১
সম্ভবত বছর দুয়েক আগের ঘটনা। মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ থেকে বেরিয়ে রিকশায় মিরপুর ১-এর দিকে যাচ্ছি। হযরত শাহ আলী মাজারের কাছাকাছি আসতেই রিকশার গতি মন্থর হলো। সামনে মোটামুটি হৃষ্টপুষ্ট একটা মৌন মিছিলের মতো। ধীর গতিতে, সম্ভবত মাজারের দিকেই যাচ্ছে। কোনো অকেশন-টকেশন আছে কিনা জানি না। পাশ কেটে ওভারটেক করতে গিয়ে লক্ষ করলাম, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রায় সবার হাতেই কোনো না কোনো খাবারের পোটলা বা ভাণ্ড। ফল-পসারি পানির বোতলও আছে অনেকের হাতে। মিছিলের অগ্রভাগে বেশ ময়লা-অপরিষ্কার জীর্ণ-শীর্ণ আলখাল্লা পরিহিত একজন বেটেখাটো শ্মশ্রু-গুম্ফধারী দরবেশ টাইপের বৃদ্ধলোক আপন মনে দুলে দুলে হাঁটছেন মাথাটাকে সামনে ঝুলিয়ে দিয়ে। সামনের দিকে দু-একজনকে আবার অনেকটা শৃঙ্খলারক্ষার ভঙ্গিতে তৎপর দেখা গেলো। উনি কে? জিজ্ঞেস করতেই রিকশাচালক বললো, ‘হায়দার বাবা, বড় কামেল ফকির!’
এসব ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাসে যথেষ্ট ঘাটতি থাকলেও মানব-মনস্তত্ত্বে কৌতূহলের কোনো কমতি নেই। কিন্তু ঘটনাটা আমার কাছে আকস্মিক ও নতুন হলেও এলাকাবাসীর কাছে খুবই সাধারণ একটা বিষয় বলেই মনে হলো। ছবি নেয়া হলো না বলে আফসোস হলো। যাক, এদিনের মতো কৌতূহলটা ঝুলে রইলো।
বছর খানেক পরে একদিন। মোবাইল ক্যামে সংরক্ষিত তারিখে ১৭-০৬-২০০৯। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে প্রায়। অফিস-ফেরতা মানুষের ভিড়ে আশপাশ সরব। মিরপুর পোস্টাফিসটার সামনে ফুটপাথ ঘেঁষে হঠাৎ মিছিলটা নজরে এলো। ফকির হায়দার বাবা! দুই-মেগাপিক্সেলটা যে আসলেই রাতকানা, টের পেলাম ছবিটা কম্প্যুটারে আপলোড করেই (শীর্ষ ছবি) — কিছু ভৌতিক ছায়ার মতো মনে হচ্ছে মানুষগুলোকে।
এরপর আরেকটা বছর প্রায় ঘুরে এলো। ২৫ মার্চ ২০১০ বিষ্যুদবার। বেলা প্রায় সাড়ে এগারোটা হবে। মিরপুর পোস্টাফিসেরই ফাঁকা চত্বরটাতে অনেক মানুষের জটলা দেখে কৌতূহল হলো। বিশ্রামরত ছোটখাটো একটা কাফেলা যেনো। কৌতূহলী মানুষের ঘাড়ের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিলাম। আপাতদৃষ্টিতে খুব নোংরা মলিন পোশাকে উস্কুখুস্কু দাঁড়ি-গোঁফধারী ছোটখাটো আকৃতির বৃদ্ধ লোকটি কাত হয়ে মাটিতে শুয়ে আছেন দেয়াল ঘেঁষে। শরীরের উন্মুক্ত অংশে হাতে পায়ে সাফ না করা বহুদিনের ময়লার পুরু স্তর কালো হয়ে বসে আছে তা স্বাভাবিক চোখেই ধরা পড়ে। আর বেশ কিছুসংখ্যক নারী-পুরুষ হরেক রকম খাবারের রসদ নিয়ে তাঁকে ঘিরে আছে। চৈতের দাবদাহে কেউ কেউ হাতপাখায় বাতাস করছে তাঁকে। চিনতে কষ্ট হলো না — ফকির হায়দার বাবা। আশে পাশে আরো কিছু নারী-পুরুষের জটলা। বোঝা গেলো, এরা সবাই বাবার ভক্ত-আশেকান।
দুপুরেও দৃশ্যের কোনো হেরফের ঘটলো না। একইরকমভাবে ফকির বাবা শুয়ে আছেন, আর ভক্তরা তাঁকে বেষ্টন করে আছে। এবার আর আগ্রহ দমিত রাখতে পারলাম না। সুস্থ হোক বা অসুস্থ হোক বা অন্য কিছুই হোক, জীবনের স্বাভাবিক প্রবাহ থেকে বিশ্লিষ্ট একজন বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি না হয় অজ্ঞাত কোনো কারণে একটা বোহেমিয়ান জীবনের অভ্যস্ততায় নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছেন। কিন্তু ভক্ত নামের এই বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষগুলো কিসের টানে কিসের আশায় তাঁর পিছে পিছে এমন অনির্দিষ্ট সময় ধরে অনিশ্চিত গন্তব্যে ঘুরছে? কোথাও কোনো সমস্যা না হলে কেন এই মানুষগুলো স্বাভাবিক জীবনস্রোত ছেড়ে এসে আরেকজন ছন্নছাড়া মানুষের পিছু পিছু এভাবে ভবঘুরের মতো ঘুরে বেড়াবে? এটা কি কোনো নেশা? কোনো মাদকতা? না কি অজ্ঞাত কোনো সমস্যা থেকে মুক্ত হবার অসহায় ভরসা? এই ধৈর্য্যরে রহস্য কোথায়? কৌতূহল নিবৃত্ত করতে দেখতে-শুনতে শিক্ষিত গোছের কয়েকজন ভক্তের পাশে আমিও বসে গেলাম। মৃদু আলাপচারিতা থেকে যতটুকু জানা যায়।
২
যার সাথে আলাপ করছিলাম, তিনি মিরপুরের একজন ব্যবসায়ী। বিষ্যুদবার মার্কেট বন্ধ থাকে বলে মনের টানে ফকির বাবার কাফেলায় এসে যোগ দিয়েছেন। সারাদিন বাবার পিছে পিছে কাটাবেন। দিন শেষে ফিরে যাবেন নিজের ঠিকানায়। পরদিন থেকে যথারীতি তাঁর নিজস্ব জীবন, ব্যবসায়।
ফকির বাবা সম্পর্কে তথ্য জানাতে গিয়ে তাঁকে বেশ সতর্ক ও অতিশ্রদ্ধাশীল মনে হলো। কী জানি প্রদত্ত তথ্যে কোনো ভুল হয়ে যায়, তাই বারেবারে নিজের অজ্ঞতা ও আশঙ্কা প্রকাশ করতে ভুল করলেন না। জানা গেলো, ফকির বাবাজির নাম হচ্ছে হযরত জুলফিকার আলী হায়দার। ভক্ত-আশেকানরা তাঁকে বাবা বলে ডাকে। পাকিস্তান আমলে নাকি বেশ বড়সড় পদে চাকরি করতেন। সবসময় নীরব থাকতে অভ্যস্ত তাঁকে খুব একটা কথা বলতে দেখা না গেলেও উচ্চশিক্ষিত অর্থাৎ স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষিত বাবাজি নাকি কয়েকটি ভাষায় পারদর্শী। এককালে সংসারও করেছিলেন, পুত্র-পরিজনও রয়েছে তাঁর। তবু কী জন্য হঠাৎ করে ঘরবিবাগী হয়ে গেলেন তার নিশ্চয়ই কোনো কারণ রয়েছে। কিন্তু সহজে এর সদুত্তর পাওয়ার আপাতত কোনো কায়দা নেই। কোনো নির্দিষ্ট অবস্থানে বেশিক্ষণ ঠাঁই না গাড়া এই ফকির বাবাজির আধ্যাত্মিক পর্যায়ে যে অতি উচ্চ মাপের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে এ ব্যাপারে তাঁর ভক্তরা একেবারে নিঃসন্দেহ, তা তাদের ভাবাবেগপূর্ণ কথাবার্তা থেকেই টের পাওয়া যায়। ঢাকার মোহাম্মদপুরে একটা খানকা রয়েছে তাঁর। কোনো আশেক-ভক্তের দেয়া বিশাল বাড়িটিতে তিনি কত সময় অবস্থান করেন সেটা বিবেচ্য না হলেও ওখানে নাকি সারাক্ষণই ভক্তদের আনাগোনা রয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে অবস্থাসম্পন্ন ভক্তদের পাঠানো খাবার-দাবারের আয়োজনও রয়েছে প্রচুর মাত্রায় বলে শোনা যায়। এছাড়া নূরজাহান রোডে এবং আরো কোথায় কোথায় যেন তাঁর আখড়া রয়েছে ভক্তদের দান করা বাড়িতে।
এতকিছুর পরও ফকির বাবাজির ঠিকানা মূলত রাস্তাই। লক্ষ্যহীন ছুটে চলায় বিরাম নেই। পেছনে পেছনে ভক্ত-আশেকানদের কাফেলা। কিন্তু কাউকে কিছু বলেনও না। হাতে তাদের বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য। কোথাও গিয়ে হয়তো বাবাজি বসে পড়লেন। সাথে সাথে সবাই। চলার পথে এই কাফেলায় কেউ কেউ এসে যোগ দেয়, কেউ হয়তো চলেও যায়। কিন্তু কোথাও বাবাজিকে একাকী দেখা যায় না। আলাপের প্রেক্ষিতে জানা গেলো, বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন সমস্যায় ভোগে বাবার কাফেলায় আসে। পিছু পিছু হাঁটতে থাকে অনিশ্চিত। এটা নাকি বাবার অনুকম্পা পাওয়ার একমাত্র উপায়। হয়তো কাউকে ইঙ্গিতে চলে যাবার ইশারা করলেন, ধরে নেয়া হয় তার মানত পূর্ণ হয়েছে। বিশাল এক তৃপ্তি নিয়ে ফিরে যায় সে। বুঝি সব মুশকিল আহসান হতে চললো এবার। এরপর আবারো হয়তো আসে তারা, সেটা একান্তই মনের টানে। একধরনের আধ্যাত্মিক তৃপ্তিবোধ থেকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, কেউ বাবাকে স্পর্শ করতে পারে না, কাউকে স্পর্শ করতে দেন না তিনি। দুনিয়াটা আসলেই বড় বিচিত্র। তার চেয়েও বিচিত্র বুঝি দুনিয়ার মানুষগুলাই!
হঠাৎ বাবাজি নড়েচড়ে উঠলেন। ঘুম ভেঙে গেছে হয়তো। একটু পরই তিনি উঠে বসলেন, দেয়ালে হেলান দিয়ে কুঁজো হয়ে। এদিক ওদিক তাকিয়ে কলার কাঁদিটার দিকে হাত বাড়ালেন। একটা কলা তাঁর হাতে ধরিয়ে দেয়া হলো। নিজ হাতেই ছিলে নিলেন তিনি। অতঃপর বাকি কলাগুলো ভক্তদের হাতে হাতে ভাগবাটোয়ারা হতে লাগলো। সাথে অন্যান্য খাবার-দাবারও। কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করলাম, ‘আচ্ছা, বাবাজির কি কখনো অসুখ-বিসুখ হয় না…?’ প্রশ্ন শেষ করা হয়নি, তার আগেই পাশের নেতা গোছের ভক্ত ভদ্রলোক বেশ উষ্মার সাথে কাউন্টার দিলেন, ‘আপনি এরকম আপত্তিকর প্রশ্ন করছেন কেন?’ আমি থতমত খেয়ে গেলাম। তিনি বলেই চলছেন, ‘আপনার এতো আগ্রহ থাকলে আপনি কিছুদিন আসতে থাকেন, তখন একটু একটু করে বুঝতে পারবেন!’ বুঝলাম, আপাতত আর কিছু জানার সুযোগ এ মুহূর্তে নেই।
একটু দূরেই আরেকটা জটলার মধ্যে একজন পরিচিতা চাকুরে ভদ্রমহিলাকে দেখে এগিয়ে গেলাম। কথার শুরুতেই বুঝলাম একেবারে অন্ধভক্ত তিনি। তাঁর বাসাও নাকি বাবাজির খানকা শরীফের কাছেই। চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো তিনি ভাবের ঘরে অবস্থান করছেন। বাবাজি সম্পর্কে আগ্রহের কথা জানাতেই অত্যন্ত স্বতঃস্ফূর্তভাবেই বললেন যে তাঁর কাছে একটা ম্যাগাজিন আছে যেখানে হায়দার বাবা সম্পর্কে অনেক তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। ওটা পড়লেই তাঁর সম্পর্কে অ-নে-ক কিছু জানা যাবে। ম্যাগাজিনটির নাম বলতে না পারলেও ওটা তিনি আমাকে ধার দেবেন এমন প্রতিশ্রুতি দিলেন। অতঃপর বাবাজি তাঁর কাফেলা নিয়ে রয়ে গেলেন, আমি আমার কাজে চলে গেলাম। পরে জানলাম যে সন্ধ্যার আগে আগে বাবাজি এখান থেকে ঊঠে গেছেন। কাফেলাও তাঁর পেছনে গেছে।
নির্দিষ্ট দিনে ভদ্রমহিলার অফিসে গেলাম ম্যাগাজিনটির জন্য। কথা অনুযায়ী তিনি আনেননি ওটা। যাক, অন্যদিনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ফিরে এলাম। কথাপ্রসঙ্গে একজন সহব্লগার অনুরোধ করেছিলেন হায়দার বাবাজিকে নিয়ে একটা ছবিপোস্ট দেয়ার জন্য। সাথে আমার কৌতূহল ছিলো কিছু প্রশ্ন খোঁজা। দ্বিতীয় দিন ম্যাগাজিনটির খোঁজে ভদ্রমহিলার ওখানে গিয়ে ভিন্ন পরিস্থিতি। তিনি আমাকে দেখেই বলে ওঠলেন, ‘দেখেন, ম্যাগাজিনটা আপনাকে দিতে হলে তাদের অনুমতি লাগবে।’
‘কাদের অনুমতি!’ আমি রীতিমতো বিস্মিত।
তিনি এর কোনো সুস্পষ্ট জবাবে না গিয়ে আমতা-আমতা করে তাঁর অপারগতা প্রকাশ করলেন। আমি আর খোঁচাখুঁচি করলাম না। কারণ আমার কিছু উত্তর পেতে দুয়ে দুয়ে চার হিসাব মেলার জন্য সম্ভবত এটাই স্বাভাবিক ছিলো। ধন্যবাদ জানিয়ে চলে এলাম। বুঝে গেলাম, ডালমে কুছ কালা হ্যয় !
৩
বাঙালির চিরায়ত লোকমানসে সহজিয়া ভাবের প্রভাব সেই আদিকাল থেকেই যথেষ্ট প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। প্রচলিত ধর্মগুলোর মধ্যে সৃষ্টিকর্তার সাথে মানু্ষের প্রভু-ভৃত্য সম্পর্কায়িত শাসন-অনুশাসনের বিপরীতে আউল-বাউল-ফকির-দরবেশ জাতীয় সহজিয়াপন্থী মতবাদীদের মধ্যে আশেক-মাশুক সম্পর্কের এক অদ্ভুত রহস্যময় বৈচিত্র্যের কারণেই বাঙালির আগ্রহ সবসময়েই এদিকেই বেশি দেখা গেছে। হয়তো এটাই বাঙালির প্রাণের ধারা। সংস্কৃতির গভীরেই এই ধারা প্রোথিত হয়ে আছে। বাঙালির নাড়িতে এই সহজিয়া সুরই চিরকাল টঙ্কার তোলে এসেছে, এখনো তোলে। এছাড়া আমাদের পিছিয়ে পড়া সমাজটাতে আদিম টোটেম-বিশ্বাসগুলোও বাঙালির ভাবজগতে সমভাবে বহমান বলে রহস্যময়তার সাথে অলৌকিকতাকে গুলিয়ে ফেলার প্রবণতা বাঙালি বৈশিষ্ট্যে খুবই ক্রিয়াশীল এখনো। ফলে পীর মুর্শিদ দয়াল ফকির গুরু আউল বাউল সাঁই-বন্দনা বাঙালির আধ্যাত্মিক তৃপ্তির সবচাইতে বড় অনুষঙ্গ আজো। আর তাই প্রচলিত ধর্মীয় অনুশাসনের সমান্তরালে পরস্পরবিরোধী হয়েও এই ধারাটি বাঙালি জীবনধারার সাথে মিশে গেছে ওতপ্রোতভাবে। কোথাও কোনো ছন্নছাড়া গোছের কিছু বা কাউকে দেখলে, যদি সেখানে কোন রহস্যের উপাদান উপস্থিত থাকে, তাহলে এতে কল্পনা মিশিয়ে অলৌকিকতা আবিষ্কার করে ফেলার সৃজনশীলতায় এ জাতির কখনোই ঘটতি পড়েনি। এর পর যা হবার তা-ই হয়। অসংখ্য সমস্যায় জর্জরিত বঞ্চিত পীড়িত মানুষের ঢল নামতে থাকে সেই গড়ে তোলা ফকির-দরবেশের কাছে, কিংবা আখড়ায় বা দরবারে। স্বাভাবিকভাবে যে সমস্যার সমাধান করায়ত্ত করা সম্ভব নয় বলে মনে হয়, তা সমাধানের ভার যে এসব তথাকথিত অলৌকিক মাধ্যমগুলোতে সমর্পণ করে ভারমুক্ত হবার অসহায় সান্ত্বনা খোঁজা মাত্র তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এভাবেই এই বাঙাল-ভূখণ্ড জুড়ে যত্রতত্র অগণিতহারে গজিয়ে উঠেছে কতো মাজার খানকা পীর দয়াল গুরুর আখড়া এবং আগামীতেও হয়তো আরো গজাতে থাকবে।
এসব ক্ষেত্রে যা হয়, অন্তত দু’ধরনের লোকের আনাগোনা বেড়ে যায়। সহজ সরল ভীরু অসহায় মানুষগুলোর কথা আর না বললাম। এরা আসে একটা অবলম্বনের খোঁজে। সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে সরল বিশ্বাসে ভক্তিভরে ফকিরবাবাদের কাছে আসে নিজেদের মানত পুরা করতে। আর এদের এই অসহায়ত্বকে পুঁজি করে এখানে সমাবেশ ঘটে সেইসব চতুর সুবিধাবাদী প্রতারক শ্রেণীর মানুষের, যাদের লক্ষ্য একটাই, যেভাবে যার কাছ থেকে যা পারে হাতিয়ে নেয়া। নগদ বাণিজ্যের এই প্রবণতাই মূলত এসব মাজার ব্যবসার একমাত্র প্রতিপাদ্য। তিলকে তাল বানিয়ে স্রেফ একজন বিকারগ্রস্ত অসুস্থ মানুষকেও সাক্ষাৎ কামেল পীর দরবেশ বানিয়ে ফেলায় সিদ্ধহস্ত ফেরেববাজ এরা। কখনো কখনো নিজেরাই ভণ্ডপীর সাজার উদাহরণও এদেশে কম নেই। একান্ত করিৎকর্মা সাগরেদ ভক্ত সেজে এরা শুধু যে বর্তমান ব্যবসার ক্ষেত্রটাকে সাবলীল করে তোলে তা-ই নয়, আগামীর অতিসম্ভাবনাময় একটা দুর্দান্ত ব্যবসার ক্ষেত্রও পাকাপোক্ত করে ফেলে। জীবিত ফকির বাবাকে একটা বাড়ি দান করে ফেলার উৎকৃষ্ট মাজেজা হয়তো এটাই যে, মৃত্যুপরবর্তী স্বর্ণডিম্ব প্রসবকারী একটা মাজার প্রতিষ্ঠার আগাম বীজ রোপণ করে নেয়া। কেননা শেষপর্যন্ত এসবের দেখভালের দায়িত্ব তো এই একনিষ্ঠ ভক্তদেরকেই নিতে হবে! এরা জানে, আমাদের দেশে সবচাইতে প্রতিশ্রুতিশীল ও অতিসম্ভাবনাময় ব্যবসা পণ্যটি হলো পীর ফকির সাধু দরবেশ ইত্যাদি। আর অতিমুনাফাকারী ব্যবসাক্ষেত্রটির নাম আশ্রম বা মাজার। তাকে যতই বিজ্ঞাপিত করা যাবে, ব্যবসায় শনৈ শনৈ উন্নতি অবশ্যম্ভাবী, একে ঠেকায় কে!
দেখতে একান্তই সাদাসিধে ভবঘুরে ফকির হায়দার বাবাকে নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে এ কথাগুলো বলা না হলেও তাঁর মৃত্যুপরবর্তী আখড়াটা যে অতিজৌলুসময় অসম্ভব ফলবান একটা মাজার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে না, তা কে বলবে! বরং সে সম্ভাবনাই তীব্রভাবে লক্ষ করা যায়। এতে কারো সন্দেহ থাকলেও থাকতে পারে। তা নিশ্চিত হতে হয়তো সে সময়টুকু পর্যন্ত অপেক্ষা করা যেতে পারে। কেননা সময় অনেক কিছুরই যথাযথ উত্তর সাজিয়ে রাখে আগামীর জন্যে।
রণদীপম বসু
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই। তা প্রকাশ করতে যদি লজ্জাবোধ হয়, তবে সে ধরনের চিন্তা না করাই বোধ হয় ভাল।’ -- প্রাচীন গ্রীক কবি ইউরিপিডিস (৪৮০-৪০৬ খ্রী.পূ.)
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৮ comments
অম্লান অভি - ১৮ এপ্রিল ২০১০ (১১:২০ অপরাহ্ণ)
রণদা, যদিও চোখে পড়েছে তাকে বহুবার কিন্তু তাকে নিয়ে লেখা আর এমন বিশদভাবে। নাহ্। সালাম। লাল সালাম। আপনি যে কি!
পড়তে পড়তে ভাবছিলাম মোহম্মদপুরের কথা কৈ? তারপর দেখি আরো কত কি। সত্যি আপনার শেষ ভয়টিই সবত্র বিরাজমান। আমাদের দেশের মাজার-দরবেশ খানা-শাস্ত্রীয় প্রতিষ্ঠান সেই সব সুবিধা ভোগীদের কাঞ্চন সংগ্রহশালায় পরিনত হয়।
অ.ট. আপনার ২ মেগাপিক্সেল’কে কি যে বলি! ওটা আমাদের অনেক কিছু দেখায়।
ওয়াইল্ড-স্কোপ - ১৯ এপ্রিল ২০১০ (১২:৪৪ পূর্বাহ্ণ)
খুব সাবলীল লেখা – পড়ে ভালো লাগলো। আপনার লেখনীর ব্যাপারে নতুন করে কিছু বলার নেই। একই সাথে, কেন যেন ঠিকানাহীন এই বৃদ্ধ লোকটির জন্য খুব খারাপও লাগলো।
শেখ কবিরুল হাসান - ১৯ এপ্রিল ২০১০ (১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ)
রণদা,শুভেচ্ছা জানবেন।পড়লাম বেশ মন দিয়েই।তবে আপনার লেখনির ধারের সঙ্গে চেহারার হুবহু মিল খুজে পাই।আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি ।
ব্লাডি সিভিলিয়ান - ১৯ এপ্রিল ২০১০ (১:১৩ অপরাহ্ণ)
জসিমউদ্দিনের ‘শিয়াল পীরের দরগা’ গল্পটার কথা মনে পড়লো।
ধন্যবাদ অনেকদিন পর আবারও এখানে লেখার জন্যে।
kheyalimon - ১৯ এপ্রিল ২০১০ (৩:৫২ অপরাহ্ণ)
লেখাটা পড়লাম এবং বেশ ভালো লাগলো আপনার গুছানো লেখার জন্যই
আমার যেটা মনে হয় কাকতালিয় কোন বিষয় দিয়েই এই ধরনের বাবা তৈরী হয়
ধন্যবাদ সুন্দর একটা বিষয় তুলে ধরার জন্য
আনিস মাহমুদ - ১৭ জুলাই ২০১০ (৩:১৪ অপরাহ্ণ)
মানুষের অন্ধত্ব আর তা-থেকে-তৈরি-হওয়া অসহায়তার মিলনেই জন্মায় এ ধরনের বাবা। সত্যিকারের নির্বাণ থেকে কতো আলোকবর্ষ দূরে যে এই বাবাদের বাস! কে বলবে সে কথা!
বিপ্লব রহমান - ১৮ জুলাই ২০১০ (৭:৩০ অপরাহ্ণ)
আহা রে ভাববাদের লীলাভূমি!
প্রায় আশৈশব হাঁটা বাবা–হায়দার মিয়াকে এভাবেই দেখে আসছি। নিজেকে এই বলে বুঝ দিয়েছি, পীরানির নেশায় মত্ত মানুষের বিপরীতে একজন আধ-পাগল ভবঘুরে বৃদ্ধর খানিকটা হলেও পুনর্বাসন হয়েছে, এই বা কম কি! 😉
রণোদাকে অনেক ধন্যবাদ।
আতাউর রহমান - ৩০ জানুয়ারি ২০১৪ (১২:৫৮ অপরাহ্ণ)
ঢাকা শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে কম-বেশি কেউ তাকে চেনেন। সবাই হয়তো ভালো মতো চিনেন না। কিন্তু ঢাকার বুকে পথ চলতে গিয়ে হঠাৎ ‘হাঁটা পীর’ ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের দেখে চমকে ওঠেননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ঢাকায় তিনি এতটাই চেনা মুখ। কিন্তু কে এই হাঁটা পীর?হাঁটা পীর বা হায়দার বাবার সত্যিকার পরিচয় তেমন কারোরই জানা নেই।
এ সম্বন্ধে অনুসন্ধান করতে গিয়ে খুঁজে পাওয়া গেল গত ১৮/২০ বছর ধরে তার সঙ্গে থাকা খোকন নামের এক ব্যক্তিকে। হায়দার বাবার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একসময় আমাদের বাবা হাবিব ব্যাংকে চাকরি করতেন। ছাত্র হিসেবেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। তিনি ইংরেজি সাহিত্য এবং আরবিতে ডাবল এমএ লাভ করেন। তার পরিবারের অন্য এক ভাই খুব নামকরা ডাক্তার। সেই ভাই এখন পাকিস্তানে বসবাস করছেন। হায়দার বাবা বা হাঁটা পীরের পূর্ব পুরুষ ছিলেন ইরানের। তারা সেখান থেকে পাকিস্তানে আসেন এবং পরবর্তীতে পাকিস্তান থেকে ভারতে এবং সর্বশেষ বাংলাদেশে।’ব্যাংকার হায়দার কিভাবে হায়দার বাবা হয়ে উঠলেন?
এ প্রশ্ন মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকল। শেষমেশ ইনিয়ে বিনিয়ে এই কথাও জিজ্ঞেস করা হলো খোকনকে। হায়দার বাবা সম্পর্কে তার আশপাশের লোকদের কিছু জিজ্ঞেস করা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। প্রথমত: তার সম্পর্কে কেউ কিছু বলতে চায় না। আর দ্বিতীয়ত যদি অসাবধানবশত পীরের কোনো অসম্মান হয় তাহলে সবাই তেড়ে আসতে পারে। তবু অনুরোধ করার পর মুখ খুললেন খোকন। বললেন- ‘হায়দার বাবা খুব ভালোভাবেই চাকরি-বাকরি করছিলেন। সবই চলছিল ঠিকঠাক মতো। কিন্তু হঠাৎ করেই তিনি চাকরির প্রতি উদাসীন হয়ে যান। এই উদাসীনতা তাকে ধীরে ধীরে সন্ন্যাস জীবনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। কী এক অলৌকিক চিন্তার সানি্নধ্যে সন্ন্যাস জীবন বেছে নিলেন হায়দার বাবা।’হায়দার বাবার পরিচয় আর উত্থান নিয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া দুষ্কর।
তারপরও যতটুকু জানা গেছে স্বাধীনতার পর হায়দার বাবা কাঁটাবন মসজিদের পাশে আশ্রয় নিয়ে প্রথমবারের মতো তার কর্মকাণ্ড শুরু করেন। তারপর মিরপুরে এক মেজরের বাড়িতে হায়দার বাবা তার কার্যক্রম চালাতে থাকেন। এভাবে যেতে থাকে বেশ কিছুদিন। তারপর হায়দার বাবা চলে আসেন মোহাম্মদপুর তাজমহল রোডের ১২/৯ নম্বর বাড়ির নিচতলায়। এখান থেকে দীর্ঘদিন ধরে তার সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে আসছে। হায়দার বাবা তার কার্যক্রম দিয়ে ধীরে ধীরে বেশকিছু ভক্ত এবং গুণগ্রাহী তৈরি করে নেন। এই ভক্ত গুণগ্রাহীরা হায়দার বাবার প্রতি এতটাই অনুরক্ত যে, তারা বাবার খুশির জন্য নূরজাহান রোডের ইউ-৪৭ লাইনে ৭ বছর আগে পৌনে তিন কাঠার রেডিমেড একটি বাড়ি কিনে দেন। বাড়িটি কিনতে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা লেগেছিল। গত সাত বছর ধরে হায়দার বাবার এ আস্তানাটিও বেশ জমে উঠেছে। বর্তমানে তাজমহল রোড এবং নূরজাহান রোডের দুটি আস্তানাই বেশ জমজমাট বলা চলে। হায়দার বাবার আস্তানায় প্রতিবছর একটি ওরসের আয়োজন করা হয়। অন্য যেকোনো ওরস থেকে এ ওরসের অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং ব্যতিক্রম। যেখানে অন্য ওরসগুলোতে গরু এবং মহিষের মাংস ব্যবহার হয় সেখানে হায়দার বাবার ওরসে ব্যবহার করা হয় খাসি। প্রতি বছর রজব মাসের ১০ তারিখে এ ওরস অনুষ্ঠিত হয়। ওরসে হায়দার বাবার প্রায় বিশ হাজার ভক্ত-গুণগ্রাহী উপস্থিত হন।
তাবৎ মানুষ প্রাতঃ কিংবা সান্ধ্যকালীন ভ্রমণের জন্য হাঁটাহাঁটি করলেও হায়দার বাবা হাঁটেন তার ধ্যানের জন্য। হায়দার বাবা হাঁটা শুরু করলে কখন যে কোথায় যান তার কোন ঠিক নেই। আবার হায়দার বাবা কখনো একাধারে ৭/৮ দিন পর্যন্ত হাঁটেন। আবার কখনো ১ মাস, দেড় মাস কিংবা ৬ মাসও দীর্ঘ হয়ে থাকে। জানা গেছে, হায়দার বাবার এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ হাঁটার রেকর্ড হচ্ছে টানা ছয় মাস। এই ছয় মাসের হাঁটার সময় তিনি পুরো ঢাকা শহর, সাভার, আশুলিয়া, আরিচা, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জের কাছাকাছি পর্যন্ত হেঁটেছেন। তবে হায়দার বাবার এ হাঁটার মধ্যেও রয়েছে কিছুটা বৈচিত্র্য। হাঁটতে হাঁটতে কিছুদূর যাওয়ার পর ক্লান্ত হয়ে পড়লে হায়দার বাবা বসে পড়েন। আর তখন তাকে ঘিরেই তার ভক্তরা হাতে বিভিন্ন খাবার নিয়ে তৈরি থাকেন।
হায়দার বাবার জীবনাচরণে আধুনিকতার কোনো ছোঁয়া নেই বললেই চলে। হায়দার বাবাকে আজ পর্যন্ত কেউই গোসল করতে দেখেনি। অপরিষ্কার থাকতে থাকতে তার মাথার চুল জটবেঁধে গেছে। ব্যক্তিজীবনে হায়দার বাবা তিন সন্তানের জনক। তার বড় ছেলের নাম লাডলা, সে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত, মেজো ছেলের নাম শাহজাদা। সে একটি কালার ল্যাবে চাকরি করে। আর ছোট ছেলে এখনো কিছু করছে না। তবে তার মধ্যে নাকি অনেকে হায়দার বাবার ছায়া খুঁজে পাচ্ছেন। হায়দার বাবা বা হাঁটা পীরের স্ত্রী যখন মারা যান তখন তার বড় ছেলের বয়স ছিল ১০/১১ বছর। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর হায়দার বাবা আর বিয়ে-শাদিও করেননি।
হায়দার বাবার গুণগ্রাহীদের তালিকাটাও বেশ বড়। হায়দার বাবার কছে এমনিতে সব শ্রেণীর লোকই আসেন। তবে এদের মধ্যে নাকি মহিলার সংখ্যাই বেশি। আর এসব মহিলার বেশির ভাগের সমস্যা থাকে দাম্পত্য কলহ। তারা সবাই সমাধানের আশায় ছুটে আসেন হায়দার বাবার কাছে। অনেকে আবার ব্যবসায়িক সাফল্যের তদবির নিয়ে আসেন। কথা হয় এমনই বেশ কয়েকজনের সঙ্গে। পুরান ঢাকার ধনাঢ্য এক ব্যবসায়ীর স্ত্রী জাহানারা। তিনি গত ১৩ বছর ধরে বাবার কাছে আসা-যাওয়া করছেন। তিনি দাবি কররেন বাবার কথামতো চলে তিনি সাফল্যও পেয়েছেন। ধানমন্ডি থেকে আনোয়ারা এসেছেন তার মেয়ের বিয়ের জন্য মানত করতে। আনোয়ারাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘আমি লোকমুখে তার কথা শুনেছি। আমার বিশ্বাস উপরে আল্লাহ আর নিচে হচ্ছেন বাবা (হায়দার বাবা)। তিনি যদি চান তাহলে মেয়ের বিয়ে অবশ্যই তাড়াতাড়ি হবে। এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার জন্য অনেক পিতা-মাতা এবং অভিভাবককে বাবার (হায়দার বাবার) কাছে দোয়া নিতে দেখা গেছে। কিছুদিন তার কাছাকাছি থাকলেই মনে হবে এমন কোনো পেশা কিংবা সমস্যার লোকজন নেই যারা হায়দার বাবার কাছে আসেন না। ঢাকা শহরের সীমা ছাড়িয়ে হায়দার বাবার খ্যাতি পৌঁছে গেছে অন্য জেলায়ও।
হায়দার বাবাকে নিয়ে বিভ্রান্তি আছে স্থানীয় লোকজনের মধ্যেও। তাজমহল রোডের বাসিন্দা আলহাজ আলতাফ হোসেন বলেন, ‘হায়দার বাবার বিষয়টা দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছি। মানুষ যে কেন তাকে নিয়ে এত মাতামাতি করে সেটা আমি বুঝতে পারছি না।’ হায়দার বাবা সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে সাবেক কমিশনার এবং বর্তমান কাউন্সিলর প্রার্থী আলহাজ সফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, ‘তাকে আমি দীর্ঘদিন ধরে চিনি। একটা ঘটনা মনে পড়ছে। সেটা বললে হয়তো অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে যাবে। একদিন আমি বাসা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নামার সঙ্গে সঙ্গে দেখা হয় হায়দার বাবার সঙ্গে। যদিও এসবে আমার কোনো বিশ্বাস নেই তবু চোখের সামনে পড়ার কারণে আমি তাকে সালাম দিই। তার প্রত্যুত্তরে তিনি আমাকে বলেছিলেন ভাগ (দূর হও)। সেই সঙ্গে অকথ্য ভাষায় গালমন্দও করেন। এরপরও তিনি কীভাবে পীর হন আমি বুঝি না। অনেকেই তাকে বিশ্বাস করে এটা তাদের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়।’ হায়দার বাবার সঙ্গে ঘুরলে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়। হায়দার বাবার ছবি তুলতে গিয়েও বাঁধে বিপত্তি। ভক্ত অনুরাগীরা তার ছবি তুলতে দেবে না। ক্যামেরার দিকে কেউ বোতল তাক করে, কেউবা আবার তেড়ে আসে। হাঁটা পীর হায়দার বাবার প্রতি সবার এমনই বিশ্বাস আর ভালোবাসা। সূত্রঃ forum.projanmo.com/topic16900.html