আগে কখনো দেখিনি, জিইসির মোড়ে – এবার কে করল এই আয়োজন? জামান হোটেল ও বোনানজা রেস্টুরেন্ট এই দুই বিল্ডিংয়ের সামনে সামিয়ানা টাঙিয়ে ফুটপাতের দখল নিয়ে তারাবি পড়া চলছে রমজানের চাঁদ দেখা রাত থেকে। সেতারাবি ফুটপাত ছেড়ে চট্টগ্রামের ব্যস্ততম সিডিএ হাইওয়ের অর্ধেকের দখল নিয়েছে। এটা মুসলমানদের কোনো মানসিক রোগই হবে, নাগরিক জীবনে নামাজরোজাকোরবানির মধ্য দিয়ে নানা উৎপাত সৃষ্টি করে মুসলমানরা এক ধরণের আনন্দ পায়। কী নাম দেয়া যায় এই মানসিক রোগের ‘গণনৈরাজ্যউপাসন’ ‘collective-anarchy-prayer’? মনোবিজ্ঞানী নই, তবে মনোবিজ্ঞানীদের মুসলমানদের এই ধরণের প্রার্থনার অসভ্য আয়োজন নিয়ে ভাবা উচিত, এবং আর দেরি না করেই এর প্রতিষেধক আবিষ্কারের গবেষণায় আত্মনিয়োগ করা উচিত।
খোলা জায়গায় নামাজ পড়তে, ওয়াজ করতে, কোরবানি করতে, পূজা করতে, ধর্মসভা করতে পুলিশের অনুমতির প্রয়োজন আছে। এই ব্যস্ত জনপথের ফুটপাত দখল করে তারাবি পড়ার জন্য কোনো অনুমতি কি নেয়া হয়েছে? যদি অনুমতি না নেয়া হয় তবে এই আয়োজন অবৈধ। আর যদি অনুমতি নেয়া হয়, তাহলে এই অনুমতি কোন উর্বরমস্তিষ্ক অফিসারের মাথা থেকে ঘামের মতো ঝরে পড়েছে?
সাঈদীর ওয়াজ যদি আমরা পুলিশি আদেশ দিয়ে বন্ধ করতে পারি, জনস্বার্থে রাজনৈতিক সভার অনুমতি যদি কারণে অকারণে আমরা আটকে দিতে পারি, তাহলে ফুটপাতে তারাবি পড়া বন্ধ করা যাবে না কেন?
ফুটপাত ও জনপথ তারাবি পড়ার জন্য তৈরি হয়নি – আর যেএলাকায় এভাবে তারাবি পড়া হচ্ছে তার চারিদিকে ৮/১০টি মসজিদ তো রয়েছেই, আবার ৫/১০ মিনিটের হাঁটা দূরত্বে রয়েছে বহুতল জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ এবং এই মসজিদের সামনে সুবিশাল খোলা মাঠ। তারপরও জিইসির এই ব্যস্ত ফুটপাত দখল করে কেন তারাবির নামাজ পড়তে হবে?
হাস্যকর মুসলমান! পান্ডা প্রশাসন! ধিক! ধিক! শতধিক!
মাসুদ করিম
লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১০ comments
kamruzzaman Jahangir - ১৩ আগস্ট ২০১০ (৭:৪০ পূর্বাহ্ণ)
আপনার নোটটি খুবই দরকারি। আসলে যে কোনো উপসনালয়ের ইতিহাসেই ক্ষমতার বাহাদুরি প্রকাশের একটা কেন্দ্র হিসাবেই চালু থাকে বা হয়। খোঁজ নিলেই জানা যাবে যে, এটিও কোনো বাহাদুরিরই প্রকাশ মাত্র। আর যাবতীয় উপাসনালয়ই ক্ষীণতা মানে না, ক্ষিপ্রতার দিকেই যায়।
এইসব ব্যাপারে পুলিশতা খুবই প্রয়োজন, কিন্তু তা কি পাওয়া যায়?
কে হায় ধর্ম খুঁড়ে জঞ্জাল দেখাতে চায়!
তারাবিভরা রাত, ‘গণনৈরাজ্যউপাসন’ ইত্যাকার শব্দযোগে পাঠস্বাদুমুখর লেখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
রায়হান রশিদ - ১৩ আগস্ট ২০১০ (৭:৪১ অপরাহ্ণ)
এক ধরণের সার্কাস হয়তো, কিন্তু সার্কাসের মতো নির্দোষ উদ্দেশ্যে এই আয়োজন – তেমনটা মনে হচ্ছে না। যেন ইচ্ছে করেই একটা ধর্মীয় ইস্যু তৈরী করার চেষ্টা। কেউ হস্তক্ষেপ করবে, আর তখনই উঠবে ‘ধর্ম গেল ইসলাম গেল’ রব! এই তো!
বিনয়ভূষণ ধর - ১৪ আগস্ট ২০১০ (৬:০২ অপরাহ্ণ)
আমার দোকান অত্র এলাকায় হওয়াতে পুরো ব্যাপারটা আমি রোজার সেই প্রথম তারাবী রাত থেকে খুব ভালোভাবে খেয়াল করেছি এবং উক্ত দুই ভবনে ব্যবসায় করেন এমন আমার পরিচিত মানুষের সাথে আমি কথা বলেছি ব্যাপারটা নিয়ে। উনারা আসলে দারুন বিব্রত হয়েছেন ব্যাপারটা নিয়ে। কারন, এলাকার সাধারন জনগন কিন্তু উনাদের এধরনের কার্যক্রমের ব্যাপক সমালোচনা করেছেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে আমাদের চট্টগ্রামের স্হানীয় একটি পত্রিকার প্রথম পাতায় কোন ক্যাপশন ছাড়া ও কোন ধরনের খবর দেয়া ছাড়া এ বিষয়টির উপর একখানা ছবি ছাপিয়েছেন…
মোহাম্মদ মুনিম - ১৯ আগস্ট ২০১০ (৫:৪৭ অপরাহ্ণ)
নামাজ নিয়ে অতি উৎসাহের এই ব্যাপারটি বাংলাদেশে দিন দিনই বাড়ছে। সত্তরের দশক থেকে শুরু করে যে বিপুল পরিমাণ বাংলাদেশি মধ্যপ্রাচ্যে গিয়েছেন তাঁরা অনেকেই কর্মজীবন শেষ করে দেশে ফিরে এসেছেন। মধ্যপ্রাচ্য থেকে শিখে এসেছেন নামাজ বিষয়ক নানা রকমের ঢং। সৌদি আরবে আজান হলেই যে যেখানে আছেন নামাজ শুরু করে দেন, এভাবেই নামাজ পড়া উচিত, এই জাতীয় ব্যাপার তাঁরা আত্মীয় স্বজন বা প্রতিবেশিদের শিখিয়েছেন, সেখান থেকে এই অতি উৎসাহের ব্যাপারগুলো শুরু হয়েছে। তবে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি আর আমাদের পরিস্থিতি এক নয়। আবুধাবির বিমানবন্দরে দেখেছি মসজিদের পাশেই মদের দোকান, লোকে নামাজ পড়ছে, আবার কয়েক গজ দুরেই ইউরোপীয় স্বল্পবসনা মহিলা মদ কিনছেন। কারো ধর্মীয় অনুভূতিতেই আঘাত লাগছে না।
নামাজ নিয়ে এই নানা জাতীয় ঢং জামাত শিবির শেখায়নি, লোকে নামাজ পড়ে কি পড়ে না, এতে তাদের বিশেষ মাথা ব্যথা নেই। ব্যাপারটা এক ধরনের cultural shift, খালেদা জিয়া কথায় কথায় উমরাহ্ করতে যান, শেখ হাসিনাও তাঁর নামাজের ছবি দিয়ে শহর ঢেকে ফেলেন। আওয়ামী লীগ ইসলাম বিরোধী কাজ করবে না, এই জাতীয় প্রতিশ্রুতি প্রতিনিয়ত দিয়ে যায়। আবার একই সাথে হিন্দুদের ধর্মীয় স্বাধীনতা আছে, দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আছে এই জাতীয় কথা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, দু দলই ক্ষমতায় থাকলে বলেন। ব্যাপারটা ধর্মীয় স্বাধীনতার নয়, ব্যাপারটা হচ্ছে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি। বাংলাদেশে ধর্ম নিয়ে, বিশেষ করে ইসলাম ধর্ম নিয়ে যে উৎকট প্রদর্শনী, যেকোন সুস্থ রুচির লোকের জন্যই সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়ছে। বাসে উঠলে কোরান তেলাওয়াত, অফিস আদালতে দুপুর বেলা ছোটখাটো জামাতের আয়োজন (বুয়েটে দেখতাম পুরকৌশল বিভাগের বারান্দাতে দল বেঁধে শিক্ষকরা নামাজ পড়ছেন, অথচ একটু হেঁটে গেলেই মসজিদ), এই জাতীয় বিষয়গুলো অন্য ধর্মাবলম্বি বা যারা ধর্মীয় আচার মেনে চলেন না, তাঁদের জন্য যে অস্বস্তির কারণ হতে পারে, সেটা নিয়ে কারুরই মাথাব্যথা নেই।
মাসুদ করিম - ২ আগস্ট ২০১১ (১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ)
এবছর রোজার প্রথমদিনেই এই তারাবির খবর দেখলাম চট্টগ্রামের পত্রিকা দৈনিক আজাদীতে। আজাদীর ওয়েবসাইটে সমস্যা হচ্ছে, ঠিক হলেই লিন্কটি দেয়ার চেষ্টা করব। খবরে বলা হচ্ছিল, এই তারাবির আয়োজকদের দাবি এটি ৬/৭ (ওয়েবসাইটের সমস্যার কারণে খবরটি পড়তে পারছি না, তাই ঠিক কত বছর মনে করতে পারছি না, আর আজাদীটা এই মুহূর্তে আমার হাতের কাছে নেই)বছর ধরে চলছে এবং ৬দিনে এই তারাবি শেষ হয়ে যায়। আয়োজকরা এবার ফুটপাতে প্যান্ডেল লাগাতে গেলে পুলিশ বাধা দেয় এবং ফুটপাতে প্যান্ডেল লাগানো যাবে না বলে আয়োজকদের জানিয়ে দেয়। গতকাল তারাবির নামাজের শেষ দিকে চট্টগ্রামে বৃষ্টি হয়েছিল, নামজিরা প্যান্ডেল না থাকায় তাদের খুব কষ্ট হয়েছিল বলে জানিয়েছে।
মাসুদ করিম - ২ আগস্ট ২০১১ (২:৪৫ অপরাহ্ণ)
আজাদীর সাইট ঠিক হয়েছে।
লিন্ক এখানে।
আজাদীর খবরের সুরে তো মনে হচ্ছে, আজাদী চায় অবিলম্বে মুসল্লিদের ভোগান্তি কমাতে প্যান্ডেল করতে দেয়া হোক! আজাদী।
মাসুদ করিম - ২ আগস্ট ২০১১ (১০:৫৬ অপরাহ্ণ)
হ্যাঁ, প্যান্ডেল লেগে গেছে – তারাবি ফুটপাত বলে কথা। তারাবি ফুটপাতে তুলকালাম তারাবি চলছে, ৩ বছর পর আজাদীতে প্রকাশিত হবে বিশেষ পাতা – তারাবি ফুটপাতের এক দশক।
মাসুদ করিম - ১৯ জুলাই ২০১২ (৬:৫৪ অপরাহ্ণ)
তারাবি ফুটপাত তৈরি হচ্ছে, বাঁশজোড়ার কাজ সম্পন্ন — লেগে যাবে তেরপালও। ফুটপাতে ইফতারি বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারলে পুলিশ ফুটপাতে তারাবিতে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারছে না কেন?
মাসুদ করিম - ২০ জুলাই ২০১২ (১০:১৬ অপরাহ্ণ)
তিন বছরে এই তারাবির লোকসংখ্যা বেড়েছে তিন গুণ, আর যেহেতু ফুটপাতের তারাবি কাজেই সেতারাবি গিয়ে রাস্তার তিন ভাগের দুই অংশ ভরাট করে ফেলেছে। আজ প্রথম তারাবিতেই এই অবস্থা কোনোমতে একসারি গাড়ি চলছে চট্টগ্রামের এই প্রধানতম রাস্তায় রাত ৯:৩৫ মিনিটে। কয়েকদিনের মধ্যে এই রাস্তাকে মনে হচ্ছে ‘তারাবি রাস্তা’ বলে কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দিতে হবে। অসভ্য এবং ইসলামপ্রবণ সমাজ ও প্রশাসন আর কাকে বলে!
মাসুদ করিম - ১০ জুলাই ২০১৩ (১১:৩৬ অপরাহ্ণ)
এটা অভিশপ্ত নগরী, বলে লোকে বন্দর নগরী, কিন্তু এটাই সেই নগরী যেখানে সাঈদী তফসিরের নামে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করত, এটা বন্দর নগরী চট্টগ্রাম যার জিইসির প্রধান সড়কে তারাবি পড়ানো হয় এবং ট্রাক ট্রেইলর পুলিশের সংকেতে আইল্যান্ডের অপরপাড়ের রাস্তায় গিয়ে বিপরীতমুখী যানবাহনের মুখোমুখি হয়। গতবার তারাবিতে কোনোমতে একসারি গাড়ি চলেছে এবার আর তা পারছে না, দেখা যাক আগামীবার হয়তো দুপাশের রাস্তাই বন্ধ হয়ে যাবে। চলুক, চলতেই থাকুক, তিন বছর চলছে, এক দশক হবে, যুগ হবে, একসময় এই জিইসির মোড়ে সপ্তাহব্যাপী তারাবি মেলা হবে, সারা দেশ পৃথিবী থেকে মানুষ আসবে ওই তুরাগ তীরের মতো, আহা ভাবতেই ভবিষ্যতের কথা ভেবে শিহরিত হচ্ছি।