গত কয়েকমাস ধরে কিছু মানুষের সাথে আলাপ করে একরকম হতাশাবোধ করছি[..]

গত কয়েকমাস ধরে কিছু মানুষের সাথে আলাপ করে একরকম হতাশাবোধ করছি। এদেশের অন্ততঃ অর্ধেক মানুষ আওয়ামীলীগের কট্টর বিরোধী এবং বিএনপির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থক। কাউকে ছোট করার জন্য বলা নয়, আমার ধারনা বিএনপি সমর্থক মাত্রই খানিকটা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। জামাতের সাথে বিএনপির জোট হবার পর থেকেই এরা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে চিন্তিত মাত্রার উদাসীন। এই উদাসীন মানবগোষ্ঠীর অধিকাংশ জামাতের ঘৃণিত যুদ্ধাপরাধ নিয়ে মোটেও বিচলিত নয়। কারণ খালেদা জিয়ার অভিধানে যুদ্ধাপরাধ শব্দটি নেই। তাই এরাও এদের অভিধান থেকে মুছে দিয়েছে। কেবল আওয়ামী বিরোধীতার কারণে এরা নিজেদের রেখেছে ঘৃনিত যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থক কাতারে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকে কিছু সংখ্যক মানুষ ভারতের ষড়যন্ত্র মনে করতো। দেশকে কেটে ভাগ করার ষড়যন্ত্র মনে করতো। পাকিস্তানীরা সেই মানুষগুলোকেও যখন কচুকাটা করতে বাদ রাখলো না, তখন বুঝেছিল পাকিস্তানী হানাদার কখনো সভ্য মানুষের বন্ধু হতে পারে না। এই মানুষগুলোর জন্যও কি সেরকম ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে?

সেদিন সিরিঞ্জ সিরিঞ্জ রক্ত ঢেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের দেয়ালগুলো রাঙিয়ে দিয়েছিলো সাধারন শিক্ষার্থীরা। বেতন ফি বৃদ্ধির যে অযৌক্তিক ও অমানবিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো চবি প্রশাসন, তার বিপক্ষে দাড়ানোই ছিলো তাদের অপরাধ। সেই অপরাধের কারনে চবি উপাচার্য অনুগত মিডিয়া মারফত তাদেরকে ‘উচ্ছৃঙ্খল’ জাতীয় বমিজাগানো বিশেষনের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। কিন্তু যখন মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত শহর টানা ছয় ঘন্টা অবরুদ্ধ হয়ে থাকে, সড়ক চলাচল বন্ধ করে দেয় লড়াকু শিক্ষার্থীরা কিন্তু একটি গাছের পাতাও ছেড়ার ঘটনা ঘটে না বা টানা তিন চার দিন ক্যাম্পাসের এখানে সেখানে চিৎকার করে, রোদে পুড়ে, গলা ফাটিয়ে সহজ গণতান্ত্রিক পথে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করে প্রশাসনের; তখন চবি উপাচার্যের সমস্ত অভিযোগ-ই সম্ভবত বৈধতা হারিয়ে ফেলে। পরের দিন প্রশাসন প্রশাসনিক ভবনের দেয়াগুলোতে চুন মাখিয়ে দেয়। রক্তের রঙ আর ন্যায্য দাবির আকুতি ঢেকে যায় প্রশাসনের চুন মাখানো মুখে। বিশ্ববিদ্যালয় একটি রাষ্ট্রের মেরুদণ্ড হয়ে উঠবে, জ্ঞান আর তরুণ সম্ভাবনাকে উসকে দেবে, এটা খুব-ই কাম্য। কিন্তু অদ্ভূত উটের পিঠে চড়ে বসা এ দেশে এগুলো কেবলই পুস্তকই বুলি। বরং এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের চিত্র খুবই চমকপ্রদ ! মহান বিশেষণ পিঠে করে গজিয়ে ওঠা তথাকথিত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ এখন ক্যাডার আর ছাগল উৎপাদনের কেন্দ্র। সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের ছুড়িকা আর পেশী প্রদর্শনের চমৎকার উদ্যান। এই ছিলো এই পর্যন্ত বাস্তবতা। কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি প্রশাসনের অমানবিক নির্যাতন আর ক্যাডারবাজি, লাঠি দিয়ে শিক্ষার্থী শায়েস্তা করার পদ্ধতি, ছাত্রীদের উপর হামলে পড়ার দৃশ্য বাস্তবতা, ওড়না ধরে টান মারা অথবা পুলিশি লাঠি দিয়ে পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্য দাখিলের যে কায়দা তাতে সম্ভবত প্রশাসনকেও তার ক্যাডারবাজির জন্য একটা উপযুক্ত বিশেষনে বিশেষিত করা দরকার। আমার ক্যাম্পাসে যখন পুলিশ লাঠি উচিয়ে ঘুরে বেড়ায় আমাকে পেটাবে বলে, যখন আমার ক্যাম্পাসে আমার সহপাঠীনির উপর পুরুষ পুলিশের লাঠি আর লোলুপতা কালো দাগ হয়ে লেপটে থাকে পত্রিকার পাতায়, যখন আমার-ই বিপক্ষে প্রশাসন পুলিশ লেলিয়ে দেয়, নির্লজ্জের মতো গণগ্রেফতার করা হয়, বাছ-বিচার ছাড়া যাকে পাওয়া যায়, তাকে ধরে গাড়িতে তোলা হয় প্রশাসনের নিদের্শে আর যাচাই বাচাই-এর নামে রাতভর অমানবিক নির্যাতন করা হয় পুলিশ লাইনে নিয়ে গিয়ে, তখন কোথায় থাকে বিশ্ববিদ্যালয় কনসেপ্ট থেকে জন্ম হওয়া মধুর বুলিসমূহের ! আমাদের অভিভাবক মাননীয় উপাচার্য যখন পুলিশ…

আগে কখনো দেখিনি, জিইসির মোড়ে – এবার কে করল এই আয়োজন? জামান হোটেল ও বোনানজা রেস্টুরেন্ট এই দুই বিল্ডিংয়ের সামনে সামিয়ানা টাঙিয়ে ফুটপাতের দখল নিয়ে তারাবি পড়া চলছে রমজানের চাঁদ দেখা রাত থেকে।[...]

আগে কখনো দেখিনি, জিইসির মোড়ে – এবার কে করল এই আয়োজন? জামান হোটেল ও বোনানজা রেস্টুরেন্ট এই দুই বিল্ডিংয়ের সামনে সামিয়ানা টাঙিয়ে ফুটপাতের দখল নিয়ে তারাবি পড়া চলছে রমজানের চাঁদ দেখা রাত থেকে। সেতারাবি ফুটপাত ছেড়ে চট্টগ্রামের ব্যস্ততম সিডিএ হাইওয়ের অর্ধেকের দখল নিয়েছে। এটা মুসলমানদের কোনো মানসিক রোগই হবে, নাগরিক জীবনে নামাজরোজাকোরবানির মধ্য দিয়ে নানা উৎপাত সৃষ্টি করে মুসলমানরা এক ধরণের আনন্দ পায়। কী নাম দেয়া যায় এই মানসিক রোগের ‘গণনৈরাজ্যউপাসন’ ‘collective-anarchy-prayer’? মনোবিজ্ঞানী নই, তবে মনোবিজ্ঞানীদের মুসলমানদের এই ধরণের প্রার্থনার অসভ্য আয়োজন নিয়ে ভাবা উচিত, এবং আর দেরি না করেই এর প্রতিষেধক আবিষ্কারের গবেষণায় আত্মনিয়োগ করা উচিত। খোলা জায়গায় নামাজ পড়তে, ওয়াজ করতে, কোরবানি করতে, পূজা করতে, ধর্মসভা করতে পুলিশের অনুমতির প্রয়োজন আছে। এই ব্যস্ত জনপথের ফুটপাত দখল করে তারাবি পড়ার জন্য কোনো অনুমতি কি নেয়া হয়েছে? যদি অনুমতি না নেয়া হয় তবে এই আয়োজন অবৈধ। আর যদি অনুমতি নেয়া হয়, তাহলে এই অনুমতি কোন উর্বরমস্তিষ্ক অফিসারের মাথা থেকে ঘামের মতো ঝরে পড়েছে? সাঈদীর ওয়াজ যদি আমরা পুলিশি আদেশ দিয়ে বন্ধ করতে পারি, জনস্বার্থে রাজনৈতিক সভার অনুমতি যদি কারণে অকারণে আমরা আটকে দিতে পারি, তাহলে ফুটপাতে তারাবি পড়া বন্ধ করা যাবে না কেন? ফুটপাত ও জনপথ তারাবি পড়ার জন্য তৈরি হয়নি – আর যেএলাকায় এভাবে তারাবি পড়া হচ্ছে তার চারিদিকে ৮/১০টি মসজিদ তো রয়েছেই, আবার ৫/১০ মিনিটের হাঁটা দূরত্বে রয়েছে বহুতল জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ এবং এই মসজিদের সামনে সুবিশাল খোলা মাঠ। তারপরও জিইসির এই ব্যস্ত ফুটপাত দখল করে কেন তারাবির নামাজ পড়তে হবে? হাস্যকর মুসলমান! পান্ডা প্রশাসন! ধিক! ধিক! শতধিক!

তাহলে অক্টোপাসের ক্ষেত্রে নিশ্চয় আরো বড় কোনো বাণিজ্য পেছনে আছে। ইউরোপে এই 'মিডিয়া কভারেজ' কী শুধু এমনি এমনি হচ্ছে![...]

সিদ্ধান্ত নিতে হবে -- খেলা দেখব না ভবিষ্যদ্বাণী শুনব। গত কয়েকদিন থেকে অক্টোপাস নিয়ে যা হচ্ছে তা বড় বেশি হচ্ছে। কোথাও এর অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে, অবশ্যই সেউদ্দেশ্য টাকা কামানোর সাথে জড়িত। ওই যে পাখির মাধ্যমে ভবিষ্যৎ গণনা করেন যে মুনিয়া পান সিঙ্গাপুরে, তার কয়েকটি ফুটবল ম্যাচে ভবিষ্যদ্বাণী মিলে যাওয়ায় যে তার আয় বেড়ে গেছে, সে সহজ হিসাবটা খুব সহজে চোখে দেখছি। তাহলে অক্টোপাসের ক্ষেত্রে নিশ্চয় আরো বড় কোনো বাণিজ্য পেছনে আছে। ইউরোপে এই 'মিডিয়া কভারেজ' কী শুধু এমনি এমনি হচ্ছে! সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে খেলা দেখার। বেশির ভাগ দর্শক খেয়ালই করেননি, কী কৌশলে বলের দখল রেখে গতিকে স্তব্ধ করে দিল স্পেন। কিন্তু তারপরও গোল পেতে তার কষ্ট হচ্ছিল, কারণ স্পেনের কোনো গোলদাতাই সে অর্থে 'ক্লিনিক্যাল' নন, এবারের স্পেনের অসাধারণ খেলোয়াড় পেদ্রো ও পিকে, ভিয়া নন। আর ওই খেলায় অপ্রতিরোধ্য গতির জার্মান এমন মুষড়ে পড়ল কেন? তারা বলের দখল নিয়ে তার গতি বাড়িয়ে দিয়ে স্পেনকে কাবু করতে পারেনি। প্রথমত এই তরুণ দলে সে অভিজ্ঞতার অভাব ছিল আর দ্বিতীয়ত এবারের জার্মান দলের সবচেয়ে অসাধারণ খেলোয়াড় মুলারের অনুপস্থিতি, -- শোয়াইনস্টাইগার, ওৎসিল ও মুলার, যেকোনো একজনকে হারালেই এই জার্মানির আক্রমণ ভোঁতা হবেই। জার্মান তরুণ দল তাদের আরো আরো আক্রমণভাগে এমন খেলোয়াড় চাই। তাহলেই স্পেনের 'অগতির গতি' আর তাদের এতো সহজে কাবু করতে পারবে না। আশা করি ফাইনালটা, আমরা একটা ফুটবল ফাইনাল হিসাবেই দেখব। ভবিষ্যদ্বাণীর খেল্ না দেখে বিশ্বকাপ ২০১০-এর শেষ খেলা হিসাবে দেখব। গতি নিয়ে, বলের দখল নিয়ে, খেলার কৌশল নিয়ে দুদল আমাদের কী দেখায় তা দেখব। সেসাথে কেউ অপকৌশলে খেলা জেতার চেষ্টা করে কিনা তাও দেখব। বিশেষ করে আমার আঙ্গুল 'রবেন'- এর দিকে তোলা থাকবেই কারণ আমি নিশ্চিত, সুযোগ পেলেই সে অপকৌশলের আশ্রয় নেবেই।

বিশ্বকাপ ‘উপলক্ষে’ বুয়েট বন্ধ ঘোষিত হয়েছে। উপলক্ষ মানে ঠিক বিশ্বকাপ উদযাপনের জন্য নয় [..]

বিশ্বকাপ ‘উপলক্ষে’ বুয়েট বন্ধ ঘোষিত হয়েছে। উপলক্ষ মানে ঠিক বিশ্বকাপ উদযাপনের জন্য নয়। বিশ্বকাপের খেলা দেখার সুবিধার্থে একদল ছাত্র ক্লাস বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছিল, কতৃপক্ষ সে দাবি মেনেও নিয়েছিলেন। কিন্তু মাঝখান থেকে একদল ছাত্র আবার ক্লাস করার দাবি জানায়। এই ক্লাস করা না করা নিয়ে দু দল ছাত্রের মাঝে মৃদু সংঘর্ষ হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আরো সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেন। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হলেও বিশ্বকাপের এই এক মাস বুয়েটের শিক্ষক এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের বেতন বন্ধ থাকবে না। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার আনুষঙ্গিক খরচ থেকেই যাবে। সে হিসাবে এই এক মাসে সরকারের আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৫ কোটি টাকা। দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বুয়েটকে অনুসরণ করলে এই ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। এই পরিমাণ টাকা ঢাললে বাংলাদেশের ফুটবলের করুন দশার বেশ খানিকটা উন্নতি সম্ভব। বিশ্বকাপ উপলক্ষে বুয়েট বন্ধের এই প্রক্রিয়াটি এবারই প্রথম নয়। বুয়েটে আমাদের ক্লাস শুরু হয়েছিল ১৯৯৪ সালের জুনে, সে মাসেই বিশ্বকাপ শুরু। অটোভ্যাকেশন নামে একটা ব্যাপার শুরু হয়ে গেল, সেটার মানে হচ্ছে আগে থেকে ঠিক করা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্রছাত্রী বিশ্বকাপ চলার সময়ে একসাথে ক্লাসে অনুপস্থিত থাকবে। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্র ছাত্রীর বিরুদ্ধে একসাথে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়া যায় না, তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যাপারটা মেনে নিতেন। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপের সময়ে শিক্ষকরাই ক্লাস বন্ধ রাখেন। বিশ্বকাপের সময়ে এই ছুটি নেবার ব্যাপারটা দেখে বুয়েটের ছাত্রছাত্রীদের বিরাট ক্রীড়ামোদি বলে মনে হতে পারে। কিন্তু ব্যাপারটা মোটেই সেরকম নয়। বড় দলের অল্প কিছু খেলা ছাড়া হলের টিভি রুমগুলোতে কোন ভিড়ই থাকে না। পুরো ব্যাপারটাই হচ্ছে বিশ্বকাপ বা এই জাতীয় অজুহাতে ছাত্রজীবন দীর্ঘায়িত করা। বুয়েটের ছাত্র মানেই দেশের সেরা মেধাবী ছাত্রদের একজন এই জাতীয় একটা টাইটেল, এই টাইটেল খাটিয়ে মাগনা হলে থাকা আর টিউশনী করা, এবং সেই করে মাসে হাজার হাজার টাকা রোজগার করা। বুয়েটের শিক্ষা জীবন শেষ মানে মাগনা হলে থাকার দিন শেষ, আর একজন বেকারের পক্ষে মেধাবী ছাত্রের টাইটেলও দাবি করা সম্ভব নয়। সুতরাং টিউশনির বাজারে দাম পরে যায়। তাই যতদিন পারা যায় টিউশনির বাজার ধরে রাখার জন্য ফুটবল বা ক্রিকেট বিশ্বকাপ, বন্যা, ডেঙ্গু জ্বর, ইতাদি ছুতো ধরে ক্লাস বা পরীক্ষা পিছিয়ে…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.