন। উল্লেখ্য, লেখকের মূল উদ্দিষ্ট কিন্তু ছিলেন তরুণ প্রজন্মের পাঠকই। গ্রন্থটি রচনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে লেখক বলছেন, আরো উচ্চাকাঙ্ক্ষী সব গ্রন্থের পাতায় ভিড় ক’রে থাকে যেসব নাম, সময় আর শৈলীর ঐশ্বর্য তার মধ্যে একটি বোধগম্য শৃঙ্খলা আনা। দৃশ্যশিল্পের (ভিযুয়াল আর্ট) মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে লেখক তাঁর অন্তর্দৃষ্টির সাহায্যে শিল্পের ইতিহাসকে এমনভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন যাতে…

রাজপথে স্তূপীকৃত গ্রন্থাবলী দিয়ে / সাজায়ে নারকী চিতা / সভ্যতার শবদাহ করে, ধ্বংস করে বিদ্যালয়, বিদ্যার্থীর / . . . কবি যারা শিল্পী যারা / জ্ঞানী যারা, অরাজক অন্ধকারে একমাত্র / আলোর ইশারা, / অত্যাচারে অপমানে নির্বাসনে / রক্তচক্ষু শাসনে ত্রাসনে / তাদের বিনাশ এর পৈশাচিক ব্রত।যদি বলি বুদ্ধদেব বসু এই কবিতার কবি, বিশ্বাস হয় কি খুব সহজে? কিন্তু এর নাম মৃত্যু... আর মৃত্যু কী ভীষণভাবে মানুষকে পাল্টে ফেলে, বদলে দেয় তার অনুভবের ভাষা, ভাষার প্রকাশ! তারই সামান্য আঁচ পাওয়া যায় এ কবিতার ভেতর দিয়ে। বুদ্ধদেব বসুর মতো রাজনীতিনিস্পৃহ ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী কবিও কবিতা নির্মাণে এরকম বিকল্প বাকপ্রতিমা বেছে নেন সোমেন চন্দের নির্মম মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পরে [...]

রাজপথে স্তূপীকৃত গ্রন্থাবলী দিয়ে সাজায়ে নারকী চিতা সভ্যতার শবদাহ করে, ধ্বংস করে বিদ্যালয়, বিদ্যার্থীর রক্তে করে ম্লান। যারা প্রাতঃস্মরণীয়, যারা মহাপ্রাণ কবি যারা শিল্পী যারা জ্ঞানী যারা, অরাজক অন্ধকারে একমাত্র আলোর ইশারা, অত্যাচারে অপমানে নির্বাসনে রক্তচক্ষু শাসনে ত্রাসনে তাদের বিনাশ এর পৈশাচিক ব্রত। ......... ........ ......... পশুত্বের প্রতিবাদে নিখাদে রেখাবে আজ হোক উদ্দীপিত আমার কবিতা। যদি বলি বুদ্ধদেব বসু এই কবিতার কবি, বিশ্বাস হয় কি খুব সহজে? কিন্তু এর নাম মৃত্যু... আর মৃত্যু কী ভীষণভাবে মানুষকে পাল্টে ফেলে, বদলে দেয় তার অনুভবের ভাষা, ভাষার প্রকাশ! তারই সামান্য আঁচ পাওয়া যায় এ কবিতার ভেতর দিয়ে। বুদ্ধদেব বসুর মতো রাজনীতিনিস্পৃহ ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী কবিও কবিতা নির্মাণে এরকম বিকল্প বাকপ্রতিমা বেছে নেন সোমেন চন্দের নির্মম মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পরে। সেটি পড়তে-পড়তে এতকাল বাদেও আমরা বুঝতে পারি সোমেনের মৃত্যুতে উপচানো ক্রোধ, শোক, দ্রোহ ও দাহ। যদিও সে-সময়কে গ্রাস করেছিল রাজনৈতিক লক্ষ্যহীনতা, রাজনৈতিক মৃত্যুও ছিল আপাত লক্ষ্যহীন, তবুও সোমেন চন্দের মৃত্যুর পর অভিন্ন এক শোক, ক্রন্দন, ক্রোধ ও আকাঙক্ষায় একত্র হয়েছিলেন ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা লেখক-সাহিত্যিক-শিল্পী-সংস্কৃতি কর্মী। ১৯২০ থেকে ১৯৪২ সালের ৮ মার্চ কি তেমন দীর্ঘ সময়? জন্মমৃত্যুর এই সামান্যতর ঘোরের মধ্যেই তিনি কী রাজনীতিতে, কী সাহিত্যে উজ্জ্বল হয়ে উঠছিলেন তাঁর একাগ্রতা দিয়ে। এই একাগ্রতার সঙ্গে কমিটমেন্টের দূরত্ব কতখানি তা মাপতে চুলচেরাবিদরা ব্যস্ত থাকুন; আমরা যা বলব তা হলো, কমিটমেন্ট হোক আর একাগ্রতাই হোক, সেটা তাঁর এই হ্রস্ব জীবনকেও এত দীপ্তিময় করে রেখেছে যেমনটি অনেকে তাঁদের অনেক দীর্ঘ জীবনেও করতে পারেন না। সোমেনের মৃত্যু এখনও কমিউনিস্ট আন্দোলন ও জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের তৎকালীন আত্মঘাতী সরলীকৃত রণকৌশলকে ধিক্কার দিয়ে বেড়ায়। এই মৃত্যুর প্রতীকী ভবিষ্য-ভাষ্যই যেন প্রতিফলিত হয় পরবর্তী সময়ের কমিউনিস্ট আন্দোলনে, বামপন্থীর আকাঙ্ক্ষা ও আত্মাহুতিতে। তবুও সান্ত্বনা, চারপাশের রাজনৈতিক লক্ষ্যহীনতা সোমেনের কমিটমেন্টকে দুর্বল করে ফেলে নি। বরং লজ্জা পেয়েছে এসব লক্ষ্যহীনতার মধ্যেও নির্ধারিত রাজনৈতিক কর্মসূচি লালন-পালনে সোমেনের একাগ্রতা দেখে। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়ার পাদটিকা হিসাবে তাঁর জন্মতারিখ কিংবা শৈশব-কৈশোরও অজানা সবার। ম্যাট্রিক পাশ করার পরে একদিকে অর্থাভাব, অন্যদিকে প্লুরিসি বা ব্রঙ্কাইটিস জাতীয় কঠিন অসুখে মিটফোর্ড মেডিক্যাল স্কুলের ডাক্তারি পড়াও বাদ দিতে হয় তাঁকে। শুধু ডাক্তারি পড়া নয়, যে কোনও একাডেমিক লেখাপড়াও। তাঁর…

দুই বঙ্গের কয়েকটি বিদ্যায়তনে এ বছর একযোগে উদ্‌যাপিত হতে পারত এক কৃতী ছাত্রী ও শিক্ষয়িত্রীর জন্মদিন, যিনি জন্মেছিলেন ১৯০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর, বেঁচে থাকলে আজ যাঁর বয়স হতো একশো বছর। [...]

দুই বঙ্গের কয়েকটি বিদ্যায়তনে এ বছর একযোগে উদ্‌যাপিত হতে পারত এক কৃতী ছাত্রী ও শিক্ষয়িত্রীর জন্মদিন, যিনি জন্মেছিলেন ১৯০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর, বেঁচে থাকলে আজ যাঁর বয়স হতো একশো বছর। তাঁর মৃত্যু হয়েছিল ১৯৮৬ সালের ২৯ মে; তার পরদিন কলকাতার কোনো-না-কোনো দৈনিকে নিশ্চয়ই সেই খবর প্রকাশিত হয়েছিল। সেই সঙ্গে তাঁর কোনো ছবিও কি ছাপা হয়েছিল? হয়তো হয়েছিল। কিন্তু ১৯৮৬ থেকে ২০০৮ – এই বাইশ বছরে তাঁর কোনো ছবি যেমন আমরা দেখিনি, তাঁর জীবন নিয়ে, তাঁর কাজ নিয়ে কোনো আলোচনা হতেও শুনিনি; কিংবা কোথাও তা হয়ে থাকলেও সে-খবর জানতে পারিনি আমরা। আমাদের অনেকের কাছেই তাঁর একমাত্র পরিচয় – তিনি অনুবাদক। তাঁর অনুবাদে মাক্সিম গোর্কির মা উপন্যাসটি পড়েননি এমন পাঠক আমাদের পরিচিত গণ্ডির মধ্যে বিরল। তাঁর অনুবাদের তালিকায় আছে নানা ভাষার আরো সব কালজয়ী গ্রন্থ, যার মধ্যে অনেকগুলিই হয়তো এখন আর ছাপা নেই। দুর্ভাগ্যবশত তাঁর মৌলিক রচনা ও অনুবাদকর্মের কোনো পূর্ণাঙ্গ তালিকাও আমাদের হাতে নেই। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত, জি এই হাবীব সম্পাদিত অনুবাদ পত্রিকা তরজমা-র প্রথম সংখ্যাটি তাঁর ও বুদ্ধদেব বসুর স্মৃতির উদ্দেশে উৎসর্গ করা হয়েছে। জন্মশতবর্ষে তাঁকে স্মরণ করার অন্য কোনো আয়োজনের খবর যেমন আমাদের জানা নেই, তেমনি জানা নেই তাঁর জীবন সম্পকে পর্যাপ্ত তথ্যও। তাঁর কর্মময় জীবনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় পাচ্ছি সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান-এর প্রথম খণ্ডে (সংশোধিত তৃতীয় সংস্করণ, জুলাই ১৯৯৪) : পুষ্পময়ী বসু। মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ। পিতা : হরিচরণ বসু। আদর্শবাদী শিক্ষাব্রতী, সুলেখিকা ও নিষ্ঠাবতী সমাজসেবী। ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী গার্লস স্কুলের কৃতী ছাত্রী ছিলেন। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাট্রিক পাশ করে ঢাকার ইডেন কলেজে পড়ার সময় বিপ্লবী দেশনেত্রীদের সংস্পর্শে এসে ঢাকার গ্রামে গ্রামে স্বদেশী প্রচারের কাজ করেন। বেথুন কলেজে সংস্কৃতে অনার্স নিয়ে বি.এ. পড়তেন। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে বি.এ. পরীক্ষায় মহিলা পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'পদ্মাবতী স্বর্ণপদক' লাভ করেন। ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃতে এম.এ. পাশ করেন। রাজশাহীর পি.এন. স্কুলে তাঁর কর্মজীবন শুরু। স্বদেশসেবী তরুণ-তরুণীদের আশ্রয়দানের কারণে রাজরোষে পড়ে ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সেই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার পদ ছেড়ে কিছুদিন মোরাদাবাদ কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে পারিবারিক কারণে কলিকাতায় চলে আসেন। ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে বহরমপুরের কাশীশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান…

পরীক্ষামূলক পোস্ট১

স্বাগতম।

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.