বিশ্ব অর্থনীতির দ্বিতীয় বৃহত্তম পরাশক্তির সাথে টক্কর লেগেছে ইন্টারনেটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের। গত পরশু গুগল তাদের ওয়েবসাইটে ঘোষনা দিয়ে জানিয়েছে যে চীনে তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার পরিবেশ ক্রমাগত বিরূপ হয়ে পড়েছে এবং এই অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই তারা চীন থেকে তল্পি-তল্পা গুটিয়ে চলে যেতে বাধ্য হবে। গুগল ও চীনের এই সংঘর্ষের কি কোন শুভ পরিণতি আছে?
একটু পেছনে তাকানো যাক। ইন্টারনেট ব্যবহার করে অথচ গুগল চেনে না, এমন লোক বোধ হয় লাখে একটাও পাওয়া যাবে না। এক কথায় ইন্টারনেটের সবচেয়ে শক্তিশালী ও বহুলব্যবহৃত সার্চ ইঞ্জিনের নাম হলো গুগল। ১৯৯৬ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই পিএইচডি অধ্যয়নরত ছাত্র ল্যারি পেজ এবং সের্গেই ব্রিন তাদের গবেষণার মাধ্যমে নতুন এক সার্চ এলগোরিদম প্রণয়ন করেন। এর আগে আরো অনেক সার্চ ইঞ্জিনই ছিল। ৯০-এর দশকে যারা নেট ব্যবহার করতেন তাদের অনেকের মনে থাকবে Lycos, Altavista বা Infoseek-এর কথা। কিন্তু কার্যকারিতার দিক থেকে এইসব ইঞ্জিনের চেয়ে গুগল অনেক বেশী সফল প্রমাণিত হয়।
ইন্টারনেটে রয়েছে শত কোটি ওয়েবসাইট। এর মধ্যে থেকে ঠিক আপনার প্রয়োজনীয় তথ্যটুকুই এক নিমেষের মধ্যে খুঁজে বের করে সেটাকে আপনার সামনে হাজির করা – একেবারে সহজ কাজ নয়। কিন্তু পেজ ও ব্রিন এই দুঃসাধ্য কাজটিই সাধন করেন। কি লাগবে আপনার? মিটার থেকে ফুট হিসাব করতে চাই? বলে দেবে গুগল। সম্রাট অশোকের রাজধানীর নাম যেন কি ছিল? জানে গুগল। আচ্ছা, কেক বানাতে চাই, কিছু রেসিপি দরকার। গুগলে গিয়ে খোঁজ লাগাও। ১৯৯৯ সালে এক প্রযুক্তি পত্রিকায় আমি প্রথম গুগলের নাম শুনি। লাস ভেগাসে বাৎসরিক প্রযুক্তি সম্মেলনে সদ্য পুরস্কার জিতেছে নতুন এই কম্পানী – ক্রিকেটের গুগলির সাথে নামের বেশ মিল! খবরটা পড়েই আমি গুগলে গিয়ে আমার স্কুল জীবনের এক হারিয়ে যাওয়া সহপাঠীর নাম সার্চ দেই। শুধু এতটুকুই জানতাম যে সে বিদেশে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। ঠিকই গুগল এনে দিয়েছিল তার নাম-ধাম, বর্তমানে কোথায় আছে কি করছে, এবং যোগাযোগের ইমেইল। বলা বাহুল্য, সেদিনের পর থেকে আজ অব্দি গুগল বিনা আর কোন সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করার প্রয়োজন বোধ করিনি।
গেল দশ বছরে গুগল আরো বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। মাইক্রোসফট-কে ছাপিয়ে গুগল বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রযুক্তি কম্পানী। কোকাকোলা-কে টপকিয়ে গুগল এখন পৃথিবীর এক নম্বর ব্র্যান্ড। গুগল সার্চ ইঞ্জিন ছাড়াও এখন আছে গুগল নিউজ, গুগল ম্যাপস, গুগল ভিডিওস ইত্যাদি। ইয়াহু বা হটমেইল-এর সাথে পাল্লা দিতে এসেছে জিমেইল। ২০০৬ সালে গুগল কিনে নেয় ভিডিও আপলোড সাইট ইউটিউব-কে। দাম পড়ে ১৬৫ কোটি ডলার। (ইউটিউবের আদি প্রতিষ্ঠাতা যেই তিনজন, তাদের একজন বাঙালী ছেলে জাভেদ করিম। গুগল যখন ইউটিউব কিনে নেয়, জাভেদ-ও মেলা টাকা পেয়েছিল – প্রায় সাড়ে ছয় কোটি ডলার।)
সৃষ্টির শুরু থেকেই একটা স্লোগানের জন্য গুগল আলোচনা/সমালোচনার মুখোমুখি হয়ে আসছে। Don’t be evil – কম্পানীর মূল পাথেয়-গুলোর অন্যতম। এর একটা মানে হলো যে – গুগলের যে বিশাল ক্ষমতা, সেটার যেন জেনে শুনে কোন অপব্যবহার না করা হয়। আর শুধুমাত্র টাকা বা স্বল্পমেয়াদী মুনাফার পেছনে ছুটে কম্পানীর সুনাম বা ভবিষ্যত যেন বিপদের মুখে ঠেলে দেয়া না হয়।
গুগলের চীন যাত্রা
২০০৬ সালে গুগল একটি চীনা সাইট চালু করে – www.google.cn। এখন সমস্যা হলো যে তথ্যের অবাধ প্রবাহের ব্যাপারে চীনা সরকারের ঘোরতর আপত্তি আছে। সেটা যে কোন মাধ্যমেই হোক না কেন – নিয়ম-শৃংখলা থেকে ইন্টারনেট-ও মওকুফ নয়। উদাহরন স্বরূপ ধরেন ১৯৮৯ সালে বেইজিং-এর তিয়ানানমেন স্কোয়ারে ছাত্র আন্দোলনের কথা। চীনের ভেতরে বসে আপনি এই ঘটনা নিয়ে কোন তথ্য বের করতে পারবেন না ইন্টারনেট থেকে। একইভাবে তাইওয়ানের স্বার্বভৌমত্ব, তিব্বতের স্বাধীনতা, ফালুন গং গোষ্ঠী – এইসব বিষয়ও চীনা ইন্টারনেটে কঠোরভাবে সেন্সর করা হয়।
এমনকি আপাতদৃষ্টিতে বিপজ্জনক নয়, এমন সাইটও চীনে অহরহ ব্যান করা হয়। এর মধ্যে আছে ইন্টারনেটের সবচেয়ে বহুল-ব্যবহৃত এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় সাইটগুলোও – যেমন ফেসবুক, ইউটিউব, ফ্লিকার, উইকিপিডিয়া, ব্লগস্পট, পিকাসা, টুইটার, হটমেইল, জিমেইল এবং www.google.com (যদিও www.google.cn জায়েজ আছে।) এই ব্যাপক আকারের সেন্সরশিপ চালু রাখতে চীনা সরকার যেই প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে, তার নাম গোল্ডেন শীল্ড প্রজেক্ট, ২০০৩ সাল থেকে এটি কার্যকর রয়েছে। গ্রেট ওয়াল অফ চায়নার সাথে মিল রেখে রসিকজন এর নাম দিয়েছেন গ্রেট ফায়ারওয়াল অফ চায়না।
২০০৬ সালে গুগল যখন চীনে প্রবেশ করে, তখন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। গুগলের মূলমন্ত্র হলো তথ্যের অবাধ প্রবাহ, যেটা চীনা সরকার একেবারেই অনুমোদন করবে না। কিন্তু অন্যদিকে আছে চীনের ১৩০ কোটি লোক – সেই বিশাল বাজার থেকে দূরে থাকাও সমীচীন নয়। সবকিছু মিলিয়ে গুগল সিদ্ধান্ত নেয় যে চীনা সরকার প্রদত্ত নিয়মকানুন মেনে নিয়েই তারা চীনে প্রবেশ করবে। অর্থাৎ চীনা সরকার যেসব সাইট ব্যান করতে বলবে, যেসব তথ্য সেন্সর করতে বলবে, গুগল সেই অনুযায়ী তাদের সার্চ রেজাল্ট বদলে দিয়ে তারপরেই নেট ব্যবহারকারীদের কাছে পরিবেশন করবে। একটা নোট জুড়ে দেবে নীচে – যে আইনগত কারনে আপনি সম্পূর্ণ সার্চ রেজাল্ট দেখতে পাচ্ছেন না।
স্বভাবতই এই self-censorship-এর জন্যে গুগল কিছুটা সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিল। প্রধাণ দুই মানবাধিকার সংস্থা এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ – উভয়ই গুগলের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে। একদিকে আছে গুগলের স্বপ্রণোদিত স্লোগান Don’t be evil. আবার অন্যদিকে তারাই চীনা সরকারের আদেশ মোতাবেক নানান রকম ঘোমটা-বোরখা দিয়ে নেট সার্চ ঢেকে দিচ্ছে। মানে কথা ও কাজে একটা অসামঞ্জস্য আছে। গুগল তখন যেই যুক্তি দিয়েছিল তার সারকথা হলো যে – আমরা আমাদের নীতির প্রশ্নে পিছ-পা হয়েছি, এটা সত্য। কিন্তু চীন থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন না থেকে আমরা বরং বিশ্বাস করি যে খন্ডিত/আংশিক গুগল-ও চীনা নেট ব্যবহারকারীদের জন্যে একটা ভালো জিনিস হতে পারে। আর কিছু না হোক, আমরা তথ্যের একটা অল্টারনেটিভ সূত্র দিতে পারছি।
সেই ছিল ২০০৬ সালের কথা। চার বছরে হোয়াংহো নদীতে অনেক জল বয়ে গেছে। গত কয়েক মাসে বিভিন্ন কারনে গুগল ও চীনা সরকারের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ক্রমাগত খারাপের দিকে গিয়েছে। অবশেষে ১২ তারিখে গুগল তাদের বিবৃতিটি দিল – বললো যে এখন থেকে তারা আর google.cn-এর কোন সার্চ রেজাল্ট অদল-বদল করবে না, কোন প্রকার সেন্সরশিপে যাবে না। এবং এর ফলে যদি চীনা সরকার google.cn বন্ধ করে দেয় এবং চীন থেকে গুগল-কে বিদায় নিতে হয়, তাহলে সেই মাশুল তারা গুণতে রাজী আছে।
একদিকে ইন্টারনেট জগতের এক ভার্চুয়াল শক্তি, অপরদিকে ভূ-রাজনীতি ও অর্থনীতির পরাশক্তি চীন। এই লড়াই একদিকে যেমন অসম, অপরদিকে তেমনই অভিনব। এই চূড়ান্ত পরিস্থিতির কিভাবে উদ্ভব হলো, এবং আগামীতে এর ফলাফল কি দাঁড়াতে পারে, তা নিয়ে লেখার ইচ্ছে রইলো এর পরের পর্বে।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৩৩ comments
মোহাম্মদ মুনিম - ১৫ জানুয়ারি ২০১০ (১২:৫১ পূর্বাহ্ণ)
গুগলের চীন ত্যাগ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে মার্কিন সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক আলাপ হচ্ছে। গুগল বাকি দুনিয়াতে এক নম্বর সার্চ ইঞ্জিন হলেও চীনে দু নম্বর (এক নম্বর হচ্ছে বাইদু.কম)। তার পরেও চীনে বিশাল সংখ্যক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আছে (৩২০ মিলিয়ন, যা মার্কিন মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশী)। এত বড় বাজার ছেড়ে আসা গুগলের জন্য সাহসের ব্যাপারই বটে। তবে আপাতদৃষ্টিতে গুগল যে moral high ground দেখাল, তাতে বাকি দুনিয়াতে গুগলের সুনাম বাড়বে, আর সুনাম বাড়া মানেই ব্যাবসা বাড়া। ইতিমধ্যেই কিছু কিছু বেইজিং এবং সাংহাইবাসী গুগলের চীনা অফিসের সামনে ফুল দেয়া শুরু করেছে। জনসংযোগের ব্যাপারে গুগল নিশ্চিতভাবেই চীনের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে, তাতে অবশ্য চীনা সরকারের কিছুই যায় আসে না। তারা দুই ট্রিলিয়ন ডলারের রিজার্ভের উপর বসে আছে, আর কোন পশ্চিমা বিনিয়োগের তাদের প্রয়োজন নেই। চীনা পণ্য এতই সস্তা যে, শুধু এর জোরেই চীনের বাজার থাকবে, বাকি দুনিয়াতে নিজেদের ইমেজ নিয়ে তাদের বিশেষ ভাবনা নেই। তবে একটা ভয় নিশ্চয় তাদের আছে, সেটা হচ্ছে চীনের নতুন মধ্যবিত্তের রাজনৈতিক স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা, চীন তার লোকজনকে ভালো খেতে পড়তে দিলেও দিচ্ছে না তথ্যের স্বাধীনতা, তিয়েন আনমেনে কি হয়েছে আর তিব্বতে কি হচ্ছে, চীনারা জানতে চায়। এই জানার আকাঙ্ক্ষাই চীনের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।
কামরুজ্জমান জাহাঙ্গীর - ১৫ জানুয়ারি ২০১০ (১:১৮ পূর্বাহ্ণ)
আপনার পোস্টের শিরোনাম পড়াতে মনে হতে পারে, চিনের সাথে গুগলের্ একটা যু্দ্ধ যেন শুরু হয়ে গেছে। বিষয়টি কি এরকম? না, চিন এখনও খানিক প্রগতিমুখী আদর্শ বা জেদের ভিতর আছে হয়ত। তারা তো রাষ্ট্রীয় পুজিঁ থেকে ব্যক্তিপুজিঁর দিকে অলরেডি ঝুকেঁই আছে। তবু সমাজবাদ থেকে পুজিঁবাদে ব্যাক করার ট্রানজিয়েন্ট পয়েন্টে একটু লাশ-শরমের খেলা দেখানোর মতো ব্যাপার হচ্ছে আর-কী। নাচতে নেমে চিনারা কেন যে ঘোমটা দিচ্ছে!
সমাজতন্ত্র বরাবরই একটা রাষ্ট্রের ব্যাপার, এতে নিয়ম-শৃংখলার এক বিষয় তো থাকতেই হবে। কোনো একটা রাষ্ট্রে সমাজতন্ত্র কায়েম হলে পর এর আশপাশের রাষ্ট্র তো একে গিলে খাওয়ার জন্য হা করে থাকে। সমাজতান্ত্রিক সেই রাষ্ট্র যদি তার ঘরের বেবাক দরজা-জানালা খুলে দিয়ে রাখে, তাহলে তা দিয়ে শুধু বিশু্দ্ধ আলো-বাতাসই ঢুকবে না, বদ-হাওয়া ঢুকে ওইদেশকে লণ্ডভণ্ড করে দিবে না? কিন্তু তথ্য-প্রযুক্তির এইকালে ঘর-মন-জানালা চৌদিক থেকে আটকানো সম্ভব? ইতালির টিভি চ্যানেলের টসটসা বুর্জোয়া রূপের ঢেলায় সমাজতান্ত্রিক আলবেনিয়ার কেমন বারোটা বেজেছিল। তবে আমার কথা হচ্ছে, এই সময়ে সবকিছুর বিপরীতে (ইন্টারনেট /মিডিয়া /এনজিও /টিভি-ফিল্ম /সেলফোন) অল্টারনেট ব্যবস্থা করতে না পারলে প্রগতিশীল আন্দোলন ভবিষ্যৎ একেবারে আলোহীন/জোশহীন হয়ে মরতেই থাকবে।
সুবিনয় মুস্তফী - ১৫ জানুয়ারি ২০১০ (৬:৪৯ পূর্বাহ্ণ)
ইন্টারনেট, সেলফোন ইত্যাদি যে অপ্রগতিশীল অশুভ শক্তি, সেই হিসাবের সাথে দ্বিমত পোষণ করলাম।
কামরুজ্জমান জাহাঙ্গীর - ১৫ জানুয়ারি ২০১০ (৮:২৭ পূর্বাহ্ণ)
আমি বোধ হয় আমার অভিমত বুঝাতে পারিনি। আমি বলতে চাচ্ছি, ইমেইল-সেলফোন অশুভ শক্তি বলে অভিহিত করতে চাচ্ছি না। আমি বলতে চাচ্ছি, এইসব প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে কখনও কখনও যে অশুভ ছায়া লক্ষ করা যায়, তাকে মোকাবেলা করার জন্য আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। এই যে, চিন এখনও গুগলকে যে ধরনের অগণতান্ত্রিক-ফ্যাসিবাদী কায়দায় দমন করতে চাচ্ছে, তার বিপরীতে এর কুফলকে কালচারালি মোকাবেলা করাটাই অতীব জরুরি এক কাজ। আমি আবারও বলছি, সেলফোন আর ইমেইলকে অশুভ শক্তি বলার প্রশ্নই আসে না। তাই যদি হবে তবে এর সহযোগিতা সারাক্ষণই তো আমরা নিচ্ছি। এখন এসবের সহযোগিতাবিহীন জীবন তো কল্পনাই করতে পারি না।
সৈকত আচার্য্য - ১৫ জানুয়ারি ২০১০ (৮:০১ পূর্বাহ্ণ)
@ কামরুজ্জমান জাহাঙ্গীরঃ
প্রগতিশীল আন্দোলনের কর্মীদের নিজেদের উপর নিয়ন্ত্রন ক্ষমতা কি এতই কি দুর্বল যে, ইণ্টারনেট-টিভি ফিল্মের জোয়ারে তারা ভেসে যাবে এবং তাদের আদর্শচ্যুতি ঘটবে? তাদের কি ভাল মন্দ বাছ বিচার করার কান্ডজ্ঞানটুকুন ও থাকবে না। প্রগতিশীলদের জন্য ইন্টারনেট -টিভি ফিল্মের আবার অল্টারনেট কি থাকতে পারে, তা মাথায় এলো না। এই টুলসগুলোকে তো প্রগতিশীলরাই তাদের নিজেদের কাজে লাগাতে পারে। পারে না? গোঁড়া ধর্মীয় জংগীরা-সন্ত্রাসবাদীরা এই টুলসগুলো/মাধ্যমগুলো তাদের কাজ়ে লাগাচ্ছে আর প্রগতিশীলরা পারছে না বলতে চান? তাই-ই যদি হয় অমন প্রগতিশীল আন্দোলন আলোহীন-জোশহীন হয়ে থাকাই যে ভালো!
আমার অতি পরিচিত একজন, যিনি প্রগতিশীল আন্দোলনের সাথে আছেন এবং অনেকদিন ধরেই আছেন, শহরের প্রান কেন্দ্রেই থাকেন, আজ অবধি নিজের একটি ই-মেইল একাউন্ট করার সময়-সু্যোগ করে উঠতে পারেন নি। কিন্ত স্বপ্ন দেখেন এবং দেখান বিশ্ব জুড়ে তার আদর্শ একদিন বাস্তবায়িত হবেই হবে।
আদর্শের এই বলিষ্ট পূজারীগণ যারা এই জমানায় বসে এখনো চিন্তা করেন এবং ভাবেন যে, ই-মেইলটা ঠিক কেন দরকারী, আমি ভেবে পাই না যে আসলে, আদর্শ – প্রগতিশীলতা ইত্যাদি কি তাদের উপর একটা বোঝা নাকি তারা নিজেরাই আদর্শের উপর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কামরুজ্জমান জাহাঙ্গীর - ১৫ জানুয়ারি ২০১০ (৮:৫১ পূর্বাহ্ণ)
আপনার এই প্রশ্নের উত্তর আশা করি আপনি আমার দেয়া মন্তব্য (২.১.১)-এ পাবেন।
আপনার বিবৃত উপরোক্ত স্বপ্নকে ছুঁতে ইচ্ছা করে।
যাই হোক, আমি আপনাকে অনুরোধ করব, আমার পুরো মন্তব্যটির ভিতর থেকে আমার মানসিক চৈতন্যকে অনুভব করার জন্য। তাহলে হয়ত আমার ভাবনাকে আপনার আর বোঝা মনে হবে না। ধন্যবাদ।
রাগিব হাসান - ১৫ জানুয়ারি ২০১০ (৬:৪৬ পূর্বাহ্ণ)
১
গুগলের don’t be evil কথাটা অনেকটা “ভাব” মনে হলেও আসলেই কিন্তু কোম্পানিটির কর্মক্ষেত্রের সংস্কৃতিতে এই ধারণাটা ব্যাপকভাবে চালু। আমি যখন কাজ করতাম (ইন্টার্নশীপ), আমার গ্রুপের বাকি ৩ জনই দেখেছি প্রাইভেসি সংক্রান্ত ব্যাপারে প্রচন্ড সচেতন। সেসময় স্ট্রিট ভিউ ফিচারটি বাজারে ছাড়ার আগে গুগলের কর্মীদের জন্য চালু করে দেয়া হয়। তখনই কোম্পানির ভেতরের বিভিন্ন ফোরামে অনেকে এর প্রাইভেসি সংক্রান্ত সমস্যাগুলো নিয়ে জোর আলোচনা ও দরকার হলে সমালোচনা করতে দেখেছি। অনেকেরই আশংকা ছিলো, স্ট্রিট ভিউ এর কিছু ফিচার Googly হবে না, মানে গুগলের যে ভালোমানুষ নীতি, তার সাথে মিলবে না।
একই ঘটনা দেখেছি ডাবলক্লিক নামের পপআপ ও ব্যানার বিজ্ঞাপনের কোম্পানিটি কেনার সময়ে।
চীনে যাবার মূল সিদ্ধান্তটাই বিতর্কিত ছিলো। সের্গেই ব্রিন বিশেষ করে এর বিরোধী ছিলো, কিন্তু পরে ব্যবসার খাতিরে মেনে নেয়।
২
চীনাদের এই হ্যাকিং নতুন ঘটনা না। চীনা সরকারের এই হ্যাকার বাহিনী সারাক্ষণ লেগে আছে। বছর দুই আগে তারা ভারতের ধর্মশালায় অবস্থিত দালাই লামার আশ্রমের কম্পিউটারগুলোকে টার্গেট করে। ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়ে আমার সাবেক সহকর্মী শিশির নাগরাজ সেসময় কেম্ব্রিজে ছিলো — সেখানকার সিকিউরিটি ল্যাবের একটি টিম গিয়ে এই পুরো ঘটনার আদ্যোপান্ত বের করে। তিব্বতী স্বাধীনতাকামীদের কম্পিউটার ও ইমেইল হ্যাক করে চীনারা গোপন তথ্য বের করা ও তা কাজে লাগিয়ে তিব্বতীদের নিপীড়ন করার কাজটা ভালো ভাবেই করেছিলো। এমনকি দালাই লামা কার কার সাথে মিটিং করতে চান, তা জেনে নিয়ে চীন সরকার সেই অন্যপক্ষদের চাপ দিতো মিটিং বাতিল করতে।
৩
চীনের বিখ্যাত ফায়ারওয়াল হলো সিকিউরিটি রিসার্চারদের গবেষণার বিষয়। বছর দুয়েক আগে কম্পিউটার নিরাপত্তার শীর্ষ সম্মেলনে একজন গবেষণার ফল উপস্থাপন করেছিলেন, চীনা এই ফায়ারওয়ালটির গড়ন কেমন, কোথায় কোথায় কীভাবে ফিল্টারিং করা হয়, সব কিছু নিয়ে। আর এই ফায়ারওয়ালটি কীভাবে এড়াতে হবে, সেন্সরশীপ বিরোধী এই ধরণের কাজ চলছে পুরোদমেই। মজার ব্যাপার হলো, এই গবেষণার মুখ্য পৃষ্ঠপোষক আবার মার্কিন নৌবাহিনী। (যদিও কোডে গুপ্ত কিছু ঢোকাবার উপায় নেই, সোর্সকোড অনেক ক্ষেত্রেই ওপেন)।
৪
চীনের বাজারে গুগল কিন্তু বাইদুর অনেক পেছনে। চীনের বাজার যদি হারাতেও হয়, গুগলের মোট লস হবে মিলিয়নের ঘরেই। কিন্তু গুগলের ভাবমূর্তি বেড়ে যাবে ও গেছে বিপুল পরিমাণে, গত দুই দিনে বিভিন্ন জনের টুইটার ফিড দেখেই তা বুঝতে পারছি। এমনকি গুগলের ভেতরে কর্মরত আমার এক বন্ধু লিখেছে এতো দিনে গুগল আবার আগের রূপে ফেরত এসেছে, কর্মীদের খুশিটা এখানেই।
আমার মনে হয় গুগলকে এড়িয়ে চীনারা চলতে পারবে না। আর চীনের দমননীতি মেনে নেয়া অন্য কোম্পানি যেমন মাইক্রোসফটের উপরেও চাপ আসবে, আর চীন সরকারকে তোষামোদ করে চললে তাদের ভাবমূর্তি নিয়েই টান পড়বে। এমনিতেই গুগল প্রাইভেসি ও স্বাধীনতার ব্যাপারে অনেক এগিয়ে আছে (মার্কিন সরকার যখন অন্যায় ভাবে তাদের কাছে ইউজারদের তথ্য দাবী করেছিলো, ইয়াহু বা মাইক্রোসফটের মতো গুগল সে দাবী মেনে নেয়নি, বরং মামলা করে জিতে গিয়েছিলো। বছর দুই আগের কথা)। পরিণামে আশা করি এটা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষদের জন্য শুভ হয়ে দাঁড়াবে।
রাগিব হাসান
—————-
গণক মিস্তিরি
মায়ানগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | কুহুকুহু
সৈকত আচার্য্য - ১৫ জানুয়ারি ২০১০ (৮:৪২ পূর্বাহ্ণ)
সুবিনয় মুস্তফীকে অভিনন্দন। আপনার এই পোষ্টের কল্যানে দরকারি কিছু তথ্যাদিও জানা হয়ে গেল, যা আগে জানতাম না।
জনা পাঁচেক চায়নীজ ছাত্র-ছাত্রীর সাথে যোগাযোগ ছিল আমার। তাদের প্রত্যেকেই দুঃখ করে বলতো, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং তার কোন রুপ প্রচার-প্রচারনা চোখে পড়লেই চায়নীজ সরকার তাদের সাথে অত্যন্ত অমানবিক আচরন করতো এবং তাদের বাকী জীবনকে নরক বানিয়ে ছাড়তো। সবাই এক বাক্যে বলতো, তাদের দেশের নেতারা নাকি অত্যন্ত ভীতু প্রকৃতির যে কারনে তারা তাদের দেশকে সমগ্র বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার পক্ষপাতী। চীনা মানুষ যেন সেই আদর্শবাদী পিতার সন্তান, যার নাকি, কারো সাথে মিশতে বারণ, পাছে সে খারাপ হয়ে যায়! মুক্ত চিন্তার জয় হোক, জনতার টুটী চেপে ধরা সরকারী চীনা নীতির ক্ষয় হোক।
বিপ্লব রহমান - ১৫ জানুয়ারি ২০১০ (৬:৪৫ অপরাহ্ণ)
অনেকদিন পর সুবিনয়দার লেখা পড়লাম। গুগল সর্ম্পকে আপনি যে চিন্তাশীল তথ্য দিয়েছেন, টেকনো-কানা হিসেবে এর প্রায় কিছুই জানা ছিলো না। সে জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। বিনীত অনুরোধ, নিয়মিত লেখার।
রাগিব হাসানের তথ্য-বহুল দীর্ঘ মন্তব্যটিও ভালো লাগলো। চলকু। 🙂
অস্মিতা - ১৫ জানুয়ারি ২০১০ (৭:১৩ অপরাহ্ণ)
@ সুবিনয় মুস্তফী
আপনার লেখা আগ্রহ নিয়ে পড়ি। চমৎকার তথ্যবহুল পোস্টটির জন্য ধন্যবাদ। ইন্টারনেট এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কিছু মৌলিক ইস্যু জানা হল চীন এবং গুগল নিয়ে আপনার এই লেখাটির মাধ্যমে।
রেজাউল করিম সুমন - ২১ জানুয়ারি ২০১০ (৮:১৩ অপরাহ্ণ)
ছাপচিত্রী রশীদ আমিন বেশ কিছুদিন আগে বেইজিং থেকে ই-মেইলে জানিয়েছিলেন, চীনে বসে এখন ফেসবুক, ইউটিউব সহ বিভিন্ন সাইটে ঢোকা যায় না। এর ক’দিন পরে হংকঙে অনুষ্ঠিত তাঁর একক প্রদর্শনীর ছবি ফেসবুকে দেখে ধরে নিয়েছিলাম, অবস্থার উন্নতি হয়েছে। অতি সম্প্রতি সুবিনয় মুস্তফীর এই পোস্টের সূত্র ধরে কথাপ্রসঙ্গে জানতে পারলাম, ওই ছবিগুলো তিনি হংকঙে বসে আপলোড করেছিলেন!
২
মূল লেখা এবং রাগিব হাসান সহ অন্যদের মন্তব্যের মাধ্যমে বিষয়টি বিশদে জানতে পারলাম। সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
বিনয়ভূষণ ধর - ১৫ জানুয়ারি ২০১০ (৭:৪১ অপরাহ্ণ)
পোষ্টখানার লেখক সুবিনয় মুস্তফীকে অনেক ধন্যবাদ, শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। পোষ্টখানার মাধ্যমে দরকারী অনেক জিনিস জানতে পারলাম আমরা। এখানে আজকে প্রকাশিত ‘কালের কন্ঠ’ থেকে নিচে উল্লেখিত খবরটি দেয়া হলো…
বিনয়ভূষণ ধর - ২২ জানুয়ারি ২০১০ (৮:৫১ অপরাহ্ণ)
বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক হাসান ফেরদৌস আজকে প্রকাশিত প্রথম আলো পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতায় খোলা চোখে কলামে এই বিষয়খানার উপর একটি চমৎকার লেখা লিখেছেন…
বিনয়ভূষণ ধর - ২৩ জানুয়ারি ২০১০ (৫:২৩ অপরাহ্ণ)
সূত্র: কালের কন্ঠ (১৯শে জানুয়ারী ২০১০ সাল)
বিনয়ভূষণ ধর - ২৩ জানুয়ারি ২০১০ (৫:৩১ অপরাহ্ণ)
সূত্র: কালের কন্ঠ (২৩শে জানুয়ারী ২০১০ সাল)
অলৌকিক হাসান - ১৫ জানুয়ারি ২০১০ (৮:০২ অপরাহ্ণ)
ধন্যবাদ সুবিনয়। পোস্টের বিষয়ে একটু একটু ধারণা ছিল। পুরোপুরি জানতে পারলাম অবশেষে।
অট. ভুটান নিয়ে একটা পোস্ট লিখতে চেয়েছিলেন আরো বিস্তারিত ভাবে। কবে পড়ব?
মনজুরাউল - ১৬ জানুয়ারি ২০১০ (১২:৫৮ পূর্বাহ্ণ)
স্বাগতম।
amoun re - ১৬ জানুয়ারি ২০১০ (৩:৩৯ পূর্বাহ্ণ)
ঘটনায় নতুন মোড় যোগ হবে যখন বাইদু’র আন্তর্জাতিক সংস্করণ বাজারে আসবে। সেন্সরশিপে ম্যাংগো পাবলিকের কিছু আসে যায় না। ব্যবহার শুরু করার আগে ক’জন এর do no evil নীতিমালা পড়ে দেখে বলুন? সার্চ ইঞ্জিনের দ্রুততা ও ব্যাপ্তিতে এর প্রসার ঘটেছে, do no evil নীতিপালনে নয়। দিনের শেষে খেলাটা হবে টাকা ও প্রযুক্তির – কে কত টাকা ঢালতে পারে, কার প্রযুক্তি কতটুকু ভোক্তা টানতে পারে। গুগলের যদি একটি মেধাবী দল ও খাটানোর জন্য অফুরন্ত পুঁজি থেকে থাকে তাহলে বাইদুর পেছনে বসে থাকা China Inc. এরও সেগুলো আছে, বা সেটা তারা যোগাড় করতে চায়।
পার্থক্য একটাই, চীন প্রতিশোধ নেয়।
সুবিনয় মুস্তফী - ১৬ জানুয়ারি ২০১০ (১:৩১ অপরাহ্ণ)
মন্তব্যকারীদের সবাইকে ধন্যবাদ। রাগিব হাসান-কে বিশেষ ধন্যবাদ তার ইনসাইড নলেজ আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্যে। @অলৌকিক, সব লেখাই বন্ধ ছিল বেশ কিছুদিন, আস্তে আস্তে আবার আশা করি ফ্লো আসবে! @amoun, বাইদু’র বিশ্বজয় বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। সময়ই বলে দেবে।
রাগিব হাসান - ১৬ জানুয়ারি ২০১০ (২:০৮ অপরাহ্ণ)
এখানে দ্বিমত পোষণ করছি। গুগলের মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন বর্তমানে ১৮৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেই তুলনায় বাইদুর মাত্র ১৬ বিলিয়ন। বাইদু আমেরিকাতে এসে এখানকার তরুণ ইঞ্জিনিয়ারদের হাতিয়ে ফেলবে, এটা বিশ্বাস করা খুব কঠিন। আর চীনা তরুণ কম্পিউটার প্রকৌশলীদেরও গুগলের চাকুরি বনাম বাইদুর চাকুরি বেছে নিতে হলে গুগলই জিতবে। (এর পেছনের একটা বড় কারণ আসলে শিশু!! চীনের এক সন্তান নীতি এড়াতে অনেক চীনাই বিদেশে থাকতে চায়, অন্তত আমার চীনা এক সহকর্মীর কাছে এটাই শুনেছি!!)
আর don’t be evil এই কথা কেউ ভাবে না, তা ভাবলে ভুল করবেন। আপনি কখনো এমন কোনো সার্ভিস ব্যবহার করবেন, যা পয়সা দিয়ে কিংবা হুমকি দিয়ে বা সরকারী চাপের কারণে প্রভাবিত হয়? ধরুন সার্চ করতে গেলেন, অনেক কিছু চেপে গেলো সার্ভিসটি, কারণ সরকার সেটা পছন্দ করে না। অথবা আপনার যাবতীয় গোপন তথ্য/ফাইল একটা সার্ভিসে রেখেছিলেন, দুদিন পরে দেখলেন সেটা দিব্যি তারা সরকারকে দিয়ে দিয়েছে গোপনে (যা ইয়াহু ও মাইক্রোসফট করেছিলো), সেই সার্ভিস কি আপনি ব্যবহার করবেন? হাস্যকর মনে হলেও evil না হবার পেছনে অর্থনৈতিক যুক্তিটা অনেক বেশি শক্তিশালী। গুগল evil না হয়ে আর্থিকভাবে অনেক বেশি লাভবান হচ্ছে এবং হবে।
নীড় সন্ধানী - ১৭ জানুয়ারি ২০১০ (২:১৮ অপরাহ্ণ)
এই বিষয় নিয়ে আজকের নিউইয়র্ক টাইমসের একটা খবরের খানিকটা তুলে দিচ্ছি। এখানে চীনের সাধারন মানুষের মনোভাব সম্পর্কে ধারনা দেয়া হয়েছেঃ
At the elite Tsinghua University here, some students were joking Friday that they had better download all the Internet information they wanted now in case Google left the country.
But to many of the young, well-educated Chinese who are Google’s loyal users here, the company’s threat to leave is in fact no laughing matter. Interviews in Beijing’s downtown and university district indicated that many viewed the possible loss of Google’s maps, translation service, sketching software, access to scholarly papers and search function with real distress.
“How am I going to live without Google?” asked Wang Yuanyuan, a 29-year-old businessman, as he left a convenience store in Beijing’s business district.
China’s Communist leaders have long tried to balance their desire for a thriving Internet and the economic growth it promotes with their demands for political control. The alarm over Google among Beijing’s younger, better-educated and more Internet savvy citizens — China’s future elite — shows how wobbly that balancing act can be.
By publicly challenging China’s censorship, Google has stirred up the debate over the government’s claim that constraints on free speech are crucial to political stability and the prosperity that has accompanied it. Even if it is unlikely to pose any immediate threat to the Communist Party, Google’s move has clearly discomfited the government, Chinese analysts say.
“The average age of Chinese netizens is still very young,” said Hu Yong, a journalism professor at Peking University. “This is a matter of the future and whether the government’s Internet policy wants to fight with the future.
“If this process goes on, more and more people are going to realize that their freedom of information is being infringed upon, and this could bring changes down the line.”
বাইদু ও গুগলের তুলনাটা সংখ্যার বিচারে করাটা কতট অযৌক্তিক তা নীচের বর্ননায় পরিষ্কার-
Google may rank a distant second to the Baidu search engine, but its estimated 80 million users are comparatively better educated and wealthier. Surveys show that roughly two-thirds are college educated. A Beijing technology consultant, Kaiser Kuo, describes them as “a potentially very noisy constituency.”
পুরো খবরটা দেখার জন্য ক্লিক করুন-
http://www.nytimes.com/2010/01/17/world/asia/17china.html
ফারুক ওয়াসিফ - ১৮ জানুয়ারি ২০১০ (১:২৭ অপরাহ্ণ)
সেন্সরশিপের আড়ালে চীন ও গুগলের অর্থনৈতিক স্বার্থের দ্বন্দ্বটি এখানে কিছুটা আলোচিত হয়েছে। আশা করি কাজে লাগবে।
Gathering Clouds
http://www.tnr.com/article/politics/gathering-clouds
রায়হান রশিদ - ১৯ জানুয়ারি ২০১০ (৯:৩৮ পূর্বাহ্ণ)
প্রিয় সুবিনয় মুস্তফী,
অনেক দিন পর আপনার লেখা পড়লাম। বরাবরকার মতো অনেক কিছু জানা হল। রাগিব এবং মুনিমের আলোচনা, এবং ফারুক ওয়াসিফের দেয়া নিকোলাস কার এর লিন্ক থেকেও ভেতরকার অনেক বিষয় এবং বহুমূখী স্রোতগুলোর ব্যাপারে জানা গেল। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।
অফ টপিক:
দুঃখিত অন্য একটি বিষয়ও মনে পড়লো; পরে মনে না থাকতে পারে সে কারণে এখানেই উল্লেখ করে রাখি। প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং জলবায়ুর ওপর “গুগল অনুসন্ধান” এর প্রতিক্রিয়া নিয়ে একটা ইন্টারেস্টিং খবর চোখে পড়েছে সম্প্রতি। অনেকে মনে করেন গুগুল সার্চের carbon footprint একেবারে ফেলনা কিছু নয়, যেহেতু কোটি কোটি মানুষ এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। হার্ভার্ডের এক পদার্থবিদের গবেষণা উপাত্তের ভিত্তিতে দেয়া খবরটি থেকে উদ্ধৃত করছি:
প্রত্যুত্তরে ব্লগপোস্টে গুগল এর প্রতিবাদ করেছে এবং যুক্তি খন্ডনের পাশাপাশি নিজেরাও নতুন কিছু যুক্তি উপস্থাপন করেছে। গুগলের ব্লগপোস্টটি এখানে।
মোহাম্মদ মুনিম - ২০ জানুয়ারি ২০১০ (৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ)
আমার মনে হয় গুগলের যুক্তিগুলো ফেলনা নয়, IT এর কল্যাণে ইউরোপ আমেরিকাতে বিপুল সংখ্যক লোক বাড়িতে বসে অফিসের কাজ করছেন, তাঁদের অফিসে যাতায়াতের কারণে যে পরিবেশ দুষন হতো, সেটা হচ্ছে না। সাম্প্রতিক কালে ব্রিটেন কাগজের চেক ধীরে ধীরে তুলে নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে (ইলেক্ট্রনিক চেকের জনপ্রিয়তার কারণে), এখন প্রতিদিন ব্রিটেনে দৈনিক প্রায় ১০ মিলিয়ন চেক লেখা হয়, কাগজের চেক উঠে গেলে বিপুল পরিমাণ গাছের সাশ্রয় হবে। আমাদের অফিসে গত দুবছর ধরে ক্লায়েন্টদের রিপোর্ট হার্ডকপি আকারে পাঠানোর বদলে ডিজিটাল কপি পাঠানো হচ্ছে, শুধু আমাদের দশ জনের অফিসে এটা করে প্রায় পাঁচশ রিম কাগজের সাশ্রয় হয়েছে, রিপোর্টের হার্ডকপি বিলি করার (পোস্ট অফিস, কুরিয়ার সার্ভিস ইত্যাদি) যে ব্যাপক কার্বন ফুটপ্রিন্ট আছে, সেটার কথা তো বাদই দিলাম। এমন অসংখ্য উদাহরন দেয়া যায়। সুতরাং IT এর নিজস্ব কার্বন ফুটপ্রিন্ট থাকলেও এর কল্যাণেই অন্যান্য সেক্টরের কার্বন ফুটপ্রিন্ট আরও অনেক কমেছে।
রায়হান রশিদ - ২০ জানুয়ারি ২০১০ (১:২৬ অপরাহ্ণ)
খুবই সত্যি। সেই সাথে আরেকটা সম্ভাবনার কথাও ভাবা যেতে পারে। হার্ভার্ড এর পদার্থবিদের গবেষণায় প্রাপ্ত বলেই কোনো উপাত্ত চ্যালেঞ্জের উর্দ্ধে নয়। ঠিক হার্ভার্ড এর এই নির্দিষ্ট গবেষণাটি প্রসঙ্গে একথা বলছি না, কারণ, জোর দিয়ে কিছু বলবার মতো কোন তথ্য কিংবা একে যাচাই করার মতো বিশেষজ্ঞ জ্ঞান কোনোটাই নেই। তবে সাধারণভাবে যে কোন গবেষণার ক্ষেত্রেই এই চ্যালেঞ্জ এর সুযোগ রয়েছে বলে মনে করি। অন্তত পক্ষে যে কোন ধরণের তথ্য উপাত্তকে চ্যালেঞ্জ করার মতো নির্মোহ মানসিকতা পোষণ জরুরী মনে করি।
কারণ, আজকালকার বৈজ্ঞানিক গবেষণা, বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছায়ায় যে সব গবেষণা হয়ে থাকে সেখানে সরকারী আর্থিক সহায়তার বাইরেও বেসরকারী/কর্পোরেট অর্থায়ন হয়ে থাকে বেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণেই। এর প্রয়োজনীয়তা বা প্রেক্ষাপট যেমন রয়েছে, তেমনি এর ভাল এবং মন্দ দিকও রয়েছে। কর্পোরেট পৃষ্ঠপোষকতায় গবেষণাগুলোর বেশীর ভাগেরই সাধারণত অর্থায়ন হয়ে থাকে প্রতিযোগী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বা সিন্ডিকেটগুলোর পক্ষ থেকে। এ সব ক্ষেত্রে কোন্ প্রতিষ্ঠান ঠিক কোন্ তত্ত্ব বা প্রযুক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা করে (কিংবা বিরোধিতা করে) সেটা একটা প্রভাবক হয়ে দাঁড়ালে অবাক হওয়ার কিছু নেই। সার্বিকভাবে এতে বৈজ্ঞানিক গবেষণার স্বাধীনতা ব্যাহত হওয়ার একটা সম্ভাবনা তো সবসময়ই থাকে, শত রকমের পদ্ধতিশাস্ত্রের safeguard থাকার পরও। সম্ভাবনার এই দিকটা নিয়ে মূলধারায় খুব একটা আলোচনা চোখে পড়েনি।
মোহাম্মদ মুনিম - ২০ জানুয়ারি ২০১০ (১০:৫১ অপরাহ্ণ)
আমার মাস্টার্সের শুরুতে আমি একটি গবেষণা প্রকল্পে যুক্ত ছিলাম, হিউস্টনের এক শিল্পপতি তাঁর কারখানায় উৎপাদিত একটি কেমিকেল (রাস্তা নির্মাণে ব্যবহারের জন্য) পরীক্ষা করার জন্য সেই গবেষণা প্রকল্পে টাকা দেন। প্রাথমিক পরীক্ষায় দেখা গেলো তাঁর কেমিকেল ভাল ফল দিচ্ছে না। তিনি টাকা দেয়া বন্ধ করে দিলেন এবং গবেষণা প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেল। তিনি সম্ভবত তাঁর টাকা অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে দিয়েছেন যারা তাদের গবেষণায় ভাল ফল দিতে পারবে। সেই গবেষণার ফলাফল দেখিয়ে তিনি তাঁর কেমিকেলটি বাজারজাত করতে পারবেন। পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের রুটি রুজি এই গবেষণার টাকার উপরেই নির্ভর করে। আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে জনা দুয়েক সেক্রেটারি রেখে মহা শান শওকতের অধ্যাপকও দেখেছি, আমার স্বল্প বেতনের অধ্যাপকও দেখেছি, পার্থক্য একটাই, একজন বছরে দশ মিলিয়ন ডলারের গবেষণা প্রকল্পের ব্যবস্থা করতে পারেন, আবার কেউ বছরে শখানেক প্রোপোসাল পাঠিয়েও কোন গবেষণা প্রকল্পের ব্যবস্থা করতে পারেন না। এখানে সরকারি টাকাতে গবেষণার ব্যবস্থা করা হয় বটে, যেখানে ভাল ফলাফলের চাপ থাকে না, কিন্তু কর্পোরেট টাকাতে যে সমস্ত প্রকল্প চলে, তাতে বিজ্ঞানচর্চার চেয়ে ব্যবসার দিকটাই বেশী থাকে।
কার্বন ফুটপ্রিন্ট নিয়ে আজকাল যে ব্যাপক আলাপ আলোচনা হচ্ছে, এর অন্তরালে বিরাট একটা ব্যবসার ব্যাপার আছে। আমেরিকাতে আজকাল কার্বন ফুটপ্রিন্টের ভয় দেখিয়ে বায়ু শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন হচ্ছে। এই বায়ুশক্তির বিদ্যুতের মুল্য কনভেনশনাল (প্রধানত প্রাকৃতিক গ্যাস) বিদ্যুতের প্রায় দ্বিগুণ। তার মানে বায়ুশক্তিতে যারা বিনিয়োগ করছেন, তাঁরা যত দ্রুত সম্ভব তাঁদের বিনিয়োগের টাকা তুলে আনতে চাইছেন। American Natural Gas Committee যে হিসাব দিয়েছেন, তাতে আমেরিকাতে ১০০ বছরের গ্যাসের রিজার্ভ আছে। আর গ্যাসের বিদ্যুতের কার্বন ফুটপ্রিন্টও তেমন বড় নয়। কিন্তু এরই মধ্যে গ্যাসের বিদ্যুতে বাড়তি ট্যাক্স আর বায়ু বিদ্যুত ব্যবহার করলে tax break এই জাতীয় লবিয়িং শুরু হয়ে গেছে। কার্বন ফুটপ্রিন্ট একটি গুরুতর বিষয় সন্দেহ নেই, কিন্তু এই অজুহাতে ব্যাবসা হাতানোর যে ব্যাপক তাড়জোড় শুরু হয়েছে, সেটাও অগ্রাহ্য করার বিষয় নয়।
মাসুদ করিম - ২১ জানুয়ারি ২০১০ (৯:১৩ অপরাহ্ণ)
ইন্টারনেট সংক্রান্ত ব্যাপার স্যাপার এতোই কম বুঝি যে একেবারে প্রথম দিনেই লেখাটা পড়ার পরও কোনো মন্তব্য করিনি। আজকে যা করতে যাচ্ছি তা ঠিক মন্তব্য নয়, বরং জানতে চাই আর কোন কোন দেশ ইন্টারনেটের ওপর নজরদারি করে? আমেরিকা, ইসরাইল, রাশিয়া, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, জাপান, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো, ভারত, সিঙ্গাপুর… এরা কি ইন্টারনেটে নজরদারি করে না? শুধু চীন শয়তান, আর সবাই সাধু! মনে হয় না!
আমার মনে হয় ব্যাপারটি একেবারেই ব্যবসায়িক, নীতিগত কিছু নয় — যদিও আমি এ বিষয়ে অজ্ঞ — তারপরও গুগল নীতির জন্য যুদ্ধে অবতীর্ণ, এ আমার বিশ্বাস হয় না।
সুবিনয় মুস্তফী - ২১ জানুয়ারি ২০১০ (১০:৫৮ অপরাহ্ণ)
“শুধু চীন শয়তান, আর সবাই সাধু!”
এমন কথা কোথাও লিখেছি বলে মনে পড়ে না। অন্য দেশগুলো কি করছে বা করছে না, সেই কারনে যে চীনের নেট-দমন নীতি নিয়ে লেখা যাবে না, এই মত আমি পোষণ করি না। তবে যদি উপরে কোন তথ্য প্রদানে আমার ভূল থাকে, সেটা ফিরিয়ে নিতে অবশ্যই রাজি আছি। যার যেই বিষয়ে আগ্রহ, সে সেই বিষয় নিয়েই লিখবে। আর এর সম্পূর্ণ বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে লেখার স্বাধীনতাও সকলের আছে। অসংখ্য ধন্যবাদ।
মাসুদ করিম - ৮ ডিসেম্বর ২০১১ (১:১০ অপরাহ্ণ)
@ সুবিনয় মুস্তফী
একথাটি এজন্য বলিনি যে শুধু চীন নিয়ে কেন লিখেছেন। একথা এজন্য বলেছিলাম যে অন্যরাও এসব করছে।
এই যে সম্প্রতি ভারত যা করল, ফেসবুক-গুগল থেকে আপত্তিকর সব পোস্ট ও ছবি তুলে নিতে বলল। এনিয়ে সলিল ত্রিপাঠির প্রতিক্রিয়া
বিস্তারিত পড়ুন : Chandni Chowk to China।
তানবীরা - ২২ জানুয়ারি ২০১০ (৪:৪৯ পূর্বাহ্ণ)
অত্যন্ত সুখ পাঠ্য লেখা।
এব্যপারে একটা মজার ঘটনা না লিখে পারছি না, ঘরে কিছু খুঁজতে হলেই আমার সাত বছর বয়সী মেয়ে বলে ওঠে, কোথায় খুঁজবে, গুগলে?
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
সুবর্ণা সেঁজুতি - ২৭ জানুয়ারি ২০১০ (৯:৪৭ পূর্বাহ্ণ)
সুবিনয় বহুদিন পরে আপনার লেখা পড়লাম। অন্য একজনের দেওয়া লিঙ্ক দিয়ে। গুগলের ব্যাপারটা তিব্বতী বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের আক্রমণের পরবর্তী পর্যায়েই জেনেছিলাম। তখন অস্ট্রেলিয়ার মিডিয়ায় এ নিয়ে অনেক হৈ চৈ হলেও চীনকে কোনোরকম সতর্কতামূলক প্রস্তাব পাঠানো হয়নি, কিস্যু না! আফটার অল, সবচেয়ে বড় আর সবচেয়ে সস্তায় প্রোডাকশান হাউস আর কোথায় পাওয়া যাবে বলুন।
শিশির মীর - ১৯ আগস্ট ২০১৭ (১০:০৪ অপরাহ্ণ)
শুনুন।।
গুগল ভীষণ শক্তিশালী এটা ঠিক কিন্তু???
গুগল কি চিন্তা করে তৈরি করা হয়েছে জানেন??গুগল তৈরি করা হয়েছে সারা বিশ্বকে চিন্তা করে।
আর
বাইদু তৈরি করা হয়েছে চীনাদের জন্য।চীনাদের চাহিদা অনুযায়ী বাইদু ডেভেলপ করা।।
বাইদু ইচ্ছে করলে গুগলের থেকে এগিয়ে যেতে পারে কিন্তু তাহলে বাইদুকে আবার সবকিছু ডেভেলপ করতে হবে এবং সারা পৃথিবীর চাহিদা অনুযায়ী।।
লোকে গুগল না ব্যবহার করে বাইদুই ব্যবহার করত!!
কিন্তু বাইদুর ভাষা কিভাবে বুঝবে???
বাইদু তো চীনা ভাষায় লেখা।এমনকি ইংরেজি ভাষায়ও উপলব্ধ নয়!!
তাই বাইদু আর গুগলের তুলনা না করাই ভালো।কারন গুগলে যে ফীচাট গুলো আছে বাইদুতেও তা আছে।।
আর বাইদু শক্তিশালী ও বটে!!
jakirhassan5478 - ২৫ জুন ২০১৯ (১০:৫১ পূর্বাহ্ণ)
Yes you are right say