ঠিক কবে থেকে তা মনে নেই, একজন বয়স্ক মানুষ কাগজে আমার লেখা বের হওয়ার দিনই ফোন করতেন। আমার মঙ্গল কামনা করতেন। সাবধানে থাকতে বলতেন। ক্রমশঃ সম্পর্ক নিবিড় হওয়ার পর দেখতে চাইতেন। আমি সময় দিতে পারিনি! এই মানুষটি গত ৪ বছর ধরে নিয়মিত ফোন করছেন! মহাজোট জয়লাভ করার পর জানালেন আর এক বিস্ময়! তিনি প্রতি সোমবার আমার লেখা শত শত ফটোকপি করে তাঁর গ্রামে বিলি করেন। শেখ হাসিনার প্রতি তাঁর অনুরোধগুলো আমার লেখার মধ্যে প্রকাশ পেলে গর্বিত হতেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি এই মানুষটি জানালেন : "আজ আমার চাকরি জীবনের শেষ দিন! আমাকে স্কুল থেকে বিদায় জানানোর অনুষ্ঠানে আমি আপনাকে দেখতে চাই!" আমি যথাসময়ে হাজির হয়েছিলাম। বংশাল সরকারী নৈশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই মিনহাজ মাস্টার ৩৬ বছর শিক্ষকতা করেছেন! সবার বিদায় ভাষণের শেষে তিনি বলতে উঠলেন! আমাদের সকলকে স্তম্ভিত করে তিনি কাঁদতে শুরু করলেন! বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে তাজউদ্দীন আহমেদ তাঁকে মানুষ গড়ার কারিগর করে দিয়ে গেছিলেন। আজ সেই কাজের শেষ দিন। আমার জন্য তখনো চরম বিস্ময় বাকি! তিনি যখন কাঁদছেন তখন গোটা স্কুলঘরটা নিস্তব্ধ! এসময়ে আমি সবিস্ময়ে দেখলাম -- সবাই বসে, কিন্তু একটি মেয়ে নির্বাক দাঁড়িয়ে! দুচোখ দিয়ে জলের ধারা গড়িয়ে নামছে! তাকে কাঁদতে দেখে শিক্ষক আর থাকতে পারলেন না! হাউ মাউ করে বলে উঠলেন, " মা রে, আমি কোথাও যাব না, তোকে রেখে আমি কী করে যাব! চিন্তা করিস না মা!" এর পরের দৃশ্য বর্ণনা করার ভাষা মনজুরুল হকের জানা আছে, কিন্তু কোনো ভাবেই ব্যক্ত করার ক্ষমতা নেই! মিনহাজ মাস্টার এবার সোজা কাছে গিয়ে মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরলেন। তখনো শেষ ধাক্কাটা বাকি! জানলাম এই মেয়েটি আর মাত্র কিছুদিন বাঁচতে পারে! মাত্র দুবছর বয়সেই তার হার্টে মারাত্মক রোগটা ধরা পড়েছে। হার্টে ছিদ্র হয়ে গেছে! প্রতি বছর তার আকার বাড়ছে! সেই থেকে তার হতদরিদ্র বাবা-মা সব কিছু বিক্রি করেও মেয়ের চিকিৎসা করাচ্ছেন। কিন্তু সবশেষে ডাক্তাররা বলে দিয়েছেন ওপেন হার্ট সার্জারি ছাড়া তাকে বাঁচানো যাবে না। তার জন্য কমপক্ষে দরকার ৩ লাখ টাকা। কে দেবে টাকা? নেই। কোথাও কেউ নেই! রাস্তার পাশে চা-বিক্রি-করা বাবার কী করার আছে! স্কুলের ওই মিনহাজ মাস্টার আর কিছু মানুষের সাহায্যে কোনোমতে ওষুধ…