শান্তিনিকেতনে সাহিত্যমেলা : প্রথম একুশে উদ্‌যাপন — প্রথম পর্ব

ভাষা আন্দোলনের প্রথম বার্ষিকীতে, ১৯৫৩ সালে, শান্তিনিকেতনে দুই বাংলার সাহিত্যিকদের নিয়ে আয়োজিত হয়েছিল সাহিত্যমেলা। কয়েকদিন-ব্যাপী ওই সাহিত্যমেলা আয়োজনের মধ্য দিয়েই প্রথম একুশে উদ্‌যাপিত হয়েছিল। প্রাসঙ্গিক উদ্ধৃতি সহ তারই সানুপুঙ্খ বিবরণ।

নরেশ গুহ-র তাতার ঘেরা সমুদ্র (১৯৭৬) কাব্যগ্রন্থের ‘ফাল্গুন ১৩৫৯’ নামের কবিতাটি পড়ছিলাম। তার এক জায়গায় কবি লিখেছেন :

কেমন, বলিনি? দ্যাখো, বসন্ত ফোটায় গাছে ফুল।
(ধন্যবাদ গৌরী দত্ত, শ্রীনিমাই চট্টোপাধ্যায়।)
তিপ্পান্ন সালেও আজো ফাল্গুন কী রঙ্গ দেখায়
বিশ্বাস হ’তো না যদি না-দেখতুম জ্বলন্ত শিমুল
বীরভূমে অজয়তীরে (সাক্ষী থাকে অম্লানকুসুম; —
সাক্ষী থাকে আরো এক অধ্যাপক, মাথাজোড়া টাক,
সারা রাস্তা ভদ্রলোক, বাপরে বাপ, কী বকবকুম!
কিন্তু এবে পরচর্চা থাক।)

তাহলে ফাল্গুনে দেখছি – আরে, তাই তো,
সত্যি যে পলাশ!
এতো লাল?
ওই কি রঙ্গন?
পৌঁছলাম শান্তিনিকেতন।

অনেকেরই নিশ্চয়ই মনে পড়বে যে ১৯৫৩ সালের বসন্তে শান্তিনিকেতনে সাহিত্যমেলার আয়োজন করা হয়েছিল। আর তার মূল উদ্যোক্তা ছিলেন বিশ্বভারতীর দুই শিক্ষার্থী — নিমাই চট্টোপাধ্যায় আর গৌরী দত্ত; আবু সয়ীদ আইয়ুবের সহধর্মিণী হবার সুবাদে পরবর্তীকালে যিনি গৌরী আইয়ুব নামে পরিচিত হয়েছিলেন। বছর কয়েক আগে তিনি প্রয়াত হয়েছেন; তবে যতদূর জানি নিমাই চট্টোপাধ্যায় এখনো বেঁচে আছেন।

কয়েকদিন-ব্যাপী সেই সাহিত্যমেলা আয়োজনের মধ্য দিয়ে যে প্রথমবারের মতো একুশে উদ্‌যাপিত হয়েছিল তা হয়তো সবার জানা নেই। বোলপুর থেকে প্রকাশিত ‘পাক্ষিক ১৪০০ সাহিত্য’ পত্রিকার ‘২১ ফেব্রুয়ারি বিশেষ সংখ্যা’য় (বৈশাখ ১৪০৬) ছাপা হয়েছিল নিমাই চট্টোপাধ্যায়ের একটি সাক্ষাৎকার (১৫ মার্চ ১৯৯৯)। সেই সাক্ষাৎকারে তিনি জানাচ্ছেন :

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি-র ইতিহাস আজ দুনিয়ার কোনো বাঙালির কাছেই অজানা নেই। ১৯৫২-র একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার জন্যে যাঁরা প্রাণ দিয়েছিলেন তাঁদের আমরা প্রতি বছরই ওই তারিখে শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসার সঙ্গে স্মরণ করি। কিন্তু যে-কথাটা আজ প্রায় কেউই মনে রাখেনি সেটা হল কি পরের বছর ১৯৫৩-র একুশে ফেব্রুয়ারি সেই ঘটনার প্রথম স্মরণ বার্ষিকী অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই শান্তিনিকেতনে; এমনকি শান্তিনিকেতনের বর্তমান কর্তৃপক্ষও সে-কথা জানেন না […]। ১৯৫৩-র একুশে ফেব্রুয়ারি অন্নদাশঙ্কর রায়ের নেতৃত্বে গৌরী দত্ত ও আমি শান্তিকিকেতনে যে সাহিত্যমেলার আয়োজন করি সেটাই ছিল বিভাগোত্তর দুই বাংলার সাহিত্যিক সমাজের সর্বপ্রথম মিলনোৎসব; সেই অনুষ্ঠানেই, শান্তিনিকেতনের সংগীতভবন মঞ্চে দাঁড়িয়ে কাজী মোতাহার হোসেন প্রথম বলেছিলেন : “আমাদের মুখের ভাষা যদি ওরা কেড়ে নেয় আমরা তাহলে পাকিস্তান ছেড়ে দিতেও কুণ্ঠা বোধ করব না।” তার বেশ কয়েক বছর পরে স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয়, এবং একুশে ফেব্রুয়ারি অনিবার্যভাবেই বাংলাদেশের বর্ষপঞ্জির একটি অচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে ওঠে। কিন্তু দুনিয়ার প্রথম একুশে ফেব্রুয়ারি কবে ও কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল সে প্রশ্নের উত্তর আপনারা কোনো ইতিহাসগ্রন্থেই পাবেন না।

এর একটা কারণ হল : সাহিত্যমেলার ওই তারিখটির তাৎপর্য গৌরী ও আমি কাউকেই বলিনি, কারণ আমাদের এ-আশঙ্কা অমূলক ছিল না যে একুশে ফেব্রুয়ারির স্মৃতিবার্ষিকী বললে পূর্ব পাকিস্তান-কর্তৃপক্ষ কখনোই ওই দেশের পাঁচজন প্রসিদ্ধ লেখককে শান্তিনিকেতনে তখন আসতে দিতেন না। অন্নদাশঙ্কর রায় সম্প্রতি একটা প্রবন্ধে লিখেছেন : “সাহিত্যমেলা-কে কেউ যেন বর্ণচোরা সেমিনার ব’লে মনে না করেন। ওটা ছিল মিলনের, দেওয়া-নেওয়ার উৎসব। গৌরী ও নিমাই কিন্তু আমাকেও কখনো জানতে দেয়নি ওরা কেন একুশে ফেব্রুয়ারির তারিখটা বেছে নিয়েছিল; আমারও সেটা খেয়াল হয়নি তখন। যদি সচেতন হয়ে পড়তাম তাহলে সাহিত্যমেলার নিমন্ত্রণপর্বে নিঃসন্দেহেই অনেক বাধা পেতাম; ওই মেলা সম্ভবই হতো না।”

আজ কৃতজ্ঞচিত্তে তাঁদের স্মরণ করি যাঁদের সহযোগিতায় সাহিত্যমেলা সম্ভব হয়েছিল; নন্দলাল বসু, রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী, ক্ষিতিমোহন সেন, প্রবোধ সেন, হীরেন্দ্রনাথ দত্ত, অশোকবিজয় রাহা, ক্ষিতীশ রায় এবং শান্তিনিকেতনের আরো অনেকে। আর স্মরণ করি অনুষ্ঠানের যুক্ত-সম্পাদক গৌরী দত্তকে, যাঁর কাছে সাহিত্যমেলার উদ্দেশ্য ও একুশে ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য ১৯৫৩-তেই বিশেষভাবে জানা ছিল; মৃত্যুর কিছুদিন আগেও গৌরী আইয়ুব আমাকে বলেছিলেন : “আমাদের সেই যুক্ত চক্রান্তের কথা মনে পড়ে কি তোমার?”

১৯৫৩-র সাহিত্যমেলায় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ কোনো অর্থ সাহায্য দিতে পারেন নি — শুধু বিশ্ববিদ্যালয় তিনদিন বন্ধ রেখেছিলেন অভ্যাগতদের অভ্যর্থনার জন্যে। গৌরী ও আমি চাঁদা তুলেছিলাম শান্তিনিকেতনের প্রত্যেকটি বাসিন্দার কাছ থেকে : এমনকি পাঠভবনের ছাত্রছাত্রীরাও চাঁদা দিয়েছিল আট আনা/এক টাকা করে। আজ ভাবতে আশ্চর্য লাগে অত বড় একটা ঐতিহাসিক ঘটনা, অনেক অপ্রত্যাশিত বিপত্তি সত্ত্বেও, কত সহজে সম্ভব হয়েছিল, এবং কোনো প্রতিষ্ঠানের অর্থসাহায্য ছাড়াই সেটা ঘটেছিল।

‘পাক্ষিক ১৪০০ সাহিত্য’ পত্রিকার ওই একই সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে ‘প্রসঙ্গ : একুশে ফেব্রুয়ারি’ শিরোনামে নিরঞ্জন হালদারের একটি লেখা। তিনি সে-লেখায় জানাচ্ছেন :

[…] ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শান্তিনিকেতনে সাহিত্যমেলা অনুষ্ঠিত হয়। সাহিত্যমেলা কমিটির সভাপতি ছিলেন শ্রীঅন্নদাশঙ্কর রায় (তিনি তখন শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা) এবং সম্পাদক ছিলেন নিমাই চট্টোপাধ্যায় ও গৌরী দত্ত (বিশ্বভারতীর ছাত্র ও ছাত্রী)। ২১ ফেব্রুয়ারি দিন বাছা হয়েছিল ঢাকার ভাষা আন্দোলনকে স্মরণ করার জন্য। কিন্তু একথা প্রচার করা হয়নি এইজন্য যে, তাহলে পূর্ব পাকিস্তান থেকে কোনো সাহিত্যিক বা কবি শান্তিনিকেতনের সাহিত্যমেলায় আসতে সাহস করবেন না। কাজী আবদুল ওদুদ প্রভৃতির ঢাকার ‘বুদ্ধির মুক্তি’ আন্দোলনের অন্যতম সহযোদ্ধা কাজী মোহাতার হোসেন ঐ সম্মেলনে এসেছিলেন। আমার ঠিক মনে নেই, তিনি ঐ সময়ে কলকাতায় ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটে ভিজিটিং প্রফেসর ছিলেন। শামসুর রাহমানের সম্ভবত ঐ প্রথম কলকাতা আগমন এবং তাঁর প্রিয় কবি বুদ্ধদেব বসুর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ।

শান্তিনিকেতনে সাহিত্যমেলার অনুসরণে পরের বছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃতি পরিষদের উদ্যোগে আমরা সম্ভবত ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি আশুতোষ হলে সাংস্কৃতিক সম্মেলন করেছিলাম। আচার্য ক্ষিতিমোহন উপস্থিত হতে না পেরে আমাদের আশীর্বাণী পাঠিয়েছিলেন। তবে তার সঙ্গে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক ছিল না।

পশ্চিমবঙ্গে প্রথম ২১ ফেব্রুয়ারি উদ্‌যাপিত হয় ১৯৬৭ সালে পান্নালাল দাশগুপ্তের উদ্যোগে কলকাতা ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটউটে।

ভাষা আন্দোলনের প্রথম বার্ষিকীতেই একুশে উদ্‌যাপিত হয়েছিল শান্তিনিকেতনে, দুই বঙ্গের লেখকদের নিয়ে সাহিত্যমেলা আয়োজনের মধ্য দিয়ে। যদিও সংগত কারণেই একুশে উদ্‌যাপনের বিষয়টি সে-সময়ে প্রকাশ করা হয়নি। আর সেজন্যই “দুনিয়ায় প্রথম একুশে ফেব্রুয়ারি কবে কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল” তার উল্লেখ কোনো ইতিহাসগ্রন্থেই ঠাঁই পায়নি।

(তিন পর্বে সমাপ্য)

রেজাউল করিম সুমন

একজন সামান্য পাঠক।

৬ comments

  1. রশীদ আমিন - ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (৩:৪৯ পূর্বাহ্ণ)

    তোমার লেখাটি ভাল লাগলো, নতুন করে জানলাম অনেক কিছু; এ খবর আমাদের জানা ছিল না। ধন্যবাদ।

    • রেজাউল করিম সুমন - ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (১০:০২ পূর্বাহ্ণ)

      আমিন ভাই,
      ধন্যবাদ। আপনি নিশ্চয়ই চীনেই আছেন এখনো? চীনে, বা আরো নির্দিষ্ট করে আপনার শহরে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্‌যাপিত হয়েছে কি? সে-বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ইচ্ছে করছে।

  2. ইমতিয়ার - ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (১১:২১ পূর্বাহ্ণ)

    আমারও জানা ছিল না, জানতে পেরে ভাল লাগল। একটি অনালোচিত বিষয়কে রেজাউল করিম সুমন আমাদের সামনে নিয়ে এসেছেন, এ জন্যে তাকে ধন্যবাদ।
    তবে উদযাপন বলতে আমরা যা শাদামাটাভাবে বুঝি তাতে যারা উদ্যোক্তা এবং অংশগ্রহণকারী উভয়েরই জানা থাকে, কোন অনুষ্ঠানে বা কোন সভায় যোগ দিচ্ছি। এমনকি নিষিদ্ধ সংগঠনের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটে না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, অংশগ্রহণকারী তো বটেই এমনকি উদ্যোক্তাদেরও সবাই বিষয়টি জানতেন না। এ ক্ষেত্রে একটি মাত্র সূত্রই শক্তিশালী, অনুষ্ঠানটি ২১ ফেব্রুয়ারি হয়েছিল এবং দিন নির্ধারণের উদ্দেশ্য অন্তত দু’জনের জানা ছিল। দিন নির্ধারণের ক্ষেত্রে কয়েকজনের গুপ্ত চক্রান্ত-এর মধ্যে দিয়ে তাদের একাগ্রতা প্রমাণিত হলেও কেবল ওই কারণেই অনুষ্ঠানটিকে প্রথম অনুষ্ঠান বলা যাবে কি না তা নিয়ে আমি সংশয়ী।
    প্রাসঙ্গিক একটি প্রশ্ন : পূর্ববাংলা থেকে যারা গিয়েছিলেন ওই অনুষ্ঠানে তাদেরও কি জানা ছিল বিষয়টি? বা তারাও কি জেনেছিলেন পরে কোনও এক সময়ে? এদের কারও স্মৃতিচারণে কি বিষয়টির উল্লেখ করা হয়েছে কোনও সময়? সুমনের পরবর্তী কোনও পর্বে এ ব্যাপারে আলোকপাত করা হবে আশা রাখি।
    আর একটি ব্যাপার, কাজী মোতাহার হোসেন ১৯৫৩-এরও অনেক আগে ১৯৪৮ সালেই তমুদ্দন মজলিশের সংকলন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু সংকলনে তাঁর লেখায় (পরে মাসিক সওগাত-এও প্রকাশিত) লিখেছিলেন

    বর্তমানে যদি গায়ের জোরে উর্দুকে বাঙালী হিন্দু-মুসলমানের উপর রাষ্ট্রভাষারূপে চালাবার চেষ্টা হয়, তবে সে চেষ্টা ব্যর্থ হবে। কারণ ধূমায়িত অসন্তোষ বেশিদিন চাপা থাকতে পারে না। শীঘ্রই তা হলে পূর্ব-পশ্চিমের সম্বন্ধের অবসান হবার আশঙ্কা আছে।

    কাজেই কাজী মোতাহার হোসেনের ওই বলাই প্রথম বলা নয়। পূর্ব-পশ্চিমের সম্পর্ক থাকবে না, এটি তিনি শুরু থেকেই বলতেন।

    বাকি পর্বগুলি পড়ার জন্যে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি।

  3. রেজাউল করিম সুমন - ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (৯:২১ অপরাহ্ণ)

    ইমতিয়ার ভাই,
    অনেক ধন্যবাদ।

    দিন নির্ধারণের ক্ষেত্রে কয়েকজনের গুপ্ত চক্রান্ত-এর মধ্যে দিয়ে তাদের একাগ্রতা প্রমাণিত হলেও কেবল ওই কারণেই অনুষ্ঠানটিকে প্রথম অনুষ্ঠান বলা যাবে কি না তা নিয়ে আমি সংশয়ী।

    অত্যন্ত সংগত আপনার এই সংশয়।

    নীচের কথাগুলি পরের পর্বে উল্লেখ করব ভেবেছিলাম; প্রাসঙ্গিক হওয়ায় এখানে আগেভাগেই উল্লেখ করা যেতে পারে।

    ১৯৫৩-র ওই সাহিত্যমেলার দুই সম্পাদকের মনে ১৯৫২-র ২১ ফেব্রুয়ারির অনুপ্রেরণা কাজ করেছিল ঠিকই, কিন্তু ওই অনুষ্ঠানমালা ২১ ফেব্রুয়ারিতেই শুরু হয়নি, হয়েছিল কয়েকদিন পরে। শঙ্খ ঘোষকে (ওই সাহিত্যমেলায় তিনি উপস্থিত ছিলেন) প্রশ্ন করে জেনেছিলাম, দোল উৎসবের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়েই সাহিত্যমেলার তারিখ ঠিক করা হয়েছিল। সাহিত্যমেলা শুরু হয়েছিল ২১ তারিখে নয়, ২৭ তারিখে। নিমাই চট্টোপাধ্যায় ও নিরঞ্জন হালদারের যে-দুটি লেখার উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছি তার কোনোটিতেই এর উল্লেখ নেই। নিমাইবাবুর সাক্ষাৎকার যিনি নিয়েছিলেন ওই সাহিত্যমেলা সম্পর্কে সম্ভবত বেশি কিছু তাঁর জানা ছিল না। নইলে তিনি এদিকে নিমাইবাবুর দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন। এটা আমার অনুমান। পত্রিকায় মুদ্রিত পাঠে প্রশ্ন(গুলো) নেই, কেবল উত্তরটাই ছাপা হয়েছে। আর নিরঞ্জনবাবু ওই সাহিত্যমেলায় উপস্থিত ছিলেন কিনা জানি না, সেরকম কোনো উল্লেখও তাঁর লেখায় নেই।

    কাজী মোতাহার হোসেনের লেখার সঙ্গে নিমাইবাবুর পূর্ণ পরিচয় না থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। অন্তত আপনি যে গুরুত্বপূর্ণ লেখাটির উদ্ধৃতি দিয়েছেন সেটি নিশ্চয়ই তাঁর দৃষ্টিগোচর হয়নি।

    আপনি জানতে চেয়েছেন, পূর্ববাংলা থেকে যাঁরা শান্তিনিকেতনের সাহিত্যমেলায় গিয়েছিলেন তাঁরা ২১ ফেব্রুয়ারি উদ্‌যাপনের বিষয়টি জানতেন কি না। কিংবা পরে কখনো জেনেছিলেন কি না। সাহিত্যমেলা বিষয়ে তাঁদের মধ্যে মাত্র একজনের — শামসুর রাহমানের — লেখাই আমার চোখে পড়েছে। সেখানে এ প্রসঙ্গে কিছু নেই। অন্যরা কখনো ওই সাহিত্যমেলা নিয়ে লিখেছেন কি না জানি না। খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করব। এখন আক্ষেপ হচ্ছে এই ভেবে যে, শামসুর রাহমানের সঙ্গে শান্তিনিকেতনের সাহিত্যমেলা নিয়ে কথা হলেও একুশে উদ্‌যাপন প্রসঙ্গে তাঁকে কিছু জিজ্ঞেস করা হয়নি।

    এ লেখার দ্বিতীয় পর্বে থাকবে তাঁর স্মৃতিকথা থেকে ওই সাহিত্যমেলার বিবরণ। পোস্টের শিরোনাম সামান্য পালটে দেয়া হলো।

  4. রেজাউল করিম সুমন - ২৩ মার্চ ২০০৯ (৭:৪৮ অপরাহ্ণ)

    নিমাই চট্টোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরেই ইংল্যান্ড-প্রবাসী। মাঝে মাঝে শান্তিনিকেতনে বেড়িয়ে যান। সেখানে আমাদের পরিচিত দু-এক জনের কাছে খোঁজ করে তাঁর ঠিকানা সংগ্রহ করতে পারিনি। তিপ্পান্নর সাহিত্যমেলা নিয়ে তাঁর সঙ্গে সরাসরি কথা বলার কথা ভাবছিলাম।

    ঢাকায় ক’দিন আগে কথা হলো কায়সুল হকের সঙ্গে। তাঁর বক্তব্য যথাস্থানে উদ্ধৃত হবে।

  5. রেজাউল করিম সুমন - ২৩ মার্চ ২০০৯ (৮:০৯ অপরাহ্ণ)

    আমার জানা ছিল না যে কবি নরেশ গুহ এ বছরের ৪ জানুয়ারি প্রয়াত হয়েছেন। নিমাই চট্টোপাধ্যায়ের ঠিকানা সংগ্রহের চেষ্টা করতে গিয়েই খবরটা পাই। বুদ্ধদেব বসুর সঙ্গে নরেশ গুহের পত্রালাপ গ্রন্থাকারে ছাপা হবার কথা ছিল। পরে অবশ্য তিনি সিদ্ধান্ত নেন একটি স্মৃতিকথা লিখবেন এবং তাতে সেই পত্রালাপের কেবল প্রাসঙ্গিক অংশগুলো উদ্ধৃত হবে। সেই স্মৃতিকথা রচনার কাজ তিনি শেষ করতে পেরেছিলেন কি না জানা যায়নি।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.