ইসলামের নামে নারী-নির্যাতনের অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তাতে ফতোয়া দেয়া ও ফতোয়া প্রয়োগ ইসলাম-সম্মত কিনা এসব প্রশ্ন জাতির পক্ষে আর এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয় [....]

গত ২৫শে মে দৈনিক ইত্তেফাক মোতাবেক ফতোয়া ও শারিয়ার নামে বিচার-বহির্ভুত শাস্তি প্রদানকে কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, এবং বিচার বহির্ভুত শাস্তি নিরুৎসাহিত করতে বিভিন্ন পর্যায়ের পাঠ্যসুচিতে এ সংক্রান্ত প্রবন্ধ অন্তর্ভুক্তির কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে সরকারের প্রতি রুল জারী করেছে হাইকোর্ট। ২০০০ সালে হিলা বিয়ের বিরুদ্ধেও একটা রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি জনাব গোলাম রাব্বানী ও নাজমুন আরা। আপীলের কারণে রায়টা এখনো সুপ্রীম কোর্টে ঝুলে আছে। ইসলামের নামে নারী-নির্যাতনের অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তাতে ফতোয়া দেয়া ও ফতোয়া প্রয়োগ ইসলাম-সম্মত কিনা এসব প্রশ্ন জাতির পক্ষে আর এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। অনিয়ন্ত্রিত ফতোয়ায় নারী নির্যাতন অন্য কিছু ধর্মের নামেও হয় ও হয়েছে। এর সমাধানে আমাদের সামাজিক ও মানবিক সচেতনতা এবং আইনী পদক্ষেপ এখনো কার্য্যকর হয়নি কারণ এ বর্বরতা কেন ধর্মবিরোধী তা এখনো জনগণকে বোঝানোর কার্য্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বোঝানো হয়নি বাংলদেশে যেভাবে ফতোয়া এবং শারিয়া আইন প্রয়োগ করা হয় তা কেন শুধু মানবতা ও রাষ্ট্রীয় সংগঠনের বিরোধীই নয় বরং ইসলামেরও বিরোধী এমনকি শারিয়া-বিরোধীও। গণসচেতনতার তোয়াক্কা না করে শুধুমাত্র ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের শক্তিতে নুতন মুসলিম দেশ গড়েছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ নেতারা, পাকিস্তানের জিন্নাহ, ইরাণের ডঃ মোসাদ্দেক, মিসরের নাসের, ইন্দোনেশিয়ার সুকর্ণো, তুর্কি’র কামাল পাশা। আজ ঐ প্রতিটি দেশ ফতোয়ার কবলে নিপেষিত হচ্ছে। অথচ তাতারস্তানের মত ছোট্ট দেশ প্রধানতঃ গণসচেতনতার জোরেই ফতোয়ার আগ্রাসন সফলভাবে ঠেকিয়ে রেখেছে। ওরা যেভাবে পেরেছে আমরাও সেভাবে এই অভিশাপ দুর করতে পারি। এটা ইতিহাসের শিক্ষা। ফতোয়ার যে সংজ্ঞা ইমাম শাফি দিয়ে গেছেন তাতে সবাই একমত,- ‘‘ফতোয়া হইল ইসলামী আইনের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞের অভিমত। শুধুমাত্র কোন বৈধ কর্তৃপক্ষই ইহা দিতে পারেন। কিন্তু যেহেতু ইসলামে (স্রষ্টা ও সৃষ্টির’র মধ্যে - লেখক) কোন মধ্যব্যক্তি নাই কাজেই ফতোয়া জনগণের উপর বাধ্যতামূলক নহে’’ - ইমাম শাফি’র শারিয়া কেতাব উমদাত আল্‌ সালিক (অনুবাদক নুহ হা মিম কেলার), বইটাকে মিসরের আল্‌ আজহার বিশ্ববিদ্যালয় ষ্ট্যাম্প দিয়ে সত্যায়িত করেছে, পৃষ্ঠা ১১৮৪। ফতোয়ার এই সংজ্ঞা সর্বজনগ্রাহ্য ও প্রতিষ্ঠিত। এ জন্যই কুয়েত-এর মত মুসলিম দেশের সংবিধান-আদালত (কনষ্টিটিউশনাল কোর্ট) গত ২৮ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে রায় দিয়েছে এই বলেঃ- ‘‘ইসলামি শারিয়ার আইনগুলি জনগণের উপর রাষ্ট্রের মূল আইনের মত বাধ্যতামূলক নহে’’। মামলাটা কুয়েত-এর…

সম্ভবত বছর দুয়েক আগের ঘটনা। মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ থেকে বেরিয়ে রিকশায় মিরপুর ১-এর দিকে যাচ্ছি। হযরত শাহ আলী মাজারের কাছাকাছি আসতেই রিকশার গতি মন্থর হলো। [...]

১ সম্ভবত বছর দুয়েক আগের ঘটনা। মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ থেকে বেরিয়ে রিকশায় মিরপুর ১-এর দিকে যাচ্ছি। হযরত শাহ আলী মাজারের কাছাকাছি আসতেই রিকশার গতি মন্থর হলো। সামনে মোটামুটি হৃষ্টপুষ্ট একটা মৌন মিছিলের মতো। ধীর গতিতে, সম্ভবত মাজারের দিকেই যাচ্ছে। কোনো অকেশন-টকেশন আছে কিনা জানি না। পাশ কেটে ওভারটেক করতে গিয়ে লক্ষ করলাম, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রায় সবার হাতেই কোনো না কোনো খাবারের পোটলা বা ভাণ্ড। ফল-পসারি পানির বোতলও আছে অনেকের হাতে। মিছিলের অগ্রভাগে বেশ ময়লা-অপরিষ্কার জীর্ণ-শীর্ণ আলখাল্লা পরিহিত একজন বেটেখাটো শ্মশ্রু-গুম্ফধারী দরবেশ টাইপের বৃদ্ধলোক আপন মনে দুলে দুলে হাঁটছেন মাথাটাকে সামনে ঝুলিয়ে দিয়ে। সামনের দিকে দু-একজনকে আবার অনেকটা শৃঙ্খলারক্ষার ভঙ্গিতে তৎপর দেখা গেলো। উনি কে? জিজ্ঞেস করতেই রিকশাচালক বললো, 'হায়দার বাবা, বড় কামেল ফকির!' এসব ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাসে যথেষ্ট ঘাটতি থাকলেও মানব-মনস্তত্ত্বে কৌতূহলের কোনো কমতি নেই। কিন্তু ঘটনাটা আমার কাছে আকস্মিক ও নতুন হলেও এলাকাবাসীর কাছে খুবই সাধারণ একটা বিষয় বলেই মনে হলো। ছবি নেয়া হলো না বলে আফসোস হলো। যাক, এদিনের মতো কৌতূহলটা ঝুলে রইলো। বছর খানেক পরে একদিন। মোবাইল ক্যামে সংরক্ষিত তারিখে ১৭-০৬-২০০৯। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে প্রায়। অফিস-ফেরতা মানুষের ভিড়ে আশপাশ সরব। মিরপুর পোস্টাফিসটার সামনে ফুটপাথ ঘেঁষে হঠাৎ মিছিলটা নজরে এলো। ফকির হায়দার বাবা! দুই-মেগাপিক্সেলটা যে আসলেই রাতকানা, টের পেলাম ছবিটা কম্প্যুটারে আপলোড করেই (শীর্ষ ছবি) -- কিছু ভৌতিক ছায়ার মতো মনে হচ্ছে মানুষগুলোকে। এরপর আরেকটা বছর প্রায় ঘুরে এলো। ২৫ মার্চ ২০১০ বিষ্যুদবার। বেলা প্রায় সাড়ে এগারোটা হবে। মিরপুর পোস্টাফিসেরই ফাঁকা চত্বরটাতে অনেক মানুষের জটলা দেখে কৌতূহল হলো। বিশ্রামরত ছোটখাটো একটা কাফেলা যেনো। কৌতূহলী মানুষের ঘাড়ের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিলাম। আপাতদৃষ্টিতে খুব নোংরা মলিন পোশাকে উস্কুখুস্কু দাঁড়ি-গোঁফধারী ছোটখাটো আকৃতির বৃদ্ধ লোকটি কাত হয়ে মাটিতে শুয়ে আছেন দেয়াল ঘেঁষে। শরীরের উন্মুক্ত অংশে হাতে পায়ে সাফ না করা বহুদিনের ময়লার পুরু স্তর কালো হয়ে বসে আছে তা স্বাভাবিক চোখেই ধরা পড়ে। আর বেশ কিছুসংখ্যক নারী-পুরুষ হরেক রকম খাবারের রসদ নিয়ে তাঁকে ঘিরে আছে। চৈতের দাবদাহে কেউ কেউ হাতপাখায় বাতাস করছে তাঁকে। চিনতে কষ্ট হলো না -- ফকির হায়দার বাবা। আশে পাশে আরো কিছু নারী-পুরুষের জটলা। বোঝা গেলো, এরা সবাই…

আজ অনেকটা ধুমধামেই আমাদের রাষ্ট্র তার রাষ্ট্রপালিত বান্দাদের সহযোগে পহেলা বৈশাখ পালন করাতে পারল। আমরাও অনেকটা গৃহপালিত বান্দার মতোই তা স্মরণীয় বরণীয়ও করলাম। তাতে নাগরিক মধ্যবিত্তের তেমন সমস্যা হয়েছে বলে দৃশ্যত মনে হয় নি। তবে ঘটনার আড়ালেও ঘটনা থাকে, কষ্টের আড়ালেও কষ্ট থাকে।

আজ অনেকটা ধুমধামেই আমাদের রাষ্ট্র তার রাষ্ট্রপালিত বান্দাদের সহযোগে পহেলা বৈশাখ পালন করাতে পারল। আমরাও অনেকটা গৃহপালিত বান্দার মতোই তা স্মরণীয় বরণীয়ও করলাম। তাতে নাগরিক মধ্যবিত্তের তেমন সমস্যা হয়েছে বলে দৃশ্যত মনে হয় নি। তবে ঘটনার আড়ালেও ঘটনা থাকে, কষ্টের আড়ালেও কষ্ট থাকে। নাগরিক শিক্ষিত মধ্যবিত্ত, প্রিন্টিং ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া হুলস্থূল সহকারে বাংলা নববর্ষ পালন করলেও সনাতন হিন্দু সমাজ আজ পালন করেছে চৈত্র সংক্রান্তি। আমাদের পাশের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গেই আগামীকাল পহেলা বৈশাখ পালন করা হবে। এরই মধ্যে দুই-একটা অদ্ভুত ঘটনার মুখোমুখি হলাম আমি। আমার অতি পরিচিত একজন সরকারি কর্মজীবী আমায় জানাচ্ছেন, একটা ব্যাপার খেয়াল করেছেন... এই বলেই লোকটা আমার দিকে এভাবে তাকালেন যেন আমার দায়িত্ব হচ্ছে এইটুকুতেই সবটুকু বুঝে নেয়া। আমার না-বুঝাকে তাচ্ছিল্যের ভিতর ফেলে তিনি বলছেন, এই দেশের হিন্দুরা তো সরকারের আইন মানে না! আমার অতি আশ্চর্য অবয়বকে পুঁজি করে আমায় জানাচ্ছেন, সরকারের ঘোষণা আছে বুধবার ১৪ই এপ্রিল পয়লা বৈশাখ, কিন্তু এরা ভিতরে ভিতরে বিষুদবার দিন পহেলা বৈশাখ করবে, পূজা-উজা করবে আর-কি। আমি বুঝাতে চাইলাম, এরা তো পঞ্জিকা মেনে তাদের ধর্মমতে...; _আরে রাখেন আপনার পঞ্জিকা, এইসব সরকারের সাথে গাদ্দারি, এরা ইন্ডিয়ার বুদ্ধিতে নাচে, আপনারা এইসব বুঝবেন না। আমি তাকে কিছুতেই বুঝাতে পারলাম না। আমি বাধ্য হয়ে একজন সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোককে তাদের এই ধরনের অবাধ্যতা বিষয়ে তাদের মতামতটা জানতে চাইলাম। তার কথা বেশ সরল-মীমাংসামুখি। তার বাপ-দাদারা গ্রামের নিয়মে যেভাবে চৈত্র-সংক্রান্তি বা পয়লা বৈশাখ যেভাবে পালন করেছেন, এরাও তা-ই করছেন। তারা তো মুরুব্বিগণের সাথে বেয়াদবি করতে পারেন না। আসলে মহাত্মা (!) এরশাদ অনেকভাবে জাতিকে লণ্ডভণ্ড করার মানসে অনেককিছুর মতো এই কাজটিও করে গেছেন। অর্থাৎ রাষ্ট্র কর্তৃক মুসলিম আধিপত্যকে একচেটিয়া করার মানসেই এ কাজটি করা হয়েছে। ভৌগোলিক জাতীয়তাবাদীরা (এই যুগল দৃশ্যত, কার্যত, প্রবহমানত অনেকটাই একই নবীর উম্মত।) না হয় একই ধারায় তা বহাল রেখেছিল, এখন ভাষাপন্থি জাতীয়তাবাদীরাও একই কাজ কেন করছেন? কারণ এখন যেভাবে পহেলা বৈশাখ পালন করা হচ্ছে, এতে সনাতন হিন্দু সমাজকে শুধু নয়, লোকজ সমাজকেও বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে। মুক্তচিন্তার কথিত সওদাগরগণও দেখছি এ ব্যাপারে অনেকটাই চুপচাপ আছেন!

আমরাও শিবির উচ্ছেদ চাই কিন্তু প্রতিপক্ষের সাময়িক পরাজয়ে উল্লাসের মতো কৈশোর-অ্যাডভেঞ্চারিজম্ এটা নয়, এটা হল একটা ধর্মভীরু জাতির ধীর ও বহুমাত্রিক ধর্মীয়-সামাজিক বিবর্তন। গ্রেপ্তারকৃত প্রায় সবাই ছাড়া পাবেই এবং শিগগীরই ছাড়া পাবে। এ সরকারও চিরদিন থাকবে না। তাহলে লাভ কি হল? এ সংঘর্ষের দুটো দিক খেয়াল করা দরকার [...]

সংক্ষেপে, ঘটনাগুলো এভাবে ঘটেছে। গত বছর ১৩ই মার্চ ছাত্রলীগ-শিবিরের সংঘর্ষে খুন হয় রাবি-শিবিরের জি-এস শরীফুজ্জামান নোমানী। তখন রাবি’র বিজ্ঞান অনুষদের ডীন ও জামাত নেতা অধ্যাপক আবুল হাশেম কয়েকশ’ শিবির-সদস্যকে প্রতিজ্ঞা করিয়েছিলেন ‘‘লাশের বদলে লাশ’’(‘‘অধ্যাপক’’ বটে!)। এরই জের ধরে ৮ই ফেব্রুয়ারী ২০১০-এ ভয়াবহ তাণ্ডবে শিবিরের দল খুন করেছে লীগকর্মী ফারুক হোসেনকে আর হাত-পায়ের রগ কেটে দিয়েছে আরো চারজনের। এবং এরই জের ধরে দেশজুড়ে শিবিরের মিছিল-মিটিং অফিস ও বাড়ীঘরের ওপরে সরকারের নির্দেশে ঝাঁপিয়ে পড়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তার অসংখ্য, আরো খুন, দেশে বয়ে যাচ্ছে সংঘাতের ঝড়। রাজশাহী-শিবিরের একাংশ ‘‘সেভ শিবির’’ নামে জামাতের আমীর নিজামীর কাছে দাবী করেছে, কেন্দ্রীয় নেতা প্রাক্তন মন্ত্রী মুজাহিদী ও রাবি’র প্রাক্তন শিবির সভাপতিত্রয় রফিকুল, বুলবুল ও রেজাউলই রাবি’র খুনের জন্য দায়ী। তারা সরকারের কাছেও দাবী করেছে সাধারণ শিবির-সদস্যদের ওপর অত্যাচার না করে ওই চারজনের মোবাইল জব্দ করে তদন্ত করতে। আমরাও শিবির উচ্ছেদ চাই কিন্তু প্রতিপক্ষের সাময়িক পরাজয়ে উল্লাসের মতো কৈশোর-অ্যাডভেঞ্চারিজম্ এটা নয়, এটা হল একটা ধর্মভীরু জাতির ধীর ও বহুমাত্রিক ধর্মীয়-সামাজিক বিবর্তন। গ্রেপ্তারকৃত প্রায় সবাই ছাড়া পাবেই এবং শিগগীরই ছাড়া পাবে। এ সরকারও চিরদিন থাকবে না। তাহলে লাভ কি হল? এ সংঘর্ষের দুটো দিক খেয়াল করা দরকার। প্রথমতঃ, দেশে হরহামেশা খুন হয়, ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের হাতেও হয়নি এমন নয় কিন্তু শিবিরের খুনের সাথে সেসবের আকাশ-পাতাল পার্থক্য আছে। সন্ত্রাসী ছাত্রদল-ছাত্রলীগেরা মনে মনে ঠিকই জানে ওরা ক্রাইম করছে, পুলিশী বা আইনি শক্তিতে সেটা পরাস্ত করা সম্ভব। কিন্তু শিবিরের ড্রাইভিং ফোর্স হল ধর্মবিশ্বাস - ওদের উদ্দেশ্যসাধনের পথে যে কোনো বাধাকে যে কোনভাবে অপসারিত করা ওদের ইবাদত। তাই ওদের সন্ত্রাসকে ওরা ক্রাইম বলে মনেই করে না। এই ভয়ংকর মানসিকতাকে শুধুমাত্র দৈহিক শক্তিপ্রয়োগে উচ্ছেদ করা যায় না। দ্বিতিয়তঃ, যতদিন জামাত থাকবে ততদিন শিবির থাকবে এবং জামাত থাকবে ততদিন, যতদিন ইসলামের শান্িতময় ব্যাখ্যা দিয়ে মওদুদিবাদকে পরাজিত না যায়। জামাতের অপতত্ত্বের বিরুদ্ধে আইন ও পুলিশী শক্তিপ্রয়োগ দরকার হতে পারে কিন্তু তার আগে যদি ওদের অধর্মতত্ত্বকে পরাজিত না করা হয় তাহলে ওরা সাময়িক পরাজিত হলেও বারবার ফিরে আসবে। শিবিরেরা বয়সে তরুণ। ওদের বিশ্বাস ওরা সেবা করছে ইসলামের, দেশ ও জাতির। কিন্তু ওরা জানেনা ওদের পথে চলে অন্যান্য জাতির…

আদালতের রায়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হচ্ছে হচ্ছে ভাব, এটা হলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি আবার নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। প্রত্যাশিতভাবেই জামাত হৈ-হুংকার শুরু করেছে, ছোটবড় কিছু দলকে সাথে নিয়ে এখানে ওখানে ও লন্ডনে বিদ্রোহী সমাবেশ করছে, উত্তেজক শ্লোগান দিচ্ছে। বানানো হয়েছে ‘‘ইসলাম ও ধর্মীয় রাজনীতি রক্ষা জাতীয় কমিটি’’, বক্তারা ‘‘কাফনের কাপড়’’ পরে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। এটা আরো বাড়বে, একটা মরণকামড় জামাত দেবেই [...]

আদালতের রায়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হচ্ছে হচ্ছে ভাব, এটা হলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি আবার নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। প্রত্যাশিতভাবেই জামাত হৈ-হুংকার শুরু করেছে, ছোটবড় কিছু দলকে সাথে নিয়ে এখানে ওখানে ও লন্ডনে বিদ্রোহী সমাবেশ করছে, উত্তেজক শ্লোগান দিচ্ছে। বানানো হয়েছে ‘‘ইসলাম ও ধর্মীয় রাজনীতি রক্ষা জাতীয় কমিটি’’, বক্তারা ‘‘কাফনের কাপড়’’ পরে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। এটা আরো বাড়বে, একটা মরণকামড় জামাত দেবেই। মুক্তিযুদ্ধে জাতি ইসলামে রাজনীতি মেশানোর আগুনে পুড়েছে। কিন্তু তারপরেও ইসলাম-ব্যবসায়ীদের হিংস্র চেহারা জাতির চোখে যতটা স্পষ্ট তাদের ধর্মতত্ত্বের ভয়াবহ দিকটা ততটা স্পষ্ট নয়। সেজন্যই জাতিকে জানানো বিশেষ জরুরী, নিজামুদ্দীন আওলিয়া-মঈনুদ্দীন চিশতি-হজরত শাহ জালাল-শাহ পরানের ইসলামের সাথে মওদুদী-নিজামী-সাঈদী-গোলাম আজমের ইসলামের সংঘর্ষ কেন ও কোথায়। জাতিকে জানানো দরকার মুক্তিযুদ্ধে জামাত যে হিংস্রতা করেছে তার শিকড় সেই মওদুদী-ব্যাখ্যার বিকৃত ও বিক্রীত অধর্মতত্ত্বের মধ্যেই নিহিত। যে-কোন প্রতিপক্ষকে যে-কোন উপায়ে নির্মূল করাই তাঁদের কাছে তাঁদের ধর্মবিশ্বাসের দাবী। সেখানে হিংস্রতা বৈধ ও মিথ্যা বলা ‘‘বাধ্যতামূলক’’। মুখে, কাজে ও সংবাদপত্রে জামাতের সদাসর্বদা হিংস্রতা ও মিথ্যার যে বেসাতি আমরা দেখি ওটা তার ‘‘ধর্মীয় কর্তব্য’’। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে তাদের খপ্পরে পড়া থেকে বাঁচানোর জন্য ইসলামের যে ভয়াবহ ব্যাখ্যা তারা জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চান সে দলিলগুলো দেখানো দরকার, এবং দেখানো দরকার তাদের কেতাব ও কর্মকাণ্ড থেকেই। সেটা সম্ভব, দরকার হলে আদালতে এসব দলিল দেখানো যাবে। ইতিহাসের শিক্ষা এই যে, গণসমর্থন ছাড়া শুধুমাত্র আইনের জোরে ধর্মীয় হিংস্রতা উচ্ছেদ করা যায়না। নিজেদের উদ্দেশ্য অর্জনে কখন সংবিধানকে ‘‘পবিত্র’’ বলে মাথায় তুলতে হয় ও কখন ‘‘ধর্ম-বিরোধী’’ বলে পায়ে দলতে হয় তা জামাত জানে। তাদের হুমকি-ধামকি ও হিংস্রতার কৌশল বেশ সফল, সেটা আইনের বিরুদ্ধে হলেও। মাত্র গত সপ্তাহে মালয়েশিয়াতে ক্যাথলিক পত্রিকা ‘‘হেরাল্ড’’-এর মালয় সংস্করণে স্রষ্টাকে বোঝাতে ‘‘আল্লাহ’’ শব্দটা ব্যবহার করলে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। শব্দের ওপরে কারো মালিকানার আইন নেই বলে আদালত হেরাল্ড-এর পক্ষে রায় দেয়। কিন্তু আইনে হারলেও ওখানকার ইসলাম-ব্যবসায়ীরা জনগণকে ক্ষেপিয়ে তুলে খ্রিষ্টানদের ওপরে তুমুল হুমকি-ধামকি ছাড়াও এগারোটা গীর্জায় ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এই হিংস্রতার চাপে আদালত তার রায় স্থগিত রেখেছে, তাতে ইসলামি রাজনীতিকদের সাহস ও মনোবল দুটোই বেড়ে গেছে। বিভিন্ন দেশে ইসলাম-ব্যবসায়ীরা দেশ ও জাতির কত ক্ষতি করেছে ও করছে সে দলিলগুলোও জাতিকে…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.