একটি ক্রান্তিদিনই বলা যায় বোধকরি এবারের ১১ জানুয়ারিকে। এ দিনে আমাদের মনে হয় ২০০৭ সালের কথা, সামরিক বাহিনীশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উত্থানের কথা। সামরিকতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতায় একনায়কতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে দিয়েই সম্ভব রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের পথ বন্ধ করা-এরকম একটি পাকিস্তানবাদী, সামরিকতান্ত্রিক ধারণা ফিরে আসতে শুরু করে ওই ১১ জানুয়ারি থেকে। এবং এ ধারণার পালে বাতাস যোগাতে থাকেন সুশীল নাগরিক ও বুদ্ধিজীবীরা। সেই অর্থে, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সুশীলতন্ত্র ও সামরিকতন্ত্রের গাঁটছড়া বাঁধার দিবসও বটে।
২০১২ সালের ১১ জানুয়ারিও একইভাবে আলোচিত হয়ে উঠেছে। জনগণ দেখেছে, এদিন একদিকে গোলাম আযম গ্রেফতার হচ্ছেন, অন্যদিকে খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে যাচ্ছেন, একইসঙ্গে আবার বিএনপি বিবৃতি দিয়ে জানাচ্ছে, সরকার ‘আইএসপিআরকে দিয়ে উস্কানি দিচ্ছে (প্রথম আলো, ২৯ পৌষ ১৪১৮)।’ রাজনীতির এরকম বড় বড় ঘটনাগুলির বাইরে ওইদিন দেখা গেছে, সিআইডি অভিযোগপত্র দিচ্ছে আওয়ামী লীগের কর্মী ইব্রাহিম আহমেদ খুনের মামলায় ভোলা-৩ আসনের সরকারদলীয় সাংসদ নূরন্নবী চৌধুরী শাওনকে বাদ দিয়ে। সাক্ষী করা হয়েছেন নূরন্নবী শাওনকে (প্রথম আলো, ২৯ পৌষ ১৪১৮)। এখন জানা যাচ্ছে, এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার খন্দকার মোঃ আবদুল হালিম বিয়ে করেছেন এমপি শাওনের আপন মামাতো বোনকে (মানবজমিন, ১ মাঘ ১৪১৮)। নারায়নগঞ্জে এইদিন ‘যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ কমিটি’র নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে (প্রথম আলো, ২৯ পৌষ ১৪১৮) সরকার আমাদের আবারও নিশ্চিত করেছে, গণতন্ত্র আর সরকারি গণতন্ত্র দু’ রকম গণতন্ত্র, সরকারি গণতন্ত্রে নাগরিক অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর নির্যাতন জায়েজ করা আছে।
অনেকেই হয়তো একমত হবেন না, তবে মনে হচ্ছে, এসব ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল আইএসপিআর’এর বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি’র বিবৃতিটি। এ বিবৃতি থেকে মনে হওয়া স্বাভাবিক, বাংলাদেশের প্র্রধান বিরোধী দল বিএনপি সামরিক বাহিনীকে নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং তারা মনে করে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে থাকায় আইএসপিআর’কে বিরোধী দলীয় নেত্রীর বক্তব্যের অপব্যাখ্যা দেয়ার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা মনে করছেন, বেসামরিক পর্যায়ে যেমন গুম খুন চলছে, সামরিক সামরিক কর্মকর্তারাও তেমনি গুম হয়ে যাচ্ছেন (প্রথম আলো, ২৭ পৌষ ১৪১৮)। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিএনপি’র এ অভিযোগ খুবই স্পর্শকাতর অভিযোগ। সামরিক বাহিনীতে কারও বিরুদ্ধে কোনও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে সে অপরাধ বিচারের জন্যে বাহিনীটির নিজস্ব আইন আছে। কিন্তু খালেদা জিয়ার এ অভিযোগ সত্য হলে, কোনও অভিযোগ বা অপরাধের ঘটনা নয়, বিচারের ঘটনা নয়, সামরিক কর্মকর্তাদের সরাসরি গাযেব করে দেয়া হচ্ছে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, খালেদা জিয়া ২৬ পৌষ চট্টগ্রামের সমাবেশে এ বক্তব্য দেয়ার আগে বিএনপি’র কোনও নেতা অথবা অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এ ধরণের গুমের অভিযোগ করা হয়নি।
তবে বিএনপির মতো একই অভিযোগ করা হয়েছে জঙ্গী রাজনৈতিক দল হিযবুত তাহরীর-এর পক্ষ থেকে। নিষিদ্ধ করার পর থেকে এ দলটি বিভিন্ন সময় ঝটিকাগতিতে লিফলেট বিতরণ ও পোস্টার বিতরণ করে আসছে। একইভাবে গত ২৪ পৌষ (৭ জানুয়ারি) থেকে তারা তাদের ভাষায় ‘‘মার্কিন-ভারতের নির্দেশে সেনাঅফিসারদের অব্যাহত গুপ্ত অপহরণ, গ্রেফতার ও অপহরণের প্রতিবাদ করার জন্যে’’ একটি লিফলেট বিতরণ করছে। এ লিফলেটে তারা তাদের ভাষায় ‘‘এই মুহূর্তে বর্তমান শাসনব্যবস্থা ও হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করার’’ লক্ষ্যে ‘‘বাংলাদেশের মুসলিম সেনাবাহিনীর নিষ্ঠাবান সেনাঅফিসারগণের’’ কাছ থেকে রাজনৈতিক ভূমিকা প্রত্যাশা করেছে। এর দু’ দিন পর ২৬ পৌষ চট্টগ্রামে বিএনপির রোডমার্চ সমাবেশ হয়েছে এবং কাকতালীয়ভাবে সেখানে, কীমাশ্চার্য, বিএনপির প্রধান নেতা খালেদা জিয়া চট্টগ্রামের জনসভায় হিযবুত তাহরীরের মতোই সামরিক বাহিনীতে গুম খুনের অভিযোগ তুলেছেন।
তার আগে বলে নেই, বিভিন্ন কারণে জানুয়ারির আগে থেকেই জনমনে নানা অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠতে থাকে এবং মিডিয়াগুলিতেও এ পরিস্থিতির প্রতিফলন ঘটতে থাকে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা স্থবির হয়ে পড়েছে (জনকণ্ঠ, ১১ পৌষ ১৪১৮), ঘাটতি বাজেট সঙ্কট দূর করতে ব্যাংক থেকে নেয়া সরকারি ঋণের পরিমাণ আগের যে-কোনও সময়ের চেয়ে বেশি ইত্যাদি ধরণের খবর মানুষকে উদ্বিগ্ন করে তোলে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় বিভিন্ন মন্ত্রীর, বিশেষ করে অর্থ, বাণিজ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতি-ব্যর্থতা। গুম খুনের ঘটনা মানুষকে ক্ষুব্ধ করে, উদ্বিগ্ন করে। শেয়ারবাজার পরিস্থিতি মানুষকে টালমাটাল করে। রাজনৈতিক অঙ্গনেও ছিল এখনকার মতেই ক্ষোভবিক্ষোভ। বিএনপি এসময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে সরাসরি জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে অবস্থান নেয় এবং সুশীলদের একটি অংশকেও দেখা যায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে নেতিবাচক অবস্থান নিতে। ক্ষুব্ধ জনগণ বিএনপির পক্ষে থাকুক বা না থাকুক বিএনপির পক্ষ থেকে রোড মার্চের মধ্যে দিয়ে একটি রাজনৈতিক বলয় সংঘবদ্ধ করে তোলার প্রয়াস সক্রিয় ছিল বা এখনও আছে। এবং ক্ষমতার অস্বাভাবিক পটপরিবর্তন ঘটলে এ ধরণের রাজনৈতিক বলয় থেকে স্বস্তি প্রকাশ করাও অস্বাভাবিক ছিল না।।
সব মিলিয়ে, ২০১২-এর ১১ জানুয়ারিও হয়তো ২০০৭ সালের পুরানো চেহারায় ফিরে যেতে পারত। এ ধরণের অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটানোর মূল ধাত্রী বলে যাদের মনে করা হয় তাদের উৎসাহিত করার চেষ্টাও হয়েছে নানাভাবে। ‘সামরিক বাহিনীর মেধাবী কর্মকর্তারা গুম খুনের শিকার হচ্ছেন’, রাজনৈতিক অঙ্গনের এরকম বক্তব্যে ও লিফলেটে সেনাবাহিনীতে ভীতি-অসন্তোষ এবং বিক্ষোভ দেখা দেয়া অস্বাভাবিক ছিল না। নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরিরের পক্ষ থেকে তো সেনাবাহিনীর প্রতি সরাসরি বর্তমান সরকারকে অপসারণের আহ্বানই রাখা হয়েছিল। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছিল অজানা আশঙ্কা।
বিএনপির পক্ষ থেকে অবশ্য এখন বলা হচ্ছে, সংবাদমাধ্যম এবং বিভিন্ন সামাজিক নেটওয়ার্ক থেকে গুমখুনের বিষয়টি জানা গেছে। কিন্তু বিএনপির নীতিনির্ধারকরা নিশ্চয়ই জানেন, বিষয়টি যথেষ্ট স্পর্শকাতর, সময়টিও স্পর্শকাতর এবং তাই বেশ দায়িত্ব নিয়েই এ প্রসঙ্গে তাদের বক্তব্য দিতে হবে। উপমহাদেশের আরেক রাষ্ট্র পাকিস্তানে এই মুহূর্তে সরকার ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দূরত্ব দেখা দিয়েছে বিরোধী দল ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে-যার প্রকাশ ঘটতে শুরু করেছে গত কয়েক বছর ধরে সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসে বিরোধী দলীয় নেত্রীর অনুপস্থিত থাকার মধ্যে দিয়ে। বিএনপি যেমনটি বলছে-সত্যিই কি সরকার সেনাবাহিনী কিংবা আইএসপিআর’এর সঙ্গে বিরোধী দলের দ্বন্দ্ব তৈরি করতে চাইছে? নাকি বিএনপির পক্ষ থেকে সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে দূরত্ব প্রত্যাশা করা হচ্ছে? আমরা জানি না, এই প্রশ্নের কোনটি সত্য। তবে আমরা এ টুকু বুঝি এ দু’টি প্রশ্ন সত্য হোক বা না হোক, এ ধরণের প্রশ্ন দেখা দেয়াই গণতন্ত্রের জন্যে মারাত্মক হুমকিস্বরূপ এবং তাতে পাকিস্তানের মতো একটি পরিস্থিতিই হয়তো বাংলাদেশে দেখা দেবে।
তবে ইতিবাচক ঘটনা হলো, বিএনপি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়েছেন এবং রাষ্টপতি জিল্লুর রহমানের কাছে থেকে আমরা শুনতে পেয়েছি, ‘‘আমি আশা করি, আপনাদের মতামত নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে (প্রথম আলো, ২৯ পৌষ ১৪১৮)। আমরা রাষ্টপতির কথার ওপর আস্থা রাখতে চাই; যদিও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এমনটি বিশ্বাস করা কষ্টকরই বটে। কেননা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাস্তবিকই আমাদের রাজনীতি ও বিচার ব্যবস্থার জন্যে মারাত্মক সঙ্কট হয়ে উঠেছে। এর ফলে বিচার বিভাগের নিয়োগপ্রকিয়া ম্যানিপুলেটেড হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধানকে মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই আমরা বলতে শুনেছি, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে একটা ফর্মুলা তৈরি করে আমরা সুপ্রিম কোর্ট ধ্বংস করেছি। আমার মনে হয় না, তত্ত্বাবধায়ক সরকার না থাকলে নির্বাচন বয়কটের ঘটনা ঘটবে। আমার চেয়েও মেধাবী, মস্তিষ্কবান এবং ধৈর্যসম্পন্ন ব্যক্তিরা আছেন। তাঁরা নিশ্চয়ই একটা উপায় খুঁজে বের করবেন’ (প্রথম আলো, ১৮ পৌষ ১৪১৮)।
কিন্তু রাজনীতিতে ইস্যু চাই এবং আমাদের রাজনীতিতে এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার সেরকম একটি ইস্যু। রাষ্টপতির সঙ্গে সংলাপ শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামকেও বলতে শোনা গেছে, ‘তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহাল না করে নির্বাচন কমিশন গঠন করে কিছু হবে না (প্রথম আলো, ২৯ পৌষ ১৪১৮)। দলগতভাবে বিএনপি রাষ্ট্রপতির এই সংলাপে যে একেবারেই আশাবাদী নয় তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে মওদুদ আহমদের কথা থেকেও, ‘‘দু’টি কারণে এই সংলাপ ফলপ্রসূ হবে না। এক. এই সংলাপ রাষ্ট্রপতি নিজের ইচ্ছায় করেননি, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে করেছেন। দুই. এককভাবে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেওয়ার কোনো ক্ষমতা তার নেই (প্রথম আলো, ২৯ পৌষ ১৪১৮)।’’ সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে অবশ্য বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘প্রেসিডেন্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কথা বললে আওয়ামী লীগ তাতে সাড়া দেবে।’ মনে হচ্ছে, সরকারি দলের পক্ষ থেকে এভাবে রাজনীতির অথবা আলোচনার একটি ক্ষেত্র তৈরি করা হচ্ছে। খুব আশাবাদী ব্যক্তিরা এ থেকে আশার আলো দেখলেও দেখতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সরকারি দলের সাংসদরা কেন অন্য কোনও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে সংসদে আলোচনা করতে আগহী না হলেও (যেমন, ট্রানজিট ইস্যু, টিপাইমুখ ইস্যু, ইত্যাদি) বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু নিয়ে সংসদের ফ্রেমওয়ার্কে আলোচনায় আগ্রহী তা সাধারণ মানুষের কাছে স্পষ্ট নয়। এমন বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন রয়েছে, যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখতে চান, অথচ সংসদে যাদের কোনও প্রতিনিধিত্ব নেই। তারা আলোচনা করবেন কোনখানে? তাদের মত-অভিমত যাচাই করা হবে কোন নিরিখে? বিষয়টি যদি এরকম হয়, বিএনপিকে সংসদে নিয়ে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার নিজের রাজনৈতিক বিজয় ঘটাতে চায়, তা হলে ভবিষ্যতে তা আরও মারাত্মক গণতান্ত্রিক সঙ্কটের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
বিএনপি অবশ্য কেবল সংলাপ নয়, রাজপথেও সক্রিয় থাকার চেষ্টা চালাচ্ছে। চট্টগ্রামের সমাবেশ থেকে খালেদা জিয়া আগামী ১২ মার্চ ‘ঢাকা চলো’ অভিয়ানের ঘোষণা দিয়েছেন। সংবাদপত্র জানাচ্ছে, তিনি কী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন তা নাকি এমনকি নীতিনির্ধারকদেরও জানা ছিল না। দলের যে কর্মসূচি সম্পর্কে এমনকি নীতিনির্ধারকরাও অন্ধকারে থাকেন, সেই কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির সাধারণ নেতাকর্মীরা কতটুকু এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন, তা এখন দেখার বিষয়। কেননা পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালসংকান্ত আন্দোলনের সাফল্য নির্ভর করছে, সামরিক বাহিনীতে গুমখুনের অভিযোগটিকে তারা কত বেশি গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারবে তার ওপরে। এই বল বিএনপি নিজেই নিজের কোর্টে টেনে নিয়েছে। তবে সাফল্য প্রত্যাশা করার আগে বিএনপিকে এখন এটি অবশ্যই মনে করতে হবে, সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীতে গুম খুনের অভিযোগ তোলার মধ্যে দিয়ে সাধারণ নাগরিকদের গুমখুনের অভিযোগগুলি তারা মার্জিনালাইজ করে ফেলেছে। আগেই বলেছি, একই অভিযোগ হিযবুত তাহরিরের লিফলেটেও করা হয়েছে। সেখানে আরও এক পা বাড়িয়ে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে আখ্যায়িত করা হয়েছে ‘মুসলিম সেনাবাহিনী’ হিশেবে। নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরির তাদের ওই লিফলেটে দাবি করেছে, ‘‘সেনাবাহিনীতে যেসব অফিসারগণ ইসলাম এবং দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন’’ তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করা হচ্ছে। লিফলেট প্রচারের পর দলটি এখন পোস্টার লাগানোর কাজে নেমেছে। অন্যদিকে, বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করার পরপরই এ খববের উৎস সম্পর্কে একটি গা-ছাড়া অবস্থান নেয়ায় জনসমক্ষে দলটির পিছিয়ে যাওয়ার আলামত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
বিএনপি’র এরকম অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের অবস্থান এখন পর্যন্ত তেমন স্পষ্ট নয়। এর আগে সাধারণ নাগরিকদের গুম খুনের অভিযোগ ওঠার পর সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমরা বলতে শুনেছিলাম, তিনি নাকি পত্রপত্রিকা পড়ে গুমখুনের কথা জানতে পেরেছেন (মানবজমিন, ১ পৌষ ১৪১৮)। আবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা বলতে শুনেছি, বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীই এসব গুম খুনের ঘটনা ঘটাচ্ছে (প্রথম আলো, ৪ পৌষ ১৪১৮)। প্রতিরক্ষা বাহিনীতে যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে, তা হলে সে ব্যাপারেও সরকার এর বেশি কিছু বলবেন বলে আশা করা যায় না। ইতিমধ্যে অবশ্য দু’একটি সংগঠন খালেদা জিয়ার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেছে, মানববন্ধনও করা হচ্ছে। বিএনপির সামরিক বাহিনীতে গুম খুনের অভিযোগের ইস্যুটিকে নাড়াচাড়া করার মধ্যে দিয়ে সাধারণ মানুষকে গুম খুন করার ঘটনাগুলি মার্জিনালাইজ করার এ সুযোগ সরকার হাতছাড়া করবে কেন? বিএনপি এ ইস্যুকে রাজনীতির মাঠে নিয়ে এসে সরকারের হাতে একদিকে সাধারণ মানুষকে গুম খুন করার ইস্যুটিকে মার্জিনালাইজ করে ফেলার সুযোগ তুলে দিয়েছে, অন্যদিকে, সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সামরিক বাহিনীতে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ পরিচালনার পুরানো ক্ষতগুলি জাগিয়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এই ইস্যু নিয়ে বিএনপি বেশি দূর যেতে পারবে বলে মনে হয় না, মাঝখান থেকে তারা শুধু সরকারের হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুপ্তহত্যা, গুম খুন ইত্যাদির অভিযোগকে অর্থহীন করে তোলার বড় সুযোগ তৈরি করে দিল।
বিএনপির পক্ষ থেকে অবশ্য রাষ্টপতির সঙ্গে সংলাপের বিষয়টিকে বড় করে তোলার মধ্যে দিয়ে রাজনৈতিক সংলাপের ব্যাপারে দলটির আন্তরিকতাকে বড় করে দেখানোর একটি প্রয়াসও রয়েছে। কিন্তু বিএনপিও এটি জানে, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ যত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাই হোক না কেন, ওইদিনের সবচেয়ে বড় ঘটনা হলো, গোলাম আযমের গ্রেফতার হওয়া। এই গ্রেফতার জনগণের কাংখিত ঘটনা; কিন্তু বিএনপির কাছে কতটা কাক্সিক্ষত ছিল তা গবেষণার বাপার। জামায়াতে ইসলামীর অবস্থা দেখে অবশ্য মনে হচ্ছে, এ ঘটনা তাদের কাছে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। গোলাম আযমের গ্রেফতারের জন্যে তারা খুব বেশি প্রস্তুত ছিল বলে মনে হয় না। আর গ্রেফতার যখন করা হলো, তখন তাদের মধ্যে নতুন এক আশা দেখা দিয়েছিল-আবদুল আলিমের মতো গোলাম আযমকেও হয়তো ‘অসুস্থতার’ কারণে জামিন দেয়া হবে। কিন্তু সেরকম কিছু ঘটেনি, সেরকম কিছু আইন অনুযায়ী প্রত্যাশা করার অবকাশও ছিল না। মাত্র মাসখানেক আগে বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবসে আমরা দেখেছি, গোলাম আযম বৃদ্ধ বয়সেও প্রচণ্ড স্পর্ধার সঙ্গে কয়েকটি স্যাটেলাইট মিডিয়ায় বক্তব্য রেখেছেন, নির্দোষ ও সৎ সাজার চেষ্টা করেছেন। কোনও কোনও মিডিয়া এখন চেষ্টা করছে সেই গোলাম আযমকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসুস্থ ব্যক্তি হিশেবে হাজির করার। জনগণের সহানুভূতি আদায় করার।
আর কে না জানে, ১১ জানুয়ারির আগের দিন পর্যন্তও বিএনপি সোচ্চার ছিল অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে। বিএনপি’র রোড মার্চ কর্মসূচির সব কটিতেই, বিশেষত চট্টগামের রোড মার্চে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের দাবিটিই বড় হয়ে এসেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষক এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, কিন্তু নির্বিকার থেকেছে বিএনপি। এমনকি খালেদা জিয়ার মুখ থেকে আমরা এ-ও শুনেছি, প্রকৃত ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীদের গোপন চুক্তি করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে (নয়া দিগন্ত, ৪ পৌষ ১৪১৮)। মির্জা ফখরুলকে আমরা বলতে শুনেছি, ‘১৯৫ জন প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীকে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগে আওয়ামী লীগের বিচার করা হবে (প্রথম আলো, ১৯ পৌষ ১৪১৮)। কিন্তু ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারির নিশ্চয়ই কোনও বড়সড় মাহাত্ম্য আছে, যার জন্যে এখন তারা নিজেদের রাশ খানিকটা টেনে ধরার চেষ্টা চালাচ্ছেন-গোলাম আযমের গ্রেফতারের ব্যাপারে মুখ বন্ধ রেখেছেন বিএনপি’র নেতারা, দলটির পক্ষ থেকে নাকি আনুষ্ঠানিক কোনও প্রতিক্রিয়াও জানানো হবে না (সমকাল, ৩০ পৌষ ১৪১৮)। এ থেকে অবশ্য এটা বোঝায় না যে, তারা আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। এ থেকে শুধু এটুকুই বলা যায়, যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপারে বিএনপি আবারও কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার নিয়ে কৌশলী রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণের কোনও সুযোগ নেই। এই ক্ষেত্রে বার বার কৌশলী রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে-এবারও হতে চলেছে।
গোলাম আযম গ্রেফতার হওয়ার প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবীরা অবশ্য ২৮ পৌষেই (১১ জানুয়ারি) মাঠে নেমেছিল। পরদিন ২৯ পৌষ সংঘবদ্ধভাবে বিক্ষোভ করার চেষ্টা করেছে তারা-চেষ্টা করেছে পুলিশকে হত্যার, ছিনতাই করেছে পুলিশের অস্ত্র (সমকাল, ৩০ পৌষ)। কিন্তু অনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে রাজনৈতিকভাবে বেশিদূর এগুনো যায় না; যত আতঙ্কই ছড়াক না কেন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা, খুব বেশি দূর তারা এগুতে পারবে না। তাদের দরকার একটি বড় প্লাটফর্ম, যে প্লাটফর্মটিকে তারা ব্যাপক জনগণের সামনে দাঁড়ানোর কাজে ব্যবহার করতে পারবে। বিএনপির সঙ্গে ঐক্যকে তারা ব্যবহার করছে সেরকম একটি প্লাটফরম হিশেবে। অন্যদিকে দলগতভাবে তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে পলিটিক্যাল ভায়োলেন্সের।
বিএনপি ভাবতেই পারে, তারাই জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে। ভাবতেই পারে, নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীরের নেতাকর্মীদেরও তারা রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে পারছে। কিন্তু বিএনপি যে গোলাম আযমের গ্রেফতারের ব্যাপারে নিশ্চুপ রয়েছে, সামরিক বাহিনীর ‘গুম খুনে’র তথ্যসূত্রের ব্যাপারে এখন যে সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক নেটওয়ার্কগুলির দিকে ইঙ্গিত করছে, তা থেকেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, বড় ধরণের এক রাজনৈতিক পরাজয় ঘটেছে তাদের। ইতিহাসে তাদের অনন্তকাল সাধারণ গুম-খুনকে মার্জিনালাইজ করার দায় বহন করতে হবে।
ঢাকা, ২ মাঘ ১৪১৮
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১৯ comments
মাসুদ করিম - ১৯ জানুয়ারি ২০১২ (১২:৫৬ অপরাহ্ণ)
এনিয়ে পরবর্তীতে আরো আলোচনা করতে হবে। এবছরের প্রথম দুসপ্তাহ দেশের রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, অথবা ইমতিয়ার শামীমের বাংলা সন তারিখের দিকে খেয়াল রেখে বলা যায় ১৪১৮-এর শেষদিকের রাজনৈতিক তাৎপর্য জাতির জীবনে গভীর ছাপ ফেলবে। আপাতত এখানে একটা বাদ পড়া বিষয়ে কথা বলে পরবর্তীতে আবার আলোচনায় ফিরে আসব আশা করছি। এই আলোচনায় সাকার স্ত্রী ফারহাতকে পোলোগ্রাউন্ডে পরিকল্পিত গুরুত্ব দেয়ার বিষয়টি বাদ পড়েছে। খালেদা জিয়া ফারহাতকে যেভাবে উপস্থাপন করেছেন এবং ফারহাতের ভাষায় যেভাবে হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এবং কুমিল্লার নির্বাচনে রাজাকার জিতেছে বলে যেইঙ্গিত দিয়েছেন তা বিএনপির রাজনীতিকে একমেরু করে তুলেছে — বিএনপি আর কোনো ভাবেই স্বাধীনতার পক্ষে এক শস্য পরিমাণ কথা বলার কোনো অবস্থান আর রাখল না।
ইমতিয়ার - ১৯ জানুয়ারি ২০১২ (১:৩২ অপরাহ্ণ)
‘গুরুত্বপূর্ণ ছিল’ নয় মাসুদ করিম, এখনও গুরুত্বপূর্ণ। আজকের কালের কণ্ঠ পত্রিকাতে কাজী হাফিজের সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্ক্ষলার অপচেষ্টা শিরোনামের একটি খবর এসেছে :
আপনি ঠিকই বলেছেন, এ নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনা করতে হবে। তবে অবশ্যই দ্রুত, অতি দ্রুত… কোনও অস্বাভাবিক পরিবর্তন আমাদের কাম্য নয় এবং সেরকম প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে দ্রুত গণসংঘবদ্ধতারও প্রকাশ ঘটাতে হবে।
আরিফুর রহমান - ১৯ জানুয়ারি ২০১২ (৬:৩৩ অপরাহ্ণ)
আজকে সেনাবাহিনী সংবাদ সন্মেলন করে সব পরিষ্কার করে দিলো..
অবিশ্রুত - ২১ জানুয়ারি ২০১২ (৪:২১ অপরাহ্ণ)
সামরিক অভ্যুত্থানের ব্যর্থ প্রচেষ্টা নিয়ে সেনাবাহিনীর সংবাদ সম্মেলন ছিল সত্যিই অভাবনীয়। এর আগে কখনোই এভাবে তারা জনগণের সামনে উপস্থিত হননি। এর মধ্যে দিয়ে তারা নির্বাচিত সরকারপ্রক্রিয়ার ওপর তাদের আস্থার প্রকাশ ঘটিয়েছে। কিন্তু তারপরও প্রশ্ন জাগে, সত্যিই কি এ সংবাদ সম্মেলন সব পরিষ্কার করে দিতে পেরেছে? অথবা পারবে কি ভবিষ্যতে পরিষ্কার করতে?
প্রকাশিত খবর থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, অভ্যুত্থানপ্রচেষ্টার অন্যতম একজন মেজর জিয়া (ইতিহাসের পরিহাস, আবারও সেই জিয়া!) বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন এবং সেখান থেকেই এটি সংঘটনের চেষ্টা চালান। উল্লেখ্য, ব্রিটেনের লন্ডনের বাঙালি কম্যুনিটিতে হিযবুত তাহরীরের শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে, সেখানে বাংলা মিডিয়াতেও এ সংগঠনটির মিডিয়া সেল বেশ তৎপরতার সঙ্গে তাদের খবর বা প্রেস রিলিজ ইত্যাদি প্রকাশ করে থাকে। ব্রিটেনে এ দলটি নিষিদ্ধ নয়, সেই সুযোগে বাঙালি হিযবুতরা সেখানে নিজেদের নিরাপদ আস্তানা গড়ে তুলেছে এবং কর্মত্ৎপরতা চালাচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে, ব্রিটেন থেকে যে সব বাংলা সাপ্তাহিক বের হয়, সেগুলিতে প্রকাশিত গত কয়েক বছরের কম্যুনিটি সংবাদ তদন্ত করা। তা হলে সেখানে হিযবুত তাহরীর-এর বাংলাদেশ নেটওয়ার্কের সঙ্গে কারা কারা জড়িত আছে, বিভিন্ন ইস্যুতে কে কী বক্তব্য দিয়েছে তা খতিয়ে দেখা। তা হলে এই নেটওয়ার্ক সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্যই হয়তো বেরিয়ে আসবে। এবং বলা যায় না, জিয়ার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কেও হয়তো ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
মাসুদ করিম - ২০ জানুয়ারি ২০১২ (৬:৪৫ অপরাহ্ণ)
মিফই আলমগীর তাহলে কী বলছেন? তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আর করবেন না!?
ইমতিয়ার - ২১ জানুয়ারি ২০১২ (৪:০০ অপরাহ্ণ)
আপনার দেয়া লিংক এবং আরও কিছু সংবাদ থেকে দেখতে পাচ্ছি, বিএনপি প্রতিনিধি মির্জা ফখরুল পল্টনে সিপিবি’র সমাবেশে বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণে গত শুক্রবার শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছে এবং সিপিবি’র অফিসের সামনে স্থাপিত স্মৃতিফলকে ফুলও দিয়েছেন।
আমার জানা নেই, কারও জানা থাকলে জানানোর অনুরোধ করছি-এর আগে বিএনপির কোনও প্রতিনিধি কি কখনও কোনও বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণে এভাবে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন? করলে কবে, কোথায় করেছেন?
এই সংবাদে আরও দেখা যাচ্ছে, বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ অনুপস্থিত। একজন ইন করছে, আরেক দল আউট হচ্ছে! রাজনীতির কত বিচিত্র খেলা!
আর বিএনপি তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের (সেটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অঙ্গ হোক বা না হোক) দাবি যাতে আর না করতে হয়, সে কাজই করতে গিয়েছিল মনে হয়!
মাসুদ করিম - ২২ জানুয়ারি ২০১২ (২:২১ পূর্বাহ্ণ)
মিফই আলমগীর ১৩ জানুয়ারি ২০১২তে নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপি আয়োজিত এক সভায় বলেছিলেন, সরকারকে ঘাড় ধরে নামাতে হবে।
মাসুদ করিম - ২১ জানুয়ারি ২০১২ (২:১৫ পূর্বাহ্ণ)
কিন্তু ভিডিওটা সংগ্রহ করে রাখিনি, টুইট করেছিলাম হয়ত, এখন ওই যে দুজনের অস্বাভাবিকতা আমার মনে পড়ছে কিন্তু ভিডিওটা সাথে দিতে পারছি না। অবশ্য বাংলাদেশের টিভি নিউজের ক্লিপ কি সেভাবে আমরা সংগ্রহ করতে পারি, তাও জানা নেই আমার।
মাসুদ করিম - ২২ জানুয়ারি ২০১২ (৯:৫০ পূর্বাহ্ণ)
সেনা অভ্যুত্থান বাংলাদেশে শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার ‘শটকার্ট’ নয়, বাংলাদেশে সেনা অভ্যুত্থান ইসলামি জঙ্গিবাদকে এমন ভাবে ধারণ করে — যাকে বলা যায় ‘সন্ত্রাসের রাজপথে’ ওঠা। অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছে এর আশু স্বস্তি আমরা পাচ্ছি যে ক্ষমতায় যাওয়ার ‘শটকার্ট’ এবারের মতো সফল হয়নি। কিন্তু এই স্বস্তি তো পাওয়ার প্রশ্নই আসে না যে সামনে এই ‘শটকার্ট’ আবার ঘটবে না এবং সফল হবে না। অনেকে এবারের সেনা অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টাকে বিচ্ছিন্ন বলছেন এবং বলছেন এটাকে তেমন গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই। কিন্তু এর সবচেয়ে বড় গুরুত্ব তো এই, এই অভ্যুত্থান সরাসরি ইসলামি জঙ্গিবাদের আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়েই হতে যাচ্ছিল। ক্ষমতায় যাওয়ার ‘শটকার্ট’ এর বিপরীতে আমরা গণতন্ত্রকে ও নির্বাচন পদ্ধতিকে শক্তিশালী করার প্রয়াস নিচ্ছি, ভাল কথা। কিন্তু সামরিক বাহিনীতে ঠিক শতকরা কত ভাগের ‘সন্ত্রাসের রাজপথে’র দিকে অভিমুখ সৃষ্টি করেছে ইসলামি জঙ্গিবাদ তার হিসাব আমাদের কে দেবে? তার চেয়ে বড় কথা এবং সব চেয়ে বড় কথা আমাদের সামরিক বাহিনীর তল্পিতল্পা থেকে ইসলামি জঙ্গিবাদ নির্মূল হবে কিভাবে?
অবিশ্রুত - ২২ জানুয়ারি ২০১২ (৪:৩৬ অপরাহ্ণ)
জামাত-বিএনপিমনস্ক প্রবাসী বুদ্ধিজীবী সিরাজুর রহমান এ প্রসঙ্গে কী বলেছেন জানা যাক :
এই মুহূর্তে কয়েকটি বিষয় জানতে ইচ্ছা হচ্ছে : ১. তাজউদ্দীনের সাত দফা চুক্তিটার বিবরণ কোথায় পাওয়া যাবে? ২. প্রবাসী হলেই যে তিনি কোনও ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকতে পারেন না, সিরাজুর রহমান তা কি জোর দিয়ে বলতে পারেন?
মন্তব্য দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে। আপাতত এই।
মাসুদ করিম - ২৩ জানুয়ারি ২০১২ (৬:৫৮ অপরাহ্ণ)
এই সাইটে সুপারিশকৃত লিন্কে হিযবুত তাহরীর নিয়ে বিভিন্ন সময়ে যা ছিল
মাসুদ করিম - ২৪ জানুয়ারি ২০১২ (২:৪৬ অপরাহ্ণ)
ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম আবদুল হাফিজ, সাবেক মহাপরিচালক,বিআইআইএসএস — এই কলাম লেখক তো পুরোদমে এক প্রকার অব আর্মি বুদ্ধিজীবী যারা ইসলাম ছাড়া কিছুই বোঝেন না। এদের মতো লোকই Bangladesh Institute of International & Strategic Studies (BIISS) এর মহাপরিচালক ছিলেন, কী কাজ এই স্ট্র্যাটেজিক প্রতিষ্ঠানের আমাদের প্রতিরক্ষা স্ট্র্যাটেজির মুখ্য প্রতিষ্ঠানে এমন সব অব আর্মিরাই ছিল এবং এখনো এমন সব অব আর্মিরাই আছে? বিশ্বাস ও ধর্মীয় অনুশাসনের আকুতিতে কী এমন আঘাত এসে গেছে তা কিন্তু পরিস্কার করেননি এম আবদুল হাফিজ। এই ধরনের লোককেও কি বলা যাবে ‘ধর্মান্ধ’?
এবং আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে লেখাটিতে অব আর্মি প্রবর একবারেই সাম্প্রতিক ক্যুয়ের কথা আনেননি।
মাসুদ করিম - ২৬ জানুয়ারি ২০১২ (৬:০৯ অপরাহ্ণ)
আবারো এম আবদুল হাফিজ প্রসঙ্গ এলো। এবার সেনাবাহিনী ব্যর্থ অভ্যুত্থানের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দেশের সংবাদ মাধ্যমে জানানোর পর থেকে ‘জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল’ নিয়ে পুরনো আলাপ আলোচনা আবার শুরু হয়েছে। এপ্রসঙ্গে আজ সমকালে এক কলামে এম আবদুল হাফিজ সোজাসাপ্টা বলেছেন ‘জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল’এর কোনো প্রয়োজন নেই। এবং তার চেয়েও বড় কথা এই লেখাতেও কোথাও তিনি ব্যর্থ অভ্যুত্থানের কোনোই উল্লেখ করেননি।
‘জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল’ নিয়ে কথা বলার আগে আমার মনে হয় বাংলাদেশের জাতীয় আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা কর্মকাণ্ডের একটি প্রতিষ্ঠানের কথা আগে ভাবা উচিত। সবার আগে প্রয়োজন NSI-কে DGFI-এর যুগলবন্দি অবস্থান থেকে মুক্ত করে একে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গোয়েন্দা সংস্থা হিসাবে সিভিলিয়ান আধিপত্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করা। এবং DGFI এর মতো সমন্বিত সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা সহ দেশের বিদ্যমান সব গোয়েন্দা সংস্থাকে NSI-এর নেতৃত্বে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসা। এভাবে কয়েক বছর NSI-এর নেতৃত্বে জাতীয়-আন্তর্জাতিক সামরিক-অসামরিক গোয়েন্দা কর্মকাণ্ডকে পর্যবেক্ষণ করে যখন প্রতিষ্ঠান হিসাবে NSI-এর ভিতটা শক্ত হবে তখন ‘জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল’ আরো বেশি দক্ষতার সাথে গড়ে তোলা যাবে।
কিন্তু এম আবদুল হাফিজ কায়মনোবাক্যে আর্মড ফোর্সেসের আধিপত্যে বিশ্বাস করেন, তাই তিনি ‘জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল’ দরকার নেই, এবং বাংলাদেশের এধরনের প্রতিষ্ঠান নির্মাণের যোগ্যতা নেই বলে মনে করেন। এবং তিনি এও মনে করেন আমাদের মতো দেশের যা নিরাপত্তা ঝুঁকি তা জাতীয় সংসদের ডিফেন্স কমিটি দিয়েই পর্যালোচনা হয়ে যাবে।
তার লেখার যেঅংশগুলো বোল্ড করেছি সেগুলো প্রত্যেকটিই হাস্যকর এবং শেষেরটি সবচেয়ে হাস্যকর।
লিন্ক এখানে।
মুক্ত - ২৫ জানুয়ারি ২০১২ (১২:৪৬ পূর্বাহ্ণ)
হ্যাঁ, বিষয়টি সত্যিই চিন্তার। আমাদের খুব সতর্ক হয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ রাখতে হবে।
অবিশ্রুত - ৩০ জানুয়ারি ২০১২ (২:০৪ অপরাহ্ণ)
অবশেষে ফরহাদ মজহার এ ব্যাপারে আওয়াজ দিলেন। তিনি আমাদের জানালেন, সেনাবাহিনীর সংবাদ সম্মেলনে তো সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে এরকম দাবি করা হয় নাই, বলা হয়েছে সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্ক্ষলা সৃষ্টির অপপ্রয়াস-এর কথা!
এসব কথার মানে কি?
এক পর্যায়ে তিনি নিজেই তা খোলাসা করে বলেছেন :
তিনি নিশ্চয়ই জানেন, এ কথা বলার অপর অর্থ, সেনাবাহিনীতে এমন কিছু ঘটতে চলেছিল, যা বিএনপির পক্ষে যেত, অর্থাৎ সোজা কথায় সরকারে পরিবর্তন আনার একটি চেষ্টা চলেছিল। সেনাবাহিনী যদি সরকারকে রক্ষার চেষ্টা করে সেটা তা হলে দোষের পর্যায়ে পড়ে? তা হলে সেনাবাহিনী আসলে কার অধীনস্থ হবে? সেটি কি সার্বভৌম অথবা স্বায়ত্তশাসিত?
তিনি আরও মজার মজার কথা বলেছেন। খানিকক্ষণ বিনোদিত হওয়ার জন্যে এখানে গিয়ে পড়তে পারেন সেনাবাহিনীর নয় দায় সরকারের শিরোনামের পুরো কলামটি।
অবিশ্রুত - ৩১ জানুয়ারি ২০১২ (২:০৬ অপরাহ্ণ)
দ্য স্টেটসম্যান-এ মানস ঘোষ লিখেছেন, কেবল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া স্থগিত করাই নয়, অসমাপ্ত মিশন সমাপ্ত করাও ছিল এ অভ্যুত্থানের লক্ষ্য :
আরও একটি উদ্দেশ্যও ছিল বটে :
মানস ঘোষের নিবন্ধটি পড়া যাবে এখান থেকে।
মাসুদ করিম - ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ (৬:৩১ অপরাহ্ণ)
মালদ্বীপের ক্যু নিয়ে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা চিনহুয়ার রিপোর্ট নিয়ে সুপারিশকৃত লিন্কের মন্তব্য থেকে।
মাসুদ করিম - ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ (৮:০১ পূর্বাহ্ণ)
এই দুই খবরের মধ্যে কোনো যোগসাজোশ আছে কিনা, তবে দুটি খবরই প্রচণ্ড উদ্বেগের।
মাসুদ করিম - ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ (৯:০৫ পূর্বাহ্ণ)