...২০১২-এর ১১ জানুয়ারিও হয়তো ২০০৭ সালের পুরানো চেহারায় ফিরে যেতে পারত। এ ধরণের অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটানোর মূল ধাত্রী বলে যাদের মনে করা হয় তাদের উৎসাহিত করার চেষ্টাও হয়েছে নানাভাবে। ‘সামরিক বাহিনীর মেধাবী কর্মকর্তারা গুম খুনের শিকার হচ্ছেন’, রাজনৈতিক অঙ্গনের এরকম বক্তব্যে ও লিফলেটে সেনাবাহিনীতে ভীতি-অসন্তোষ এবং বিক্ষোভ দেখা দেয়া অস্বাভাবিক ছিল না। নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরিরের পক্ষ থেকে তো সেনাবাহিনীর প্রতি সরাসরি বর্তমান সরকারকে অপসারণের আহ্বানই রাখা হয়েছিল। ...

একটি ক্রান্তিদিনই বলা যায় বোধকরি এবারের ১১ জানুয়ারিকে। এ দিনে আমাদের মনে হয় ২০০৭ সালের কথা, সামরিক বাহিনীশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উত্থানের কথা। সামরিকতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতায় একনায়কতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে দিয়েই সম্ভব রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের পথ বন্ধ করা-এরকম একটি পাকিস্তানবাদী, সামরিকতান্ত্রিক ধারণা ফিরে আসতে শুরু করে ওই ১১ জানুয়ারি থেকে। এবং এ ধারণার পালে বাতাস যোগাতে থাকেন সুশীল নাগরিক ও বুদ্ধিজীবীরা। সেই অর্থে, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সুশীলতন্ত্র ও সামরিকতন্ত্রের গাঁটছড়া বাঁধার দিবসও বটে।
২০১২ সালের ১১ জানুয়ারিও একইভাবে আলোচিত হয়ে উঠেছে। জনগণ দেখেছে, এদিন একদিকে গোলাম আযম গ্রেফতার হচ্ছেন, অন্যদিকে খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে যাচ্ছেন, একইসঙ্গে আবার বিএনপি বিবৃতি দিয়ে জানাচ্ছে, সরকার ‘আইএসপিআরকে দিয়ে উস্কানি দিচ্ছে (প্রথম আলো, ২৯ পৌষ ১৪১৮)।’ রাজনীতির এরকম বড় বড় ঘটনাগুলির বাইরে ওইদিন দেখা গেছে, সিআইডি অভিযোগপত্র দিচ্ছে আওয়ামী লীগের কর্মী ইব্রাহিম আহমেদ খুনের মামলায় ভোলা-৩ আসনের সরকারদলীয় সাংসদ নূরন্নবী চৌধুরী শাওনকে বাদ দিয়ে। সাক্ষী করা হয়েছেন নূরন্নবী শাওনকে (প্রথম আলো, ২৯ পৌষ ১৪১৮)। এখন জানা যাচ্ছে, এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার খন্দকার মোঃ আবদুল হালিম বিয়ে করেছেন এমপি শাওনের আপন মামাতো বোনকে (মানবজমিন, ১ মাঘ ১৪১৮)। নারায়নগঞ্জে এইদিন ‘যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ কমিটি’র নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে (প্রথম আলো, ২৯ পৌষ ১৪১৮) সরকার আমাদের আবারও নিশ্চিত করেছে, গণতন্ত্র আর সরকারি গণতন্ত্র দু’ রকম গণতন্ত্র, সরকারি গণতন্ত্রে নাগরিক অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর নির্যাতন জায়েজ করা আছে।
অনেকেই হয়তো একমত হবেন না, তবে মনে হচ্ছে, এসব ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল আইএসপিআর’এর বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি’র বিবৃতিটি। এ বিবৃতি থেকে মনে হওয়া স্বাভাবিক, বাংলাদেশের প্র্রধান বিরোধী দল বিএনপি সামরিক বাহিনীকে নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং তারা মনে করে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে থাকায় আইএসপিআর’কে বিরোধী দলীয় নেত্রীর বক্তব্যের অপব্যাখ্যা দেয়ার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা মনে করছেন, বেসামরিক পর্যায়ে যেমন গুম খুন চলছে, সামরিক সামরিক কর্মকর্তারাও তেমনি গুম হয়ে যাচ্ছেন (প্রথম আলো, ২৭ পৌষ ১৪১৮)। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিএনপি’র এ অভিযোগ খুবই স্পর্শকাতর অভিযোগ। সামরিক বাহিনীতে কারও বিরুদ্ধে কোনও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে সে অপরাধ বিচারের জন্যে বাহিনীটির নিজস্ব আইন আছে। কিন্তু খালেদা জিয়ার এ অভিযোগ সত্য হলে, কোনও অভিযোগ বা অপরাধের ঘটনা নয়, বিচারের ঘটনা নয়, সামরিক কর্মকর্তাদের সরাসরি গাযেব করে দেয়া হচ্ছে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, খালেদা জিয়া ২৬ পৌষ চট্টগ্রামের সমাবেশে এ বক্তব্য দেয়ার আগে বিএনপি’র কোনও নেতা অথবা অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এ ধরণের গুমের অভিযোগ করা হয়নি।
তবে বিএনপির মতো একই অভিযোগ করা হয়েছে জঙ্গী রাজনৈতিক দল হিযবুত তাহরীর-এর পক্ষ থেকে। নিষিদ্ধ করার পর থেকে এ দলটি বিভিন্ন সময় ঝটিকাগতিতে লিফলেট বিতরণ ও পোস্টার বিতরণ করে আসছে। একইভাবে গত ২৪ পৌষ (৭ জানুয়ারি) থেকে তারা তাদের ভাষায় ‘‘মার্কিন-ভারতের নির্দেশে সেনাঅফিসারদের অব্যাহত গুপ্ত অপহরণ, গ্রেফতার ও অপহরণের প্রতিবাদ করার জন্যে’’ একটি লিফলেট বিতরণ করছে। এ লিফলেটে তারা তাদের ভাষায় ‘‘এই মুহূর্তে বর্তমান শাসনব্যবস্থা ও হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করার’’ লক্ষ্যে ‘‘বাংলাদেশের মুসলিম সেনাবাহিনীর নিষ্ঠাবান সেনাঅফিসারগণের’’ কাছ থেকে রাজনৈতিক ভূমিকা প্রত্যাশা করেছে। এর দু’ দিন পর ২৬ পৌষ চট্টগ্রামে বিএনপির রোডমার্চ সমাবেশ হয়েছে এবং কাকতালীয়ভাবে সেখানে, কীমাশ্চার্য, বিএনপির প্রধান নেতা খালেদা জিয়া চট্টগ্রামের জনসভায় হিযবুত তাহরীরের মতোই সামরিক বাহিনীতে গুম খুনের অভিযোগ তুলেছেন।
তার আগে বলে নেই, বিভিন্ন কারণে জানুয়ারির আগে থেকেই জনমনে নানা অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠতে থাকে এবং মিডিয়াগুলিতেও এ পরিস্থিতির প্রতিফলন ঘটতে থাকে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা স্থবির হয়ে পড়েছে (জনকণ্ঠ, ১১ পৌষ ১৪১৮), ঘাটতি বাজেট সঙ্কট দূর করতে ব্যাংক থেকে নেয়া সরকারি ঋণের পরিমাণ আগের যে-কোনও সময়ের চেয়ে বেশি ইত্যাদি ধরণের খবর মানুষকে উদ্বিগ্ন করে তোলে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় বিভিন্ন মন্ত্রীর, বিশেষ করে অর্থ, বাণিজ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতি-ব্যর্থতা। গুম খুনের ঘটনা মানুষকে ক্ষুব্ধ করে, উদ্বিগ্ন করে। শেয়ারবাজার পরিস্থিতি মানুষকে টালমাটাল করে। রাজনৈতিক অঙ্গনেও ছিল এখনকার মতেই ক্ষোভবিক্ষোভ। বিএনপি এসময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে সরাসরি জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে অবস্থান নেয় এবং সুশীলদের একটি অংশকেও দেখা যায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে নেতিবাচক অবস্থান নিতে। ক্ষুব্ধ জনগণ বিএনপির পক্ষে থাকুক বা না থাকুক বিএনপির পক্ষ থেকে রোড মার্চের মধ্যে দিয়ে একটি রাজনৈতিক বলয় সংঘবদ্ধ করে তোলার প্রয়াস সক্রিয় ছিল বা এখনও আছে। এবং ক্ষমতার অস্বাভাবিক পটপরিবর্তন ঘটলে এ ধরণের রাজনৈতিক বলয় থেকে স্বস্তি প্রকাশ করাও অস্বাভাবিক ছিল না।।
সব মিলিয়ে, ২০১২-এর ১১ জানুয়ারিও হয়তো ২০০৭ সালের পুরানো চেহারায় ফিরে যেতে পারত। এ ধরণের অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটানোর মূল ধাত্রী বলে যাদের মনে করা হয় তাদের উৎসাহিত করার চেষ্টাও হয়েছে নানাভাবে। ‘সামরিক বাহিনীর মেধাবী কর্মকর্তারা গুম খুনের শিকার হচ্ছেন’, রাজনৈতিক অঙ্গনের এরকম বক্তব্যে ও লিফলেটে সেনাবাহিনীতে ভীতি-অসন্তোষ এবং বিক্ষোভ দেখা দেয়া অস্বাভাবিক ছিল না। নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরিরের পক্ষ থেকে তো সেনাবাহিনীর প্রতি সরাসরি বর্তমান সরকারকে অপসারণের আহ্বানই রাখা হয়েছিল। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছিল অজানা আশঙ্কা।
বিএনপির পক্ষ থেকে অবশ্য এখন বলা হচ্ছে, সংবাদমাধ্যম এবং বিভিন্ন সামাজিক নেটওয়ার্ক থেকে গুমখুনের বিষয়টি জানা গেছে। কিন্তু বিএনপির নীতিনির্ধারকরা নিশ্চয়ই জানেন, বিষয়টি যথেষ্ট স্পর্শকাতর, সময়টিও স্পর্শকাতর এবং তাই বেশ দায়িত্ব নিয়েই এ প্রসঙ্গে তাদের বক্তব্য দিতে হবে। উপমহাদেশের আরেক রাষ্ট্র পাকিস্তানে এই মুহূর্তে সরকার ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দূরত্ব দেখা দিয়েছে বিরোধী দল ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে-যার প্রকাশ ঘটতে শুরু করেছে গত কয়েক বছর ধরে সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসে বিরোধী দলীয় নেত্রীর অনুপস্থিত থাকার মধ্যে দিয়ে। বিএনপি যেমনটি বলছে-সত্যিই কি সরকার সেনাবাহিনী কিংবা আইএসপিআর’এর সঙ্গে বিরোধী দলের দ্বন্দ্ব তৈরি করতে চাইছে? নাকি বিএনপির পক্ষ থেকে সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে দূরত্ব প্রত্যাশা করা হচ্ছে? আমরা জানি না, এই প্রশ্নের কোনটি সত্য। তবে আমরা এ টুকু বুঝি এ দু’টি প্রশ্ন সত্য হোক বা না হোক, এ ধরণের প্রশ্ন দেখা দেয়াই গণতন্ত্রের জন্যে মারাত্মক হুমকিস্বরূপ এবং তাতে পাকিস্তানের মতো একটি পরিস্থিতিই হয়তো বাংলাদেশে দেখা দেবে।
তবে ইতিবাচক ঘটনা হলো, বিএনপি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়েছেন এবং রাষ্টপতি জিল্লুর রহমানের কাছে থেকে আমরা শুনতে পেয়েছি, ‘‘আমি আশা করি, আপনাদের মতামত নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে (প্রথম আলো, ২৯ পৌষ ১৪১৮)। আমরা রাষ্টপতির কথার ওপর আস্থা রাখতে চাই; যদিও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এমনটি বিশ্বাস করা কষ্টকরই বটে। কেননা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাস্তবিকই আমাদের রাজনীতি ও বিচার ব্যবস্থার জন্যে মারাত্মক সঙ্কট হয়ে উঠেছে। এর ফলে বিচার বিভাগের নিয়োগপ্রকিয়া ম্যানিপুলেটেড হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধানকে মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই আমরা বলতে শুনেছি, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে একটা ফর্মুলা তৈরি করে আমরা সুপ্রিম কোর্ট ধ্বংস করেছি। আমার মনে হয় না, তত্ত্বাবধায়ক সরকার না থাকলে নির্বাচন বয়কটের ঘটনা ঘটবে। আমার চেয়েও মেধাবী, মস্তিষ্কবান এবং ধৈর্যসম্পন্ন ব্যক্তিরা আছেন। তাঁরা নিশ্চয়ই একটা উপায় খুঁজে বের করবেন’ (প্রথম আলো, ১৮ পৌষ ১৪১৮)।
কিন্তু রাজনীতিতে ইস্যু চাই এবং আমাদের রাজনীতিতে এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার সেরকম একটি ইস্যু। রাষ্টপতির সঙ্গে সংলাপ শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামকেও বলতে শোনা গেছে, ‘তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহাল না করে নির্বাচন কমিশন গঠন করে কিছু হবে না (প্রথম আলো, ২৯ পৌষ ১৪১৮)। দলগতভাবে বিএনপি রাষ্ট্রপতির এই সংলাপে যে একেবারেই আশাবাদী নয় তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে মওদুদ আহমদের কথা থেকেও, ‘‘দু’টি কারণে এই সংলাপ ফলপ্রসূ হবে না। এক. এই সংলাপ রাষ্ট্রপতি নিজের ইচ্ছায় করেননি, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে করেছেন। দুই. এককভাবে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেওয়ার কোনো ক্ষমতা তার নেই (প্রথম আলো, ২৯ পৌষ ১৪১৮)।’’ সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে অবশ্য বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘প্রেসিডেন্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কথা বললে আওয়ামী লীগ তাতে সাড়া দেবে।’ মনে হচ্ছে, সরকারি দলের পক্ষ থেকে এভাবে রাজনীতির অথবা আলোচনার একটি ক্ষেত্র তৈরি করা হচ্ছে। খুব আশাবাদী ব্যক্তিরা এ থেকে আশার আলো দেখলেও দেখতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সরকারি দলের সাংসদরা কেন অন্য কোনও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে সংসদে আলোচনা করতে আগহী না হলেও (যেমন, ট্রানজিট ইস্যু, টিপাইমুখ ইস্যু, ইত্যাদি) বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু নিয়ে সংসদের ফ্রেমওয়ার্কে আলোচনায় আগ্রহী তা সাধারণ মানুষের কাছে স্পষ্ট নয়। এমন বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন রয়েছে, যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখতে চান, অথচ সংসদে যাদের কোনও প্রতিনিধিত্ব নেই। তারা আলোচনা করবেন কোনখানে? তাদের মত-অভিমত যাচাই করা হবে কোন নিরিখে? বিষয়টি যদি এরকম হয়, বিএনপিকে সংসদে নিয়ে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার নিজের রাজনৈতিক বিজয় ঘটাতে চায়, তা হলে ভবিষ্যতে তা আরও মারাত্মক গণতান্ত্রিক সঙ্কটের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
বিএনপি অবশ্য কেবল সংলাপ নয়, রাজপথেও সক্রিয় থাকার চেষ্টা চালাচ্ছে। চট্টগ্রামের সমাবেশ থেকে খালেদা জিয়া আগামী ১২ মার্চ ‘ঢাকা চলো’ অভিয়ানের ঘোষণা দিয়েছেন। সংবাদপত্র জানাচ্ছে, তিনি কী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন তা নাকি এমনকি নীতিনির্ধারকদেরও জানা ছিল না। দলের যে কর্মসূচি সম্পর্কে এমনকি নীতিনির্ধারকরাও অন্ধকারে থাকেন, সেই কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির সাধারণ নেতাকর্মীরা কতটুকু এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন, তা এখন দেখার বিষয়। কেননা পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালসংকান্ত আন্দোলনের সাফল্য নির্ভর করছে, সামরিক বাহিনীতে গুমখুনের অভিযোগটিকে তারা কত বেশি গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারবে তার ওপরে। এই বল বিএনপি নিজেই নিজের কোর্টে টেনে নিয়েছে। তবে সাফল্য প্রত্যাশা করার আগে বিএনপিকে এখন এটি অবশ্যই মনে করতে হবে, সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীতে গুম খুনের অভিযোগ তোলার মধ্যে দিয়ে সাধারণ নাগরিকদের গুমখুনের অভিযোগগুলি তারা মার্জিনালাইজ করে ফেলেছে। আগেই বলেছি, একই অভিযোগ হিযবুত তাহরিরের লিফলেটেও করা হয়েছে। সেখানে আরও এক পা বাড়িয়ে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে আখ্যায়িত করা হয়েছে ‘মুসলিম সেনাবাহিনী’ হিশেবে। নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরির তাদের ওই লিফলেটে দাবি করেছে, ‘‘সেনাবাহিনীতে যেসব অফিসারগণ ইসলাম এবং দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন’’ তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করা হচ্ছে। লিফলেট প্রচারের পর দলটি এখন পোস্টার লাগানোর কাজে নেমেছে। অন্যদিকে, বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করার পরপরই এ খববের উৎস সম্পর্কে একটি গা-ছাড়া অবস্থান নেয়ায় জনসমক্ষে দলটির পিছিয়ে যাওয়ার আলামত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
বিএনপি’র এরকম অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের অবস্থান এখন পর্যন্ত তেমন স্পষ্ট নয়। এর আগে সাধারণ নাগরিকদের গুম খুনের অভিযোগ ওঠার পর সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমরা বলতে শুনেছিলাম, তিনি নাকি পত্রপত্রিকা পড়ে গুমখুনের কথা জানতে পেরেছেন (মানবজমিন, ১ পৌষ ১৪১৮)। আবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা বলতে শুনেছি, বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীই এসব গুম খুনের ঘটনা ঘটাচ্ছে (প্রথম আলো, ৪ পৌষ ১৪১৮)। প্রতিরক্ষা বাহিনীতে যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে, তা হলে সে ব্যাপারেও সরকার এর বেশি কিছু বলবেন বলে আশা করা যায় না। ইতিমধ্যে অবশ্য দু’একটি সংগঠন খালেদা জিয়ার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেছে, মানববন্ধনও করা হচ্ছে। বিএনপির সামরিক বাহিনীতে গুম খুনের অভিযোগের ইস্যুটিকে নাড়াচাড়া করার মধ্যে দিয়ে সাধারণ মানুষকে গুম খুন করার ঘটনাগুলি মার্জিনালাইজ করার এ সুযোগ সরকার হাতছাড়া করবে কেন? বিএনপি এ ইস্যুকে রাজনীতির মাঠে নিয়ে এসে সরকারের হাতে একদিকে সাধারণ মানুষকে গুম খুন করার ইস্যুটিকে মার্জিনালাইজ করে ফেলার সুযোগ তুলে দিয়েছে, অন্যদিকে, সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সামরিক বাহিনীতে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ পরিচালনার পুরানো ক্ষতগুলি জাগিয়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এই ইস্যু নিয়ে বিএনপি বেশি দূর যেতে পারবে বলে মনে হয় না, মাঝখান থেকে তারা শুধু সরকারের হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুপ্তহত্যা, গুম খুন ইত্যাদির অভিযোগকে অর্থহীন করে তোলার বড় সুযোগ তৈরি করে দিল।
বিএনপির পক্ষ থেকে অবশ্য রাষ্টপতির সঙ্গে সংলাপের বিষয়টিকে বড় করে তোলার মধ্যে দিয়ে রাজনৈতিক সংলাপের ব্যাপারে দলটির আন্তরিকতাকে বড় করে দেখানোর একটি প্রয়াসও রয়েছে। কিন্তু বিএনপিও এটি জানে, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ যত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাই হোক না কেন, ওইদিনের সবচেয়ে বড় ঘটনা হলো, গোলাম আযমের গ্রেফতার হওয়া। এই গ্রেফতার জনগণের কাংখিত ঘটনা; কিন্তু বিএনপির কাছে কতটা কাক্সিক্ষত ছিল তা গবেষণার বাপার। জামায়াতে ইসলামীর অবস্থা দেখে অবশ্য মনে হচ্ছে, এ ঘটনা তাদের কাছে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। গোলাম আযমের গ্রেফতারের জন্যে তারা খুব বেশি প্রস্তুত ছিল বলে মনে হয় না। আর গ্রেফতার যখন করা হলো, তখন তাদের মধ্যে নতুন এক আশা দেখা দিয়েছিল-আবদুল আলিমের মতো গোলাম আযমকেও হয়তো ‘অসুস্থতার’ কারণে জামিন দেয়া হবে। কিন্তু সেরকম কিছু ঘটেনি, সেরকম কিছু আইন অনুযায়ী প্রত্যাশা করার অবকাশও ছিল না। মাত্র মাসখানেক আগে বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবসে আমরা দেখেছি, গোলাম আযম বৃদ্ধ বয়সেও প্রচণ্ড স্পর্ধার সঙ্গে কয়েকটি স্যাটেলাইট মিডিয়ায় বক্তব্য রেখেছেন, নির্দোষ ও সৎ সাজার চেষ্টা করেছেন। কোনও কোনও মিডিয়া এখন চেষ্টা করছে সেই গোলাম আযমকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসুস্থ ব্যক্তি হিশেবে হাজির করার। জনগণের সহানুভূতি আদায় করার।
আর কে না জানে, ১১ জানুয়ারির আগের দিন পর্যন্তও বিএনপি সোচ্চার ছিল অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে। বিএনপি’র রোড মার্চ কর্মসূচির সব কটিতেই, বিশেষত চট্টগামের রোড মার্চে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের দাবিটিই বড় হয়ে এসেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষক এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, কিন্তু নির্বিকার থেকেছে বিএনপি। এমনকি খালেদা জিয়ার মুখ থেকে আমরা এ-ও শুনেছি, প্রকৃত ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীদের গোপন চুক্তি করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে (নয়া দিগন্ত, ৪ পৌষ ১৪১৮)। মির্জা ফখরুলকে আমরা বলতে শুনেছি, ‘১৯৫ জন প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীকে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগে আওয়ামী লীগের বিচার করা হবে (প্রথম আলো, ১৯ পৌষ ১৪১৮)। কিন্তু ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারির নিশ্চয়ই কোনও বড়সড় মাহাত্ম্য আছে, যার জন্যে এখন তারা নিজেদের রাশ খানিকটা টেনে ধরার চেষ্টা চালাচ্ছেন-গোলাম আযমের গ্রেফতারের ব্যাপারে মুখ বন্ধ রেখেছেন বিএনপি’র নেতারা, দলটির পক্ষ থেকে নাকি আনুষ্ঠানিক কোনও প্রতিক্রিয়াও জানানো হবে না (সমকাল, ৩০ পৌষ ১৪১৮)। এ থেকে অবশ্য এটা বোঝায় না যে, তারা আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। এ থেকে শুধু এটুকুই বলা যায়, যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপারে বিএনপি আবারও কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার নিয়ে কৌশলী রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণের কোনও সুযোগ নেই। এই ক্ষেত্রে বার বার কৌশলী রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে-এবারও হতে চলেছে।
গোলাম আযম গ্রেফতার হওয়ার প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবীরা অবশ্য ২৮ পৌষেই (১১ জানুয়ারি) মাঠে নেমেছিল। পরদিন ২৯ পৌষ সংঘবদ্ধভাবে বিক্ষোভ করার চেষ্টা করেছে তারা-চেষ্টা করেছে পুলিশকে হত্যার, ছিনতাই করেছে পুলিশের অস্ত্র (সমকাল, ৩০ পৌষ)। কিন্তু অনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে রাজনৈতিকভাবে বেশিদূর এগুনো যায় না; যত আতঙ্কই ছড়াক না কেন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা, খুব বেশি দূর তারা এগুতে পারবে না। তাদের দরকার একটি বড় প্লাটফর্ম, যে প্লাটফর্মটিকে তারা ব্যাপক জনগণের সামনে দাঁড়ানোর কাজে ব্যবহার করতে পারবে। বিএনপির সঙ্গে ঐক্যকে তারা ব্যবহার করছে সেরকম একটি প্লাটফরম হিশেবে। অন্যদিকে দলগতভাবে তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে পলিটিক্যাল ভায়োলেন্সের।
বিএনপি ভাবতেই পারে, তারাই জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে। ভাবতেই পারে, নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীরের নেতাকর্মীদেরও তারা রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে পারছে। কিন্তু বিএনপি যে গোলাম আযমের গ্রেফতারের ব্যাপারে নিশ্চুপ রয়েছে, সামরিক বাহিনীর ‘গুম খুনে’র তথ্যসূত্রের ব্যাপারে এখন যে সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক নেটওয়ার্কগুলির দিকে ইঙ্গিত করছে, তা থেকেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, বড় ধরণের এক রাজনৈতিক পরাজয় ঘটেছে তাদের। ইতিহাসে তাদের অনন্তকাল সাধারণ গুম-খুনকে মার্জিনালাইজ করার দায় বহন করতে হবে।

ঢাকা, ২ মাঘ ১৪১৮

ইমতিয়ার শামীম

আপনারে এই জানা আমার ফুরাবে না...

১৯ comments

  1. মাসুদ করিম - ১৯ জানুয়ারি ২০১২ (১২:৫৬ অপরাহ্ণ)

    এনিয়ে পরবর্তীতে আরো আলোচনা করতে হবে। এবছরের প্রথম দুসপ্তাহ দেশের রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, অথবা ইমতিয়ার শামীমের বাংলা সন তারিখের দিকে খেয়াল রেখে বলা যায় ১৪১৮-এর শেষদিকের রাজনৈতিক তাৎপর্য জাতির জীবনে গভীর ছাপ ফেলবে। আপাতত এখানে একটা বাদ পড়া বিষয়ে কথা বলে পরবর্তীতে আবার আলোচনায় ফিরে আসব আশা করছি। এই আলোচনায় সাকার স্ত্রী ফারহাতকে পোলোগ্রাউন্ডে পরিকল্পিত গুরুত্ব দেয়ার বিষয়টি বাদ পড়েছে। খালেদা জিয়া ফারহাতকে যেভাবে উপস্থাপন করেছেন এবং ফারহাতের ভাষায় যেভাবে হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এবং কুমিল্লার নির্বাচনে রাজাকার জিতেছে বলে যেইঙ্গিত দিয়েছেন তা বিএনপির রাজনীতিকে একমেরু করে তুলেছে — বিএনপি আর কোনো ভাবেই স্বাধীনতার পক্ষে এক শস্য পরিমাণ কথা বলার কোনো অবস্থান আর রাখল না।

    • ইমতিয়ার - ১৯ জানুয়ারি ২০১২ (১:৩২ অপরাহ্ণ)

      ‘গুরুত্বপূর্ণ ছিল’ নয় মাসুদ করিম, এখনও গুরুত্বপূর্ণ। আজকের কালের কণ্ঠ পত্রিকাতে কাজী হাফিজের সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্ক্ষলার অপচেষ্টা শিরোনামের একটি খবর এসেছে :

      সেনাবাহিনীতে বিপথগামী সাবেক এবং বর্তমান কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছিলেন মর্মে তথ্য পাওয়া গেছে। গত নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বিষয়টি একটি গোয়েন্দা সংস্থা জানতে পারে। বিশেষ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ওই সময় উগ্র ধর্মীয় মতাদর্শ বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান ঘটানোর লক্ষ্যে নিজেদের পক্ষের লোক সংগ্রহের জন্য গোপন প্রচার অভিযান শুরু করেন লে. কর্নেল (অব.) এহসান ইউসুফ, পিএসসি, পদাতিক (বিএ নম্বর-৩১১৯) ও তাঁর কয়েকজন সহযোগী।
      সূত্র জানায়, এহসান ইউসুফ ১৯৮১ সালের ৩০ মে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্বদানকারী নিহত মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুরের ভাগ্নে এবং ওই হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট নিহত কর্নেল মাহবুবের ভাই। ২০০৯ সালের ৫ মার্চ তাঁকে মেজর পদে থাকা অবস্থায় সেনাবাহিনী থেকে এমএস অপশনে (বাধ্যতামূলক) অবসর দেওয়া হয়। পরে সশস্ত্র বাহিনী রিভিউ কমিটি/অফিসার্স পর্ষদের সুপারিশে বর্তমান সরকার বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে পদোন্নতিবঞ্চিত ৩৬ জন সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁকেও ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি এবং আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দেয়। সার্বিক পরিস্থিতি ও প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ধারণা করা হচ্ছে, অপচেষ্টায় যাঁরা লিপ্ত ছিলেন তাঁদের সঙ্গে মূল ধারার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পর্ক নেই।
      সূত্র জানায়, অবসরে যাওয়ার পর লে. কর্নেল (অব.) এহসান ইউসুফের অবয়ব ও আচরণে লক্ষণীয় পরিবর্তন ঘটে। তাঁর শ্মশ্রুমণ্ডিত মুখ একসময়ের সহকর্মীদের কাছেও অচেনা এবং বিস্ময়ের ব্যাপার হয়ে ওঠে। আটকের পর সেনা গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে এহসান ইউসুফ গোপন প্রচার অভিযান চালিয়ে সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির লক্ষ্যে তাঁদের পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেন এবং তাঁদের সঙ্গে বর্তমান সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে মেজর জিয়া রয়েছেন বলেও জানান।
      মেজর জিয়া সম্পর্কে গত ৪ জানুয়ারি আইএসপিআরের (আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর) মাধ্যমে সেনা সদর জানায়, ‘এমআইএসটি থেকে কোর্স সম্পন্ন শেষে বদলি করা ইউনিট ৩ ই বেঙ্গলে যোগদানের জন্য মেজর জিয়াকে গমনাদেশ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে সেনা শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সম্প্রতি তাঁকে সদর দপ্তর লজিস্টিকস এরিয়া, ঢাকা সেনানিবাসে সংযুক্তি আদেশ প্রদান করা হয়। ওই আদেশ মোতাবেক মেজর জিয়া সদর দপ্তর লজিস্টিকস এরিয়ায় যোগদান না করে পলাতক রয়েছেন বিধায় সেনা আইন অনুযায়ী ইতিমধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।’
      তার আগে পলাতক অবস্থায় মেজর জিয়া ই-মেইল বিবৃতির মাধ্যমে এমন সব তথ্য প্রকাশ করেন, যা বিভ্রান্তিমূলক এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার প্রয়াস বলেও সেনা সদরের বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়।
      এদিকে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, মেজর জিয়া গত ২২ ডিসেম্বর থেকে পলাতক। ২৬ ডিসেম্বর ফেসবুকে তাঁর বিবৃতি প্রচার হয়। এরপর ৩ জানুয়ারি এ বিষয়ে একটি পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এরপর গত ৯ জানুয়ারি বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া চট্টগ্রামের সমাবেশে সেনাবাহিনীতে গুমের ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ করেন। ১০ জানুয়ারি দুপুর ২টার দিকে পলাতক মেজর জিয়া মোবাইল ফোনে প্রায় ৪০ জন বিভিন্ন পদমর্যাদার সেনা কর্মকর্তার কাছে অভ্যুত্থানে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, মেজর জিয়া ওই সেনা কর্মকর্তাদের অস্ত্র সংগ্রহ করে অভিযান শুরু করতে বলেন এবং কাদের হত্যা করতে হবে সে নির্দেশনা দেন। ওই দিন এ বিষয়ে তিনি প্রায় ৯ ঘণ্টা টেলিফোনে বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলেন। এর পরদিনই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির হলে গোলাম আযমকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। একটি গোয়েন্দা সংস্থা মেজর জিয়ার ফোনকলগুলো পরীক্ষা করে কাদের কাছে তিনি টেলিফোন করেছেন এবং কী ধরনের সংলাপ বিনিময় হয়েছে তা জানতে পারে। এরপর কুমিল্লার ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল কামরুজ্জামানকে বদলি করে ঢাকায় আনার ঘটনা ঘটে। ১৩ জানুয়ারি এমন গুজবও ছড়িয়ে পড়ে যে, কুমিল্লা সেনানিবাসে সংঘর্ষ এবং হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। সূত্রমতে, তা ছিল শুধুই গুজব। ঢাকায় এই গুজবের সঙ্গে সঙ্গে হিযবুত তাহ্রীর নামে পোস্টার সাঁটা এবং লিফলেট ছড়ানোর ঘটনা ঘটে। জানুয়ারির প্রথম দিক থেকেই হিযবুত তাহ্রীর লিফলেট ছড়ানো হতে থাকে। তাতে সেনা সদস্যদের প্রতি ইসলামী খেলাফত রাষ্ট্র গঠনের আহ্বান জানানো হয়। গোলাম আযমকে গ্রেপ্তারের পর ওই ধরনের লিফলেট এবং গুজব ছড়ানোর ঘটনা বেশি ঘটতে থাকে। এসব কারণে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও দেশের রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের সঙ্গে এসব গুজবের একটি সম্পর্ক থাকতে পারে বলে গোয়েন্দাদের ধারণা।
      সূত্র জানায়, কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তার এই হঠকারী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বৃহৎ অংশের কোনো সম্পর্কই নেই। সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক। আইএসপিআরের পরিচালক মো. শাহীনুল ইসলাম সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টার অভিযোগ সম্পর্কে গতকাল বুধবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিষয়টি তদন্তাধীন। অভিযোগ প্রমাণ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সেনা আইনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
      প্রসঙ্গত, এর আগে সেনাবাহিনীতে কর্মরত লে. কর্নেল যায়ীদ ও লে. কর্নেল হাসিনকে শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অপরাধে সেনা আইনের বিধান অনুযায়ী গ্রেপ্তার করা হয়। এ সম্পর্কে গত ৪ জানুয়ারি আইএসপিআরের মাধ্যমে সেনাসদর জানায়, এই দুই সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের পরপরই গত ১১ জুলাই একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত আদালত গঠন করা হয়। তদন্ত আদালত সুষ্ঠু তদন্ত শেষে তাঁদের সুপারিশ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করেন এবং ওই সুপারিশের ভিত্তিতে লে. কর্নেল হাসিনের বিরুদ্ধে গত ১১ ডিসেম্বর একটি ফিল্ড জেনারেল কোর্ট মার্শাল গঠন করা হয় এবং এই বিচার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বর্তমানে এই আদালতের প্রসিকিউশনে সাক্ষীদের শুনানি গ্রহণ চলছে। এ দুই কর্মকর্তার সঙ্গে বর্তমান ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই বলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা।

      আপনি ঠিকই বলেছেন, এ নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনা করতে হবে। তবে অবশ্যই দ্রুত, অতি দ্রুত… কোনও অস্বাভাবিক পরিবর্তন আমাদের কাম্য নয় এবং সেরকম প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে দ্রুত গণসংঘবদ্ধতারও প্রকাশ ঘটাতে হবে।

  2. আরিফুর রহমান - ১৯ জানুয়ারি ২০১২ (৬:৩৩ অপরাহ্ণ)

    আজকে সেনাবাহিনী সংবাদ সন্মেলন করে সব পরিষ্কার করে দিলো..

    • অবিশ্রুত - ২১ জানুয়ারি ২০১২ (৪:২১ অপরাহ্ণ)

      সামরিক অভ্যুত্থানের ব্যর্থ প্রচেষ্টা নিয়ে সেনাবাহিনীর সংবাদ সম্মেলন ছিল সত্যিই অভাবনীয়। এর আগে কখনোই এভাবে তারা জনগণের সামনে উপস্থিত হননি। এর মধ্যে দিয়ে তারা নির্বাচিত সরকারপ্রক্রিয়ার ওপর তাদের আস্থার প্রকাশ ঘটিয়েছে। কিন্তু তারপরও প্রশ্ন জাগে, সত্যিই কি এ সংবাদ সম্মেলন সব পরিষ্কার করে দিতে পেরেছে? অথবা পারবে কি ভবিষ্যতে পরিষ্কার করতে?
      প্রকাশিত খবর থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, অভ্যুত্থানপ্রচেষ্টার অন্যতম একজন মেজর জিয়া (ইতিহাসের পরিহাস, আবারও সেই জিয়া!) বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন এবং সেখান থেকেই এটি সংঘটনের চেষ্টা চালান। উল্লেখ্য, ব্রিটেনের লন্ডনের বাঙালি কম্যুনিটিতে হিযবুত তাহরীরের শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে, সেখানে বাংলা মিডিয়াতেও এ সংগঠনটির মিডিয়া সেল বেশ তৎপরতার সঙ্গে তাদের খবর বা প্রেস রিলিজ ইত্যাদি প্রকাশ করে থাকে। ব্রিটেনে এ দলটি নিষিদ্ধ নয়, সেই সুযোগে বাঙালি হিযবুতরা সেখানে নিজেদের নিরাপদ আস্তানা গড়ে তুলেছে এবং কর্মত্ৎপরতা চালাচ্ছে।
      বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে, ব্রিটেন থেকে যে সব বাংলা সাপ্তাহিক বের হয়, সেগুলিতে প্রকাশিত গত কয়েক বছরের কম্যুনিটি সংবাদ তদন্ত করা। তা হলে সেখানে হিযবুত তাহরীর-এর বাংলাদেশ নেটওয়ার্কের সঙ্গে কারা কারা জড়িত আছে, বিভিন্ন ইস্যুতে কে কী বক্তব্য দিয়েছে তা খতিয়ে দেখা। তা হলে এই নেটওয়ার্ক সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্যই হয়তো বেরিয়ে আসবে। এবং বলা যায় না, জিয়ার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কেও হয়তো ধারণা পাওয়া যেতে পারে।

  3. মাসুদ করিম - ২০ জানুয়ারি ২০১২ (৬:৪৫ অপরাহ্ণ)

    বিএনপি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তরে বিশ্বাস করে।

    মিফই আলমগীর তাহলে কী বলছেন? তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আর করবেন না!?

    • ইমতিয়ার - ২১ জানুয়ারি ২০১২ (৪:০০ অপরাহ্ণ)

      আপনার দেয়া লিংক এবং আরও কিছু সংবাদ থেকে দেখতে পাচ্ছি, বিএনপি প্রতিনিধি মির্জা ফখরুল পল্টনে সিপিবি’র সমাবেশে বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণে গত শুক্রবার শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছে এবং সিপিবি’র অফিসের সামনে স্থাপিত স্মৃতিফলকে ফুলও দিয়েছেন।
      আমার জানা নেই, কারও জানা থাকলে জানানোর অনুরোধ করছি-এর আগে বিএনপির কোনও প্রতিনিধি কি কখনও কোনও বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণে এভাবে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন? করলে কবে, কোথায় করেছেন?
      এই সংবাদে আরও দেখা যাচ্ছে, বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ অনুপস্থিত। একজন ইন করছে, আরেক দল আউট হচ্ছে! রাজনীতির কত বিচিত্র খেলা!
      আর বিএনপি তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের (সেটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অঙ্গ হোক বা না হোক) দাবি যাতে আর না করতে হয়, সে কাজই করতে গিয়েছিল মনে হয়!

      • মাসুদ করিম - ২২ জানুয়ারি ২০১২ (২:২১ পূর্বাহ্ণ)

        মিফই আলমগীর ১৩ জানুয়ারি ২০১২তে নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপি আয়োজিত এক সভায় বলেছিলেন, সরকারকে ঘাড় ধরে নামাতে হবে

        জোরদার আন্দোলনের মাধ্যমে মহাজোট সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

        তিনি শুক্রবার নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপির এক সভায় বলেছেন, “দেশে এখন একদলীয় শাসন চলছে, আগামীতে একদলীয় সরকার স্থায়ী করতে আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এ সরকারকে ঘাড় ধরে নামাতে হবে।”

  4. মাসুদ করিম - ২১ জানুয়ারি ২০১২ (২:১৫ পূর্বাহ্ণ)

    ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ জাতীয় স্মৃতিসৌধে শেখ হাসিনা ছিলেন অস্বাভাবিক রকম গম্ভীর। আর খালেদা জিয়া স্মৃতিসৌধের চূড়ার দিকে বারবার অস্বাভাবিকভাবে তাকাচ্ছিলেন। এই ভিডিও সংগ্রহ করে রাখা উচিত।

    কিন্তু ভিডিওটা সংগ্রহ করে রাখিনি, টুইট করেছিলাম হয়ত, এখন ওই যে দুজনের অস্বাভাবিকতা আমার মনে পড়ছে কিন্তু ভিডিওটা সাথে দিতে পারছি না। অবশ্য বাংলাদেশের টিভি নিউজের ক্লিপ কি সেভাবে আমরা সংগ্রহ করতে পারি, তাও জানা নেই আমার।

  5. মাসুদ করিম - ২২ জানুয়ারি ২০১২ (৯:৫০ পূর্বাহ্ণ)

    সেনা অভ্যুত্থান বাংলাদেশে শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার ‘শটকার্ট’ নয়, বাংলাদেশে সেনা অভ্যুত্থান ইসলামি জঙ্গিবাদকে এমন ভাবে ধারণ করে — যাকে বলা যায় ‘সন্ত্রাসের রাজপথে’ ওঠা। অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছে এর আশু স্বস্তি আমরা পাচ্ছি যে ক্ষমতায় যাওয়ার ‘শটকার্ট’ এবারের মতো সফল হয়নি। কিন্তু এই স্বস্তি তো পাওয়ার প্রশ্নই আসে না যে সামনে এই ‘শটকার্ট’ আবার ঘটবে না এবং সফল হবে না। অনেকে এবারের সেনা অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টাকে বিচ্ছিন্ন বলছেন এবং বলছেন এটাকে তেমন গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই। কিন্তু এর সবচেয়ে বড় গুরুত্ব তো এই, এই অভ্যুত্থান সরাসরি ইসলামি জঙ্গিবাদের আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়েই হতে যাচ্ছিল। ক্ষমতায় যাওয়ার ‘শটকার্ট’ এর বিপরীতে আমরা গণতন্ত্রকে ও নির্বাচন পদ্ধতিকে শক্তিশালী করার প্রয়াস নিচ্ছি, ভাল কথা। কিন্তু সামরিক বাহিনীতে ঠিক শতকরা কত ভাগের ‘সন্ত্রাসের রাজপথে’র দিকে অভিমুখ সৃষ্টি করেছে ইসলামি জঙ্গিবাদ তার হিসাব আমাদের কে দেবে? তার চেয়ে বড় কথা এবং সব চেয়ে বড় কথা আমাদের সামরিক বাহিনীর তল্পিতল্পা থেকে ইসলামি জঙ্গিবাদ নির্মূল হবে কিভাবে?

  6. অবিশ্রুত - ২২ জানুয়ারি ২০১২ (৪:৩৬ অপরাহ্ণ)

    জামাত-বিএনপিমনস্ক প্রবাসী বুদ্ধিজীবী সিরাজুর রহমান এ প্রসঙ্গে কী বলেছেন জানা যাক :

    রেডিও তেহরান : জনাব সিরাজুর রহমান, বাংলাদেশে সেনা অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা বানচাল করে দেয়া হয়েছে বলে আজ (বৃহস্পতিবার) সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে সেনা অভ্যুত্থান অত্যন্ত কঠিন কাজ। তারপর বাংলাদেশের মত একটি গরীব দেশে তো শক্তিশালী কোন দেশের মদদ ছাড়া সেনা অভ্যুত্থান অসম্ভব বলেই মনে করা হয়। তো বাংলাদেশ সেনবাহিনীর পক্ষ থেকে আজ যা বলা হলো, সে সম্পর্কে আপনি কী ভাবছেন ?

    সিরাজুর রহমান : দেখুন, সেনা অভ্যুত্থান বিষয়ে প্রকৃত কি ঘটেছে সেটা আমি জানি না। তবে আমি আপনাদের এর পটভূমি সম্পর্কে কিছু বলতে পারি।
    এ বিষয়ে কতগুলো জিনিস মনে রাখা দরকার। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী -পাকিস্তান, ভারত কিংবা অন্য দেশের সেনাবাহিনীর মত নয়। পাকিস্তানে এবং ভারতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সাধারণতঃ একটা মার্শাল রেস থেকে আসে; বিশেষ গোষ্ঠী থেকে আসে । আর সেটা তাদের সেনাবাহিনীর ঐতিহ্য। আর সেজন্য ঐসব দেশের সেনাবাহিনী তাদের দেশের অভ্যন্তরে কি ঘটছে তা থেকে পৃথক থাকতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে কোন মার্শাল রেস নেই, সাধারণ পরিবারের ছেলেরা বা তাদের ভাইয়েরা সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। যেহেতু তারা দেশের সাধারণ পরিবার থেকে সেনাবাহিনীতে আসে ফলে তাদের সাথে সারা দেশের সঙ্গে এবং প্রতিটি সমাজের সঙ্গে খুবই গভীর বা ওতপ্রোত যোগাযোগ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বলা যায়- বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ভাবনার সাথে সেনাবাহিনীর ভাবনার কোন পার্থক্য নেই। অর্থাৎ মোটামুটি মনে করা যেতে পারে দেশের মানুষ যা ভাবছে সেনাবাহিনীও তাই ভাবছে। মোটামুটিভাবে এই হচ্ছে প্রাথমিক পটভূমি।
    দেখুন, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে নিয়ে নানারকম তোলপাড় হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। যেমন ধরুন- রক্ষীবাহিনী ও সেনাবাহিনীর মধ্যে ছিল মস্ত বিরোধ । পাকিস্তান থেকে সেনাবাহিনীর যারা ফিরে এসেছিলেন তাদের সাথে মুক্তিবাহিনী থেকে আসা সেনা সদস্যদের বিরোধ হয়েছে । ভারত তার স্বার্থে বাংলাদেশের সেনবাহিনীতে একটি মহল গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে।

    এ প্রসঙ্গে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার আমি আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই -আর সেটি হচ্ছে , ১৯৭১ সালে তাজউদ্দীন সরকার ভারত সরকারের সাথে ৭ দফা চুক্তি করেছিলেন। সেই চুক্তিতে ছিল – বাংলাদেশের নিজস্ব কোন সেনাবাহিনী থাকবে না; বাংলাদেশের নিজস্ব কোন পররাষ্ট্রনীতি থাকবে না । ভারত বাংলাদেশের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব নেবে। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তখন থেকেই ভারত বলাবলি করে আসছে। তারা তখন থেকেই বলছিল-সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরকে তুলে দেয়া হবে এবং সীমান্ত রক্ষার জন্য বিএসএফের পরামর্শে একটি সীমান্ত রক্ষাবাহিনী গড়ে তোলা হবে।
    এছাড়া বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেনাবাহিনীর মধ্যে অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে। ২০০৯ সালের ২৫ শে ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা ঘটল। আর এই বিডিআর বিদ্রোহের ফলে এক ঢিলে অনেক পাখি পড়ে গেল। এতে বিডিআর পুরোপুরি শেষ হয়ে গেল। বিডিআরের মধ্যে যারা খুবই অ্যাকটিভ কর্মকর্তা ছিলেন বা নন কমিশন্‌ড অনেক অফিসার ছিলেন তাদের মধ্য থেকে অনেকেই ঐ বিদ্রোহের সময় মারা গেলেন । ক্যাপ্টেন থেকে শুরু করে মেজর জেনারেল পর্যন্ত ৫৭ জন সিনিয়র সেনা কর্মকর্তা মারা গেলেন ঐ বিদ্রোহে। এই ঘটনার পর আপনারা দেখেছেন কীভাবে বিডিআরকে ধ্বংস করে বিজিবি করা হল। আর এই বিডিআর ধ্বংস করে বিজিবি করার ঘটনায় বাংলাদেশের বহু মানুষ অসন্তুষ্ট। কারণ, আপনারা নিশ্চয়ই দেখছেন যে, ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এখন কথায় কথায় এবং কোন কারণ ছাড়াই বাংলাদেশিদের গুলি করে হত্যা করছে, বাংলাদেশিদের জায়গা জমি দখল করে নিচ্ছে। বিডিআর থাকা অবস্থায়- বিডিআরের অনেক যোগ্য অফিসার ও সদস্য ছিল যাদের কারণে তখন এতোটা ঘটেনি। তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন বহুবার।
    আমি আগের ঐ কথার প্রসঙ্গে আবার যাবো- ভারত যে কথা বলেছিল যে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী রাখার কোন দরকার নেই। সে সময় শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের সেকথা মানেননি । আর আজকের প্রেক্ষাপটে প্রকারান্তরে বাংলাদেশের সেই সেনাবাহিনীকে দুর্বল করে দেয়া হয়েছে। বিডিআর বিদ্রোহের সময় থেকে সে বিষয়টি খুব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

    এখানে আরেকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- মর্মান্তিকভাবে সেনাবাহিনীর যে ৫৭ জন দক্ষ অফিসারকে মেরে ফেলা হলো – সেই ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তার জায়গায় কাদেরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে? তারা কোন মতাবলম্বী সে বিষয়টি দেশের সাধারণ মানুষ জানে না। আমি এ সম্পর্কে যা শুনেছি -সেটা হচ্ছে সেনাবাহিনীর যে ৫৭ কর্মকর্তার পদ খালি হয়েছিল সেখানে আওয়ামী লীগ এবং ভারতপন্থীদের দিয়ে ভরাট করার চেষ্টা হয়েছে। তবে ঠিক সবগুলো হয়েছে কিনা তা জানি না। একই সাথে বিজিবিকে যেন পর্দার মধ্যে রাখা হয় সে ব্যবস্থাও কিন্তু করা হল। এভাবে বেশ কিছু ঘটনা ঘটে গেল অলক্ষ্যে।
    আপনারা একটা জিনিস লক্ষ্য করে থাকবেন – সেটি হচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিবসে বিডিআর কুচকাওয়াজ করেছে। আর বিডিআরের এই কুচকাওয়াজ যে শুধু রং তামাশা তা কিন্তু নয়। এটা দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সাথে সাধারণ মানুষের ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির একটা অন্যতম উপায় ।
    কিন্তু বিডিআর বিদ্রোহের সময় থেকে বর্তমান সরকারের আমলে দেখা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে এখন দুর্বল অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে এখন বিদেশে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষীবাহিনীর নামে একটি ভাড়াটিয়া বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

    বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে এমন বহু দেশপ্রেমিক সদস্য রয়েছেন – যারা মনে করেন- জাতীয় জীবনে সেনাবাহিনীর একটি পূর্ণ ভূমিকা থাকা উচিত। যে ভূমিকাটা তারা রাখতে পারছেন না। আর সে কারণে সেনবাহিনীর মধ্যে বহু সদস্য অশান্ত এবং ক্ষুব্ধ। সেনাবাহিনীর বহু সদস্য দেশে গণতন্ত্রের জন্য- স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যেও বহু মানুষ একই কারণে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। কাজেই বাংলাদেশের মানুষ যারা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে আছে বা বাইরের সাধারণ মানুষ -সকলেই গণতন্ত্রকামী একথা সবাই স্বীকার করে। কিন্তু বাংলাদেশে গণতন্ত্র দমনের জন্য, একটি একদলীয় বাকশালীয় ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য বর্তমানে আবার যে চেষ্টা চালানো হচ্ছে -এসব বিষয় সেনাবাহিনীর লোকেরা যে জানেন না -সে কথা কিন্তু ঠিক নয়। কারণ, সেনাবাহিনীর সদস্যরা ছুটিতে বাড়িতে যায়, সেখানে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীদের কাছ থেকে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে নানা কথা শোনেন, তারা পত্রপত্রিকা বা মিডিয়া থেকে জানতে পারেন দেশের সার্বিক পরিস্থিতি কোনদিকে যাচ্ছে ।
    কাজেই বাংলাদেশের গোটা সমাজব্যবস্থায় যে একটা টালমাতাল ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে সে ব্যাপারে সেনাবাহিনী পুরোপুরি সজাগ রয়েছে- একথা আমরা বলতে পারি।
    তাছাড়া ভারত যে কথা বলেছিল যে বাংলাদেশের কোন সেনাবাহিনী থাকবে না- এবং তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে অনেক সেনাকর্মকর্তা বা সেনা সদস্য ভাবতে শুরু করেছেন -তাহলে তাদের অবস্থাটা কি হবে! বর্তমান সরকারের সময়ের নানা কর্মকাণ্ড এবং সেনাবাহিনীর বর্তমান সামগ্রিক পরিস্থিতি সব মিলিয়ে সেনাবাহিনীর অনেকেই উদ্বিগ্ন। কাজেই সেনাবাহিনীর মধ্যে যে টালমাতাল ভাব এবং বহু অসন্তোষ আছে এটা আমরা ধরে নিতে পারি।

    আমি এখানে আরো একটা উদাহরণ তুলে ধরছি। সেটি হচ্ছে, গত সপ্তাহ দুয়েক হবে-সেনাবাহিনীর জনৈক এক মেজরকে ধরে নিয়ে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা ইউনিটের কাছে দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে সম্ভবতঃ তিনি বেরিয়ে এসেছেন বা আসেননি ঠিক বলতে পারছি না। কারণ আমি ইন্টারনেটে এ ব্যাপারে দেখেছি বহু কথা চালাচালি হচ্ছে। তাছাড়া ইতোমধ্যে একজন সার্ভিং মেজরকে একটি গোয়েন্দা ইউনিট অ্যারেস্ট করে অপর একটি গোয়েন্দা ইউনিটের কাছে সোপর্দ করেছে। এ ধরনের ব্যাপারগুলো যখন হয় তখন সেটি ভিন্ন বার্তা বহন করে । তাছাড়া আরেকটি বিষয় মনে রাখবেন – সেনাবাহিনীর মধ্য থেকে যখন কোন অভ্যুত্থান ঘটে বা কোন বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় -তখন সেটি হয় মেজর থেকে কর্নেল পর্যন্ত কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে। সাধারণ অভ্যুত্থান কিন্তু জেনারেলরা করেন না, ফিল্ড মাশার্লরা করেন না বা সিপাহীরাও করেন না।
    তো গত ক’দিনে আমি যে আলামতগুলো দেখেছি এই হচ্ছে তার বাস্তব চিত্র । তবে কেউ অভ্যুত্থান করার চেষ্টা করছিল কি না বা বিদ্রোহ করার চেষ্টা করছিল কি না- এ ব্যাপারে আমার কাছে কোন সঠিক খবর নেই, আমি কোন সঠিক খবর জানতে পারিনি।

    রেডিও তেহরান : আজ (বৃহস্পতিবার) সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রাজ্জাক বলেছেন, কিছু প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকের ইন্ধনে সেনবাহিনীতে কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত কতিপয় কর্মকর্তা অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের ইন্ধনের যে কথা বলা হয়েছে, তা তিনি স্পষ্ট করেননি। এ কারণে, এর সম্ভাব্যতা বা এর বাস্তবতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠছে। তো আপনি কিভাবে দেখছেন বিষয়টিকে?

    সিরাজুর রহমান : দেখুন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা কাজ করে খান। প্রবাসে গিয়ে তারা হাঁড় খাটুনি খেটে উপার্জন করেন। তারা কেউ বেকার বসে থাকেন না। বাংলাদেশে বহু বেকার মানুষ রয়েছেন, বাংলাদেশের সরকারে, মন্ত্রীসভায় এবং সেনাবাহিনীতে বহু বেকার মানুষ রয়েছেন । আর যারা প্রবাসে থাকেন তাদের পরিশ্রমের অন্ত নেই। তারা কেউ সময় অপচয় করেন না বা বসে থাকেন না । আমি নিজে একজন প্রবাসী, আমাকে সংসারের সব কাজ করতে হয়, একইসাথে লেখালেখি করি, আমার বয়স হয়েছে; আমার পরিবারে একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেছে, তারপরও আমাকে কাজ করতে হয়। কাজের বাইরে আমাদের অন্য কোন বিষয় থাকে না। ফলে প্রবাসে থেকে মানুষ সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান করার চেষ্টা করবে- এ কথার কি যুক্তি থাকতে পারে? তাছাড়া প্রবাসীরা কেন অভ্যুত্থানে অংশ নেবে- এ প্রশ্নটিও কিন্তু ওঠে ! আপনাদের মনে থাকার কথা, ১৯৭৫ সালে যে অভ্যুত্থান ঘটেছিল তা কি প্রবাসীরা করেছে? ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে যে সেনা অভ্যুত্থান হয়েছিল সেটি কি প্রবাসীরা করেছিল? তারপর সিপাহীরা ৭ নভেম্বর খালেদ মোশাররফের বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহ করেছিল- সেটাও কি প্রবাসীরা করেছিল? ৭ ই নভেম্বর সিপাহীরা বিদ্রোহ করে নিজেদেরকে মুক্ত করেছে ; জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেছে। তো এখানে প্রাবাসীদের কোন ভূমিকা তো দেখতে পাচ্ছি না। বরং এসব অনেক ক্ষেত্রে যে বিদেশিদের ভূমিকা রয়েছে- একথা বলা যায়। বাংলাদেশে যা কিছু ঘটছে বা ঘটেছে- তাতে পাশের দেশের ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর যে ছয় লাখ তিন হাজার এজেন্ট রয়েছে- তারা কী করছে না করছে সেগুলোর দিকে দৃষ্টি দিন, সেগুলো খুঁজে বের করুন । প্রবাসীরা খেটে খায়, অতি কষ্টের আয় তারা দেশে বাপ মায়ের কাছে পাঠায় – ফলে সেনা অভ্যুত্থান ঘটানোর সঙ্গে প্রবাসীদের কোন রকম যোগাযোগ বা সরাসরি কোনো সংযোগ আছে – একথা আমি একদম বিশ্বাস করি না।

    রেডিও তেহরান : ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রাজ্জাক সংবাদ সম্মেলনে আরেকটি কথা বলেছেন। তিনি অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার সঙ্গে জড়িত সেনা কর্মকর্তাদেরকে ধর্মান্ধ বলেছেন। তো এই ধর্মান্ধ শব্দের কি তাৎপর্য থাকতে পারে?

    সিরাজুর রহমান : দেখুন বাংলাদেশে আজ যারা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছে, যেমন ধরুন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী- তাদেরকে বলা হচ্ছে যুদ্ধ অপরাধী। বাংলাদেশের মানুষ যারা মাথায় টুপি পরেন বা মুখে দাড়ি রাখেন – তারা যদি রাজনীতির কথা-বার্তা বলেন ,তখন বলা হয় ওরা যুদ্ধ অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে। আবার যদি ধর্মের কথা বলেন, টুপি পরেন, লুঙ্গি পরেন -তাদেরকে বলা হচ্ছে হিজবুত তাহরীর। এইসব নানা বিষয় ঘটছে ।
    আসলে ব্যাপারটা কি জানেন? বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্র নীতি হচ্ছে নতজানু। সরকার ভারতকে খুশী করার জন্য বলছে তারা ধর্মনিরপেক্ষ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- দেশে ফসল ভাল হয়েছে তার মা দূর্গার কল্যাণে। মা দূর্গা সদয় হয়েছিলেন, তিনি হাতিতে চড়ে এসেছিলেন বলেই বাম্পার ফলন হয়েছে।
    বাংলাদেশে এখন সরকারি উদ্যোগে তোড়জোড় চলছে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠার। অন্যদিকে ভারতকে খুশী করার জন্য নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সংবিধান থেকে ইসলামকে বাদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু দেখেন ভারতের অত্যন্ত উগ্র ধর্মীয় দল হচ্ছে ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি । যারা আগে ক্ষমতায় ছিল, বর্তমানে প্রধান বিরোধী দল ; যাদের একটি বড় কম্পোনেন্ট অংশ হচ্ছে শিব সেনা – যারা মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করেছিল। তারা মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করেছিলো এই কারণে যে তিনি পরমতসহিষ্ণু ছিলেন। হিন্দু-মুসলিম সকলের মতের প্রাধান্যের কথা বলতেন। কিন্তু শিব সেনাদের সেটি সহ্য হয়নি; ফলে তাকে হত্যা করা হয়। তো ভারতের মত দেশে বিজেপির মতো উগ্র রাজনৈতিক দল রয়েছে, যারা ক্ষমতায় ছিল এবং খুব সম্ভবতঃ আবার তারা আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় আসবে। অথচ বাংলাদেশের সরকার দেখুন সেই ভারতকে খুশী করার জন্য বাংলাদেশের অনেককে মৌলবাদী বলছে। অনেককে সন্ত্রাসী বলা হচ্ছে।

    আমেরিকার ৯/১১’র ঘটনায় কোন বাংলাদেশি জড়িত ছিল একথা আমি বিশ্বাস করি না। অথচ আমেরিকার কাছেও ভালো হওয়ার জন্য বলছে আমরা সন্ত্রাস দমন করছি। আসলে সন্ত্রাস দমনের নামে বাংলাদেশে ধর্মীয় রাজনীতি বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা চলছে।‌ আর সরকার যত বেশী মা দূর্গা দূর্গা করবে, রামকৃষ্ণ মিশন সৃষ্টি করতে চাইবে এবং উগ্র সেক্যুলারিজম প্রতিষ্ঠা করতে চইবে- বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ তত বেশী ক্ষুব্ধ হবে। কারণ, বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ মুসলমান। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ অত্যন্ত ধর্মভীরু। তাদের ধর্মের ওপর যদি কোন আঘাত আসে তবে তারা কোনমতে সহ্য করবে না। ফলে ধর্মীয় রাজনীতি ধ্বংস করার জন্য যে চেষ্টা চলছে সেটা তো বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেবে না। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বা ধর্মীয় অন্যান্য যে সব দল আছে তাদের বিরুদ্ধেই সব কিছু হচ্ছে। অথচ এইসব ধর্মীয় দলের সবাই কিন্তু গণতন্ত্র চায়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটা চান না। শেখ হাসিনা যেভাবে ফ্যাসিস্ট পন্থায় ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার চেষ্টা করছেন, সেটি বাকশাল হোক বা অন্য কোন নামে হোক -এখানে তিনি সকল গণতন্ত্রপন্থীদের শক্র বলে মনে করেন।

    রেডিও তেহরান : জনাব সিরাজুর রহমান, আপনার কথার সূত্র ধরেই আরেকটি প্রসঙ্গের অবতারণা করতে চাই। বাংলাদেশে আমরা লক্ষ্য করেছি, প্রশাসনের সব বিভাগে ইসলামপন্থীদের ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী বহু কর্মকর্তা ওএসডি হয়ে আছেন। ঠিক এ কারণেই সেনাবাহিনীতে যারা ইসলামী জীবন বিধানের প্রতি যত্নবান তাদের বিরুদ্ধে এক ধরনের অভিযান শুরু হয়ে গেছে। অনেকে ‘ধর্মান্ধ ‘ শব্দটিকে তারই আলোকে ব্যাখ্যা করছেন। আপনি এ বিষয়ে কি মনে করেন ?

    সিরাজুর রহমান : আসলেও তো তাই । আপনারা কি লক্ষ্য করেছেন বাংলাদেশের পুলিশে বা সরকারি চাকুরির বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে- আর সেটি কখনও ডাবল আবার ট্রিপল প্রমোশন দিয়ে? আর সেই সব জায়গায় অভিজ্ঞ যেসব সংখ্যাগুরু কর্মকর্তা বা কর্মচারী ছিলেন তাদেরকে বাধ্যতামূলক অবসর বা ওসডি করা হয়েছে। এর পেছনে কারণ হচ্ছে ,বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মনে করে যে, শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ হচ্ছে বাংলাদেশে তাদের রক্ষক । আর তাদেরকে তোয়াজ করার জন্য শেখ হাসিনা ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে বলেন, তার মা দূর্গা।
    আমি বলব বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্রে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের যেসব অফিসার আছেন তাদের মধ্যে কিছুটা ন্যায়নীতি আছে, তারা ন্যায়পরায়ণ হতে পারেন। তারা ন্যায়পরায়ণ বলেই আওয়ামী লীগ সরকার যেটি বলবেন সেটি তারা করবেন এমনটি নয়। কিন্তু সংখ্যালঘু যারা রয়েছেন – তারা হাসিনার জোরে ডাবল বা ট্রিপল প্রমোশন পেয়ে বড় বড় পদে রয়েছেন- তাদেরকে যে নির্দেশ দেবে সরকার তারা তা মানবে। তাদেরকে যদি সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ জয়নুল আবদিনকে লাঠিপেটা কর, তাকে ন্যাংটা কর -তাহলে তারা করবে এবং করছে ।

    এই মুহূর্তে কয়েকটি বিষয় জানতে ইচ্ছা হচ্ছে : ১. তাজউদ্দীনের সাত দফা চুক্তিটার বিবরণ কোথায় পাওয়া যাবে? ২. প্রবাসী হলেই যে তিনি কোনও ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকতে পারেন না, সিরাজুর রহমান তা কি জোর দিয়ে বলতে পারেন?
    মন্তব্য দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে। আপাতত এই।

  7. মাসুদ করিম - ২৩ জানুয়ারি ২০১২ (৬:৫৮ অপরাহ্ণ)

    এই সাইটে সুপারিশকৃত লিন্কে হিযবুত তাহরীর নিয়ে বিভিন্ন সময়ে যা ছিল

    চট্টগ্রামে আবারো নিষিদ্ধঘোষিত হিযবুত তাহরীর-এর বিক্ষোভ মিছিল। দৈনিক আজাদীর খবর

    নগরীতে আবারো নিষিদ্ধ হিজবুত তাহরীরের মিছিল, আটক ৪
    চট্টগ্রামকে টার্গেট করে হিযবুত তাহ্‌রীর এর প্রচারণা ও কার্যক্রম চলছেই। নিষিদ্ধ ঘোষিত হলেও তাদের কর্মসূচি বাসত্মবায়নে তারা চোর – পুলিশ খেলছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সাথে।

    গতকাল মঙ্গলবার একই কায়দায় তারা লাভ লেইন মোড়স্থ ফিলিং স্টেশনের সামনে বেলা সোয়া ১২টার দিকে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এনায়েত বাজারের দিক থেকে তারা সেখানে যায়। মাত্র পনের থেকে বিশ মিনিট তারা সেখানে অবস্থান করে। কাজীর দেউড়ির দিক থেকে পুলিশের একটি পিক আপ আসতে দেখে তারা ব্যানার লিফলেট ফেলেই পালিয়ে যেতে চেষ্টা করে। এ সময় জনতার সহায়তায় পুলিশ হিযবুত তাহরীর চার নেতা কর্মীকে গ্রেপ্তার করে এবং ব্যানার ও বেশ কিছু লিফলেট জব্দ করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন কাজী ইরফানুল করিম, মোহাম্মদ হোসেন, বাদশা মিয়া ও মোজাম্মেল হক।

    অনুসন্ধানে এবং ইতোপূর্বে গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাব ও পুলিশের গোয়েন্দা স্কোয়াডের কর্মকর্তাগণ জঙ্গি সংগঠন, দেশে তাদের কর্মতৎপরতা, অন্যান্য দেশের পৃষ্ঠপোষকতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেয়েছিল। তাতে দেখা গেছে ২০০১ সালে সংগঠনটি এদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর উস্কানিমূলক কর্মকান্ড, সরকারের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার সহ নানাবিধ বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে সংগঠনটিকে এদেশে নিষিদ্ধ করা হয়। নিষিদ্ধ হওয়ার পর প্রায় দুই মাস চট্টগ্রামে তাদের কোন ধরনের কার্যক্রম চোখে পড়ে নি। ধীরে ধীরে তারা সেমিনার সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে তাদের করণীয় সম্পর্কে সাধারণকে জানানো এবং উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে দলে টানার চেষ্টা করে আসছে। মূলতঃ ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার নামে সরকারের বিরুদ্ধাচারণ করে চলেছে। গণতান্ত্রিক সরকার মানতে নারাজ সংগঠনটির নেতা কর্মীরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সম্প্রতি সংগঠনটির কিছু সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তারের পর তারা তাদের কৌশল পাল্টে ফেলে। বর্তমানে তারা বাস স্ট্যান্ড, রেল স্টেশন, পত্রিকা পাড়া, বিভিন্ন শপিং মলে সংগঠনের পক্ষে বিভিন্ন দাবি সম্বলিত লিফলেট বিতরণ, নিজস্ব বক্তব্য সম্বলিত পোস্টার দেয়ালে সাঁটানো এবং ঝটিকা মিছিল ও সমাবেশেই সীমাবদ্ধ। এসব সমাবেশে সংগঠনের ১০/১৫ জন অংশ নেয় এবং সিএনজি টেক্সিগুলো থাকে পূর্ব নির্ধারিত। যাতে দ্রুত সটকে পড়তে পারে। চলতি বছরের মার্চে চেরাগী পাহাড় থেকে তাদের একটি মিছিল জামাল খান প্রেস ক্লাব পর্যনত্ম গিয়ে সেখান থেকে সিএনজি টেক্সিযোগে চম্পট দেয়। গত ৩০ এপ্রিল শুক্রবার জুমার নামাজের পর তারা কয়েকটি মসজিদে লিফলেট বিতরণ করে। লিফলেটে শিরোনাম ছিল হে মুসলিমগণ! শেখ হাসিনা আপনাদেরকে ত্রুুসেডার আমেরিকা ও মুশরিক শত্রুরাষ্ট্র ভারতের হাতে সমর্পণ করতে যাচ্ছে। এ ঘৃণ্য কাজে সে সফল হওয়ার পূর্বেই তাকে অপসারণ করুন। গত ১৬মে নগর পুলিশ খুলশী এলাকায় হিযবুত তাহরীর বিভাগীয় আসত্মানা চিহ্নিত করতে পেরেছে। এখান থেকে সংগঠনটির কার্যক্রম সম্পর্কেও চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যায়।

    গতকাল হিযবুত তাহরীর পক্ষ থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তারা চট্টগ্রামে মার্কিন সামরিক মহড়া ‘টাইগার শার্ক-৩’ পরিচালনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় ও বিক্ষোভ মিছিল করে। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে শত্রুরাষ্ট্র অভিহিত করে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছে। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় আমেরিকা মুসলিম উম্মাহর স্বার্থকে পদদলিত করতে দিন রাত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এটি ঘৃণ্য চক্রান্ত এবং এতে আমেরিকা এ অঞ্চলে তার কৌশলগত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে। তাই এ অঞ্চলে আমেরিকার সামরিক বাহিনীর উপস্থিতির অর্থ ইসলামের পুনজাগরণ প্রতিহত করা। বিজ্ঞপ্তিতে খেলাফত রাষ্ট্র পুনঃ প্রতিষ্ঠার আহবান জানানো হয়।

    গতকাল হিযবুত তাহরীরের বদর দিবসের র‌্যালিতে দেখা যাচ্ছে সাত পুলিশ আহত হয়েছেন। পুলিশের ওপর হামলা ও সংঘর্ষে লিপ্ত হিযবুত তাহরীরের ত্রিশ কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ(কাউকে আহত করতে পারেনি)। তাহলে সেদিন তেল-গ্যাস রক্ষা জাতীয় কমিটির শান্তিপূর্ণ মিছিলে লাঠিপেটা করতে হয়েছিল কেন? মিছিলকারীদের কাছে লাঠি ছিল না বলে? আর গতকাল তো দেখা গেল ৭ পুলিশ মার খেয়েছে পুলিশ কাউকে মারতে পারেনি; আমরাও চাই না আমাদের পুলিশ কাউকে মারুক–কিন্তু আমরা তো দেখলাম শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ মারবে, আর সংঘর্ষে লিপ্ত মিছিলের কাছ থেকে পুলিশ মার খাবে–এই এখন আমাদের পুলিশের ক্ষমতা!

    হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশ আওয়ামী সরকারকে ইসলাম বিরোধী বলছে এবং তাদের ৩০ নেতাকর্মীর মুক্তি চাইছে। ভারত-বৃটিশ-মার্কিন ক্রুসেডারদের খুশী করতে সরকারের পেটোয়া বাহিনীর কথা এরা প্রায়ই বলছে। এবং এ সংগঠনটি যে কোনো কর্মসূচী ঘোষণা বা প্রতিবাদ জানাতে প্রচুর সংখ্যক পোস্টার দেশের বড় শহরগুলোতে লাগাচ্ছে, বিশাল অর্থপুষ্ট সংগঠন মনে হচ্ছে, কিন্তু এরা কি শুধুই শান্তিপূর্ণ সংগঠন, কী এদের ভূমিকা, কী আছে এদের শান্তির পেছনে, কে জানে?

  8. মাসুদ করিম - ২৪ জানুয়ারি ২০১২ (২:৪৬ অপরাহ্ণ)

    ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম আবদুল হাফিজ, সাবেক মহাপরিচালক,বিআইআইএসএস — এই কলাম লেখক তো পুরোদমে এক প্রকার অব আর্মি বুদ্ধিজীবী যারা ইসলাম ছাড়া কিছুই বোঝেন না। এদের মতো লোকই Bangladesh Institute of International & Strategic Studies (BIISS) এর মহাপরিচালক ছিলেন, কী কাজ এই স্ট্র্যাটেজিক প্রতিষ্ঠানের আমাদের প্রতিরক্ষা স্ট্র্যাটেজির মুখ্য প্রতিষ্ঠানে এমন সব অব আর্মিরাই ছিল এবং এখনো এমন সব অব আর্মিরাই আছে? বিশ্বাস ও ধর্মীয় অনুশাসনের আকুতিতে কী এমন আঘাত এসে গেছে তা কিন্তু পরিস্কার করেননি এম আবদুল হাফিজ। এই ধরনের লোককেও কি বলা যাবে ‘ধর্মান্ধ’?

    এবং আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে লেখাটিতে অব আর্মি প্রবর একবারেই সাম্প্রতিক ক্যুয়ের কথা আনেননি।

    • মাসুদ করিম - ২৬ জানুয়ারি ২০১২ (৬:০৯ অপরাহ্ণ)

      আবারো এম আবদুল হাফিজ প্রসঙ্গ এলো। এবার সেনাবাহিনী ব্যর্থ অভ্যুত্থানের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দেশের সংবাদ মাধ্যমে জানানোর পর থেকে ‘জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল’ নিয়ে পুরনো আলাপ আলোচনা আবার শুরু হয়েছে। এপ্রসঙ্গে আজ সমকালে এক কলামে এম আবদুল হাফিজ সোজাসাপ্টা বলেছেন ‘জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল’এর কোনো প্রয়োজন নেই। এবং তার চেয়েও বড় কথা এই লেখাতেও কোথাও তিনি ব্যর্থ অভ্যুত্থানের কোনোই উল্লেখ করেননি।

      ‘জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল’ নিয়ে কথা বলার আগে আমার মনে হয় বাংলাদেশের জাতীয় আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা কর্মকাণ্ডের একটি প্রতিষ্ঠানের কথা আগে ভাবা উচিত। সবার আগে প্রয়োজন NSI-কে DGFI-এর যুগলবন্দি অবস্থান থেকে মুক্ত করে একে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গোয়েন্দা সংস্থা হিসাবে সিভিলিয়ান আধিপত্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করা। এবং DGFI এর মতো সমন্বিত সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা সহ দেশের বিদ্যমান সব গোয়েন্দা সংস্থাকে NSI-এর নেতৃত্বে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসা। এভাবে কয়েক বছর NSI-এর নেতৃত্বে জাতীয়-আন্তর্জাতিক সামরিক-অসামরিক গোয়েন্দা কর্মকাণ্ডকে পর্যবেক্ষণ করে যখন প্রতিষ্ঠান হিসাবে NSI-এর ভিতটা শক্ত হবে তখন ‘জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল’ আরো বেশি দক্ষতার সাথে গড়ে তোলা যাবে।

      কিন্তু এম আবদুল হাফিজ কায়মনোবাক্যে আর্মড ফোর্সেসের আধিপত্যে বিশ্বাস করেন, তাই তিনি ‘জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল’ দরকার নেই, এবং বাংলাদেশের এধরনের প্রতিষ্ঠান নির্মাণের যোগ্যতা নেই বলে মনে করেন। এবং তিনি এও মনে করেন আমাদের মতো দেশের যা নিরাপত্তা ঝুঁকি তা জাতীয় সংসদের ডিফেন্স কমিটি দিয়েই পর্যালোচনা হয়ে যাবে।

      যেকোনো নিরাপত্তা বিতর্কে এ দেশের জন্য একটি জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠন প্রস্তাবের সঙ্গে আমি দ্বিমত পোষণ করে এসেছি। এক দশককাল নিরাপত্তা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত থাকার সুবাদে এ বিষয়ে আহরিত যৎসামান্য জ্ঞানের আলোকে আমার কাছে এমন প্রস্তাব প্রাসঙ্গিক মনে হয়নি। ২৩ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সদ্য গঠিত থিঙ্কট্যাঙ্ক সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট ফান্ড সিকিউরিটির উদ্যোগে রাওয়া ক্লাবে অনুষ্ঠিত নিরাপত্তা সেমিনারটিতে উপস্থিত থাকার এবং বিতর্কে অংশগ্রহণের সৌভাগ্যও হয়েছে। এখানেও আলোচনার বিভিন্ন পর্যায়ে এ দেশের জন্য এক নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠনের বিষয়টি উপরে উঠে আসে এবং পদস্থ সামরিক কর্মকর্তারা (যাদের অধিকাংশই অবসরপ্রাপ্ত) এর সপক্ষে তাদের মতপ্রকাশ করেন। এখানেও আমার কাছে এমন কাউন্সিল গঠনের দাবি অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে।
      এর প্রধান কারণ যে আমাদের মতো অনুন্নত ও পশ্চাৎপদ দেশের নিরাপত্তা দর্শনের সঙ্গে এমন দাবির কোনো মিল নেই। আমাদের বুঝতে হবে যে জাতীয় নিরাপত্তা একটি Perception -এর ব্যাপার এবং বিভিন্ন দেশে বিরাজমান বাস্তবতার নিরিখে Perception ভিন্ন ভিন্ন হতে বাধ্য। পৃথিবীতে কমবেশি ৪০টি শিল্পোন্নত অগ্রসর দেশ আছে। সভ্যতার অগ্রযাত্রায় তারা অনেক এগিয়ে। তাদেরও নিরাপত্তা সমস্যা আছে কিন্তু তারা তা ‘শক্তির ভারসাম্য’ (Balance of Power ) বহাল রেখে নিশ্চিত করে। তাদের ভারসাম্য বিধানের মধ্যে আরও আছে অস্ত্র প্রতিযোগিতা এবং Deterrence -এর উদ্ভাবনা। বলাবাহুল্য, একটি অতিউন্নত দেশের জন্য তা একটি জটিল সমস্যা। সেই সমস্যা নিরসনে তাদের একটি নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রয়োজন থাকতে পারে।
      আরও একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, তাবৎ বিশ্বে নিরাপত্তার বিষয়টি কিন্তু বেসামরিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব নিয়ন্ত্রিত। এ জন্য প্রয়োজনীয় রাজনীতিক, নিরাপত্তা কুশলী এবং বিশেষজ্ঞের অভাব উন্নত বিশ্বে নেই। ভাবার বিষয় যে, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এমন কুশলী ব্যক্তিবর্গের সমাহার কি আমরা আমাদের দেশে ঘটাতে পেরেছি! তত্ত্বগতভাবে একটি নিরাপত্তা কাউন্সিলের শীর্ষে থাকেন দেশের প্রধান নির্বাহী, যিনি আমাদের এই গণতান্ত্রিক দেশে একজন রাজনীতিকও বটেন। চিন্তা করার বিষয়, আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনের যারা ভবিষ্যৎ প্রধান নির্বাহী তাদের হাতে কি আমাদের রাজনৈতিক বিকাশের এই পর্যায়ে এমন গুরুদায়িত্ব ন্যস্ত হতে পারে। শুধু চার্চিলের মতো রাজনীতিক বা কিসিঞ্জার-ব্রেজনস্কির মতো নিরাপত্তা কুশলীই বেসামরিক অঙ্গনের হওয়া সত্ত্বেও বলতে পারেন যে Warfare is too serious malter to be left in the hands of generals. . আমাদের দেশে রাজনৈতিক পরিপকস্ফতা আসা পর্যন্ত অবশ্যই আমরা নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠন করে তার শীর্ষে একজন আনাড়ি রাজনৈতিক প্রধান নির্বাহীকে বসিয়ে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারি না।
      রাওয়া ক্লাবের সেমিনারে একজন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল যেভাবে নিরাপত্তা কাউন্সিলের ওকালতি করে যেসব যুক্তিজালের উপস্থাপনা করেছেন, তা অনবদ্য; কিন্তু দুঃখজনকভাবে কিছুটা বাস্তবতাবর্জিত। আমার কাছে মনে হয়েছে যে, তার অজ্ঞাতসারে উপস্থাপনাটি উন্নত বিশ্বের নিরাপত্তা দর্শনের ছায়া অবলম্বনে তৈরি। আমাদের দেশের নিরাপত্তা দর্শন উন্নয়নভিত্তিক এবং শক্তির ভারসাম্যের কথা আমরা ভাবতেই পারি না। তবে Basic deterrence অবশ্যই আমাদের থাকতে হবে এবং তার nucleus হবে আমাদের পনের কোটি দেশপ্রেমিক মানুষ। তবে দেশপ্রেম শুধু কথার কথা নয়। সুদর্শন দিয়ে, দারিদ্র্র্য বৈষম্য নিরসন করে, বেকারত্বের অবসান ঘটিয়েই শুধু সেই দেশপ্রেমকে উজ্জীবিত করা যায়। আমাদের নিরাপত্তা হুমকির উৎস ভারত, পাকিস্তান বা মিয়ানমার নয় যদিও তাদের সঙ্গে আমাদের বিবাদ-বিভেদ ছিল বা এখনও আছে। কিন্তু আমরা যদি আমাদের নিরাপত্তা হুমকির অভ্যন্তরীণ উৎসগুলো শনাক্ত করে সেগুলোর বিহিত করতে পারি, তবে আমরা আর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগব না। মনে রাখতে হবে, একটি বুলেট তা সীমান্তের ওপার থেকেই আসুক, নগরীর কোনো অন্ধগলিতে ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীর অস্ত্র থেকেই বিক্ষিপ্ত হয়ে আসুক: দুটিই নিরাপত্তাহীনতার উৎস। নিরাপত্তাহীনতার আরও উৎস ক্ষুধা, দারিদ্র্য, ব্যাধি, আইন-শৃঙ্খলাহীনতা, আশ্রয়-আবাসনহীনতা এবং রাজনৈতিক, সামাজিক অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা। এসব বিহিত কোনো সামরিক পন্থায় নেই, অস্ত্রেও নেই। এর সমাধান রাজনৈতিক সরকারের। তাই সরকার যদি আন্তরিক হয় এবং তার ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব যোগ্যতা সহকারে পালন করতে থাকে, নিরাপত্তা কাউন্সিল নামে একটি বিষফোঁড়া তৈরির কোনো যৌক্তিকতা আছে কি। তার পরিবর্তে যদি জাতীয় সংসদে নিরাপত্তা সমস্যাগুলো নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয় এবং সংসদের Defence committee -কে ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ ইস্যুগুলোর দায়িত্ব অর্পণ করা যায় তা প্রস্তাবিত কাউন্সিলের চেয়ে কম কার্যকরী হবে না। তবে সাধারণত জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়গুলোর আলোচনা-বিতর্ক উৎসাহিত করা দরকার। এ জন্য যে সেটাও একটি deterrence হিসেবে কাজ করে। দেশের জনগণ যত বেশি নিরাপত্তাসচেতন হবে জাতীয় দুুর্দিনে তারা তত বেশি প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে। আমার দৃষ্টিতে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সঙ্গে বিকল্প রাজনৈতিক পরিপকস্ফতা, নিরাপত্তা ও বৈদেশিক নীতিতে ঐকমত্য এবং যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক তাদের সুশাসন।

      তার লেখার যেঅংশগুলো বোল্ড করেছি সেগুলো প্রত্যেকটিই হাস্যকর এবং শেষেরটি সবচেয়ে হাস্যকর।

      লিন্ক এখানে

  9. মুক্ত - ২৫ জানুয়ারি ২০১২ (১২:৪৬ পূর্বাহ্ণ)

    হ্যাঁ, বিষয়টি সত্যিই চিন্তার। আমাদের খুব সতর্ক হয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ রাখতে হবে।

  10. অবিশ্রুত - ৩০ জানুয়ারি ২০১২ (২:০৪ অপরাহ্ণ)

    অবশেষে ফরহাদ মজহার এ ব্যাপারে আওয়াজ দিলেন। তিনি আমাদের জানালেন, সেনাবাহিনীর সংবাদ সম্মেলনে তো সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে এরকম দাবি করা হয় নাই, বলা হয়েছে সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্ক্ষলা সৃষ্টির অপপ্রয়াস-এর কথা!
    এসব কথার মানে কি?
    এক পর্যায়ে তিনি নিজেই তা খোলাসা করে বলেছেন :

    অর্থাৎ তাঁরা স্পষ্টই আরেকটি প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী পক্ষে দাঁড়িয়ে ‘এই সাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায়’ গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক জনসাধারণ ও সংশ্লিষ্ট সকলের সহায়তা কামনা করছেন। সেনাবাহিনীর মধ্যে ‘বিশৃংখলা’ না ‘অভ্যুত্থান’-এর জন্য তারা ‘একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দল- অর্থাৎ বিএনপিকে সরাসরি অভিযুক্ত করেছেন। পুরা বক্তব্যই আওয়ামী লীগের পক্ষে দাঁড়িয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রচার বলে যে কোন সচেতন নাগরিকের মনে হবে।

    তিনি নিশ্চয়ই জানেন, এ কথা বলার অপর অর্থ, সেনাবাহিনীতে এমন কিছু ঘটতে চলেছিল, যা বিএনপির পক্ষে যেত, অর্থাৎ সোজা কথায় সরকারে পরিবর্তন আনার একটি চেষ্টা চলেছিল। সেনাবাহিনী যদি সরকারকে রক্ষার চেষ্টা করে সেটা তা হলে দোষের পর্যায়ে পড়ে? তা হলে সেনাবাহিনী আসলে কার অধীনস্থ হবে? সেটি কি সার্বভৌম অথবা স্বায়ত্তশাসিত?
    তিনি আরও মজার মজার কথা বলেছেন। খানিকক্ষণ বিনোদিত হওয়ার জন্যে এখানে গিয়ে পড়তে পারেন সেনাবাহিনীর নয় দায় সরকারের শিরোনামের পুরো কলামটি

  11. অবিশ্রুত - ৩১ জানুয়ারি ২০১২ (২:০৬ অপরাহ্ণ)

    দ্য স্টেটসম্যান-এ মানস ঘোষ লিখেছেন, কেবল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া স্থগিত করাই নয়, অসমাপ্ত মিশন সমাপ্ত করাও ছিল এ অভ্যুত্থানের লক্ষ্য :

    Actually, the coup that failed was aimed at not only scuttling the war crimes trial of four most senior Jamat leaders ~ Gholam Azam, Matiur Rahman Nizami, Ali Ahsan Mujahid and Delwar Hossain Saidi ~ but also at eliminating Sheikh Hasina and her younger sister Rehana. The assassinations would have ensured the total liquidation of Sheikh Mujib’s family, a goal pro-Pakistan Islamists have been trying to achieve ever since Bangabandhu and most of his family were annihilated 36 years ago. The coup was meant to “finish the unfinished job” and was part of an international conspiracy, the masterminds of which are mostly Bangladeshis who live in, besides Dhaka, in places as distant and disparate as Hongkong, Islamabad, Jeddah, Dubai, London and Ottawa.

    আরও একটি উদ্দেশ্যও ছিল বটে :

    The other major objective for attempting a coup was to shield the BNP leadership, especially party chairperson Begum Khaleda Zia, son Tareq (no. 2 in the party), and former ministers in her Cabinet named as the principal accused in a number of cases related to corruption and arms smuggling.

    মানস ঘোষের নিবন্ধটি পড়া যাবে এখান থেকে।

  12. মাসুদ করিম - ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ (৬:৩১ অপরাহ্ণ)

    মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদের পদত্যাগের পর সেখানে শান্তি ফিরে এসেছে, চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থার এমন রিপোর্ট প্রমাণ করে চীন এই উৎখাতকে খুব স্বাভাবিকভাবে জনগণের প্রতিবাদের মুখে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ হিসেবে দেখছে এবং উৎখাতকারীদের সমর্থন করছে। চীন ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে এরকম গণতন্ত্রকামী সমর্থন দেয়া অব্যাহত রাখবে? মালদ্বীপ দিয়েই তা শুরু করল চীন? নাকি বাংলাদেশ দিয়েই শুরু করতে চেয়েছিল? চীন নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতার সময় সমুপস্থিত।

    মালদ্বীপের ক্যু নিয়ে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা চিনহুয়ার রিপোর্ট নিয়ে সুপারিশকৃত লিন্কের মন্তব্য থেকে

  13. মাসুদ করিম - ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ (৮:০১ পূর্বাহ্ণ)

    এই দুই খবরের মধ্যে কোনো যোগসাজোশ আছে কিনা, তবে দুটি খবরই প্রচণ্ড উদ্বেগের।

    ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হওয়ায় ফেরেননি খালেদা: মতিয়া

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ‘ষড়যন্ত্রে’ রয়েছেন অভিযোগ করে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, ‘ষড়যন্ত্র’ ব্যর্থ হওয়ায় সময় দিয়েও দেশে ফিরতে পারেননি তিনি।

    বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক প্রতিবাদ সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এ সদস্য বলেন, “শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কিন্তু অশেষ রহমতে তিনি রক্ষা পাচ্ছেন।”

    একুশে অগাস্টের গ্রেনেড হামলা, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার এবং আওয়ামী লীগে ভাঙনের চেষ্টাসহ নানা চক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছত্রছায়ায় হয়েছিল বলে ভাষ্য মতিয়ার।

    চিকিৎসার জন্য মধ্য জুলাইয়ে গিয়ে দুই মাসের বেশি সময় ধরে যুক্তরাজ্যে থাকা বিএনপি নেত্রী দেশে ফিরছেন বলে সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বের হয়। তবে চিকিৎসকের দেখা না পাওয়ায় তার দেশে ফেরা আরও পিছিয়েছে বলে জানায় বিএনপি।

    সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির একটি চক্রান্ত সফল না হওয়ায় খালেদার দেশে ফেরা পিছিয়ে যায় বলে ভাষ্য মন্ত্রী মতিয়ার।

    তিনি বলেন, “দেশে যদি আসতেই না পারবেন, ডাক্তারের অ্যাপয়েনমেন্ট যদি পিছিয়েই যায়, তাহলে তারিখ দিছিলেন ক্যান? অন্য কিছু স্বপ্ন ছিল। ভেবেছিলেন অমুক ঘটিয়া যাইবে, তমুক ঘটিয়া যাইবে; কেউ কোলে করে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। কিন্তু কিছুই ঘটে নাই, তাই তিনি আসতেও পারেন নাই।”

    আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে মন্তব্য করে মতিয়া বলেন, “চলতি বছরেই সরকারকে তিনটি বড় বাধা মোকাবেলা করতে হয়েছে।

    “পাহাড়ি ঢলে হাওরে অসময়ে পানি আসার কিছুদিন পর শুরু হল বন্যা। স্বল্প সময়ের জন্য হলেও এই বন্যায় কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। বন্যা যেতে না যেতেই শুরু হল রোহিঙ্গা সঙ্কট।”

    চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কটের ঘটনায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সামরিক উপায়ে ব্যবহারের কথা বলাকে ‘ষড়যন্ত্রের অংশ’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

    মতিয়া বলেন, “এই রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলার ক্ষেত্রেও নানা ধরনের উসকানি আছে। অনেকে হেন-করেন, তেন-করেন বলে উসকানি দিচ্ছে। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার ঠাণ্ডা মাথায় এ সঙ্কট মোকাবেলা করছে, সামরিক উপায়ে নয়।
    “তিনি জাতিসংঘে গিয়ে কূটনীতিকভাবে রোহিঙ্গাদের পক্ষে বিশ্ব জনমত গঠন করছেন। এই ক্ষেত্রে অনেকটা সফলও হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।”

    দেশে বর্তমানে খাদ্য নিয়ে অব্যবস্থাপনার কথা স্বীকার করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, “আমরা যেখানে চাল রপ্তানি করতাম, সেখানে এখন আমদানি করতে হচ্ছে। এটা ঠিক যে চাল নিয়ে একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। কিন্তু এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ‘ভারত চাল রপ্তানি বন্ধ করেছে’ মর্মে কিছু পত্রিকার মিথ্যা সংবাদ।”

    অচিরেই চাল সঙ্কট কেটে যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‍“আল্লার রহমতে এবার আউশের ফলন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পাঁচ লাখ টন বেশি হয়েছে। তেমন কোনো বালা-মসিবত না হলে আমনের ফলনও ভালো হবে।”

    ‘দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র ও সরকার পতনের অপচেষ্টার’ বিরুদ্ধে ওই প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে ‘অপরাজেয় বাংলা’ নামের একটি সংগঠন। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন।

    খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী যখন কূটনীতিক উপায়ে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন, রোহিঙ্গাদের পক্ষে বিশ্বজনমত গঠন করেছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে একটি মহল সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

    “বিএনপি অহেতুক সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনার কথা বলছে। অথচ পুরো জাতি আজ রোহিঙ্গা ইস্যুতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। সুতরাং কোনো আলোচনা নয়, কোনো সংলাপ নয়।”

    সরকার বিচার বিভাগের একটি ‌‘ক্যু’ ব্যর্থ করেছে বলে সভায় উপস্থিত অনেক আওয়ামী লীগ নেতা মন্তব্য করেন।

    এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল বলেন, “১/১১ এর ষড়যন্ত্রকারীরা বিচার বিভাগকে ব্যবহার করেছে। একটা বিচার বিভাগীয় ক্যু করা যায় কিভাবে সেই ষড়যন্ত্র তারা করেছে। বিএনপি যেই দাবি করে, ষড়যন্ত্রকারীরা সেই সুরে কথা বলে। কিন্তু তাদের সব ষড়যন্ত্রই একে একে ব্যর্থ হয়েছে।”

    অপরাজেয় বাংলার আহ্বায়ক এইচ রহমান মিলুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, চারু শিল্পী মনিরুজ্জামান, কৃষকলীগ নেতা এমএ করিম ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা কামাল চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।

    • মাসুদ করিম - ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ (৯:০৫ পূর্বাহ্ণ)

      PM assassination plot report baseless, motivated: PMO

      Prime Minister’s Office (PMO) trashed a recent news item aired by foreign media stating the failed plot of killing Prime Minister Sheikh Hasina, reports UNB.
      The PMO has said the report is completely baseless, confusing and motivated report.
      The news item was aired by a foreign TV channel and released by an international online.
      Signed by PM’s Deputy Press Secretary Ashraful Alam Khokon on behalf of Press Secretary Ihsanul Karim, a PMO press release on Sunday said some local media published a report on September 23 on the failed assassination attempt on the PM on August 24 based on a report run by a foreign TV channel and an international online.
      Following the report over the alleged assassination attempt on the Prime Minister accusing some personnel of a special force, news were aired in some local private TV channels and even discussions were also held there, the press release added.
      “This is to inform all that the news on failed August 24 assassination attempt on Prime Minister Sheikh Hasina is completely baseless, confusing and motivated. It’s not at all acceptable from the part of any responsible individual or any aware media to air and publish such confusing news since it is completely goes against the interest of the country,” the release said.

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.