ইসলামের নামে নারী-নির্যাতনের অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তাতে ফতোয়া দেয়া ও ফতোয়া প্রয়োগ ইসলাম-সম্মত কিনা এসব প্রশ্ন জাতির পক্ষে আর এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয় [....]

গত ২৫শে মে দৈনিক ইত্তেফাক মোতাবেক ফতোয়া ও শারিয়ার নামে বিচার-বহির্ভুত শাস্তি প্রদানকে কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, এবং বিচার বহির্ভুত শাস্তি নিরুৎসাহিত করতে বিভিন্ন পর্যায়ের পাঠ্যসুচিতে এ সংক্রান্ত প্রবন্ধ অন্তর্ভুক্তির কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে সরকারের প্রতি রুল জারী করেছে হাইকোর্ট। ২০০০ সালে হিলা বিয়ের বিরুদ্ধেও একটা রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি জনাব গোলাম রাব্বানী ও নাজমুন আরা। আপীলের কারণে রায়টা এখনো সুপ্রীম কোর্টে ঝুলে আছে।

ইসলামের নামে নারী-নির্যাতনের অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তাতে ফতোয়া দেয়া ও ফতোয়া প্রয়োগ ইসলাম-সম্মত কিনা এসব প্রশ্ন জাতির পক্ষে আর এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। অনিয়ন্ত্রিত ফতোয়ায় নারী নির্যাতন অন্য কিছু ধর্মের নামেও হয় ও হয়েছে। এর সমাধানে আমাদের সামাজিক ও মানবিক সচেতনতা এবং আইনী পদক্ষেপ এখনো কার্য্যকর হয়নি কারণ এ বর্বরতা কেন ধর্মবিরোধী তা এখনো জনগণকে বোঝানোর কার্য্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বোঝানো হয়নি বাংলদেশে যেভাবে ফতোয়া এবং শারিয়া আইন প্রয়োগ করা হয় তা কেন শুধু মানবতা ও রাষ্ট্রীয় সংগঠনের বিরোধীই নয় বরং ইসলামেরও বিরোধী এমনকি শারিয়া-বিরোধীও।

গণসচেতনতার তোয়াক্কা না করে শুধুমাত্র ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের শক্তিতে নুতন মুসলিম দেশ গড়েছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ নেতারা, পাকিস্তানের জিন্নাহ, ইরাণের ডঃ মোসাদ্দেক, মিসরের নাসের, ইন্দোনেশিয়ার সুকর্ণো, তুর্কি’র কামাল পাশা। আজ ঐ প্রতিটি দেশ ফতোয়ার কবলে নিপেষিত হচ্ছে। অথচ তাতারস্তানের মত ছোট্ট দেশ প্রধানতঃ গণসচেতনতার জোরেই ফতোয়ার আগ্রাসন সফলভাবে ঠেকিয়ে রেখেছে। ওরা যেভাবে পেরেছে আমরাও সেভাবে এই অভিশাপ দুর করতে পারি। এটা ইতিহাসের শিক্ষা।

ফতোয়ার যে সংজ্ঞা ইমাম শাফি দিয়ে গেছেন তাতে সবাই একমত,- ‘‘ফতোয়া হইল ইসলামী আইনের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞের অভিমত। শুধুমাত্র কোন বৈধ কর্তৃপক্ষই ইহা দিতে পারেন। কিন্তু যেহেতু ইসলামে (স্রষ্টা ও সৃষ্টির’র মধ্যে – লেখক) কোন মধ্যব্যক্তি নাই কাজেই ফতোয়া জনগণের উপর বাধ্যতামূলক নহে’’ – ইমাম শাফি’র শারিয়া কেতাব উমদাত আল্‌ সালিক (অনুবাদক নুহ হা মিম কেলার), বইটাকে মিসরের আল্‌ আজহার বিশ্ববিদ্যালয় ষ্ট্যাম্প দিয়ে সত্যায়িত করেছে, পৃষ্ঠা ১১৮৪। ফতোয়ার এই সংজ্ঞা সর্বজনগ্রাহ্য ও প্রতিষ্ঠিত। এ জন্যই কুয়েত-এর মত মুসলিম দেশের সংবিধান-আদালত (কনষ্টিটিউশনাল কোর্ট) গত ২৮ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে রায় দিয়েছে এই বলেঃ- ‘‘ইসলামি শারিয়ার আইনগুলি জনগণের উপর রাষ্ট্রের মূল আইনের মত বাধ্যতামূলক নহে’’। মামলাটা কুয়েত-এর অ্যাটর্নী জেনারেল করেছিলেন মহিলা-সাংসদ আল্‌ আওয়াধি ও আল্‌ দাস্তি’র বিরুদ্ধে কারণ তাঁরা হিজাব ছাড়া সংসদে আসেন, কাজেই শারিয়া আইন ভঙ্গের অপরাধে তাঁদের সংসদ-সদস্যপদ খারিজ করা হোক। আদালতের রায়ে অ্যাটর্নী জেনারেল পরাজিত হয়েছেন – কুয়েত টাইমস্‌ ২৯ জানুয়ারী ২০১০

ব্যক্তিগত অভিমত হিসেবে ফতোয়া কখনো প্রয়োগ করার বিষয় নয়। তাহলে ফতোয়া কখন আইন হয়? জবাব দিয়েছেন বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শারিয়াবিদ ডঃ হাশিম কামালি তাঁর ‘‘প্রিন্সিপল্‌স অফ ইসলামিক জুরিস্প্রুডেন্স’’ গ্রন্থে ঃ- ‘‘কখনো কখনো কোরাণের একই বিষয়ে সাত বা আট রকমের মতামত পাওয়া যায়। মুসলিম শাসক যখন একটি মতকে গ্রহণ করিয়া আইন হিসাবে প্রয়োগ করেন তখনই তাহা সকলের জন্য বাধ্যতামূলক হয়’’ – পৃষ্ঠা ৩১। শাফি আইনেও পরিষ্কার বলেছে, -‘‘খলিফা কিংবা তাঁহার প্রতিনিধি ছাড়া আর কেহই বিচারক নিয়োগ করিতে পারিবে না।’’ – আইন নম্বর ও-২১-৩। কথাটা অনেক শারিয়া বইতেই আছে। অর্থাৎ শারিয়া অনুযায়ীই ইসলামি আইন প্রয়োগের একমাত্র বৈধ কর্তৃপক্ষ ইসলামি রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রপ্রধান। যেহেতু বাংলাদেশ ইসলামি রাষ্ট্র নয়, যেহেতু এখানে কোন মুসলিম শাসক কারো ব্যক্তিগত মতকে আইন হিসেবে বৈধতা দেয়নি তাই এখানে কেউ ব্যক্তিগতভাবে ইসলামি আইন প্রয়োগ করলে সেটা ইসলামি আইনেই অবৈধ। এরকম বহু ইসলামি দলিল আছে। এমনকি বাংলাদেশের শারিয়া-তত্ত্বগুরু শাহ আবদুল হান্নানও এক নিবন্ধে স্পষ্ট লিখেছেন হাতে আইন হাতে তুলে নেবার অধিকার কারো নেই। এইসব দলিলের ভিত্তিতে জনগণকে জানাতে হবে যে শারিয়া আইন মোতাবেকই ফতোয়ার আদালত সম্পুর্ণ অবৈধ।

ফতোয়ার এই সর্বজনগ্রাহ্য ও প্রতিষ্ঠিত সংজ্ঞা জাতিকে জানাতে হবে। জাতি যখন জানবে যে শারিয়ার দৃষ্টিতেই ফতোয়া ব্যক্তিবিশেষের অভিমত মাত্র এবং জনগণের ওপরে ‘‘বাধ্যতামূলক নহে’’ তখনি আমাদের মওলানাদের অন্ততঃ একটা অংশ ফতোয়া-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন ও জনমত সৃষ্টি হবে। সরকারের পক্ষে আইন প্রয়োগ তখনি সহজ ও কার্য্যকর হয়ে উঠবে, তার আগে নয়। আদালতের এই মন্তব্য- ‘‘বিচার বহির্ভুত শাস্তি নিরুৎসাহিত করতে বিভিন্ন পর্যায়ের পাঠ্যসুচিতে এ সংক্রান্ত প্রবন্ধ অন্তর্ভুক্তির কেন নির্দেশ দেয়া হবে না’’ একটি ঐতিহাসিক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। সরকারের উচিত এর পুরো সদ্ব্যবহার করা কারণ এ ব্যাপারে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে শিক্ষিত করে তোলা সরকারেরই দায়িত্ব।

ফতোয়া-সন্ত্রাসের একটা সামাজিক-অর্থনৈতিক মাত্রাও আছে। এতে অবধারিত জড়িত থাকেন প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ, জড়িয়ে থাকেন কিংবা জড়ানো হয় গ্রামের ইমাম, মওলানা বা মাদ্রাসার শিক্ষককে। এর ভুক্তভোগীরা সবাই গরীব মানুষ এবং প্রায়ই নারী; কখনো শহুরে ধনীর দুলালী কিংবা গ্রামের মাতবর-কন্যাকে এর শিকার হতে দেখা যায়নি। কাজেই নিঃসন্দেহে ফতোয়ার পেছনে ইসলামের পক্ষপাতহীন ন্যায়বিচার কাজ করছে না, সেখানে ইসলাম সম্বন্ধে কুশিক্ষা, ব্যক্তিগত লোভ-লালসা এমনকি প্রতিহিংসাও কাজ করে।

এ তো গেল দলিলের কথা। মানবিক দিকটা তার চেয়ে কম গুরুত্বপুর্ণ নয়। জাতির চোখের সামনে হিলা বিয়ের নামে অনেক নারী-ধর্ষণ করা হয়েছে, সংসার ধ্বংস হয়েছে, অনেক ধর্ষিতাকে প্রহার-অপমানের শাস্তি দেয়া হয়েছে, অনেকে আত্মহত্যা করেছে। বিভিন্ন সময়ে খোলাখুলিভাবেই বিভিন্ন উদ্ভট ও অবাস্তব ফতোয়ার শিকার হয়েছেন নারীরা। কিন্তু আমাদের বুদ্ধি নেই, বিবেক নেই? এগুলো যে অত্যাচার তা বুঝতে আমাদের দলিল দরকার হবে কেন ? কোনো অত্যাচার ইসলাম হতে পারে না তা দাবী করতে আমাদের সংকোচ হবে কেন? জাতি কিন্তু ঠিকই খেয়াল করছে ফতোয়া-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বারবার ছুটে গেছেন মানবাধিকার কর্মীরা কিন্তু আজ পর্য্যন্ত কোন ইসলামি দল কিংবা তাঁদের কর্ণধারদের কোন প্রতিবাদ শোনা যায় নি। অথচ ইসলামের দেয়া মা-বোনের সম্মান-অধিকার রক্ষা ও ইসলামের ভাবমূর্তি বজায় রাখার ইত্যাদি দায়িত্ব তাঁরা নিজেরাই স্বেচ্ছায় নিজেদের ওপরে নিয়েছেন। সেই দায়িত্ব অস্বীকার করার ফলে তাঁদের ভাবমুর্তি চরমভাবে নারী-বিরোধী হয়ে পড়েছে। এটা তাঁরা যত তাড়াতাড়ি বুঝে ফতোয়া-সন্ত্রাসের প্রতিবাদ প্রতিরোধ করবেন তত তাড়াতাড়ি এ অভিশাপ সমাজ থেকে উচ্ছেদ হবে এবং তাঁরাও জাতির ধন্যবাদার্হ হবেন। নাহলে ফতোয়াবাজী শব্দটার মতো শারিয়াবাজী শব্দটাও একদিন প্রতিষ্ঠিত হবে।

মানুষের জীবন, সম্মান ও বিশ্বাস স্রষ্টার অত্যন্ত পবিত্র আমানত। এগুলোকে কারো হাতের খেলার পুতুল হতে দেয়া যায় না, ইসলামের নামে তো নয়ই। সরকারের একার পক্ষে বিস্তীর্ণ গ্রাম-বাংলার দরিদ্র জনগণকে ফতোয়া-সন্ত্রাস থেকে বাঁচানো কিছুতেই সম্ভব নয় যদি গণসচেতনতা না থাকে। অর্থাৎ দায়িত্বটা সবার, সরকারের একার নয়।
হাসান মাহমুদ
২৬ মে, ৪০ মুক্তিসন (২০১০)

হাসান মাহমুদ

শারিয়া আইন বিষয়ক তথ্যচিত্র, নাটক ও গ্রন্থের রচয়িতা। উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য, ওয়ার্ল্ড মুসলিম কংগ্রেস; রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট, দ্বীন রিসার্চ সেন্টার, হল্যান্ড; সদস্য, আমেরিকান ইসলামিক লিডারশিপ কোয়ালিশন; ক্যানাডা প্রতিনিধি, ফ্রি মুসলিম্‌স্ কোয়ালিশন; প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ও ডিরেক্টর অফ শারিয়া ল’, মুসলিম ক্যানাডিয়ান কংগ্রেস।

১ comment

  1. মোহাম্মদ মুনিম - ৯ জুলাই ২০১০ (১০:৪৭ পূর্বাহ্ণ)

    ফতোয়ার নামে শাস্তি দেওয়া অবৈধ – হাইকোর্টের রায় (প্রথম আলো – জুলাই ৯, ২০১০)

    ফতোয়ার নামে বিচারবহির্ভূত কার্যক্রম ও শাস্তি অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ ধরনের শাস্তি ঘোষণাকারীকে অপরাধী হিসেবে গণ্য করতে বলা হয়েছে। দণ্ডবিধিসহ প্রচলিত অন্যান্য আইন অনুযায়ী এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের অপরাধের সহযোগী হিসেবে একই ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দেন আদালত।
    ফতোয়ার নামে বিচারবহির্ভূত কার্যক্রম ও শাস্তি দেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে পৃথক তিনটি রিটের শুনানি শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই, ২০১০) বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ এ রায় দেন।
    আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ফতোয়ার নামে বিচারবহির্ভূত শাস্তি দেওয়া অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। যাঁরা এ ধরনের শাস্তি দেবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধিসহ প্রচলিত আইনে শাস্তির ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্টের এই রায় নারীর অধিকার ও সম্মান রক্ষায় সহায়ক হবে। অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনা যাবে। ফলে ফতোয়ার নামে নারীর অধিকার হরণ, শারীরিক নির্যাতন ও অপমানের পথ বন্ধ হবে। ইতিপূর্বে দেওয়া ফতোয়াবিরোধী রায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই রায়ে ফতোয়া দেওয়াকে বেআইনি বলা হয়। কিন্তু এবারের রায়ে ফতোয়ার নামে শাস্তি দিলে তাদের আইনের আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে।
    ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আকরাম হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ফতোয়ার নামে বিচারবহির্ভূত শাস্তি দেওয়া অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের শাস্তি ঘোষণাকারীকে অপরাধী হিসেবে গণ্য করে তাঁর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধিসহ প্রচলিত অন্যান্য আইনে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
    নয় বছর আগে: নয় বছর আগে ফতোয়াবিরোধী রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ফতোয়াবিরোধী হাইকোর্টের ওই রায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নয় বছরের বেশি সময় ধরে আটকে আছে। এখন আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। ২০০১ সালের ১ জানুয়ারি বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী ও বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ ফতোয়াকে অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করেন। রায়ে বলা হয়, একমাত্র আদালতই মুসলিম বা অন্য কোনো আইন অনুযায়ী আইনসংক্রান্ত কোনো প্রশ্নে মতামত দিতে পারেন। কেউ ফতোয়া দিলে তা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯০ ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য হবে।
    তিন রিট: জানা যায়, সারা দেশে ফতোয়ার নামে বিচারবহির্ভূত শাস্তি নিয়ে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, নিজেরা করি ও ব্র্যাক হাইকোর্টে একটি রিট করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২৫ আগস্ট আদালত ফতোয়ার নামে বিচারবহির্ভূত শাস্তির বিষয়ে সরকারের ব্যর্থতা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।
    এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় এক কিশোরীকে ধর্ষণ ও দোররা মারার ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালাউদ্দিন দোলন হাইকোর্টে রিট করলে আদালত রুল জারি করেন। গত ৭ ফেব্রুয়ারি প্রকৃত ঘটনা জানিয়ে প্রতিবেদন দিতে কসবা থানার পুলিশকে নির্দেশ দেন আদালত।
    সর্বশেষ ‘বাঞ্ছারামপুরে তরুণীকে ১০১ দোররা, গ্রেপ্তার ৪’ শিরোনামে গত ২২ মে প্রথম আলোতে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর অনুলিপি যুক্ত করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহবুব শফিক, কে এম হাফিজুল আলম ও ইমরানুল হাই একটি রিট করেন। এ রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ মে আদালত রুল জারি করেন। এতে ফতোয়ার নামে বিচারবহির্ভূত শাস্তি দেওয়া কেন অবৈধ ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়। একই সঙ্গে বিচারবহির্ভূত শাস্তি দেওয়া নিরুৎসাহিত করতে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের পাঠ্যসূচিতে প্রবন্ধ ও অন্যান্য শিক্ষাবিষয়ক উপকরণ অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এসব রিটের রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে গতকাল আদালত রায় দেন।
    আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সারা হোসেন, অবন্তী নুরুল, মাহবুব শফিক ও সালাউদ্দিন দোলন এবং সরকারপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রাজিক আল জলিল ও আকরাম হোসেন চৌধুরী।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.