চৌধুরী মুঈনউদ্দিনের একান্ত সাফাই সাক্ষাৎকার : বিভ্রান্তির প্রশ্নহীন প্রচার

দেশ এবং দেশের বাইরে যত মিডিয়া এবং পত্রিকার প্রতিনিধিরা রয়েছেন, আশা করি তারা বিষয়গুলো আরও গভীরতার সাথে বিবেচনায় আনবেন। কারণ, বিচারের বিপক্ষ শক্তির রয়েছে লাখো ডলারের প্রচারযন্ত্র। তাই তাদের মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিপূর্ণ তথ্য প্রচারের কাজটুকুতে ১৯৭১ এর বিচারের পক্ষের মানুষের সক্রিয় সাহায্যের প্রয়োজনীয়তা দেখি না [..]

এ বছর শীত একটু দেরীতে আসলেও নভেম্বর মাসের শেষের দিকে এসে এখন বেশ জাঁকিয়ে বসেছে। সেই শীতকে উপেক্ষা করে গণতন্ত্রের পীঠস্থান ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে একে একে সমবেত হয়েছিলেন আজ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে থাকা ১৯৭১ এর বিচারপ্রার্থী মানুষেরা। ৭৫টি প্রগতিশীল সংগঠনের মোর্চা ‘আইসিটি সাপোর্ট ফোরাম’ এর ডাকে সাড়া দিয়ে আজ সবাই একত্রিত হয়েছিলেন একটিমাত্র দাবীকে তুলে ধরতে, আর তা হল – আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে দোষী সাব্যস্ত এবং সাজাপ্রাপ্ত পলাতক যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মুঈনউদ্দিনকে যেন অবিলম্বে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এই পোস্টটির বিষয়বস্তু আজকের সমাবেশ নিয়ে নয়, চৌধুরী মুঈনউদ্দিন নিয়ে।

১৯৭১ এর ইতিহাস জানেন এমন কারও কাছেই আল-বদর কমানড্ার মুঈনউদ্দিনের বুদ্ধীজীবি হত্যাকান্ডে সরাসরি ভূমিকার কথা অজ্ঞাত নয় তাই সে পূনরাবৃত্তিমূলক আলোচনায় এখন যাচ্ছি না। আরও একটি কারণেও সে আলোচনা এখন নিষ্প্রয়োজন, আর তা হল – মুঈনউদ্দিনের অপরাধের বিষয়গুলো এখন আর কেবল ‘কথিত’ কিংবা ‘অভিযোগ’ এর পর্যায়ে নেই; আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে ভিকটিম পরিবারের সদস্যদের এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যে এখন তা আইনগতভাবেও প্রমাণিত সত্যে পরিণত হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, সাক্ষী নিজে যদি প্রত্যক্ষদর্শী হন, তাহলে তার সাক্ষ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আর সে প্রত্যক্ষদর্শী যদি নিজেও ভিকটিম হন, তাহলে সে সাক্ষ্যের গুরুত্ব আর সব কিছুকে ছাপিয়ে যায়, যা মুঈনউদ্দিনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যের ক্ষেত্রে ঘটেছে। মুঈনউদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলায় যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাদের মধ্যে এমন সরাসরি প্রত্যক্ষদর্শী ভিকটিম সাক্ষীও রয়েছেন (সূত্র: এখানে এবং ট্রাইবুনালের রায় দ্রষ্টব্য)। এই পোস্টটি মুঈনুদ্দিনকে বাংলাদেশে হস্তান্তর সংক্রান্ত আইনী-কূটনৈতিক জটিলতা, কিংবা ব্রিটিশ প্রশাসনের দিক থেকে প্রায় দুই দশকেরও বেশী সময় ধরে নানা দেশের যুদ্ধাপরাধীদের লালন করা নিয়েও নয়। এই পোস্টের বিষয়বস্তু – লন্ডনে বিডিনিউজ২৪ প্রতিনিধি সৈয়দ নাহাস পাশার নেয়া চৌধুরী মুঈনউদ্দিনের একটি ‘এক্সক্লুসিভ’ সাক্ষাৎকার। সাফাইমূলক এই সাক্ষাৎকারটির লাইনে লাইনে মিথ্যাচার এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করবার চেষ্টা – মূলত সে কারণেই এই পোস্টটি লিখতে হচ্ছে। এই সাক্ষাৎকারটির প্রতিটি লাইন ধরে আলোচনার পরিবর্তে মূলত কয়েকটি প্রধান মিথ্যাচার এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টির প্রয়াসকে সচেতন পাঠকের কাছে তুলে ধরাটাই যথেষ্ট বলে মনে করছি।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে বিচারপ্রার্থী জনতার সমাবেশ (২৭ /১১ / ২০১৩)

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে বিচারপ্রার্থী জনতার সমাবেশ (২৭ /১১ / ২০১৩)

১. স্বঘোষিত এক ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মহাপুরুষ’ এর অসংলগ্ন বয়ান

সাক্ষাৎকারটিতে একদিকে মুঈনউদ্দিন যেমন একের পর এক দম্ভোক্তি করে গেছেন, অন্যদিকে প্রমাণিত এবং সর্বজনবিদিত কিছু সত্যকে তার বিকৃতভাবে উপস্থাপনের চেষ্টাটাও লক্ষণীয়। একদিকে তিনি প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসের সাথে মন্তব্য করছেন – ‘বিচারক ও তাদের চ্যালাচামুণ্ডারা নিজেরা উল্টো ঝুলে পড়লেও আমাকে ঝোলাতে পারবে না’, অন্যদিকে একবার দাবী করছেন ‘আমাকে মামলার নোটিশই দেয়া হয়নি’, তো আরেকবার বলে বসছেন ‘আমার তো কোনো আইনজীবিই ছিল না’!

আবার তিনি নিজেকে একজন মুসলমান হিসেবে উল্লেখ করে অতীতের সব ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মহাপুরুষদের’ সাথে নিজেই নিজেকে দিব্যি এক কাতারে দাঁড় করিয়ে ফেলছেন, আর বলছেন – ‘হায়াৎ-মওত, জীবন-মৃত্যুর সিদ্ধান্ত জমিনে হয় না, আসমানে হয়।’ অর্থাৎ, বিধাতার যদি অভিপ্রায় হয়ে থাকে তার ফাঁসীকাষ্ঠে মৃত্যু হবে না, তাহলে কোনো শক্তিই তাকে সেখানে নিতে পারবে না। বিধাতার বিচােরর উপর মুঈনউদ্দিনের অগাধ আস্থা থাকতেই পারে, তাতে দোষের কিছু দেখি না, সমস্যা হল, তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে তাকে এই ধরাধামেই সাক্ষাৎকার দিয়ে বিভ্রান্তিমূলক অপ-প্রচার করতে হয় কেন? এই বিষয়টিও বিধাতার হাতেই ছেড়ে দিলে পারতেন হয়তো চৌধুরী মুঈনউদ্দিন। আর জীবন-মৃত্যুর সিদ্ধান্ত যদি মুঈনউদ্দিনের কথামতো ‘জমিনে না হয়ে আসমানেই’ হয়ে থাকে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে ১৯৭১ এর নিহত বুদ্ধিজীবি, ৩০ লাখ শহীদ, কিংবা ধর্ষিতা-নির্যাতিতারা তাহলে কার হাতের ভিকটিম ছিল? পাকিস্তানী মিলিটারি আর তাদের দোসর জামায়াত, শান্তি কমিটি, আল-বদর, আল-শামসদের? নাকি স্বয়ং বিধাতার? আশা করি বিষয়টি নিয়ে মুঈনউদ্দিন আরেকটু গভীরভাবে ভাববেন। বলতে বাধ্য হচ্ছি – মুঈনউদ্দিনের এই মন্তব্যগুলো চিন্তায় সংলগ্ন মানুষের লক্ষণ বহন করে না, যাই হোক তা নিয়ে আমাদের ভাবিত হওয়ার প্রয়োজন দেখি না। বরং মনোনিবেশ করা যাক এই সাফাই সাক্ষাৎকারটিতে তার প্রদত্ত বক্তব্যের অসঙ্গতিগুলোতে।

২. আদালতের সমন, ওয়ারেন্ট এবং নোটিশ বিষয়ক মিথ্যাচার

সাক্ষাৎকারে চৌধুরী মুঈনউদ্দিন দাবি করছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল নাকি কোনোদিন তার কাছে অথবা তার উকিলদের কাছে কোনো ধরনের নোটিস জারি করেনি, চেষ্টাও নাকি করেনি। এমনকি দূতাবাসের মাধ্যমে বা সরাসরি তার বা তার দেশের ঠিকানায়, কোনোভাবেই নাকি যোগাযোগ করা হয়নি।

মুঈনউদ্দিনের এই দাবী সত্য নয়।

পলাতক আসামীর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইবুনালস) আইন ১৯৭৩ এর যে বিধি, তাই অনুসরণ করা হয়েছে চৌধুরী মুঈনউদ্দিনের ক্ষেত্রে। এখানে পলাতককে খুঁজে বের করে বাড়ি বয়ে গিয়ে নোটিশপত্র দিয়ে আসার এই আবদার একেবারেই অযৌক্তিক। সবচেয়ে বড় কথা হল – মুঈনউদ্দিন যদি নির্দোষই হয়ে থাকবেন, তাহলে তিনি নিজের সুনাম অক্ষুন্ন রাখার তাগিদেই নিজ দায়িত্বে ট্রাইবুনালের মুখোমুখি হতেন, হয় ব্যক্তিগতভাবে, নয়তো নিযুক্ত আইনী প্রতিনিধির মাধ্যমে। ট্রাইবুনালে তার বিরুদ্ধে মামলার নোটিশ বিষয়ে মুঈনউদ্দিন যা দাবী করেছেন, আসুন দেখা যাক তা আসলে কতটা ভিত্তিহীন। মুঈনউদ্দিনের মামলার রায়ের ২০-২১ অনুচ্ছেদে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-২ অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বিষয়টি তুলে ধরেছেন, যা মুঈনউদ্দিন সযত্নে তার সাক্ষাৎকারে এড়িয়ে গিয়েছেন। উদ্ধৃত করছি ((আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-২, প্রধান প্রসিকিউটর বনাম চৌধুরী মুঈনউদ্দিন এবং আশরাফুজ্জামান সম্পূর্ণ রায়। ডাউনলোড লিন্ক: http://bit.ly/1aYd2Di)):

(20) [T]he Tribunal, under Rule 29(1) of the Rules of Procedure, took cognizance of offences as mentioned in section 3(2) (a)(b)(g)(h) of the Act of 1973 and issued warrant of arrest for causing appearance of the accused persons as required under Rule 30, by its order dated 02.5.2013.

(21) Dhaka Metropolitan Police (DMP) submitted the execution report before the Tribunal stating that the accused persons could not be arrested as they have already absconded and they are learnt to have left the country since long. In this circumstance, the Tribunal, as required under Rule 31, ordered [order dated 12.5.2013] to publish a notice in two daily newspapers, one in Bangla and another in English asking the accused to appear before this Tribunal within ten (10) days from the date of publication of such notice. Accordingly notice was published in ‘The daily Janakantha’ (Bengali daily) on 14.5.2013 and in ‘The daily Star’ (English daily) on 15.5.2013. But despite publication of such notice the accused persons have not appeared before this Tribunal.

বিষয়টি একেবারেই স্পষ্ট। সহজভাবে বললে – চৌধুরী মুঈনউদ্দিন এবং আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে অপরাধসমূহ আমলে নেয়ার পর ট্রাইবুনাল তাদের দু’জনের বিরুদ্ধেই আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারী করে এবং সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষকে অবগত করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) আসামীদ্বয়কে খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। না পেয়ে তারা ট্রাইবুনালের কাছে সেই মর্মে রিপোর্ট পেশ করে। উক্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে ট্রাইবুনাল বিধি অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করে, আর তা হল জাতীয় একটি ইংরেজী এবং বাংলা পত্রিকায় এই মামলার উম্মুক্ত নোটিশ প্রকাশ। যথারীতি ১৪ এবং ১৫ মে ২০১৩ তারিখে ট্রাইবুনালের আনুষ্ঠানিক নির্দেশক্রমে ((এখানে দেখুন: Staff Correspondent, ‘War Crimes Trial: Publish ad for Mueen-Uddin’s, Ashrafuzzaman’s appearance – ICT-2 directs registrar’s office’, The Daily Star 14 May 2013. http://www.thedailystar.net/beta2/news/publish-ad-for-mueen-uddins-ashrafuzzamans-appearance/)) যথাক্রমে দৈনিক জনকন্ঠ এবং The Daily Star পত্রিকায় সে নোটিশ (public notice) প্রকাশিতও হয়।

সুতরাং, আইন অনুযায়ী এর পর থেকে এই পুরো মামলার বিষয়ে চৌধুরী মুঈনউদ্দিন যথাযথভাবে অবগত বলেই ধরে নিতে হবে। এভাবে ‘নোটিশ পাইনি’ বলে আসামীদের দিক থেকে অনন্তকাল ধরে বিচার ব্যবস্থার সাথে লুকোচুরি-কানামাছি খেলার কোনো অবকাশ আইনে নেই। আর তাছাড়া, উক্ত নোটিশ প্রকাশের পূর্বাপর ইংল্যান্ডসহ পৃথিবীর বিভিন্ন মিডিয়ায় চৌধুরী মুঈন উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলার খবরটি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যার কয়েকটিতে তার নিযুক্ত আইনজীবি এবং তিনি নিজেও সরাসরি মন্তব্য প্রদান করেন। সুতরাং, ‘নোটিশ পাইনি তাই মামলার বিস্তারিত জানি না’ – এমন বলে বিচারের দীর্ঘ হাত এড়ানোর সুযোগ দেখছি না। কারণ, তিনি খুব ভাল করেই জানতেন যে তার বিরুদ্ধে ট্রাইবুনালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সৎসাহস এবং কান্ডজ্ঞান সম্পন্ন যে কোনো নির্দোষ মানুষ তার মোকাবিলা করেন, বিভিন্ন ছুতো নাতায় পালিয়ে বেড়ান না।

chowdhury-mueen-uddin3

৩. নোটিশ নাই, তাই আইনজীবি নাই

সাফাই সাক্ষাৎকারটিতে মুঈনউদ্দিন আরও বলার চেষ্টা করেছেন যে – যেহেতু তিনি ট্রাইবুনালের কাছ থেকে কোনো নোটিশই পাননি, সেহেতু তার পক্ষের আইনজীবি নিয়োগ করার পরিসর তৈরী হয়নি। একজন আসামী তার ন্ূ্যনতম অধিকার রক্ষার্থে আইনজীবি নিয়োগ করতে পারছেন না বা পারেননি, সেটা শুনলে যে কোনো বিবেকবান মানুষেরই হৃদয় আদ্র হবে। কিন্তু সমস্যা হল – মুঈনউদ্দিনের এই কথাটা সত্য নয়, যা উপরে একবার ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আর মুঈনউদ্দিন কোনো আইনজীবিই নিয়োগ করার সুযোগ পাননি – এই দাবীটিও কি সত্যি? একটু খতিয়ে দেখা যাক।

প্রকাশিত সংবাদ থেকে আমরা দেখতে পাই – যখনই মুঈনউদ্দিনের বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট আইনী পদক্ষেপ নিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল, তার প্রতিবারই ব্যারিস্টার টোবি ক্যাডম্যান নামের এক আইনজীবি মিডিয়ার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে মুঈনউদ্দিনের পক্ষ সমর্থন করে পেশাগত মন্তব্য প্রদান করেছেন। কখনো ডেইলী মেইল পত্রিকায়, কখনো গার্ডিয়ানে, কখনো বিবিসিতে, কখনো আল-জাজিরায়। এই মন্তব্যগুলো টোবি ক্যাডম্যান কোন্ ক্ষমতাবলে করেছিলেন আসলে? মুঈনউদ্দিনের নিযুক্ত আইনজীবি হিসেবে? নাকি স্রেফ নিজের বিবেকের তাড়নায়? মজার ব্যাপার হল, ট্রাইবুনাল কর্তৃক মুঈনউদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলার পাবলিক-নোটিশ প্রদানেরও বহু আগে থেকেই টোবি ক্যাডম্যান আসলে তার আনুষ্ঠানিকভাবে নিযুক্ত আইনজীবি হিসেবে দায়িত্বপালন করে আসছেন। যেমন: দি সানডে টেলিগ্রাফ পত্রিকার সাংবাদিক এনড্রু গিলিগানের কাছে টোবি ক্যাডম্যানের লেখা শাসানীমূলক এই চিঠিটির কথাই ধরা যাক, যেটি লেখা হয়েছিল ১৩ এপ্রিল ২০১২ তারিখে, অর্থাৎ ট্রাইবুনালের পাবলিক-নোটিশেরও এক বছর আগে। সেখানে ক্যাডম্যান সরাসরি নিজের পরিচয় দিচ্ছেন এই বলে: “Dear Mr. Gilligan, As you may be aware I am currently advising Mr. Chowdhury Mueen-Uddin and his family on this matter.” ((http://tobycadman.com/index/view/sunday_telegraph_article_by_andrew_gilligan_on_bangladesh_war_crimes_my_ful))। উক্ত চিঠিতে ক্যাডম্যান মুঈনউদ্দিনের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য অভিযোগগুলো আগে থেকেই অস্বীকার করছেন কেবল তা নয়, বরং এই চিঠি থেকে এটাও অত্যন্ত স্পষ্ট যে মুঈনউদ্দিন সম্পূর্ণভাবে অবগত তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে ঠিক কি কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বা ভবিষ্যতে নেয়া হতে পারে। তার নিযুক্ত (?) আইনজীবি ক্যাডম্যান লিখছেন ((http://tobycadman.com/index/view/sunday_telegraph_article_by_andrew_gilligan_on_bangladesh_war_crimes_my_ful)):

“If formal charges are brought, as appears to be the case in light of the comments of the investigator and the Bangladesh Minister for Law, Justice and Parliamentary Affairs, then Mr. Mueen-Uddin may consider issuing a formal response in the appropriate form.”

অর্থাৎ, যদি কখনো ট্রাইবুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়, তাহলে, ক্যাডম্যানের ভাষায়, তার মক্কেল চৌধুরী মুঈনউদ্দিন তখন অবস্থা বুঝে এর প্রত্যুত্তর প্রদানের বিষয়টি ‘বিবেচনা করবেন’ (“may consider”)। সুতরাং, এটা স্পষ্ট যে নোটিশ না পাওয়ায় মামলা লড়া সম্ভব হয়নি, কিংবা নোটিশ না পাওয়ায় আইনজীবিও নিয়োগ করা সম্ভব হয়নি – মুঈনউদ্দিনের এই দু’টো দাবীর কোনোটিই সত্যানুগ নয়। তার বিরুদ্ধে মামলায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রত্যুত্তর দেয়া বা না দেয়ার বিষয়টি পুরোটাই আসলে ছিল মুঈনউদ্দিনের নিজের সিদ্ধান্ত, যদিও তিনি সাফাই সাক্ষাৎকারে সেটিরও দায় ট্রাইবুনালের ওপর চাপানোর প্রয়াস চালিয়েছেন। ঠিক যেভাবে তিনি টোবি ক্যাডম্যানকে নিয়োগ দিয়েছেন তার পক্ষ হয়ে লড়বার জন্য, চাইলে ঠিক একইভাবেই তিনি বাংলাদেশের আর যে কোনো আইনজীবিকেই নিয়োগ দিতে পারতেন। কিন্তু দেননি। সাক্ষাৎকারে তিনি দাবী করেছেন বর্তমান জামায়াতে ইসলামীর সাথেও তার সম্পর্ক বন্ধুত্বেরই। সুতরাং, ট্রাইবুনালে জামায়াতের আসামীদের পক্ষ নিয়ে যে আইনজীবিদের টিমটি লড়ছে, মুঈনউদ্দিন চাইলেই তাদেরকেও নিয়োগ দিতে পারতেন তার হয়ে মামলাটি লড়বার জন্য। আমি নিশ্চিত, আসামী পক্ষের আইনজীবিরা তাকে ফিরিয়ে দিতো না! আসল কথা হল – মুঈনউদ্দিন নিজে মামলাটি না লড়ার সিদ্ধান্ত নিলেও ট্রাইবুনাল আইন অনুযায়ী নিজ খরচে যোগ্য আইনজীবি নিয়োগ করে দিয়েছে মামলাটি পরিচালনার জন্য (রায়ের অনুচ্ছেদ#২১ দ্রষ্টব্য)। সুতরাং, মুঈনউদ্দিন আইনগত সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে – এমন ইঙ্গিত একেবারেই ধোপে টেকার নয় এখন।

৪. পলাতক নির্দোষ! ৪০ বছরেও মামলার অনুপস্থিতি (কল্পিত)

নিজের নির্দোষীতার পক্ষে যুক্তি হিসেবে চৌধুরী মুঈনউদ্দিন যুক্তি দেখিয়েছেন এই বলে যে দালাল আইনের আওতায় যাদের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়েছিল সে তালিকায় তার নাম নেই। তিনি এটি স্পষ্ট করেননি – যদি নিজেকে নির্দোষই ভাববেন, তাহলে তিনি ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ থেকে কেন পলায়ন করেছিলেন! সৎসাহস সম্পন্ন নির্দোষ মানুষ হিসেবে দেশে থেকে বিচার প্রক্রিয়ার সম্মুখীন হয়ে সকল ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হলেই তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেতো; মামলায় সত্য বেরিয়ে আসতো, তিনিও অপবাদ এবং ‘তথাকথিত ষড়যন্ত্রমূলক অপ-প্রচার’ এর হাত থেকে চিরতরে মুক্তি পেতেন। তিনি সেটা করেননি। সম্ভবত এখানে তাৎপর্যপূর্ণ হল দালাল আইন প্রণয়নের তারিখটি। আইনটি প্রণীত হয় ১৯৭২ সালে, আর তিনি দেশ ত্যাগ করেন এর অব্যবহিত পরেই, আইনটির প্রক্রিয়া পুরোপুরিভাবে শুরু হওয়ার আগেই। দালাল আইনে বিচার করবার মতো হাজার হাজার দেশীয় ছোট বড় দালাল হাতের কাছেই থাকাতে সে আইনে পলাতকদের বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়নি – এটা তো খুবই সহজ ব্যাপার। এ থেকে কি কোনোভাবে নিজের নির্দোষিতার পক্ষে যুক্তি দাঁড় করানো যায়? ১৯৭৫ সালে হুট করে দালাল আইনের আওতায় বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ এবং বাতিল না হয়ে গেলে সেই আইনের আওতাতেই পলাতকদেরও বিচার শুরু হতো না তা কি হলফ করে বলা যায়?

মুঈনউদ্দিন আরও দাবী করছেন, তিনি নির্দোষ বলেই তার বিরুদ্ধে নাকি এর আগে আর কখনোই ভিকটিমরা বা তাদের পরিবারের কেউই গত ৪০ বছরেও মামলা করেননি। এই দাবীটি তিনি করেছেন মামলার এক নম্বর সাক্ষী মাসুদা বানু রত্নার সাক্ষ্যের পরিপ্রেক্ষিতে, যিনি বুদ্ধিজীবি হত্যাযজ্ঞের অন্যতম ভিকটিম অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন চৌধুরীর ভাগ্নী। এখানেও মুঈনউদ্দিনের বক্তব্য সত্য নয়। কারণ, প্রকৃত ঘটনা হল – অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারে পক্ষ থেকে মুঈনউদ্দিনের বিরুদ্ধে অতীতেও মামলা দায়ের করা হয়েছিল। অধ্যাপক চৌধুরীর ছোট বোন ফরিদা বানু নিজেই ১৯৯৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার রমনা থানায় চৌধুরী মুঈনউদ্দিন এবং আশরাফুজ্জামান খান – দু’জনের বিরুদ্ধেই এজাহার (FIR) দায়ের করেছিলেন। ((সূত্র: রমনা থানা পুলিশ মামলা নং ১১৫/১৯৯৭, তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭. এজাহারটি দায়ের করা হয়েছিল দন্ডবিধির ১২০(বি), ৪৪৮, ৩৬৪, ৩০২, ২০১, ৩৪ এবং ১১৪ ধারাসমূহের আওতায়)) এজাহারে ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ এ অধ্যাপক চৌধুরীর অপহরণ এবং হত্যার জন্য দু’জনের বিরুদ্ধেই অভিযোগ দায়ের করা হয়। এই এজাহারের পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডি (Criminal Investigation Department) তার তদন্তও শুরু করে। তদন্তের রিপোর্ট, যা মন্ত্রণালয়ের কাছে পেশ করা হয় পরবর্তী ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য, স্পষ্টভাবে অভিযুক্ত দু’জনের নামই উল্লেখ করে অধ্যাপক গিয়াসের অপহরণের হোতা হিসেবে। তখন এখনকার মতো সুনির্দিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল ছিল না। ছিল না গণহত্যা কিংবা এ জাতীয় বুদ্ধিজীবি হত্যার সুষ্ঠু বিচার করবার মতো প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান। সর্বোপরি রাজনৈতিক পট পরিবর্তনজনিত সদিচ্ছার অভাবও এসে যুক্ত হয় – এসব নানা কারণে সিআইডি’র সেই তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে পূর্ণাঙ্গ বিচার আর শুরু হয়নি। কিন্তু প্রথম সুযোগেই সেই বিচারহীনতার অবসানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বাংলাদেশে, যখনই দেশে একটি পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল এবং প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

৫. স্কাইপ ঘটনা: যুতসই বিভ্রান্তির ভাঙ্গা রেকর্ড

প্রথমেই তিনি দাবী করছেন তার বিরুদ্ধে ট্রাইবুনালের এই বিচার নাকি প্রহসনের বিচার। মূল প্রমাণ হিসেবে তিনি ‘স্কাইপ ঘটনার’ উল্লেখ করে বলছেন – সেখানে তার মামলা আদালতে আসারও বহু আগেই নাকি তাকে কি শাস্তি দেয়া যেতে পারে সে বিষয়ে বিচারক এবং অন্যান্যদের মধ্যে পূর্বালোচনার প্রমাণ রয়েছে। ‘স্কাইপ’ শব্দটি উচ্চারিত হলেই একটু কম ওয়াকিবহালদের অনেককে বিভ্রান্ত হয়ে যেতে দেখেছি, সম্ভবত যথেষ্ট তথ্যের অভাবের কারণেই। সুতরাং মুঈনউদ্দিন যে এই বিভ্রান্তি সৃষ্টির সুযোগকে হাতছাড়া করবেন না সেটা অনুমেয়। মুঈনউদ্দিন যেটা এখানে উল্লেখ করছেন না তা হল – বিচারকের ব্যক্তিগত কথোপকথনে আড়ি পাতা স্কাইপ ঘটনা ষড়যন্ত্র তো বটেই, তবে সেখানে মূল ষড়যন্ত্রকারীরা হল ঠিক মুঈনউদ্দিনের সুহৃদরাই, যারা এই বিচার প্রক্রিয়ার বিপক্ষে ছিল এবং আছে সেই শুরু থেকেই। মুঈনউদ্দিন আরও যেটি বলছেন না তা হল – কথিত সে আলোচনায় মুঈনউদ্দিনের মামলার সম্ভাব্য শাস্তি বিষয়ে আসলে কোনো আলাপই হয়নি, কারণ তা একেবারেই অবান্তর।

সবচেয়ে বড় কথা হল – কথিত এই স্কাইপের রেকর্ডিং বা একপেশে ইমেইলের কপিগুলো এতোই অসম্পূর্ণতা এবং (সম্ভাব্য) জালিয়াতির দোষে দুষ্ট যে খোদ আসামী পক্ষের আইনজীবিরাই ট্রাইবুনালে এই কপিগুলোর উৎস বা সঠিকতা বা পূর্ণাঙ্গতা বিষয়ে কোন ধরণের প্রত্যয়ন করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছি, এমনকি ট্রাইবুনালের পক্ষ থেকে তাদের একাধিকবার এই তথাকথিত স্কাইপ তথ্য প্রমাণগুলোকে প্রত্যয়ন (authenticate) করতে বলার পরও। মিডিয়ার সামনে, কিংবা অপেক্ষাকৃত কম অবগতদের সামনে আসামী পক্ষের আইনজীবিরা যতোই কল্পকাহিনী ফেঁদে, খন্ডিত তথ্যের ততোধিক খন্ডিত ও মনগড়া অপব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে যতোই বিভ্রান্ত করে বেড়ান না কেন, কথিত এই সব তথ্য প্রমাণগুলোকে সুনির্দিষ্টভাবে আদালতে প্রত্যয়নে আসামী পক্ষের আইনজীবিদের অস্বীকৃতির বিষয়টি অত্যন্ত ইঙ্গিতবহ।

এছাড়াও, সবচেয়ে যেটা গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু অনেকেরই অজানা তা হল – আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ স্ব-উদ্যোগে এবং আসামী পক্ষের দরখাস্তের ভিত্তিতে চার চারটি পৃথক প্রসিডিংয়ের মাধ্যমে কথিত স্কাইপ ঘটনাটি খতিয়ে দেখেছেন সেখানে আদৌ কোনো নিয়মের ব্যত্যয় কিংবা অবিচার হয়েছে কি না। খতিয়ে দেখে ট্রাইবুনাল নিজে সন্দেহাতীতভাবে সন্তুষ্ট হবার পরই চার চারটি পৃথক আদেশের মাধ্যমে বিষয়টির চূড়ান্ত নিষ্পত্তিও করেছেন। আসামীপক্ষের কথিত তথ্য-প্রমাণ নিরীক্ষন করে ট্রাইবুনাল কোনো অনিয়ম বা অবিচারের আলামত পাননি। এমনকি খোদ ইকনমিস্ট পত্রিকাও তাদের মূল প্রতিবেদনে আইসিএসএফ সদস্য ড আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সাথে বিচারক নিজামুল হকের কথোপকথন বিষয়ে স্বীকার করে নিচ্ছে: ‘We do not believe he has broken any laws and cannot be held responsible for the actions of others.’ ((The Economist, ‘Trying war crimes in Bangladesh
The trial of the birth of a nation’, December 15 2012. URL: http://www.economist.com/news/briefing/21568349-week-chairman-bangladeshs-international-crimes-tribunal-resigned-we-explain))

৬. আল-বদর সদস্যের কথিত ইস্তফা, গণহত্যায় জামায়াতের সংশ্লিষ্টতার স্পষ্ট স্বীকারোক্তি

আমরা সবাই জানি, জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ছাত্রসংগঠন ‘ইসলামী ছাত্র সংঘ’ থেকেই জল্লাদ এলিট বাহিনী আল-বদর সদস্যদের রিক্রুট করা হোতো। এই ঐতিহাসিক সত্য আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালের একাধিক মামলায় গৃহীত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। আগ্রহীরা সাজাপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক অপরাধী আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, কামারুজ্জামান কিংবা গোলাম আযম এর মামলার রায়গুলো পড়ে দেখতে পারেন, যেখানে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে এই বিষয়ে। মুঈনউদ্দিন অবশ্য স্বীকার করছেন এক সময়কার ইসলামী ছাত্র সংঘের তিনি একজন সদস্য ছিলেন বটে, কিন্তু অস্বীকার করছেন আল-বদর বাহিনীর সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি।

Untitled-1-copyআজকে ২০১৩ সালে এসে হঠাত তিনি দাবী করছেন ২৫ মার্চের পর থেকেই পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর ‘অ্যাকশনের’ বিরুদ্ধে এক রকমের প্রতিবাদ হিসেবেই নাকি তিনি তার ‘রাজনৈতিক দায়িত্বগুলো’ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। এটা নিঃসন্দেহে একটি নতুন তথ্য, কারণ, এই তথ্য তিনি ১৯৯৫ সালে চ্যানেল ফোর এর ডকুমেন্টারিটি প্রচারের পর ফলাও করে জানাননি, কিংবা এক বছর আগেও দাবী করেননি কিংবা গত ৪২ বছর, এমনকি ট্রাইবুনালে তার বিরুদ্ধে মামলাতেও বিষয়টি তার আইনজীবির মাধ্যমে উত্থাপন করেননি। উল্লেখ্য, ট্রাইবুনাল কর্তৃক নিযুক্ত মুঈনউদ্দিনের আইনজীবি তার পক্ষে এতো এতো কথা বলেছেন, অথচ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারতো যে তথ্যটি, সেই ‘ইস্তফা’ দেয়ার কথাটিই একবারের জন্যও উল্লেখ করেননি। বিস্তারিত জানতে মুঈনউদ্দিনের মামলার রায়টির পৃষ্ঠা ৪৪-৪৮ দেখুন, বিশেষ করে অনুচ্ছেদ#৩২।

যদি ধরেও নিই পদত্যাগের বিষয়ে তিনি সত্য বলছেন, তাহলে নিশ্চয়ই এই পদত্যাগের পক্ষে মুঈনউদ্দিন আরও তথ্য প্রমাণ হাজির করবেন সেটাই আমরা আশা করবো। কারণ, ইতিহাসের সত্যগুলোর বিপরীতে, প্রত্যক্ষদর্শী ভিকটিম সাক্ষীর সরাসরি সাক্ষ্যের বিপরীতে এভাবে হুট করে কিছু একটা দাবী করলেই তো আর হয় না! নিজের এই সাফাই সাক্ষাৎকারেই তিনি দাবী করেছেন বহু গুণীজন নাকি তাকে প্রতিভাবান এবং সম্ভাবনাময় সাংবাদিক বলে মনে করতেন। আমরাও সেটা মনে করতে চাই। প্রতিভাবান এবং সম্ভাবনাময় একজন সাংবাদিক হিসেবে মিডিয়ায় ‘বক্তব্যের সপক্ষে প্রমাণ’ এবং ‘সময়োচিত অস্বীকৃতি (timely denial)’ এই দু’টো বিষয়ের গুরুত্ব তো তাকে নতুন করে শেখাবার কিছু নেই। যেই পাকিস্তান বাহিনীর অনাচারে তিনি প্রতিবাদী হয়ে দলীয় দায়িত্ব থেকে ইস্তফাই দিয়ে বসতে পারলেন (তার দাবী মতে), যুদ্ধের সেই ন’মাস তাহলে তিনি একজন সৎ ও দায়িত্বশীল সাংবাদিক হিসেবে সে সব অনাচারের কথা তুলে ধরেছিলেন কি? মনে করিয়ে দিই – এই তো ক’দিন আগেই বিবিসি-কে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন – পূর্বদেশ এর মতো একটি পত্রিকার একজন ‘স্টাফ রিপোর্টার’ এর জীবন এতোটাই নাকি ব্যস্ততার যে এই দায়িত্ব পালনকালে কারও হাতেই কোনো ধরণের হত্যাযজ্ঞের অপারেশন চালানোর মতো যথেষ্ট সময় থাকার কথা না। সত্য হল – ব্যস্ত ‘স্টাফ রিপোর্টার’ চৌধুরী মুঈনউদ্দিন অন্য সব বিষয়ে রিপোর্ট করার সময় পেলেও ১৯৭১ সালে তার দেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আর তাদের দেশীয় সহচরদের দ্বারা সংঘটিত ব্যাপক গণহত্যার বিষয়ে কখনো একটি রিপোর্টও করার সময় পাননি! তাহলে যুদ্ধের ন’মাস সারাদিন এতো ব্যস্ত থেকে ঠিক কি বিষয়ে তিনি রিপোর্ট লিখে যেতেন সেটা এখন সিরিয়াস গবেষণার বিষয়। প্রসঙ্গত: ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম (আইসিএসএফ) এর মিডিয়া-আর্কাইভের কর্মীরা সে সময়কার সমস্ত পত্র পত্রিকা সংরক্ষণের কাজে গত চার বছর ধরেই সক্রিয়; সেই সময়কার গণহত্যা বিষয়ে তথাকথিত প্রতিবাদী চৌধুরী মুঈনউদ্দিনের এমন একটি ‘সত্যান্বেষী’ রিপোর্টও আমাদের চোখে পড়েনি।

আর তর্কের খাতিয়ে যদি ধরেও নিই সেই ন’মাস যুদ্ধকালীন সেন্সরশিপ চালু থাকায় তার পক্ষে গণহত্যা নিয়ে রিপোর্ট করা সম্ভব হয়নি, তাহলেও প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ, এর পর ৪২ বছরেও কি তিনি সে সব অত্যাচারের কথা বিশ্ববাসীর কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরার মতো ফুরসত পাননি? বরং আল-জাজিরাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে তাকে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে আমরা উল্টোটাই করতে দেখেছি। যেখানে সরাসরি তার নাম কেবল দেশী মিডিয়ায় নয়, এমনকি বিদেশী মিডিয়াতেও ছবিসহ তুলে ধরা হয়েছে (যেমন: নিউ ইয়র্ক টাইমসের ((Fox Butterfield, ‘A Journalist is Linked to Murder of Bengalis’ New York Times, 3 January 1972)) রিপোর্ট) আল-বদর এর একজন জল্লাদ কমান্ডার হিসেবে, সেখানে তো তার সংঘবদ্ধ গণহত্যা থেকে নিজেকে প্রকাশ্যে বিযুক্ত করার পাশাপাশি মূল সত্য তুলে ধরাটা (বিশেষ করে ইস্তফা প্রদানের ব্যাপারটি) আরও বেশী যুক্তিযুক্ত ছিল! একজন দায়িত্বশীল সাংবাদিক এই ‘প্রয়োজনীয় অস্বীকৃতি’ (essential denial) দলিলবদ্ধ করবেন না বা সময় থাকতে অন-রেকর্ড করবেন না, তা কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য? আমরা তা মনে করি না।

সাফাই সাক্ষাৎকারে মুঈনউদ্দিন অবশ্য দাবী করছেন মিডিয়ার তখনকার এই সব রিপোর্টই নাকি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অপ-প্রচারের অংশ। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার কি দায় পড়েছে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে নামার? কিংবা যে দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার ‘স্টাফ রিপোর্টার’ হিসেবে নাকি তিনি যুদ্ধের ন’মাস সাংবাদিকতার গুরু দায়িত্বে প্রাণাতিপাত করেছেন বলে দাবী করেছেন – ঠিক সেই পত্রিকাতেই কেন তার বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবি হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার রিপোর্ট ফলাও করে প্রকাশিত হবে? প্রসঙ্গত: ১৯৭১ সালের ২৯ ডিসেম্বর দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকা ‘অপারেশন ইনচার্জ মুঈনুদ্দিন: এই নরঘাতককে খুঁজে বের করতেই হবে’ ((দৈনিক পূর্বদেশ, ‘অপারেশন ইনচার্জ মুঈনুদ্দিন: এই নরঘাতককে খুঁজে বের করতেই হবে’, ২৯ ডিসেম্বর ১৯৭১)) শিরোনামে এই তদন্ত প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছিল:

“বাংলাদেশের সোনার সন্তান জ্ঞান প্রদীপ সাংবাদিক শিক্ষক, চিকিৎসক, বুদ্ধিজীবীদের ৃনৃশংস হত্যাকান্ডের বেসামরিক নায়ক বাংলার কুসন্তানদের অন্যতম চৌধুরী মুঈনুদ্দিন আজ পলাতক। নরঘাতক হানাদার শত্রুদের এদেশী দোসর জামাতে ইসলামীর ফ্যাসিবাদী সংস্থা আল-বদর বাহিনীর অন্যান্য হত্যাকারীর মত চৌধুরী মুঈনুদ্দিন আজ আত্মগোপন করে আছে। কয়েকদিন পূর্বে জামাতে ইসলামীর ঢাকা শহর শাখার দফতর সম্পাদক আব্দুল খালেক মজুমদার ধরা পড়ে। সে যে স্বীকারোিক্ত দান করে তাতে সে বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত কয়েকজনের নাম প্রকাশ করে এবং চৌধুরী মুঈনুদ্দিন ঢাকায় এই হত্যাযজ্ঞের জন্য ’অপারেশন-ইন-চার্জ’ ছিল বলে প্রকাশ করেছে”।

এখানে তার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে নানা জনের ব্যক্তিগত ষড়যন্ত্রমূলক অপ-প্রচারের যে তত্ত্বটি মুঈনুদ্দিন সাহেব প্রচারের চেষ্টা করছেন তা কি আদৌ গ্রহণযোগ্য মনে হয়?

দলীয় রাজনৈতিক দায়িত্ব থেকে মুঈনউদ্দিনের এই তথাকথিত পদত্যাগের দাবীটি আরেকটি কারণে আগ্রহের উদ্রেক করে। পাকিস্তান বাহিনীর ‘এ্যাকশন’ এর প্রতিবাদে জনৈক চৌধুরী মুঈনউদ্দিনকেই কেন হঠাত তার রাজনৈতিক দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করতে হবে? তার বর্ণিত এই ‘রাজনৈতিক দায়িত্বগুলো’র ধরণই বা ঠিক কি ছিল যা তার বিবেককে এতখানি আহত করেছিল সেই সময়? আগ্রাসী পাকিস্তান বাহিনী আর তার নিজের তখনকার রাজনৈতিক দল ‘ইসলামী ছাত্র সংঘ’ – এই দু’য়ের মধ্যে সম্পর্কের ধরণই বা কেমন ছিল? মজার ব্যাপার হল, এখানে চৌধুরী মুঈনউদ্দিন পক্ষান্তরে আসলে নিজেই স্বীকার করে নিচ্ছেন – পাকিস্তান বাহিনীর যাবতীয় হত্যাকান্ড এবং অত্যাচারের অংশীদার ছিল জামায়াতে ইসলামী এবং এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ, যে কারণে তাকে পদত্যাগের মাধ্যমে তথাকথিত এই ‘প্রতিবাদ’ (যদি সত্যি সত্যি তিনি পদত্যাগ করে থাকতেন) কর্মটি করতে হয়েছিল। আমি জানতে আগ্রহী জামায়াতে ইসলামী কিংবা ডিফেন্স টিমের সদস্যদের এই বিষয়ে কোনো বক্তব্য আছে কি না মুঈনউদ্দিনের এমন সরাসরি স্বীকারোক্তির পরও।

পরিশেষে

বাংলাদেশের মাটিতে ১৯৭১ এর অপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে অবধি একে নিয়ে চলছে লাগাতার ষড়যন্ত্র। দেশীয় রাজনীতির অন্ধকার অংশটির প্রত্যক্ষ মদদ যেমন আছে এই বিচার প্রক্রিয়াকে বানচাল এবং প্রশ্নবিদ্ধ করার কাজে, তেমনি ভীনদেশী বেসরকারী গোয়েন্দা সংস্থা, নামী দামী লবিইং ফার্ম, পাবলিক রিলেশন্স ফার্ম, শক্তিশালী মিডিয়া হাউজ, গোটা কয়েক নামজাদা ল’ফার্ম এবং মিডিয়া হাউজও সার্বক্ষণিকভাবে সক্রিয় সুবিচার নস্যাত করার এই যৌথযজ্ঞে। পৃথিবীর যত জায়গায় আজ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার হয়েছে, কোথাও আসামী পক্ষ বা তাদের লবি এতখানি শক্তিশালী ছিল না। মহা ক্ষমতাধর হিটলারের নাজি বাহিনীও ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের আগে সম্পূর্ণ ক্ষমতাহীন হয়ে পড়েছিল। মরণ কামড় দেয়ার মতো শক্তি তাদের ছিল না। অন্যদিকে ১৯৭১ এর এই আসামী চক্রটি চার দশক ধরে নিজেদের শক্তিশালী করেছে, যোগাযোগে, অর্থনীতিতে, রাজনৈতিক পেশী শক্তিতে। সেদিক থেকে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার এক অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ, পুরো পৃথিবীর বিচারের ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতেই সে কথা সত্য।

হাজার সীমাবদ্ধতার মধ্যেও চার দশকের পুরোনো অপরাধের বিচারের মতো এক অত্যন্ত দুরূহ কাজ সম্পন্ন করেছে এই দরিদ্র দেশটি, এর জনগণ, এবং এর নতুন প্রজন্মের সন্তানেরা। এ কোনো সামান্য ব্যাপার নয়। এই কর্মযজ্ঞে তাই সাংবাদিক, শিক্ষক, ছাত্র, বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু ভূমিকা রাখা প্রয়োজন সার্বিক প্রয়োজনীয়তাকে মাথায় রেখে, পুরো পরিস্থিতির ব্যাপারে সজাগ থেকে। তাই বিভিন্ন মিডিয়ায় চৌধুরী মুঈনউদ্দিনের মতো একজন প্রমাণিত যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে এ ধরণের এক তরফা, প্রশ্নহীন, সাফাইমূলক সাক্ষাৎকার কোন ধরণের কার্যকর চ্যালেঞ্জ ছাড়া এভাবে প্রচারিত হতে দেখাটা আমাদের জন্য হতাশাব্যঞ্জক। সাংবাদিকতার নিরপেক্ষতা এবং নৈতিকতার কথা বাদ দিলেও শুধুমাত্র বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবেও মুঈনউদ্দিনের দেয়া বক্তব্যগুলো সাক্ষাৎকারের সময়ই সাক্ষাৎকারগ্রহণকারী জনাব সৈয়দ নাহাস পাশা যুক্তিসহ খন্ডন করে পাঠকের জন্য প্রশ্নাকারে সত্যগুলো তুলে ধরতে পারতেন। আর এই প্রয়োজনীয় যুক্তি খন্ডনটুকু করবার জন্য খুব যে ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন ছিল এমনও না। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠিত এবং সর্বজনবিদিত তথ্য দিয়ে তা খুব ভালোভাবেই করা যেতো বলে মনে করি।

তাই দেশ এবং দেশের বাইরে যত মিডিয়া এবং পত্রিকার প্রতিনিধিরা রয়েছেন, আশা করি তারা বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখবেন। কারণ, বিচারের বিরুদ্ধ শক্তিটির হাতে রয়েছে লাখো ডলারের প্রচারযন্ত্র। এর বিপরীতে আমাদের ১৯৭১ এর বিচারপ্রার্থী জনগণের সে অর্থে নিজের জীবন এবং পরিবার থেকে সময়টুকু দিয়ে সুবিচারের দাবীকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ছাড়া দেবার মতো আর তেমন কিছুই নেই।

———————————————————————

রায়হান রশিদ

জন্ম চট্টগ্রাম শহরে। পড়াশোনা চট্টগ্রাম, নটিংহ্যাম, এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমান আবাস যুক্তরাজ্য। ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধসমূহের বিচার প্রক্রিয়াকে সহায়তা প্রদান, এবং ১৯৭১ এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের দাবীতে সক্রিয় নেটওয়ার্ক 'ইনটারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম' (ICSF) এর প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাস্টি।

৪ comments

  1. মাসুদ করিম - ১ ডিসেম্বর ২০১৩ (৫:৩৯ অপরাহ্ণ)

    বিডিনিউজ২৪.কম-এ প্রকাশিত হয়েছে লেখাটি আজ : চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের সাক্ষাৎকার ও বিভ্রান্তি

  2. Pingback: চৌধুরী মুঈনউদ্দিনের একান্ত সাফাই সাক্ষাৎকার : বিভ্রান্তির প্রশ্নহীন প্রচার » International Crimes Strategy Forums

  3. মাসুদ করিম - ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ (২:২২ অপরাহ্ণ)

    যুক্তরাজ্যের আদালতে প্রশ্নবিদ্ধ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং ইতিহাসের ভবিষ্যৎ
    https://bangla.bdnews24.com/opinion/1qp6tmo3hr

    জানি না যুক্তরাজ্যের বিচারকরা কী রায় দেবেন শেষপর্যন্ত এবং তা কীভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্ধৃত এবং (অপ)ব্যবহৃত হতে পারে মুক্তিযুদ্ধ, যুদ্ধাপরাধের বিচার আর ভিকটিমদের বিরুদ্ধে!

    আর সব বছরের মতো এবারও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এসে চলে গেল। এবারের দিবসটি অন্যান্য বছরের চেয়ে কিছুটা আলাদা হওয়ার কথা ছিল, বিশেষ করে এই দিবসটির তাৎপর্য আর প্রাসঙ্গিকতার আলোকেই। এই দিবস ধরে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা নিয়ে আলোচনা উঠে আসার দরকার ছিল। সেটি একেবারেই ঘটেনি। নির্দিষ্ট যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা অন্তত এই দিনে ‘সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ’ ও সময়োপযোগী ছিল বলে মনে করছিলাম সেটি কোথাও উত্থাপিত হতে দেখিনি। তাই এই বিষয়ে লেখার তাগিদ অনুভব করছি। এই যে ওপরে লিখলাম ‘সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ’, কথাটা কিন্তু এতটুকু বাড়িয়ে বলিনি। লেখাটি পড়লে আপনার কাছেও বিষয়টি স্পষ্ট হবে বলে আশা করছি।

    আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়া অবধি এ সংক্রান্ত গত ১৫ বছরের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ৩টি ঘটনাকে যদি চিহ্নিত করি, তাহলে সম্ভবত এই লেখায় যে বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করছি, সেটি হতে যাচ্ছে তার একটি। একটু ধারণা দিই— এমনকি হয়তো শাহবাগ আন্দোলনও এই তিন প্রধান ঘটনার তালিকার মধ্যে পড়বে বলে আমার মনে হয় না!

    আপনারা জানেন, ১৯৭১-এ বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের একজন হিসেবে চৌধুরী মুঈনুদ্দীন নামে একজনের বিচার হয়েছিল বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি-তে)। ২০১৩ সালে আসামির অবর্তমানে বিচারের রায়ে তাকে সন্দেহাতীতভাবে দোষী সাব্যস্ত করে আইসিটি এবং তাকে ফাঁসির দণ্ড প্রদান করা হয়। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুঈনুদ্দীন যুক্তরাজ্যে বসবাস করায় সেই সাজা বাস্তবায়িত হয়নি। সম্প্রতি মুঈনুদ্দীনের পুরো ঘটনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণভাবে নতুন মোড় নিয়েছে।

    ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর অনলাইনে জঙ্গিবাদ বিষয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। সেখানকার একটি ‘ফুটনোটে’ চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের নাম উল্লেখ করে বলা হয় যে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আইসিটির একটি রায়ও রয়েছে। ঘটনার শুরু সেখান থেকে। যুক্তরাজ্যে মুঈনুদ্দীনের আইনজীবীরা দাবি করে যে রিপোর্টে তার রায়ের এই বিষয়টির উল্লেখও নাকি তার বিরুদ্ধে মানহানির সামিল এবং এই মর্মে তারা স্বরাষ্ট্র দফতরকে আইনি নোটিশ পাঠায়। স্বরাষ্ট্র দফতর এই লিগ্যাল নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে সেই ফুটনোটটি সরিয়েও নেয় অনলাইন থেকে। তারপরও মুঈনুদ্দীন যুক্তরাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের হাইকোর্টে মানহানির মামলা দায়ের করেন।

    যুক্তরাজ্যের আদালতে মুঈনুদ্দীনের বক্তব্য ছিল, বাংলাদেশের আদালতের রায়কে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করার বিষয়টিই তার জন্য মানহানিকর, কারণ বাংলাদেশের আইসিটির নাকি কোনো ধরনেরই গ্রহণযোগ্যতা নেই। সুতরাং, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ১৯৭১-এর যে ধরনের ইতিহাস প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছে আর যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং রায় দেয়া হয়েছে তার সবই ভিত্তিহীন। এসবের ফলে নাকি যুক্তরাজ্যের একজন সম্মানিত নাগরিক হিসেবে মুঈনুদ্দীনের মানবাধিকার এবং সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে। বিপরীত পক্ষ (অর্থাৎ, যুক্তরাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের আইনজীবীরা) পাল্টা অভিযোগ আনে এই বলে যে অন্য একটি দেশের আদালতে ইতোমধ্যে চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তিকৃত একটি বিষয় পুনরায় উত্থাপন করে মুঈনুদ্দীন যেটা করার চেষ্টা করছেন তা হলো মূলত যুক্তরাজ্যের আইনব্যবস্থার অপব্যবহার (আইনে যাকে বলা হয় ‘অ্যাবিউজ অব প্রসেস’), সুতরাং মুঈনুদ্দীনের মামলাটি খারিজ করে দেয়া হোক।

    হয়তো বুঝতে পারছেন, পরোক্ষভাবে এই মামলাটির অন্যতম বিচার্য বিষ‍য়ই হয়ে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাজ্যের আদালতে আইসিটি আর বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতা যাচাই।

    যুক্তরাজ্য হাইকোর্ট মুঈনুদ্দীনের মামলাটি খারিজের নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে মুঈনুদ্দীন আপিল করেন যুক্তরাজ্যের উচ্চতর আপিল আদালতে। আপিল আদালতের ৩ জন বিচারকের মধ্যে ২ জন হাইকোর্টের নির্দেশের সঙ্গে একমত হন, কিন্তু ১ জন বিচারক মুঈনুদ্দীনের পক্ষে (অর্থাৎ মামলা খারিজের বিপক্ষে) রায় দেন। এই ১ বিচারকের রায়ের ভিত্তিতে মুঈনুদ্দীন আবার আপিল করেন— এবার যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টে। এটিই যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত।

    গত ১ এবং ২ নভেম্বর যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টে মামলার বিষয়টির চূড়ান্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান বিচারপতিসহ পাঁচ বিচারকের সামনে ওই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। মুঈনুদ্দীন এবং স্বরাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকে দেশের প্রধান দুটি ল-ফার্মের আইনজীবীরা সেখানে পাল্টাপাল্টি অংশ নেন।

    গত চার বছর ধরে এবং বিশেষ করে গত নয় মাস ধরে আমি এই মামলার পুরো বিষয়টি নিবিড়ভাবে অনুসরণ করেছি। সরাসরি মামলার পক্ষ না হতে পারার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও নিজের সীমিত সাধ্য আর সামর্থ্যের মধ্যে যতটুকু সম্ভব তার শতভাগ দিয়ে চেষ্টা করে গেছি পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষ দুভাবেই এই মামলায় ১৯৭১-এর ভিকটিমদের এবং আইসিটির মূল দিকগুলো সামনে নিয়ে আসার। উদ্দেশ্য ছিল, দুপক্ষের আইনজীবীদের সাবমিশনে যে মৌলিক বিষয়গুলো একেবারেই উঠে আসেনি সেগুলোর পাশাপাশি তাদের এবং যুক্তরাজ্যের বিচারকদের করা জ্বলজ্যান্ত ভুলগুলো তুলে ধরা।

    চূড়ান্ত বিচারে কতটুকু সফল হয়েছি তা এখনই বলা মুশকিল, কারণ, যুক্তরাজ্য সুপ্রিম কোর্টে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত রায়ের জন্য অপেক্ষাধীন। তবে এটুকু উল্লেখ না করলেই না। যুক্তরাজ্য সুপ্রিম কোর্টে দু‌পক্ষের শুনানি শেষ হওয়া পর্যন্ত আমার অন্তত মনে হয়েছে, পুরো মামলাটির শুনানি আইসিটির জন্য ইতিবাচক হয়েছে তা বলা যাবে না। যুক্তরাজ্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের দৃষ্টিভঙ্গি হয়তো (ধরে নিচ্ছি যদিও) অনেকাংশেই নির্ভর করেছে মুঈনুদ্দীন এবং যুক্তরাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের দুই পক্ষের আইনজীবীদের কাছ থেকে তারা এ পর্যন্ত যা শুনেছেন বা যা শোনেননি শুধু তার ওপরই।

    যেকোনো দিনই রায় হতে পারে। জানি না যুক্তরাজ্যের বিচারকরা কী রায় দেবেন শেষপর্যন্ত এবং তা কীভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্ধৃত এবং (অপ)ব্যবহৃত হতে পারে মুক্তিযুদ্ধ, যুদ্ধাপরাধের বিচার আর ভিকটিমদের বিরুদ্ধে!

    যুক্তরাজ্য সুপ্রিম কোর্টের এই রায়টি কেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, সেটি জানিয়ে রাখাটা প্রয়োজন মনে করছি, সে কারণেই এই লেখাটি লেখা। চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের এই মানহানির মামলাটিকে যুক্তরাজ্য সুপ্রিম কোর্ট যদি সর্বতোভাবে এবং সর্বসম্মতিক্রমে খারিজ করে দেয় তাহলে তো কিছুই বলার নেই। সেই সম্ভাবনা এখনও আছে। তেমনটি হলে এই মামলাটি হয়তো ইতিহাসের বা আইনের বইয়ের কোনো একটি ছোট ফুটনোট হয়ে থেকে যাবে। কিন্তু রায়ে যদি এর বিপরীতটি ঘটে, অর্থাৎ, মুঈনুদ্দীনের মানহানির দাবি যদি টিকে যায়, তাহলে নিচের আশঙ্কাগুলো বাস্তব হয়ে ওঠার এক ভিন্ন বাস্তবতা তৈরি হবে আমাদের সবার জন্য। অনেকগুলো সম্ভাব্য ফলাফল আর আশঙ্কার মধ্যে শুধু চারটি উল্লেখ করছি নিচে।

    ১) যুক্তরাজ্য সুপ্রিম কোর্ট মুঈনুদ্দীনের পক্ষে (অর্থাৎ আইসিটির প্রক্রিয়ার বিপক্ষে) রায় দিলে সেই রায়টি দেশ-বিদেশে যুদ্ধাপরাধী আসামিপক্ষ উদ্ধৃত করবে আইসিটির পুরো প্রক্রিয়া এবং এর প্রতিটি বিচারের রায়কে চূড়ান্তভাবে প্রশ্নবিদ্ধভাবে করার কাজে। অবশ্যই, আইনি বিচারে যুক্তরাজ্যের রায় বাংলাদেশের আইসিটির রায়ের ব্যাপারে কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতা তৈরি করে না, তবে প্রচার/অপ-প্রচারের বিভ্রান্তিকর রাজনীতিতে এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ঘোলা করার কাজে যুক্তরাজ্যের আদালতের রায় শক্তিশালী এক হাতিয়ার হয়ে উঠবে স্বাধীনতাবিরোধী পক্ষের হাতে। এই যে প্রথম আশঙ্কার কথাটি লিখলাম, তা হলো আমার লেখা চারটি ফলাফলের মধ্যে সবচেয়ে কম ক্ষতিকর, কারণ বাকিগুলো আরও সুদূরপ্রসারী!

    ২) যদি যুক্তরাজ্যের আদালতে বাংলাদেশের আইসিটির বিরুদ্ধে করা সমালোচনাগুলো ধোপে টিকে যায়, তাহলে এর প্রভাব হবে মুঈনুদ্দীনের মামলা ছাড়িয়ে আরও বিস্তৃত। কারণ, তখন সমালোচনাগুলো পশ্চিমের এক গুরুত্বপূর্ণ আদালতের বদৌলতে এক ধরনের আইনি বৈধতার সিল পেয়ে যাবে। এই বিষয়টিকে তখন আইসিটির বিচারে দণ্ডপ্রাপ্ত সব আসামিই ব্যবহার করতে পারবে এ জাতীয় কৌশলগত মানহানি মামলায়। তাদের উদ্দেশ্য হবে মুক্তিযুদ্ধ ইস্যুতে নিজেদের কৃতকর্মের ইতিহাস চাপা দেয়া। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের আইনব্যবস্থা ও আদালত এমনিতেই এ জাতীয় মানহানি মামলার ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় ফোরাম হয়ে উঠেছে সারাবিশ্বের অন্য সব ব্যবস্থার তুলনায়। এই সুযোগটি ঢালাওভাবে নেয়ার সুযোগ তৈরি হবে তখন যুদ্ধাপরাধী পক্ষের দিক থেকে। এভাবে ১৯৭১-এর প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস একটু একটু করে বিকৃত হতে থাকবে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে।

    ৩)পূর্ণাঙ্গ বিচার প্রক্রিয়া শেষে বাংলাদেশের আইসিটির রায়ের পরও যদি দণ্ডিত একজন অপরাধী এই রায়কে মানহানিকর বলে যুক্তরাজ্যের আদালতে উৎরে যেতে পারে, তাহলে ১৯৭১-এ সংঘটিত অপরাধগুলো (গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ) নিয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যতের সব ধরনের গবেষণা আর লেখালিখির কাজ আর উদ্যোগগুলো এক বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে। লেখক এবং গবেষকদের কাজগুলো করতে হবে প্রতি পদে মানহানি মামলার খড়গ মাথায় নিয়ে। আইন বিষয়ে যাদের কিছুমাত্র ধারণা আছে তারা জানবেন— কাউকে হয়রানি করতে বা আর্থিকভাবে সর্বস্বান্ত করতে মানহানি মামলার কোনো জুড়ি নেই।

    ৪) বাংলাদেশে গণহত্যার বৈশ্বিক সার্বজনীন স্বীকৃতি অর্জনের যে প্রজন্মব্যাপী আন্দোলন মাত্র শুরু হয়েছে, তার পুরোটাই এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সম্মুখীন হবে। কারণ, ১৯৭১-এ সংঘটিত গণহত্যা আর মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ আর অপরাধীদের কৃতকর্মের ইতিহাস একমাত্র যে আইনি ফোরামে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেটি হচ্ছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বা আইসিটি। তাই এটা কোনো কাকতালীয় ব্যাপার নয় যে ১৯৭১-এর অপরাধীপক্ষ সবসবময়ই তাদের আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু করেছে এই আইসিটিকে। শুধু একটিমাত্র লক্ষ্য নিয়ে, আর তা হলো এই ট্রাইব্যুনালকে গোটা বিশ্বের কাছে অগ্রহণযোগ্য দেখানো বা একে যতভাবে সম্ভব প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলা। যুক্তরাজ্যে মুঈনুদ্দীনের মামলারও প্রধান উদ্দেশ্য সেটি। তাই, ট্রাইব্যুনালে মাধ্যমে সন্দেহাতীতভাবে প্রতিষ্ঠিত অপরাধগুলোকে নতুন করে বিতর্কের সম্মুখীন করা গেলে গণহত্যার স্বীকৃতি অর্জনের আন্দোলনই বিতর্কের সম্মুখীন হয়।

    যুক্তরাজ্য সুপ্রিম কোর্টের রায়টি উপরোক্ত বিষয়গুলোর কারণেই আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এবং এর ওপর অনেককিছুই নির্ভর করবে। আশা করি এই লেখাটি পরিস্থিতির সম্ভাব্য গুরুত্ব অনুধাবনের পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট সবাইকে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে।

    এই পদক্ষেপ নির্ধারণের পথে যে প্রশ্নের উত্তরগুলো আমাদের প্রথমেই খুঁজতে হবে সেগুলো হলো, ১) চৌধুরী মুঈনুদ্দিনের মামলাটি যুক্তরাজ্যে এতদূর পর্যন্ত নির্বিঘ্নে গড়াতে পারল কীভাবে তা খুঁজে বের করা; ২) মুঈনুদ্দীনের পুরো ঘটনার অন্য আরও প্রতিটি ধাপে (যেমন: এক্সট্রাডিশনের মাধ্যমে তাকে বাংলাদেশে হাজির করায় ব্যর্থতা, ইন্টারপোলের রেড নোটিশ একতরফাভাবে আসামিপক্ষের প্রত্যাহার) বাংলাদেশ সরকারের যে পদক্ষেপগুলো নেয়ার কথা ছিল তা সঠিকভাবে নেয়া হয়েছিল কিনা; ৩) আইসিটিতে দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আর সব পলাতক অপরাধীর শাস্তি কার্যকর করা বা তাদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বা হচ্ছে কিনা; ৪) ট্রাইব্যুনালে চলমান বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে সরকার এবং সংশ্লিষ্টদের বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গি আসলে ঠিক কি সেটা জনগণের কাছে স্পষ্ট করা ইত্যাদি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযু্দ্ধে রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রদানকারী রাজনৈতিক দলটির (যে দল এখন বাংলাদেশে রাষ্ট্রক্ষমতায়) কাছে আমাদের যে প্রত্যাশা, তার আলোকে এগুলো আমার ন্যূনতম জিজ্ঞাসা।

    যুক্তরাজ্যের আদালত যদি মুঈনুদ্দীনের বিপক্ষে রায় দেয়, তাহলে বাংলাদেশ সরকারের করণীয় হবে এবার তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। আর রায় যদি তার পক্ষে যায়, তাহলে আমাদের নাগরিক সমাজ, আমাদের মিডিয়া, আমাদের বুদ্ধিজীবীদের এক দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। ১৯৭১-এ বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ইতিহাস সারা বিশ্বের কাছে সঠিক এবং জোরালো‌ভাবে তুলে ধরার দায়িত্ব এ সময়ের বুদ্ধিজীবী এবং শিক্ষিত সমাজেরই। সরকারের তো বটেই। কারণ, তাঁদের আত্মত্যাগের কারণেই আজকের বাংলাদেশ।

  4. Pingback: যুক্তরাজ্যের আদালতে প্রশ্নবিদ্ধ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং ইতিহাসের ভবিষ্যৎ | প্রাত্যহিক পাঠ

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.