'আঘাতের তালিকা' যাদের কাছে 'উইশলিস্ট' তারা নরপিশাচ -- এদেরকে প্রতিহত করুন [...]

লেখক হিসেবে আমি খুব তালিকার ভক্ত : চিন্তাশীলতা ও নান্দনিকতার নানা সময়ের নানা প্রয়োজনের তালিকা আমি তৈরি করি অন্যদের তৈরি করা তালিকাও খুঁজে দেখি। কিন্তু এ কোন তালিকা যা প্রণয়ন করে এই পৃথিবী থেকে কাকে কাকে সরিয়ে দিতে হবে, এ কোন নৃশংসতা যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে 'আঘাতের তালিকা' নামে প্রণীত ও অনুসরিত এবং বাংলাদেশে যা চলছে আজো সব মুক্তিসংগ্রামীকে 'আঘাতের তালিকা'য় তুলে এনে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে হবে? এই 'আঘাতের তালিকা' যাদের কাছে 'উইশলিস্ট' তারা নরপিশাচ -- এদেরকে প্রতিহত করুন। যদি তা করতে না পারেন তাহলে এমন এক পৃথিবীতে বসবাস করবেন যেখানে আমার বা আমাদের মতো যারা 'চিন্তাশীলতা ও নান্দনিকতার তালিকা' বানাতে ভালবাসেন তাদেরকে ছাড়াই জীবনযাপন করবেন। আমাকে যারা ব্যক্তিগত ভাবে চেনেন বা আমাদেরকে যারা ব্যক্তিগত ভাবে চেনেন তাদের সবাই না হলেও অনেকে নিশ্চয় মানবেন আমাকে ছাড়া বা আমাদেরকে ছাড়া আপনাদের জীবন কত নিরানন্দময় হবে।

ভাই ভাই[...]

হিন্দু মুসলমান ভাই ভাই, বোনদের কারণে সম্প্রীতি নাই।

...২০১২-এর ১১ জানুয়ারিও হয়তো ২০০৭ সালের পুরানো চেহারায় ফিরে যেতে পারত। এ ধরণের অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটানোর মূল ধাত্রী বলে যাদের মনে করা হয় তাদের উৎসাহিত করার চেষ্টাও হয়েছে নানাভাবে। ‘সামরিক বাহিনীর মেধাবী কর্মকর্তারা গুম খুনের শিকার হচ্ছেন’, রাজনৈতিক অঙ্গনের এরকম বক্তব্যে ও লিফলেটে সেনাবাহিনীতে ভীতি-অসন্তোষ এবং বিক্ষোভ দেখা দেয়া অস্বাভাবিক ছিল না। নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরিরের পক্ষ থেকে তো সেনাবাহিনীর প্রতি সরাসরি বর্তমান সরকারকে অপসারণের আহ্বানই রাখা হয়েছিল। ...

একটি ক্রান্তিদিনই বলা যায় বোধকরি এবারের ১১ জানুয়ারিকে। এ দিনে আমাদের মনে হয় ২০০৭ সালের কথা, সামরিক বাহিনীশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উত্থানের কথা। সামরিকতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতায় একনায়কতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে দিয়েই সম্ভব রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের পথ বন্ধ করা-এরকম একটি পাকিস্তানবাদী, সামরিকতান্ত্রিক ধারণা ফিরে আসতে শুরু করে ওই ১১ জানুয়ারি থেকে। এবং এ ধারণার পালে বাতাস যোগাতে থাকেন সুশীল নাগরিক ও বুদ্ধিজীবীরা। সেই অর্থে, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সুশীলতন্ত্র ও সামরিকতন্ত্রের গাঁটছড়া বাঁধার দিবসও বটে। ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারিও একইভাবে আলোচিত হয়ে উঠেছে। জনগণ দেখেছে, এদিন একদিকে গোলাম আযম গ্রেফতার হচ্ছেন, অন্যদিকে খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে যাচ্ছেন, একইসঙ্গে আবার বিএনপি বিবৃতি দিয়ে জানাচ্ছে, সরকার ‘আইএসপিআরকে দিয়ে উস্কানি দিচ্ছে (প্রথম আলো, ২৯ পৌষ ১৪১৮)।’ রাজনীতির এরকম বড় বড় ঘটনাগুলির বাইরে ওইদিন দেখা গেছে, সিআইডি অভিযোগপত্র দিচ্ছে আওয়ামী লীগের কর্মী ইব্রাহিম আহমেদ খুনের মামলায় ভোলা-৩ আসনের সরকারদলীয় সাংসদ নূরন্নবী চৌধুরী শাওনকে বাদ দিয়ে। সাক্ষী করা হয়েছেন নূরন্নবী শাওনকে (প্রথম আলো, ২৯ পৌষ ১৪১৮)। এখন জানা যাচ্ছে, এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার খন্দকার মোঃ আবদুল হালিম বিয়ে করেছেন এমপি শাওনের আপন মামাতো বোনকে (মানবজমিন, ১ মাঘ ১৪১৮)। নারায়নগঞ্জে এইদিন ‘যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ কমিটি’র নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে (প্রথম আলো, ২৯ পৌষ ১৪১৮) সরকার আমাদের আবারও নিশ্চিত করেছে, গণতন্ত্র আর সরকারি গণতন্ত্র দু’ রকম গণতন্ত্র, সরকারি গণতন্ত্রে নাগরিক অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর নির্যাতন জায়েজ করা আছে। অনেকেই হয়তো একমত হবেন না, তবে মনে হচ্ছে, এসব ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল আইএসপিআর’এর বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি’র বিবৃতিটি। এ বিবৃতি থেকে মনে হওয়া স্বাভাবিক, বাংলাদেশের প্র্রধান বিরোধী দল বিএনপি সামরিক বাহিনীকে নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং তারা মনে করে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে থাকায় আইএসপিআর’কে বিরোধী দলীয় নেত্রীর বক্তব্যের অপব্যাখ্যা দেয়ার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা মনে করছেন, বেসামরিক পর্যায়ে যেমন গুম খুন চলছে, সামরিক সামরিক কর্মকর্তারাও তেমনি গুম হয়ে যাচ্ছেন (প্রথম আলো, ২৭ পৌষ ১৪১৮)। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিএনপি’র এ অভিযোগ খুবই স্পর্শকাতর অভিযোগ। সামরিক বাহিনীতে কারও বিরুদ্ধে কোনও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে সে অপরাধ বিচারের জন্যে বাহিনীটির নিজস্ব আইন আছে। কিন্তু খালেদা জিয়ার এ অভিযোগ…

জামায়াত-শিবির আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবে,- ঠিক এরকম আশঙ্কাই জেগেছিল যুদ্ধাপরাধী বিচারের দাবি ক্রমাগত জোরদার হওয়ার ঘটনা থেকে; এখন দেখা যাচ্ছে গ্রেফতার হওয়ার আগে-আগে জামাত নেতা কামারুজ্জামানও ওরকমই বলে গেছে[....]

এক. জামায়াত-শিবির আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবে,- ঠিক এরকম আশঙ্কাই জেগেছিল যুদ্ধাপরাধী বিচারের দাবি ক্রমাগত জোরদার হওয়ার ঘটনা থেকে; এখন দেখা যাচ্ছে গ্রেফতার হওয়ার আগে-আগে জামাত নেতা কামারুজ্জামানও ওরকমই বলে গেছে, দলের কর্মীদের প্রতি সংবাদমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে পরোক্ষে ওরকম এক নির্দেশই রেখে গেছে। ক্রিশ্চিয়ান সাইন্স মনিটর পত্রিকার সঙ্গে ওই আলাপচারিতায় কামারুজ্জামান বলেছে, নিজেদের নির্দোষ প্রমাণের জন্যে তারা আইনি পন্থাই অবলম্বন করবে, তবে সরকার যদি তাদের হয়রানি করে তা হলে বলা যায় না, তরুণ অনুসারীরা চরমপন্থা বেছে নিতে পারে। কামরুজ্জামান আরও বলেছে, এরকম স্পর্শকাতর ইস্যুতে অপেক্ষাকৃত তরুণদের নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। এমনও হতে পারে যে, এদের অনেকে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যেতে পারে। অবশ্য ক্রিশ্চিয়ান সাইন্স মনিটরের কাছে কামারুজ্জামান এরকম আশঙ্কা প্রকাশের অনেক আগে থেকেই আমরা দেখে আসছি, জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ আন্ডারগ্রাউন্ডের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। জেএমবির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক খুবই সুস্পষ্ট। মুক্তিযুদ্ধে গোলাম আযম, নিজামী, মুজাহিদ, কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লারা খুনি হওয়ার দীক্ষা নিয়েছিল; আর উত্তরসূরি শিবিরপ্রজন্মের জন্যে তারা রগকাটার প্রশিক্ষণই যথেষ্ট নয় জেনে উন্মুক্ত করেছিল জেএমবি। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিংবা আওয়ামী লীগের কোনও কোনও নেতা যতই শিবিরপ্রজন্মকে ছবক দিন না কেন, তোমরা তো বাবা যুদ্ধাপরাধী নও, তোমরা কেন, এইসব যুদ্ধাপরাধীদের দায় নিতে যাবে- এসবই বিফলে যাবে; কেননা যুদ্ধাপরাধীরা তাদের মতো করেই প্রস্তুত করেছে তাদের পরবর্তী বাহিনীকে। কামারুজ্জামানের এই কথা থেকে বোঝা যাচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যারা চান, তাদের কাজের পরিধি আরও বেড়ে গেছে। কামারুজ্জামান গ্রেফতারের আগে ঘোষণা দিয়ে গেল, আচানক হামলা হবে, একাত্তরের মতোই; আবারও আমাদের সবচেয়ে উজ্জ্বল প্রতিভাবান দেশপ্রেমিক মানুষগুলিকে রাতের অন্ধকারে অথবা দিনের আলোতেই গুপ্ত হামলা চালিয়ে হত্যা করা হবে, যুদ্ধাপরাধী পালের গোদাগুলিতে বাঁচানোর জন্যে তাদের চেলারা মাটির নিচে চলে গেলেও যতটুকু করা সম্ভব সব টুকুই করবে। তাই এদের যদি আমরা থামাতে চাই, আমাদেরও সঠিক প্রস্তুতি নিতে হবে। শান্তির ললিত বাণী কখনো কখনো ব্যর্থ পরিহাস হয়ে ওঠে, আমাদের বোধহয় আমরা অচিরেই সেরকম এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। দেখা যাচ্ছে, মুখে জামায়াতে ইসলামী যতই বলুক না কেন- যুদ্ধাপরাধী ইস্যু নিয়ে সরকার রাজনীতি করছে, আসলে সবচেয়ে বেশি রাজনীতি তারাই করেছে, তাই সব রকম রাজনৈতিক প্রস্তুতিই তাদের নেয়া হয়ে গেছে। এমনকি ভূ-গর্ভে গিয়ে রাজনীতি করার মতো যাবতীয় প্রস্তুতিও…

বাংলাদেশকে যদি রাজনৈতিক মুসলমানের মন শাসন করে তবে সেই হারের মধ্যে বেঁচে থাকার ঔদ্ধত্য দেখিয়ে যেতেই হবে যতদিন বেঁচে থাকবে বাংলাদেশের মুক্তবুদ্ধি, মুক্তিযুদ্ধ ও প্রগতির পথের সংস্কৃতি।[...]

তার পা পেছনে। দেশ সারা পৃথিবী। অর্থনীতি, প্রতিদিনের প্রয়োজনে মুক্তবাজারের বিনিয়োগ ব্যবসা লভ্যাংশ তার খুবই পছন্দের । প্রযুক্তি, আল্লাহ ও সৎমানুষের শাসনে তার বিশ্বাস। তাকে ঘিরেই জেহাদি জঙ্গির কাছ থেকে ফিরতে চায় – ভারত, চীন, ইউরোপ, রাশিয়া ও আমেরিকা। এই চাওয়ার সাথে বাংলাদেশকে মেলানো যায় না। তুরস্ক, মালেশিয়া, সৌদি আরব, মধ্যপ্রাচ্যের তেলওয়ালা দেশগুলো, মিশর, মরক্কো, আলজিরিয়া, মধ্য এশিয়ার দরিদ্র দেশগুলো, সুদান, ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরান, ইরাক, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া… এরকম আরো আরো মুসলিম দেশের কোনো একটির সাথে বাংলাদেশের কোনো মিল নেই। কিন্তু কোনো মিল না থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশকে যদি রাজনৈতিক মুসলমানের মন শাসন করে তবে সেই হারের মধ্যে বেঁচে থাকার ঔদ্ধত্য দেখিয়ে যেতেই হবে যতদিন বেঁচে থাকবে বাংলাদেশের মুক্তবুদ্ধি, মুক্তিযুদ্ধ ও প্রগতির পথের সংস্কৃতি। জামাতের মধ্যে এবং আরো বড় করে দেখলে বিএনপির মধ্যে ও আরো দুঃখজনক রূপটি দেখতে হলে আওয়ামী লীগের মধ্যে রাজনৈতিক মুসলমানের মনের অস্তিত্ব কড়িকোমলে প্রোথিত। আমাদের কোনো সম্ভাবনা নেই – এই রাজনৈতিক ইসলামের ‘মেইনস্ট্রিম’ আমাদের মধ্যে আছেই – সেই পথের সবকিছু আমাদের দেশে তৈরি হয়েই আছে। চারপাশের এই ‘মেইনস্ট্রিম’কে যখন দেখি, তখন সবচেয়ে করুণ যেছবি দেখি তা হল মানচিত্র ভূগোল বলে যে কিছু আছে – ইতিহাস তো বাদই দিলাম, কারণ কারো কারো মতে তাতো মৃত – তা মনেই হয় না। একেক জন আল্লাহ প্রেরিত বঙ্গসন্তান, আর এতোই বেশি তিনি এঅঞ্চলে পাঠিয়েছেন, যাদের আবার তার ইচ্ছায় কৈশোরযৌবনকালে নারীপুরুষনির্বিশেষে পাচারবাস ঘটে। কিন্তু এরাই সব ভুলে কথিত অকথিত কোরান ও সুন্নার আলোকে সর্বঘটে আল্লার শাসন কায়েম করতে চাইছে। এদের মধ্যে জেহাদি যারা তাদের এখন সরিয়ে নেয়া হয়েছে ‘মেইনস্ট্রিম’এর রাজনীতির নামে ও অর্থনৈতিক শক্তিতে এবং ইসলামিক ন্যায়ের ইউটোপিয়ায় এখন এরা ‘আশরাফুল মাকলুকাত’ বা ইসলামি ‘হোমো সেপিয়েন্স’ হয়ে উঠেছে। কিন্তু বাংলাদেশে যদি একটি কাজ করা যায়, যদি যুদ্ধাপরাধীর বিচার করা যায়, যদি সত্যিই তা সম্ভব হয়, তাহলে এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক মুসলমানের মনে একটা বড় ধরনের আঘাত আমরা হানতে পারব। সেআঘাত শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বরাজনীতিতেও তার প্রভাব ফেলবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বাংলাদেশের সাথে পৃথিবীর আর কোনো মুসলমান দেশকে কেউ মেলাতে পারবে না, সেই দেশ বেতাল হয়েও যদি রাজনৈতিক মুসলমানের মনে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.