বিগত সাত-আট দশকে বিষ্ণু দে-র কবিতা নিয়ে কম বির্তক হয়নি। পাঠকের মুগ্ধতা ও ঔদাসীন্য – দুই-ই জুটেছে এই কবির ভাগ্যে। যাঁর কবিতা ব্যক্তি, সমাজ, শিল্প-সাহিত্য-রাজনীতির সম্বন্ধসূত্রে জড়ানো, তাঁর পাঠক কি কেবল বিচ্ছিন্ন কিছু কবিতা ভালো-লাগার (বা না-লাগার) অনুভব নিয়ে সন্তুষ্ট (বা অসন্তুষ্ট) থাকবেন, না কি ছুঁতে চাইবেন তাঁর অব্যাহত সমগ্রতাকেও? সেটাই নিশ্চয়ই প্রত্যাশিত। কিন্তু একালের পাঠকের কাছে কতটা প্রাসঙ্গিক বিষ্ণু দে-র কবিতা? জন্মশতবর্ষে পৌঁছনোর পর, এসব প্রশ্ন নতুন করে ওঠাই স্বাভাবিক। এরই মধ্যে উঠেছেও। বিষ্ণু দে-র কবিতার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে তেমনি একটি প্রবন্ধ, অরুণ সেনের ‘কঠিন ব্রতের গৌরব’, আমাদের জন্য আলোচনার পরিসর তৈরি করে দিতে পারে। [...]

বিগত সাত-আট দশকে বিষ্ণু দে-র কবিতা নিয়ে কম বির্তক হয়নি। পাঠকের মুগ্ধতা ও ঔদাসীন্য – দুই-ই জুটেছে এই কবির ভাগ্যে। যাঁর কবিতা ব্যক্তি, সমাজ, শিল্প-সাহিত্য-রাজনীতির সম্বন্ধসূত্রে জড়ানো, তাঁর পাঠক কি কেবল বিচ্ছিন্ন কিছু কবিতা ভালো-লাগার (বা না-লাগার) অনুভব নিয়ে সন্তুষ্ট (বা অসন্তুষ্ট) থাকবেন, না কি ছুঁতে চাইবেন তাঁর অব্যাহত সমগ্রতাকেও? সেটাই নিশ্চয়ই প্রত্যাশিত। কিন্তু একালের পাঠকের কাছে কতটা প্রাসঙ্গিক বিষ্ণু দে-র কবিতা? জন্মশতবর্ষে পৌঁছনোর পর, এসব প্রশ্ন নতুন করে ওঠাই স্বাভাবিক। এরই মধ্যে উঠেছেও। বিষ্ণু দে-র কবিতার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে তেমনি একটি প্রবন্ধ, অরুণ সেনের ‘কঠিন ব্রতের গৌরব’, আমাদের জন্য আলোচনার পরিসর তৈরি করে দিতে পারে। লেখাটি এ বছরের জানুয়ারিতে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রকাশিত বিষ্ণু দে : স্বভাবে প্রতিবাদে নামের বইয়ের অন্তর্গত। বিষ্ণু দে-কে নিয়ে একই লেখকের ইতিপূর্বে প্রকাশিত বইগুলো হলো : এই মৈত্রী এই মনান্তর ; বিষ্ণু দে-র রচনাপঞ্জি ; বিষ্ণু দে, এ ব্রতযাত্রায় ; যামিনী রায় বিষ্ণু দে: বিনিময় ; বিষ্ণু দে-র কথা ; বিষ্ণু দে-র নন্দনবিশ্ব এবং ইংরেজিতে ও বাংলায় জীবনী বিষ্ণু দে । প্রথমোক্ত বইটি উল্লিখিত কয়েকটি গ্রন্থের নতুন বিন্যাস, অবশ্যই নতুন সংযোজন সহ। বিষ্ণু দে-র শততম জন্মদিনে (নাতি)দীর্ঘ এই লেখাটি পড়ার ও আলোচনায় অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ রইল সকলের প্রতি। . . . ‘কঠিন ব্রতের গৌরব’ অরুণ সেন তিরিশের কবিদের প্রত্যেকেই যখন একে-একে একশো বছরে পৌঁছোচ্ছেন, তখন, প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই, এই প্রশ্ন সংগতভাবেই ওঠে : যে-কবির প্রতি আমরা একদা আগ্রহী ছিলাম, সেই কবি আজও কতটা পঠিত? সব কবিরই নিজস্ব পাঠক ছিলেন সমকালে, পরে দীক্ষিত স্থায়ী পাঠকসমাজও গড়ে উঠেছে তাঁদের এক-একজনকে ঘিরে – কিন্তু অনেকসময় পার করে সেই কবি সম্পর্কে নতুন পাঠকের উৎসাহ কি টিকে আছে এখনও? নতুন পাঠকের নতুন আবিষ্কার কি ঘটছে? মনে কি হচ্ছে, আজও সেই কবি জীবিত এবং প্রাসঙ্গিক? অবশ্য তফাত একটা হয়েই যায়, সময়-বদলের সঙ্গে-সঙ্গে। পাঠ্যসূচির প্রশ্রয় না থাকলে মাইকেল কতখানি পড়া হত? গান বাদ দিলে রবীন্দ্রনাথই-বা কতটা? বিদেশেও কি তা-ই নয়? সমকালের পরে পাঠক তো ক্রমশ সংকুচিত হয়েই যায় – এমনকি যাদের ক্লাসিক বলি, তাদের ক্ষেত্রেও কি তা সত্যি নয়? তা ছাড়া আধুনিক কবিতার পাঠক তো প্রথম থেকেই সংকুচিত। পরে সমকালের উত্তাপ কমে গেলে তার…

আজ (৩০শে মার্চ ২০০৯ খৃষ্টাব্দ) জন্মের একশ বছর পূর্ণ হলো বিগত পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে সবচেয়ে খ্যাতনামা শিল্প-ইতিহাসবিদ্ হিসেবে বিশ্বে পরিচিত অধ্যাপক স্যার আর্নস্ট হান্স জোসেফ গম্‌ব্রিখ্ (Ernst Hans Josef Gombrich)-এর — ই. এইচ. গম্‌ব্রিখ্‌ নামেই যাঁর প্রসিদ্ধি। জন্মশতবার্ষিকীর এই শুভলগ্নে ই. এইচ. গম্‌ব্রিখের প্রতি জানাই আমাদের অপরিসীম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। আশা করছি, বাংলাদেশের শিল্পরসিক এবং সাধারণ পাঠক এ-বছর বিশেষভাবে স্মরণ করবেন বিশ্ববরেণ্য এই লেখককে।

বছর কয়েক আগে, নিজের সামর্থ্যের কথা না ভেবেই, হাত দিয়েছিলাম আমার পক্ষে নিতান্তই অনুচিত এক দুঃসাহসিক কাজে। এক অনধিকার চর্চায়। ‘ইন্ধন’ ছিল যাঁদের তাঁরা ঘটনাক্রমে আমার শুভানুধ্যায়ী, প্রিয়জন! কাজটি কী? আজ (৩০শে মার্চ ২০০৯ খৃষ্টাব্দ) যাঁর জন্মের একশ বছর পূর্ণ হলো এবং বিগত পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে যিনি সবচেয়ে খ্যাতনামা শিল্প-ইতিহাসবিদ্  হিসেবে বিশ্বে পরিচিত, সেই অধ্যাপক স্যার আর্নস্ট হান্স জোসেফ গম্‌ব্রিখ্ (Ernst Hans Josef Gombrich) -- ই. এইচ. গম্‌ব্রিখ্‌ নামেই যাঁর প্রসিদ্ধি -- তাঁর দ্য স্টোরি অভ্ আর্ট বইটির বাংলা অনুবাদে হাত দেয়া। ‘শিল্পকথা’ নামে লেখাটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে শুরু করেছিল চট্টগ্রামের দৈনিক পত্রিকা সুপ্রভাত বাংলাদেশ-এর সাহিত্য পাতায় (উল্লেখ্য, পত্রিকাটি তখন সদ্য তার যাত্রা শুরু করেছে সৈয়দ আবুল মকসুদের সম্পাদনায়)। আমার দুষ্পাঠ্য অনুবাদটি অবশ্য পাঠককে বেশি দিন সহ্য করতে হয়নি। সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। তবে, সুপ্রভাত-এ প্রকাশিত অংশটি খানিকটা সংশোধিত হয়ে ফের প্রকাশিত হয়েছিল, কিছু কাল পর, অধুনালুপ্ত দৈনিক আজকের কাগজ-এর সাহিত্য সাময়িকী সুবর্ণরেখা-র ঈদুল ফিৎর সংখ্যায়। দ্য স্টোরি অভ্ আর্ট যেহেতু গম্‌ব্রিখের সবচাইতে বিখ্যাত গ্রন্থ তাই সেটা সম্পর্কে দু’চারটে কথা আগে বলে নিতে পারি। শিল্পবিষয়ক সবচেয়ে জনপ্রিয় গ্রন্থগুলোর একটি বলে এটিকে অভিহিত করলে সম্ভবত মোটেই বাড়িয়ে বলা হয় না। আর, এ-দাবির পক্ষে একটি জোরালো যুক্তি হচ্ছে, ১৯৫০ সালে প্রথম জনসমক্ষে উপস্থিত হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত বইটির ষাট লক্ষেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। আদিমতম গুহাচিত্র থেকে শুরু ক’রে হাল আমলের নিরীক্ষামূলক শিল্প, অর্থাৎ সামগ্রিক শিল্প বিষয়ে একটি পরিচিতি বা উপক্রমণিকা হিসেবে নিজেকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে গ্রন্থটি। পৃথিবীর সব বয়সের এবং শিক্ষাগত ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের পাঠকই এ-গ্রন্থের রচয়িতা স্যার ই. এইচ. গম্‌ব্রিখ্-কে আবিষ্কার করেছেন এক প্রকৃত শিল্পী হিসেবে যিনি শিল্প সম্পর্কে তাঁর গভীর অনুরাগ স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করার এক বিরল গুণের সঙ্গে নিজের প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের অসাধারণ সম্মিলন ঘটিয়েছেন। উল্লেখ্য, লেখকের মূল উদ্দিষ্ট কিন্তু ছিলেন তরুণ প্রজন্মের পাঠকই। গ্রন্থটি রচনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে লেখক বলছেন, আরো উচ্চাকাঙ্ক্ষী সব গ্রন্থের পাতায় ভিড় ক’রে থাকে যেসব নাম, সময় আর শৈলীর ঐশ্বর্য তার মধ্যে একটি বোধগম্য শৃঙ্খলা আনা। দৃশ্যশিল্পের (ভিযুয়াল আর্ট) মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে লেখক তাঁর অন্তর্দৃষ্টির সাহায্যে শিল্পের ইতিহাসকে এমনভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন যাতে…

দুই বঙ্গের কয়েকটি বিদ্যায়তনে এ বছর একযোগে উদ্‌যাপিত হতে পারত এক কৃতী ছাত্রী ও শিক্ষয়িত্রীর জন্মদিন, যিনি জন্মেছিলেন ১৯০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর, বেঁচে থাকলে আজ যাঁর বয়স হতো একশো বছর। [...]

দুই বঙ্গের কয়েকটি বিদ্যায়তনে এ বছর একযোগে উদ্‌যাপিত হতে পারত এক কৃতী ছাত্রী ও শিক্ষয়িত্রীর জন্মদিন, যিনি জন্মেছিলেন ১৯০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর, বেঁচে থাকলে আজ যাঁর বয়স হতো একশো বছর। তাঁর মৃত্যু হয়েছিল ১৯৮৬ সালের ২৯ মে; তার পরদিন কলকাতার কোনো-না-কোনো দৈনিকে নিশ্চয়ই সেই খবর প্রকাশিত হয়েছিল। সেই সঙ্গে তাঁর কোনো ছবিও কি ছাপা হয়েছিল? হয়তো হয়েছিল। কিন্তু ১৯৮৬ থেকে ২০০৮ – এই বাইশ বছরে তাঁর কোনো ছবি যেমন আমরা দেখিনি, তাঁর জীবন নিয়ে, তাঁর কাজ নিয়ে কোনো আলোচনা হতেও শুনিনি; কিংবা কোথাও তা হয়ে থাকলেও সে-খবর জানতে পারিনি আমরা। আমাদের অনেকের কাছেই তাঁর একমাত্র পরিচয় – তিনি অনুবাদক। তাঁর অনুবাদে মাক্সিম গোর্কির মা উপন্যাসটি পড়েননি এমন পাঠক আমাদের পরিচিত গণ্ডির মধ্যে বিরল। তাঁর অনুবাদের তালিকায় আছে নানা ভাষার আরো সব কালজয়ী গ্রন্থ, যার মধ্যে অনেকগুলিই হয়তো এখন আর ছাপা নেই। দুর্ভাগ্যবশত তাঁর মৌলিক রচনা ও অনুবাদকর্মের কোনো পূর্ণাঙ্গ তালিকাও আমাদের হাতে নেই। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত, জি এই হাবীব সম্পাদিত অনুবাদ পত্রিকা তরজমা-র প্রথম সংখ্যাটি তাঁর ও বুদ্ধদেব বসুর স্মৃতির উদ্দেশে উৎসর্গ করা হয়েছে। জন্মশতবর্ষে তাঁকে স্মরণ করার অন্য কোনো আয়োজনের খবর যেমন আমাদের জানা নেই, তেমনি জানা নেই তাঁর জীবন সম্পকে পর্যাপ্ত তথ্যও। তাঁর কর্মময় জীবনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় পাচ্ছি সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান-এর প্রথম খণ্ডে (সংশোধিত তৃতীয় সংস্করণ, জুলাই ১৯৯৪) : পুষ্পময়ী বসু। মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ। পিতা : হরিচরণ বসু। আদর্শবাদী শিক্ষাব্রতী, সুলেখিকা ও নিষ্ঠাবতী সমাজসেবী। ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী গার্লস স্কুলের কৃতী ছাত্রী ছিলেন। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাট্রিক পাশ করে ঢাকার ইডেন কলেজে পড়ার সময় বিপ্লবী দেশনেত্রীদের সংস্পর্শে এসে ঢাকার গ্রামে গ্রামে স্বদেশী প্রচারের কাজ করেন। বেথুন কলেজে সংস্কৃতে অনার্স নিয়ে বি.এ. পড়তেন। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে বি.এ. পরীক্ষায় মহিলা পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'পদ্মাবতী স্বর্ণপদক' লাভ করেন। ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃতে এম.এ. পাশ করেন। রাজশাহীর পি.এন. স্কুলে তাঁর কর্মজীবন শুরু। স্বদেশসেবী তরুণ-তরুণীদের আশ্রয়দানের কারণে রাজরোষে পড়ে ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সেই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার পদ ছেড়ে কিছুদিন মোরাদাবাদ কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে পারিবারিক কারণে কলিকাতায় চলে আসেন। ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে বহরমপুরের কাশীশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান…

পরীক্ষামূলক পোস্ট১

স্বাগতম।

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.