২০০৭, ২০০৮ ও ২০০৯, এই তিন বছর আমি রাস্তায় ৭ই মার্চের ভাষণ বাজাতে শুনিনি। ২০০৭ ও ২০০৮ বুঝলাম, কিন্তু কেন ২০০৯-এ ও শুনলাম না, বুঝতে পারছি না। রাস্তায় কি আর কখনো ৭ই মার্চের ভাষণ বাজবে না? এমন স্বতঃস্ফূর্ত তুঙ্গ ভাষণ, বাংলা ভাষার সে কী জোর, বাংলাদেশের সে কী অভ্যুত্থান, সে কী দীপ্ত ঘোষণা স্বাধীনতার। বাংলাদেশের বাঙালী যদি এ ভাষণ না শোনে, তার যেমন বাংলা জানা সম্পন্ন হবে না, তেমনি শুরুই হবে না বাংলাদেশকে ভালোবাসা। আমি এখানে পুরো ভাষণটি টাইপ করছি, যদিও আমার টাইপ স্পিড এক কচ্ছপ চলা। আর আমার একটি অনুরোধ আছে, কেউ যদি পুরো ভাষণটির (না পাওয়া গেলে আংশিক) অডিও তুলে দিতে পারতেন সাইটে খুব ভালো হতো।
আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সকলে জানেন এবং বোঝেন আমরা জীবন দিয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ অধিকার চায়। কী অন্যায় করেছিলাম?
নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ সম্পূর্ণভাবে আমাকে ও আওয়ামী লীগকে ভোট দেন। আমাদের ন্যাশনাল এসেম্বলি বসবে, আমরা সেখানে শাসনতন্ত্র তৈরী করব এবং এদেশের ইতিহাসকে গড়ে তুলব। এদেশের মানুষ অর্থনীতিক, রাজনীতিক ও সাংষ্কৃতিক মুক্তি পাবেন। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলছি বাংলাদেশের করুণ ইতিহাস, বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস। এই রক্তের ইতিহাস মুমূর্ষু মানুষের করুণ আর্তনাদ—এদেশের ইতিহাস, এদেশের মানুষের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস।
১৯৫২ সালে আমরা রক্ত দিয়েছি।১৯৫৪ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করেও আমরা গদিতে বসতে পারিনি। ১৯৫৮ সালে আয়ুব খাঁ মার্শাল-ল জারি করে ১০ বছর আমাদের গোলাম করে রেখেছে। ১৯৬৯ সালের আন্দোলনে আয়ুব খাঁর পতনের পরে ইয়াহিয়া এলেন। ইয়াহিয়া খান সাহেব বললেন দেশে শাসনতন্ত্র দেবেন— আমরা মেনে নিলাম। তারপর অনেক ইতিহাস হয়ে গেল, নির্বাচন হলো। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সাহেবের সঙ্গে দেখা করেছি। আমি শুধু বাংলার নয়, পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টির নেতা হিসাবে তাঁকে অনুরোধ করেছিলাম, ১৫ই ফেব্রুয়ারি তারিখে আমাদের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন দিন। তিনি আমার কথা রাখলেন না। রাখলেন ভুট্টো সাহেবের কথা। তিনি বললেন, মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে সভা হবে। আমি বললাম, এসেম্বলির মধ্যে আলোচনা করব— এমনকি এও পর্যন্ত বললাম, যদি ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও একজনের মতেও যদি তা ন্যায্য কথা হয়, আমরা মেনে নেব।
ভুট্টো সাহেব এখানে ঢাকায় এসেছিলেন আলোচনা করলেন। বলে গেলেন, আলোচনার দরজা বন্ধ নয়, আরো আলোচনা হবে। তারপর অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করলাম— আলাপ করে শাসনতন্ত্র তৈরী করব। সবাই আসুন, বসুন। আমরা আলাপ করে শাসনতন্ত্র তৈরী করব। তিনি বললেন, পশ্চিম পাকিস্তানের মেম্বাররা যদি আসে তাহলে কসাইখানা হবে এসেম্বলি। তিনি বললেন, যারা যাবে, তাদের মেরে ফেলে দেওয়া হবে। আর যদি কেউ এসেম্বলিতে আসে পেশোয়ার থেকে করাচি পর্যন্ত সব জোর করে বন্ধ করা হবে। আমি বললাম, এসেম্বলি চলবে। আর হঠাৎ মার্চের ১লা তারিখে এসেম্বলি বন্ধ করে দেওয়া হলো।
ইয়াহিয়া খান প্রেসিডেন্ট হিসেবে এসেম্বলি ডেকেছিলেন। আমি বললাম, যাবো। ভুট্টো বললেন, যাবেন না। ৩৫ জন সদস্য পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এলেন। তারপর হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া, দোষ দেওয়া হলো বাংলার মানুষের, দোষ দেওয়া হলো আমাকে। দেশের মানুষ প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠলো।
আমি বললাম, শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালন করুন। আমি বললাম, আপনারা কলকারখানা সব কিছু বন্ধ করে দেন। জনগণ সাড়া দিল। আপন ইচ্ছায় জনগণ রাস্তায় বেরিয়ে পড়লো। সংগ্রাম চালিয়ে যাবার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলো। আমি বললাম, আমরা জামা কেনার পয়সা দিয়ে অস্ত্র পেয়েছি বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য। আজ সেই অস্ত্র দেশের গরিব-দুঃখী মানুষের বিরুদ্ধে— তার বুকের ওপর হচ্ছে গুলি। আমরা পাকিস্তানে সংখ্যাগুরু— আমরা বাঙালিরা যখনই ক্ষমতায় যাবার চেষ্টা করেছি তখনই তারা আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
আমি বলেছিলাম জেনারেল ইয়াহিয়া খান সাহেব, আপনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট। দেখে যান কিভাবে আমার গরিবের ওপর, আমার বাংলার মানুষের বুকের ওপর গুলি করা হয়েছে। কিভাবে আমার মায়ের কোল খালি করা হয়েছে। কী করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। আপনি আসুন, আপনি দেখুন। তিনি বললেন, আমি ১০ তারিখে রাউন্ড টেবিল কনফারেন্স ডাকব।
আমি বলেছি কীসের এসেম্বলি বসবে? কার সঙ্গে কথা বলব? আপনারা যারা আমার মানুষের রক্ত নিয়েছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলব? পাঁচ ঘন্টা গোপন বৈঠকে সমস্ত দোষ তারা আমাদের বাংলার মানুষের ওপর দিয়েছেন, দায়ী আমরা।
২৫ তারিখে এসেম্বলি ডেকেছেন। রক্তের দাগ শুকায় নাই। ১০ তারিখে বলেছি, রক্তে পাড়া দিয়ে, শহীদের ওপর পাড়া দিয়ে, এসেম্বলি খোলা চলবে না। সামরিক আইন মার্শাল-ল উইথড্র করতে হবে। সমস্ত সামরিক বাহিনীর লোকদের ব্যারাকে ঢুকতে হবে। যে ভাইদের হত্যা করা হয়েছে, তার তদন্ত করতে হবে। আর জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তারপর বিবেচনা করে দেখব আমরা এসেম্বলিতে বসতে পারব কিনা। এর পূর্বে এসেম্বলিতে আমরা বসতে পারি না।
আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না। দেশের মানুষের অধিকার চাই। আমি পরিষ্কার অক্ষরে বলে দিবার চাই যে, আজ থেকে এই বাংলাদেশ কোর্ট-কাচারি, আদালত, ফৌজদারি আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। গরিবের যাতে কষ্ট না হয়, যাতে আমার মানুষ কষ্ট না করে, সেজন্য যে সমস্ত জিনিসগুলি আছে, সেগুলির হরতাল কাল থেকে চলবে না। রিকশা, গরুর গাড়ি, রেল চলবে। শুধু সেক্রেটারিয়েট ও সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্ট, জজ কোর্ট, সেমি-গভর্নমেন্ট দপ্তর, ওয়াপদা— কোনো কিছুই চলবে না। ২৮ তারিখে কর্মচারীরা গিয়ে বেতন নিয়ে আসবেন। এরপর যদি বেতন দেয়া না হয়, এরপর যদি একটি গুলি চলে, এরপর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়— তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সব কিছু আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে। আমরা ভাতে মারব, আমরা পানিতে মারব। সৈন্যরা, তোমরা আমাদের ভাই। তোমরা ব্যারাকে থাকো, তোমাদের কেউ কিছু বলবে না। কিন্তু আর তোমরা গুলি করবার চেষ্টা করো না। সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবা না।
আর যে সমস্ত লোক শহীদ হয়েছে, আমরা আওয়ামী লীগ থেকে যদ্দুর পারি সাহায্য করতে চেষ্টা করব। যারা পারেন আওয়ামী লীগ অফিসে সামান্য টাকা-পয়সা পৌঁছে দেবেন। আর সাতদিন হরতালে শ্রমিক ভাইয়েরা যোগদান করেছে, প্রত্যেক শিল্পের মালিক তাদের বেতন পৌঁছে দেবেন। সরকারি কর্মচারীদের বলি, আমি যা বলি তা মানতে হবে। যে পর্যন্ত আমার এই দেশের মুক্তি না হচ্ছে ততদিন ওয়াপদার ট্যাক্স বন্ধ করে দেওয়া হলো— কেউ দেবে না। শুনুন, মনে রাখুন। শত্রু পেছনে ঢুকেছে আমাদের মধ্যে আত্মকলহ সৃষ্টি করবে, লুটতরাজ করবে। এই বাংলায় হিন্দু-মুসলমান যারা আছে আমাদের ভাই— বাঙালি অবাঙালি তাদের রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের ওপর। আমাদের যেন বদনাম না হয়।
মনে রাখবেন, রেডিও যদি আমাদের কথা না শোনে, তাহলে কোনো বাঙালি রেডিও স্টেশনে যাবে না। যদি টেলিভিশন আমাদের নিউজ না দেয়, তাহলে কর্মচারীরা টেলিভিশনে যাবেন না। দুঘন্টা ব্যাংক খোলা থাকবে, যাতে মানুষ তাদের মায়নাপত্র নিতে পারে। পূর্ব বাংলা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে এক পয়সাও চালান হতে পারবে না। টেলিফোন, টেলিগ্রাম আমাদের এই পূর্ব বাংলায় চলবে এবং বাংলাদেশের নিউজ বাইরে পাঠানো চলবে।
এই দেশের মানুষকে খতম করার চেষ্টা চলছে— বাঙালিরা বুঝেসুঝে কাজ করবে। প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলুন এবং আমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকুন। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো। এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।
মাসুদ করিম
লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
২২ comments
মাসুদ করিম - ২১ মার্চ ২০০৯ (১০:৫৮ পূর্বাহ্ণ)
সম্প্রতি এক সভায় আমাদের শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা করেছেন বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ্যপুস্তকে অর্ন্তভুক্ত হবে। আমরা অপেক্ষা করছি আগামী বছরের পাঠ্যপুস্তকের জন্য। কিন্তু মন্তব্যটা লিখছি অন্য কারণে। আজকাল আমরা তারিখ লিখি ৩ এপ্রিল ২০০৯, এটা খুবই ভাল পদ্ধতি; কিন্তু পত্রিকাগুলো যখন ‘৭ মার্চের ভাষণ’ লেখেন তা কিন্তু পড়তে বা শুনতে ভাল লাগে না। ৭ মার্চ ২০০৯ লিখুন, কিন্তু লিখুন ‘৭ই মার্চের ভাষণ’, ২৬শে মার্চ, ২১শে ফেব্রুয়ারি, ১লা বৈশাখ, ১লা মে, ১৪ই ডিসেম্বর, ১৬ই ডিসেম্বর। এক্ষেত্রে এগুলো তারিখ হিসেবে না দেখে বিশেষায়িত বিশেষ্য হিসেবে দেখুন। আশা করি আমাদের পাঠ্যপুস্তকে লেখা হবে ‘৭ই মার্চের ভাষণ’, আর আমাদের পত্রিকাগুলোও ব্যাপারটা খেয়াল রাখবেন। আমরা কেউই পড়তে চাই না ২১ ফেব্রুয়ারি, আমাদের একুশে ফেব্রুয়ারি, আমরা এভাবে দিনটাকে চিনি বহুদিন থেকে, এ আমরা ভুলতে চাই না, ভুলতে পারি না।
রেজাউল করিম সুমন - ২৩ মার্চ ২০০৯ (৮:৩৫ অপরাহ্ণ)
আগের মতো “৭ই মার্চ” না লিখে এখন অনেকসময়ে লেখা হয় “৭ মার্চ”; কিংবা “৩রা জুন” বা “৪ঠা নভেম্বর”-এর বদলে এখন আমরা লিখি “৩ জুন” বা “৪ নভেম্বর”। কিন্তু পড়ার ক্ষেত্রে এখনো আগের মতোই সাতই, তেসরা বা চৌঠা-ই উচ্চারণ করতে হবে। সেটাই নিয়ম। ফলে খাতায়/পত্রিকায় “২১ ফেব্রুয়ারি” লিখলেও আমরা মুখে “একুশ ফেব্রুয়ারি” বলব না, বলব “একুশে ফেব্রুয়ারি”।
আর কেউ যদি তারিখের ক্ষেত্রে এখনো আগের মতো ১লা, ৩রা বা ৮ই লিখতে চান, তাতেও কোনো বাধা নেই। কিন্তু এরকম মনে করার কোনো কারণ নেই যে “২ জুলাই” লিখলে মুখেও বলতে হবে “দুই জুলাই”; বরং “২” বা “২রা” যা-ই লিখি না কেন, অবশ্যই উচ্চারণ করতে হবে “দোসরা”; কারণ “দোসরা”-র বিকল্প কখনোই “দুই” নয়।
আজকাল অনেকেই এটা খেয়াল করেন না। অনেক সংবাদ-পাঠককেও এই ভুলটা করতে দেখি। ভুলটা ছোট, কিন্তু মারাত্মক। খুবই শ্রুতিকটু। এ ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মাসুদ করিম - ২৩ মার্চ ২০০৯ (৫:৫১ পূর্বাহ্ণ)
৭ই মার্চের ভাষণ রেডিও-তে সম্প্রচার নিয়ে আজকের যুগান্তরে অনু ইসলামের ‘মুক্তিযুদ্ধের তৃতীয় ফ্রন্ট’ -এ লেখায় পাওয়া যাবে কিছু তথ্য।
বিনয়ভূষণ ধর - ৬ মার্চ ২০১০ (৯:৪২ অপরাহ্ণ)
৭ই মার্চের সম্পূর্ণ ভাষণ: রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব। পড়ুন এখানে…
সরব দর্শক - ৬ মার্চ ২০১১ (১২:৪৩ অপরাহ্ণ)
দেখা ও শোনা যাবে, ইউটিউবের এই লিংকে।
মাসুদ করিম - ৮ মার্চ ২০১১ (৯:৪০ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ৭ মার্চ ২০১১ (১১:৪৬ অপরাহ্ণ)
২৬ মার্চে দেয়ালের মতো দাঁড়িয়ে আছেন ঘোষক জিয়া, ১৫ আগস্টে জন্মদিন পালন করেন খালেদা, গত আর্মি সমর্থিত সরকার ৭ মার্চ তারেক জিয়াকে আটক করে এইদিনটিও তুলে দিয়েছেন বিএনপির হাতে।
মাসুদ করিম - ৮ মার্চ ২০১১ (১০:০৫ পূর্বাহ্ণ)
আমি যে পাঠটি আমার পোস্টে দিয়েছি সেটি এম আর আখতার মুকুলের আমি বিজয় দেখেছি থেকে নেয়া। মন্তব্য ৩.২এ যে পাঠটি সেটি বিনয় ভূষণ ধরের আগের কালের কণ্ঠের লিন্ক থেকে নিয়ে ব্লক-কোট করে দিয়েছি যেন লিন্ক হারিয়ে গেলেও আমরা পূর্ণ ভাষণটি দেখতে পাই। অনেক দিন ধরে যে অডিও-ভিডিও এই পোস্টে ছিল না ইউটিউবের ভিডিও লিন্কটি দিয়ে সেঅভাব পূরণ করেছেন সরব দর্শক। একটা রেডিও ভার্সানও আছে স্বভাবতই সেটি শুধু অডিও, সেটি এখনো এখানে যুক্ত হয়নি। কিন্তু যেটি লক্ষণীয় সেটি হচ্ছে ভার্সানগুলোতে অমিল আছে। ইউটিউবের ভিডিওটি ১০মিনিটের এবং ভাষণটি শেষ পর্যন্ত নেই। এখানে আছে প্রায় ১৪ মিনিটের একটা ভিডিও কিন্তু এই ভিডিওতে কিছু পুনরাবৃত্তি আছে। কালের কন্ঠে পূর্ণপাঠ ও পোস্টে দেয়া পূর্ণপাঠে ভাষাগত বিভিন্ন অমিল চোখে পড়ে। আবার অডিও-ভিডিও নিয়ে শোনা যায় ১৮মিনিট/১৯মিনিট এবং আমরা এখানে ইউটিউবে যেটা পাচ্ছি সেটি ১০ মিনিট। তার মানে এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভাষণের সংরক্ষণে আমাদের অবহেলা ধরা পড়ছে। এনিয়ে আজকের জনকণ্ঠে মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী লিখছেন : অবহেলায় এখনও ইতিহাসের কালজয়ী ভাষণটি। নিচে পুরো লেখাটিই এখানে কোট করছি।
ভাষণটিকে রক্ষা করার এই কাজ অবিলম্বে শুরু করা উচিত, অনেক দেরি হয়ে গেছে, আবেগের বশবর্তী হয়ে আর কতদিন কাটাতে পারব? ভাষণটির যথাযথ সংরক্ষণে এখনই কাজ না হলে এখানেও আমাদের আবেগ সর্বস্বতাই শুধু অমর হবে, ভাষণটি নয়।
নীড় সন্ধানী - ৮ মার্চ ২০১১ (১০:২০ পূর্বাহ্ণ)
এই ভাষণটি প্রচারে একটু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। ভাষনের লিখিত রূপটাই বেশী প্রচার করা দরকার। কিছু কিছু পাড়াতো অনুষ্ঠানে যেনতেন ভাবে বাজানো হয় ভাষণটা খুব দৃষ্টিকটু লাগে।
মাসুদ করিম - ২৪ ডিসেম্বর ২০১১ (১২:৫৮ পূর্বাহ্ণ)
আজ যিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন, সেই আব্দুর রাজ্জাকের কঠিন দায়িত্ব ছিল ৭ই মার্চের দিন শেখ মুজিবকে বক্তৃতার জন্য রেসকোর্সে নিয়ে যাওয়া ও বক্তৃতা শেষে শেখ মুজিবকে তার বাড়ি পৌঁছে দেয়া। ২০১০ সালে বিডিনিউজ২৪কে ৭ই মার্চের ভাষণ নিয়ে আব্দুর রাজ্জাকের স্মৃতিচারণ।
মাসুদ করিম - ৭ মার্চ ২০১৩ (১:১৫ অপরাহ্ণ)
সাতই মার্চের ভাষণ কেউ ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিল? ঠিক জানা নেই। আজ ডেইলি স্টারে সৈয়দ বদরুল আহসান তার এক লেখায় ভাষণের অংশবিশেষ অনুবাদের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এরকম বিচ্ছিন্ন কিছু নয়, হওয়া উচিত একবারে ধরে ধরে পূর্ণাঙ্গ একটি অনুবাদ।
লিন্ক : Bangabandhu’s finest hour।
মাসুদ করিম - ২৬ মার্চ ২০১৩ (১২:৫১ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১৬ মার্চ ২০১৫ (১২:০১ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ৩ এপ্রিল ২০১৫ (১২:৫২ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২৬ আগস্ট ২০১৫ (৬:৫৪ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১৩ মার্চ ২০১৬ (১০:২০ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ৭ মার্চ ২০১৯ (৫:৫৯ অপরাহ্ণ)
৭ মার্চ: সরকারীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবহেলায় কারণে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্নভাবে ৭ মার্চের ভাষণকে উপস্থাপন করেছে তাতে নতুন প্রজন্মের কাছে কোনওভাবেই সঠিক বার্তা পোঁছাচ্ছে না, বরং ভুল তথ্য ক্রমাগত সংক্রামিত হচ্ছে। এছাড়াও স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষের কোনও সরকার এ ব্যাপারে গঠনমূলক কোনও পদক্ষেপ কোনও সময় নেয়নি। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দুটো বিভাগ যেভাবে এই ভাষণকে উপস্থাপন করেছে তা কিছুটা হলেও সাংঘর্ষিক এবং তা বিতর্কের সৃষ্টি করবে এবং ইতিমধ্যে করেছে। সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় ও সংবিধান যেভাবে ভাষণটাকে উপস্থাপন করেছে তাতে সঠিক বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছায় না।
আইসিটি বিভাগ ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের একটা ভিডিওচিত্র ছেড়েছে যেখানে উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে রঙ্গিন করা হয়েছে। এই ভিডিওটার গুণগত মান উন্মুক্ত যে কোনও সচলচিত্রের চেয়ে খুবই ভাল। এই সচল চিত্রকে রঙ্গিন করে উপস্থাপন করার ঘোর বিরোধী বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আইনজীবী মশিউর মালেক। এই জায়গায় উনার সাথে আমার মত পার্থক্য আছে, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না এই ভিডিও চিত্রটাকে রঙিন করার কারণে ইতিহাসের কোনও বিচ্যুতি ঘটেছে। কারণ সেই সময়ে রঙিন সচলচিত্র করা যেত না বিধায় ভিডিও চিত্রটি সাদাকালো ছিল। কিন্তু তখন গাছপালা ঘরবাড়ি সবকিছু রঙিনই ছিল, অতএব এটা রঙিন না সাদাকালো সেটা বড় কোনও অর্থ বহন করে না। তবে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে রঙিন করার সময় ভিডিও চিত্রটার মান অনেক বেড়ে গেছে। এটা দর্শক-শ্রোতার জন্য স্বস্তিদায়ক।
তথ্য মন্ত্রণালয় প্রদত্ত ডক্টর কবির চৌধুরী সম্পাদিত ভিডিও চিত্রটা আর আইসিটি ভিডিও একেবারেই একই রকম। শুধু আইসিটি শুরুতে কিছুটা অংশ বেশি যোগ করেছে। তবে এই দুইটা ভিডিও-র শুরুতে যে অংশ আছে তা কোনওভাবেই ৭ মার্চের না। এটা জনগণের সঙ্গে নির্ভেজাল প্রতারণা করা হয়েছে এবং এর জন্য দায়ী সরকারি কয়েকটা প্রতিষ্ঠান। তথ্য মন্ত্রণালয় প্রদত্ত ডক্টর কবির চৌধুরী সম্পাদিত ভিডিও চিত্রটার ২৭ সেকেন্ড পর্যন্ত সচল চিত্র কোনভাবেই ৭ মার্চের না। ২৮ সেকেন্ডের সময় যে ছবিটা আসছে, সেটা একজন বিদেশি মহিলা সাংবাদিকের ধারণা করি। এই অংশটুকু ৭ মার্চের কিনা সেটা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারব না, তবে ২৯ সেকেন্ডের সময় যে ছবিটা এসেছে সেটা নিঃসন্দেহে ৭ই মার্চের। ঠিক একই রকম বৈসাদৃশ্য আছে আইসিটি বিভাগের রঙ্গিন রূপান্তরে। এই ভিডিওতে ঝামেলা শুরু হয়েছে ৫৭ সেকেন্ডের পরে। এখানেও মাঝে সেই বিদেশিনীর ছবি তারপর হঠাৎ দৃশ্যপট পালটে গেল ৫৯ সেকেন্ডের সময়। শুধু বঙ্গবন্ধু আছেন আর উধাও হয়ে গেছেন অন্যসব লোকজন। এসে হাজির হয়েছেন নতুন লোকজন বঙ্গবন্ধুর পাশে, যেন জাদুর ছোঁয়া।
এই ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা পেতে হলে পুরো ভিডিওটা পর্যালোচনা করা দরকার। সে ক্ষেত্রে আমরা আইসিটি বিভাগের রঙিন সংস্করণটি নেব, তাতে ভাল বোঝা যাবে সবকিছু। কারণ এই ভিডিওটা গুণগত মান খুবই ভাল। এই ভিডিওর ৬ সেকেন্ডের সময় দেখানো হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ রঙিন রূপান্তর সৌজন্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার আইসিটি ডিভিশন। সাত সেকেন্ডের সময় দেখানো হয়েছে ইস্টার্ন মার্কেনটাইল ব্যাংক লিমিটেডের সামনের কিছু চিত্র জনগণ প্রতিবাদরত, কিন্তু এটা কোনওভাবেই প্রমাণ করে না যে এই চিত্রগুলো ৭ মার্চের। ৬ সেকেন্ডের সময় বলা হয়েছে যেটা ৭ মার্চের ভাষণ, এরপরে অন্য কোনওদিনের ভিডিও চিত্র এখানে সংযোজন করা কোনভাবেই ন্যায় সঙ্গত না, যুক্তিযুক্ত না এবং যখন সেটা করা হয় সেটা অবশ্যই জনগণের সঙ্গে প্রতারণা। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ কোনও বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র না, যে এখানে অন্যদিনের সচলচিত্রের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে এটাকে আকর্ষণীয় করতে হবে।
২৩ সেকেন্ডের সময় দেখানো হয়েছে যারা চিত্রগ্রহণ করেছেন তাদের নাম- মবিন, রউফ, বাবু ও আমজাদ। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একটা মন্ত্রণালয় এতো তাচ্ছিল্যের সঙ্গে এবং অবহেলার সাথে এই জাতীয় বীরদের নাম এখানে লিখেছে এটা খুবই দুঃখজনক। তাদের পুরো নামটাও লেখা হয়নি।
সেদিন চিত্রগ্রহণের কাজে যে দলটা কাজ করেছিল সেখানে ছিলেন ৭ জন। আমাকে আমজাদ আলী খন্দকার সে রকমই বলেছেন। তারা হলেন- প্রয়াত ক্যামেরাম্যান জি জেড এম এ মবিন, প্রয়াত ক্যামেরাম্যান এম এ রউফ, সহকারী ক্যামেরাম্যান আমজাদ আলী খন্দকার, সহকারী ক্যামেরাম্যান এস এম তৌহিদ, সহকারী ক্যামেরাম্যান সৈয়দ মাইনুল হাসান, লাইট বয় হাবিব চাকদার ও জুনায়েদ আলী।
২৯ সেকেন্ড এর সময় যে চিত্রটা আমরা দেখছি তাতে এটা বিশ্বাস করার কোনও কারণ নেই যে এটা ৭ মার্চের সচল চিত্রের অংশ। এখানে বেশ কিছু ফাঁকা জায়গা দেখা যাচ্ছে যেটা অসম্ভব। আমি এ পর্যন্ত এই ভাষণ নিয়ে যারা মাঠে উপস্থিত ছিলেন অন্তত ৪০/৪৫ জনের সঙ্গে কথা বলেছি, সবাই বলেছে মাঠ পরিপূর্ণ ছিল সেখানে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। সেক্ষেত্রে এখানে যে ফাঁকা জায়গা দেখছি এরপরে এটা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য না যে এটা ৭ মার্চের চিত্র। তাছাড়া সহকারী ক্যামেরাম্যান আমজাদ আলী খন্দকার সাহেব আমাকে বলেছেন, উনি যখন ভিডিও চিত্র নিচ্ছিলেন তখন বঙ্গবন্ধুকে যে ক্যামেরাটা তাক করেছিল সেটাতেই উনি ছিলেন আর উনার একজন সহকারী দূরের চিত্রগুলো নিচ্ছিলেন। কিন্তু উনি বলেছেন যে ক্যামেরার আওতার মধ্যে কোনও ফাঁকা জায়গা ছিলনা। তাছাড়া যতদূর যাবার পর ফাঁকা জায়গা থাকতে পারত ততদূর জনগণের ভিড় ঠেলে ক্যামেরাম্যানদের পক্ষে যাওয়া সম্ভব ছিল না, আর প্রশ্নও উঠে না। উনারা উনাদের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। আমি আমজাদ আলী সাহেবকে বিশেষ একটা প্রশ্ন করেছিলাম যে, বঙ্গবন্ধু যখন গাড়িতে আসেন আপনি কি দেখেছিলেন? এই গাড়িটার নম্বর কী ছিল? আপনারা কি সে চিত্র নিয়েছিলেন? উনি জানিয়েছেন, গাড়ি যে জায়গায় পার্ক করেছিলেন সেটা আমার ক্যামেরার আওতার বাইরে ছিল। যখন বঙ্গবন্ধু মঞ্চে উঠেন শুধু তখন থেকে উনি চিত্র ধারণ করতে সক্ষম হয়েছেন। এই বক্তব্যের সত্যতা খুঁজে পাই আমি জনাব হাজী গোলাম মোর্শেদ সাহেবের বক্তব্যে। উনি আমাকে বলেছেন যে ৭ মার্চ উনি বঙ্গবন্ধুকে উনার নিজের সাদা টয়োটা কালো কাঁচে ঘেরা গাড়িতে করে ময়দানে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং গাড়ির নাম্বার ছিল ঢাকা গ-১। উনি আরও বলেছেন, মঞ্চের কাছে উনি সেদিন প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে যেতে পারেননি, মঞ্চ থেকে বেশ খানিকটা দূরে ওই দিন গাড়ি রাখতে হয়েছিল।
৩৯ সেকেন্ডের সময় থেকে ভিডিওতে একটা জিপ দৃশ্যমান হল তারপর ৪২ সেকেন্ড পর্যন্ত একে একে তিনটা জিপ দেখা গেল। এরপর ৪৫ সেকেন্ডের পর একটা পতাকাসহ সাদা গাড়ি সেটার নাম্বার কোনওভাবেই ‘ঢাকা গ-১’ না।
৪৫ সেকেন্ড থেকে ৪৮ সেকেন্ড বা তার একটু বেশি কিন্তু উনপঞ্চাশ সেকেন্ড না গাড়িটাকে আসতে দেখা যায় ৪৮ সেকেন্ড পার হওয়ার পরে গাড়ির নাম্বার প্লেটটা খুব পরিষ্কার দেখা গেছে যে, এটার নাম্বার ঢাকা ক -৮৪৭৭।
এসব কিছু দেখার পর আমি হাজী গোলাম মোরশেদ সাহেবকে একটা ইমেইল পাঠিয়েছিলাম ছবি সহ। উনাকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম- যে আপনি আমাকে বলেছিলেন যে গাড়িতে করে আপনি বঙ্গবন্ধুকে রেসকোর্স ময়দানে নিয়ে গিয়েছিলেন সেই গাড়ির নাম্বার ছিল ঢাকা গ-১। আমি পত্রিকাতেও ঠিক সেইরকমই পড়েছিলাম। কিন্তু এখানে যে গাড়িতে বঙ্গবন্ধু এসেছেন তার নম্বর মিলছে না। পরে উনি আমাকে ইমেইলে জানালেন যে, এটা কোনও অবস্থায়ই ৭ মার্চের ভিডিও চিত্র না। এ অংশ সম্ভবত ৩ জানুয়ারির ভিডিও চিত্র। পরে আমি উনাকে ফোন করি। উনি জানালেন নিজের গাড়িতে করে বঙ্গবন্ধুকে সেদিন ময়দানে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই গাড়ির সামনে কোনও ফ্ল্যাগ ছিল না। কিন্তু এই গাড়ির সামনে একটা ফ্ল্যাগ আছে। আর একটা ব্যাপার উনি বলেছেন, ওইদিন মাঠে তিল ধারণের জায়গা ছিল না, সেখানে মঞ্চের অতো কাছে গাড়ি নিয়ে যাওয়া তো সম্ভব হয়নি। কিন্তু ভিডিও চিত্রে দেখা যাচ্ছে যে একটা গাড়ির বহর আসলো প্রথমে ৩টা জিপ তারপর বঙ্গবন্ধু পিছনে সাদা গাড়ি থেকে নামলেন। কিন্তু হাজী গোলাম মোরশেদ সাহেব বললেন সচলচিত্রে দেখা যাচ্ছে ওইদিন একটা রাস্তা করা ছিল গাড়ি আসার মতো। এই রকম কোনও রাস্তা ৭ মার্চ ছিল না। উনি অনেক কষ্টে গাড়ি চালিয়ে যতটা সম্ভব গিয়েছিলেন। কিন্তু মঞ্চের কাছাকাছি ৭ মার্চ উনি যেতে পারেননি। একটু দূরে গাড়ী রাখতে হয়েছিল।
৭ মার্চ গাড়ি চালাচ্ছিলেন হাজী গোলাম মোর্শেদ। বঙ্গবন্ধু ওনার বাম পাশে বসা ছিলেন। গাড়ির সামনে পিছনের সিটে ছিলেন মহিউদ্দিন আর গাজী গোলাম মোস্তফা। এইদিন যখন উনারা রেসকোর্স ময়দানের উদ্দেশ্যে রওনা দেন উনাদের সামনে কোন গাড়ির বহর ছিল না। বাকি নেতারা- তোফায়েল আহমেদ, আব্দুর রাজ্জাক সাহেব আগেই একটা অন্য গাড়িতে মঞ্চে চলে গিয়েছিলেন। হাজী গোলাম মোর্শেদ সাহেব একটা ব্যাপারেও দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানালেন যে, ওইদিন যদি ওই গাড়ির বহরে সবাই রেসকোর্সে যেত তাহলে বঙ্গবন্ধু যাবার আগেই মঞ্চে পৌঁছাল কেমনে তারা সবাই? আব্দুর রাজ্জাক সাহেবও তার স্মৃতিচারণের সময় এই কথায় বলেছেন যে তিনটা গাড়ির বহরে ৭ মার্চ রেসকোর্সে গিয়েছিলেন।
এব্যাপারে আমি যখন হাজী মোরশেদ সাহেবের দৃষ্টি আকর্ষণ করি উনি বলেছেন, রাজ্জাক বিস্মৃত হয়ে থাকবে। এটা অবশ্য খুব সহজেই প্রমাণ করা যাচ্ছে যে আব্দুর রাজ্জাক দুটো দিনকে গুলিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু হাজী গোলাম মোর্শেদ সাহেবের কথার মধ্যে আমি কোন অসংলগ্নতা দেখছি না এবং এখানে বিস্মৃতির কোনও কারণ আমি দেখছি না। এমনকি উনি আমাকে বলেছেন, যে ওই সময় ঢাকা শহরে কত গাড়ি নিবন্ধিত ছিল, এবং এর একটা পরিসংখ্যান পর্যন্ত নিয়ে আমাকে দিয়েছেন। যে গাড়িতে উনারা ৭ মার্চ গিয়েছিলেন সে গাড়িটা উনি কার কাছ থেকে কিনেছিলেন। এই ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর জামাতা যে বই লিখেছেন- সেখানেও কিছু তথ্য এরকম আছে যে একটা তিনটা গাড়ির বহর গিয়েছিল। তারপরের ঘটনাগুলো কোনভাবেই মিলছে না।
এরপর আমি টেলিফোনে কথা বলতে বলতেই হাজী গোলাম মোর্শেদ সাহেবকে অনুরোধ করেছিলাম ৭ মার্চের ভিডিওটা দেখার জন্যে। পরে উনি ভিডিও দেখে আমাকে পরিষ্কার বলেছেন বঙ্গবন্ধু যখন মঞ্চে উঠছেন এটা ঠিক আছে। এ অংশ ৭ মার্চের মতো মনে হচ্ছে, কিন্তু তার আগের যে চিত্র এটা কোনও অবস্থাতেই ৭ মার্চের না। এটা ৩ জানুয়ারির হবার সম্ভাবনাই বেশি। তবে সেদিন উনি সেখানে ছিলেন না। ওখানে যে বিদেশি একজন মহিলাকে দেখানো হচ্ছে, এটাও উনি ঠিক করে বলতে পারেননি যে- সে অংশ ৭ মার্চের না তার আগের। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে যখন বিদেশিনী ওই মহিলাকে দেখানো হচ্ছে সেটা ৫৭ সেকেন্ড থেকে ৫৮ সেকেন্ড পর্যন্ত, এটাই আমাদের সীমানা। হয় এখান থেকে অথবা এরপর থেকে ৭ই মার্চের ভিডিও চিত্র শুরু হয়েছে।
তবে এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি যে ৫৯ সেকেন্ড থেকে ৭ মার্চের ভিডিও চিত্র শুরু হয়েছে এবং সেটা খুব সহজে প্রমাণ করা সম্ভব। যে ৫৭ সেকেন্ডের সময় যখন বঙ্গবন্ধু সিঁড়িতে উঠছেন এটা দেখানো হচ্ছে। কিন্তু এইদিন ওনার সঙ্গে যে লোকজন আছে ৫৮/৫৯ সেকেন্ডের সময় আমরা দেখছি তখন এসব লোকজনগুলো সব উধাও হয়ে গেছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ঠিকই আছেন। বঙ্গবন্ধুকে দেখে বুঝতে পারা খুবই মুশকিল কারণ ওনার পোশাক সব সময় একই রকম। ৩ জানুয়ারিতে উনি একই রকম পোশাকে ছিলেন এবং ৭ মার্চেও। যদি আমরা আশেপাশের মানুষগুলোকে সব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখি তাহলে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে এই দুইটা চিত্রের মধ্যে পার্থক্য বিস্তর। তবে ৫৯ সেকেন্ড থেকে শুরু করে বাকি চিত্রের মধ্যে যে ধারাবাহিকতা আছে তাতে বলা যায় যে ৫৯ সেকেন্ড থেকেই ৭ই মার্চের সচল চিত্র শুরু হয়েছে। তার আগের চিত্রগুলো ৭ই মার্চের না।
হাজী মোর্শেদ সাহেব আর একটা দিকও নির্দেশ করেছেন, সেটা হল বঙ্গবন্ধু গাড়িতে ওনার বাঁ পাশে বসেছিলেন পিছের আসনে গাজী গোলাম মোস্তফা ও মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। সেক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর গাড়ির বাম দিক থেকে নেমে আসার কথা। কিন্তু এইদিন ভিডিও চিত্রতে দেখা যাচ্ছে যে বঙ্গবন্ধু ঢাকা ক-৮৪৭৭ সংখ্যার গাড়িটার ডান দিক দিয়ে বেরিয়েছেন। আর মহিউদ্দিন সাহেব যে এইদিন গাড়ির মধ্যে ছিলেন না এটা একেবারে পরিষ্কার। ৪৬ সেকেন্ড এর সময় এর ছবিটা যদি আমরা দেখি তাহলে দেখা যাবে শেষের যে জিপটা এসেছে সম্ভবত মোহাম্মদ মহিউদ্দিন সেই জিপ থেকে নেমেছেন। বঙ্গবন্ধু গাড়ির ডান পাশ দিয়ে যখন বেরিয়েছেন তখন উনি পিছন থেকে প্রায় দৌড়ে অনেককে টপকে সামনে চলে আসেন গাড়িটার বাম দিক দিয়ে। ৪৮সেকেন্ড পার হওয়ার পরে আমরা যে চিত্র দেখি তখনো বঙ্গবন্ধু গাড়ি থেকে নামেননি। এরপরে ৪৯ সেকেন্ডের সময় দর্শককে দেখানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে সরাসরি গাড়ি থেকে নামতে দেখানো হয়নি। কিন্তু ৫১সেকেন্ডে আমরা দেখেছি যে বঙ্গবন্ধু গাড়ির বাইরে ডানদিকে আর গাড়ির সামনে তখন যতটা চিনতে পারি মনে হচ্ছে তাজউদ্দিন আহমেদ সাহেব দাঁড়িয়ে। আর এই সময়ে প্রায় দৌড়ে মহিউদ্দিন সাহেব গাড়ির বাম দিক দিয়ে তাজউদ্দীন সাহেবের পাশ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর পিছে এসে দাঁড়িয়ে গেলেন। তারপর সামনে মঞ্চের দিকে এগুতে থাকলেন। ৫৬-৫৭ সেকেন্ডে আমরা দেখতে পাই বঙ্গবন্ধু মঞ্চের সিঁড়ির যে বেড়া সেটা ধরে উপরে উঠছেন এবং উনার ঠিক পিছে মহিউদ্দিন। তারপরে ৫৭ সেকেন্ডের শেষে এবং ৫৮ সেকেন্ডে একজন বিদেশিনীকে দেখানো হল। তারপর ৫৯ সেকেন্ডের সিঁড়ির যে চিত্র দেখানো হল সেখানে মহিউদ্দিন সাহেব সহ আশেপাশের সমস্ত লোকজন উধাও শুধু বঙ্গবন্ধু ছাড়া। ৫৯ সেকেন্ডের পর থেকে চিত্রে আর ৫৭সেকেন্ডের চিত্রের একজন মানুষকেও দেখা যাচ্ছে না।
বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী গাড়ি থামার আগেই মহিউদ্দিনকে বাইরে দেখা গেছে। সেক্ষেত্রে ৭ মার্চ যেহেতু মহিউদ্দিন, বঙ্গবন্ধু হাজী গোলাম মোর্শেদ এবং গাজী গোলাম মোস্তফা এক গাড়িতে ছিলেন এটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে যে, তথ্যমন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত ভিডিও চিত্রের প্রথম ২৭ বা ২৯ সেকেন্ড এবং আইসিটির প্রকাশিত ভিডিও চিত্রের প্রথম ৫৭ সেকেন্ড কোনভাবেই ৭ মার্চের না, এবং এটা প্রমাণযোগ্য। ৫৭ থেকে ৫৮ সেকেন্ড পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। এখানে একটা ব্যাপার পরিষ্কার যে, এটা দুই দিনের চিত্রের একটা সংমিশ্রণ। এরপরও এক মিনিট ৭ সেকেন্ডে প্রথমে নীল আকাশ তারপর বাংলাদেশের বর্তমান পতাকাটা দেখানো হয়েছে ১ মিনিট ৯ সেকেন্ড পর্যন্ত। এটাও কোনওভাবেই ৭ মার্চের চিত্র হতে পারে না। অন্তত বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ দেশে ফিরে আসা পর্যন্ত আমাদের পতাকা এটা ছিল না। লাল সূর্যের মাঝে হলুদ রঙের মানচিত্র অঙ্কিত ছিল।
বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে হলুদ মানচিত্রটা বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। সে কথা উনি বিদেশি সাংবাদিকের সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন। আমি যতদূর মনে করতে পারি ডেভিড ফ্রস্টের সাথে। আমি জানিনা কিসের স্বার্থে সরকারের দুইটা মন্ত্রণালয় জনগণের সাথে এই নিয়ে প্রতারণা শুরু করেছে। এতে ইতিহাস বিকৃত হচ্ছে, সাংবাদিক, নিবন্ধকার এবং ছাত্র-ছাত্রীরা যারা ভিডিও দেখে লিখছেন ভুল লেখালেখি হচ্ছে। এসব কারণেই এ কে খন্দকার, আতাউস সামাদ, নির্মল সেন ও বিচারপতি হাবিবুর রহমানের মতো কিছু লোকজন সহজেই ইতিহাস বিকৃত করতে প্রয়াস পেয়েছে। সবাই এদের মতো উদ্দেশ্যমূলকভাবে লিখছে না, কিন্তু সরকারের অবহেলার কারণে প্রতিবছর হাজার হাজার ভুল তথ্য সংক্রামিত হচ্ছে। অথচ সরকার খুব সহজেই পুরো ভাষণটাকে উন্মুক্ত এবং সঠিক চিত্র এর সাথে সংযোজন করে এ সমস্যার সমাধান করতে পারে।
এব্যাপারে কথা বলার জন্য আমি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে বেশ কয়েকবার টেলিফোন করেছি কিন্তু উনাকে ধরতে পারিনি। ৬ মার্চ ২০১৮ তারিখে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ১২ মিনিটে যখন উনাকে ফোন করি উনি একটা এসএমএস পাঠালেন I’m in a meeting. এরপর উনাকে অনেকবার ফোন করে আমি পাইনি। তবে জুন/জুলাই মাসের দিকে একদিন রাত সাড়ে দশটার দিকে উনাকে ফোন পেয়েছিলাম। পরিচয় দিয়ে বললাম বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে কথা বলতে চাই উনি কি কিছুটা সময় দিতে পারবেন। আমাকে উনি বললেন- এখনই কথা বলবেন নাকি ১০ মিনিট পরে কথা বললে চলে? আমি এইমাত্র বাসায় ঢুকছি। ভদ্রতার খাতিরে আমি উনাকে বললাম- অসুবিধা নেই আমি ১০ মিনিট পরেই ফোন করছি। ঠিক দশ মিনিট পরেই আমি ফোন করেছিলাম, কিন্তু উনি আর ফোন ধরেননি। বন্ধ করে রেখেছিলেন।
এতক্ষণ আলোচনা করেছি ভিডিও নিয়ে এবার আসি আলোকচিত্রে। অসংখ্য পত্রিকায় ৭ মার্চের ভাষণের উপর বিভিন্ন নিবন্ধে, রিপোর্টে, সম্পাদকীয়তে যে আলোকচিত্র ব্যবহার করা হয়েছে সেটা ৭ মার্চের না। এই কাজটা বিবিসি বাংলা বিভাগের মতো গণমাধ্যমও করেছে। সাংবাদিকরা সারা বিশ্বের ভুল ত্রুটি নিয়ে খোঁচাখুঁচি করেন এটা তাদের কাজ। অথচ তারা যখন এইরকম ঐতিহাসিক ব্যাপারগুলো নিয়ে ভুল ছবি ছাপে এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু হতে পারে না।
Pingback: এবারেরসংগ্রামআমাদেরমুক্তিরসংগ্রামএবারেরসংগ্রামস্বাধীনতারসংগ্রাম | প্রাত্যহিক পাঠ
Pingback: মুক্তিরসংগ্রামএবারেরসংগ্রামস্বাধীনতারসংগ্রাম | প্রাত্যহিক পাঠ
মাসুদ করিম - ১ নভেম্বর ২০১৭ (৪:৪৯ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ৯ মার্চ ২০১৯ (৩:৪৫ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ৬ মার্চ ২০২১ (৫:১৯ পূর্বাহ্ণ)