মুক্তচিন্তার ধারক ও বাহক “সংবাদ” পত্রিকার অনুসন্ধানী প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম নভেম্বরের ৮ তারিখে “বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী, ১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের অন্যতম নায়ক, আলবদর কমান্ডার আশরাফউজ্জামান খানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিচার বিভাগের তদন্ত” শীর্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। প্রতিবেদনটি নিউজ বাংলার নজরে আসার সাথে সাথে আমরা তা আমাদের পত্রিকার বাংলা ও ইংরেজী সাইটে পুন:প্রকাশ করি। এর প্রায় এক মাস পর গত ১১ই ডিসেম্বর আশরাফউজ্জামানের নিউইয়র্কস্থ আইনজীবীর কাছ থেকে আমরা একটি উকিল নোটিশ পাই। এই নোটিশে আমাদের পত্রিকা থেকে “যুদ্ধাপরাধী ও বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী” হিসেবে উল্লেখকে মুছে দেওয়ার জন্য বলা হয়।
প্রতিবেদনটি যেহেতু “সংবাদ” পত্রিকা কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে, তাই এতে যোগ বা সংশোধনের আমাদের কোন সুযোগ নেই। এ অবস্থায় আমরা ভার্জিনিয়ার একটি প্রথিতযশা আইনী সংস্থার সাথে যোগাযোগ করি এবং যথাবিহিত আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করি। একটি উকিল নোটিশের হুমকির সাথে আপোষ করার কোন সুযোগ আমাদের নেই। মুক্তিযুদ্ধের আটত্রিশতম বিজয় উৎসব উদযাপনের প্রাক্কালে আমরা যুদ্ধাপরাধীদের সাথে আপোষ-মীমাংসা করে বা নির্বিকার হয়ে বসে থাকতে পারি না।
যেহেতু সংবাদটি মার্কিন সরকারের বিচার বিভাগ থেকে আশরাফউজ্জামানের যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত তথ্যসম্বলিত ও প্রমাণাদির জন্য-তাই আমরা বিষয়টি ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশের মাননীয় রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদেরের দৃষ্টিগোচর করেছি এবং উকিল নোটিশের কপিটি ইতিমধ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠিয়েছি। মাননীয় রাষ্ট্রদূত এ ব্যাপারে আমাদের সর্বাত্মক সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। একই সাথে প্রয়োজনীয় পরামর্শের জন্য ড: কামাল হোসেনের সাথে আমাদের আলাপ হয়। তিঁনি নিউজ বাংলা কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে “আশাব্যঞ্জক ও যথার্থ” বলে আখ্যায়িত করে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
এই আইনী নোটিশকে যুদ্ধাপরাধীদের আস্ফালন ও অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ঘটনা বলে উল্লেখ করেন ডিসি মেট্রোতে বসবাসরত বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ-এর কন্যা শারমিন আহমেদ। তিঁনি আমাদেরকে সাহস ও উৎসাহ দিয়ে বলেন এ ব্যাপারে নিউজ বাংলার পদক্ষেপ “দৃষ্টান্তমূলক”। তিঁনি যেভাবে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন সে জন্য আমরা তার কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। এছাড়া, কানাডীয় মুসলিম কংগ্রেসের পরিচালক জনাব হাসান মাহমুদও আমাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
সেক্যুলার বাংলাদেশ ফোরামের আন্তর্জাতিক সমন্বয়ক জনাব সাব্বির খান নিউজ বাংলার সাথে সংহতি প্রকাশ করেন। তিনি আমাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে বার্তা পাঠিয়েছেন। এছাড়া, নতুন প্রজন্মের আইনজীবি ও পেশাজীবিদের সমন্বয়ে গঠিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ওয়ার ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজিক ফোরাম নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত হয়েছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রায়হান রশিদ এ ব্যাপারে সমন্বয়ের গুরু দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসেন। একই সাথে “সংবাদ” পত্রিকার প্রদায়ক রোজিনা ইসলাম এ ব্যাপারে তাঁর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন বলে আমাদের ফোনে জানান। এগুলো অভূতপূর্ব ও অত্যন্ত ইতিবাচক সাড়া বলে আমরা বিশ্বাস করি।
উকিল নোটিশের ঘটনাটির ইন্টারনেটে ব্লগস্ফিয়ারের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে বড়ো কৃতিত্বের পাওনাদার প্রবাসের জনপ্রিয় লেখক, কবি ও কলামিস্ট ফকির ইলিয়াসের। তিঁনি সচলায়তনে তাঁর ব্লগের মাধ্যমে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আপডেট দিয়ে সবাইকে সজাগ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিদের একাত্ম হয়ে এখন ১৯৭১’এর যুদ্ধাপরাধের বিচারকে ত্বরান্বিত করার সুযোগ আজ এসেছে। বসে থাকার সময় এখন আর নেই। ডিসি মেট্রোর জনপ্রিয় এক্টিভিস্ট জনাব জামাল হাসান ও টেক্সাসের এম এম আর জালাল আমাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সমন্বয়ের গুরুদায়িত্ব স্বেচ্ছায় নিয়েছেন। এদের কাছেও আমরা বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ।
এছাড়া, আমরা পেয়েছি পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের অগণিত ই-মেইল ও ফোন কল। এ মূহুর্ত্বে আপনাদের নৈতিক সমর্থন ছাড়া আমাদের চাওয়ার কিছু নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হোক আমাদের সমকালীন প্রজন্ম। “সব কিছূ নষ্টদের অধিকারে যাবে” এই নেতিবাচক স্রোতধারা বদলে দেওয়ার সময় আজ এসেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে। আর এর বাস্তবায়ন শুধু এখন সময়ের ব্যাপার। ১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর যারা যুদ্ধাপরাধীদের প্রশ্রয় আর পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে- তারা আজ বাংলাদেশে সবচেয়ে ধিকৃত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যে মাথা উঁচু করে আপোষহীনভাবে সাহসের সাথে সামনে এগোবার শক্তি জোগায়- তা আবারও প্রমাণিত হলো। সময় এসেছে জয়ের ও ন্যায় বিচারের। “বিচারের বাণী সবসময় যে নীরবে নিভৃতে কাঁদে না”, বরং তা সময়মতো ঘৃণ্য অপরাধীকে প্রাপ্য শাস্তি ও ধিক্কারের মুখোমুখিও করে – তা আবারও প্রমাণিত হতে যাচ্ছে।
সূত্র: নিউজ বাংলা

থাকি আমেরিকার ডিসি মেট্রোতে পটোম্যাক নদীর খুব কাছে। অবসরে পড়ি ও লিখি। কর্মস্থল ওয়াশিংটন ডিসি’তে। মনিটরিং, মূল্যায়ন ও তথ্য বিশ্লেষণে জড়িত পেশাগত কারণে। প্রিয় বিষয় হচ্ছে সামাজিক উন্নয়ন, শিশু কল্যাণ, সমাজ, রাজনীতি ও মানবাধিকার।
