মহিউদ্দিন আহমদকে জানি তাঁর একটি লেখার মাধ্যমে, তাও খুব সীমিত পর্যায়ে। গত বছর জুন ২, ২০১৩ তারিখে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় তাঁর “তাহের-জিয়া ও ৭ নভেম্বরের সাতকাহন” [১] রচনাটি চোখে পড়ে। লেখাতে ব্যাপক তথ্যগত ভুল লক্ষ্য করি এবং তার কিছুদিন পর “‘তাহের-জিয়া ও ৭ নভেম্বরের সাতকাহন’ - একটি সতর্ক পর্যালোচনা” [২] রচনায় ভুলগুলো বিডিনিউজ২৪-এর পাঠকদের সামনে তুলে ধরি। মহিউদ্দিন আহমদ তাঁর রচনার শেষে নিজেকে পরিচয় দিয়েছিলেন ‘লেখক ও গবেষক’ হিসেবে। মনে মৃদু আশা ছিল জনাব আহমদ আমার লেখার জবাব দেবেন। একজন প্রকৃত গবেষক তাঁর লেখার সমালোচনার জবাব সাধারণত দিয়ে থাকেন কারণ তা সত্য অনুসন্ধান প্রক্রিয়ার একটি অংশ বলেই বিবেচিত। তিনি জবাব দেননি। পরবর্তী মাসগুলোতে মহিউদ্দিন আহমদের লেখা আর তেমন পড়া হয়নি। এ বছর জুলাই মাসে প্রথম আলোর ঈদ সংখ্যায় জনাব আহমদের রচনা “৭ নভেম্বরের সাত-সতেরো”[৩] প্রকাশিত হয়। এর পরপরই চলতি বছরের জুলাই ১৫, আগস্ট ১২, ১৩, ১৪ ও ২৫ তারিখে প্রথম আলো পত্রিকায় জনাব আহমদের জাসদ-তাহের সংক্রান্ত আরো পাঁচটি লেখা প্রকাশিত হয়। [৪] মনোযোগ দিয়ে সেগুলো পড়েছি। গত বছরের লেখার মত এবারো তিনি বহু ভুল তথ্য উপস্থাপন করেছেন। সেগুলোকে চিহ্নিত করাই আজকের লেখার মূল লক্ষ্য। একই সাথে জনাব আহমদ যে একটি মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ‘রাজনৈতিক ন্যারেটিভ’ চালু করার উদ্দেশ্যে তাহের ও জাসদ সম্পর্কে উপরে বর্ণিত লেখাগুলো লিখেছেন, সেই বিষয়েও আলোচনা করবো। মূল আলোচনায় যাওয়ার পূর্বে ‘লেখক ও গবেষক’ মহিউদ্দিন আহমদ সম্পর্কে অনলাইনে অনুসন্ধান চালিয়ে যা জানতে পেরেছি তা পাঠকদের সামনে তুলে ধরছি। ফেইসবুকের একটি থ্রেডে ডাকসু’র প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক ড. মুশতাক হোসেন জানাচ্ছেন যে মহিউদ্দিন আহমদ এক সময় জাসদ করতেন। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি গণকন্ঠ পত্রিকা ও বিপ্লবী গণবাহিনীর সদস্য ছিলেন। ৮০’র দশকে জাসদের ভাঙ্গনের পর তিনি সরাসরি রাজনীতি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেন। আরও জেনেছি তিনি এনজিও-র সাথে দীর্ঘ সময় ধরে যুক্ত। ‘লেখক ও গবেষক’ জনাব আহমদের ‘গবেষণা’ সম্পর্কে জানতে চেয়েছি। গত বছর “তাহের-জিয়া ও ৭ নভেম্বরের সাতকাহন” রচনায় তিনি রায় দিয়েছেন, “৭ নভেম্বর ও তার আগে ও পরের তাহেরকে আমরা প্রথম পাই লরেন্স লিফশুলজের লেখা বাংলাদেশ অ্যান আনফিনিশড রেভল্যুশন গ্রন্থে। এটাও ইতিহাস নয়। ইতিহাস লেখা খুব সহজ কাজ নয়।”…

আজকাল অনেক বাংলাদেশীকেই ছুটি কাটাতে মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুরে যেতে দেখা যায় (একটু আগেই ঢাকা বিমানবন্দরের ফ্লাইট-সূচিতে দেখলাম আজ সিঙ্গাপুর গামী ফ্লাইটের সংখ্যা ছয়।) এরা বিদেশে গিয়ে হোটেলে থাকা [..]

আজকাল অনেক বাংলাদেশীকেই ছুটি কাটাতে মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুরে যেতে দেখা যায় (একটু আগেই ঢাকা বিমানবন্দরের ফ্লাইট-সূচিতে দেখলাম আজ সিঙ্গাপুর গামী ফ্লাইটের সংখ্যা ছয়।) এরা বিদেশে গিয়ে হোটেলে থাকা, ঘোরাঘুরি আর কেনাকাটাতে সব মিলিয়ে কত টাকা খরচ করেন সেটার হিসাব কোথাও পেলাম না। তবে এর পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকার কম নয় সেটা বোঝাই যাচ্ছে। তাঁরা এসব প্লেজার ট্রিপ কাটছাঁট করে সহজেই প্রায় হাজার কোটি টাকা দান খায়রাত করতে পারেন এবং তাতে দেশের অনেক দরিদ্রেরই নানা চাহিদা মিটে যায়। তাঁরা সেটা করেন না এবং এই নিয়ে ফেসবুকে কেউকে অভিযোগও করতে দেখিনি। তবে বাংলাদেশ সরকার আজ বিভিন্ন কর্পোরেশন থেকে ৫০ কোটি চাঁদা নিয়ে যে সমবেত জাতীয় সঙ্গীতের আয়োজন করলো তাতে গত কয়েকদিনে ফেসবুকে নিন্দার ঝড় বয়ে গেছে। এই ৫০ কোটি টাকায় কতজন গরীবকে দু বেলা খাওয়ানো যেতো, কতটা স্কুল দেওয়া যেতো এই জাতীয় হিসাব অনেকেই দিচ্ছেন। এত যজ্ঞ করে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার কি আছে, দেশপ্রেম ভেতর থেকে আসতে হবে, জাতীয় সঙ্গীত যার গাওয়ার সে মনে থেকেই গাইবে, এমন সব কথা বলা হচ্ছে। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে যারা এই ঘটা করে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া পছন্দ করছেন না তাঁরা জাতীয় সঙ্গীত মনে মনেও গাইতে পছন্দ করেন না। আর যারা জাতীয় সঙ্গীত মনে মনে বা গুন গুনিয়ে গাইতে ভালবাসেন, তারা ৫০ কোটি টাকা 'অপচয়ের' এই মহাযজ্ঞে খুশিই হয়েছেন। কিশোর বয়সে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে ৫ বছর কাটিয়েছি, এর মধ্যে খুব বেশী হলে ৫ দিন জাতীয় সঙ্গীত গেয়েছি। পরে জেনেছি স্কুলের জামাতি শিক্ষকেরা নানা ছুতায় এসেম্বলি এবং জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া আটকে দিতেন। যে স্কুলে নিয়মিত জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় সেখানে কি শিবির-কর্মী রিক্রুটমেন্ট কঠিন হয়ে পড়ে? আমার ধারণা কঠিন হয়ে পড়ে। 'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি', এই গান প্রতিদিন সকালে গেয়ে শিবির কর্মী হয়ে যাওয়া এবং হয়ে থাকা খুব সহজ নয়। কোন স্কুল পড়ুয়া কিশোরের পক্ষে সকাল বিকাল এই কালচারাল শিফট সহ্য করা বেশ কঠিন। জামাত শিবিরের জাতীয় সঙ্গীতে এলার্জির ব্যাপারটা বোধগম্য, বামপন্থীরাও কিন্তু এই গান নিয়ে খুব স্বচ্ছন্দ নন। একে তো রবীন্দ্রনাথ এসেছেন 'শোষক জমিদার শ্রেণী' থেকে, তিনি নিজের গানে নিজের শ্রেণী চরিত্রই প্রকাশ করবেন,…

[...] ব্যথার সীমা দিয়ে এইভাবে দেশও চেনা যায়, বাংলা নামের দেশ, বাংলাদেশ। এই এত্তটুকুন নাম, অর্ধশতকও হয়নি তার স্বাধীনতালাভের, এত্তটুকুন দেশ (ফুলবাতাসা-পালের নাও-তেঁতুলতলা-শাপলাপুকুরের দেশ), কিন্তু হাজার মাইল দূরের কত ছেলেমেয়েদের মনে চুপচাপ বসে থাকে এই দেশ। আওয়াজ করে না, নড়াচড়াও না, শুধু মাঝে মাঝে ভিতরে মুচড়ে দেয় ব্যথার সীমানা, আমরা বুঝতে পারি ঐ যে আমার দেশ, ঐ যে আমার দেশের ইতিহাস, ভয়াল গণহত্যার আর গণধর্ষণের এবং তারপর আবার উঠে দাঁড়ানোর। [...]

আমার ছোট্ট ছেলে জন্মাবার পর জীবনের একপর্যায় থেকে নিজের শরীরের নানান অংশ নিজেই টেনে ব্যথা পেয়ে চিৎকার দিত, এমন করে সে চিনেছিল নিজের শরীরের সীমা। কোথায় লাগলে নিজের শরীরে বাজে এমন করে। এইভাবে মানবশিশু হাতড়ে হাতড়ে ব্যথার সীমানা দিয়ে নিজের আকার আবিষ্কার করে সেটা দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম আমি। ব্যথার সীমা দিয়ে এইভাবে দেশও চেনা যায়, বাংলা নামের দেশ, বাংলাদেশ। এই এত্তটুকুন নাম, অর্ধশতকও হয়নি তার স্বাধীনতালাভের, এত্তটুকুন দেশ (ফুলবাতাসা-পালের নাও-তেঁতুলতলা-শাপলাপুকুরের দেশ), কিন্তু হাজার মাইল দূরের কত ছেলেমেয়েদের মনে চুপচাপ বসে থাকে এই দেশ। আওয়াজ করে না, নড়াচড়াও না, শুধু মাঝে মাঝে ভিতরে মুচড়ে দেয় ব্যথার সীমানা, আমরা বুঝতে পারি ঐ যে আমার দেশ, ঐ যে আমার দেশের ইতিহাস, ভয়াল গণহত্যার আর গণধর্ষণের এবং তারপর আবার উঠে দাঁড়ানোর। কমলা কালেকটিভের ‘বীরাঙ্গনা’ দেখতে গিয়েছিলাম, মরিয়মের গল্প, পরে খুশি-মায়া-মেহেরের গল্প, আরো পরে কালো পর্দা জুড়ে এক এক করে ফুটে ওঠা টকটকে লাল হরফে বীরাঙ্গনাদের নাম, বাহাতুন-জয়গুন-শামসুন্নাহার-রাজুবালা-গুরুদাসীদের নাম... সেই নামগুলোই বিধুর গল্প। আহা, পানির নিচে জোঁকের—জলজ ফুলের মৃণালের—মাছের ভাই ভাই হয়ে নাক ভাসিয়ে থাকা গর্ভিণী নারীর গল্প। শুকনো পুকুরে লুকাবার চেষ্টা করা নারীর গল্প। মায়ের গায়ে আগরবাতির মিষ্টি গন্ধ শোঁকা মেয়েশিশুর গল্প। তেঁতুলগাছে উঠে দুরন্তপনা করতে গিয়ে প্রেম আবিষ্কার করা কিশোরীর গল্প, মাথায় চালের বস্তা আর কাঁখে শিশুসন্তান নিয়ে ভারতে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করা নারীর গল্প। লোককাহিনীর রাজকন্যা কমলার শুষ্ক সরোবরে জল আনতে গিয়ে আত্মাহুতি দেবার গল্প। শো’র উদ্বোধন করতে গিয়ে স্বনামধন্য বৃটিশ-বাংলাদেশী নৃত্যশিল্পী আকরাম খান স্মরণ করেন মার্টিন লুথার কিং-এর অমোঘ বাণী — “দেয়ার কামস আ টাইম হোয়েন সাইলেন্স ইজ বিট্রেয়াল”, এর চেয়ে সংক্ষেপে বাঙালি হিসেবে আমাদের ব্যর্থতাকে বোধহয় তুলে ধরা যায় না। বীরাঙ্গনারা ফিরে এসেছিলেন পাকবাহিনী ও তার দোসরদের পরিখা থেকে — ক্যাম্প থেকে, যেমন করে ফিরে এসেছিলেন যুদ্ধজয়ী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা। বীরাঙ্গনাদের কাউকে কাউকে তাঁদের পরিবার ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করেছিলেন — তাঁরা চলে গেছেন অজানার পথে—অচেনা গ্রামে—পতিতালয়ে, আর কাউকে কাউকে তাঁদের পরিবার গ্রহণ করেছিলেন একটিমাত্র শর্তে, সে শর্তের নাম নৈঃশব্দ্য। জন্মান্ধ যেমন আমৃত্যু অন্ধকার এক পৃথিবীতে সাঁতরে ফেরে, বীরাঙ্গনাদের অনেকে তেমনি এক অন্ধকার নৈঃশব্দ্যে সাঁতরে ফিরেছেন, তাঁদের মৃত্যুর সাথে সাথে তাঁদের…

দেশ এবং দেশের বাইরে যত মিডিয়া এবং পত্রিকার প্রতিনিধিরা রয়েছেন, আশা করি তারা বিষয়গুলো আরও গভীরতার সাথে বিবেচনায় আনবেন। কারণ, বিচারের বিপক্ষ শক্তির রয়েছে লাখো ডলারের প্রচারযন্ত্র। তাই তাদের মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিপূর্ণ তথ্য প্রচারের কাজটুকুতে ১৯৭১ এর বিচারের পক্ষের মানুষের সক্রিয় সাহায্যের প্রয়োজনীয়তা দেখি না [..]

এ বছর শীত একটু দেরীতে আসলেও নভেম্বর মাসের শেষের দিকে এসে এখন বেশ জাঁকিয়ে বসেছে। সেই শীতকে উপেক্ষা করে গণতন্ত্রের পীঠস্থান ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে একে একে সমবেত হয়েছিলেন আজ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে থাকা ১৯৭১ এর বিচারপ্রার্থী মানুষেরা। ৭৫টি প্রগতিশীল সংগঠনের মোর্চা 'আইসিটি সাপোর্ট ফোরাম' এর ডাকে সাড়া দিয়ে আজ সবাই একত্রিত হয়েছিলেন একটিমাত্র দাবীকে তুলে ধরতে, আর তা হল - আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে দোষী সাব্যস্ত এবং সাজাপ্রাপ্ত পলাতক যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মুঈনউদ্দিনকে যেন অবিলম্বে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এই পোস্টটির বিষয়বস্তু আজকের সমাবেশ নিয়ে নয়, চৌধুরী মুঈনউদ্দিন নিয়ে। ১৯৭১ এর ইতিহাস জানেন এমন কারও কাছেই আল-বদর কমানড্ার মুঈনউদ্দিনের বুদ্ধীজীবি হত্যাকান্ডে সরাসরি ভূমিকার কথা অজ্ঞাত নয় তাই সে পূনরাবৃত্তিমূলক আলোচনায় এখন যাচ্ছি না। আরও একটি কারণেও সে আলোচনা এখন নিষ্প্রয়োজন, আর তা হল - মুঈনউদ্দিনের অপরাধের বিষয়গুলো এখন আর কেবল 'কথিত' কিংবা 'অভিযোগ' এর পর্যায়ে নেই; আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে ভিকটিম পরিবারের সদস্যদের এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যে এখন তা আইনগতভাবেও প্রমাণিত সত্যে পরিণত হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, সাক্ষী নিজে যদি প্রত্যক্ষদর্শী হন, তাহলে তার সাক্ষ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আর সে প্রত্যক্ষদর্শী যদি নিজেও ভিকটিম হন, তাহলে সে সাক্ষ্যের গুরুত্ব আর সব কিছুকে ছাপিয়ে যায়, যা মুঈনউদ্দিনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যের ক্ষেত্রে ঘটেছে। মুঈনউদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলায় যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাদের মধ্যে এমন সরাসরি প্রত্যক্ষদর্শী ভিকটিম সাক্ষীও রয়েছেন (সূত্র: এখানে এবং ট্রাইবুনালের রায় দ্রষ্টব্য)। এই পোস্টটি মুঈনুদ্দিনকে বাংলাদেশে হস্তান্তর সংক্রান্ত আইনী-কূটনৈতিক জটিলতা, কিংবা ব্রিটিশ প্রশাসনের দিক থেকে প্রায় দুই দশকেরও বেশী সময় ধরে নানা দেশের যুদ্ধাপরাধীদের লালন করা নিয়েও নয়। এই পোস্টের বিষয়বস্তু - লন্ডনে বিডিনিউজ২৪ প্রতিনিধি সৈয়দ নাহাস পাশার নেয়া চৌধুরী মুঈনউদ্দিনের একটি 'এক্সক্লুসিভ' সাক্ষাৎকার। সাফাইমূলক এই সাক্ষাৎকারটির লাইনে লাইনে মিথ্যাচার এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করবার চেষ্টা - মূলত সে কারণেই এই পোস্টটি লিখতে হচ্ছে। এই সাক্ষাৎকারটির প্রতিটি লাইন ধরে আলোচনার পরিবর্তে মূলত কয়েকটি প্রধান মিথ্যাচার এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টির প্রয়াসকে সচেতন পাঠকের কাছে তুলে ধরাটাই যথেষ্ট বলে মনে করছি। ১. স্বঘোষিত এক 'মৃত্যুঞ্জয়ী মহাপুরুষ' এর অসংলগ্ন বয়ান সাক্ষাৎকারটিতে একদিকে মুঈনউদ্দিন যেমন একের পর এক দম্ভোক্তি করে গেছেন, অন্যদিকে প্রমাণিত এবং সর্বজনবিদিত কিছু সত্যকে তার বিকৃতভাবে উপস্থাপনের চেষ্টাটাও লক্ষণীয়।…

ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস (আইসিজে) নামের একটি বেশ ডাকসাইটে পুরোনো সংগঠনও তাদের বিবৃতি দিয়েছে অবশেষে। 'মিরপুরের কসাই' কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডাদেশে তারা ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন। বলেছে এই রায় এবং শাস্তি নাকি আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। এই সংগঠনটিই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ১৯৭২ সালে The Events in East Pakistan, 1971, A Legal Study নামে একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিশাল রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। আসুন এই সংগঠনটিকে একটু চিনি।

ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস (আইসিজে) নামের একটি বেশ ডাকসাইটে পুরোনো সংগঠনও তাদের বিবৃতি দিয়েছে অবশেষে (লিন্ক: http://bit.ly/19ls9Dk)। 'মিরপুরের কসাই' কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডাদেশে তারা ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন। বলেছে এই রায় এবং শাস্তি নাকি আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। বক্তব্যের পক্ষে জাতিসংঘের একটি দলিলের রেফারেন্সও তারা দিয়েছে, বাংলাদেশ যেটির পক্ষ। বলার অপেক্ষা রাখে না -- রেফারেন্সটি ভুল, সেখানে যে বিধানটির উল্লেখ করা হয়েছে সেটির ব্যাখ্যাও ভুল। কেন এবং কিভাবে ভুল সে আলোচনায় এখন যাচ্ছি না, কারণ সে বিষয়ে একটি পৃথক লেখা প্রকাশিত হতে যাচ্ছে শীঘ্রই। বরং আসুন এই সংগঠনটিকে একটু চিনি। আইসিজে নামের এই সংগঠনটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ১৯৭২ সালে একটি বিশাল রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। শিরোনাম ছিল: The Events in East Pakistan, 1971, A Legal Study। বুঝে না বুঝে, কিংবা ভালভাবে না পড়েই অনেককে দেখেছি এই রিপোর্টটিকেই মহার্ঘ্য কিছু একটা বলে ধরে নিতে। এক পর্যায়ে তো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নেতৃস্থানীয় মানুষদের মধ্যেই উক্ত রিপোর্টটি নিয়ে বিভ্রান্তি এমনই এক পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে মুক্তিযুদ্ধের বিদেশী বন্ধুদের সম্মাননা প্রদানের সরকারের যে উদ্যোগ সেখানকার তালিকাতেও কিভাবে কারা যেন আইসিজে-র নামটিও ঢুকিয়ে দিয়েছিল -- বন্ধু সংগঠন হিসেবে! বিষয়টি তখন জানতে পারার সাথে সাথেই আইসিএসএফ (International Crimes Strategy Forum) এর পক্ষ থেকে একটি জরুরী মেমো লিখে সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের সবার কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছিল (মেমোটি এই লিন্ক থেকে পড়ে নেয়া যাবে: bit.ly/hFAcrS। সময়োচিত সে পদক্ষেপের ফলে একটা বড়ো ধরণের বিব্রতকর ঘটনা এড়ানো গিয়েছিল সে যাত্রায়। যা বলছিলাম। আইসিজে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সেই ১৯৭২ সালেই তাদের রিপোর্টে কি বলেছিল জানতে চান? তাহলে শুনুন, অনেকগুলোর মধ্যে মাত্র অল্প কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করছি: (১) ইতিহাস বিকৃতি : ১৯৭১-এ গণহত্যার কথা আইসিজে স্বীকার করেছে ঠিকই, কিন্তু পাকবাহিনীর সুপরিকল্পিত বাঙালী নিধনযজ্ঞের সাথে বিচ্ছিন্ন আকারে ঘটিত বিহারীদের হত্যার পার্থক্য করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছিল আইসিজে। মুক্তিযোদ্ধাদের এবং সেইসাথে মুজিবনগর সরকারকেও একরকম দায়ী করে বসেছিল এই সংগঠনটি। আইসিজে-র ভাষায় -- দু'পক্ষই অপরাধ করেছে। (২) আন্তর্জাতিক আইনের অপব্যাখ্যা: ঠিক এখনকার মতোই তখনও তারা ঝোলা থেকে বের করেছিল আন্তর্জাতিক আইনের কিছু বিধান। আর সে সব বিধানকে কেন্দ্র করে ফতোয়া দিয়েছিল - আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার আওয়ামী…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.