নরেশ গুহ-র তাতার ঘেরা সমুদ্র (১৯৭৬) কাব্যগ্রন্থের ‘ফাল্গুন ১৩৫৯’ নামের কবিতাটি পড়ছিলাম। তার এক জায়গায় কবি লিখেছেন : কেমন, বলিনি? দ্যাখো, বসন্ত ফোটায় গাছে ফুল। (ধন্যবাদ গৌরী দত্ত, শ্রীনিমাই চট্টোপাধ্যায়।) তিপ্পান্ন সালেও আজো ফাল্গুন কী রঙ্গ দেখায় বিশ্বাস হ’তো না যদি না-দেখতুম জ্বলন্ত শিমুল বীরভূমে অজয়তীরে (সাক্ষী থাকে অম্লানকুসুম; -- সাক্ষী থাকে আরো এক অধ্যাপক, মাথাজোড়া টাক, সারা রাস্তা ভদ্রলোক, বাপরে বাপ, কী বকবকুম! কিন্তু এবে পরচর্চা থাক।) ৩ তাহলে ফাল্গুনে দেখছি – আরে, তাই তো, সত্যি যে পলাশ! এতো লাল? ওই কি রঙ্গন? পৌঁছলাম শান্তিনিকেতন। অনেকেরই নিশ্চয়ই মনে পড়বে যে ১৯৫৩ সালের বসন্তে শান্তিনিকেতনে সাহিত্যমেলার আয়োজন করা হয়েছিল। আর তার মূল উদ্যোক্তা ছিলেন বিশ্বভারতীর দুই শিক্ষার্থী -- নিমাই চট্টোপাধ্যায় আর গৌরী দত্ত; আবু সয়ীদ আইয়ুবের সহধর্মিণী হবার সুবাদে পরবর্তীকালে যিনি গৌরী আইয়ুব নামে পরিচিত হয়েছিলেন। বছর কয়েক আগে তিনি প্রয়াত হয়েছেন; তবে যতদূর জানি নিমাই চট্টোপাধ্যায় এখনো বেঁচে আছেন। কয়েকদিন-ব্যাপী সেই সাহিত্যমেলা আয়োজনের মধ্য দিয়ে যে প্রথমবারের মতো একুশে উদ্যাপিত হয়েছিল তা হয়তো সবার জানা নেই। বোলপুর থেকে প্রকাশিত 'পাক্ষিক ১৪০০ সাহিত্য' পত্রিকার '২১ ফেব্রুয়ারি বিশেষ সংখ্যা'য় (বৈশাখ ১৪০৬) ছাপা হয়েছিল নিমাই চট্টোপাধ্যায়ের একটি সাক্ষাৎকার (১৫ মার্চ ১৯৯৯)। সেই সাক্ষাৎকারে তিনি জানাচ্ছেন : আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি-র ইতিহাস আজ দুনিয়ার কোনো বাঙালির কাছেই অজানা নেই। ১৯৫২-র একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার জন্যে যাঁরা প্রাণ দিয়েছিলেন তাঁদের আমরা প্রতি বছরই ওই তারিখে শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসার সঙ্গে স্মরণ করি। কিন্তু যে-কথাটা আজ প্রায় কেউই মনে রাখেনি সেটা হল কি পরের বছর ১৯৫৩-র একুশে ফেব্রুয়ারি সেই ঘটনার প্রথম স্মরণ বার্ষিকী অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই শান্তিনিকেতনে; এমনকি শান্তিনিকেতনের বর্তমান কর্তৃপক্ষও সে-কথা জানেন না [...]। ১৯৫৩-র একুশে ফেব্রুয়ারি অন্নদাশঙ্কর রায়ের নেতৃত্বে গৌরী দত্ত ও আমি শান্তিকিকেতনে যে সাহিত্যমেলার আয়োজন করি সেটাই ছিল বিভাগোত্তর দুই বাংলার সাহিত্যিক সমাজের সর্বপ্রথম মিলনোৎসব; সেই অনুষ্ঠানেই, শান্তিনিকেতনের সংগীতভবন মঞ্চে দাঁড়িয়ে কাজী মোতাহার হোসেন প্রথম বলেছিলেন : "আমাদের মুখের ভাষা যদি ওরা কেড়ে নেয় আমরা তাহলে পাকিস্তান ছেড়ে দিতেও কুণ্ঠা বোধ করব না।" তার বেশ কয়েক বছর পরে স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয়, এবং একুশে ফেব্রুয়ারি অনিবার্যভাবেই বাংলাদেশের বর্ষপঞ্জির…
ভাষা আন্দোলনের প্রথম বার্ষিকীতে, ১৯৫৩ সালে, শান্তিনিকেতনে দুই বাংলার সাহিত্যিকদের নিয়ে আয়োজিত হয়েছিল সাহিত্যমেলা। কয়েকদিন-ব্যাপী ওই সাহিত্যমেলা আয়োজনের মধ্য দিয়েই প্রথম একুশে উদ্যাপিত হয়েছিল। প্রাসঙ্গিক উদ্ধৃতি সহ তারই সানুপুঙ্খ বিবরণ।