জামায়াতে ইসলামী’র ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম ১৪ই সেপ্টেম্বর ২০১০ বৃহঃস্পতিবার পুরানো পল্টনের জামায়াত-এর ঢাকা মহানগর কার্যালয়ের সামনে যারা যুদ্ধ অপরাধের বিচারের নামে ইসলামী শক্তি তথা জামায়াতে ইসলামীকে নির্মূল করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছেন । এ ব্যাপারে আজকের (১৫-১০-২০১০) প্রথম আলোতে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছেঃ
দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ’ করার ডাক দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, এই যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে তাঁরা স্বাধীনভাবে দেশ চালাতে চান। আধিপত্যবাদী শক্তি ও যারা ইসলামি শক্তিকে নির্মূল করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ করবে জামায়াত। এই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের গ্রেপ্তার হওয়া শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মুক্তির দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে পুরানা পল্টনে ঢাকা মহানগর কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে এ টি এম আজহার এ বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘আসুন, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ শুরু করি। এর মধ্য দিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্রকে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে। এই যুদ্ধে বিজয়ী হলে আমরা স্বাধীনভাবে বাংলাদেশ শাসন করতে পারব। ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে ঈমান-আকিদার ভিত্তিতে দেশ চালাতে পারব। যুদ্ধ করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ অবশ্যই হবে।’ তবে জামায়াত প্রথম মুক্তিযুদ্ধ কত সালে করেছে, এ বিষয়ে কিছু বলেননি আজহারুল ইসলাম।
মানবতাবিরোধী অপরাধে গ্রেপ্তার হওয়া জামায়াতের নেতাদের নির্দোষ দাবি করে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ’৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত তাঁরা বাংলাদেশেই অবস্থান করছিলেন। তখন বাংলাদেশের কোনো থানায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা বা সাধারণ ডায়েরি হয়নি।
এ টি এম আজহার বলেন, ‘আইন লঙ্ঘন করে আমাদের নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা যুদ্ধাপরাধ করবেন তো দূরের কথা, তাঁরা বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো মানুষ। আমাদের আমির ও সেক্রেটারি জেনারেল চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তিনটি মন্ত্রণালয় পরিচালনা করেছেন। যারা কথায় কথায় আমাদের ভুল ধরে, সেই পত্রিকাগুলো আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধে একটি টাকাও আত্মসাতের প্রমাণ দেখাতে পারেনি। তার মানে, তাঁরা সৎ লোক। আর সৎ লোক মানেই তাঁরা খুন করতে পারেন না।’
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির সাংসদ হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, সরকার স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ চালাচ্ছে। তারা দেশ নিয়ে তামাশা শুরু করেছে। এটা করতে দেওয়া যাবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুজিবুর রহমান বলেন, ‘সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে যে ট্রাইব্যুনাল করেছে, তা দলীয় ট্রাইব্যুনাল। দলীয় ট্রাইব্যুনাল দিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় লোকদের বিচার করুন। জামায়াতের নেতাদের বিচার করার অধিকার এই ট্রাইব্যুনালের নেই।’
জামায়াতের কর্মপরিষদের সদস্য আবদুল হালিম বলেন, সরকার যদি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের কথা আগে বলত, তাহলে তারা নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসতে পারত না।
ইতিমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোতে তথাকখিত দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক হিসাবে এ টি এম আজহারুল ইসলামের নাম প্রকাশিত হয়েছে। একটি স্বাধীন দেশে এবং সংবিধান সম্মতভাবে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সরকারের অধীনে জামায়াত-এর সেক্রেটারী জেনারেল আজহারুল ইসলামের যুদ্ধের ডাক দেওয়ার মত দৃষ্টতা আমাদের আতংকিত করে তোলে।জনাব আজহারুল তার বক্তব্যে, জামায়াত-শিবিরের নেতা কর্মীদের তার ঘোষিত দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে আহবান জানান। তাহলে, ‘যুদ্ধ অপরাধের বিচার ঠেকাতে জামায়ত-এর ১১ কৌশল’ কি এ টি এম আজহারুল ইসলাম-এর তথাকথিত দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি ? ৩০শে নভেম্বর আন্তর্জাতিক ধর্মজীবি জাকির নায়েকের ১২ দিন ব্যাপি বাংলাদেশ সফরের পিছনে আপনার ঘোষিত দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের সাথে কি সম্পর্ক আছে ? তা আপনি না জানালেও আমরা উদ্গাটন করবই ।
জনাব আজহারুলকে বলছি, যুদ্ধ অপরাধের বিচার আর ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ এক কথা নয়। আপনার জানা দরকার, এই সরকার যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার করার অঙ্গীকার করেই জনগনের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। সরকার এখন ইচ্ছে করলেই যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া থেকে সরে আসতে পারবে না।
তাই, জামায়াত-এর এই তথাকথিত দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি মোকাবেলায় আমরা সবাই প্রস্তুত। আপনাদের হুমকিতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত একটুও নড়বে না। যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার বাংলার মাটিতে হবেই………….