আগের লেখার বিপরীতে বেশ কিছু মন্তব্য এসেছে। গত কয়েকদিনে গুগল-চীন দ্বন্দ্বেও আরো কিছু নতুন অগ্রগতি, কথা চালাচালি হয়েছে। সে সবে যাওয়ার আগে গুগল ঠিক কি কারনে চীন বর্জনের সিদ্ধান্তে উপনীত হলো (অন্তত তাদের হিসাবে) - সেটা একটু দেখা যাক। ভদ্রলোকের নাম আই ওয়েইওয়েই। তিনি অধুনা চীনের সবচেয়ে নামকরা শিল্পীদের একজন, এবং এর পাশাপাশি প্রথম কাতারের রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী (dissident)। মাস দুয়েক আগে তার জিমেইল একাউন্ট হ্যাক করা হয়। তিনি ছাড়াও হ্যাকার-রা আরো কয়েকজনকে টার্গেট করেছিল। গুগল যখন ঘটনাটি টের পায়, সাথে সাথে তারা অনুসন্ধান চালায়। অনুসন্ধানে জানা যায় যে আই ওয়েইওয়েই-এর একাউন্টের সমস্ত ইমেইল তাঁর অজান্তে ঘাঁটাঘাঁটি হয়েছে, এবং কপিও করা হয়েছে। এর পাশাপাশি তাঁর ব্যাংকেও কিছু লোক পাঠানো হয়। তারা বলেন যে আই-এর বিরুদ্ধে সরকারী তদন্ত চলছে, এবং তাই তাঁর ব্যাংক একাউন্ট বিষয়ক সমস্ত তথ্য হস্তান্তর করতে হবে। এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে চীন সরকার আই-কে বলে দিয়েছে যে, হয় সে তার মানবাধিকার নিয়ে চিল্লাপাল্লা বন্ধ করবে, নয়তো তাঁকে দেশত্যাগ করতে হবে। বলা বাহুল্য যে আই ওয়েইওয়েই এই দুটোর একটাও করতে চান না। কঠিন থেকে কঠিনতর আই-এর কেসই শেষ নয়। পুরো একটা পরিপ্র্রেক্ষিত আছে এখানে। চীনের গত তিন দশকের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পিঠে বেশ কিছু মহলের আশা ছিল যে তাড়াতাড়ি না হোক, ধীরে ধীরে হলেও চীন সরকার কোন না কোন সময় রাজনৈতিক ভাবে আরেকটু উদারপন্থী হবে। ভিন্নমত বা ভিন্নপথের লোকদের আরেকটু কথা বলার জায়গা করে দেবে। ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিক-কে ঘিরে অনেকের এই আশা আরো বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু ইদানীংকালে দেখা যাচ্ছে যে উদার তো নয়ই, বরং চীনা সরকার দিনকে দিন আরো কঠোর হচ্ছে, আরো শক্ত হাতে সকল রকম প্রতিবাদের গলা টিপে ধরছে। গত কয়েক মাসের মধ্যে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা - - ডিসেম্বর মাসে লেখক এবং রাজনৈতিক কর্মী লিউ শিয়াওবো-কে ১১ বছরের জেলদন্ড দেয়া হয়। তার দোষ কি ছিল? তিনি চার্টার ৮ নামে একটি মানবাধিকার ম্যানিফেস্টোর জন্য স্বাক্ষর সংগ্রহ করছিলেন। চার্টার ৮-এর সার কথা খুব যুগান্তকারী কিছু ছিল না। বাকস্বাধীনতা দিতে হবে। ভোটাধিকার দিতে হবে। গণতান্ত্রিক নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার দিতে হবে। ধর্মীয় স্বাধীনতা দিতে হবে। পরিবেশ সুরক্ষার গ্যারান্টি দিতে হবে। সাংবিধানিক…
বিশ্ব অর্থনীতির দ্বিতীয় বৃহত্তম পরাশক্তির সাথে টক্কর লেগেছে ইন্টারনেটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের। গত পরশু গুগল তাদের ওয়েবসাইটে ঘোষনা দিয়ে জানিয়েছে যে চীনে তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার পরিবেশ ক্রমাগত বিরূপ হয়ে পড়েছে এবং এই অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই তারা চীন থেকে তল্পি-তল্পা গুটিয়ে চলে যেতে বাধ্য হবে। গুগল ও চীনের এই সংঘর্ষের কি কোন শুভ পরিণতি আছে? একটু পেছনে তাকানো যাক। ইন্টারনেট ব্যবহার করে অথচ গুগল চেনে না, এমন লোক বোধ হয় লাখে একটাও পাওয়া যাবে না। এক কথায় ইন্টারনেটের সবচেয়ে শক্তিশালী ও বহুলব্যবহৃত সার্চ ইঞ্জিনের নাম হলো গুগল। ১৯৯৬ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই পিএইচডি অধ্যয়নরত ছাত্র ল্যারি পেজ এবং সের্গেই ব্রিন তাদের গবেষণার মাধ্যমে নতুন এক সার্চ এলগোরিদম প্রণয়ন করেন। এর আগে আরো অনেক সার্চ ইঞ্জিনই ছিল। ৯০-এর দশকে যারা নেট ব্যবহার করতেন তাদের অনেকের মনে থাকবে Lycos, Altavista বা Infoseek-এর কথা। কিন্তু কার্যকারিতার দিক থেকে এইসব ইঞ্জিনের চেয়ে গুগল অনেক বেশী সফল প্রমাণিত হয়। ইন্টারনেটে রয়েছে শত কোটি ওয়েবসাইট। এর মধ্যে থেকে ঠিক আপনার প্রয়োজনীয় তথ্যটুকুই এক নিমেষের মধ্যে খুঁজে বের করে সেটাকে আপনার সামনে হাজির করা - একেবারে সহজ কাজ নয়। কিন্তু পেজ ও ব্রিন এই দুঃসাধ্য কাজটিই সাধন করেন। কি লাগবে আপনার? মিটার থেকে ফুট হিসাব করতে চাই? বলে দেবে গুগল। সম্রাট অশোকের রাজধানীর নাম যেন কি ছিল? জানে গুগল। আচ্ছা, কেক বানাতে চাই, কিছু রেসিপি দরকার। গুগলে গিয়ে খোঁজ লাগাও। ১৯৯৯ সালে এক প্রযুক্তি পত্রিকায় আমি প্রথম গুগলের নাম শুনি। লাস ভেগাসে বাৎসরিক প্রযুক্তি সম্মেলনে সদ্য পুরস্কার জিতেছে নতুন এই কম্পানী - ক্রিকেটের গুগলির সাথে নামের বেশ মিল! খবরটা পড়েই আমি গুগলে গিয়ে আমার স্কুল জীবনের এক হারিয়ে যাওয়া সহপাঠীর নাম সার্চ দেই। শুধু এতটুকুই জানতাম যে সে বিদেশে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। ঠিকই গুগল এনে দিয়েছিল তার নাম-ধাম, বর্তমানে কোথায় আছে কি করছে, এবং যোগাযোগের ইমেইল। বলা বাহুল্য, সেদিনের পর থেকে আজ অব্দি গুগল বিনা আর কোন সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করার প্রয়োজন বোধ করিনি। গেল দশ বছরে গুগল আরো বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। মাইক্রোসফট-কে ছাপিয়ে গুগল বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রযুক্তি কম্পানী। কোকাকোলা-কে টপকিয়ে গুগল এখন পৃথিবীর এক…
মুক্তচিন্তার ধারক ও বাহক "সংবাদ" পত্রিকার অনুসন্ধানী প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম নভেম্বরের ৮ তারিখে "বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী, ১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের অন্যতম নায়ক, আলবদর কমান্ডার আশরাফউজ্জামান খানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিচার বিভাগের তদন্ত" শীর্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। প্রতিবেদনটি নিউজ বাংলার নজরে আসার সাথে সাথে আমরা তা আমাদের পত্রিকার বাংলা ও ইংরেজী সাইটে পুন:প্রকাশ করি। এর প্রায় এক মাস পর গত ১১ই ডিসেম্বর আশরাফউজ্জামানের নিউইয়র্কস্থ আইনজীবীর কাছ থেকে আমরা একটি উকিল নোটিশ পাই। এই নোটিশে আমাদের পত্রিকা থেকে "যুদ্ধাপরাধী ও বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী" হিসেবে উল্লেখকে মুছে দেওয়ার জন্য বলা হয়। প্রতিবেদনটি যেহেতু "সংবাদ" পত্রিকা কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে, তাই এতে যোগ বা সংশোধনের আমাদের কোন সুযোগ নেই। এ অবস্থায় আমরা ভার্জিনিয়ার একটি প্রথিতযশা আইনী সংস্থার সাথে যোগাযোগ করি এবং যথাবিহিত আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করি। একটি উকিল নোটিশের হুমকির সাথে আপোষ করার কোন সুযোগ আমাদের নেই। মুক্তিযুদ্ধের আটত্রিশতম বিজয় উৎসব উদযাপনের প্রাক্কালে আমরা যুদ্ধাপরাধীদের সাথে আপোষ-মীমাংসা করে বা নির্বিকার হয়ে বসে থাকতে পারি না। যেহেতু সংবাদটি মার্কিন সরকারের বিচার বিভাগ থেকে আশরাফউজ্জামানের যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত তথ্যসম্বলিত ও প্রমাণাদির জন্য-তাই আমরা বিষয়টি ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশের মাননীয় রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদেরের দৃষ্টিগোচর করেছি এবং উকিল নোটিশের কপিটি ইতিমধ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠিয়েছি। মাননীয় রাষ্ট্রদূত এ ব্যাপারে আমাদের সর্বাত্মক সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। একই সাথে প্রয়োজনীয় পরামর্শের জন্য ড: কামাল হোসেনের সাথে আমাদের আলাপ হয়। তিঁনি নিউজ বাংলা কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে "আশাব্যঞ্জক ও যথার্থ" বলে আখ্যায়িত করে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এই আইনী নোটিশকে যুদ্ধাপরাধীদের আস্ফালন ও অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ঘটনা বলে উল্লেখ করেন ডিসি মেট্রোতে বসবাসরত বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ-এর কন্যা শারমিন আহমেদ। তিঁনি আমাদেরকে সাহস ও উৎসাহ দিয়ে বলেন এ ব্যাপারে নিউজ বাংলার পদক্ষেপ "দৃষ্টান্তমূলক"। তিঁনি যেভাবে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন সে জন্য আমরা তার কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। এছাড়া, কানাডীয় মুসলিম কংগ্রেসের পরিচালক জনাব হাসান মাহমুদও আমাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন। সেক্যুলার বাংলাদেশ ফোরামের আন্তর্জাতিক সমন্বয়ক জনাব সাব্বির খান নিউজ বাংলার সাথে সংহতি প্রকাশ করেন। তিনি আমাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে বার্তা পাঠিয়েছেন। এছাড়া, নতুন প্রজন্মের আইনজীবি ও পেশাজীবিদের সমন্বয়ে গঠিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ওয়ার ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজিক ফোরাম…
'প্রসাদ সিংহ পরিকল্পিত' মাসিক উল্টোরথ পত্রিকার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় শৈশবে―প্রয়াত মাতামহের (মুন্সেফ আদালতের সরকারি উকিল) দলিলপত্রভর্তি স্থূলকায় আলমারি লুঠ করে পেয়েছিলাম আরও অনেক বইয়ের সঙ্গে উল্টোরথ-এর একটি বিশেষ সংখ্যা (বর্ষ ২০, সংখ্যা ১০, পৌষ ১৮৯৩ শকাব্দ); ছোট মামা কর্তৃক স্বাক্ষরিত এই পত্রিকা আমার বহু দুপুরের অবকাশরঞ্জিনী হয়ে ছিল। [...]
'প্রসাদ সিংহ পরিকল্পিত' মাসিক উল্টোরথ পত্রিকার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় শৈশবে―প্রয়াত মাতামহের (মুন্সেফ আদালতের সরকারি উকিল) দলিলপত্রভর্তি স্থূলকায় আলমারি লুঠ করে পেয়েছিলাম আরও অনেক বইয়ের সঙ্গে উল্টোরথ-এর একটি বিশেষ সংখ্যা (বর্ষ ২০, সংখ্যা ১০, পৌষ ১৮৯৩ শকাব্দ); ছোট মামা কর্তৃক স্বাক্ষরিত এই পত্রিকা আমার বহু দুপুরের অবকাশরঞ্জিনী হয়ে ছিল। কণিষ্ক (রাম বসু) ও বরেন গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাসদুটির (যে যার অজ্ঞাতবাসে ও বনের খেলা) কথা আমার আমৃত্যু মনে থাকবে। পরবর্তীকালে আরও বাইশটি সংখ্যা সংগ্রহ করেছি পুরোনো বইয়ের দোকান থেকে; ধূসর কাগজে ছাপা কাটা-কাটা চেহারার অক্ষরগুলো আমাকে মোহগ্রস্ত করে রাখে এখনও। মূলত চলচ্চিত্রবিষয়ক পত্রিকা হলেও উল্টোরথ-এর বড় অংশ জুড়ে থাকত গল্প-উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনি, সাক্ষাৎকার ও রম্যরচনা; আর যা ছিল আমার কাছে সবচেয়ে আকর্ষক―'মেলব্যাগ'। নিয়মিত এ-বিভাগে পাঠকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হতো। একটি পূজা সংখ্যায় (১৮৯৯ শকাব্দ) ঘোষণা করা হয়েছিল যে শ্রেষ্ঠ প্রশ্নকর্তাকে ২৫.০০ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। সাধারণত প্রশ্নের তুলনায় উত্তরগুলো সংক্ষিপ্ততর হলেও বুদ্ধিদীপ্তি ও সরসতায় উপভোগ্য হয়ে উঠত। উত্তরদাতা ছিলেন মিসেস প্রসাদ সিংহ ও প্রসাদ সিংহ স্বয়ং; কোনও-কোনও সংখ্যায় অবতার কিংবা শ্রীপঞ্চাননকেও দেখা গেছে, আবার কয়েকটি সংখ্যায় নামই ছাপা নেই কারও। মার্চ ১৯৭২ সংখ্যায় (বর্ষ ২১, সংখ্যা ১, চৈত্র ১৮৯৪ শকাব্দ) প্রকাশিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানা যাচ্ছে : উল্টোরথ-এর মুদ্রাকর, প্রকাশক ও সম্পাদকের নাম মনোজ দত্ত; পত্রিকার ঠিকানা―দি ম্যাগাজিন্স্ প্রাইভেট লিমিটেড, ১২৪/বি, বিবেকানন্দ রোড, কলকাতা-৬। একই প্রকাশনালয় থেকে পাশাপাশি বেরোত একই আদলের আরেকটি মাসিক পত্রিকা : সিনেমাজগৎ। 'মেলব্যাগ' সেখানেও নিয়মিত বিভাগগুলোর একটি। পত্রিকাদুটির প্রকাশতারিখ উল্লেখিত হতো শকাব্দে (যার সঙ্গে ৭৮ যোগ করলে খ্রিস্টীয় সন মিলবে)। 'মেলব্যাগ'-সূত্রে জানতে পারি, 'উল্টোরথ' নামের প্রবর্তক প্রসাদ সিংহ এবং এর যাত্রা শুরু হয় ১৯৫২ সাল থেকে। আমার সংগৃহীত সর্বশেষ সংখ্যাটি (বর্ষ ৩৬, সংখ্যা ৯, বৈশাখ ১৩৯৫ বঙ্গাব্দ) একটু ব্যতিক্রমী (আকার : ১০.২৫" x ৮"; অন্যান্য সংখ্যার আকার : ৮.২৫" x ৫.২৫")―শকাব্দের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়েছে বঙ্গাব্দ এবং অন্তত এই প্রথমবারের মতো প্রারম্ভিক আখ্যাপত্র দেখতে পাচ্ছি, তাতে লেখা : প্রধান সম্পাদক―শক্তিপদ রাজগুরু, সম্পাদক―ডি. পি. আগরওয়াল, সহযোগী সম্পাদক―শ্যামল বসু। পালটে গেছে কার্যালয়ের ঠিকানাও : ১ বি রাজা সুবোধমল্লিক স্কোয়ার, কলিকাতা-৭০০০১৩। 'পাত্র পাত্রী' বা 'আপনার প্রশ্ন ও আপনার ভাগ্য' শিরোনামে নতুন বিভাগ…
আমাদের মনে হয় এই আলোচনাটা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুরু করা দরকার। আলোচনাটা মডারেটর গ্রুপে প্রথম শুরু হয়েছিল। কিন্তু এর সামষ্টিক গুরুত্ব বিবেচনায় এখন তা পোস্ট আকারেও তুলে দেয়া হল সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ সহজ করার লক্ষ্যে [...]
আমাদের মনে হয় এই আলোচনাটা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুরু করা দরকার। আলোচনাটা মডারেটর গ্রুপে প্রথম শুরু হয়েছিল। কিন্তু এর সামষ্টিক গুরুত্ব বিবেচনায় এখন তা পোস্ট আকারেও তুলে দেয়া হল সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ সহজ করার লক্ষ্যে। 'ইন্ডিপেন্ডেন্ট মিডিয়া' বলে বলে আমরা সবসময় গলা শুকিয়ে ফেলি। কিন্তু ব্লগ বা ইন্ডিপেন্ডেন্ট মিডিয়া ঠিক কি অর্থে এবং কিভাবে 'ইন্ডিপেন্ডেন্ট' সে বিষয়টা মনে হয় আমাদের নিজেদের একটু ঝালিয়ে নেয়ার সময় এসেছে এখন। সে অনুযায়ী লেখালিখির ধরণ এবং কনটেন্টের বিতর্কিত বিষয়গুলোতেও আলোকপাতের এখনি সময়। যে লেখা মূল ধারার পত্রপত্রিকায় বিনা প্রশ্নে ছাপানোযোগ্য তা যদি বিনা প্রশ্নে ব্লগেও ছাপানোর যোগ্য হয়, তাহলে বুঝতে হবে ব্লগ প্লাটফর্ম হিসেবে আমাদের নিজেদের ভূমিকা আরেকটু গভীরভাবে পুনঃর্বিবেচনা করার প্রয়োজন রয়েছে। ১) 'ইন্ডিপেন্ডেন্ট' মানে কি সম্পাদক অমুক কিংবা সম্পাদক তমুক এর কাটাছেঁড়া থেকে মুক্তিলাভ? ২) নাকি কর্পোরেট পূঁজির বিপরীতে বিনা (কিংবা সামান্য) খরচে ওভারহেড কমিয়ে ব্লগ চালানো? ৩) ব্লগ কি just another online magazine/platform গোছের কিছু? ৪) নাকি আঞ্চলিক ভাষায় লিখলেই তা "ইন্ডিপেন্ডেন্ট" হয়ে যায়? ৫) ব্লগ কি যেমন খুশি তেমন লেখার খাতা? এখানে ব্যক্তিগত খেয়াল এবং 'খুশি'ই কি মূল বলে বিবেচ্য নাকি বৃহত্তর কোন লক্ষ্য এবং সে অনুযায়ী কমিটমেন্ট থাকা দরকার তাতে? ৬) ব্লগে লেখা কি কেবল সময় কাটানো? বিনোদন? ব্লগ কি কেবলই 'কথা'? নাকি ব্লগে লেখাও একটা সিরিয়াস 'কাজ'? যদি কাজ বলে ধরে নিই একে, তবে কি হওয়া উচিত এর ধরণ এবং প্রকাশ ভঙ্গী? এই বিষয়গুলো আমাদের ভাবা দরকার। পৃথিবীর আর সব প্রান্তের প্রধান প্রধান ব্লগ প্লাটফর্মগুলো যখন মূল ধারার মিডিয়ার সাথে সমান্তরালে পাল্লা দিয়ে চলেছে, তখন আমাদের বাংলা ব্লগগুলো এখনো উপরিতলের কিছু বিতর্ক (যেমন: ভাষার ব্যবহার ইত্যাদি নিয়ে) নিয়েই বেশী ব্যস্ত। এখনো mediocrity থেকেই উত্তীর্ণ হতে পারছি না আমরা ব্লগ হিসেবে; সমাজ বা পরিপার্শ্ব পাল্টানো তো অনেক দূরবর্তী বিষয়। পরিপার্শ্বকে সফলভাবে বদলে দেয়ার মতো কিংবা নিদেন পক্ষে নাড়া দেবার মতো জোরই আমাদের তৈরী হয়নি এখনো। এভাবে এগোতে থাকলে তা হয়তো কোন দিনই হবে না বলে আমাদের আশংকা। সবার মতামত পেলে ভাল হয়। ধন্যবাদ।