[...] খুন-ধর্ষণের বিচার হতেই হবে, সেটাই কি ইসলাম নয়? সেটা তখনই “ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র” হয় যখন খুনী ধর্ষকেরা ইসলামের মালিকানা হাতিয়ে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করে। অপরাধীরা চিরকাল ‘‘ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র”, “কোরানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র” এসব বাহানায় নিজেদের শুধু রক্ষাই করেনি বরং প্রতিপক্ষকে হেনস্থা ও হত্যা করেছে। কারবালায় শিশু-নারী সহ ইমাম হুসেইন (রা.)-কে নৃশংসভাবে হত্যার আগে ‘‘ইসলাম রক্ষা”র হুজুগ এরাই তুলেছিল। ‘‘ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র” চীৎকারে এরাই কাবার দেয়াল ভেঙে তার চাদর আগুনে পুড়িয়েছিল, হজরত জুবায়েরকে কাবার ভেতরে হত্যা করেছিল। আজ গণহত্যা ও গণধর্ষণের মত মারাত্মক অপরাধের বিচার বানচাল করতেও এরা ইসলামকে হাতিয়ার করার চেষ্টা করছে । [...]

‘‘অথচ ক’দিন আগে গো-আযমকে দেখলাম হেঁটে মসজিদে যেতে যেতে টিভি ক্যামেরায় কথা বলছে” -- শরিফ এ. কাফি উল্লাসে ফেটে পড়েছে জাতি। অবশেষে বিচারের লাঠি একাত্তরের গণহত্যাকারী গণধর্ষণকারীদের তাড়া করেছে । যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামাতের তখনকার আমীর গোলাম আজম ও কিছু কেন্দ্রীয় নেতাদের বিচার চলছে। জামাত ও তার সহযোগীরা দাবী করছে এ বিচার নাকি ইসলাম ধ্বংসের ষড়যন্ত্র। কী নির্লজ্জ মিথ্যা কথা! খুন-ধর্ষণের বিচার হতেই হবে, সেটাই কি ইসলাম নয়? সেটা তখনই “ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র” হয় যখন খুনী ধর্ষকেরা ইসলামের মালিকানা হাতিয়ে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করে। সেজন্যই নিজামী চটগ্রামের এক বক্তৃতায় বলেছিল জামাতের সমালোচনা করা নাকি ইসলামের সমালোচনা করা। স্পর্ধা দেখুন!! ওদের ভয়ংকর ইসলামি ব্যাখ্যাই ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র যা আসলে মৌদুদিবাদ। সেজন্যই মৌদুদী'র উত্থানকালে ভারতবর্ষের বহু মওলানা তাঁকে কাফের বলেছেন, দজ্জাল বলেছেন। সৌদি পেট্রোডলার আর অপরাজনীতির ষড়যন্ত্র না হলে এই অপশক্তির মৃত্যু তখনই হত। বাংলাদেশের নোংরা রাজনীতি না হলে তাদের কোথাও জায়গা হত না, চেহারায় জনগণের ঘৃণার থুথু নিয়েই মরতে হত। এদের কারণেই রসুল বলেছেন: ‘‘উম্মতের জন্য আমার সর্বাপেক্ষা গভীর উদ্বেগ পথভ্রষ্টকারী ইমামদের নিয়া” -- সহি ইবনে মাজাহ ৫ খণ্ড ৩৯৫২। অপরাধীরা চিরকাল ‘‘ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র”, “কোরানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র” এসব বাহানায় নিজেদের শুধু রক্ষাই করেনি বরং প্রতিপক্ষকে হেনস্থা ও হত্যা করেছে। কারবালায় শিশু-নারী সহ ইমাম হুসেইন (রা.)-কে নৃশংসভাবে হত্যার আগে ‘‘ইসলাম রক্ষা”র হুজুগ এরাই তুলেছিল। ‘‘ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র” চীৎকারে এরাই কাবার দেয়াল ভেঙে তার চাদর আগুনে পুড়িয়েছিল, হজরত জুবায়েরকে কাবার ভেতরে হত্যা করেছিল। “কোরানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র” চীৎকারে এরাই ইমাম বুখারীকে আমৃত্যু নির্বাসনে পাঠিয়েছে, ইবনে খালদুনের মত "ইতিহাস বিজ্ঞানের পিতা"কে দেশে দেশে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে, বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানীর মত দরবেশকে "কাফের" ফতোয়া দিয়েছে। এরা একাত্তরের ঘাতক, এরা ধর্মদস্যু, এরা আমেরিকা-ইউরোপ যেখানেই পালিয়েছে, আলখাল্লা-দাড়ি-টুপি পরে ইসলামি সংগঠনে ঢুকে পড়েছে। লন্ডনের আবু সাঈদ, মইনুদ্দীন, নিউ ইয়র্কের আশরাফ তার জ্বলন্ত প্রমাণ। আজ গণহত্যা ও গণধর্ষণের মত মারাত্মক অপরাধের বিচার বানচাল করতেও এরা ইসলামকে হাতিয়ার করার চেষ্টা করছে । ইসলামের ধ্বজাধারী এই ধর্মদস্যুরা মিথ্যের পর মিথ্যেও বলে চলেছে। অথচ কোরান কতবার বলেছে সত্য গোপন না করতে, মিথ্যা থেকে দূরে থাকতে -- (বাকারা ১০, ৪২ ও ২৮৩, মায়েদা…

ইসলামের নামে নারী-নির্যাতনের অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তাতে ফতোয়া দেয়া ও ফতোয়া প্রয়োগ ইসলাম-সম্মত কিনা এসব প্রশ্ন জাতির পক্ষে আর এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয় [....]

গত ২৫শে মে দৈনিক ইত্তেফাক মোতাবেক ফতোয়া ও শারিয়ার নামে বিচার-বহির্ভুত শাস্তি প্রদানকে কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, এবং বিচার বহির্ভুত শাস্তি নিরুৎসাহিত করতে বিভিন্ন পর্যায়ের পাঠ্যসুচিতে এ সংক্রান্ত প্রবন্ধ অন্তর্ভুক্তির কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে সরকারের প্রতি রুল জারী করেছে হাইকোর্ট। ২০০০ সালে হিলা বিয়ের বিরুদ্ধেও একটা রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি জনাব গোলাম রাব্বানী ও নাজমুন আরা। আপীলের কারণে রায়টা এখনো সুপ্রীম কোর্টে ঝুলে আছে। ইসলামের নামে নারী-নির্যাতনের অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তাতে ফতোয়া দেয়া ও ফতোয়া প্রয়োগ ইসলাম-সম্মত কিনা এসব প্রশ্ন জাতির পক্ষে আর এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। অনিয়ন্ত্রিত ফতোয়ায় নারী নির্যাতন অন্য কিছু ধর্মের নামেও হয় ও হয়েছে। এর সমাধানে আমাদের সামাজিক ও মানবিক সচেতনতা এবং আইনী পদক্ষেপ এখনো কার্য্যকর হয়নি কারণ এ বর্বরতা কেন ধর্মবিরোধী তা এখনো জনগণকে বোঝানোর কার্য্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বোঝানো হয়নি বাংলদেশে যেভাবে ফতোয়া এবং শারিয়া আইন প্রয়োগ করা হয় তা কেন শুধু মানবতা ও রাষ্ট্রীয় সংগঠনের বিরোধীই নয় বরং ইসলামেরও বিরোধী এমনকি শারিয়া-বিরোধীও। গণসচেতনতার তোয়াক্কা না করে শুধুমাত্র ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের শক্তিতে নুতন মুসলিম দেশ গড়েছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ নেতারা, পাকিস্তানের জিন্নাহ, ইরাণের ডঃ মোসাদ্দেক, মিসরের নাসের, ইন্দোনেশিয়ার সুকর্ণো, তুর্কি’র কামাল পাশা। আজ ঐ প্রতিটি দেশ ফতোয়ার কবলে নিপেষিত হচ্ছে। অথচ তাতারস্তানের মত ছোট্ট দেশ প্রধানতঃ গণসচেতনতার জোরেই ফতোয়ার আগ্রাসন সফলভাবে ঠেকিয়ে রেখেছে। ওরা যেভাবে পেরেছে আমরাও সেভাবে এই অভিশাপ দুর করতে পারি। এটা ইতিহাসের শিক্ষা। ফতোয়ার যে সংজ্ঞা ইমাম শাফি দিয়ে গেছেন তাতে সবাই একমত,- ‘‘ফতোয়া হইল ইসলামী আইনের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞের অভিমত। শুধুমাত্র কোন বৈধ কর্তৃপক্ষই ইহা দিতে পারেন। কিন্তু যেহেতু ইসলামে (স্রষ্টা ও সৃষ্টির’র মধ্যে - লেখক) কোন মধ্যব্যক্তি নাই কাজেই ফতোয়া জনগণের উপর বাধ্যতামূলক নহে’’ - ইমাম শাফি’র শারিয়া কেতাব উমদাত আল্‌ সালিক (অনুবাদক নুহ হা মিম কেলার), বইটাকে মিসরের আল্‌ আজহার বিশ্ববিদ্যালয় ষ্ট্যাম্প দিয়ে সত্যায়িত করেছে, পৃষ্ঠা ১১৮৪। ফতোয়ার এই সংজ্ঞা সর্বজনগ্রাহ্য ও প্রতিষ্ঠিত। এ জন্যই কুয়েত-এর মত মুসলিম দেশের সংবিধান-আদালত (কনষ্টিটিউশনাল কোর্ট) গত ২৮ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে রায় দিয়েছে এই বলেঃ- ‘‘ইসলামি শারিয়ার আইনগুলি জনগণের উপর রাষ্ট্রের মূল আইনের মত বাধ্যতামূলক নহে’’। মামলাটা কুয়েত-এর…

আমরাও শিবির উচ্ছেদ চাই কিন্তু প্রতিপক্ষের সাময়িক পরাজয়ে উল্লাসের মতো কৈশোর-অ্যাডভেঞ্চারিজম্ এটা নয়, এটা হল একটা ধর্মভীরু জাতির ধীর ও বহুমাত্রিক ধর্মীয়-সামাজিক বিবর্তন। গ্রেপ্তারকৃত প্রায় সবাই ছাড়া পাবেই এবং শিগগীরই ছাড়া পাবে। এ সরকারও চিরদিন থাকবে না। তাহলে লাভ কি হল? এ সংঘর্ষের দুটো দিক খেয়াল করা দরকার [...]

সংক্ষেপে, ঘটনাগুলো এভাবে ঘটেছে। গত বছর ১৩ই মার্চ ছাত্রলীগ-শিবিরের সংঘর্ষে খুন হয় রাবি-শিবিরের জি-এস শরীফুজ্জামান নোমানী। তখন রাবি’র বিজ্ঞান অনুষদের ডীন ও জামাত নেতা অধ্যাপক আবুল হাশেম কয়েকশ’ শিবির-সদস্যকে প্রতিজ্ঞা করিয়েছিলেন ‘‘লাশের বদলে লাশ’’(‘‘অধ্যাপক’’ বটে!)। এরই জের ধরে ৮ই ফেব্রুয়ারী ২০১০-এ ভয়াবহ তাণ্ডবে শিবিরের দল খুন করেছে লীগকর্মী ফারুক হোসেনকে আর হাত-পায়ের রগ কেটে দিয়েছে আরো চারজনের। এবং এরই জের ধরে দেশজুড়ে শিবিরের মিছিল-মিটিং অফিস ও বাড়ীঘরের ওপরে সরকারের নির্দেশে ঝাঁপিয়ে পড়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তার অসংখ্য, আরো খুন, দেশে বয়ে যাচ্ছে সংঘাতের ঝড়। রাজশাহী-শিবিরের একাংশ ‘‘সেভ শিবির’’ নামে জামাতের আমীর নিজামীর কাছে দাবী করেছে, কেন্দ্রীয় নেতা প্রাক্তন মন্ত্রী মুজাহিদী ও রাবি’র প্রাক্তন শিবির সভাপতিত্রয় রফিকুল, বুলবুল ও রেজাউলই রাবি’র খুনের জন্য দায়ী। তারা সরকারের কাছেও দাবী করেছে সাধারণ শিবির-সদস্যদের ওপর অত্যাচার না করে ওই চারজনের মোবাইল জব্দ করে তদন্ত করতে। আমরাও শিবির উচ্ছেদ চাই কিন্তু প্রতিপক্ষের সাময়িক পরাজয়ে উল্লাসের মতো কৈশোর-অ্যাডভেঞ্চারিজম্ এটা নয়, এটা হল একটা ধর্মভীরু জাতির ধীর ও বহুমাত্রিক ধর্মীয়-সামাজিক বিবর্তন। গ্রেপ্তারকৃত প্রায় সবাই ছাড়া পাবেই এবং শিগগীরই ছাড়া পাবে। এ সরকারও চিরদিন থাকবে না। তাহলে লাভ কি হল? এ সংঘর্ষের দুটো দিক খেয়াল করা দরকার। প্রথমতঃ, দেশে হরহামেশা খুন হয়, ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের হাতেও হয়নি এমন নয় কিন্তু শিবিরের খুনের সাথে সেসবের আকাশ-পাতাল পার্থক্য আছে। সন্ত্রাসী ছাত্রদল-ছাত্রলীগেরা মনে মনে ঠিকই জানে ওরা ক্রাইম করছে, পুলিশী বা আইনি শক্তিতে সেটা পরাস্ত করা সম্ভব। কিন্তু শিবিরের ড্রাইভিং ফোর্স হল ধর্মবিশ্বাস - ওদের উদ্দেশ্যসাধনের পথে যে কোনো বাধাকে যে কোনভাবে অপসারিত করা ওদের ইবাদত। তাই ওদের সন্ত্রাসকে ওরা ক্রাইম বলে মনেই করে না। এই ভয়ংকর মানসিকতাকে শুধুমাত্র দৈহিক শক্তিপ্রয়োগে উচ্ছেদ করা যায় না। দ্বিতিয়তঃ, যতদিন জামাত থাকবে ততদিন শিবির থাকবে এবং জামাত থাকবে ততদিন, যতদিন ইসলামের শান্িতময় ব্যাখ্যা দিয়ে মওদুদিবাদকে পরাজিত না যায়। জামাতের অপতত্ত্বের বিরুদ্ধে আইন ও পুলিশী শক্তিপ্রয়োগ দরকার হতে পারে কিন্তু তার আগে যদি ওদের অধর্মতত্ত্বকে পরাজিত না করা হয় তাহলে ওরা সাময়িক পরাজিত হলেও বারবার ফিরে আসবে। শিবিরেরা বয়সে তরুণ। ওদের বিশ্বাস ওরা সেবা করছে ইসলামের, দেশ ও জাতির। কিন্তু ওরা জানেনা ওদের পথে চলে অন্যান্য জাতির…

আদালতের রায়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হচ্ছে হচ্ছে ভাব, এটা হলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি আবার নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। প্রত্যাশিতভাবেই জামাত হৈ-হুংকার শুরু করেছে, ছোটবড় কিছু দলকে সাথে নিয়ে এখানে ওখানে ও লন্ডনে বিদ্রোহী সমাবেশ করছে, উত্তেজক শ্লোগান দিচ্ছে। বানানো হয়েছে ‘‘ইসলাম ও ধর্মীয় রাজনীতি রক্ষা জাতীয় কমিটি’’, বক্তারা ‘‘কাফনের কাপড়’’ পরে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। এটা আরো বাড়বে, একটা মরণকামড় জামাত দেবেই [...]

আদালতের রায়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হচ্ছে হচ্ছে ভাব, এটা হলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি আবার নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। প্রত্যাশিতভাবেই জামাত হৈ-হুংকার শুরু করেছে, ছোটবড় কিছু দলকে সাথে নিয়ে এখানে ওখানে ও লন্ডনে বিদ্রোহী সমাবেশ করছে, উত্তেজক শ্লোগান দিচ্ছে। বানানো হয়েছে ‘‘ইসলাম ও ধর্মীয় রাজনীতি রক্ষা জাতীয় কমিটি’’, বক্তারা ‘‘কাফনের কাপড়’’ পরে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। এটা আরো বাড়বে, একটা মরণকামড় জামাত দেবেই। মুক্তিযুদ্ধে জাতি ইসলামে রাজনীতি মেশানোর আগুনে পুড়েছে। কিন্তু তারপরেও ইসলাম-ব্যবসায়ীদের হিংস্র চেহারা জাতির চোখে যতটা স্পষ্ট তাদের ধর্মতত্ত্বের ভয়াবহ দিকটা ততটা স্পষ্ট নয়। সেজন্যই জাতিকে জানানো বিশেষ জরুরী, নিজামুদ্দীন আওলিয়া-মঈনুদ্দীন চিশতি-হজরত শাহ জালাল-শাহ পরানের ইসলামের সাথে মওদুদী-নিজামী-সাঈদী-গোলাম আজমের ইসলামের সংঘর্ষ কেন ও কোথায়। জাতিকে জানানো দরকার মুক্তিযুদ্ধে জামাত যে হিংস্রতা করেছে তার শিকড় সেই মওদুদী-ব্যাখ্যার বিকৃত ও বিক্রীত অধর্মতত্ত্বের মধ্যেই নিহিত। যে-কোন প্রতিপক্ষকে যে-কোন উপায়ে নির্মূল করাই তাঁদের কাছে তাঁদের ধর্মবিশ্বাসের দাবী। সেখানে হিংস্রতা বৈধ ও মিথ্যা বলা ‘‘বাধ্যতামূলক’’। মুখে, কাজে ও সংবাদপত্রে জামাতের সদাসর্বদা হিংস্রতা ও মিথ্যার যে বেসাতি আমরা দেখি ওটা তার ‘‘ধর্মীয় কর্তব্য’’। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে তাদের খপ্পরে পড়া থেকে বাঁচানোর জন্য ইসলামের যে ভয়াবহ ব্যাখ্যা তারা জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চান সে দলিলগুলো দেখানো দরকার, এবং দেখানো দরকার তাদের কেতাব ও কর্মকাণ্ড থেকেই। সেটা সম্ভব, দরকার হলে আদালতে এসব দলিল দেখানো যাবে। ইতিহাসের শিক্ষা এই যে, গণসমর্থন ছাড়া শুধুমাত্র আইনের জোরে ধর্মীয় হিংস্রতা উচ্ছেদ করা যায়না। নিজেদের উদ্দেশ্য অর্জনে কখন সংবিধানকে ‘‘পবিত্র’’ বলে মাথায় তুলতে হয় ও কখন ‘‘ধর্ম-বিরোধী’’ বলে পায়ে দলতে হয় তা জামাত জানে। তাদের হুমকি-ধামকি ও হিংস্রতার কৌশল বেশ সফল, সেটা আইনের বিরুদ্ধে হলেও। মাত্র গত সপ্তাহে মালয়েশিয়াতে ক্যাথলিক পত্রিকা ‘‘হেরাল্ড’’-এর মালয় সংস্করণে স্রষ্টাকে বোঝাতে ‘‘আল্লাহ’’ শব্দটা ব্যবহার করলে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। শব্দের ওপরে কারো মালিকানার আইন নেই বলে আদালত হেরাল্ড-এর পক্ষে রায় দেয়। কিন্তু আইনে হারলেও ওখানকার ইসলাম-ব্যবসায়ীরা জনগণকে ক্ষেপিয়ে তুলে খ্রিষ্টানদের ওপরে তুমুল হুমকি-ধামকি ছাড়াও এগারোটা গীর্জায় ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এই হিংস্রতার চাপে আদালত তার রায় স্থগিত রেখেছে, তাতে ইসলামি রাজনীতিকদের সাহস ও মনোবল দুটোই বেড়ে গেছে। বিভিন্ন দেশে ইসলাম-ব্যবসায়ীরা দেশ ও জাতির কত ক্ষতি করেছে ও করছে সে দলিলগুলোও জাতিকে…

ইসলামের নামে ইসলামের প্রতি ভয়ংকর বিশ্বাসঘাতকতা কে করেছে? আপনারাই করেছেন নিজামী। অজস্র মনগড়া "শরিয়া আইন" বানিয়ে নিয়েছেন আপনারা ইসলামের নামে নিজেদের গা বাঁচাতে, এমনকি নিজেদের যুদ্ধাপরাধকে জায়েজ করা আইনও। তরুণরা পড়ে না - কিছু তরুণ আপনাদের বিশ্বাস করে সমর্থন করে। ওই তরুণরা একদিন জানবে কি নিষ্ঠুরভাবে ওদের ধর্মীয় আবেগকে পুঁজি করে ওদের আপনারা ঠকিয়েছেন [...]

(তওবা করলে গণহত্যাকারী গণধর্ষণকারীদের শাস্তি হবে না - শরিয়া আইন) নিজামী গং বরাবরই বলেন - জাতিকে নাকি বিভক্ত করা হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধী-বিচারের বাতাস বইবার সাথে সাথে তাঁরা ওটা যত্রতত্র উচ্চকন্ঠে বলে বেড়াচ্ছেন। জাতির ঐক্যের খাতিরে নাকি গণহত্যা-গণধর্ষণের মত ভয়ঙ্কর অপরাধের বিচার শিকেয় তুলে রাখা দরকার। লক্ষ ধর্ষিতাদের সাথে ও লক্ষ নিহতদের কোটি কোটি স্বজনদের সাথে গণহত্যাকারী ও গণধর্ষণকারীদের ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা নাকি খুবই দরকার। জনাব নিজামী, কিছু স্পষ্ট কথা আপনার মাথায় না ঢুকুক কানে ঢালা প্রয়োজন। নষ্ট রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা পাওয়া আর জাতির হৃদয়ে প্রতিষ্ঠা পাওয়া’র মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে। আজ বিপদে পড়ে ঐক্যের কথা বলছেন, জাতিকে বিভক্ত কে করেছে রক্তরেখায়? আপনাদের আর জাতির মাঝখানে লক্ষ লাশ লক্ষ ধর্ষিতার হিমালয় কে তুলেছে? আপনারাই তুলেছেন, আমরা নই। সে হিমালয় আজো দাঁড়িয়ে আছে রক্তস্বাক্ষরে। পরাক্রমশালী বিদেশী সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে সেই জীবন-মরণ যুদ্ধে আপনারা আমাদের সাথে ঐক্য করলে আমাদের শক্তি আর মনোবল অনেক বাড়তো। কিন্তু আপনারা বাংলায় জন্মে বাঙ্গালীর সঙ্গে ঐক্য না করে বাঙ্গালীরই বিরুদ্ধে খোলাখুলি জিহাদ ঘোষণা করলেন, অস্ত্র ধরলেন। জাতির ওপরে বিদেশীদের গণহত্যা-গণধর্ষণে শরিক হওয়াকে ইবাদত মনে করলেন এবং প্রাণপনে সে ‘‘ইবাদত’’ করলেন-ও। আপনাদের সক্রিয় সমর্থন নাপাক পিশাচদের শক্তি ও মনোবল অনেক বাড়িয়েছিল, আপনাদের সাহায্য না পেলে অনেক বাঙ্গালী বেঁচে যেত অনেক বাঙ্গালিনী ধর্ষিতা হতো না। এতসবের পর কিভাবে আমরা আপনাদের সাথে ঐক্য করি? আটত্রিশ বছর কেটে গেছে আপনারা সে অপরাধের জন্য আল্লা-রসুলের কাছে আর নিপীড়িতদের কাছে ক্ষমা তো চানইনি বরং সগর্বে বলেছেন - ‘‘একাত্তরে আমরা ভুল করিনি’’। করেছেন। মিসটেক নয়, ব্লান্ডার করেছেন। ভুল-ও করেছেন, অপরাধও করেছেন। কেন করেছেন জাতি জানে। ঐক্য যে করবেন, করবেন-টা কার সাথে? এ জাতি কখন আপনার নিজের জাতি ছিল? কখনোই না। এ জাতির সংস্কৃতি কবে আপনার সংস্কৃতি ছিল? কখনোই না। এ জাতির মরমীয়া ইসলাম কবে আপনাদের ইসলাম ছিল? কখনোই না। জাতির হাজার বছরের ধর্মীয় সহিষ্ণুতার ঐতিহ্যে ঘুন ধরিয়ে ইসলামের হিংস্র ব্যাখ্যা আমদানী কে করেছে? আপনারাই করেছেন। তাই আপনারা যতনা বাঙ্গালী হয়েছেন তার চেয়ে বেশী হয়েছেন পাকিস্তানি। যতনা মুসলমান হয়েছেন তার চেয়ে বেশী হয়েছেন আরবী। তাই আগ্রহ আর উল্লাসের সাথে নিজের আত্মপরিচয়কে, স্বজাতির রক্ত আর নারীর সম্ভ্রমকে বিদেশীর পায়ে…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.