সম্ভবত নয়-দশ বছর আগের কথা। কোন সাল এখন আর নিশ্চিত করে মনে নেই; তবে দিনটা ছিল অক্টোবর মাসের তেইশ তারিখ। [...] ... শেষ যে-বার সে-বাড়িতে যাই, ড্রইংরুম অব্দি আর যেতে হয়নি। বারান্দাতেই দুটো চেয়ার পাতা ছিল, সেখানে বসেই কথা চলল খানিকক্ষণ। [...] ... অধুনালুপ্ত 'নতুন সাহিত্য' পত্রিকার একেবারে প্রথম দিকের কয়েকটি সংখ্যার পাতা উল্টাতে গিয়ে একবার চোখ আটকে গিয়েছিল একটি কবিতায় [...]

১ সম্ভবত নয়-দশ বছর আগের কথা। কোন সাল এখন আর নিশ্চিত করে মনে নেই; তবে দিনটা ছিল অক্টোবর মাসের তেইশ তারিখ। বাসা থেকে বেরিয়ে ফোনের দোকানে পৌঁছতে প্রায় পৌনে ন'টা। ও-পাশ থেকে নারীকণ্ঠ শুনে বুঝে নিই, দেরি করে ফেলেছি। 'একটু লাইনে থাকুন।' খানিকক্ষণ পর পরিচিত সেই চপ্পলের আওয়াজ। সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে নিজের রুমে পৌঁছলেন তিনি। তিন-চার মিনিট কথা হলো। জানালেন খুব খুশি হয়েছেন ফোন পেয়ে। আমারও খুব খুশি লাগছিল সকালেই তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পেরে। আর বিব্রতও লাগছিল। আধঘণ্টা আগে ফোন করলেই তাঁকে কষ্ট করে সিঁড়ি ভাঙতে হতো না। কথা শেষে আবার নিশ্চয়ই ফিরে গেলেন নীচে, চপ্পলে ফট্‌ফট্‌ আওয়াজ তুলে। বই-দিয়ে-ঘেরা সুপরিসর ড্রইংরুমে এরই মধ্যে জড়ো হয়েছেন অনেকে। তাঁরা এসেছেন তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে। আজ তাঁর জন্মদিন। ২ শেষ যে-বার সে-বাড়িতে যাই, ড্রইংরুম অব্দি আর যেতে হয়নি। বারান্দাতেই দুটো চেয়ার পাতা ছিল, সেখানে বসেই কথা চলল খানিকক্ষণ। চা-ও চলে এল অল্পক্ষণের মধ্যে। আগে বাইরে থেকেই চোখে পড়ত দেয়ালে ঝোলানো মুর্তজা বশীরের 'এপিটাফ' সিরিজের একটা ছবি, কয়েক বছর আগে সেটাকে অন্য কোথাও সরিয়ে নেয়া হয়েছে। জানা ছিল না যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর থেকে অল্পকাল আগে তাঁর একটা বই বেরিয়েছে -- পাণ্ডুলিপি সংস্করণ। দেখলাম। আর জানলাম ছায়ানট ভবনে তাঁর নামে একটা কক্ষ করা হয়েছে। তাঁর সংগ্রহের সবগুলো বই সে-কক্ষে সংরক্ষণ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে ছায়ানট। তাহলে কি সব বই দিয়ে দেয়া হবে? না, এখনো মত দেয়া হয়নি তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে। দেখা যাক। আগের মতোই কি আছে তাঁর বইগুলো, বিছানা-ঘেরা শেল্‌ফে পরিপাটি সাজানো আর লেখার টেবিলের উপর এলামেলো হয়ে? কিছুই পালটায়নি। যেভাবে রেখে গেছেন ঠিক সেভাবেই রাখা আছে সবকিছু তাঁর ঘরে। 'দোতলায় গিয়ে দেখে আসবে নিজের চোখে?' না, থাক। আবার আসব, হ্যাঁ, ফোন করেই আসব। বিদায় নিই তাঁর পুত্রবধূর কাছ থেকে। ৩ অধুনালুপ্ত নতুন সাহিত্য পত্রিকার একেবারে প্রথম দিকের কয়েকটি সংখ্যার পাতা উলটাতে গিয়ে একবার চোখ আটকে গিয়েছিল একটি কবিতায় -- 'কয়েকটি দিন : ওয়াগনে'। কবিতাটির নীচে সম্পাদক অনিলকুমার সিংহ একটি টীকা জুড়ে দিয়েছিলেন : বহু মুসলমান শরণার্থী আজ পূর্ব পাকিস্তান সরকারের দাক্ষিণ্যে পরিত্যক্ত ও অকেজো রেলওয়ে ওয়াগনে দিন যাপন করছে। উপরোক্ত কবিতাটি…

লু স্যুন লু স্যুনের (১৮৮১—১৯৩৬) মৃত্যুদিনে স্মরণ এবং তাঁর একটি লেখার অনুবাদ ...

১ চীনের চেচিয়াং প্রদেশের প্রাচীন শহর শাওসিং-এর দক্ষিণদিকে অবস্থিত তুছাংফাংখৌ-র ‘চৌ’ পদবীধারী একটি পরিবারে ১৮৮১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২৫ তারিখে প্রায় মধ্যরাতে জন্মগ্রহণ করে চৌ পৌয়ি আর শ্রীমতী লুরুই-এর প্রথম পুত্রসন্তান। তাঁদের দ্বিতীয় পুত্র চৌ জুওরেন-ও (১৮৮৫--১৯৬৭) অগ্রজের মতোই সাহিত্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করে সাহিত্যিক ও সাহিত্য সমালোচক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। জাপ-সাম্রাজ্যবাদীদের সঙ্গে সহযোগিতা করে তিনি ধিক্কৃত হন। পরিবারের একমাত্র কন্যাসন্তানের জন্ম হয় ১৮৮৮ সালে, জন্মের ১০ মাস পরেই তার মৃত্যু হয়। তৃতীয় পুত্র চৌ চিয়ানরেন-ও (১৮৮৯--১৯৮৪) আধুনিক চীনের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠা অর্জন করেন। পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান চতুর্থ পুত্র চৌ ছুনশৌ-র (১৮৯৩—১৮৯৮) মৃত্যু হয় মাত্র ৫ বছর বয়সে, বসন্ত রোগে। জ্যেষ্ঠ সন্তানের বয়স যখন পনেরো, সে-সময়ে দীর্ঘ রোগভোগের পর ভুল ও সেকেলে চিকিৎসায় মাত্র সাঁইত্রিশ বছর বয়সে পরিবারের কর্তার মৃত্যু হয় (১২ অক্টোবর ১৮৯৬)। পিতার মৃত্যুর কয়েক বছর পর তিনি জাপানে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন, কিন্তু পড়া শেষ না করেই বদলে নেন নিজের জীবনের লক্ষ্য – সাহিত্য আন্দোলনের মাধ্যমে চীনা জাতির ভাগ্য পরিবর্তনকে নিজের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেন। ১৯৩৬ সালের ১৯ অক্টোবর তারিখে পঞ্চান্ন বছর বয়সে শাংহাই-এ তাঁর মৃত্যু হয়। জীবদ্দশাতেই তিনি স্বীকৃতি ও প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন আধুনিক চীনা সাহিত্যের স্থপতি রূপে। যুবসমাজকে তিনি কতটা অনুপ্রাণিত করতে পেরেছিলেন তার খানিকটা আন্দাজ পাওয়া যাবে এই তথ্য থেকে – যুবকদের কাছ থেকে মোট ১২০০টি চিঠি তিনি পেয়েছিলেন এবং উত্তরে লিখেছিলেন ৩৫০০-এরও বেশি চিঠি। তাঁর যুব-সাক্ষাৎপ্রার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৫০০। পরবর্তীকালে মাও সেতুং তাঁর সম্পর্কে বলেন : চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের তিনি ছিলেন প্রধান সেনাপতি। তিনি শুধু একজন মহান সাহিত্যিকই ছিলেন না, তিনি একজন মহান চিন্তাবিদ ও মহান বিপ্লবীও ছিলেন। লু স্যুন ছিলেন প্রস্তরের মতো দৃঢ়, সকল রকমের মোসাহেবি ও আজ্ঞানুবর্তিতা থেকে তিনি মুক্ত ছিলেন। তাঁর এই চরিত্র বৈশিষ্ট্য ঔপনিবেশিক ও আধা-ঔপনিবেশিক দেশের জনগণের এক অমূল্য সম্পদ। সাংস্কৃতিক ফ্রন্টে, সমগ্র জাতির বিরাট সংখ্যাধিক্যের প্রতিনিধি হিসেবে লু স্যুন শত্রুর দুর্গ বিদীর্ণ করেন এবং তার উপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালিয়েছিলেন; এতে তিনি ছিলেন সবচেয়ে নির্ভুল, সবচেয়ে নির্ভীক, সবচেয়ে দৃঢ়, সবচেয়ে সত্যনিষ্ঠ, সবচেয়ে উৎসাহী জাতীয় বীর, আমাদের ইতিহাসে এই বীরের কোনো তুলনা নেই। লু স্যুন-এর পথ চীনা জাতির…

ঠিক একশো বছর আগে, ১৯০৯ সালের ২৭ আগস্ট, আটষট্টি বছর বয়সে কলকাতায় গিরীন্দ্রকুমার দত্তের জীবনাবসান হয়। সাহিত্য, ব্যঙ্গচিত্র, শিল্পশিক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য। মৃত্যুশতবর্ষে তাঁকে স্মরণ করা হলো এই লেখায়। [...]

ঠিক একশো বছর আগে, ১৯০৯ সালের ২৭ আগস্ট, আটষট্টি বছর বয়সে কলকাতায় গিরীন্দ্রকুমার দত্তের জীবনাবসান হয়। সাহিত্য ও চিত্রকলা – উভয় ক্ষেত্রেই তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য। তিনি ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সমসাময়িক ঔপন্যাসিক। শ্রীগজপতি রায় ছদ্মনামে তাঁর লেখা ‘ঐতিহাসিক নবন্যাস : অঙ্গখণ্ড : মাধবমোহিনী’-র সমালোচনা প্রকাশিত হয়েছিল বঙ্কিমচন্দ্র সম্পাদিত ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকার ফাল্গুন ১২৭৯ সংখ্যায় এবং অমৃতবাজার পত্রিকায় ১৮৭৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তারিখে। তাঁর লেখা আরো দুটি উপন্যাসের নাম জানা যায় : ‘চন্দ্ররোহিণী’ (১৮৭৫) এবং ‘হীরালাল’ (১৮৭৭)। রাজেন্দ্রলাল মিত্র সম্পাদিত সচিত্র মাসিকপত্র ‘রহস্য সন্দর্ভ’ এবং প্রাণনাথ দত্ত সম্পাদিত রঙ্গ-ব্যঙ্গমূলক সচিত্র মাসিকপত্র ‘বসন্তক’-এ গিরীন্দ্রকুমার নিয়মিত লিখতেন। প্রাণনাথ (১৮৪০-১৮৮৮) আর গিরীন্দ্রকুমার দুজনই ছিলেন কলকাতার হাটখোলার দত্তবাড়ির ছেলে; প্রাণনাথ গিরীন্দ্রকুমারের জেঠতুতো অগ্রজ। গিরীন্দ্রকুমার রাজেন্দ্র দত্তর তৃতীয় পুত্র, তাঁর জন্ম হয় ১৮৪১ খ্রিষ্টাব্দ অর্থাৎ ১২৪৭ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাসে। ‘বসন্তক’ (১৮৭৪-১৮৭৬) পত্রিকার প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় ১৮৭৪ সালের জানুয়ারি মাসে। সে-সময়ে দুই তুতো ভাইয়ের বয়স ৩৩/৩৪। দুজনের আঁকা ব্যঙ্গচিত্রের লিথোগ্রাফ ছাপা হতো পত্রিকাটিতে। ‘বাংলা বইয়ের ছবি’ প্রবন্ধে কমল সরকার লিখেছেন, “‘বসন্তক’ সম্পাদক প্রাণনাথও ছিলেন শিল্পী। কিন্তু গিরীন্দ্রকুমারের চিত্রাঙ্কন প্রতিভা ছিল অনন্যসাধারণ।” দেবীপদ ভট্টাচার্যের ‘বাংলা সাময়িকপত্র’ প্রবন্ধ থেকে জানা যাচ্ছে, ডাকমাশুল সমেত ‘বসন্তক’-এর বাৎসরিক চাঁদা ছিল তিন টাকা ছয় আনা। ‘এই পত্র সম্বন্ধীয় পত্রাদি’ পাঠাবার ঠিকানা ছিল ‘চিৎপুর রাস্তার ৩৩৬ নং ভবন’; পত্রিকাটি মুদ্রিত হতো গরাণহাটা ৩৩৬ সুচারু যন্ত্রে। ‘সংবাদ প্রভাকর’, ‘সংবাদ ভাস্কর’ প্রভৃতির মতো ‘বসন্তক’ শিরে একটি সংস্কৃত শ্লোক বহন করত : নব পরিণয়যোগাৎ স্ত্রীষুহাস্যাভিযুক্তং মদবিলসিত নেত্রং চারুচন্দ্রার্দ্ধমৌলিং বিগলিত ফণিবন্ধং মুক্তবেশম্ শিবেশং প্রণমতি দিনহীনঃ কালকূটাভ কণ্ঠং।। ‘প্লানচেট’ যন্ত্রকে শিখণ্ডী করে ‘বসন্তক’ তখনকার বাঙালী রাজনৈতিক নেতাদের, রাজপুরুষদের (অ্যাশলি ইডেন, রিচার্ড টেম্পল, স্টুয়ার্ট হগ প্রভৃতি) নিয়ে রঙ্গকৌতুক করত, ‘প্লানচেটে’র আসল উদ্দেশ্য তার মতে ‘প্ল্যান টু চীট’। ‘মানভঞ্জন’, ‘হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রী’, নিরেট গাধা’ প্রভৃতি কার্টুন খুবই উপভোগ্য। তখনকার দিনের প্রাচীন গ্রন্থ প্রকাশ সম্পর্কেও কৌতুককর কটাক্ষ আছে। ‘প্লানচেটে’ বাল্মীকির পর কৃত্তিবাস-কাশীদাস এলেন, বললেন : “আমাদের সকল দোষ নহে, যা দেখ তাহা আমাদের হাত-পা ভাঙ্গা কন্ধাকার মাত্র। কতকগুলো উপাধিধারী প্রকাশকেই আমাদের এ দশা করেছে – যদিও কপিতলার আক্রমণে হাড়গোড় রক্ষা পেয়েছিল, বটতলার কুষ্মাণ্ডগুলো তাও শেষ করেছে।...” ‘বসন্তক’-এ সমকালীন রাজনৈতিক প্রসঙ্গের গান ও…

সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতি বছর ১৯ সেপ্টেম্বর - সেচ্ছাসেবক এবং সেচ্ছাসেবক সংস্থাগুলোর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে “অশেন কনসারভেন্সি” বিশ্বব্যাপী সামুদ্রিক এবং স্থল বেস্টিত জলপথ এবং জলাধারগুলোর চারপাশে আবর্জনার সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে। এই বছর “অশেন কনসারভেন্সী”-এর ২৩তম বার্ষিক “ইন্টারন্যাশনাল কোস্টাল ক্লিনাপ” ১০৪ টি দেশ ও স্থানে, প্রায় ৪,‌০০,০০০ সেচ্ছাসেবকের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে [...]

সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতি বছর ১৯ সেপ্টেম্বর - সেচ্ছাসেবক এবং সেচ্ছাসেবক সংস্থাগুলোর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে “অশেন কনসারভেন্সি” বিশ্বব্যাপী সামুদ্রিক এবং স্থল বেস্টিত জলপথ এবং জলাধারগুলোর চারপাশে আবর্জনার সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে। এই বছর “অশেন কনসারভেন্সী”-এর ২৩তম বার্ষিক “ইন্টারন্যাশনাল কোস্টাল ক্লিনাপ” ১০৪ টি দেশ ও স্থানে, প্রায় ৪,‌০০,০০০ সেচ্ছাসেবকের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রতি বছর সমুদ্রের আবর্জনার পরিস্যংখান প্রস্তুত করার জন্য দেশে-দেশে সম্মিলিতভাবে প্রায় ৬.৮ মিলিয়ন পাউন্ড ওজনের আবর্জনা উত্তোলন করে সে সবের তথ্যাদি সংকলন করা হয়। এই পরিসংখ্যান আবর্জনার গুপ্ত রহস্য প্রকাশ করে। সিগারেটের পরিত্যক্ত অংশ এবং ফাস্টফুডের আবরনী কাগজ থেকে শুরু করে ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, পুরোনো মাছ ধরার জাল - সাধারণত এসবই আবর্জনার সিংহভাগ দখল করে থাকে। গুরুত্বপূর্ণ এই পরিসংখ্যান সমুদ্রের ধারণ ক্ষমতা ও এর জটিল জীবন-সহায়ক ব্যবস্থার ওপর বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের যে প্রভাব তার সাথে সামুদ্রিক আবর্জনার কারণে উদ্ভুত সমস্যা সমুহের যোগসূত্রও নির্দেশ করে। এসব বিবেচনা করেই সামুদ্রিক আবর্জনা নির্মূলের লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের ভিত্তিতে প্রণীত কার্যপদ্ধতিতে বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে আচরণগত পরিবর্তন এবং উন্নততর নীতিমালা প্রণয়নের দিকে। সামুদ্রিক আবর্জনার সমস্যা মানুষের সৃষ্টি, তাই এর দায়-দায়িত্বও মানুষকেই নিতে হবে। “ইন্টারন্যাশনাল কোস্টাল ক্লিনাপ”-এর সুদীর্ঘ ২৩ বছরের ইতিহাসে প্রাপ্ত তথ্যাদির সংকলন এই কর্মোদ্যোগকেই আরও উদ্দীপনা এবং উৎসাহ জোগাবে বলে আশা করা যায়। নিসর্গপ্রেমী জনগণ, শীর্ষস্থানীয় সংস্থা সমুহ এবং সরকারী-রাজনৈতিক নেত্রীবর্গ একত্রে কাজ করলে সামুদ্রিক আবর্জনার উৎস চিরতরে বন্ধ করা সম্ভব। আমাদের, পরবর্তী প্রজন্মের ও বিশ্বের ভবিষ্যত অনেকটাই এর উপর নির্ভর করছে। “কেওক্রাডং বাংলাদেশ” বিভিন্ন স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারী দফতর, পৃষ্ঠপোষক এবং আরও অনেক শুভানুধ্যায়ীদের আন্তরিক সহযোগিতায় ২০০৬ সাল হতে বাংলাদেশে এই মহান আন্তর্জাতিক কার্যক্রমটি সাফল্যের সাথে আয়োজন করে এতে শামিল হয়ে আসছে। এই পরিক্রমায় আমাদের সমুদ্র সৈকত থেকে যে পরিমান আবর্জনা সংগ্রহ করা হবে তা হয়ে ওঠবে আমাদের বর্তমান সামুদ্রিক পরিবেশের এক বাস্তব প্রতিচ্ছবি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে অধিক সংখ্যক পর্যটক হয়তো আমাদের পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটাচ্ছে কিন্তু একই সাথে স্বাস্থ্য এবং সামুদ্রিক পরিবেশের ধারণ ক্ষমতা প্রতিনিয়ত হুমকির সম্মূখীন করছে। দূষণ সম্পর্কিত জ্ঞানের স্বল্পতা, আবর্জনা সংরক্ষণকরণ পদ্ধতির অপ্রতুলতা, সমুদ্রের প্রতি তাচ্ছিল্যপূর্ণ মনভাব দিনকেদিন এই অবস্থার আরও অবনতি ঘটাচ্ছে। সমুদ্র সৈকতে একটি দিন, একটি…

২০০৭, ২০০৮ ও ২০০৯, এই তিন বছর আমি রাস্তায় ৭ই মার্চের ভাষণ বাজাতে শুনিনি। ২০০৭ ও ২০০৮ বুঝলাম, কিন্তু কেন ২০০৯-এ ও শুনলাম না, বুঝতে পারছি না। রাস্তায় কি আর কখনো ৭ই মার্চের ভাষণ বাজবে না? এমন স্বতঃস্ফূর্ত তুঙ্গ ভাষণ, বাংলা ভাষার সে কী জোর, বাংলাদেশের সে কী অভ্যুত্থান, সে কী দীপ্ত ঘোষণা স্বাধীনতার। বাংলাদেশের বাঙালী যদি এ ভাষণ না শোনে, তার যেমন বাংলা জানা সম্পন্ন হবে না, তেমনি শুরুই হবে না বাংলাদেশকে ভালোবাসা। আমি এখানে পুরো ভাষণটি টাইপ করছি [...]

২০০৭, ২০০৮ ও ২০০৯, এই তিন বছর আমি রাস্তায় ৭ই মার্চের ভাষণ বাজাতে শুনিনি। ২০০৭ ও ২০০৮ বুঝলাম, কিন্তু কেন ২০০৯-এ ও শুনলাম না, বুঝতে পারছি না। রাস্তায় কি আর কখনো ৭ই মার্চের ভাষণ বাজবে না? এমন স্বতঃস্ফূর্ত তুঙ্গ ভাষণ, বাংলা ভাষার সে কী জোর, বাংলাদেশের সে কী অভ্যুত্থান, সে কী দীপ্ত ঘোষণা স্বাধীনতার। বাংলাদেশের বাঙালী যদি এ ভাষণ না শোনে, তার যেমন বাংলা জানা সম্পন্ন হবে না, তেমনি শুরুই হবে না বাংলাদেশকে ভালোবাসা। আমি এখানে পুরো ভাষণটি টাইপ করছি, যদিও আমার টাইপ স্পিড এক কচ্ছপ চলা। আর আমার একটি অনুরোধ আছে, কেউ যদি পুরো ভাষণটির (না পাওয়া গেলে আংশিক) অডিও তুলে দিতে পারতেন সাইটে খুব ভালো হতো। আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সকলে জানেন এবং বোঝেন আমরা জীবন দিয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ অধিকার চায়। কী অন্যায় করেছিলাম? নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ সম্পূর্ণভাবে আমাকে ও আওয়ামী লীগকে ভোট দেন। আমাদের ন্যাশনাল এসেম্বলি বসবে, আমরা সেখানে শাসনতন্ত্র তৈরী করব এবং এদেশের ইতিহাসকে গড়ে তুলব। এদেশের মানুষ অর্থনীতিক, রাজনীতিক ও সাংষ্কৃতিক মুক্তি পাবেন। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলছি বাংলাদেশের করুণ ইতিহাস, বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস। এই রক্তের ইতিহাস মুমূর্ষু মানুষের করুণ আর্তনাদ—এদেশের ইতিহাস, এদেশের মানুষের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস। ১৯৫২ সালে আমরা রক্ত দিয়েছি।১৯৫৪ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করেও আমরা গদিতে বসতে পারিনি। ১৯৫৮ সালে আয়ুব খাঁ মার্শাল-ল জারি করে ১০ বছর আমাদের গোলাম করে রেখেছে। ১৯৬৯ সালের আন্দোলনে আয়ুব খাঁর পতনের পরে ইয়াহিয়া এলেন। ইয়াহিয়া খান সাহেব বললেন দেশে শাসনতন্ত্র দেবেন— আমরা মেনে নিলাম। তারপর অনেক ইতিহাস হয়ে গেল, নির্বাচন হলো। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সাহেবের সঙ্গে দেখা করেছি। আমি শুধু বাংলার নয়, পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টির নেতা হিসাবে তাঁকে অনুরোধ করেছিলাম, ১৫ই ফেব্রুয়ারি তারিখে আমাদের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন দিন। তিনি আমার কথা রাখলেন না। রাখলেন ভুট্টো সাহেবের কথা। তিনি বললেন, মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে সভা হবে। আমি বললাম, এসেম্বলির মধ্যে আলোচনা করব— এমনকি এও পর্যন্ত…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.