জ্ঞানচর্চার স্পৃহা কখনও কখনও ‘অপরাধ’ হয়ে ওঠে। প্রচল রাষ্ট্র ও সমাজের কাছে ওই ব্যক্তি শত্রু হয়ে ওঠে, যে কিনা কেবলই প্রশ্নের উত্তর হাতড়ে বেড়ায়, কেবলই যুক্তি দিয়ে বুঝতে চায় সব কিছুকে। [. . .]

১ জ্ঞানচর্চার স্পৃহা কখনও কখনও ‘অপরাধ’ হয়ে ওঠে। প্রচল রাষ্ট্র ও সমাজের কাছে ওই ব্যক্তি শত্রু হয়ে ওঠে, যে কিনা কেবলই প্রশ্নের উত্তর হাতড়ে বেড়ায়, কেবলই যুক্তি দিয়ে বুঝতে চায় সব কিছুকে। অথচ ব্যক্তির সেই স্পৃহা হয়ত জেগে ওঠে অন্তর্গত নিষ্পাপ বিহ্বলতা থেকে। জাগতে পারে অসহায় বিস্ময় ও ক্রন্দন থেকে। যেমন জেগেছিল আরজ আলী মাতুব্বরের ভেতর। সে ঘটনা সকলেরই জানা। ‘মাকে আমি আর কোনওদিনই দেখতে পাব না! মিশে যাবেন তিনি মৃত্তিকার ভেতর!’ হয়ত এমনই এক প্রতিকারহীন কষ্ট থেকে মাতুব্বর ১৩৩৯ সনে তাঁর মৃত মার ছবি তুলেছিলেন এক আলোকচিত্রীকে নিয়ে এসে। কিন্তু তাতে বেঁকে বসে সমাজের কর্তাব্যক্তিরা। কারণ ছবি তোলা তো ধর্মে নিষেধ। তার ওপর নারীর – মৃত নারীর! তাঁর মার জানাজা আর দাফন করেনি তারা। কয়েকজন নিকটাত্মীয় ও শুভানুধ্যায়ী নিয়ে মায়ের শবদেহের সৎকার করেন তিনি। বাল্যকাল থেকেই সত্যের অনুসন্ধানে একাগ্র মাতুব্বরকে সমাজপতিদের সংস্কার, যুক্তি ও বুদ্ধিহীনতা অস্থির করে তোলে। এ ঘটনায় হৃদয়-মনন জুড়ে যে আলোড়ন ওঠে, তাই তাঁকে নিয়ে যায় নিরাসক্ত জ্ঞানচর্চার দিকে। এরপর তাঁকে আর ফেরানো যায়নি সে-পথ থেকে। দীর্ঘ ১৮ বছর জ্ঞানসাধনার পর তিনি তাঁর সত্যানুসন্ধান নিয়ে মানুষজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে শুরু করেন। সে কথা জেনে ১৩৫৮ সনের ১২ জ্যৈষ্ঠ বরিশাল শহরের তদানীন্তন ল-ম্যাজিস্ট্রেট ও তবলিগ জামাতের আমির এফ. করিম তাঁকে জামাতভুক্ত করার জন্যে সদলে তাঁর বাড়িতে তসফির নেন। মাতুব্বর তাঁকে বলেন ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞান এই তিন বিষয়ের মধ্যে সমন্বয়ের চিন্তা করতে গিয়ে তাঁর মনে অনেক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তিনি সেগুলোর উত্তর খুঁজছেন। তবলিগ জামাতের আমির যদি তাঁকে সেসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন, তা হলে তিনি জামাতে শরীক হবেন। এফ. করিম তাঁর কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। তবে প্রশ্নগুলোর লিখিত তালিকা নিয়ে যাওয়ার সময় বলেন, ‘কিছুদিন পরেই এর উত্তর পাবেন।’ কয়েকদিন পর তিনি ‘কম্যুনিজমের অপরাধে একটি ফৌজদারি মামলার ওয়ারেন্ট’ পেলেও আর উত্তর পাননি। কারাগারে যেতে হয় তাঁকে। কিন্তু সেখানে আটকে রাখা যায়নি তাঁকে। আদালতে তিনি যে জবানবন্দি দেন তার শিরোনাম ছিল ‘সত্যের সন্ধানে’। আদালত তাঁকে মুক্তি দিলেও নির্দেশ দেন, ‘সত্যের সন্ধানে’ কখনও প্রকাশ করতে পারবেন না তিনি। মাতুব্বর তাঁর সে গ্রন্থ প্রকাশ করতে পারেন স্বাধীন বাংলাদেশে, ২২…

কিন্তু আমরা জানি তারা এগিয়ে যেতেই চান, তারা সন্ত্রাসবাদের ধ্বংসই চান, কিন্তু তারা কোনোমতেই জনস্নেহের ভাজা মাছ ধর্মটাকে পাত থেকে তুলতে চান না। [...]

কে মুসলিম কে মুসলিম নয় কে হিন্দু কে হিন্দু নয় কে বৌদ্ধ কে বৌদ্ধ নয় কে খ্রিস্টান কে খ্রিস্টান নয় কে ইহুদি কে ইহুদি নয় তা জেনে আমাদের কী লাভ, আমরা তো আর ধর্মবেত্তা নই পাদ্রি আল্লামা পুরোহিত রাব্বি মহাথেরো নই আমরা এসবের কী জানি, অথচ নিজের ধর্মের শ্রেষ্ঠত্বের কান ধরে আমরা বলতেই থাকব বলতেই থাকব টেররিস্ট মুসলিম নয় হিন্দু নয় বৌদ্ধ নয় খ্রিস্টান নয় ইহুদি নয় – সন্ত্রাসবাদীর কোনো ধর্ম নেই, এ কেমন কথা, আসলে আমরা এক পা এগোতেই চাই এ কথা বলে কিন্তু আমাদের বড় বড় নেতারা দুধর্ষ জনপ্রিয়তার তারকারা জানেনই না এ কথা বলে তারা চৌদ্দ বছর আগে যেখানে পা ফেলেছিলেন সেখানেই দাঁড়িয়ে আছেন আর এখানেই আমাদের ভয় এই না তারা এক পা আগানোর পরিবর্তে এক পা পিছিয়ে না যান! কিন্তু আমরা জানি তারা এগিয়ে যেতেই চান, তারা সন্ত্রাসবাদের ধ্বংসই চান, কিন্তু তারা কোনোমতেই জনস্নেহের ভাজা মাছ ধর্মটাকে পাত থেকে তুলতে চান না। তাতে যা হওয়ার তাই হচ্ছে একটা অতি সহজ শব্দ তাদের চোখের সামনেই ঘুরছে ফিরছে কিন্তু তারা তা খুঁজে না পেয়ে তাদের ভুল প্রত্যয় নিয়ে বারবার ধর্মকে প্রণোদনা দিচ্ছেন ধর্মের ভেতরে ধর্মের সংঘাতকে উসকে দিচ্ছেন। এটাও তারা করছেন বাবা মা সন্তানের ভাল চেয়ে সন্তানের বারোটা বাজানোর পন্থাতেই। হাসিনা বলছেন, সন্ত্রাসীদের কোন ধর্ম নেই – যারা মসজিদে হামলা চালাচ্ছে তারা মুসলিম নয়। আমির বলছেন, হাতে কোরান নিয়ে মানুষ মারছে যারা তারা মুসলিম নয়। মোদি বলছেন, ধর্ম থেকে সন্ত্রাসবাদকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। তাহলে এরা ধরাটা খাচ্ছেন কোথায়, খাচ্ছেন তারা ধর্মটাকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চাচ্ছেন, কিন্তু তারা ভেবে দেখছেন না কে মুসলিম কে মুসলিম নয় কে হিন্দু কে হিন্দু নয় তার সিদ্ধান্ত দেয়ার তারা কেউ নয়, জঙ্গি মুসলিমটাকে কোনো আল্লামা বেহেস্তের পথ দেখিয়ে হাতে চাপাতি তুলে দিয়েছে, বজরঙ্গি হিন্দুটাকে কোনো স্বামী স্বর্গের পথে গোমাংসভক্ষণকারীকে নিধন করতে পাঠিয়ে দিয়েছে। অথচ উচিত ছিল এদের - এই দুঃসময়ে ‘মানুষ’ শব্দটাকে খুঁজে পাওয়া, যেশব্দটাকে তারা প্রতিনিয়তই অসংখ্য বার উচ্চারণ করছেন উচ্চারণ করতে দেখছেন, একটি বার যদি এই শব্দটার শরণ নিতেন তারা এপ্রসঙ্গে, তাহলে নিশ্চিত তারা এক পা যেমন এগিয়ে যেতেন, নির্বিবাদে প্রতিটি…

বর্ষীয়ান বুদ্ধিজীবী সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী গত সপ্তাহে সম্পাদক এবং ব্লগারদের উপরে নৃশংস হামলার পর বিডি আর্টসের সাথে সাক্ষাৎকারে অন্যান্য বুদ্ধিজীবীদের মতই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। সাক্ষাৎকারটি সংক্ষিপ্তই ছিল [..]

বর্ষীয়ান বুদ্ধিজীবী ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী গত সপ্তাহে সম্পাদক এবং ব্লগারদের উপরে নৃশংস হামলার পর বিডি আর্টসের সাথে সাক্ষাৎকারে অন্যান্য বুদ্ধিজীবীদের মতই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। সাক্ষাৎকারটি সংক্ষিপ্তই ছিল। প্রায় পুরোটাই নীচে কোট করছি : "সময়টা তো খুব আশঙ্কাজনক, একের পর হত্যাকাণ্ড ঘটছে। আশঙ্কাজনক আরও এক কারণে যে, অপরাধীরা ধরা পড়ছে না। আর অপরাধীরা ধরা পড়ছে না বলেই এই অপরাধ বাড়ছে। এর মাত্রাও বেড়ে যাচ্ছে। এরা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। এরা মনে করছে যে, এদের কোনও কিছুই হবে না। এমনিতেই এরা মনে করছে, ধর্মীয়ভাবে শহীদ হবে যদি শাস্তি পায়। তার ওপরে এরা শাস্তি পাচ্ছেও না। কাজেই তারা মনে করে যে, এভাবে পার পাওয়া যাবে এবং এটা তাদের পক্ষে অনেকটা বীরত্বপূর্ণ কাজে পরিণত হয়েছে।’ রাষ্ট্র ও সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমে এই ধরনের উগ্রবাদীরা সবুজ সংকেত পেয়ে যাচ্ছে কি না, এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তা তো বটেই। যারা লিখছে তারা তো অপরাধ করে নাই, নিজের মত প্রকাশ করছে। তারা বৈজ্ঞানিকভাবেই তা লিখছে, কোনো ধর্মীয় আক্রমণের জন্য লিখছে না।’ তিনি হতাশা বোধ করছেন বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের কার্যক্রমে। এটা প্রতিবাদী তরুণদের উৎসাহিতও করছে না। তার কারণে ‘প্রতিবাদ হচ্ছে না সেভাবে। কেউ গুরুত্বও দিচ্ছে না। এটা তো সবার জন্য সমস্যা। রাষ্ট্র গুরুত্ব দিচ্ছে না, সমাজও গুরুত্ব দিচ্ছে না।’ উত্তরণের উপায় হচ্ছে, ‘রাষ্ট্রকে সজাগ হতে হবে। রাষ্ট্র যে কেবল চিন্তার স্বাধীনতাকে রক্ষা করবে, তা না। এরা আক্রমণ করছে রাষ্ট্রের যে ভিত্তি—যে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হওয়ার কথা—সেই ভিত্তির ওপর আক্রমণ করেছে। এরা যে জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছে বিদেশিরা তাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে। বিদেশি মানে বিদেশি পরাশক্তি।’ কিন্তু এটা কি বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা? বা একে কি আদৌ বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলা যায়? ‘একে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলার কোনও অজুহাতই নেই। এটা তো বোঝা যাচ্ছে যে, সুপরিকল্পিত। আর এরা যে নামেই আসুক, জঙ্গি বা অন্যকিছু এদের একটাই কাজ— রাষ্ট্রের মূলনীতিকে আঘাত করা।’ এই সাক্ষাৎকারে অবাক হবার মত কিছুই নেই। সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডসহ গত কয়েকমাস ধরে ব্লগারদের উপর ক্রমাগত হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী একজন প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী যে প্রতিক্রিয়া দেখানোর কথা তিনি তাই দেখিয়েছেন। কিন্তু এই সাক্ষাৎকারটি পড়তে পড়তে কয়েকমাস আগে তাঁর আরেকটি সাক্ষাৎকারের কথা মনে পড়ে…

পিটার কাস্টারসের উপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন নেমে এসেছিল স্বাধীন বাংলাদেশে, যে দেশের সাধারণ মানুষের মুক্তির জন্য সব কিছু তিনি ছেড়ে এসেছিলেন। জেনারেল জিয়া ঢাকা কারাগারের অভ্যন্তরে গোপন মার্শাল ল ট্রাইব্যুনালে প্রহসনের বিচার শুরু করে কর্নেল তাহেরসহ অনেকের বিরুদ্ধে। পিটার কাস্টার্সকেও গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হল। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা সাজানো হল তাঁর বিরুদ্ধে।

  কাটা বেঁছে কই মাছ খাওয়া আমাদের বাঙালিদের জন্যও সহজ কাজ নয়। এই ৬৬ বছর বয়সে কই মাছের দোপেয়াজা খেতে গিয়ে তা আবার মনে হলো। মন চলে গেল ৪১ বছর আগে, যখন আমার বয়সী পিটার কাস্টারসের সাথে পরিচয় হয়েছিল। ঢাকার একেবারে সাধারণ একটা রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খাব আমরা। পিটারই এখানে আমাকে নিয়ে এসেছেন। ভাত আর কই মাছের ঝোল তিনিই অর্ডার করেছেন। ‘কাটা বেঁছে আপনি খেতে পারবেন?’ পিটারের মুখ হাসিতে উজ্জ্বল হলো। ‘চিন্তা নাই, ভালই পারি।’ অবাক হয়ে লক্ষ্য করি কি নিপুণ হাতে কাটা বেঁছে পিটার বাঙালির ভাত-মাছ খেলেন গভীর পরিতৃপ্তি নিয়ে। ‘পেট ঠিক থাকবে তো?’ আবারো পিটারের মুখে হাসি। ‘বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে এত ঘুরেছি, কত রকমের খাবার খেয়েছি। এখন আর সমস্যা হয় না। আপনাদের একটা প্রবাদ আছে না, “শরীরের নাম মহাশয়, যাহা সহাও তাহাই সয়।” আমারও সয়ে গেছে। কই মাছ আমার খুব প্রিয়।’ সমবয়সী আমরা বন্ধুর মতই ছিলাম। তারপরও আমাকে আপনি বলতেন পিটার। যতদূর মনে আছে, সবাইকে আপনি বলতেন। গায়ে সুতির পাজাম-পাঞ্জাবি পায়ে সাধারণ চপ্পল। এমন পোশাকেই দেখা যেত পিটারকে। ফর্সা পা মশার কামড়ে লাল হয়ে আছে। ‘ঘরে মশারি টানান না?’ ‘দেখুন গ্রামের গরিব মানুষের মশারি কিনবার সামর্থ্য নেই। আর আপনাদের দেশে মশার কামড়ে এখন আর ম্যালেরিয়া হয় না। তাই মশারি ব্যবহার করি না।’ পিটারের কথা শুনে স্তম্ভিত হই। বর্ষার পানিতে ভিজে ভিজে তাঁর খোলা পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে ঘা হয়েছে। পিটার দেখেছেন ক্ষেতে-খামারে কাঁদা মাটিতে কাজ করা গ্রামের গরিবদের পায়ে এমন ঘা। ‘সস্তা কোন ওষুধ নেই এই ঘা সারাতে?’ পিটারের এ প্রশ্নের উত্তরে জানাই পটাশিয়াম পারমাঙ্গানেট গুলিয়ে লাগালে সারতে পারে। তুত ডলে দিলেও কাজ হয়। তবে তা তো সব সময় পাওয়া যায় না। দিনকয় পরে তাঁর সাথে দেখা। ফর্সা পা রঙিন হয়ে আছে। উজ্জ্বল হাঁসি পিটারের মুখে। ‘দারুণ কাজে লেগেছে আপনার পরামর্শ। পারমাঙ্গানেটের রং লেগে থাকলেও ঘা ভাল হয়ে গেছে। ঠিক করেছি, এবার গ্রামে যাবার সময় পটাশিয়াম পারমাঙ্গানেট কিনে নিয়ে যাব। গরীবদের খুব কাজে লাগবে।’ গত ৩রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ তারিখে নিজ দেশ হল্যান্ডের লেইডেনে তার বাড়িতে পিটার কাস্টারস ইহধাম ত্যাগ করেছেন। তারপর থেকে কতবার বসেছি তাঁর উপর কিছু লিখবো বলে।…

যুক্তিবাদী বিশ্বদৃষ্টির সাথে অন্ধ বিশ্বাসপ্রবণদের দ্বন্দ্বের সর্বশেষ শহিদ অভিজিৎ রায়। অভিজিৎদের মৃত্যু পরোয়ানায় স্বাক্ষর হয়ে চলেছে কয়েক দশক ধরে। অথচ বাংলাদেশের কথা ছিল তার সবটুকু শক্তি দিয়ে সেক্যুলার মুক্তচিন্তার পরিবেশ গড়ে তোলার [. . .]

এক. আমেরিকা-প্রবাসী ড. অভিজিৎ রায় (জন্ম ১৯৭১) এবার বাংলাদেশে এসেছিলেন অমর একুশের বইমেলায় যোগ দিতে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ইসলামপন্থী আততায়ীরা তাঁকে বইমেলা সংলগ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। আততায়ীদের আক্রমণে অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন, যিনি নিজেও একজন ব্লগার এবং লেখিকা; ‘বিবর্তনের পথ ধরে’ (২০০৭) গ্রন্থটি তাঁরই। কাছাকাছি স্থানেই এই ফেব্রুয়ারি মাসেই এক দশক আগে (২০০৪) মুক্তচিন্তার আরেক পথিকৃৎ অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের উপরও ঠিক এভাবেই আক্রমণ করেছিল ইসলামপন্থী জঙ্গিরা। ছোটবেলা থেকে অভিজিতের বেড়ে ওঠা এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই। বিদেশে ডক্টরেট করতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এ তাঁর পড়াশোনা। সে বুয়েট ক্যাম্পাসও অদূরেই। আমেরিকায় একটি কোম্পানিতে কর্মরত প্রকৌশলী অভিজিৎ। পেশাগত জীবনের পাশাপাশি অভিজিৎ শুধু লিখেছেন। প্রচুর লিখেছেন। ব্লগ থেকে শুরু করে গবেষণা নিবন্ধ, মতামত কলাম থেকে শুরু করে বই। একক এবং দ্বৈত প্রকাশনা মিলিয়ে ড. অভিজিৎ রায়ের প্রকাশিত বইগুলো হলো: ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ (২০০৫), ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’ (২০০৭), ‘স্বতন্ত্র ভাবনা: মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি’ (২০০৮), ‘সমকামিতা: বৈজ্ঞানিক ও সামাজিক মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান’ (২০১০), ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ (২০১১), ‘ভালোবাসা কারে কয়’ (২০১২), ‘বিশ্বাস ও দর্শন’ (২০১২), ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব’ (২০১৪) এবং ‘ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো: এক রবি-বিদেশিনীর খোঁজে’(২০১৫)। অভিজিৎ রায়ের পিতা পদার্থবিজ্ঞানের পণ্ডিত অধ্যাপক অজয় রায়, বর্তমানে অবসরে। তরুণ বয়সে অজয় রায় নিজে সরাসরি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। এর পর সারা জীবন জ্ঞান সাধনা, এবং শিক্ষকতার মহান ব্রত নিয়ে মানুষ গড়ার পাশাপাশি নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিবেদিত করেছেন প্রগতিশীল-সেক্যুলার-বৈষম্যহীন মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ গড়ার কাজে। তাই, সন্তানহারা পিতার কাছেও এই দেশটির জবাবদিহিতার মুহূর্ত এটা। দুই. অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডে পুরো দেশ এখনও স্তম্ভিত। সামাজিক মিডিয়াসহ পুরো বাংলা ব্লগমণ্ডল প্রতিবাদে ফেটে পড়েছে, অভিজিৎ রায়ের লেখাগুলো সর্বশক্তিতে পুনঃপ্রচারে নেমেছে অনেকগুলো প্ল্যাটফর্ম। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শহরে, আর দেশের বাইরে লন্ডন, টরন্টো, নিউইয়র্ক, বার্লিন, সিডনি-তে মানব-বন্ধন থেকে শুরু করে অসংখ্য প্রতিবাদ সমাবেশ হয়ে গেছে গত কয়েক দিনে। অনলাইন আর অফলাইন এর প্রতিবাদে বারবার হ্যাশট্যাগে উঠে এসেছে: 'JeSuisAvijit', 'আমিই অভিজিৎ', 'আমরা অভিজিৎ'। সুষ্ঠু তদন্ত আর বিচারের পাশাপশি মুক্তচিন্তার অনুসারীদের নিরাপত্তার দাবিই এ মুহূর্তে মুখ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই অভিজিৎ রায়ের স্মৃতিস্তম্ভ দাবি নিয়েও এগিয়ে এসেছে সেক্টর কমান্ডার'স ফোরাম। ইতিমধ্যে হত্যার উস্কানিদাতা এক জঙ্গি গ্রেফতার হয়েছে। তদন্ত চলছে। আমেরিকা থেকে এফবিআই-এর একটি তদন্ত…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.