এক.
জামায়াত-শিবির আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবে,- ঠিক এরকম আশঙ্কাই জেগেছিল যুদ্ধাপরাধী বিচারের দাবি ক্রমাগত জোরদার হওয়ার ঘটনা থেকে; এখন দেখা যাচ্ছে গ্রেফতার হওয়ার আগে-আগে জামাত নেতা কামারুজ্জামানও ওরকমই বলে গেছে, দলের কর্মীদের প্রতি সংবাদমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে পরোক্ষে ওরকম এক নির্দেশই রেখে গেছে। ক্রিশ্চিয়ান সাইন্স মনিটর পত্রিকার সঙ্গে ওই আলাপচারিতায় কামারুজ্জামান বলেছে, নিজেদের নির্দোষ প্রমাণের জন্যে তারা আইনি পন্থাই অবলম্বন করবে, তবে সরকার যদি তাদের হয়রানি করে তা হলে বলা যায় না, তরুণ অনুসারীরা চরমপন্থা বেছে নিতে পারে। কামরুজ্জামান আরও বলেছে, এরকম স্পর্শকাতর ইস্যুতে অপেক্ষাকৃত তরুণদের নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। এমনও হতে পারে যে, এদের অনেকে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যেতে পারে।
অবশ্য ক্রিশ্চিয়ান সাইন্স মনিটরের কাছে কামারুজ্জামান এরকম আশঙ্কা প্রকাশের অনেক আগে থেকেই আমরা দেখে আসছি, জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ আন্ডারগ্রাউন্ডের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। জেএমবির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক খুবই সুস্পষ্ট। মুক্তিযুদ্ধে গোলাম আযম, নিজামী, মুজাহিদ, কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লারা খুনি হওয়ার দীক্ষা নিয়েছিল; আর উত্তরসূরি শিবিরপ্রজন্মের জন্যে তারা রগকাটার প্রশিক্ষণই যথেষ্ট নয় জেনে উন্মুক্ত করেছিল জেএমবি। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিংবা আওয়ামী লীগের কোনও কোনও নেতা যতই শিবিরপ্রজন্মকে ছবক দিন না কেন, তোমরা তো বাবা যুদ্ধাপরাধী নও, তোমরা কেন, এইসব যুদ্ধাপরাধীদের দায় নিতে যাবে- এসবই বিফলে যাবে; কেননা যুদ্ধাপরাধীরা তাদের মতো করেই প্রস্তুত করেছে তাদের পরবর্তী বাহিনীকে।
কামারুজ্জামানের এই কথা থেকে বোঝা যাচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যারা চান, তাদের কাজের পরিধি আরও বেড়ে গেছে। কামারুজ্জামান গ্রেফতারের আগে ঘোষণা দিয়ে গেল, আচানক হামলা হবে, একাত্তরের মতোই; আবারও আমাদের সবচেয়ে উজ্জ্বল প্রতিভাবান দেশপ্রেমিক মানুষগুলিকে রাতের অন্ধকারে অথবা দিনের আলোতেই গুপ্ত হামলা চালিয়ে হত্যা করা হবে, যুদ্ধাপরাধী পালের গোদাগুলিতে বাঁচানোর জন্যে তাদের চেলারা মাটির নিচে চলে গেলেও যতটুকু করা সম্ভব সব টুকুই করবে।
তাই এদের যদি আমরা থামাতে চাই, আমাদেরও সঠিক প্রস্তুতি নিতে হবে। শান্তির ললিত বাণী কখনো কখনো ব্যর্থ পরিহাস হয়ে ওঠে, আমাদের বোধহয় আমরা অচিরেই সেরকম এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।
দেখা যাচ্ছে, মুখে জামায়াতে ইসলামী যতই বলুক না কেন- যুদ্ধাপরাধী ইস্যু নিয়ে সরকার রাজনীতি করছে, আসলে সবচেয়ে বেশি রাজনীতি তারাই করেছে, তাই সব রকম রাজনৈতিক প্রস্তুতিই তাদের নেয়া হয়ে গেছে। এমনকি ভূ-গর্ভে গিয়ে রাজনীতি করার মতো যাবতীয় প্রস্তুতিও তারা নিয়ে ফেলেছে- তাদের তরুণ সদস্যদের তারা প্রস্তুত করেছে জঙ্গি তৎপরতার জন্যে।
দুই.
জামায়াতে ইসলামীর ওই প্রস্তুতির তুলনায় মতিউর রহমান নিজামীসহ পাচজন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীকে গ্রেফতারের ঘটনায় আমাদের চোখে-মুখে-মনে যত আনন্দই জাগুক না কেন, বলার অপেক্ষা রাখে না, এসব গ্রেফতারের ক্ষেত্রে সরকার এগুচ্ছেন একেবারেই নড়বড়ে পথ ধরে। এমনকি আমরা যারা এ বিচার চাই, বামপন্থী যে-সব দল এর বিচার চান, তাদের প্রস্তুতিও খুবই সামান্য। প্রস্তুতি সামান্য, কিন্তু প্রত্যাশা বিশাল। যে সত্যটি এখন আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে সেটি হলো, এইসব গ্রেফতারের ক্ষেত্রে যুদ্ধাপরাধী বিচার ট্রাইব্যুনালের কোনও ভূমিকা নেই। অন্য কথায়, এসব গ্রেফতারের ভিত্তি খুবই দুর্বল এবং এর ফলে আমরা বড় জোর এইসব যুদ্ধাপরাধীকে বড় জোর কয়েকমাস রিমান্ডে আনানেয়ার টিভিচিত্র ও সংবাদ পাঠ করতে পারব; কিন্তু শেষমেষ এরা সবাই জামিন পেয়ে যাবে।
এইসব গ্রেফতার প্রায় ৪০ বছর ধরে বিচারের আশায় অপেক্ষারত মানুষকে আনন্দিত করেছে, মন্ত্রী হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের ঘুরতে দেখে অপমান ও ক্রোধে অবনত জনগণকে উদ্বেলিত করেছে, তাদের মনে এই আবেগ আরো দানা বেধেছে যে এদের বিচার করা সম্ভব এবং বিচার হতেই হবে। কিন্তু পাশাপাশি এ-ও সত্য যে, এর ফলে যুদ্ধাপরাধী বিচারের ইস্যুটি আরও প্রলম্বিত হওয়ার এবং একে ঘিরে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাজনৈতিকভাবে জল ঘোলা করার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। এইসব গ্রেফতারের ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী কোনও প্রস্তুতি থাকুক বা না-থাকুক, সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে অঘোষিত এক যুদ্ধে নেমে পড়েছেন। আর বলাই বাহুল্য, আমরা যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাইছি তারাও এ পরিস্থিতিতে জড়িয়ে পড়েছি। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মামলাকে এ-সরকার এত বেশি গুরুত্বের জায়গায় নিয়ে গেছে যে, ভবিষ্যতে প্রতিক্রিয়াশীলদের জন্যে কবর থেকে আবুল ফজল আর নাজমুল করিমকে তুলে এনে মানবধর্ম বই আর ধর্ম ও বিজ্ঞান নিবন্ধ লেখার অপরাধে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার দুয়ার পর্যন্ত খুলে গেল, আরজ আলী মাতুব্বরের কথা তো বলাই বাহুল্য। হুমায়ূন আজাদ পরিহাস করে এরকম একটি কথা লিখেছিলেন যে, এ শতাব্দীর সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয় হলো ধর্মীয় অনুভূতি- সামান্য স্পর্শেই এরা থরথরিয়ে কাঁপতে থাকে। তার সেই থরথরে কাঁপুনি থামানোর পয়লা পদক্ষেপ হিসেবে মামলা করে রিমান্ডে নেয়ার পথটি বাতলে দিল আওয়ামী লীগ সরকার।
তিন.
হতে পারে, জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের গ্রেফতারের বিকল্প কোনও পথ সরকারের সামনে খোলা ছিল না। নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ যে-অঙ্গীকারগুলি করেছিল, তার মধ্যে সবচেয়ে স্পর্শকাতর অঙ্গীকারটি ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা। এটি স্পর্শকাতর কেবল এই জন্যেই নয় যে, এটি একটি প্রায়-কঠিন কাজ, যেটি সম্পন্ন করার জন্যে একদিকে প্রয়োজন রাজনৈতিক কমিটমেন্টের, অন্যদিকে প্রয়োজন আইনের প্রতি দ্বিধাহীন আনুগত্যের। এটি স্পর্শকাতর এ কারণেও যে, এই দাবিটি মূলত তরুণ ভোটারদের দাবি, এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তারুণ্যের তীব্র আবেগ এবং সেই আবেগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিচারের প্রত্যাশায় নিভৃতে কেঁদে ফেরা পূর্বপ্রজন্মের অবরুদ্ধ গ্লানি।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্যে এখন আমাদের রাজনৈতিক কমিটমেন্টের কথাও ভাবতে হচ্ছে,- কেননা অন্যান্য দেশের যুদ্ধাপরাধী ও যুদ্ধাপরাধ বিচারের ক্ষেত্রে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল, আমাদের দেশের পরিস্থিতি তা থেকে একেবারে আলাদা। আর কোনও দেশেই যুদ্ধাপরাধীরা রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ পায়নি, তাই তাদের বিচার করার ক্ষেত্রে সেসব দেশের সরকারকে তেমন বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীরা রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সাড়ে তিন যুগে তারা এত বড় এক রাজনৈতিক দানব হয়ে উঠেছে যে, আমাদের তাদের কাছ থেকে পাল্টা রাজনৈতিক হুংকার শুনতে হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে এই দানবরা তাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হওয়ার কেচ্ছা শুনাচ্ছেন। সঙ্গতকারণেই দেখা যাচ্ছে, যুদ্ধাপরাধসংক্রান্ত বিচার কাজের জন্যে প্রস্তুত হওয়ার আগেই সরকারকে জড়িয়ে পড়তে হচ্ছে তীব্র এক প্রতিকুল রাজনৈতিক প্রচারণার মুখে। যে রাজনৈতিক প্রচারণাকে সামাল দেয়ার একটাই পথ- অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের দ্রুত বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করানো। কিন্তু এটুকুতেই সরকার রেহাই পাবেন ভাবলে ভুল হবে। তিন যুগ ধরে যুদ্ধাপরাধীরা তাদের রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে তুলেছে, সাংগঠনিক ভিত্তি গড়ে তুলেছে, অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে তুলেছে। সরকারকে যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে হলে এইসব ভিত্তি থেকে যে-প্রতিরোধ আসতে শুরু করেছে বা আসবে, সে-সবও প্রতিরোধ করতে হবে।
আর শুধু সরকার কেন, সরকারের সঙ্গে যত রাজনৈতিক বিরোধই থাকুক না কেন, আমরা যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই, তাদেরও এই প্রতিরোধের শিকার হতে হবে এবং তাই পাল্টা প্রতিরোধের দিকটি চিন্তা করতে হবে। তা না করে, যদি নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে থেকে আমরা যুদ্ধাপরাধ বিচারের খেলা দেখতে থাকি, তা হলে পরে হয়তো যুদ্ধাপরাধ বিচারে আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে আমরা খুব ভালো ভালো অনেক জ্ঞানগর্ভ বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করতে পারব, কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কখনোই করতে পারব না। বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করার জন্যে যারা অপেক্ষা করছেন, করতে থাকুন; আওয়ামী লীগকে ভাবে হোক আর চাপে হোক যুদ্ধাপরাধী বিচারের জন্যে বাধ্য করাটাই এখন হওয়া উচিত বিচারাকাঙ্ক্ষীদের মৌলিক কাজ। কেননা, অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বলতে পারি, ভবিষ্যতে সরকারগঠনের উপাদান রয়েছে এমন অন্য কোনও রাজনৈতিক দলেরই যুদ্ধাপরাধ বিচারের এজেন্ডা নেই। যুদ্ধাপরাধ বিচারের ব্যাপারে বিএনপির এজেন্ডা তাদের দলীয় গঠনতন্ত্র সংশোধনের মধ্যে দিয়েই বোঝা গেছে- ২০০৯ সালে দলের সর্বশেষ কাউন্সিলে তারা যুদ্ধাপরাধীদের দলের সদস্যপদ দেয়ার পথ নিশ্চিত করতে এ সংক্রান্ত বিধিনিষেধযুক্ত ধারাটি গঠনতন্ত্র থেকে বাতিল করেছে। এর মধ্যেই তারা জামায়াত নেতাদের গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়েছে এবং যুদ্ধাপরাধী হিসেবে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হলে তাদের সাংগঠনিক অবস্থানটি আরও সুনিশ্চিত হবে।
চার.
মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশে ধর্মীয় রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ছিল। যুদ্ধাপরাধীরা আত্মগোপনে ছিল, গোলাম আযমদের মতো বড় বড় সাপগুলি বিদেশে পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধারের জন্যে আন্দোলনে নেমেছিল আর ছোট ও মাঝারি গোছের নেতারা যোগ দিয়েছিল ন্যাপ, জাসদের মতো দলগুলির কর্মীদলে, গোপন রাজনীতিতে যুক্ত দলগুলিতে, এমনকি আওয়ামী লীগেও। জাসদ ও সর্বহারা পার্টির মতো অনেক সংগঠন তখন শক্তিশালী ছিল, তার অনেক যৌক্তিক কারণও ছিল। কিন্তু এ-ও সত্য যে, যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধিতাকারীরা তখন সব রাজনৈতিক দলগুলিকেই রাজনৈতিকভাবে অপব্যবহার করেছে। আদর্শের জায়গাটি ছিল অনেক বড়, কিন্তু ভারতবিরোধিতার শ্লোগানটিই তাই বড় হয়ে উঠেছে এসব দলের প্রচারণা থেকে। বিপরীতে আওয়ামী লীগও বেছে নিয়েছিল অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী পথ- মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্যে যে-সহিষ্ণুতা দেখানো দরকার ছিল, আওয়ামী সীমাহীন ঔদ্ধত্য নিয়ে তার বিপরীত দিকে যেতেই আগ্রহী হয়ে উঠেছিল। অনিবার্য কারণেই শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে চূড়ান্ত স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠার পথে পা বাড়াতে হয়েছে। কিন্তু জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিতেই দেখা গেল, আওয়ামী বিরোধিতার জন্যে যারা মাঠে নেমেছিল, তাদের সংগঠনের ঝুলি শূন্য হয়ে পড়ছে, অনেকেই সটকে দৌড় দিচ্ছে ধর্মীয় মৌলবাদী রাজনৈতিক দলে। যারা ধর্মের ব্যাপারে পুরোপুরি ভেজেটারিয়ান ছিলেন না, তারা যোগ দিয়েছিলেন বিএনপিতে। ভূ-গর্ভস্থ রাজনীতিতে তখন কতটুকু পচন ধরেছিল তার উজ্জ্বল সাক্ষী বিএনপিতে যোগদানকারী চৈনিক বাম নেতারা।
এখন যুদ্ধাপরাধী বিচারের পথে জামায়াত ও জামায়াতের মতো দলগুলির রাজনৈতিক সাংগঠনিক কার্যক্রমে যে-ধ্বস নামবে তা সামলানোর জন্যে তাদেরকে যুদ্ধপরবর্তী বাংলাদেশের মতোই অন্য কোনও দলের ওপর ভর করতে হবে। ভেতরে ভেতরে তারা থাকবে পুরো মিলিট্যান্ট, কিন্তু প্রকাশ্যে কাজ চালানোর জন্যে প্লাটফরম হিসেবে ব্যবহার করবে অন্য কোনও দলকে। বাংলাদেশে এখন সেরকম যোগ্য সংগঠিত দল মাত্র একটিই বলতে হবে- আর সেটি হলো বিএনপি। অচিরেই বিএনপির মিছিলমিটিং-গুলি অনেক বড় হতে শুরু করবে। মান্নান ভূইয়া যত সুস্থ হচ্ছেন, খালেদা জিয়া তত স্বস্তি পাচ্ছেন আবেগের বশে সেই রাতে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেননি বলে। যুদ্ধাপরাধীরাও স্বস্তি পাচ্ছেন। কেননা মান্নান ভূইয়া বুর্জোয়া রাজনীতিতে মিশে গেলেও তাদের জন্যে তত স্বস্তিকর ছিলেন না। বিএনপিতে জামাতবিরোধী যে ক্ষীণ ধারা ছিল, তা এখন নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। নতুন এ পরিস্থিতি পুরো বিএনপিকেই গিলে খাবে। এই পরিস্থিতিতে কোনও কোনও বামদলেও জোয়ার দেখা দিতে পারে। সব কিছু মিলিয়ে বলা যায়, যুদ্ধাপরাধী বিচার ভূ-গর্ভস্থ রাজনীতির খপ্পরে পড়তে চলেছে।
এই ভূ-গর্ভস্থ রাজনীতি যাতে আমাদের আর্সেনিক-আক্রান্ত করতে না পারে, সেজন্যে এখন থেকেই সক্রিয় হতে হবে। যুদ্ধাপরাধী বিচারের ক্ষেত্রে সরকারের বাইরের রাজনৈতিক দলগুলিকে সক্রিয় করে তুলতে হবে। বামপন্থীদের একাট্টা হতে হবে। বামপন্থী দলগুলি যদি ছাত্রবেতন বৃদ্ধির প্রতিবাদে যে-কোনও সরকারের শাসনামলে অনমনীয় রাজপথমুখী হয়ে উঠতে পারে, যুদ্ধাপরাধী বিচারের দাবিতে কেন পিছিয়ে থাকবে? আওয়ামী লীগ সরকারকে শুধু চাপের মুখে রাখার জন্যেই নয়, আওয়ামী লীগ সরকারের যে-অংশটি আন্তরিকভাবেই বিচার চায়, তাদের স্বস্তি দেয়ার জন্যেও বিচারের দাবিতে সবার সোচ্চার হওয়া আজ বড় বেশি প্রয়োজন।