কী করবেন বারাক ওবামা ও হিলারি ক্লিনটনরা, জুতা যখন অস্ত্র হয়ে ওঠে? জুতা যখন মিসাইলের চেয়েও তীব্র বেগে গিয়ে আঘাত হানতে চায় যতটা না জর্জ বুশের শরীরে, তারও চেয়ে বেশি পুরো যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী কাঠামোর চোয়ালে? জুতা তো ছুরি নয়, পিস্তল নয় যে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে সনাক্ত করতে হবে। এ হেন জুতা আর জুতা নয়, রীতিমতো অস্ত্র হয়ে উঠেছে। এ অস্ত্র প্রয়োগের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের যে-ক্ষতি করা হলো, তা থেকে বেরিয়ে আসার দায়ভার তো ওবামা-হিলারিদেরই নিতে হবে। কেননা তারাই তো এখন উত্তরসূরি বুশ-রাইসের ইরাকনীতির। মুনতাজার আল-জায়িদকে এখন মেরেকেটে কোটি টুকরো করে ফেললেও কি সম্ভব যুক্তরাষ্ট্রের চোয়ালের দিকে উড়তে থাকা ওই জুতার পাটিকে ফিরিয়ে আনা? সম্ভব নয়। এমনকি মার্কিন মুল্লুকেরই তুখোড় বিশ্লেষক ডেভিড সোয়ানসনকে বলতে শুনছি, একজন সাংবাদিক কেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির দিকে জুতা ছুঁড়ে মারার মতো অভব্য কাজটি করতে গিয়েছিলেন তারও চেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, ওই কক্ষটিতে উপস্থিত আর যারা ছিল তারা কেন এরপরও সাহস পায়নি পা থেকে জুতা খুলবার। ডেভিড সোয়ানসন উল্টো জানতে চেয়েছেন, ‘কেন যে-মানুষটি আমাদের রাষ্ট্রপতির গায়ে জুতা ছুঁড়ে মারে, সেই মানুষটি আমাদের রাষ্ট্রপতির চেয়েও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে?’ এই প্রশ্নের জবাব খানিকটা দিতে পারেন বাঙালিরা, বাংলাদেশের মানুষেরা। কেননা অন্যায়কারীর দিকে সরাসরি জুতা ছুঁড়ে মারার রেওয়াজ এ-দেশটিতেও আছে। অনেকেরই মনে আছে, স্বৈরাচারী সামরিক জান্তা হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ জনসভা করতে গেলে সিলেটবাসী জুতা দেখিয়েছিলেন আর সিরাজগঞ্জের জনগণ শুধু জুতা দেখিয়ে বা ছুঁড়েই ক্ষান্ত হননি, w`M¤^i হয়ে প্রচণ্ড রোষে ছুটে গিয়েছিলেন সামরিক জান্তার দিকে। আরও একটি ঘটনাও অনেকের মনে আছে, জামায়াতে ইসলামীর গোলাম আযম নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন বায়তুল মোকাররমে। হয়তো চিন্তা করেছিলেন, জনগণ সব ভুলে গেছে। কিন্তু না, গণরোষের শিকার হয়েছিলেন তিনি, এবং শোনা যায় তার মাথায়ও দু’চারটে জুতা-স্যান্ডেল বসিয়ে দিয়েছিলেন বিক্ষুব্ধ মানুষ। চারপাশে যখন মিথ্যার বোঝা জমে ওঠে, একেবারে সামনাসামনি দাঁড়িয়ে যখন মিথ্যুকেরা অম্লান বদনে প্রচণ্ড আস্থার সঙ্গে মিথ্যা কথা বলতে থাকেন, তখন সুন্দর ও সত্য কদর্য হয়ে প্রতিবাদ করতে বাধ্য হয়। কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ তাঁর ‘কিংবদন্তীর কথা বলছি’ কবিতায় লিখেছিলেন, ‘আমাদের কণ্ঠস্বর কর্কশ/ কেননা বিকৃতির প্রতি ঘৃণা মানুষকে অসুন্দর করে দেয়।’ ইরাকে সাংবাদিক মুনতাজার আল-জায়িদী যে এই অভব্য কাজটি করতে…
দুঃসংবাদে এদেশের খবরের কাগজগুলো ঢাকা থাকে। থাকে টিভি-বেতারের সংবাদেও। আমরা যারা ব্লগ লিখি, আমরা অনেক বেদনার ভিতরেও আশার খবরটা ও সত্যভাষনটা ব্লগানুরাগী পাঠক কূলের কাছে নিয়ে আসি। কিন্ত যেভাবে চাই, সে ভাবে তো দেশ এগোয় না, যে আশা করি, তাতো দুরাশা হয়ে আমার কাছে ফেরত আসে, আর যে স্বপ্ন দেখি, তাতো প্রতিদিনই ভেঙে পড়ে। মুখোমূখি হই ভয়ংকর বাস্তবতার। আমরা কি নিজেরাই এজন্যে দায়ী? এই মাত্র বিডি নিউজের ব্রেকিং নিউজে বড় বড় হেড লাইনে লাল কালিতে ছাপা হয়েছে,আওয়ামী লীগ সভানেত্রী যে কোন মূহূর্তে একটি সুইসাইড স্কোয়াডের কিলিং এটেম্পটের শিকার হয়ে যেতে পারেন। সুনির্দ্দিষ্ট একটি তথ্যের ভিত্তিতে, তারা এই খবরটি ছাপিয়েছে। ভারতীয় একটি ইন্টেলিজেন্স এজেন্সীর বরাত দিয়ে,খবরে বলা হয়েছে, আমাদের দেশের ভিতরেই সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ নামক একটি স্থানে গত দু'মাস ধরে একটী সন্ত্রাসবাদী ট্রেনিং ক্যাম্প পরিচালিত হয়ে আসছিলো। এই ট্রেনিং ক্যাম্পটি পরিচালনার দায়িত্বে আছে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বা হূজি নামে যারা পরিচিত । এই ট্রেনিং ক্যাম্পটিতে সামরিক প্রশিক্ষন যিনি তদারকি করেছেন তার নাম এহতেশাম। এই এহতেশাম একজন পাকিস্তানী স্পেশাল ফোর্সের সাবেক কর্মকর্তা। তার নেতৃত্বে গত দু'মাসে সেখানে ছয় (৬) সদস্য বিশিষ্ট একটি কিলিং স্কোয়াডকে প্রশিক্ষন দেয়া হয়েছে। হরকাতুল জিহাদ প্রধান ইমতিয়াজ কুদ্দুস ট্রেনিং শেষে, ঐ ৬ সদস্যের সাথে ব্যক্তিগত ভাবে দেখা করে, সব যাবতীয় নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও খবরে প্রকাশ হয়েছে। তাদের উপর স্পেশাল এসাইনমেণ্ট হল, শেখ হাসিনার উপর সফল আত্নঘাতী হামলা চালানো, যে কোন সময়। খবরে জানতে পেরেছি, ভারতীয় ঐ গোয়েন্দা সংস্থা ইতিমধ্যে শেখ হাসিনাকে বিষয়টি অবহিত করেছে, এবং সতর্ক করে দিয়েছে। গত দু'মাস ধরে এই তৎপরতা দেশের ভিতরে চললো, আর সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কিছুই জানলো না! ঊদিচীর মঞ্চে বোমা হামলা, রমনার বোমা হামলা, পল্টনের বোমা হামলা, একুশে আগষ্টের গ্রেনেড হামলা, ময়মনসিংহে সিনেমা হলের বোমা হামলা, সারা দেশে একযোগে ৫০০ স্থানে বোমা হামলা এবং চট্রগ্রামে জজ আদালত ভবনে বই বোমা হামলা, এর কোনটাতেই আগাম কোন তথ্য দিতে পারেনি কিংবা দেয়নি, আমাদের দেশের ইন্টেলিজেন্স এজেন্সী গুলো। কেন পারেনি? সর্ষেতে কি ভুত লুকিয়ে আছে?
বাংলাদেশে ভাস্কর্য ভাঙতে শুরু করেছে ধর্মীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। তারা তাদের এই ভাঙনের কাজে সাধারণ মানুষকেও টেনে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে ধর্মীয় বয়ান দিয়ে। ভাস্কর্য ধর্মবিরোধী ব্যাপার,- একবাক্যে বলতে গেলে এটি তাদের মূল যুক্তি এবং নিছক আক্ষরিকভাবে বলতে গেলে, এই যুক্তি সঠিক। কিন্তু মানবজাতিকে যারা যুগে যুগে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন তাঁরা ঈশ্বরপ্রেরিতই হন আর সামাজিক সংগঠক, রাজনীতিক, বৈজ্ঞানিক কিংবা শিল্পী-সাহিত্যিক যে-ই হন, তাঁদের অভিজ্ঞতা আমাদের এ কথাই বলে, ইতিহাস ও আদর্শকে আক্ষরিকভাবে গ্রহণ করার মধ্যে দিয়ে সমাজের বিকাশ সম্ভব নয়। তার জন্যে প্রয়োজন হয় যথোপযুক্ত বিশ্লেষণ পদ্ধতির [...]
বাংলাদেশে ভাস্কর্য ভাঙতে শুরু করেছে ধর্মীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। তারা তাদের এই ভাঙনের কাজে সাধারণ মানুষকেও টেনে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে ধর্মীয় বয়ান দিয়ে। ভাস্কর্য ধর্মবিরোধী ব্যাপার,- একবাক্যে বলতে গেলে এটি তাদের মূল যুক্তি এবং নিছক আক্ষরিকভাবে বলতে গেলে, এই যুক্তি সঠিক। কিন্তু মানবজাতিকে যারা যুগে যুগে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন তাঁরা ঈশ্বরপ্রেরিতই হন আর সামাজিক সংগঠক, রাজনীতিক, বৈজ্ঞানিক কিংবা শিল্পী-সাহিত্যিক যে-ই হন, তাঁদের অভিজ্ঞতা আমাদের এ কথাই বলে, ইতিহাস ও আদর্শকে আক্ষরিকভাবে গ্রহণ করার মধ্যে দিয়ে সমাজের বিকাশ সম্ভব নয়। তার জন্যে প্রয়োজন হয় যথোপযুক্ত বিশ্লেষণ পদ্ধতির। মৌলবাদীদের (তা ধর্মীয়ই হোক আর রাজনৈতিকই নয়) আমরা মৌলবাদী বলি কেন? বলি, এই কারণে যে এরা সব কিছুকেই আক্ষরিক অর্থে বিবেচনা করার পক্ষপাতি। ইতিহাস, ভূগোল ও রাজনৈতিক পারিপার্শ্বিকতা থেকে শুরু করে সময়ের পরিবর্তন কোনওটিকেই এরা বিকাশের ধারা ও যুক্তির আওতায় নিতে চায় না। তাই এরা সময়ের সত্যকে হারিয়ে ফেলে, সত্যের উদ্বোধন ঘটাতে ব্যর্থ হয় এবং উটপাখির মতো মুখ গুঁজে থাকে অতীতের বদ্ধ কাঠামোতে। ইসলাম ধর্মের উত্থানপর্বে মূর্তি-বিরোধিতা খুব সুস্পষ্ট। কেননা, হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) একটি নিরাবয়ব ও একেশ্বরবাদী ধর্ম প্রচার করেছিলেন। মূর্তি-পূজা এই একেশ্বরবাদিতা ও নিরাকারবাদিতার সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি করেছিল। কিন্তু কালক্রমে মূর্তি তৈরির বিষয়টি আর ধর্মচর্চার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেনি, বরং তা ধর্মসাধনার পরিধিকে অতিক্রম করে শিল্পভাবনা ও শিল্পসৃষ্টির ধারাকেই বড় করে দেখেছে। এইভাবে মূর্তিপূজা থেকে, মূর্তি তৈরির পর্ব থেকে ভাস্কর্য চর্চা এবং ভাস্কর্য তৈরিও প্রক্রিয়াও আলাদা হয়ে পড়েছে। কিন্তু অনেকেই আছেন, যারা এই সহজ ঐতিহাসিক সত্যকে গ্রহণ করতে পারেন না। তাদের কাছে ভাস্কর্যের ঐতিহ্যিক প্রেরণা ও আবেদন এবং এর সঙ্গে শিল্পের যোগ খুবই তুচ্ছ মনে হয়। তারা মনে করেন, এর মধ্যে দিয়ে আসলে তাদের ধর্মীয় অনুভূতিকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে। কিন্তু ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যের প্রতি মমত্ব, শিল্পের প্রতি ভালোবাসা আর ঈশ্বরের জন্যে নৈবেদ্যর মধ্যে অবশ্যই পার্থক্য আছে। এই প্রসঙ্গে টেনে আনা যায় হযরত মোহাম্মদের প্রথম জীবনীকার আরবের ইতিহাসবিদ ইবনে ইসহাকের বইটির কথা। অনেক আগের লেখা তাঁর বই ‘দ্য লাইফ অব মোহাম্মদ’-এ তিনি কাবা শরীফ থেকে ৩৬০টি মূর্তি সরিয়ে নেয়ার সময়ের একটি বর্ণনাও তুলে ধরেছেন। তাতে লেখা হয়েছে, মূর্তি অপসারণ এমনকি দেয়ালের সব ফ্রেসকো মুছে…
স্বাগতম।