‘আমি বা আমরা কোনো আইন ভঙ্গ করিনি, কোনো অন্যায় করিনি। বরং প্রয়োজনে আমাদের সবটুকু সামর্থ্য দিয়ে এই বিচার প্রক্রিয়াকে যতভাবে সম্ভব সহায়তা দানের চেষ্টাই করে গেছি এবং যাবো। এই সময়ে সবার কাছে আমার একটি মাত্র বিনীত অনুরোধ থাকবে। এই বিচারের দিকে পুরো দেশ এবং নতুন প্রজন্ম অনেক আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম, ১৯৭১ সালের ভিকটিম এবং তাদের পরিবারেরাও তাকিয়ে আছেন। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্মের প্রগতির শিবিরে যদি কোনো বিভেদ বা ব্যক্তিগত মনোমালিন্য থেকেও থাকে তা যেন আজকের এই নতুন প্রজন্মের আশাটিকে পদদলিত না করে; আমরা যেন ওদের কাছে নিজেদের বিভেদ দিয়ে নিজেদের আর ছোটো না করি। এই বিচারটি শুরু করতে এমনিতেই ৪১ বছর দেরী হয়ে গেছে, সেটি আমাদের প্রজন্মেরই ব্যার্থতা, আমরা যেন সেটা ভুলে না যাই।’ [...]

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের সম্মানিত চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের ব্যক্তিগত স্কাইপ কথোপকথন এবং ইমেইল হ্যাকিংকে কেন্দ্র করে যে ঘটনাপ্রবাহ তার সাথে বাংলাদেশের অনেকেই ইতোমধ্যে বোধ করি অবগত হয়েছেন। গত কয়েকদিনে ইকনমিস্টসহ দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম থেকে আমার সাথে এবং আইসিটির বিচার প্রক্রিয়াকে সহায়তা করার জন্য আরও যাদের নাম উঠে এসেছে তাদের অনেকের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি ট্রাইবুনালের বিচারাধীন থাকায়, এবং এ বিষয়ে ট্রাইবুনালের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকায় আমরা সচেতনভাবেই কোনো মন্তব্য দেয়া থেকে বিরত ছিলাম। এখনও আমরা এই বিচারাধীন বিষয়ের কনটেন্ট নিয়ে কোনো মন্তব্য করবো না। কিন্তু গত কয়েক দিনের পত্রপত্রিকায় এবং সংবাদ মাধ্যমে কিছু বিভ্রান্তিমূলক কথা আমাদের গোচরে এসেছে। “আমার দেশ” নামের চিহ্নিত পত্রিকাটি আদালতের সুনির্দিষ্ট আদেশের লঙ্ঘন করে, সমস্ত ধরণের শিষ্টাচার ও সভ্যতার নিয়মকানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে এই অপরাধের মাধ্যমে গৃহীত তথ্যসমূহ অনেক রঙ চড়িয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রচার করতে থাকে। তার সাথে যোগ দেয় অনলাইন প্লাটফর্মের চিহ্নিত কিছু জামাতপন্থী গ্রুপ। এমনই কিছু বিভ্রান্তির ওপর আলোকপাত করতেই আমার আজকের এই লেখাটি। বিচারপতি নিজামুল হকের সাথে আমার কথিত কথোপকথন এবং ইমেইল হ্যাকিং-এর ঘটনাটি আমি প্রথম জানতে পারি “ইকনমিস্ট” এর একজন সাংবাদিকের কাছ থেকে, যখন তিনি এই বিষয়ে আমার সাক্ষাৎকার নিতে চেয়েছিলেন। এই কথিত কথোপকথনে আরও যাদের নাম উঠে এসেছে তাদের আরও কয়েকজনের সাথেও যে ইকনমিস্ট পত্রিকার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে, তাও জানতে পারি। এর পরের ঘটনা সবার জানা। ইকনমিস্ট এর সাংবাদিক যখন বিচারপতির সাথে সরাসরি যোগাযোগ করেন, তার পরের দিন, অর্থাৎ ৬ ডিসেম্বর ট্রাইবুনালের পক্ষ থেকে একটি আদেশ জারী করা হয় ইকনমিস্ট পত্রিকার বিরুদ্ধে। সেখানে উম্মুক্ত আদালতে ট্রাইবুনালের পক্ষ থেকে বিচারপতি হক স্পষ্টভাবে তার আদেশে উল্লেখ করেন যে -- হ্যাকিং-এর মাধ্যমে তার ব্যক্তিগত ইমেইলের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা হয়েছে। অবৈধভাব তার ব্যক্তিগত কথোপকথন রেকর্ডিং-এর কথাও তিনি সে আদেশে দেশবাসীকে অবগত করেন। সাথে তিনি উম্মুক্ত আদালতে এটাও সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেন কেন, কী পরিস্থিতিতে, এবং কী প্রয়োজনীয়তা মাথায় রেখে ট্রাইবুনাল বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের বিষয়ে আমিসহ অন্যান্যদের পরামর্শ ও গবেষণা সহায়তা গ্রহণ করেছেন। আমার সাথে বিচারপতির খোলামেলা আলোচনায় আন্তর্জাতিক মানের বিভিন্ন নিয়ামক, এই জাতীয় বিচারের রায়ের আান্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত কাঠামো/ বিন্যাসসহ ব্যক্তিগত…

আমাদের সরকার, রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারক ও রাজনীতিকদের সৌভাগ্যই বলতে হবে, তাদের কাছে শিল্পী বেগমদের বিচারের দাবি তোলার ক্ষমতা নেই, বিচার ও আইন বিভাগের কাছে তাদের কোনও প্রত্যাশা নেই, অন্যায়ের কাছে পরাস্ত হয়ে তারা শুধু কাঁদতে কাঁদতে আল্লার কাছে বিচার চাইতে জানে।

সারা রাত তিনি বাস চালিয়ে ঢাকা এসেছিলেন। খুলনা থেকে ট্রিপ নিয়ে তারা রওনা হয়েছিলেন ঢাকার দিকে রাত ১০টার দিকে। ঢাকায় এসে মালিবাগে শেষ যাত্রী নামিয়ে দেয়ার পর বাস পার্ক করেন গভর্নমেন্ট কলোনীর সামনে। রাতে আবারও বাস চালাতে হবে। তাই ঘুমানোর উদ্যোগ দেন তিনি আর তার হেলপার। ঘুমানোর আগে তিনি স্ত্রীর কাছে টেলিফোন করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমি এখন বাসে ঘুমাবো। আমাকে এখন ফোন করিও না। পরে ফোন করিও। এটা বলতে টেলিফোন করলাম।’ হয়তো অনেক কথাই তার বলার ছিল। কিন্তু তার চোখ বুজে ঘুম নামছিল। তিনি তাই স্ত্রীকে বলেছিলেন, পরে ফোন দিতে। কিন্তু তার আর প্রয়োজন হয়নি। দুপুর দু’টার দিকে খিলগাঁওয়ের গভর্নমেন্ট কলোনির সামনে পার্ক করা এই বাসটিতে আগুন লাগিয়ে দেয় হরতাল আহ্বানকারীদের দল। আর সেই আগুনে পুড়ে মারা গেছেন তিনি, বাসের চালক মাত্র ৪৮ বছরের বদর আলী বেগ। ফোন বন্ধ করে তিনি ঘুমিয়েছিলেন-আগুনের আঁচেও ঘুম ভাঙেনি, টের পাননি আগুন জ্বলছে তার চারপাশে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আগুন নিভিয়ে উদ্ধার করে তার পোড়া লাশ। হরতাল যারা ডেকেছিলেন, হরতাল সফল করার জন্যে যারা মাঠে নেমেছিলেন, তাদের কেউ কি দেখেছেন সেই লাশ? কিংবা শুনেছেন কি বদর আলী বেগের স্ত্রী হাওয়া বেগমের আর্তনাদ : ‘ও আল্লা, যারগে জন্যি আমি শেষ বারের মতো আমার স্বামীর মুখখান দেখতি পাল্লাম না, যারগে জন্যি আমার ছেলেমেয়েরা তাগো বাপের মুখটা দেখতি পাল্লো না, সে হরতাল আলাগো তুমি বিচার করো’? তারা কি জানেন, বার বার অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন হাওয়া বেগম? জ্ঞান হারানোর পর শোকাচ্ছন্ন স্বগতোক্তি করেই ফের মুর্চ্ছা খাচ্ছেন? হরতাল আহ্বানকারীরা শুনতে পাচ্ছেন তার আর্তনাদ, ‘এহন হরতাল আলারা কি আমার সংসার চালায়ে দেবেনে? দেবে না!’ বলে আবারও অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন হাওয়া বেগম। বদর আলী বেগের মতো আগুনে পুড়ে মরেননি, কিন্তু মৃত্যুবরণ করেছেন আরেক চালক। ধারদেনা করে মাস দুয়েক আগে একটি ট্যাক্সিক্যাব কিনেছিলেন তিনি। তাও আবার হাইজ্যাক হয়ে গিয়েছিল একবার। কখনো সে গাড়ি নিজে চালাতেন, কখনও আবার ভাড়া খাটাতেন। এইভাবে সারা মাসে আয় হতো ১০/১২ হাজার টাকা। তাই দিয়ে চলতো তার সংসার। সকালে গাড়ি নিয়ে কাজে বেরুনোর আগে শিশুসন্তানকে নিয়ে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেছেন তিনি। খাওয়ার টেবিলে ছিল ভাত আর মাংস। ছেলে পরশের ভাতের…

ভিকারুননিসা নুন স্কুল ও কলেজের বর্তমান ছাত্রীদের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে রচিত। [...]

অনেকেই আমাদের বলেন আমরা নাকি ‘প্রিভিলেজড গ্রুপ’। সমাজের 'ফরচুনেট' অংশের প্রতিনিধি। বাঙালি শিক্ষিত মধ্যবিত্তের সন্তানই আমাদের অধিকাংশ। বিত্তবান না হলেও সচ্ছল বলা চলে আমাদের অনেককেই। খাওয়া-পরা-পড়াশোনা-টিভি দেখা-ঘুরে বেড়ানো এসব খাতে হিসেবের মধ্যে থেকেও আমাদের জন্য কিছুটা বিলাসি খরচ মাঝে-মাঝেই হয়তো করেন আমাদের অভিভাবকেরা। আবদার-আহ্লাদ করে খেলনা-জামাকাপড়-গল্পের বই দশবার চাইলে পাঁচবার তো নিদেনপক্ষে মিলেই যায়! কিন্তু সচ্ছলতার নির্ভরতার চেয়েও বড় ‘প্রিভিলেজ’ হল আমাদের জীবনের এক পুঁজি যা থেকে বাংলাদেশের অধিকাংশ মেয়েশিশু বঞ্চিত -- সেই পুঁজির নাম ‘স্বপ্ন’। আমাদের মা কিংবা বাবা যেদিন প্রথম আমাদের নির্ভরতার-আঙুল-পেলেই-মুঠি-মুড়ে-ধরে-ফেলার ছোট্ট হাত ধরে এই বিশাল চত্বরের মাঝে ছেড়ে দিয়েছিলেন, সেদিন প্রথম নিজেদের স্বপ্ন আমাদের মাঝে সংক্রমিত করেছেন তাঁরা। তাঁদের মেয়েদের রয়েছে স্বপ্ন দেখার অধিকার, ব্যক্তিত্ববিকাশের অধিকার, বড় হয়ে সমাজ-গড়ায় নিজ নিজ হাতের ছাপ রাখার অধিকার -- তাঁরা জানতেন এবং বিশ্বাস করতেন! বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক, প্রায়-নিষ্ঠুর পরীক্ষা—প্রথম শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার ভয়-ভীতি-বাধার তীব্রতা অতিক্রম করে অবলীলায় মা’কে স্কুলগেটের বাইরে পিছে ফেলে এসে নতুন বন্ধুর পাশে এসে বসতে পেরেছি আমরা শুধু ওই স্বপ্ন-সংক্রমণের কারণে। ওই সংক্রমণ আমাদের পুতুলের মত ঠুনকো শিশুশরীরে সঞ্চার করেছে অপার শক্তি। পাঁচ-ছয় বছর বয়সে মায়ের শ্রমে শিখে আসা বাংলা বর্ণমালা আর ইংরেজি এলফাবেট দিয়ে দুনিয়াটাকে দেখতে শিখেছি; পড়তে শিখেছি ক্লাসের আপার দেওয়া পাঠ; কাঁড়ি-কাঁড়ি হোমওয়ার্কের বোঝা বহন করেছি; সমাধান করেছি বীজগণিতের খটোমটো ফরমুলা; চোখ গোল করে গল্প শুনেছি ইতিহাসের; পাবলিক পরীক্ষার ভুতুড়ে সকালে চুলে তেল দিয়ে টান-টান করে বেণি বেঁধে কলমের খস-খসানিতে পৃষ্ঠা ভরিয়েছি; কেমিস্ট্রি ল্যাবের বীকারে সবজে-নীল অধঃক্ষেপ দেখে পৃথিবীকে রঙিন ভেবেছি; বিতর্কের মঞ্চে প্রতিপক্ষের তার্কিক আর বিচারক প্যানেলকে চমৎকৃত করেছি বৈশ্বিক অর্থনীতির ভরাডুবির খতিয়ান দেখিয়ে; বিশাল কাঠের বোর্ডে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে মেধাবী সিনিয়ার আপুদের নাম, সেই ১৯৬১ সাল থেকে; ঘাড় কাত করে সেই নামগুলো দেখেছি আর ভেবেছি ওদের মত হতে পারব কিনা। আর বাড়ি এসে মাকে দিয়েছি তাচ্ছিল্যের ভর্ৎসনা -- “ধ্যুত, আমাদের আপা বলেছেন এটাই ঠিক। মা, তুমি কিচ্ছু জানো না!” মা নিশ্চয়ই খুশি হয়ে ভাবতেন, “ছোট্ট মেয়েটা কত বড় হয়ে যাচ্ছে!” বাবাকে বলতেন, “জানো তোমার মেয়ে স্কুলে কী কী করে? কী কী শেখে?” বাবা আত্মপ্রসাদের হাসি হাসতেন। মুখে বলতেন না, কিন্তু মনে…

২০১১ সালের ২২শে মার্চ এমন একটি দিন যেদিন বাংলাদেশ রাষ্ট্র নিজের গায়ে লেপটে থাকা বহু বছরের পুরনো একটি কালো দাগ মুছে ফেলে। শেক্সপিয়ার হয়তো এমন ব্যাপারগুলোকেই ‘আইরনি’ বলতেন। আর এভাবেই শেষ হল আমাদের আইনি লড়াই। এখন তবে শুরু হোক রাজনৈতিক লড়াই। দেখা হবে হয়তো পত্রিকার কলামে বা কোন ব্লগের রাজনৈতিক আলোচনায় অথবা কোন মিছিলে বা হাজারো মানুষের জনসভায়।[...]

আমি তখন অনেক ছোট। সম্ভবত ক্লাস ওয়ান বা টু তে পড়ি। আমি তখন আমার বাবা মা’র সাথে থাকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানকার পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার বাবা সেই সময় বন্যা সহনশীল ধান নিয়ে গবেষণা করছিলেন। একদিন একটি দাওয়াত থেকে বের হতে হতে দাওয়াতে উপস্থিত একজন ভারতীয় ভদ্রলোক আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন, ‘তুমি তোমার তাহের চাচার কথা জানো? জানো তিনি কত বড় মাপের মানুষ ছিলেন?’ আমার বয়শ তখন পাঁচ কি ছয় বছর। তাহের চাচার কথা বাসায় শুনেছিলাম। কিন্তু ছাব্বিশ বছর বয়সে এসে যা জানতে পেরেছি তা তো তখন জানার প্রশ্নই আসে না। আমি তাকে হা-না কিছুই বলতে পারিনি। তবে মূলত সেই দিন থেকেই কর্নেল আবু তাহের (বীর উত্তম) এর প্রতি আমার আগ্রহ জন্মাতে শুরু করে। আমি আমার বাবাকে মুক্তিযুদ্ধ এবং তাহের নিয়ে শত ধরনের প্রশ্ন করতে থাকি। আমার মনে আছে বাবাকে করা অনেক প্রশ্নই ছিল বেশ অদ্ভুত ধরনের। বিদেশী স্কুলে তখন আমি ‘রেড ইন্ডিয়ান’দের গল্প নতুন নতুন শিখছি। তাই স্বাভাবিকভাবেই বাবাকে প্রশ্ন করি, ‘আচ্ছা, তোমরা কি মুক্তিযুদ্ধের সময় তীর ধনুক ব্যবহার করতে?’ আরও কত কি জিজ্ঞেস করতাম। মনে পড়ে আরেকবার জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘তোমরা কি যুদ্ধের সময় স্পীড-বোট ব্যবহার করতে?’। চলতে থাকে আমার এবং আমার বাবার মুক্তিযুদ্ধ ও একই সাথে তাহের কে চেনার গল্প। ১৯৭১ সালের ১৪ই নভেম্বরে পাকিস্তানিদের শেলের আঘাতে পা হারানোর কিছুক্ষণ পরেই যখন আমার বাবা তাহেরের মুখে ফ্লাস্কে রাখা চা ঢেলে দিতে যাচ্ছিলেন, তাহের তখন কাপটি নিজ হাতে তুলে নেন এবং বাবাকে বলেন, ‘আমার হাত তো ঠিক আছে’। বলার অপেক্ষা রাখে না, এমন গল্প শুনলে যে কারোরই আগ্রহ প্রবলভাবে বাড়ারই কথা। আমিও এর ব্যতিক্রম ছিলাম না। ঠিক এভাবেই একদিন আমি জানতে পারি ১৯৭৬ সালে কিভাবে নির্দোষ কর্নেল তাহের কে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। একজন ‘অপূর্ব’ মানুষকে নিজ চোখে দেখার সুযোগ থেকে আমি বঞ্চিত হই এবং ’৭৬ পরবর্তী বাংলাদেশ বঞ্চিত হয় একজন প্রতিভাবান দেশপ্রেমিক-রাজনীতিবিদ থেকে। ১৯৯৪ সালে আমরা বাংলাদেশ এ ফিরে আসি। আমার মনে আছে প্রতি বছর ২১শে জুলাই ও ৭ই নভেম্বর আমরা পুরো তাহের পরিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি’র অডিটোরিয়ামে যেতাম কর্নেল তাহের সংসদের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করার জন্য। প্রায়…

এই লেখাটা লিখব না লিখব না বহুদিন ভেবেছি। কাছের মানুষরা ভয় দেখিয়েছেন কাকের মতন একতাবদ্ধ সাহিত্যিক দুর্বৃত্তদের। কিন্তু বারবার মনে হয়েছে যে, লেখা উচিত। [...]

এই লেখাটা লিখব না লিখব না বহুদিন ভেবেছি। কাছের মানুষরা ভয় দেখিয়েছেন কাকের মতন একতাবদ্ধ সাহিত্যিক দুর্বৃত্তদের। কিন্তু বারবার মনে হয়েছে যে, লেখা উচিত। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমার প্রথম বই কনফেশন বক্সের ভিতর। অটাম-দিনের গান প্রকাশিত হয়। বইটার মূলগল্পের কেন্দ্রে আছে একটি পরিবার, আজহারউদ্দিন আহমেদের পরিবার। আজহারউদ্দিনের স্ত্রীর নাম ফরহাত বানু। মেয়ে ঈশরাত বানু। ছেলে রঞ্জু। ঈশরাতের আরেকটি বোন আছে, তার নাম রওনক। রঞ্জুর একটি অজ্ঞাতনামা প্রেমিকা ছিল, তার ছদ্মনাম ক্রতু। রওনক বাদে এঁরা প্রত্যেকে স্মৃতিচারণ করেন। কেউ ডায়েরি লিখে। কেউ স্বগতঃভাষণে। কেউ চিঠিতে। এঁদের দৈনন্দিন জীবনে প্রেম-গ্লানি-প্রতারণা-প্রিয়বিয়োগের শোক এইসবই উপস্থিত। নিজের কাছে অবমুক্ত হবার সময় এঁরা প্রত্যেকে দেখতে পান এঁদের নিজস্ব স্খলন-পতন-ত্রুটি, এঁদের জীবনে ভালবাসা পাবার জন্যে অন্তিম হাহাকার। ব্যক্তিগত বেদনা ভুলতে আপাতঃস্বাভাবিক এইসব মানুষ প্রতিহিংসার আশ্রয়ও নেন, যেন তাতে স্থায়ী-শোক উপশমের উপায় আছে। এই বইটিতে আমার ভাষাব্যবহারের একটি উদ্দেশ্য ছিল ভাষাভাষীদের আলাদা করে দেয়া। যাতে প্রতিটি চরিত্রের জন্যে ভাষাও একটি চারিত্র হয়ে দাঁড়ায়। শুধু সাধু-চলিত নয়, পরিভাষা এবং বিদেশী শব্দও আলাদা করে বসিয়েছিলাম আমি। এক এক করে। অদ্যাবধি আমার জানামতে বইটার দু’খানা রিভিউ হয়েছে, একটি মশিউল আলমের করা (প্রথম আলো-তে) আরেকটা সালাহ্ উদ্দিন শুভ্রের করা, সাময়িকী ডট কম-এ। প্রথম রিভিউটির কোনো কপি আমার কাছে নাই। তবে মনে আছে, মশিউল আলম লিখেছিলেন -- 'বইয়ের নামে ইংরেজি কেন? তার মানে কি লেখক বাংলা ভাল জানেন না?' (এই সম্পাদ্য উনি শেষ অব্দি শেষ করেছেন এইমত যে, লেখকের বই পড়ে তাঁর মনে হয়েছে লেখক বাংলা ভালই জানেন।) মজার বিষয় হচ্ছে একইসময় আরেকটি বইয়ের রিভিউ হয়েছে, আমার বইয়ের রিভিউয়ের পাশেই, একইসময়-একসাথে, সে বইটির নাম ফেস বাই ফেস, লেখক মাহবুব মোর্শেদ। তাঁকে প্রশ্ন সইতে হয়নি কেন তাঁর বইয়ের নাম পুরোটাই ইংরেজিতে (এবং বলতে নেই এবইয়ের নাম ইংরেজিতেও অর্থহীন, আমি একাধিক ইংরেজিভাষীর সাথে এই 'পান'-এর যথাযোগ্যতা নিয়ে আলাপ করেছি, তাঁরাও পাননি। তবে আমি মনে করি বইয়ের নাম বিষয়ে লেখকের সার্বভৌমত্ব আছে, তিনি রাখতেই পারেন।), তিনিও কি বাংলা জানেন না? নাকি উপযুক্ত শব্দাবলির অভাবে দ্রুত ইংরেজির সহায়তা নেয়ার অভ্যাস (মশিউল আলম এই অভ্যাসের কথা লিখেছেন প্রথমেই)? ফেস বাই ফেস-এর রিভিউয়ে তন্নতন্ন করে খুঁজেও এরকম কোনো প্রশ্ন…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.