এস.এস.সি.তে আমাদের ভূগোল বইটা আমার খুব প্রিয় ছিল। কী সব নাম -- সাতপুরা পাহাড়। আরাবল্লী পর্বতমালা। প্রেইরি। সাভানাহ্ তৃণভূমি। স্তেপ্‌স্‌। তৈগা বনভূমি। অয়নবায়ু আর প্রত্যয়ন বায়ু। গর্জনশীল চল্লিশা। [...]

এস.এস.সি.তে আমাদের ভূগোল বইটা আমার খুব প্রিয় ছিল। কী সব নাম -- সাতপুরা পাহাড়। আরাবল্লী পর্বতমালা। প্রেইরি। সাভানাহ্ তৃণভূমি। স্তেপ্‌স্‌। তৈগা বনভূমি। অয়নবায়ু আর প্রত্যয়ন বায়ু। গর্জনশীল চল্লিশা। ওব-ইনিসি-লেনা-আমুর। দজলা-ফোরাত। টাইগ্রিস-ইউফ্রেটিস। শিরদরিয়া-আমুদরিয়া। বিপাশা-বিতস্তা-ইরাবতী-শতদ্রু-চন্দ্রভাগা। আহা! ইংল্যান্ডের খনি এলাকার নাম। উত্তর আমেরিকার খনিজদের নাম। মাদাগাস্কারের পশুদের নাম। এখন যখন ফিরে দেখি, মনে হয় কী চমৎকার পাঠ্যবই, আর কী প্রাণ ঢেলেই না সেই বই পড়াতেন মিসেস রোকেয়া (হলিক্রস স্কুল, দশম শ্রেণী, ১৯৯২)। যারা স্কুলজীবনে কখনো বিদেশে যায়নি, যারা কোমরে ভাঁজ করে রুমাল গুঁজে রাখা শিখেছিল পরিচ্ছন্নতার জন্যে আর যারা পানির বোতল দেবার সময় আলতো করে বলতো -- 'মুখ না লাগিয়ে খাও', সেইসব মেয়েদের রোমান্টিক জগতে একটা নিঃশব্দ বিপ্লব এনে দিয়েছিল সেই ভূগোলবইটা। যেন আস্তে করে বলেছিল -- 'এখানেই সবকিছু শেষ নয়। আরো কত আছে!' এর আগে যে-পাঠ্যবইটি আমার মন জয় করেছিল সেটি সমাজবিজ্ঞান বই, ক্লাস ফাইভের (১৯৮৭), রাজা বিম্বিসারের (নাকি বিন্দুসার) নাম শোনামাত্র আমার কেন ভাল লেগেছিল মনে নেই। চণ্ডাশোক থেকে ধর্মাশোক হওয়া, বখতিয়ার খলজির হাতে গোনা কয়টি ঘোড়সওয়ার নিয়ে বঙ্গবিজয় আর সেসময় লক্ষ্মণ সেন নাকি দুপুরের ভাত খাচ্ছিলেন (আচ্ছা, লক্ষণ সেন ভাতের পাতে আর কী কী খেতেন?), বারভুঁইয়ার গল্প, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পুরো ইতিহাস, ভাইসরয়দের পরম্পরা এইসব মিসেস চন্দ্রাবতী ঘোষ খুব যত্ন করে পড়াতেন। আর তার সম্পূরক খাদ্য হিসেবে মিসেস রোজ ডায়াস পড়ে শোনাতেন একটা বই আলো দিয়ে গেল যারা। পুরুরাজের সাহস, বৃক্ষপ্রিয় বাবর, জ্ঞানান্বেষী হুমায়ুন, কোহ-ঈ-নুর দরিয়া-ঈ-নুর দুই রত্ন। আর একটা পাঠ্যবইয়ের উল্লেখ না করলেই নয়, সেটা কলেজে থাকতে হাতে পেয়েছিলাম, আমাদের ইংরেজি বই (এইচ.এস.সি.তে পঠিতব্য বই, ১৯৯৪-৯৫), আমরা তো নেহাত বাংলামিডিয়ামের ছাত্রী, বিয়েট্রিক্স পটারের জেমাইমা পাডল ডাককে চিনি না, পি জি উডহাউজ পড়িনি, কেউ কেউ চার্লস ডিকেন্সের দ্য ওল্ড কিউরিওসিটি শপ সিনেমাটা দেখেছি, হেমিংওয়েকে চিনি কেবল মুভি অভ দ্য উইকের একনিষ্ঠ দর্শক ছিলাম বলে। আমাদের পাতে এসে পড়লো সমারসেট মম, ও হেনরী, রবার্ট ফ্রস্ট। আর আমাদের ইংরেজি শিক্ষিকা মিসেস সেলিনা শেখালেন নতুন শব্দ -- অ্যাজাইল/নিম্বল। ক্রাইটেরিয়ন। নাইভ। আর আমরা (অ্যাজাইল এবং নাইভ) মেয়েরা আমাদের পুরনো লাইব্রেরিতে (অসাধারণ লাইব্রেরি ছিল হলিক্রস কলেজে, কেউ যেত না সচরাচর, যে যেত, তার গোত্রান্তর ঘটে…

বেশ কিছুদিন আগে রেডিওতে একটা খবর শুনেছিলাম, খবরটি হচ্ছে টেক্সাসের একটি শহর, নাম লরেডো, যেখানে আড়াই লাখ লোকের বাস, সেই শহরের শেষ বইয়ের দোকানটি বন্ধ হয়ে গেছে[..]

বেশ কিছুদিন আগে রেডিওতে একটা খবর শুনেছিলাম, খবরটি হচ্ছে টেক্সাসের একটি শহর, নাম লরেডো, যেখানে আড়াই লাখ লোকের বাস, সেই শহরের শেষ বইয়ের দোকানটি বন্ধ হয়ে গেছে। আড়াই লাখ লোকের একটি মার্কিন শহর, ওয়ালমার্ট আছে দুটো, পেল্লায় শপিং মল আছে দুটো, গোটা পাঁচেক বড় বড় রিটেল স্টোর আছে, কাপড় আর প্রসাধনের দোকান নিশ্চয় গণ্ডায় গণ্ডায় আছে, কিন্তু বইয়ের দোকান একটিও নেই! সেই শহরে নিশ্চয় উকিল, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কলেজ শিক্ষক বাস করেন, এঁদের কারুরই বই কেনার প্রয়োজন নেই? অলস দুপুরে সেই শহরের কোন গৃহিণীর বইয়ের দোকানে গিয়ে একটা দুটো 'নাটক নভেলের' বই কিনতে ইচ্ছে করে না? বই কিনতে হলে তাঁদের যেতে হবে দেড়শ মাইল দুরের আরেক শহরে। বেশ কয়েকবছর আগে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল ডালাসের কাছাকাছি আরেকটি শহরে, অর্থের অভাবে শহরের একমাত্র পাবলিক লাইব্রেরীটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এক সহৃদয় ব্যক্তি লাখ তিনেক ডলার দান করে লাইব্রেরীটিকে বন্ধ হয়ে যাওয়া থেকে উদ্ধার করেন। একটি ওয়েবসাইটে মার্কিনীদের বই পড়া বিষয়ে পরিসংখ্যান পাওয়া গেলঃ মাত্র ৩২ ভাগ মার্কিনী সারাজীবনে একবারের জন্য হলেও বইয়ের দোকানে গিয়েছেন (তার মানে ৬৮ ভাগ কখনোই কোন বইয়ের দোকানে যাননি)। ৪২ ভাগ শিক্ষিত (মানে কমপক্ষে স্নাতক ডিগ্রী আছে) মার্কিনী পড়ার বইয়ের বাইরে একটি বইও পড়েননি। ৮০ ভাগ মার্কিন পরিবার ২০০৫ সালে কোন বই কিনেন নি। ২০০৯ সালে মার্কিনীরা বই কিনেছে ১৪ বিলিয়ন ডলারের, একই সময়ে জুতো কিনেছে ৪৪ বিলিয়ন ডলারের, মদ খেয়েছে ১২০ বিলিয়ন ডলারের আর ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্টে খরচ করেছে ১৪৫ বিলিয়ন ডলার। যে জাতি বই পড়ে না সে জাতির উন্নতি হয়না, এই জাতীয় একটি কথা আমরা ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি। তাহলে মার্কিনীদের বই পড়ায় এত অনীহা কেন? জাতীয় উন্নতিতে তাদের কি কোন আগ্রহ নেই? নাকি ইতিমধ্যে উন্নত জাতির এই দশাই হয়। উন্নত হবার আগে কি তবে এরা বই পড়তো, মানে উনবিংশ শতকে? সে আমলে বই এত সুলভ ছিল না, সাধারণ লোকজনকে বেঁচে থাকার জন্য প্রচুর পরিশ্রম করতে হতো, তাই বই পড়ার এত সময়ও ছিল না। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, তারপরে বিশ বছর জুড়ে অর্থনৈতিক মহামন্দা, এই সব পেরিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে, যখন মার্কিন মধ্যবিত্ত সুস্থির হবার সুযোগ পেলো, তখনকি তারা…

একাত্তরের গণহত্যা কেউ কি ভুলতে পারে? তারপরও বিচারের বাণী নিভৃতে কেঁদেছে বছরের পর বছর। কিন্তু সময় বদলে যায়, কেননা সময়ও চায় অতীতকে তার প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে। তাই গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের খুজেঁ বের করছে আইনের দীর্ঘ হাত। কেমন ছিল সেই দিনটি, যেদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সামনে হাজির করা হলো আন্তর্জাতিক অপরাধে অভিযুক্ত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে? মফিদুল হক লিখেছেন সেই দিনটির কথা।

আদালত কক্ষে প্রবেশ করতে আমার কিছুটা বিলম্ব ঘটে গিয়েছিল। প্রধান ফটক দিয়ে এলাকায় প্রবেশের মুখে জেরা ও তল্লাশি থেকে বোঝা যাচ্ছিল আজকের আদালতের রয়েছে ভিন্নতা। একাত্তরে গণহত্যা, মানবতা বিরোধী অপরাধ, শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আদালতে উপস্থিত করা হবে প্রধান এক অভিযুক্ত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে। মূল ভবনে ঢোকার মুখে আবারও তল্লাশি এবং পরিচয়প্রদান ও পরিদর্শকের কার্ড সংগ্রহের জন্য বিলম্ব হয়ে গেল আরো। ঢোকার সময়ে গুঞ্জন শোনা গেল, বেশ কিছুটা হৈ-হল্লা ঘটেছে প্রবেশাধিকার নিয়ে। মূল এজলাশ সুপরিসর বটে, তবে ভেতরে প্রবেশের দাবিদার হয়েছেন যত মানুষ ততজনকে স্থান দেয়ার কোনো উপায় নেই। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে এজলাশে উপস্থাপনেও কিছু বিলম্ব ঘটেছে, প্রিজন ভ্যানে তিনি যখন পৌঁছলেন আদালত-প্রাঙ্গণে তখন পরিবারের সদস্য ও আইনজীবীদের কেউ কেউ পুলিশী বারণ উপেক্ষা করে অভিযুক্তের সঙ্গে পার করলেন দীর্ঘ সময়। ফলে ঘটেছিল অনভিপ্রেত বিলম্ব। আমি যখন প্রবেশ করি আদালত-কক্ষে তখন অভিযুক্তের আইনজীবীর জমাকৃত ওকালতনামা বৈধ হয় নি বিধায় বিচারকমণ্ডলী সে-বিষয়ে মত-প্রকাশ করছিলেন। অভিযুক্তের পক্ষের আইনজীবীকে সংযত থাকতেও উপদেশ দিচ্ছিলেন ট্রাইবুন্যালের মান্যবর প্রধান বিচারক। সেসব কথা শুনছিলাম বটে, কিন্তু আমার নজর পড়ে ছিল কাঠগড়ায় দাঁড়ানো অভিযুক্তের দিকে। তিনি বলিষ্ঠ পুরুষ, তাঁর দাঁড়িয়ে থাকায় শারীরিক সেই বলিষ্ঠতার কোনো কমতি ছিল না। তাঁর চেহারায় বা শরীরে বা শরীরের ভাষায় নির্যাতনের কোনো ছাপ নেই। মনে পড়ছিল মাত্র ক’দিন আগে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ ও সংসদ সদস্য সাকা চৌধুরীকে পুলিশ রিমাণ্ডে নির্যাতন করা হয়েছে উল্লেখ করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দেয়া বিবৃতির কথা। সেই বিবৃতিতে অনেক ধরনের নির্যাতনের উল্লেখ করা হয়েছিল, পায়ের নখ উপড়ে ফেলা, যৌনাঙ্গে বিদ্যুৎ শলাকা প্রয়োগ, ক্ষুর দিয়ে তলপেটে চির ধরানো ইত্যাদি ইত্যাদি। অ্যামনেস্টির বাংলাদেশ সংক্রান্ত গবেষক আব্বাস ফায়েজ এইসব নির্যাতনের কথা বলে বাংলাদেশ সরকারের জবাবদিহিতা কামনা করেছেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিবেকের বন্দিদের পক্ষে দাঁড়াবার জন্য সদা সচেষ্ট থাকে। কিন্তু পশ্চিমী দৃষ্টিভঙ্গি যে তাদের চিন্তা-চেতনা অনেকাংশে আচ্ছন্ন করে রাখে সেই পরিচয়ও তারা সময় সময় দিয়েছে। বাংলাদেশে একাত্তরের গণহত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা বিচারের হাত থেকে নিজেদের জন্য অব্যাহতি নিশ্চিত করেছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু-হত্যা ছিল তাদের এই অব্যাহতি আদায়করণ প্রচেষ্টার অংশ। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর পর বাতিল ঘোষিত হয় দালাল আইন, রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসিত হয় ঘাতক ও…

সকালে ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় চেয়ার টেনে বসবো, আয়েশ করে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ভোরের তরতাজা দৈনিকের পাতায় চোখ বুলাবো এই সামান্য শখটা দিবাস্বপ্নই থেকে গেল [..]

সকালে ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় চেয়ার টেনে বসবো, আয়েশ করে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ভোরের তরতাজা দৈনিকের পাতায় চোখ বুলাবো এই সামান্য শখটা দিবাস্বপ্নই থেকে গেল। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সকাল সোয়া সাতটার ট্রেন ধরার দৌড়, আর এখন সাড়ে সাতটার চাকরীর দৌড়ে ভোরের পত্রিকা পড়ার সাধটা শিকেয় তোলাই থেকেছে। শুক্রবারে আনন্দটা পাওয়া হতো কখনো সখনো। ছুটির একটা দিন। কিন্তু যে শুক্রবারগুলো পত্রিকার পাতার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার আনন্দ দিত, সেই শুক্রবারগুলোও যেন হারিয়ে যাচ্ছে। পত্রিকা পড়ার সেই তীব্র সাধটা আলগা হতে হতে কখন যেন মরে গেছে। আজকাল পত্রিকা হাতে নিয়ে শিরোনামটা দেখেই রেখে দেই। পত্রিকার প্রতি আগ্রহ হারানোর কারণ ভাবতে গিয়ে লেখাটা শুরু করলাম। সমস্যাটা কি পত্রিকার না পাঠকের? একসময় পত্রিকার চরিত্র বিশ্লেষণ করা হতো কেবলমাত্র রাজনৈতিক মেরু দিয়ে। ডান, বাম কিংবা সুবিধাবাদী মধ্যম ইত্যাদি। ডান বা জামাতী লোক পড়বে সংগ্রাম/ইনকিলাব, বামধারার লোক সংবাদ, মোটামুটি মধ্যমধারা পড়বে ইত্তেফাক, আবার কট্টর আওয়ামী লীগ হলে বাংলার বাণী ধরনের পত্রিকা। সংবাদপত্রের আসল বিপ্লব শুরু হয় এরশাদ পতনের পর। আজকের কাগজ নামে নতুন চেহারার একটা পত্রিকা আসে বাজারে এবং সম্পূর্ণ নতুন ধারার প্রচলন করে পত্রিকায়। প্রচলিত ফরমেটের পত্রিকা বদলে গিয়ে সৃষ্টি হয় কলামিষ্ট ধারার। মাঝখানের বিশাল দুটি পাতা বরাদ্দ কয়েক রকমের কলামিষ্টের জন্য। নিউজের চেয়ে ভিউজ প্রাধান্য পেতে থাকে পত্রিকায়। মানুষ নতুন আগ্রহ নিয়ে পত্রিকা পড়তে শুরু করে। কিন্তু মুগ্ধতা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই হঠাৎ একদিন মালিক সাংবাদিক বিরোধে আজকের কাগজ ভেঙ্গে গেল। পত্রিকা থেকে মূলধারার অংশটি বেরিয়ে ভোরের কাগজের জন্ম দিল। পাঠক কিছুদিন হতবাক হলেও অল্প সময়ে ভোরের কাগজও দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। আমরা জানতে পারি ব্যবসায়ী কাম রাজনীতিবিদ সাবের হোসেন চৌধুরী এই পত্রিকার মালিক। এই প্রথম সংবাদপত্র একটা কর্পোরেট শক্তির ছোঁয়ায় আসে। সেই সময় আরেক কর্পোরেট পত্রিকা জনকন্ঠও ব্যাপক জনপ্রিয় পত্রিকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। আজকের কাগজের ভাঙ্গনের মহামারী কিছুকাল পর ভোরের কাগজেও ফাটল ধরায়। এবারো মালিক সাংবাদিক দ্বন্দ্ব। কর্পোরেট ছোঁয়া থেকে দূরে থাকার জন্য বিদ্রোহী সাংবাদিকগন নতুন একটা স্বাধীন নিরপেক্ষ পত্রিকা গড়ার ঘোষনা দেয়। আসে প্রথম আলো। ভোরের কাগজের সাদাকালোর গাম্ভীর্য ছাড়িয়ে সম্পূর্ন রঙিন প্রথম আলো। শোনা গেল এবার দেখা যাবে সত্যিকারের নিরপেক্ষ…

হঠাৎ করেই ইসলামের আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্র (!!!) হয়ে উদয় হওয়া তথাকথিত ইসলামিক স্কলার ভারতীয় নাগরিক ডা.জাকির নায়েক নাকি আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করবেন[..]

সচলায়তনের একটা পোস্ট থেকে জানলাম যে, জাকির নায়েক ১২ দিনের এক সফরে বাংলাদেশ আসছেন আগামী ৩০ নভেম্বর। হঠাৎ করেই ইসলামের আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্র (!!!) হয়ে উদয় হওয়া তথাকথিত ইসলামিক স্কলার ভারতীয় নাগরিক ডা.জাকির নায়েক নাকি আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করবেন। নিজের মালিকানাধীন পিস টিভির কল্যাণে সারা বিশ্বে নিজেকে পরিচিত করে তোলা এই লোক একজন চিকিৎসক হলেও পেশায় তিনি একজন ধর্মজীবি। ধর্ম বেচে খান। এতদিন ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়ালেও এই প্রথম তাঁর মনে পড়েছে বাড়ির পাশে মুসলিম দেশ বাংলাদেশের কথা। আমার মতে, বাংলাদেশ সফরের জন্য এ সময়টা বেছে নেয়ার পিছনে জাকির নায়েকের বিশেষ উদ্দশ্য আছে। আমি জানি না, কার বা কাদের আমন্ত্রণে তিনি এদেশে আসছেন নাকি তার নিজের প্রতিষ্ঠান ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন এর নিজস্ব উদ্যোগেই এখানে আসছেন। যে ভাবে আসুন না কেন, তিনি যে এদেশে এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিরোধী প্রচারণাটা আরেকটু উস্কে দেয়া এবং ধর্মভীরু সরল মানুষদের তার মিথ্যা কথার চাটুকারী ফাদে ফেলে বোকা বানানো ছাড়া আর কিছুই করবেন না, তা স্পষ্ট। জাকির নায়েক ইসলাম সম্পর্কে অত্যন্ত কনফিডেন্টলি ধারাবাহিকভাবে মিথ্যা বলে যান একেবারে রেফারেন্স সহ। আর আমরা আমজনতা তা দেখে ভাবি, আহা! মানুষটা কত জ্ঞানী। একেবারে ইসলামের ত্রাণকর্তা! কিন্তু তার দেয়া রেফারেন্স গুলো নিয়ে একটু স্টাডি করলেই বুঝবেন, অধিকাংশই ভুল। তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত জনতাকে বোকা বানানোর জন্য তিনি অত্যন্ত দ্রুত গতিতে এসব রেফারেন্স দিয়ে থাকেন। এ সংক্রান্ত অজস্র প্রমাণ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে আছে। আগ্রহীরা একটা সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন ভিডিও সহ এসব প্রমাণ। বিশ্বে ধর্মীয় বিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানো, সন্ত্রাসবাদ উস্কে দেয়া সহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত জাকির নায়েক। ব্রিটেন এবং কানাডা ইতিমধ্যেই তাদের দেশে জাকির নায়েকের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। আমেরিকার ইসলামিক শরীয়ত বোর্ড তার বিরুদ্ধে ২০ টিরও বেশি ফতোয়া দিয়েছে। ভারতের দেওবন্ধ থেকেও তার বিরুদ্ধে শত শত ফতোয়া দেয়া হয়েছে। ভারতের মওলানা ইরফান তাকে কাফের বলে রায় দিয়েছেন। অথচ কোন ধরনের শিক্ষাগত ইসলামিক জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও উল্টো জাকির নায়েক নিজেই সারা বিশ্বে নানা রকম মনগড়া ইসলামিক ফতোয়া দিয়ে বেড়াচ্ছেন। অপেক্ষায় আছি, দেখি এই ভন্ড বাংলাদেশে এসে কি কি ফতোয়া দিয়ে যায়!!!

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.