সরকার সংসদে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সহযোগিতা চেয়েছেন রেনাটা লক-এর কাছে যিনি বাংলাদেশে জাতিসংঘের সমন্নয়কারী। জাতিসংঘ পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে সম্মানিত বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। জাতিসংঘ বিশ্বের নিপীড়িত জনগণের রোম্যান্টিক স্বপ্ন, বিশ্ববিবেকের আর্তনাদ ও প্রতিবাদ করার তীর্থকেন্দ্র। সেদিক দিয়ে জাতিসংঘকে জড়িত করার ইচ্ছে হতেই পারে। যদিও সে হাতে গোনা কিছু শক্তিশালী জাতির হাতে বন্দী, যদিও কোন সরকারের ওপরে তার প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ নেই, যদিও শক্তিশালী অপরাধীরা বার বার তার সিদ্ধান্ত পায়ে দলেছে তবু জাতিসংঘ বিশ্বের সুশীল সমাজের সোচ্চার কন্ঠ। প্রধানমন্ত্রীকে রেনাটা লক পরামর্শ দিয়েছেন অন্য দেশে গণহত্যার বিচার কিভাবে হয়েছে তার বিশদ খোঁজখবর নিতে যাতে বাংলাদেশ ‘‘দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি’’-র শিকার না হয়। আমরা মনে করি কথাটা আমাদের আইনবিদ ও বিচারকেরা ভালই জানেন, তাই এ উটকো পরামর্শের দরকার ছিলনা। আদৌ জাতিসংঘকে জড়াবার দরকার আছে কি না সে প্রশ্নে আমরা পরে যাব। প্রথমে দেখা যাক কেন আমরা দৃ•ভাবে বিশ্বাস করি জাতিসংঘকে জড়িত করলেই বরং আমরা অবধারিতভাবে ‘‘দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি’’র শিকার হব। কেন হব? কারণ জাতিসংঘ-ষড়যন্ত্রই যুদ্ধাপরাধীদের শেষ অবলম্বন, এটাকে তারা এর মধ্যেই শ্লোগান হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করেছে। জাতিকে বুঝতে হবে কেন জামাত এর মধ্যেই জাতিসংঘের আশ্রয়ের জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে, কেন জামাতের দৈনিক প্রত্রিকা সংগ্রাম-এর প্রথম পৃষ্ঠার প্রথম নিবন্ধে রেনাটা লক-এর ভুয়সী বন্দনা করে জাতিসংঘকে জড়িত করার পক্ষে হৈ হৈ করে ওকালতি করা হচ্ছে (১ ফেব্রুয়ারী ২০০৯), এবং কেন জামাতি নেতা কামরুজ্জামান বলেছেন শুধু জাতিসংঘের বিচারই তাঁরা মেনে নেবেন। ভাবখানা এই যে ফাঁসীর রায় মানার বা না মানার অধিকার খুনীর আছে। সরকারের ও জাতির কর্তব্য হবে এ ভয়ংকর ফাঁদে না পড়ে এ ষড়যন্ত্রের মোক্ষম জবাব দেয়া। হিসেবটা সহজ। এদের শাস্তি শুধু এদের শাস্তি নয়, জাতিসংঘে বসে থাকা ওদেরও নৈতিক শাস্তি কারণ আমাদের যুদ্ধাপরাধীরা ওদেরই কর্মকান্ডের অংশ। এই সেই রাষ্ট্রগুলো যারা একাত্তরে আমাদের ওপরে নিষ্ঠুর গণহত্যা-গণধর্ষণে এই যুদ্ধাপরাধীদেরকে সক্রিয় সাহায্য করেছিল সর্বশক্তিতে, যাদের সাহায্য না পেলে বাংলার মীরজাফরেরা এই সর্বনাশা গণহত্যা-গণধর্ষণ করতে পারত না, আজ সেই রাষ্ট্রগুলোই জাতিসংঘের মানবাধিকার অংশকে নিয়ন্ত্রন করছে। ওদের শাস্তি দেয়া যায়নি কিন্তু আমাদের যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি হলে ওদের ললাটে পড়বে চিরস্থায়ী কলংকতিলক। সেটা ওরা কিছুতেই হতে…
কী করবেন বারাক ওবামা ও হিলারি ক্লিনটনরা, জুতা যখন অস্ত্র হয়ে ওঠে? জুতা যখন মিসাইলের চেয়েও তীব্র বেগে গিয়ে আঘাত হানতে চায় যতটা না জর্জ বুশের শরীরে, তারও চেয়ে বেশি পুরো যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী কাঠামোর চোয়ালে? জুতা তো ছুরি নয়, পিস্তল নয় যে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে সনাক্ত করতে হবে। এ হেন জুতা আর জুতা নয়, রীতিমতো অস্ত্র হয়ে উঠেছে। এ অস্ত্র প্রয়োগের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের যে-ক্ষতি করা হলো, তা থেকে বেরিয়ে আসার দায়ভার তো ওবামা-হিলারিদেরই নিতে হবে। কেননা তারাই তো এখন উত্তরসূরি বুশ-রাইসের ইরাকনীতির। মুনতাজার আল-জায়িদকে এখন মেরেকেটে কোটি টুকরো করে ফেললেও কি সম্ভব যুক্তরাষ্ট্রের চোয়ালের দিকে উড়তে থাকা ওই জুতার পাটিকে ফিরিয়ে আনা? সম্ভব নয়। এমনকি মার্কিন মুল্লুকেরই তুখোড় বিশ্লেষক ডেভিড সোয়ানসনকে বলতে শুনছি, একজন সাংবাদিক কেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির দিকে জুতা ছুঁড়ে মারার মতো অভব্য কাজটি করতে গিয়েছিলেন তারও চেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, ওই কক্ষটিতে উপস্থিত আর যারা ছিল তারা কেন এরপরও সাহস পায়নি পা থেকে জুতা খুলবার। ডেভিড সোয়ানসন উল্টো জানতে চেয়েছেন, ‘কেন যে-মানুষটি আমাদের রাষ্ট্রপতির গায়ে জুতা ছুঁড়ে মারে, সেই মানুষটি আমাদের রাষ্ট্রপতির চেয়েও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে?’ এই প্রশ্নের জবাব খানিকটা দিতে পারেন বাঙালিরা, বাংলাদেশের মানুষেরা। কেননা অন্যায়কারীর দিকে সরাসরি জুতা ছুঁড়ে মারার রেওয়াজ এ-দেশটিতেও আছে। অনেকেরই মনে আছে, স্বৈরাচারী সামরিক জান্তা হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ জনসভা করতে গেলে সিলেটবাসী জুতা দেখিয়েছিলেন আর সিরাজগঞ্জের জনগণ শুধু জুতা দেখিয়ে বা ছুঁড়েই ক্ষান্ত হননি, w`M¤^i হয়ে প্রচণ্ড রোষে ছুটে গিয়েছিলেন সামরিক জান্তার দিকে। আরও একটি ঘটনাও অনেকের মনে আছে, জামায়াতে ইসলামীর গোলাম আযম নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন বায়তুল মোকাররমে। হয়তো চিন্তা করেছিলেন, জনগণ সব ভুলে গেছে। কিন্তু না, গণরোষের শিকার হয়েছিলেন তিনি, এবং শোনা যায় তার মাথায়ও দু’চারটে জুতা-স্যান্ডেল বসিয়ে দিয়েছিলেন বিক্ষুব্ধ মানুষ। চারপাশে যখন মিথ্যার বোঝা জমে ওঠে, একেবারে সামনাসামনি দাঁড়িয়ে যখন মিথ্যুকেরা অম্লান বদনে প্রচণ্ড আস্থার সঙ্গে মিথ্যা কথা বলতে থাকেন, তখন সুন্দর ও সত্য কদর্য হয়ে প্রতিবাদ করতে বাধ্য হয়। কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ তাঁর ‘কিংবদন্তীর কথা বলছি’ কবিতায় লিখেছিলেন, ‘আমাদের কণ্ঠস্বর কর্কশ/ কেননা বিকৃতির প্রতি ঘৃণা মানুষকে অসুন্দর করে দেয়।’ ইরাকে সাংবাদিক মুনতাজার আল-জায়িদী যে এই অভব্য কাজটি করতে…
আজ সেই দিন। বছরে একবার ক্ষমাপ্রার্থনাপূর্বক তোমাদের স্মরন করি এই ১৪ ডিসেম্বরে। এবারও করছি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সূর্যের লালিমা যখন পূর্বাকাশে প্রজ্জ্বলিত হবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল, তখন শেষ রাতের আধো ঘুমের আলোয়ান উপড়ে ফেলে তোমাদের হাত-পা-চোখ-মুখ পিছমোড়া বেঁধে বধ্যভুমিতে নিয়ে যায় জাতিকে মেধাহীন অন্ধকার রাজ্যে পরিনত করার পাকিস্তানী বাসনার দেশীয় রূপকার রাজাকার-আলবদর চক্র। তোমরা আর ফিরে আসোনি তোমাদের সেই প্রিয় গৃহকোনে, হারিয়ে গিয়েছো চিরঘুমের দেশে[...]
আজ সেই দিন। বছরে একবার ক্ষমাপ্রার্থনাপূর্বক তোমাদের স্মরন করি এই ১৪ ডিসেম্বরে। এবারও করছি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সূর্যের লালিমা যখন পূর্বাকাশে প্রজ্জ্বলিত হবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল, তখন শেষ রাতের আধো ঘুমের আলোয়ান উপড়ে ফেলে তোমাদের হাত-পা-চোখ-মুখ পিছমোড়া বেঁধে বধ্যভুমিতে নিয়ে যায় জাতিকে মেধাহীন অন্ধকার রাজ্যে পরিনত করার পাকিস্তানী বাসনার দেশীয় রূপকার রাজাকার-আলবদর চক্র। তোমরা আর ফিরে আসোনি তোমাদের সেই প্রিয় গৃহকোনে, হারিয়ে গিয়েছো চিরঘুমের দেশে। কিন্তু সেই ঘাতকেরা ফিরে এসেছে, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সমাজে। আমরা তাদের বিচার করার বদলে পুনর্বাসিত করেছি রাজনীতিতে, ক্ষমতার মসনদে বসিয়েছি। শাস্তি দেয়ার বদলে ক্ষমতার হাতবদলের হাতিয়ার করেছি, নির্বাচনের পার্টনার করেছি। আজ হয়তো সেই ঘাতকেরাও তোমাদের স্মরনে সভা করবে, মিলাদ পড়াবে, আত্মার মাগফেরাত কামনা করবে। তোমাদের ব্যথিত আত্মা হয়তো নিশ্চুপ চেয়ে থাকবে বধ্যভুমির আকাশ থেকে। আর আমরা অক্ষম-ক্লীব জনগন নিজামী-মুজাহিদের সেই স্মরন-তামাশা চেয়ে চেয়ে দেখবো টেলিভিশনের পর্দায়। আজ ১৪ই ডিসেম্বর ২০০৮। জাতির পক্ষ হতে আমার ৩৬তম ক্ষমা প্রার্থনা তোমাদের আত্মার কাছে।
স্বাগতম।