গতকালের রায়ের পর, বিদেশি বিভিন্ন পত্রিকায় নিজামীকে যুদ্ধাপরাধীর বদলে ইসলামিস্ট নেতা হিসেবে পরিচয় দেয়া হয়েছে। এই যেমন ধরুন, বিবিসিতে শিরোনাম হয়েছে ‘বাংলাদেশ ইসলামিস্ট লিডার মতিউর রহমান নিজামী সেন্টেন্স্‌ড্ টু ডেথ’, ভাবখানা এমন যেন যুদ্ধাপরাধের দায়ে নয় বরং ইসলামিস্ট নেতা হবার অপরাধেই তার এই শাস্তি। [. . .]

গতকালের (২৯ অক্টোবর ২০১৪) রায়ের পর, বিদেশি বিভিন্ন পত্রিকায় নিজামীকে যুদ্ধাপরাধীর বদলে ইসলামিস্ট নেতা হিসেবে পরিচয় দেয়া হয়েছে। এই যেমন ধরুন, বিবিসিতে শিরোনাম হয়েছে ‘বাংলাদেশ ইসলামিস্ট লিডার মতিউর রহমান নিজামী সেন্টেন্স্‌ড্ টু ডেথ’, ভাবখানা এমন যেন যুদ্ধাপরাধের দায়ে নয় বরং ইসলামিস্ট নেতা হবার অপরাধেই তার এই শাস্তি। আমাদের এই বিচার নিয়ে বিদেশি পত্রিকাগুলি শুরু থেকেই এক ধরণের উন্নাসিকতা দেখিয়ে আসছে, তার উপর যোগ হয়েছে জামাতিদের কোটি কোটি টাকার লবিং। ফলত আমাদের এই বিচার প্রক্রিয়াকে 'অকার্যকর', এবং তার চেয়েও বড় কথা, 'অবৈধ' প্রমাণ করার একটা প্রয়াস বিদেশি মহলগুলিতে বরাবরই ছিল; তাই গত কয়েক বছর ধরেই বহির্বিশ্বে আমাদের সার্বক্ষণিক যুদ্ধ চলছিল এসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে। তাদের প্রতিবেদনগুলির খুঁত ধরিয়ে দেয়া থেকে শুরু করে, নিজেরা প্রতিবেদন লেখা ও সেগুলো প্রচার করা; বিদেশি এই কলাম-লেখকদের তথ্যগত ত্রুটিবিচ্যুতি নিয়ে টুইটার, ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি তাদের চ্যালেঞ্জ করেছি আমরা প্রতিনিয়ত। হাতে-গোনা কজন যোদ্ধার নিরলস চেষ্টায় ধীরে ধীরে আমরা ফল পেতে শুরু করি। বিদেশি এসব কলাম-লেখকেরা হাড়ে হাড়ে টের পেতে শুরু করেন যে যা ইচ্ছে তা-ই লিখে পার পাবার দিন শেষ, কেননা দিনদিন তাঁদের বস্তুনিষ্ঠতা, গ্রহণযোগ্যতা ও প্রফেশনাল ক্রেডিবিলিটি প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছিল। এরপর এলো শাহবাগ, আমাদের অনলাইন কর্মীর সংখ্যা মুহূর্তে বেড়ে গেল কয়েক গুণ, সাথে সাথে গ্লোবাল মিডিয়াও বাংলাদেশের লক্ষ মানুষের দাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে বাধ্য হলো, কয়েক দিনের ব্যবধানেই আমূল পাল্টে গেল বিদেশি পত্রিকাগুলির অবস্থান। আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা আমাদের সেই অর্জন ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছি। সমমনা গোষ্ঠীর মধ্যে বিভাজন এবং স্বার্থান্বেষী বিভিন্ন মহলের কার্যকলাপের সুযোগে আবারও শুরু হয়েছে এসব অপপ্রচার। প্রকৃতপক্ষে, আমরা যারা নিজেদের এই বিচারের পক্ষের শক্তি বলে দাবি করি, আমরাই কিন্তু তাদের সেই সুযোগ করে দিয়েছি। সঙ্গত কারণেই বিদেশি পত্রপত্রিকার এ ধরণের শিরোনামে অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং তা প্রকাশও করেছেন। তবে অবাক হয়েছি যখন তাঁদের মধ্যে এমন কজনকে পেলাম যাঁরা কিনা সাঈদীর রায়ের পর, এই কিছুদিন আগেও, সরকারের সাথে জামাতের আঁতাত নিয়ে কথা বলেছেন, শ্লোগান তুলেছেন, লেখালেখি করেছেন, বা সেসব লেখা ফলাও করে শেয়ার দিয়েছেন — প্রচার করেছেন। এখানে লক্ষণীয় যে, অনভিপ্রেত কোনো রায়ের প্রতিবাদে প্রসিকিউশন, তদন্ত দল, তদুপরি সরকারের প্রশাসনিক…

চেনা মানুষ অচেনা হয়ে উঠলে যে দুঃসহ কষ্ট আমরা পাই, চেনা মানুষের মুখোশ চিরে আরেক মানুষ বেরিয়ে পড়লে আমরা যেমন যন্ত্রণায় ছটফট করি — সেইরকম একটা অনুভূতি নিয়ে আমি নিশ্চিত পৃথিবীর সকল প্রান্তের বাঙালীরা আজকে রাতে এবং এরপর আরো অনেক রাতে ঘুমোতে যাবে। [...]

হা হন্ত তথাপি জন্ম-বিটপী ক্রোড়ে মনো ধাবতি... ১. চেনা মানুষ অচেনা হয়ে উঠলে যে দুঃসহ কষ্ট আমরা পাই, চেনা মানুষের মুখোশ চিরে আরেক মানুষ বেরিয়ে পড়লে আমরা যেমন যন্ত্রণায় ছটফট করি -- সেইরকম একটা অনুভূতি নিয়ে আমি নিশ্চিত পৃথিবীর সকল প্রান্তের বাঙালীরা আজকে রাতে এবং এরপর আরো অনেক রাতে ঘুমোতে যাবে। আমরা বাংলাদেশকে আর চিনতে পারছি না। অথচ, এই মৃতমানুষের কনভয়, এই জীবিতমানুষের শোকমিছিল এই মৃ্ত্যু উপত্যকাই আমার দেশ। দীর্ঘদিন তাই ছিল -- কেন ভুলে ছিলাম? কেন ভ্রমে ছিলাম? আমাদের চোখের সামনেই কি আমাদের ভাগ্যান্বেষণরত পরিচিত মানুষরা পত্রিকায় মৃতমানুষের সংখ্যা বাড়ায়নি? লঞ্চডুবি হয়ে, গুলি খেয়ে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে মরে ফুলে পড়ে থেকেছে। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসার অভাবে সাহায্যের অভাবে কাতরে কাতরে মরে গেছে। আর একদল বোকা মানুষ একদল পাগল তাদের খালিহাতে এই মানুষগুলিকে বাঁচাবার চেষ্টায় নিজেদের প্রাণ দিয়েছে। কখনো আমরা তাদের নাম ভুলে গেছি। কখনো তাদের বীরশ্রেষ্ঠ ডেকেছি। দেয়ালে টাঙানো বীরশ্রেষ্ঠদের ছবি প্রণিধানযোগে দেখলেই আপনি বাংলাদেশের স্বরূপ দেখতে পাবেন -- এই মানুষগুলির কারো চেহারা/প্রফাইল ‘সিগনিফিক্যান্ট’ না, ঝাপসা মুখ, ভিড়ের একজনের মতো অভিব্যক্তি -- আমাদের ছোট্ট দেশটার ইনসিগনিফিক্যান্ট মানুষগুলিই আমাদের বীর। আমাদের নেতারা কোনোদিন বীর ছিল না, যোদ্ধা ছিল না, স্বার্থত্যাগী ছিল না। মানুষের মৃত্যু তাদের বিচলিত করেনি, মৃত্যু মানে হয় জয়ের তুরুপের তাস, অথবা পরাজয়ের ধ্বনি। আমাদের নেতারা কোনোদিন সামাজিক মানুষ যেমন করে কাছের মানুষের মৃত্যুকে গ্রহণ করে, যে বেদনায়, তা ধারণ করেনি। ফলে বাংলাদেশের শ্রমজীবি মানুষ অকাতরে মরবার খবরে কেবল সাধারণ মানুষই ছুটে যাবে -- নেতারা নানাভাবে নিজের পাপক্ষালনের চেষ্টা করবে (আগের দল ক্ষমতায় থাকতেও এমন ঘটেছে, যারা করেছে তারা আমাদের কেউ না) এবং রাষ্ট্রনায়ক/নায়িকা ভান করবেন তাঁরা এখনো তাঁদের দলের নেতা, দেশের দায় তাঁদের নেই -- এতে অবাক হবার কিছু নেই। তাহলে এমন যাতনা কেন? সাভারের গার্মেন্টসে যে মানুষগুলি এমন করে মরে গেল, তাদের নিরন্তর সংগ্রাম ছিল বেঁচে থাকার, জীবনের দিনগুলিকে অল্প দামে বেচে দিয়ে জীবনযাপনের জন্যে অসামান্য সেই সংগ্রাম।আমি জেনেছি, অনেক শ্রমিক উদ্ধার পেয়ে বিকলাঙ্গ-জীবন যাপনের চেয়ে সেই জগদ্দলের তলায় সমাধিস্থ হতে চেয়েছেন -- যেন কোনোভাবে তাঁদের মৃত্যু অন্ততঃ একটা আর্থিক মূল্য পায়। এই তো বাংলাদেশ। নেতানেত্রীরা…

এ বছরের ৬ এপ্রিল ঢাকায় লক্ষাধিক সফেদ পাঞ্জাবিওয়ালার যে-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলো, তা কবি শামসুর রাহমানের ‘সফেদ পাঞ্জাবী’ কবিতার মূল সুরকে ছিন্নভিন্ন করে এবং ভাসানীর অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ভূলুন্ঠিত করে যেন একটি সফেদ সন্ত্রাসের রুপ পরিগ্রহ করেছিল। সমস্ত বাংলাদেশ শুধু তাকিয়ে দেখলো আর ভাবলো, আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম? [...]

কবি শামসুর রাহমানের একটি বিখ্যাত কবিতা আছে, নাম ‘সফেদ পাঞ্জাবী’। মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর উপর লেখা কবিতাটি। কবিতাটিতে শামসুর রাহমান অবিসংবাদিত এই জননেতার মনুমেন্টাল চরিত্রটি তুলে ধরেছেন। উনসত্তরের গণ অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে একজন অসাম্প্রদায়িক মাওলানার মানবপ্রেমের গাথা কবি এখানে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। বাম চেতনার প্রতিভূ এই কমিউনিস্ট মাওলানা সারাজীবন অসাম্প্রদায়িক শোষণহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন এবং এই আদর্শে লক্ষ কোটি বাঙালিকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। তবে এ বছরের ৬ এপ্রিল ঢাকায় লক্ষাধিক সফেদ পাঞ্জাবিওয়ালার যে-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলো, তা কবি শামসুর রাহমানের ‘সফেদ পাঞ্জাবী’ কবিতার মূল সুরকে ছিন্নভিন্ন করে এবং ভাসানীর অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ভূলুন্ঠিত করে যেন একটি সফেদ সন্ত্রাসের রুপ পরিগ্রহ করেছিল। সমস্ত বাংলাদেশ শুধু তাকিয়ে দেখলো আর ভাবলো, আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম? অবস্থাদৃষ্টে মনে হলো আমাদের চেনাজানা ভূবনের বাইরে থেকে পঙ্গপালের মতো একদল লোক আমাদেরকে তাদের রক্তচক্ষু প্রদর্শন করে আবার তাদের ডেরায় ফিরে গেল। হেফাজতে ইসলাম নামে একটি সংগঠন ছিল আয়োজক এই সফেদ সন্ত্রাসের। তারা ‘ইসলাম গেল’ ধুয়া তুলে মুক্তচিন্তার আদর্শে বিশ্বাসী ব্লগারদের ফাঁসি চাইলো, নারীদের অবরোধবাসিনী করা সহ নানা অবমাননাকর বক্তব্য দিলো এবং সেই সাথে একজন নারী সাংবাদিককে বেধড়ক পেটালো। নারীর বিরুদ্ধে তারা কত কী যে করতে পারে তার একটা নমুনা প্রদর্শন করে গেলো। আর সবশেষে জাতিকে স্তম্ভিত করে দিয়ে ১৩ দফা দাবি উপস্থাপন করে গেলো — যা এই বাংলাদেশকে মধ্যযুগীয় তালেবানি রাষ্ট্র বানানোর ঘৃণিত বাসনার প্রতিফলন। এই ১৩ দফা দাবির মধ্য দিয়ে নারীদের অপমান করা হয়েছে, মুক্তচিন্তাকারী মানুষদের অপমান করা হয়েছে, শিল্পীদের অপমান করা হয়েছে, অন্যধর্মের সংস্কৃতিকে অপমান করা হয়েছে এবং সর্বো্পরি প্রকৃ্ত ইসলামের চেতনাকেও ধুলায় লুণ্ঠিত করা করেছে। বাংলাদেশের প্রতিটি বিবেকবান মানুষ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে তাদের এই মধ্যযুগীয় চিন্তাচেতনা বাস্তবায়নের নীল নকশার খসড়া। আমার জানামতে অনেক বিবেকবান মানুষই তাদের আস্ফালন আর টিভির পর্দায় দেখতে চায়নি, ঘৃণাভরে টিভির সুইচ অফ করে দিয়েছে। বিশেষ করে নারী সমাজ ফুঁসে উঠেছে তাদের এই সফেদ সন্ত্রাসে। তবে আশার কথা এই হুঙ্কারে কেউ গুটিয়ে যায়নি। বরং তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। যেদিন শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে হেফাজতের সন্ত্রাসীরা আক্রমণের পায়তারা করছিলো সেদিন আমি দেখেছি মধ্যবয়সী নারীদেরকেও লাঠি হাতে তুলে নিতে। নারীরা সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে…

যারা মাদ্রাসায় যায়, তারা কি খায়, কি পরে, কি শেখে, তারা বড়হুজুরের হাতে ধর্ষিত হয় কি না, তাদের শিক্ষার উদ্দেশ্য কি, তাদের শিক্ষাশেষে গন্তব্য কি এই নিয়ে কেন আমরা ভাবিনি? কেন সরকার ভাবেনাই? মহল্লার একেকটা বাড়ি থেকে একেকদিন খাওয়া পাঠানো হবে, এইরকম হিসাব করে আমরা একটা বিশাল হুজুরশ্রেণী তৈরি করেছি, এই পরান্নপুষ্ট-অশিক্ষিত-পরনির্ভরশীল জাতটা তৈরির আগে আমরা কেউ কেন ভেবে দেখলাম না? [...]

এই লেখার শুরুতেই জানিয়ে দিই, যীশুর এক গালে চড় খেলে আরেক গাল পেতে দেয়ার বিধান মানবার মন নিয়ে এটি লেখা নয়। যে আপনাকে লাঠি/সড়কি/রাম-দা হাতে মারতে আসে, তাকে লাঠি/সড়কি/রাম-দা হাতেই প্রতিহত করতে হয়, সেটা জেনেই এটা লেখা। যদি আপনি জানেন আপনাকে লাঠি/সড়কি/রাম-দা দিয়ে প্রতিহত করা হবে, তাহলে আপনার লাঠি/সড়কি/রাম-দা ধরবার পূর্বপ্রস্তুতি থাকতে হবে, অথবা আগেই ভেবে রাখতে হবে, লাঠি/সড়কি/রাম-দা দ্বারা আক্রান্ত হলে আপনার কাছে তার প্রতিবিধান কি। এইসব আগেই স্বীকার করে নিয়ে আমি কেবল এইটুকু নিয়ে আজকে লিখতে বসেছি, যে, প্রতিবিধান আপনি ভেবে রাখবেন বটে, সেইসাথে আপনাকে এও ভাবতে হবে আপনাকে এই লোকগুলি লাঠি/সড়কি/রাম-দা হাতে মারতে আসছে কেন? এই অসম্ভব ঘৃণার উৎস কি। এর চর্চ্চা কোথায় এবং কতদিনের? যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রশ্নে কোনো সভ্য দেশে দ্বিমত থাকার কথা নয়, উচিতও নয়। কিন্তু যে মানুষগুলি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ দেখেনাই, যারা এখনও ভাতকে ভাত আর মা’কে মা ডাকে, বাসায় গিয়ে বাংলাদেশের কাঁথামুড়ি দিয়ে ঘুমায়, সে কেন জামাত-শিবির করে, কেন সে সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচারের বিপক্ষে এমন নাছোড়? কেন সে অন্য আর সকল মানুষকে কাফের এবং দিকভ্রান্ত ভাবতে শিখেছে? নারীকে এমন বৈরী চোখে দেখা তাকে কে শিখিয়েছে? মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থায় আমাদের শিক্ষাখাতের বিপুল অর্থ ব্যয় হয় বলে আমি জানি। আন্তনগর মহাসড়কগুলিতে কয়েক হাত পর পর আপনি আজকে মাদ্রাসা খুঁজে পাবেন।এই শিক্ষাব্যবস্থায় দেশ-জাতি-জাতীয়তাবাদ-জাতীয় সংগীত ইত্যাদি সমন্বিত আছে কি না এটা না দেখে কেন এই শিক্ষাব্যবস্থাকে নিজের ইচ্ছামতন চলতে দেয়া হয়েছে? যারা মাদ্রাসায় যায়, তারা কি খায়, কি পরে, কি শেখে, তারা বড়হুজুরের হাতে ধর্ষিত হয় কি না, তাদের শিক্ষার উদ্দেশ্য কি, তাদের শিক্ষাশেষে গন্তব্য কি এই নিয়ে কেন আমরা ভাবিনি? কেন সরকার ভাবেনাই? মহল্লার একেকটা বাড়ি থেকে একেকদিন খাওয়া পাঠানো হবে, এইরকম হিসাব করে আমরা একটা বিশাল হুজুরশ্রেণী তৈরি করেছি, এই পরান্নপুষ্ট-অশিক্ষিত-পরনির্ভরশীল জাতটা তৈরির আগে আমরা কেউ কেন ভেবে দেখলাম না? যে নিজের ভাষাতেই একটা ‘আউট-বুক’ পড়ে দেখেনাই, জ্ঞানলাভ করতে সুদূর চীনদেশ যাওয়া দূরে থাক, তালাবের ঐ পাড়ের মক্তব অব্দি যে কেবল যেয়ে দেখেছে, তার কাছে আমরা কেন ধর্মশিক্ষার জন্যে-বালামুসিবত কাটানোর জন্যে-দুঃস্বপ্নের অর্থ জানবার জন্যে যাই? আমরা স্কুল-কলেজে-ইউনিভার্সিটিতে পড়বার সময়, হরলাল রায়ের রচনাবলী পড়বার সময়, টেস্টপেপার সলভ করার…

অনেক অনেক দিন আগে, আওয়ামী লীগের ৯৬-২০০১ এর 'কুশাসনে'র সময়ে, এক বন্ধুর সাথে গিয়েছিলাম চট্টগ্রাম ছাত্রলীগের এক সভায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে শিবিরমুক্ত করা যায় সেই নিয়ে আলাপ হচ্ছে,[..]

অনেক অনেক দিন আগে, আওয়ামী লীগের ৯৬-২০০১ এর 'কুশাসনে'র সময়ে, এক বন্ধুর সাথে গিয়েছিলাম চট্টগ্রাম ছাত্রলীগের এক সভায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে শিবিরমুক্ত করা যায় সেই নিয়ে আলাপ হচ্ছে, ছাত্রলীগ নেতার নাম ধাম কিছুই মনে নেই, কিন্তু কি বলেছিল সেটা এখনো মনে আছে, সে বলেছিল শিবির হচ্ছে তোমাদের স্কুলে পড়া Bogus Boo এর মত, রাতে একা পেয়ে গলা কেটে, সেই গল্প শুনিয়ে সবাইকে ভয়ে ভয়ে রাখতে চায়। বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে গেলে দেখবে শিবির এমন কিছু নয়। শাহবাগের আন্দোলনের এই পটভূমিতে জামাত নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে বিভিন্ন টক শোতে বিশেষজ্ঞদের জামাত শিবির নিষিদ্ধ হলে আন্ডার গ্রাউন্ডে গিয়ে কি করবে না করবে এই নিয়ে মহা ভীত হতে দেখা যাচ্ছে। মিশরে, সিরিয়ায়, ইরানে এবং তুরানে ইসলামী পার্টি নিষিদ্ধ করে কি বাজে ফলাফল হয়েছিল সেই বিষয়ে জ্ঞান দিয়ে যাচ্ছেন। বাজিয়ে যাচ্ছেন সেই ভাঙ্গা রেকর্ড, জামাতকে "রাজনৈতিক" এবং "সাংস্কৃতিক" ভাবে মোকাবেলা করতে হবে। এই "রাজনৈতিক" এবং "সাংস্কৃতিক" লড়াইয়ের মানে হচ্ছে বর্ষীয়ান সাংবাদিক এ বি এম মুসা দিগন্ত টিভিতে বলে যাবেন ষাট দশকের উত্তাল দিনগুলোর কথা, বঙ্গবন্ধু তাঁকে সঙ্গে নিয়ে কতবার নাস্তা খেয়েছেন আর কত শলা পরামর্শ করেছেন। চলতে থাকবে বিএনপি আর আওয়ামী লীগের নেতাদের সৌহার্দপূর্ণ আলাপ (শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু বলে সম্বোধন করার ঢংও আজকাল কিছু কিছু বিএনপি নেতা করছেন)। দিগন্ত টিভি, নয়া দিগন্ত, ইবনে সিনা আর ইসলামী ব্যাঙ্কের ব্যবসা চলতেই থাকবে, ব্যবসার টাকায় দেওয়া হবে শিবির কর্মীদের মাসোহারা, রগ কাটার ট্রেনিং থেকে শুরু করে ইংল্যান্ডে ব্যারিস্টারি পড়ানো, সব ব্যবস্থাই সে টাকায় হবে। শিবিরকে 'রাজনৈতিক' ভাবে মোকাবেলার দায়িত্বটা অবশ্য ছেড়ে দেওয়া হবে মফস্বলের চাঁদাবাজ, শিক্ষকের গায়ে হাত তোলা ছাত্রলীগের হাতে। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছাত্রলীগের কিশোর কর্মীর রগ বা কবজি বা গলা কাটা চলতে থাকবে, বদলা নিয়ে ফেরারি হবে ছাত্রলীগের আরেক কর্মী। শিবির শাসিত কলেজে সাহস করে রবীন্দ্র সঙ্গীত গাওয়া তরুণীকে দেওয়া হবে গণধর্ষণের হুমকি। রগকাটার খবর সাহস করে পত্রিকায় পাঠাবে না প্রথম আলোর মফস্বল প্রতিবেদক (ডাইনিঙের খাবার খারাপ হলে ছাত্রলীগের জানালা ভাঙ্গার খবর অবশ্য নিয়মিত ভাবেই আসবে)। ফিরে আসি Bogus Boo তত্ত্বের ছাত্রলীগ নেতার প্রসঙ্গে। সেই আওয়ামী 'ফ্যাসিবাদী' আমলে 'ফ্যাসিবাদী' পুলিশের তেমন কোন সাহায্য ছাড়াই অল্প কিছু সশস্ত্র…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.