গত কয়েকমাস ধরে কিছু মানুষের সাথে আলাপ করে একরকম হতাশাবোধ করছি। এদেশের অন্ততঃ অর্ধেক মানুষ আওয়ামীলীগের কট্টর বিরোধী এবং বিএনপির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থক। কাউকে ছোট করার জন্য বলা নয়, আমার ধারনা বিএনপি সমর্থক মাত্রই খানিকটা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। জামাতের সাথে বিএনপির জোট হবার পর থেকেই এরা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে চিন্তিত মাত্রার উদাসীন।
এই উদাসীন মানবগোষ্ঠীর অধিকাংশ জামাতের ঘৃণিত যুদ্ধাপরাধ নিয়ে মোটেও বিচলিত নয়। কারণ খালেদা জিয়ার অভিধানে যুদ্ধাপরাধ শব্দটি নেই। তাই এরাও এদের অভিধান থেকে মুছে দিয়েছে। কেবল আওয়ামী বিরোধীতার কারণে এরা নিজেদের রেখেছে ঘৃনিত যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থক কাতারে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকে কিছু সংখ্যক মানুষ ভারতের ষড়যন্ত্র মনে করতো। দেশকে কেটে ভাগ করার ষড়যন্ত্র মনে করতো। পাকিস্তানীরা সেই মানুষগুলোকেও যখন কচুকাটা করতে বাদ রাখলো না, তখন বুঝেছিল পাকিস্তানী হানাদার কখনো সভ্য মানুষের বন্ধু হতে পারে না।
এই মানুষগুলোর জন্যও কি সেরকম ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে?
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৮ comments
রায়হান রশিদ - ১০ অক্টোবর ২০১০ (৫:৪৭ অপরাহ্ণ)
কিছুটা মনে হয় অনুমান করতে পারছি আপনি কাদের বোঝাতে চেয়েছেন। বহু প্রতীক্ষার যুদ্ধাপরাধী-বিচার শুরু করতে এই দেশের লেগেছে ৩৯ বছর। প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছে, সেটাই বড় কথা। এই প্রক্রিয়াটি ত্রুটিমুক্ত নয়, হওয়ার কথাও নয়। যারা শুরু করেছেন, তারাও নিজেদের উদ্দেশ্য থেকে মুক্ত নন, হওয়ার কথাও নয়। যুদ্ধাপরাধ সংগঠনের পেছনে যেমন এক ধরণের রাজনীতিই মূখ্য ভূমিকা পালন করে, সেই সব অপরাধের বিচারের সিদ্ধান্তটিও রাজনৈতিকই হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। এর পেছনে রাজনৈতিক হিসাব নিকাশ থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। অপরাধ এবং এর বিচার প্রক্রিয়ার পেছনের সেই রাজনীতিকে সময়ের আলোকে সঠিক পরিপ্রেক্ষিত থেকে দেখতে না পারলে বিভ্রান্ত হওয়া খুবই সহজ। আর রাজনীতিমুক্ত বিচার এর কথা বলা যতটা না সহজ, বাস্তবে ঠিক ততোটাই হয়তো কঠিন, কারণ, আমরা কেউই ইউটোপিয়ার বাসিন্দা নই।
এই বিচারকে সরাসরি বা প্রচ্ছন্নভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার গোষ্ঠীর অভাব নেই। সরাসরি যুদ্ধাপরাধী চক্রের সাথে যারা জড়িত তাদের ভূমিকার পেছনের কারণগুলো অনুধাবন কষ্টকর নয়। বিষয়টি ইন্টারেস্টিং হয়ে ওঠে যখন প্রগতিশীলদের একাংশের দীর্ঘশ্বাসগুলো যুদ্ধাপরাধী চক্রের দীর্ঘশ্বাসের সাথে একাকার হয়ে যায় তখন। এই দীর্ঘশ্বাসগুলো কখনও মূর্ত হয়ে ওঠে আপাত দৃষ্টিতে কিছু ভালোমানুষীসুলভ বক্তব্যে, কখনো নির্দিষ্ট কোন দলের বিরুদ্ধে আজন্মলালিত হিংসা-বিদ্বেষ থেকে, কখনো ‘আন্তর্জাতিক মানদন্ড’ due process কিংবা তথাকথিত নিরপেক্ষতার ধোঁয়াটে কিছু বিষয় সামনে তুলে ধরে। দেশ জুড়ে প্রগতিশীলদের একাংশের যেন এখন হঠাত খুব সুশীল নিরপেক্ষ হয়ে ওঠার ধুম লেগে গেছে! এদের আমরা চিনি, এরা কখন কেন কি কথা বলছেন সে বিষয়েও আমরা নাওয়াকিফ নই।
এই বিচারের প্রক্রিয়া এমনই এক পর্বতপ্রমাণ (বুদ্ধিবৃত্তিক কারিগরিক সাংগঠনিক সব ধরণের সামর্থ্য অর্থেই) প্রক্রিয়া যা যে কোন দেশের সরকারের পক্ষেই সমস্ত সামর্থ এক করেও সুষ্ঠুভাবে সামলে ওঠা কঠিন। নানা কারণেই বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তো তা আরও কঠিন। তাই এমন এক পরিস্থিতিতে যখন দেশের অধিক সংখ্যক মানুষকে ৩৯ বছরের জমে থাকা এই কাজগুলো সম্পাদনে জড়িত করা দরকার – তখন বিভ্রান্তি আর হতাশা ছড়ানোর মাধ্যমে জনগণের একাংশকে এই পুরো প্রক্রিয়া থেকে দূরে ঠেলে দেয়ার পায়তারা যারা করেন তাদেরও চিনে নেয়া জরুরী। আমরা ভুলে যাইনি ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধকেও কেউ কেউ ‘দুই কুকুরের লড়াই’ বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল!
কিছুদিন আগে আইসিএসএফ এর পক্ষ থেকে একটি ই-বুক প্রকাশ করা হয়েছে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রধান তিনটি টিভি চ্যানেলের মুক্তিযুদ্ধকালীন নয় মাসের সমস্ত প্রকাশিত খবরগুলো দলিলবদ্ধ করা রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন গোষ্ঠীগুলোর ভূমিকার কথা উঠে এসেছে, একেবারে সাদাকালোয় তাৎক্ষণিক প্রকাশিত সংবাদের আকারে। ৩৬৩ পৃষ্ঠার সেই ইবুকটির একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা রয়েছে এই লিন্কে।
নীড় সন্ধানী - ১১ অক্টোবর ২০১০ (২:৫৮ অপরাহ্ণ)
এই দীর্ঘশ্বাসঅলা তাত্ত্বিকগুলো ফরহাদ মজহারের মতোই ইন্টারেস্টিং।
রেজাউল করিম সুমন - ১২ অক্টোবর ২০১০ (১০:৫৯ অপরাহ্ণ)
১৯৭১-এর যুদ্ধাপরাধ/আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার বিষয়ে মজহারের বক্তব্য কী, জানি না। তবে “যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে জামায়াতের ১১ কৌশল!” শিরোনামের এক সংবাদে বলা হয়েছে,
দেখতে পাচ্ছি, ১৭ মার্চ ২০০৯ তারিখে ‘নয়া দিগন্ত’ পত্রিকায় মজহার প্রসঙ্গত লিখেছিলেন,
ওই ১৯৫ জন পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তার প্রসঙ্গ জোরেসোরে সামনে নিয়ে এসেছেন আরেক ‘বাম তাত্ত্বিক’ বদরউদ্দীন উমর-ও। ১ জুলাই ২০১০ তারিখে ‘কালের কণ্ঠ’ পত্রিকায় “যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে” শীর্ষক উপ-সম্পাদকীয়তে তিনি লিখেছিলেন,
তাঁর বিবেচনায় অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি প্রসঙ্গের উল্লেখও করেছেন লেখক :
লেখার ইতি টানা হয়েছে এভাবে —
আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট চরিত্র উদ্ঘাটনের সংগত প্রয়াস তাঁর অন্য অনেক লেখার মতো এ-লেখাতেও আছে ; কিন্তু রাজাকার আল-বদরদের বিচার তিনি চান কি না সে-সম্পর্কে টু-শব্দটিও নেই! লেখার শুরুতেই উমর লিখেছিলেন,
বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সত্যি সত্যিই চায় কি না, এ বিষয়ে তো সন্দেহ পোষণ করা যেতেই পারে; উমরের লেখাটা ছাপা হবার একশো দিন পরেও সেই সন্দেহ কুরে কুরে খেতে পারে আমাদের অনেককে। এমনকী এই সিদ্ধান্তে আসতেই-বা বাধা কোথায় যে, সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় না! আওয়ামী লীগ জাহান্নামে যাক, কিন্তু উমর নিজে কী চান — যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, না কি জল ঘোলা করতে?
২
কেউ কি দয়া করে নীচের লিংকের পুরো লেখাটা বদরউদ্দীন উমরকে পৌঁছে দেবেন?
The Curious Case of the 195 War Criminals
মাসুদ করিম - ১০ অক্টোবর ২০১০ (৬:৫২ অপরাহ্ণ)
মানে, বলতে চাইছেন আজ যারা যুদ্ধাপরাধের বিচার সমর্থন করছেন, তাদের কচুকাটা হওয়ার সম্ভাবনার কথা? সেটা হওয়ার সম্ভাবনা আছে, কিন্তু অভয় তো ওই একাত্তর থেকেই নিতে হবে। পাকিস্তান আর্মির ভয়ে যেদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে যেতে ভয় পায়নি, আজ নিজের দেশে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ শক্তির হাতে ভবিষ্যতে কচুকাটা হওয়ার ভয়ে কেন যুদ্ধাপরাধ বিচারের পক্ষে অবস্থান নিতে ভয় পাবে? আর জনপ্রিয় করেই যুদ্ধাপরাধীর বিচার করতে হবে এটাও তো ঠিক নয় — যেহেতু বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল এবং একদল মুক্তিযুদ্ধবিরোধী (যুদ্ধবিরোধী নয়) যুদ্ধের সব নিয়ম ভেঙ্গে সাধারণ মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর অকথ্য নির্যাতনের মাধ্যমে গণহত্যা চালিয়েছিল — শুধু এই একটি কারণেই বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতেই হবে। আমরা যদি আজ সারা বিশ্বের পরিস্থিতির আলোকে যুদ্ধবিরোধী ভূমিকার কথাও ভাবি, তবে আমাদেরকে সব সময়ের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারের সমর্থন করতেই হবে, ভবিষ্যতের পৃথিবীতে যুদ্ধবিরোধীর চেতনার মূলকথাই হওয়া উচিত ‘আগে চাই আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার’– আমার এই দেশে সবার সব দেশে।
নীড় সন্ধানী - ১১ অক্টোবর ২০১০ (২:৫৪ অপরাহ্ণ)
না, যারা যুদ্ধাপরাধের বিচার চায় তাদের কথা বলছি না। যারা নিরপেক্ষতার নামে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে মৌন অবস্থানে আছে কিংবা ‘অতীতের ব্যাপার এত বছর পরে ঘাটাঘাটি করা কি দরকার’ এরকম মানসিক অবস্থানে আছে তাদেরকে বুঝিয়েছি।
এই মানসিকতার মানুষগুলো যু্দ্ধাপরাধীদের বিচারে জনমত গঠনের প্রধান অন্তরায়। বিএনপি যদি হরতাল ডাক দেয় রাজাকারদের রক্ষায়, এই মানুষগুলো হৈ হৈ করে সমর্থন দেবে। একাত্তরেও এরকম মধ্য মানসিকতার লোক ছিল। যারা পাকিস্তানীদের হাতে নির্যাতিত হবার আগ পর্যন্ত পাকিস্তান জিন্দাবাদ গেয়ে গিয়েছিল।
নুর নবী দুলাল - ১১ অক্টোবর ২০১০ (১:০৯ পূর্বাহ্ণ)
জনাব মাসুদ করিম, আপনি খুব চমৎকার বলেছেন। আপনার সাথে সহমত পোষন করলাম।
রাসেল আরেফিন - ১২ অক্টোবর ২০১০ (৬:২০ অপরাহ্ণ)
বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের প্রকাশ্য যে সাহায্য করছে, তাতে এই দলটির জন্য মন্তব্য কারার মত ভাষা খুজে পাচ্ছি না।
নুর নবী দুলাল - ১৪ অক্টোবর ২০১০ (৪:১৭ অপরাহ্ণ)
বিএনপি রাজনৈতিক দলটির জন্মই হচ্ছে ৭১-এ এদেশে পাকিস্তানকে সরাসরি যারা মদত যুগিয়েছিল, তাদের প্রত্যক্ষ মদতেই। যেমন মুক্তিযুদ্ধের সময় শাহ আজিজের ভূমিকার কথা আমাদের সবার জানা আছে। তাই, যুদ্ধ অপরাধের বিচার প্রসঙ্গে বিএনপি দলটি সব সময়ই প্রকাশ্যে, অপ্রকাশ্যে যুদ্ধ অপরাধীদের পক্ষাবলম্বন করবেই…..