ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস (আইসিজে) নামের একটি বেশ ডাকসাইটে পুরোনো সংগঠনও তাদের বিবৃতি দিয়েছে অবশেষে। 'মিরপুরের কসাই' কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডাদেশে তারা ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন। বলেছে এই রায় এবং শাস্তি নাকি আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। এই সংগঠনটিই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ১৯৭২ সালে The Events in East Pakistan, 1971, A Legal Study নামে একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিশাল রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। আসুন এই সংগঠনটিকে একটু চিনি।

ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস (আইসিজে) নামের একটি বেশ ডাকসাইটে পুরোনো সংগঠনও তাদের বিবৃতি দিয়েছে অবশেষে (লিন্ক: http://bit.ly/19ls9Dk)। 'মিরপুরের কসাই' কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডাদেশে তারা ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন। বলেছে এই রায় এবং শাস্তি নাকি আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। বক্তব্যের পক্ষে জাতিসংঘের একটি দলিলের রেফারেন্সও তারা দিয়েছে, বাংলাদেশ যেটির পক্ষ। বলার অপেক্ষা রাখে না -- রেফারেন্সটি ভুল, সেখানে যে বিধানটির উল্লেখ করা হয়েছে সেটির ব্যাখ্যাও ভুল। কেন এবং কিভাবে ভুল সে আলোচনায় এখন যাচ্ছি না, কারণ সে বিষয়ে একটি পৃথক লেখা প্রকাশিত হতে যাচ্ছে শীঘ্রই। বরং আসুন এই সংগঠনটিকে একটু চিনি। আইসিজে নামের এই সংগঠনটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ১৯৭২ সালে একটি বিশাল রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। শিরোনাম ছিল: The Events in East Pakistan, 1971, A Legal Study। বুঝে না বুঝে, কিংবা ভালভাবে না পড়েই অনেককে দেখেছি এই রিপোর্টটিকেই মহার্ঘ্য কিছু একটা বলে ধরে নিতে। এক পর্যায়ে তো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নেতৃস্থানীয় মানুষদের মধ্যেই উক্ত রিপোর্টটি নিয়ে বিভ্রান্তি এমনই এক পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে মুক্তিযুদ্ধের বিদেশী বন্ধুদের সম্মাননা প্রদানের সরকারের যে উদ্যোগ সেখানকার তালিকাতেও কিভাবে কারা যেন আইসিজে-র নামটিও ঢুকিয়ে দিয়েছিল -- বন্ধু সংগঠন হিসেবে! বিষয়টি তখন জানতে পারার সাথে সাথেই আইসিএসএফ (International Crimes Strategy Forum) এর পক্ষ থেকে একটি জরুরী মেমো লিখে সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের সবার কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছিল (মেমোটি এই লিন্ক থেকে পড়ে নেয়া যাবে: bit.ly/hFAcrS। সময়োচিত সে পদক্ষেপের ফলে একটা বড়ো ধরণের বিব্রতকর ঘটনা এড়ানো গিয়েছিল সে যাত্রায়। যা বলছিলাম। আইসিজে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সেই ১৯৭২ সালেই তাদের রিপোর্টে কি বলেছিল জানতে চান? তাহলে শুনুন, অনেকগুলোর মধ্যে মাত্র অল্প কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করছি: (১) ইতিহাস বিকৃতি : ১৯৭১-এ গণহত্যার কথা আইসিজে স্বীকার করেছে ঠিকই, কিন্তু পাকবাহিনীর সুপরিকল্পিত বাঙালী নিধনযজ্ঞের সাথে বিচ্ছিন্ন আকারে ঘটিত বিহারীদের হত্যার পার্থক্য করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছিল আইসিজে। মুক্তিযোদ্ধাদের এবং সেইসাথে মুজিবনগর সরকারকেও একরকম দায়ী করে বসেছিল এই সংগঠনটি। আইসিজে-র ভাষায় -- দু'পক্ষই অপরাধ করেছে। (২) আন্তর্জাতিক আইনের অপব্যাখ্যা: ঠিক এখনকার মতোই তখনও তারা ঝোলা থেকে বের করেছিল আন্তর্জাতিক আইনের কিছু বিধান। আর সে সব বিধানকে কেন্দ্র করে ফতোয়া দিয়েছিল - আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার আওয়ামী…

আলোক-সম্পাতের জায়গায়ও বোধ করি খামতি দেখা যায় | Mood কে ফুটিয়ে তলার জন্য যে ধরনের আলোর প্রয়োজন, তা যেন ছবিটি দেখাতে পারেনা | এই ক্ষেত্রে বেশির ভাগই outdoor shooting — তাই সময় এবং নিসর্গের বৈচিত্র আছে. ভোর, সন্ধ্যেবেলা, বর্ষা, ইত্যাদি বিভিন্ন পটভূমি আসলেও সেই পটভূমি জীবন্ত হয়ে ওঠে না | অথচ যে গল্পটি বলা হচ্ছে, তা প্রায় সম্পূর্ণই প্রকৃতিনির্ভর এবং অবশ্যই বিশেষ ভাবে নদীকেন্দ্রিক | [...]

প্রায়-অসাধারণ স্ক্রিপ্ট, কিছু কিছু জায়গায় ঝকমকে পরিচালনা, কিছু কঠিণ ও অত্যন্ত তীব্র মুহূর্ত সৃষ্টি করা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি ছবি নদীর নাম মধুমতী  | পরিচালক তানভীর মোকাম্মেল| বাংলাদেশ নিয়ে আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি যতই আর্দ্র ও আশাবাদী হোক না কেন, চলচ্চিত্রে আমরা যে পিছিয়ে আছি, এই দুঃখ আমি কোনো সহজ আপ্ত-বাক্যে ভুলতে পারিনা | পিছিয়ে থাকার কারণ বহুবিধ থাকতে পারে, তবে কিছু আবশ্যক কারণ সম্ভবত শব্দ-কারিগরী ও সঙ্গীত পরিচালনার জায়গায় খামতি, অন্তত, এই ছবি দেখে সেই কথাই মনে হয় | সত্যজিত রায়র পথের পাঁচালি-র সঙ্গে কোনো ছবির তুলনা করা উচিত হয়ত হবে না, কারণ সম্ভবত তা এক ধরণের বাড়াবাড়ি বলেই গণ্য হবে | কিন্তু তা না করলেও, আমরা মনে রাখতে চাইব, পথের পাঁচালিকেই আমরা আমাদের মানদন্ড মনে করি | কারিগরী শৈলীর অপ্রতুলতার মধ্যেই সেই ছবি আত্ম-প্রকাশ করেছিল প্রায় আধা-শতাব্দী আগে | কারিগরী যে চলচ্চিত্রের মান নির্ধারণ করেনা, এটি বোধহয় সে কথারই প্রমাণ | Charlie Chaplin এর ছবি গুলিও সেই মতন -- আজকের দিনে ব্যবহার হয় না এমন অনেক কারিগরী ব্যবহার করে, যে মানের ছবি নির্মণ করেছেন তিনি, তা অনুকরণ করাও কঠিন | পৃথিবীতে যে চলচ্চিত্র তৈরী হয়, তার মধ্যে সেরা ছবিগুলির সঙ্গে মিলিয়ে দেখার মত ছবি তৈরী হয়েছে বাংলা ভাষায় | যে শিল্পময়তা এসব ছবিতে আমরা লক্ষ্য করি, সেই স্তরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকেও দেখতে চাইব আমরা | তাই সহজে সন্তুষ্ট না হতে পারা, এক অর্থে, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সম্পর্কে উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও শ্রদ্ধারই নামান্তর | Material বা কাহিনীর বিষয়বস্তুর দিক থেকে মুক্তিযুদ্ধ যে কত শক্তিশালী, তা বলাই বাহুল্য | কথক বা narrator হিসেবে পরিচালক বেশ পরিচ্ছন্ন ভাবে, সুনির্দিষ্ট ভাবে, বাড়তি ভাবাবেগ বর্জন করে সংক্ষিপ্ত ও সহজ সংলাপ ব্যবহার করেছেন | এই গুণ সত্যজিত রায়র ছবিতে আমরা বারবার দেখি | বাংলাদেশের নাট্য-জগতে এহেন ভালো সংলাপের কোনো অভাব দেখা যায় না | অথচ, বাংলাদেশের সিনেমায় যার অভাব বলে আমরা জানি | গল্পের শুরু শেখ মুজিবের ৭ মার্চএর ভাষণের দিকে | শেষ অসমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে | এক মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের হাতে তার সত-পিতা (মুসলিম লীগ করেন এবং পারে এক হিন্দু শিক্ষাবিদকে খুন করার পর তাঁর কন্যাকে অপহরণ করেন)-র মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে |…

আজকে যে প্রক্রিয়ায় জামায়াতিদের ফেইসবুক ব্লগ নিষিদ্ধ করতে বলা হচ্ছে, কালকে তো সেই একই প্রক্রিয়ায় আমার ফেইসবুক ব্লগও সরকার নিষিদ্ধ করতে পারে। তাই আমি প্রথমেই জানান দিয়ে রাখি, নির্বাহী আদেশ, কিংবা মত প্রকাশের অধিকার নিষিদ্ধ করবার দাবি আমার নাই। তবে এই যে রুমী স্কোয়াড আওয়াজ তুলেছে, জামায়াত শিবিরকে নিয়ে আওয়ামী লীগকে আর রাজনীতি করতে দেবে না তারা, নিজেরাই তাদের বাপারে সিদ্ধান্ত নেবে — এটা ভীষণ আশাবাদী হবার মতো দিক। আমি এই স্পিরিটের প্রতি আমার নিরঙ্কুশ সমর্থন জানাচ্ছি। [...]

এবার কিন্তু ফেঁসে গেছে আওয়ামী লীগ। সত্যিই ফেঁসে গেছে। তাদের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার কিন্তু ধরেই নিয়েছিলো; তাদের ভাষ্য অনুযায়ী তরুণ প্রজন্মের সূর্যসন্তান যারা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিদার যেসব ছেলেমেয়ে দেশব্যাপী শাহবাগ বানিয়ে তুলেছে, সেই তারা সবাই আওয়ামী লীগের স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নরম নরম কর্মসূচিই দিতে থাকবে। সরকারের সাথে সুর মিলিয়ে চলবে। সবমিলে এদের সবাইকে ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার’জনিত নির্বাচনী ইস্যুর মধ্যে গিলে খাওয়া যাবে। মোটকথা, দেশব্যাপী গণজাগরণ মঞ্চের সব তরুণদের নিজেদের ভোটের রাজনীতির অঙ্গীভূত করবার স্বপ্ন দেখেছিলো আওয়ামী-নেতৃত্বাধীন জোট। ব্যাপারটা এমন; সরকার আন্তজাতিক চাপ-ঠাপ দেখবে, দেশের মধ্যেকার রাজনৈতিক অবস্থা দেখবে, ভোটের রাজনীতির পক্ষ-বিপক্ষ দেখবে আর সেই মাফিক সিদ্ধান্ত নেবে; ওদিকে শাহবাগ-সহ দেশব্যপী যারা জড়ো হয়েছে, তারা সরকারের সাথেই তাল মিলিয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পারপাজ সার্ভ করবে। এমনটাই চেয়েছিলো তো সরকার। কে না জানে, যুদ্ধাপরাধীরা সরকারের এখনকার নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণের একমাত্র রাজনৈতিক হাতিয়ার, যুদ্ধাপরাধীদের কাঙ্ক্ষিত বিচারটা এইখানে আওয়ামী লীগের কাছে ভোটের রাজনীতির থেকে বেশি কিছু নয়। কিন্তু রাজনীতির বাইরে থাকা হাজারো তরুণতো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কিংবা জামায়াত নিষিদ্ধকরণের দাবিকে নিছক ভোট উৎরাবার হাতিয়ার হিসেবে দেখে না। এটা সত্যিইতো তাদের প্রাণের দাবি। সে-কারণেই আবির্ভাব রুমী স্কোয়াডের আমরণ অনশনের। সে-কারণেই আমার ফেইসবুক বন্ধু স্টেটাস লেখেন: নির্বাচনের আগে `যুদ্ধাপরাধ‘ নামে একটি সেনসেশনাল প্রোডাক্ট বাজারে ছেড়েছে মুক্তিযুদ্ধ ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগ, তবে রুমী স্কোয়াডের জন্য সুবিধা করতে পারছে না। জয় শাহবাগ, জয় বাংলা!-- সাঈফ ইবনে রফিক একটা বিভেদ তবে শুরু হয়েছে এবার সত্যিই। শুরু হয়েছে এমন না। প্রকট হয়েছে। দৃশ্যমান হয়েছে। এই বিভেদ আগে থেকেই ছিলো। সেটা হলো, যুদ্ধাপরাধের বিচার ও জামায়াতি রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রাণের দাবির সাথে যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে রাজনীতির বিভেদ। এই বিভেদই দৃশ্যমান হয়ে রুমি স্কোয়াডের আমরণ অনশনের নামে হাজির হয়েছে দৃশ্যপটে। রুমী স্কোয়াডের সোজা কথা, ভোটের রাজনীতিতে জামায়াত-নিষিদ্ধের হিসেব-নিকেশ করার সুযোগ তারা দেবে না সরকারকে, জামায়াতকে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করতে হবে এটাই তাদের দাবি। নইলে তারা অনশন করেই মরে যাবে! এখানে রাজনীতির নামগন্ধও নেই। এখানে ভোট জেতা-হারার হিসেব-নিকেশও নেই। এখানে আছে পরিচ্ছন্ন আবেগ। মানবতাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে আপাত-মানবিক এক আবেগ। এই আবেগের তাৎপর্য যাই হোক না কেন, এই আবেগের গুরুত্ব বিশাল। এই আবেগ সোজা কথায় ঘোষণা করেছে, সরকারকে আর…

তা হলে বাংলাদেশে এখন ‘দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধ’ শুরু হতে যাচ্ছে? চলছে ‘গণহত্যা’? আর দেখা দিয়েছে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ইসলামের’ দ্বন্দ্ব, যার পরিণতিতে একটি বড় ধরণের সংঘাত আসন্ন?...

তা হলে বাংলাদেশে এখন ‘দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধ’ শুরু হতে যাচ্ছে? চলছে ‘গণহত্যা’? আর দেখা দিয়েছে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ইসলামের’ দ্বন্দ্ব, যার পরিণতিতে একটি বড় ধরণের সংঘাত আসন্ন? এরকমই বলছেন ফরহাদ মজহার। যিনি, তার শিষ্যদের মতানুসারে, একটি ভাবান্দোলনের জন্ম দিয়েছেন। তার এই শিষ্যরা কয়েক বছর হলো বেশ পুলকিত এই ভাবান্দোলন নিয়ে। তবে খোঁজখবর যারা রাখেন, তারা জানেন, ফরহাদের এই শিষ্যরা পুরানো শিষ্য নয়। বার বার ঘরানা বদল করেছেন ফরহাদ মজহার, সে অনুযায়ী তার শিষ্যকুলও পাল্টে গেছে। একদা সক্রিয়ভাবে সিরাজ শিকদারের সর্বহারা পার্টি করতেন কবি হুমায়ন কবির-ফরহাদ মজহার ছিলেন তার বন্ধু ও সহযোদ্ধা। তখনও ফরহাদ বোধকরি শিষ্য সংগ্রহের কাজে পর্যাপ্ত পারদর্শী হয়ে ওঠেননি। সর্বহারা পার্টি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল এবং দলটির হয়ে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন শুধু হুমায়ুন কবির নন, তার ভাই সেলিম কবির এবং বোন আলতামাস বেগমও। তবে ফরহাদ মজহার তখন কোথায় ছিলেন, যুদ্ধ করেছেন কি না, সেটি আমি বলতে পারব না। ১৯৭৩ সালে সর্বহারা পার্টি ‘অভ্যন্তরীন বিতর্কের’ জের ধরে হুমায়ুন কবিরকে হত্যা করে। শোনা যায়, হত্যা করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়েছিল; কিন্তু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে পরিবর্তিত সিদ্ধান্তের খবর পৌঁছার আগেই তারা তাদের দায়িত্ব সম্পন্ন করে ফেলেছিলেন। আহমদ ছফার ডায়েরিতে এরকম ইঙ্গিত রয়েছে, কবিরের হত্যার পেছনে ফরহাদ মজহারের ভূমিকা ছিল। হুমায়ুন কবির হত্যার পরপরই ফরহাদ মজহার উচ্চশিক্ষার্থে যুক্তরাষ্ট্র চলে যান। তবে কারও কারও বক্তব্য, ফরহাদের যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার পরিকল্পনা পূর্ব নির্ধারিত এবং এর সঙ্গে এ হত্যাকাণ্ডের কোনও যোগ নেই। ওই সময় যারা সর্বহারা পার্টি করতেন, তারা হয়তো ফরহাদ মজহারের জীবনের ওই পর্ব সম্পর্কে আমাদের বাড়তি কিছু জানাতে পারবেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরার পর এরশাদের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন চলার সময় ফরহাদ মজহারের নতুন সব শিষ্য জুটতে থাকে। আমার স্মৃতিশক্তি বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে, তবে যতদূর মনে পড়ে, মজদুর পার্টির সঙ্গে ফরহাদ জড়িত ছিলেন, ১৫ দলের ২/১টা সভায়ও তাকে দেখা গেছে মজদুর পার্টির হয়ে কাজ করতে। পরে সেখান থেকে বিদায় নিয়ে তিনি আরও কয়েক জনের সঙ্গে মিলে ‘ফোরাম’ নামের একটি কাঠামো গড়ে তোলেন। পরে এখান থেকে ফোরাম নামের একটি মুখপত্রও বের হয়। ফরহাদ মজহার তখন ফোরামের সভায় ও প্রকাশনায় নিয়মিত বিপ্লব, সংগঠন, মার্কসবাদ ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞানগর্ভ বাণী…

অনেক অনেক দিন আগে, আওয়ামী লীগের ৯৬-২০০১ এর 'কুশাসনে'র সময়ে, এক বন্ধুর সাথে গিয়েছিলাম চট্টগ্রাম ছাত্রলীগের এক সভায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে শিবিরমুক্ত করা যায় সেই নিয়ে আলাপ হচ্ছে,[..]

অনেক অনেক দিন আগে, আওয়ামী লীগের ৯৬-২০০১ এর 'কুশাসনে'র সময়ে, এক বন্ধুর সাথে গিয়েছিলাম চট্টগ্রাম ছাত্রলীগের এক সভায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে শিবিরমুক্ত করা যায় সেই নিয়ে আলাপ হচ্ছে, ছাত্রলীগ নেতার নাম ধাম কিছুই মনে নেই, কিন্তু কি বলেছিল সেটা এখনো মনে আছে, সে বলেছিল শিবির হচ্ছে তোমাদের স্কুলে পড়া Bogus Boo এর মত, রাতে একা পেয়ে গলা কেটে, সেই গল্প শুনিয়ে সবাইকে ভয়ে ভয়ে রাখতে চায়। বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে গেলে দেখবে শিবির এমন কিছু নয়। শাহবাগের আন্দোলনের এই পটভূমিতে জামাত নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে বিভিন্ন টক শোতে বিশেষজ্ঞদের জামাত শিবির নিষিদ্ধ হলে আন্ডার গ্রাউন্ডে গিয়ে কি করবে না করবে এই নিয়ে মহা ভীত হতে দেখা যাচ্ছে। মিশরে, সিরিয়ায়, ইরানে এবং তুরানে ইসলামী পার্টি নিষিদ্ধ করে কি বাজে ফলাফল হয়েছিল সেই বিষয়ে জ্ঞান দিয়ে যাচ্ছেন। বাজিয়ে যাচ্ছেন সেই ভাঙ্গা রেকর্ড, জামাতকে "রাজনৈতিক" এবং "সাংস্কৃতিক" ভাবে মোকাবেলা করতে হবে। এই "রাজনৈতিক" এবং "সাংস্কৃতিক" লড়াইয়ের মানে হচ্ছে বর্ষীয়ান সাংবাদিক এ বি এম মুসা দিগন্ত টিভিতে বলে যাবেন ষাট দশকের উত্তাল দিনগুলোর কথা, বঙ্গবন্ধু তাঁকে সঙ্গে নিয়ে কতবার নাস্তা খেয়েছেন আর কত শলা পরামর্শ করেছেন। চলতে থাকবে বিএনপি আর আওয়ামী লীগের নেতাদের সৌহার্দপূর্ণ আলাপ (শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু বলে সম্বোধন করার ঢংও আজকাল কিছু কিছু বিএনপি নেতা করছেন)। দিগন্ত টিভি, নয়া দিগন্ত, ইবনে সিনা আর ইসলামী ব্যাঙ্কের ব্যবসা চলতেই থাকবে, ব্যবসার টাকায় দেওয়া হবে শিবির কর্মীদের মাসোহারা, রগ কাটার ট্রেনিং থেকে শুরু করে ইংল্যান্ডে ব্যারিস্টারি পড়ানো, সব ব্যবস্থাই সে টাকায় হবে। শিবিরকে 'রাজনৈতিক' ভাবে মোকাবেলার দায়িত্বটা অবশ্য ছেড়ে দেওয়া হবে মফস্বলের চাঁদাবাজ, শিক্ষকের গায়ে হাত তোলা ছাত্রলীগের হাতে। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছাত্রলীগের কিশোর কর্মীর রগ বা কবজি বা গলা কাটা চলতে থাকবে, বদলা নিয়ে ফেরারি হবে ছাত্রলীগের আরেক কর্মী। শিবির শাসিত কলেজে সাহস করে রবীন্দ্র সঙ্গীত গাওয়া তরুণীকে দেওয়া হবে গণধর্ষণের হুমকি। রগকাটার খবর সাহস করে পত্রিকায় পাঠাবে না প্রথম আলোর মফস্বল প্রতিবেদক (ডাইনিঙের খাবার খারাপ হলে ছাত্রলীগের জানালা ভাঙ্গার খবর অবশ্য নিয়মিত ভাবেই আসবে)। ফিরে আসি Bogus Boo তত্ত্বের ছাত্রলীগ নেতার প্রসঙ্গে। সেই আওয়ামী 'ফ্যাসিবাদী' আমলে 'ফ্যাসিবাদী' পুলিশের তেমন কোন সাহায্য ছাড়াই অল্প কিছু সশস্ত্র…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.